বিনিময়ে_তোমায়_চাই 8

0
603

#বিনিময়ে_তোমায়_চাই?
#লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০৮
.
?
.
নাদিয়া কাদতে কাদতে নাহিদের রুমে গেলো। তখন নাহিদ ফাইল চেক করছিলো। নাদিয়া ভাইয়ায়া বলে চিৎকার দিলো। নাদিয়ার গলা শুনতেই নাহিদ দরজার দিকে তাকালো আর নাদিয়ার অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। নিজের বোনের এমন অবস্থা দেখে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না নাহিদ। নাদিয়া কাদতে কাদতে নাহিদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে লাগলো।

নাহিদ- কি হয়েছে তোর এই অবস্থা কে করেছে?

নাদিয়া কাদছেই কিছু বলছে না।

নাহিদ- কি হলো বল?

নাদিয়া- আ..আ..না…ফ।

বলেই আবার কাদতে লাগলো।আনাফের নাম শুনে নাহিদ আরও অনেকটা অবাক হয়।

নাহিদ- আনাফ মানে?(অবাক হয়ে)

নাদিয়া- হ্যা ভাইয়া আনাফ। ওনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি তাই তাকে বলতে গেছিলাম বলার পর বলে…..

আর কিছু না বলে আবার কাদতে লাগলো নাদিয়া। নাহিদ নাদিয়াকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো।

নাহিদ- কি হলো বল কি করেছে আনাফ?(রেগে)

নাদিয়া- আমি বলতে পারবো না ভাইয়া আজ আল্লাহ আমার সহায় ছিলেন তাইতো কোনোরকমে পালিয়ে এসেছি নইলে আমার সব শেষ হয়ে যেতো ভাইয়া।

বলেই হাউমাউ করে কাদতে লাগলো। নাহিদ এসব শুনে অনেকটাই রেগে গেলো। তারপর নাদিয়া কে রেখে সোজা আনাফের অফিসে চলে গেলো। আর নাদিয়া চোখ মুছে শয়তানি হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,

নাদিয়া- আমিও দেখে ছাড়বো কি করে বাচো তুমি।

বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো।

এইদিকে,

রিফা বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো তার মায়ের সাথে দেখা না করেই।

মা- কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি আর দরজা আটকালি কেন?

রিফা কিছুই বলেনা চুপচাপ এক কোণে বসে আছে আর ভাঙ্গা ফোনটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রিফার মা বুঝতে পারে রিফার মন খারাপ তাই আর ডিস্টার্ব করেনা সেখান থেকে চলে যায়।

রিফার ইমনের সাথে সকল আনন্দের দিনগুলা চোখে ভাসছে। কতো আনন্দের দিন ছিলো তাদের কতো ছবি ছিলো একসাথে রিফার ফোনে। কিন্তু সেগুলো এক নিমিষেই শেষ করে দিলো নাদিয়া।

এইদিকে,

আনাফ নিজের কেবিনে বসে আনমনে রিফার কথা ভাবছে এমন সময়ই নাহিদ রেগে কেবিনে প্রবেশ করলো। আনাফের কোনো খেয়াল নেই সেদিকে সে তো রিফাকে নিয়েই ভাবছে। নাহিদ চিল্লিয়ে আনায়ায়ায়াফ বলে উঠলো। নাহিদের চিল্লানোতে আনাফের ধ্যান ফিরে।

আনাফ- আরে নাহিদ এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?(ভ্রু কুচকে)

নাহিদ-জাস্ট শাট আপ তোর সাহস কি করে হলো আমার বোনের সাথে…ছিহ এই তোর ইমানদারী?(রেগে)

আনাফ-মানে কিসব যা তা বলছিস আমি কি করেছি?(অবাক হয়ে)

নাহিদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

নাহিদ-এতো কিছু করে এখন এমন একটা ভাব ধরছিস যে তুই কিছুই জানিস না বাহ খুব ভালো এক্টিং জানিস তো দেখছি।

আনাফ-দেখ একদম আন্তাজি কথা বলে মাথা গরম করিস না।কিছুক্ষন আগে তোর বোন এমনি মাথা গরম করে দিয়ে গেছে এখন আবার তুই এসে শুরু করলি।

নাহিদ-নাদিয়া মাথা গরম করেছে মানে ওকে তো তুই নিজেই…..

আর বলতে গিয়েও থেমে গেলো নাহিদ।নাহিদের থেমে যাওয়াতে আনাফ বলে উঠলো

আনাফ-ওকে আমি নিজেই মানে কি? কি হলো চুপ করে গেলি কেন বল ওকে আমি কি?

নাহিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নাদিয়ার বলা সকল কথা আনাফকে বললো।এসব শুনে তো আনাফ বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।আনাফ ভাবতে পারছে না নাহিদ কি করে এতোটা নিচে নামতে পারে।

নাহিদ-সব তো বললাম এখন বল কেন করেছিস এরকম আমার বোন নাদিয়ার সাথে?

আনাফ হেসে বললো,

আনাফ-তোর বোনের ক্যারেক্টার ঠিক করতে বল আগে তারপর কথা বলতে আসিস।

নাহিদ রেগে গিয়ে আনাফের কলার ধরে বলতে লাগলো

নাহিদ-এমনি আমার বোনের সর্বনাশ করতে যাচ্ছিলি আর এখন বলছিস আমার বোনের ক্যারেক্টার খারাপ।(রেগে)

আনাফ একবার নিজের কলারের দিকে তাকালো আরেকবার নাহিদের দিকে।তারপর নাহিদের হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে টেবিলের সামনে থেকে একটা রিমোট নিলো আর এক মনিটর অন করলো।

আনাফ-নাও নিজেই দেখে নাও তোমার সাধু বোন কি করেছে।

নাহিদ আনাফের কথার তোয়াক্কা না করে মনিটরের সামনে গেলো। নাদিয়ার রিফার সাথে খারাপ ব্যবহার তারপরের কাহীনি সবটাই দেখলো। এগুলো দেখে নাহিদ স্তব্ধ হয়ে গেলো। ভাবতে পারছে না তার বোন এতোটা নিচ। নাহিদ মাথা নিচু করে ফেললো এটা ভেবে যে আনাফ নির্দোষ হয়েও তাকে যা নয় তাই বলেছে। কি মুখ নিয়ে আনাফের সাথে কথা বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না নাহিদ।

আনাফ- কি দেখা হয়েছে?

নাহিদ- সরি আনাফ। আসলে নাদিয়ার অবস্থা দেখে সত্য মিথ্যা যাচাই করার মতো অবস্থা আমার ছিলো না। আর তুইই বল কোন ভাই নিজের বোনের এমন অবস্থা দেখলে সহ্য করতে পারে। আর সত্য মিথ্যা যাচাই করা তো দূরেই থাক।

আনাফ কিছুটা হেসে বললো,

আনাফ- আরে বোকা সরি কিসের জন্য আমি তো কিছুই মনে করিনি তুই তো জাস্ট নাদিয়ার খেলার গুটি। তোকে ইউস করেছে তোর বোন সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি এখন দেখ তোর বোনের কি হাল করি আমি।

নাহিদ- তোর কিছু করা লাগবে না যা করার আমিই করবো।(রেগে)

আনাফ- কোনো প্লেন?(ভ্রু কুচকে)

নাহিদ- হুম চল আমার সাথে।

আনাফ- কোথায়?(অবাক হয়ে)

নাহিদ- বেশি কথা না বলে চল।

আনাফ- ওকে।

তারপর নাহিদ আনাফকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে।

এইদিকে নাদিয়া পায়ের উপর পা তুলে পপকন খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। এমন সময়ই নাহিদ আর আনাফ বাসায় প্রবেশ করলো কিন্তু নাদিয়া তাদের দেখতে পেলো না। নাদিয়া এমন ভাবে বসে টিভি দেখা দেখে নাহিদের মাথায় তো আগুন ধরে যাচ্ছে এমন অবস্থা। যেই বোনটাকে এতোটা আদর স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে সেই বোনই আজ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভাইকে ইউস করেছে এটা কারই বা খারাপ লাগার কথা না?

নাহিদ শান্ত গলায় বললো,

নাহিদ- নাদিয়া?

নাহিদের গলা শুনতেই নাদিয়া হুরমুড় খেয়ে উঠলো। এতে সব পপকন নাদিয়ার গায়ে পড়লো। এটা দেখে আনাফ ভেতরে ভেতরে হাসছে। তবুও অনেকটা রেগে আছে নাদিয়ার উপর।

নাদিয়া- ভা..ভা..ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি?

নাহিদ- হুম আনফের সাথে তোর বিয়ে দিবো যেহেতু আনাফ তোর সাথে অকাজ করেছে।

আনাফ আবাক চোখে নাহিদের দিকে তাকালো নাহিদ চোখ দিয়ে আনাফকে ইশারা করলো রিলেক্স থাকতে। তাই আনাফও আর কিছু বললো না। নাদিয়া তো অনেক খুশি হয়ে যায় আর বলে সত্যি?

নাহিদ বলে হুম একদম সত্যি। নাহিদের কথায় নাদিয়া খুশিতে গিয়ে নাহিদকে জড়িয়ে ধরে এবং বলে।

নাদিয়া- থ্যাংক ইউ সোওওওও মাচ ভাইয়া জানোনা আমি আজ কতোটা খুশি, আমার এতো কষ্ট এত নাটক আজ সফ….

বলেই নাদিয়া মুখে হাত দিলো।

নাদিয়া-(হে আল্লাহ কি থেকে কি বলে ফেলছিলাম এখন ওরা বুঝে ফেলবে না তো? না না মেনেজ করতে হবে যে করেই হোক।)

নাহিদ- নাটক মানে কি বোন?(বুঝেও না বুঝার ভান করে)

নাদিয়া- ইয়ে মানে এতো ক্ষণ নাটক দেখছিলাম তো তাই মুখ ফোস্কে বেরিয়ে গেছে।

নাহিদ- ওওও আচ্ছা তা তুই যদি আনাফের কাজে কষ্টই পেয়ে থাকিস তাহলে তোর তো নিজের রুমে বসে কাদার কথা কিন্তু তুই তো দেখছি খুব আনন্দে পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছিস।

নাদিয়া- আ..আ…আস..আসলে কষ্টগুলো ভুলার চেষ্টা করছি তো তাই টিভি দেখছিলাম।

নাহিদ- ওওও আচ্ছা তা তোর না ঠোট কেটে রক্ত বেরিয়ে ছিলো হাতে বিভিন্ন দাগ ছিলো সেগুলাও কি টিভি দেখতে দেখতে মুছে গেছে।

নাহিদের কথায় এবার নাদিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না চুপ মেরে গেছে বেচারি। নাদিয়া ভালোই বুঝতে পেরেছে সে ভালো মতোই ধরা খেয়েছে।

নাদিয়া- আ..আ..সলে……..

এবার নাহিদ নাদিয়াকে খুব জোরে চড় মারলো।

নাহিদ- লজ্জা হওয়া উচিত তোর আনাফের সাথে এতো কান্ড করে এসে আমার সাথেও এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করলি। এই তোর এতো স্নেহ ভালোবাসার দাম দিলি আমাকে। আজ জানিস খুব ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি যে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ছোট বোন সে আজ আমাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করলো। এই শিক্ষা দিয়েছি আমি আর মম ডেড? ছিহ….

নাদিয়া- ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ আমি আর কখনোই এমন করবো না।

নাহিদ- আরেকবার ভাই বলবি তো তোকে এই বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। আর ক্ষমা তুই ক্ষমা ভালোবাসার কি বুঝিস হে?

নাদিয়া- প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা….

নাহিদ- তুই মরে গেছিস আমার কাছে। আর মৃত মানুষের কথা আমি বুঝিও না বুঝতে চাইও না।

বলেই নাহিদ নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো আর আনাফও চলে গেলো। নাদিয়া সেখানে বসেই মাথায় হাত দিয়ে কাদতে লাগলো।

এইদিকে আনাফ ড্রাইভ করে বাসায় যাচ্ছিলো এমন সময়ই ফোনের শোরুম দেখতে পেলো। তখনই তার রিফার কথা মনে পড়ে।

পরদিন সকালে,
,
,
,
,
,
চলবে?

(কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। কাল তোর মাঝে গল্প দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here