বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব ৬

0
363

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [৬]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
?(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)?
_______________________

-‘ তোর সঙ্গে রুহিনের সম্পর্ক কি তিশা? সেদিন বাড়িতে রুহিনকে কেনো জড়িয়ে ধরেছিলিস? ‘

তিশা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো মিরার আচমকা প্রশ্ন থেমে দাঁড়ালো। তিশার চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বেশ ভ’য় পেয়েছে মিরাকে দেখতে পেয়ে।

-‘ ভ’য় পাস না, সত্যি বল তোর সঙ্গে কি রুহিনের সম্পর্ক আছে? যদি তা-ই হয় তাহলে সেদিন পার্কে বসা ছেলেটির সঙ্গে তোর সম্পর্ক কি? যর তোকে ফুল দিচ্ছিলো? মিথ্যা বলবি না একদম, সেই ছেলের ছবি ভিডিও আছে আমার কাছে। এখন তুই যদি আমাকে সত্যি টা না বলিস তো এই ছবি আর ভিডিও তোর আব্বুর ফোনে সেন্ড হবে তারপর যে কি হবে সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করে জানিস। ‘

এবার সত্যি আর তিশা কিছু লুকোতে পারলো না, কারন তিশা আর নাহিদের সম্পর্কের কথা এখন তার পরিবারের কেউ জানলে তা মোটেও তিশার জন্য ভালো হবে না। বাধ্য হয়ে সত্যি বলার জন্য মুখ খুললো।

-‘ তুই যা দেখেছিস তা-ই সত্যি! ওই ছেলেটা মানে নাহিদকেই আমি ভালোবাসি। সেদিন রুহিন ভাইয়াদের বাড়িতে একটা কাজে গেছিলাম আড়াল থেকে রুহিন ভাইয়া তোকে দেখতে পেয়ে হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে যে সে যা করছে তাতে যেনো আমি সায় দিই, প্রথমে আমিও বুঝতে পারিনি উনি কেনো এরকমটা বলছেন তারপর বললো যে তোর জন্য না-কি কোনো বিশেষ কারন আছে, তারপর আমি আর মানা করতে পারিনি রে রুহিন ভাইয়ার কথা মতন মিথ্যা নাটক সাজাই। আর তুই আসা মাত্রই উনাকে জড়িয়ে ধরি এতুটুকুই।’

-‘ এবার তুই যেতে পারিস, আমি ছবি ডিলিট করে দিবো। ‘

– তিশার কথা শুনে এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম! পা জোড়া যেনো জমে গেছে, হাঁটার শক্তি ও অবশিষ্ট নেই। শারা শরীর জুড়ে কীরকম লাগছে! ওসব ভালোবাসা ছিলো না তিশার তাহলে রুহিন কেনো করলো এরকম? পরপর প্রশ্ন শুধু সামনে এসে যাচ্ছে! তিশার সঙ্গে কেনো মিথ্যা নাটক করলো, আমার সঙ্গে কেনো এরকম করলো শুধু প্রশ্ন! আচ্ছা শুরু থেকে ভাবলে সেদিন যখন উনি আমাকে ওই বাড়িতে যেতে বলেছিলেন সেটা তো একটা কাগজে লিখে দিয়েছিলেন মানে তো একটাই উনি এটা আগে থেকে ভেবো রেখেছিলেন। তারপর ওই বাড়িতে কালো গোলাপ দিয়ে সাজানো? কালো গোলাপ তো শুধু ওই বাড়িতে রুহিনই পছন্দ করে। যদিও ধরলাম তন্ময় ভাইয়াই এসব করেছে কিন্তু তাহলে সে কালো গোলাপ কেনো ব্যাবহার করবে? এটা তো রুহিন ছাড়া আর অন্য কারো কাজ হতেই পারে না! তার মানে রুহিন আমাকেই ভালোবাসে? কিন্তু আড়াল করছে কেনো সেটা? নিজের ভাইয়ের জন্য? কিন্তু এটা তো আমি কখনোই হতে দিতে পারি না।
————–*—————–

-‘ ভাইয়া তোকে অনেকগুলো ধন্যবাদ! তুই না থাকলে আমি তো আমার মিরা মনিকে পেতামই না!’

রুহিন রুমে বেখেয়ালি ভাবে বসে ছিলো তন্ময়ের কথায় রেশ কাটে, মনে পড়ে যায় সেদিনের ঘটনা যখন রুহিন যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো তখন তন্ময়ও বলছিলো,

-‘ রুহিন ভাইয়া যেমন তার ভালোবাসার খোঁজে যাচ্ছে ঠিক তেমনি তুমিও একদিন আমার কাছে আসবে আমার মিরা মনি!’

রুহিন রুম থেকে বের হবার আগে তন্ময়ের মুখে মিরার নামটা শুনে থমকে দাঁড়ায়, প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো ভুল শুনেছে তাই তন্ময়কে আবারো জিগেস করে,

-‘ তুই কাকে ভালোবাসিস তন্ময়?’

-‘ ভাইয়া আসলে, বাদ দাও তো ওসব।’

-‘ বাদ দেবার জন্য বলিনি আমি। সত্যি টা বল?’

-‘ মিরাকে! হ্যাঁ লিপির বান্ধবী মিরা কে ভালোবাসি আমি। জানিস ভাইয়া মিরার পিছনে লেগে থাকতাম আমি সবসময়, কখনো ভাবিনি ওকে ভালোবাসবো কিন্তু আস্তে আস্তে এই ছয় মাসে বুঝতে পারি আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি। এখন শুধু সময় সুযোগ বুঝে ওকে নিজের করে নেবার পালা। ‘

-‘ যদি জানিস আমি মিরাকে ভালোবাসি তখন কি করবি তুই?’

রুহিনের বলা কথা তন্ময়ের কানে যেতেই মুখে লেগে থাকা হাসি মিলিয়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যেই! সঙ্গে সঙ্গে রুহিনের পা জোড়া আকড়ে ধরলো তন্ময়। করুনা স্বরে বলতে লাগলো,

-‘ ভাইয়া মিরা কে ছেড়ে দে দয়া করে। আমি বাঁচতে পারবো না ওকে ছাড়া, নিজেকে শেষ করে দিবো। মিরাকে যে আমি বড্ড ভালোবাসি রে ভাইয়া। ওকে তুই আমার করে দে তোর পা জোড়া ধরে ভিক্ষা চাইছি। তুই ভিক্ষা টুকু দে অন্ততো আমাকে। আমি যে সর্বহারা হয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবো মিরাকে না পেলে! মিরাকে তুই আমার হতে দে। তুই যদি এরকম করিস আমার তো নিজেকে শেষ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই রে, আমি যে বড্ড ভালোবাসি মিরাকে।’

ভাইয়ের করুন স্বরে রুহিনের চোখের পাতা ভিজে ওঠলো। কোনো বড়ো ভাই তার আদরের ছোটো ভাইকে এরূপ অবস্থায় দেখতে পারবে না! তন্ময়কে নিচ থেকে উপরে ওঠালো।

-‘ আরে ভিক্ষা কেনো চাইবি তুই? নিজেকে শেষ করবি এসব বলিস না। তুই তো আমার ছোট্ট ভাই না? চিন্তা করিস না মিরা তোর যা, চলে যা ওর কাছে মিরা ওই বাড়িতে অপেক্ষা করছে তোর জন্য। হ্যাঁ ও একটু আধটু বলবে যে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু তুই নিজের ভালোবাসা দিয়ে ওকে ভরিয়ে দিস কেমন? তুই আমার কাছে কিছু চাইবি আমি তা দেবো না এটা কখনো হয়?’

তন্ময় খুশি মনে চলে গেলো সেই বাড়িতে! একবারো ভাবলো না তার জন্য তার ভাই কতোটা আত্নত্যাগ করলো! কেবল নিজের ভালোবাসাটুকুই দেখলো ওদিকে তার ভাইও যে সেই মেয়েটিকেই ভালোবাসে সেটা বোধহয় সে ভুলে গেছে, মিরাকে না পেলে সে নিজেকে শেষে করে দিবে অথচ রুহিন কি করবে সেটা একবারো ভাবার প্রয়জোন না করে তন্ময়। এখন যেনো তার কাছে নিজের প্রয়োজনটাই বেশি হোক সেটা অন্যকে কষ্ট দিয়ে বা ছি’নিয়ে নিয়ে যেভাবেই হোক তাকে পেতে হবে।

তন্ময় যাবার পর-ই রুহিন কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে রইলো! মুহুর্তের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো তার চোখেরই সামনে। এটা তো হবার কোনো কথাই ছিলো না! কিন্তু নিজের ভাইয়ের সুখের জন্য একটু আত্নত্যাগিও না হলো রুহিন!
———————–
বাড়িতে এসেই দেখতে পেলাম লিপি বসে রয়েছে। আজকে আর কলেজে যাইনি ভালো লাগেনি আর। কিন্তু লিপি কেনো এসেছে এখানে?

-‘ তুই কলেজে না গিয়ে এখানে কেনো এসেছিস?’

-‘ দু’দিন পুরো লাপাত্তা তুই! কি হয়েছে তোর? তোকে বাদ দিয়ে আমি কলেজে যাবো কি করে?’

-‘ এমনি ভালো লাগছে নারে বিরক্ত করিস না চলে যা, আমাকে ঘুমাতে দে। ঘুমাতে হবে। ‘

-‘ এতো কিসের ঘুম তোর? আন্টি বললো সেই বিকেলে ঘুমিয়ে সকালে ওঠেছিস এখন তো প্রায় দুপুর হতে চরলো এখনো আবারো ঘুমাবি? কি হয়েছে?’

এখন তো ঘুমাতেই হবে রে, ঘুমই একমাত্র আমার সবকিছু ভূলে থাকার কারন।

-‘ তুই কি খুলে বলবি না কি আমি চলে যাবো?’

এই একটি মেয়ের কাছেই আমি দুর্বল! না চাইতেও তাকে সবটা খুলে বললাম রুহিনের বাড়িতে ডাকা থেকে তন্ময়ের ভালোবাসি তিশার মিথ্যা নাটক অব্দি সবটা খুলে বলেছি তাকে!

-‘ এত্তো বড়ো একটা কাহিনী হয়ে গেলো আর আমি কিছু টেরও পেলাম না! তন্ময় ভাইয়া তোকে ভালোবাসে? এটা কি করে সম্ভব? তুই না হয় রুহিন ভাইয়ার জন্য পা’গ’লা’মো করতি কিন্তু তন্ময় ভাইয়া মাঝখানে কোথা থেকে আসলো? আমার মনে হয় কিছু একটক ভূল বুঝাবুঝি হচ্ছে তুই কথা বল একবার রুহিন ভাইয়ার সঙ্গে! ‘

-‘ সকালে সে এসেছিলো বাড়িতে, আমার ফোন বন্ধ পেয়ে। বলেছে তন্ময় আমাকে সুখী রাখবে। আর শেষে কি যেনো বললো আমি সুখ থাকলেই সে সুখী! ‘

-‘ তুই দয়া করে এটা নিয়ে আরো একবার রুহিন ভাইয়ার সঙ্গে কথা বল, তিশার কাহিনী তো মিথ্যা তাই না?তাহলে তুই আরো একটিবার কথা বল, এভাবে অভিমানি হোস না হয়তো সমাধান হবে কিছু একটা।,’

-‘ তুই যা তো পরের টা পরে আমাকে এখন ঘুমাতে হবে। ভাল্লাগছে না!’

লিপিও চলে গেলো ও নিজেও জানে আমার এখন স্পেস দরকার! আমি আবারো ওষুধটুকু খেয়ে পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে।
————————–
-‘ এতো চিন্তা করিস না বাবা, আচ্ছা তোর কথানুযায়ী আমরা দু’জনে কালকে যাবো মিরাদের বাড়িতে তোর আর মিরার বিয়ের সমন্ধ নিয়ে কেমন? তোরা সুখে থাকলেও হলো আমার। ‘

#চলবে?

[আল্লাহকে স্মরন করুন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আসসালামু আলাইকুম সবাইকে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here