বিচ্ছেদময় সুখ শেষ পর্ব

0
787

#বিচ্ছেদময়_সুখ- [১৫]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
?(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)?
______________________________

সময়ের গতি থেমে নেই, সময় চলছে তার নিজের আপন গতিতে। দেখতে দেখতে প্রায় অনেকগুলো দিনই কেটে গেলো। মীরার সেই ছোট্টবেলার নানান রকমের জিনিশ যা রুহিনের কাছে ছিলো পুতুল, কাপড়,খেলনা সবকিছু প্যাকেট করেও দিয়েছে যাতে মীরার মন গলে কিন্তু তাতেও কিচ্ছু হয়নি। এই কয়দিনে মীরার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পায় নি রুহিন। মাঝে মাঝে আকাশের সঙ্গে দেখতো হাসছে, কথা বলছে। মীরা সম্পূর্ণ ভাবে রুহিনকে এভোয়েড করে চলতো। এভাবে আর পারা যাচ্ছে না, রুহিন শেষবারের মত একটা চেষ্টা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে, যেখান থেকে তাদের মান অভিমানের পালা শুরু হয়েছে সেখান থেকেই শেষ হবে এইবার সবকিছু। রুহিনের পরিকল্পনা মোতাবেক সেই বাড়িটা থেকেই তো সবকিছুর নষ্টের মূল শুরু হয়েছিলো। এখন সেখান থেকেই সবটা শুরু হবে। রুহিন সেই বাড়িটা আবারো নতুন রুপে ঠিক সেদিনের মতন করে সাজাতে লাগলো। পুরো বাড়ি জুড়ে হার্ট শেপের কালো রঙের বেলুন। বাড়ির দরজা থেকে শুরু করে একটা রুম পর্যন্ত গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরী করা রাস্তা আর সেই রাস্তা গিয়ে িবলীন হয়েছে একটা রুমের ভেতর! সেই রুমটায় আবার হরেক রকম বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো চারিদিক। একটা টেবিলে লাল টুকটুকে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো তার মাঝখানে একটা ছোট্ট বাক্স পড়ে আছে। রুহিনের সাজানো গোছানো সবটা শেষ এবার মীরাকে াল করবার পালা,

-‘ মীরা আর কোনোদিনও তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো না শুধু একটিবার ওই বাড়িতে চলে আসো।’

রুহিনের এইভাবে বলাটা অগ্রাহ্য করতে পারলাম না।বেরিয়ে পড়লাম ওই বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্য, মানুষটা কতো কি করছে আমার জন্য এই কয়দিনে। এবার বোধহয় এটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর বিরক্ত করবো না উনাকে।

ওই বাড়িতে দরজা খুলে ঢুকতেই মাথার উপর কালো গোলাপের কতোগুলা পাপড়ি এসে পড়লো! আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি। তারপর আবারো সেই কালো গোলাপের রাস্তা আমি এগিয়ে গেলাম। সেই রুম টায় যেতেই একটা টিউন ভেসে ওঠলো পুরো রুম জুড়ে! রুহিন দাঁড়িয়ে আছে রুমের ভেতর। আমাকে দেখতে পেয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন। আমার হাতদুটো আঁকড়ে ধরলেন।

-‘ যেখান থেকে তোমার আর বিচ্ছেদের সূত্রপাত হয়েছিলো আজকে সেইখান থেকেেই আমাদের নুতন জীবনের পথ শুরু হবে মীরা, ক্ষমা করে দাও আগের করা ভূলের জন্য। কথা দিচ্ছি কখনো এরকম করবো না। চলো না ভূলগুলোকে শুধরে নিয়ে আবারো একসঙ্গে চলি? থাকবে তো আমার সঙ্গে?’

রুহিনের এইভাবে বলার পর আমার ফিরিয়ে দেবার কোনো মানেই হয় না! উনার চোখে মুখে আনন্দ দেখা যাচ্ছে, এই দিনেরই তো অপেক্ষা করেছি আমি এতোদিন ধরে।

-‘ হ্যাঁ আমি থাকবো আপনার সঙ্গে। আর কোনো ভুল বোঝাবোঝি নয় এইবার শুধু আপনি আর আমি।’

রুহিন মীরাকে একটা আিংটি পড়িয়ে দিলো হাতের মধ্যে। মীরা আংটি টা পড়ে নিলো।

রুহিন পকেট থেকে আরো একটি আংটির বাক্স মীরার হাতে দিলো

-‘ নাও পড়িয়ে দাও।’

-‘ এইতো সেই আংটি টা!’

-‘ হুম এটাই সেই আংটি সেদিন আমি এটা কুড়িয়ে রেখেছিলাম তুমি যাবার পরেও এখন এটা পড়িয়ে দাও আমাকে।’

মীরা আর দেরি না করে রুহিনের হাতো আংটিটা পড়িয়ে দিলো। দু’জনে মিলে একান্তে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিলো।
——————-
মীরাদের বাড়ি আবারো হলুদ সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। আজকে মীরার বিয়ে রুহিনের সঙ্গে! সেদিনের পর রুহিন নিজের বাবাকে দিয়ে মীরার বাবার সঙ্গে কথা বলায় তাদের কোনো আপত্তি না থাকায় বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে কালকে। আগের বারের শতনও মীরাকে এবার হলুদ রঙের কাপড় পড়িয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তবে এইবার মীরার মুখে হাসি ফুটে আছে, প্রিয় মানুষটিকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাবার আনন্দ রয়েছে। উচ্চস্বরে গান বাজনা হচ্ছে একে একে মেহেদী, গায়ে হলুদ সব রকম অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। মীরা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো আর তো বাকি মাত্র ক ঘন্টা তার পরেই সে একেবারে রুহিনের হয়ে যাবে, মীরা শুয়ে আছে ঠিকই ঘুম আসছে না, আকাশের প্রতি রুহিনের জেলাস হওয়া নিয়ে হাসি পাচ্ছে, মীরা আর আকাশ ইচ্ছে করেই রুহিনের সামনে বেশি বেশি করে কথা বলতো যাতে রুহিন জেলাসি ফিল করে আর হয়েছেও ঠিক তাই। অবশেষে রুহিন সেদিন মীরাকে কথা দেবার পর আকাশকে নিয়ে কোনো রকম কোনো গন্ডগোল হয়নি। দু’জন বেশ হ্যাপিই ছিলো।
————————-

বিয়ের ব্যস্ততা সকাল হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে। যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে, মীরা সকাল থেকেই রুমে বসে কাজিনদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে অবশেষে সেই সময় উপস্থিত হলো। মীরাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো সাজগোজের জন্য। এবারও মীরাকে লাল রঙের টুকটুকে একটি শাড়ি পড়ানো হয়েছে, কানের দুল, গলার হাড়, চুড়ি, টিকলি সবকিছু ম্যাচিং করে পড়ানো হয়েছে। চুলগুলোও বেশ সুন্দর করে ফুলিয়ে খোপা করা দিয়েছে। মীরা বউ সেজে অপেক্ষা করছে রুহিনের জন্য। রুহিনও চলে এসেছে। কাজিনদের হাসি ঠাট্টা, কিছু নিয়ম কানুন সবটা মেনে অবশেষে সেই দীর্ঘ নময় উপস্থিত! পবিত্র তিনটি শব্দ বলার মাধ্যমে রুহিন ও মীরা একে অপরের হয়ে গেলো সারাজীবনের জন্য। সকল বিরজ বিচ্ছেদের পালা শেষ হয়ে এবার সুখের পালা এসেছে।

বিদায়ের সুরে সারা বাড়িময় বিষন্ন হয়ে আছে! সবাই কাঁদছে শুধু মীরার বাবা ছাড়া উনি মনে করেন উনার মেয়ে সুখেই থাকবে সেজন্য কেঁদে নয় তিনি হাসি মুখে বিদায় দিবেন নিজের মেয়েকে। বিদায়ের সময় রুহিন সবাইকে কথা দিয়েছে কখনো মীরার চোখে পানি আসতে দিবেনা। রুহিন মীরার হাত শক্ত করে ধরে রেখে বিদায় নিলো সবার কাছ থেকে।

ওই বাড়িতে যাবার পর সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে মীরা এখন বসে আছে রুমে রুহিনের জন্য। দরজা খোলার শব্দে মীরা বুঝতে পারে রুহিন রুমে এসেছে। রুহিনকে দেখা মাত্রই মীরা ওঠে যায় সালাম করতে। সালাম করা শেষ হলে রুহিন মীরার গলায় একটা লকেট পড়িয়ে দেয় যেখানে রুহিনের ছবি আছে।

-‘ অবশেষে রুহিন সাহেব আমাকেই বিয়ে করলেন বলুন? বেশ হয়েছে এতোদিন ঘুরেছেন।’

-‘ এখনোও তোমার বাচ্চামো স্বভাব গেলো না মীরা? অবশ্য ঠিকই আছে এই বাচ্চামো স্বভাবের জন্যই তো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। তবে কষ্ট যেমন আমিও তোমাকে দিয়েছি সেজন্যই তো তুমিও ওসব করেছো, এখন ওসব বাদ দাও তো। ‘

-‘ হু হু এই বাচ্চামো স্বভাবের জন্যই তো আপনাকে পেয়েছি কিন্তু কথা হলো এখন কি এভাবেই বসে থাকবেন নাকি?’

-‘ নাহ্, বারান্দায় আসো? দেখো আকাশের চাঁদটা কি সুন্দর লাগছে?’

মীরা রুহিনের সঙ্গে বারান্দায় বসে আছে। মীরা বসে আছে আর রুহিন মীরার কোলে নিজের মা’থা এলিয়ে দিয়েছে। মীরা পরম যত্নে রুহিনের মা’থায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! মিষ্টি মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে আছে আকাশের ওই চাঁদ আর অজস্র তারা।

-‘ সময়টা এভাবেই থেমে যাক বলো? এরকম সুন্দর একটা মুহুর্তে। সুখে থাকি আমরা দু’জন? ‘

-‘ উহু। সুখ নয় এটা হচ্ছে #বিচ্ছেদময়_সুখ বুঝলেন?’

-‘ মানে কি এটার?’

-‘ মানে এই যে বিচ্ছেদের বিরহ দিয়ে আপনার ভালোবাসার প্রমান পেয়েছি আমি। ভালোবেসেছেন আমাকে। আমাদের দু’জনের বিচ্ছেদ হতে হতেও হয়নি, এখন আমরা দু’জনেই সুখী। তাই তো বললাম আপনি আমার #বিচ্ছেদময়_সুখ। যে সুখ বিচ্ছেদের বিরহ দিয়ে তারপর আমার কাছে ধরা দিয়েছে।’

-‘ হু বুঝেছি। ভালোবাসি তোমাকে অনেকককক বেশি।’

-‘ আমার ভালোবাসার প্রকাশ তো বহুবার করেছি। আপনার থেকেও অনেকখানি ভালোবাসি আপনাকে।’

-‘ তাহলে ভালোবাসাময় রাত্রি শুরু করা যাক?’

মীরা লজ্জা পেয়ে কোনো কথা বললো না, রুহিন মীরাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো। দু’জন ভালোবাসার মানুষ এক হলো পূর্নতা পেলো দু’জনের ভালোবাসা। সুখী হলো দু’জন। বিচ্ছেদের শেষে অবশেষে তাদের ভালোবাসা পূর্নতা পেলো।

#সমাপ্ত

[ প্রথমেই দুঃখিতো সবার কাছে, আজকের এই অগোছালো পর্বের জন্য। আমি জানি এই পর্বটা খাপছাড়া হয়েছে, কিন্তু আমি কাহিনী টেনে পর্ব বড়ো করতে পারি না। আমার কাহিনী অনুযায়ী যতুটুকু ছিলো দেখিয়েছি গল্পে। এর চেয়ে বেশি হলে অহেতুক কাহিনী বাড়ানো হতো তাই এখানেই সমাপ্তি দিলাম। কীরকম হয়েছে দু লাইন মন্তব্য করবেন?। এতদিন যারা গল্পটির পাশে ছিলেন সবাইকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ। নতুন গল্প নিয়ে আসবো তখনও পাশে থাকবেন? পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আল্লাহকে স্মরন করুন, আসসালামু আলাইকুম সবাইকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here