বামনের ঘরে চাঁদ পর্ব ২০

0
608

বামনের ঘরে চাঁদ

সাজিয়ানা মুনির

২০.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

শেখ হাসিনা হল। দোতলার একদম কিনারের ঘরটা চাঁদেদের।চারজনের এক ঘর। তিনজন থাকছে, বাড়ি কাছে হওয়ায় একজন নিজের বাড়িতে থাকছে। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাঁদের। বাড়ির বাহিরে এটাই যেন আরেক পরিবার। সকালে আরশিদের বাড়ি থেকে এসে এক মুহূর্ত নিজের জন্য সময় বের করতে পারেনি। এসে কোনোরকম রুমে ব্যাগ রেখে ক্লাসের জন্য বেরিয়ে পড়েছে। তারপর ইসলামনগরে টিউশন পড়িয়ে এখন হলে এসেছে। এসব দৌড়াদৌড়িতে দুপুরের খাওয়া হয়নি। আজ রান্না করার সময়টা পর্যন্ত মিলেনি। গায়ে আলসতা ভর করেছে, বটতলায় যেয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না এখন। তাই ঠিক করলো, হলের নিচের ক্যানটিন থেকে কিছু খেয়ে নিবে। যদিও ক্যানটিনের খাবার স্বাদহীন লাগে তার। কিন্তু উপায় নেই, এতেই কাজ চালাতে হবে আজ।
এখন অবধি কিছু গোছানো হয়নি। বিছানার উপর কাপড় ভর্তি ব্যাগটা রাখা। জুতা খুলে, ক্লান্ত শরীরটা আধশোয়া হয়ে বালিশের উপর মেলে দিলো। তটিনী পড়ছে, সামনে সেমিস্টার পরিক্ষা। চাঁদকে দেখে বই বন্ধ করে উঠে বসলো। জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলল,
‘ সকালে কখন ফিরলে? ক্লাস শেষে ফিরে এসে বিছানায় ব্যাগপত্র দেখলাম।’
চাঁদের মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কপালে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে চোখ বুজে উত্তর দিলো,
‘ সাড়ে এগারোটার পর। তোদের ট্যুর কেমন ছিলো?’
তটিনী উৎফুল্ল সুরে উত্তর দিলো,
‘ ভীষণ ভালো। অনেক ঘুরাঘুরি, আনন্দ করেছি। তোমার কথা খুব মনে পড়েছিলো আপা।’
শেষের কথায় তটিনীর মিয়িয়ে যাওয়া আওয়াজ শোনা গেল।চাঁদ ঠোঁট মেলে হাসলো। তটিনী আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ সাইফার জন্মদিন কেমন সেলিব্রেট করলে? নিশ্চয়ই অনেক আনন্দ করেছ! গিফট ওর পছন্দ হয়েছে? এই এক বারবি হাইজের জন্য কত মার্কেট ঘুরলে, শেষমেশ নিউমার্কেটে নিচ তলায় গিফট শপে পাওয়া গেল।’
‘ ভীষণ পছন্দ করেছে। গিফট পেয়ে আনন্দে লাফালাফি শুরু করেছে।’
আচমকা তটিনীর কিছু মনে পড়লো। ছিটকে উঠে বলল,
‘ ওহ আপা, তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি। সকালে রবিন ফোন করেছিলো। বলল, তোমার ফোন নাকি বন্ধ। মিথিলার আম্মা তোমাকে ফোন করছে। উনার সাথে কন্টাক্ট করতে বলেছে।’
তটিনীর কথায় চাঁদের হুঁশ ফিরল। ফোনে চার্জ নেই।আরশিদের বাড়ি থেকে আসার সময় গাড়িতে ফোন বন্ধ হয়ে গেছিলো। অন করা হয়নি আর। আসার সময় মালা বেগম বারবার বলে দিয়েছিল, হলে পৌঁছিয়ে ফোন করে যেন। অনেক দেরি হয়ে গেছে নিশ্চয়ই মা চিন্তা করছে। তড়িঘড়ি করে ফোন চার্জে লাগালো চাঁদ। কপালে চিন্তার ভাঁজ। চারিদিকের নানারকম চিন্তা, কাজের চাপে মাথা থেকে সব বেরিয়ে যায়। তটিনীর চোখে পড়লো ব্যপারটা, বিমূঢ় সুরে বলল,
‘ কিছু হয়েছে কি আপা?’
‘ মিথিলার আম্মা বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলো। চারবছর পর উনার ভাই দেশে ফিরেছে। বলেছিল, বাড়ি ফিরে ফোন করবে। আমার ফোন বন্ধ পেয়ে রবিন ভাইকে হয়তো বলেছে। কেন রবিন ভাই তোকে কিছু বলল?’
রবিন তটিনীর বয়ফ্রেন্ড। দুইবছর যাবৎ তাদের প্রেম চলছে। রবিন রেডিও কলোনিতে ভাড়া থাকে। উনার সুবাদেই মিথিলাদের সাথে পরিচয়। রবিন উনাদের বাড়িতেই থাকে।
তটিনী বলল,
‘ না, এই ব্যাপারে বলছি না। রবিন কিছু বলেনি। তোমার বাড়িতে কিছু হয়েছে কি আপা?’
অনেক সময় র/ক্তের সম্পর্কের থেকে আত্মার সম্পর্ক গভীর হয়। মন থেকে কাউকে আপন ভাবতে শুরু করলে, না চাইতেও তার কষ্ট, য/ন্ত্রণা সবটা চোখে বাঁধে। প্রয়োজনে সেই মানুষটা হাজার লুকাক না কেন! নিশ্বাস লুকাল চাঁদ। কথা এড়াতে কৃত্রিম হেসে বলল,
‘ কি হবে! কিছু হয়নি তো।’
‘ কেন জানো মনে হচ্ছে, কিছু একটা হয়েছে।’
‘ ও কিছু না। সারাদিনের তোড়জোড়ে ক্লান্ত।’
‘ বটতলা থেকে তোমার জন্য ভুনাখিচুড়ি এনে রেখেছি। ঠাণ্ডা হচ্ছে, হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নেও চটজলদি।’
‘ কখন আনলি? এর প্রয়োজন ছিল না।’
‘ ডিপার্টমেন্টের ওদের সাথে বটতলায় খেতে গিয়েছিলাম। ভাবলাম এত দৌড়াদৌড়িতে তুমি রান্নার সময় পাবে না তাই নিয়ে আসতাম।’
মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানালো চাঁদ।

হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেয়ে নিলো চাঁদ। ততক্ষণে ফোন খানিকটা চার্জ হয়েছে। এক ফাঁকে, বাড়িতে আর মিথিলার মায়ের সাথে কথা বলে নিলো। আগামীকাল থেকে পড়াতে যাবে। বিছানায় পড়ে থাকা ব্যাগটা আনপ্যাক করা হয়নি এখনো। আলসেমি ছেড়ে শরীর ঝারা দিয়ে উঠলো। ব্যাগ খুলে কাপড় গোছাতে হাত দিতেই কিছু একটা বাক্সের মত বাজলো। বের করে দেখলো মোটামুটি মিডিয়াম সাইজের অলিভ রঙের একটা বাক্স। চাঁদ কপাল কুঁচকে নিলো, ভুল করে কি সে সাইফার জন্মদিনের উপহার ব্যাগে করে নিয়ে এলো? সকালে ব্যাগ খোলা হয়নি। রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলো। তখন অবধি ব্যাগে বাক্সটা ছিলো না। এখন কোথা থেকে আসলো? নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে গুচির ট্যাগ চোখে পড়লো। বিস্ময়ে চোখজোড়া বড়বড় হয়ে এলো। এতো দামী ব্যান্ডের জিনিস! ভেতরে যা আছে অরজিনাল হলে নিশ্চিত লাখ টাকার উপরে হবে। এতো দামী উপহার কে দিলো? কৌতূহল জুড়ে তড়িঘড়ি হাতে বাক্সটা খুলল। ভেতরে গুচির কালো ভেলভেট চেইন ব্যাগ। পাশেই একটা চিরকুট রাখা,

আমার অমূল্য চাঁদ,

নিশ্চয়ই এখনো রেগে আছো? একটু হাসো তো! রাগ না তোমার ঠোঁটে হাসি বড্ড মানায়। সেদিন যখন ঝগড়াঝাটি করে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলে, তোমার চেইন নষ্ট ব্যাগটা চোখে পড়লো। সেপটিপিন দিয়ে আটকানো। জানি ব্যাগটা নিতে তোমার আত্মসম্মানে বাঁধবে। উপহার না, তোমার মূল্যবান সময়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে না হয় নেও।

তোমার প্রতা/রক আষাঢ়

চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে রাগ দমানোর চেষ্টা করল চাঁদ। হাতের লেখা দেখেই বুঝেছিলো এটা আষাঢ়ের কাজ। তটিনী দেখার আগেই ব্যাগে বাক্সটা ঢুকিয়ে রাখলো। ফোন হাতে রুমের বাহিরে বেরিয়ে এলো চাঁদ। লম্বা বারান্দার পিলার ঘেষে দাঁড়ালো। বিকাল হয়েছে সূর্যের তাপ মিয়িয়ে এসেছে। নিচে কথাকুঞ্জে মেয়েদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। ব্লকলিস্ট থেকে নাম্বার ছাড়িয়ে, আষাঢ়ের মোবাইলে ফোন করল। দুইবার বাজতেই ফোন তুলল আষাঢ়। অপর পাশ হতে তার আমোদ ঢালা আওয়াজ শোনা গেল,
‘ ফাইনালি নাম্বার ব্লকলিস্ট থেকে বের করলে। সূর্য কোন দিকে উঠেছে আজ?’
চাঁদ রাগ দমানোর চেষ্টা করল। বেশ শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ কি সমস্যা আপনার?
‘ আমার সবটাই সমস্যা। যেমন, এইযে তোমার থেকে দূরে থাকা, বুকে যন্ত্র/ণা নিয়ে তিলেতিলে ম/রা।’
আষাঢ়ের কথার গভীরে ডুবতে চাইলো না চাঁদ। সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করল,
‘ আমার ব্যাগে ব্যাগ রেখেছেন কেন? আমি আপনার কাছে ব্যাগ চেয়েছি? কি ভেবেছেন! দামী ব্যাগ দেখে সুড়সুড় করে আপনার কথা মেনে নিবো।’

আষাঢ় হাসলো। খানিক আফসোস জুড়ে বলল,
‘ আফসোস, যদি এতটা সহজ হতো! ‘
তারপর আবার বলল,
‘ এটা তো সামান্য ব্যাগ। আমি পৃথিবীর সব সুখ তোমার পদতলে এনে রাখতে চাই। শুধু একটা সুযোগ পাই।’
চাঁদ চুপ। আষাঢ় বলল,
‘ আমাদের বিয়ের পর সামর্থ্যের অভাবে তোমাকে তোমার প্রাপ্য সুখ বিলাসিতা দিতে পারিনি। যার আফসোসে ক্ষণেক্ষণে আমি জ্বল/তাম। দ্বিধাদ্বন্দে জড়িয়ে থাকতাম। এখন আমার সামর্থ্য আছে, অথচ তুমি কাছে নেই। তুমি অনেক সুখ ডিজার্ভ করো চাঁদ। অনেক!’
চাঁদ তখনো চুপ। সবাই বলে কঠোর চাঁদ। অথচ এই মানুষটার সাথে কথা বলতে গেলে চোখ ভরে আসে কেন তার? মন মস্তিষ্কের যুদ্ধ চলছে। উতলা হচ্ছে বুক! নিজেকে শান্ত করতে চাইলো। কণ্ঠে কঠোরতা এনে বলল,
‘ যতদিন না আপনি সত্যিটা বলছেন, এই দুরত্ব কমবে না।’
আষাঢ় অধৈর্য হয়ে পড়লো। অস্থির হয়ে বলল,
‘ অতীত ভুলে যাও। সব স্মৃতি মিলিয়ে দেও। ভাবো আমাদের কোনোদিন দেখাই হয়নি। চলো না নতুন করে কোনো বর্ষণে আবার প্রেমে পড়ি। কথা দিচ্ছি, এবার কোনো কষ্ট ছুঁবে না। ভালোবাসা, পূর্ণতা দিয়ে ভরিয়ে রাখবো তোমায়।’
‘ ভাঙা কাঁচ কোনো দিন কি জোড়া লাগানো যায়?’

অপর প্রান্ত হতে আষাঢ়ের অস্থিরতা মাখানো গভীর, নিগূঢ় আওয়াজ,
‘ তুমি চাইলেই যায়। তোমার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ বড্ড মনে পড়ে চাঁদ। তোমার মেঘবরণ কেশ, চন্দ্রসুধা মুখ, মুক্তঝরা সেই মুগ্ধতা জড়ানো হাসিতে আমি আজও বশীভূত। একবার শুধু আমার কাছে ফিরে আসো।’
চাঁদ নিশ্চুপ। আষাঢ়ের কণ্ঠের গভীরতা ধীরেধীরে ব্যাকুল করছে আরো। নিগূঢ়, নিমগ্ন সুরে বলল,
‘ রোজ জ্যোৎস্না রাতে কোনো গহীন বনের নদীর পাড়ে দেখা মিলে তোমার। পানিতে পা ডুবিয়ে নুপুরের রিমিঝিমি মেলে, সাদা শাড়িতে খোলা কেশ ছড়িয়ে শুয়ে আছো কাঠের মাচায়। ঠোঁটের কোণে ঝলমলে হাসি, সমুদ্র গভীর চোখজোড়া ভুবনবিলাসী। বড্ড টানে আমায়। যতবার ওই ঠোঁট জোড়ায় ঠোঁট ডুবাই ততবার তোমার ঘ্রাণ আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়। মিষ্টি যন্ত্রণায় সকল ক্লান্তি কোথাও যেন মিলিয়ে যায়। অস্থিরতা মাখানো সেই উষ্ণ নিশ্বাস যেন আমার হৃদয়ের গভীরে আওড়ায়। তোমার এলোমেলো উতালপাতাল উষ্ণতার ছোঁয়ায় আমার সকল পাগলামো মাত্রা ছাড়ায়। ভুবনমোহিনী, সুন্দর সুহাসিনী পদতলে নিজেকে বিসর্জন করি। জানি স্বপ্ন তবুও কেন এত বাস্তব মনে হয়? ‘
চাঁদ চুপ। অনবরত বুক কাঁপছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। চোখজোড়া ঘোলা হয়ে আসছে। আষাঢ়ের বলা প্রত্যেকটা কথা ভাসছে। গায়ের পশম কাটা জাগিয়ে উঠেছে। অনুভূতিহীন তপ্ত হৃদয়টায় এক টুকরো শীতল হাওয়া লাগছে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। লোকটা মা/রাত্মক। কথায় বিবশ করার নিদারুণ কৌশল জানে। অস্থিরতা দমাতে চোখ বুজলো চাঁদ। ঠোঁট কামড়ে ফোঁসফোঁস নিশ্বাস ফেলল। কণ্ঠে ক্রোধ মেলে কঠোর সুরে বলল,
‘ আপনি রাখুন, আমার অনেক কাজ আছে। ব্যাগ বাড়িতে পৌঁছে দিবো। আর..আর বিরক্ত করবেন না।’
চাঁদের কঠোরতার তীব্র চেষ্টায় হেসে ফেলল আষাঢ়। এইযে এলোমেলো অগোছালো কথা গুলো মেয়েটির বুক কাঁপার ভঙ্গি। এতো মাইল দূর থেকেও তার নিশ্বাসের গভীরতা, অস্থিরতা আষাঢ়ের বুক ছুঁইছে, অনুভব করতে পারছে।
আষাঢ় বলল,
‘ একটা আবদার করবো? একটু ভিডিও কলে আসবে? তোমার র/ক্তিম লজ্জা মাখা নাকটা একটু দেখতাম।’
চাঁদ থতমত খেলো। ঝাঁঝালো সুরে বলল,
‘ ভিডিও কল! অডিও কলেই কথা বলতে চাই না। আবার ভিডিও কল। আমাকে ফোন করে বিরক্ত করবেন না।’
আষাঢ় আরো রাগিয়ে দিতে বলল,
‘ আমি বিরক্ত করি? দিনদিন ঝগড়াটে মহিলা হচ্ছ চাঁদ।’
চাঁদ ক্ষেপে উঠলো। রাগ চেপে বলল,
‘ জানি। রাখছি।’
বলেই ফোন কা/টলো চাঁদ। বাপরে কথার কি ঝাঁঝ! দিনেদিনে লোকটা লাগামছাড়ার মাত্রা ছাড়াচ্ছে। কি সাংঘাতিক কথাবার্তা! সামনে পেলে নিশ্চিত তাকে ঢলে,পি/ষে রাখতো। ভেবেই চাঁদ কেঁপে উঠল। বুকে হাত রেখে মনকে বুঝালো, ‘ কিছু হয়নি, সব ঠিক।’

ফোনের দিকে তাকিয়ে আনমনে আষাঢ় হাসলো। ম্যানেজার আলতাফ মিয়া কিছু প্রয়োজনে ক্যাবিনে ঢুকল। আষাঢ়কে ডাকতেই ফিরে তাকালো। আলতাফ মিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
‘ ম্যানেজার সাহেব! বউ বশ করার কোনো মন্ত্রতন্ত্র কি আপনার জানা আছে? জানলে দুই একটা টিপস আমাকে দিয়েন তো।’
আলতাফ মিয়া মুখ কাচুমাচু করে নিলো। বিড়বিড় করে বলল,
‘ স্যার, আমি জানলে কি বউ আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়!’
আষাঢ় হতাশ নিশ্বাস ফেলল। আলতাফ সাহেবের অবস্থা তার থেকেও করুণ। বেচারার চোখেমুখে বউ ভীতি ভেসে আছে।

গম্ভীর সকাল। অসচ্ছল আকাশ। ভারী কালো মেঘ জমেছে। গুরুম গুরুম আকাশ ডাকছে। ধোঁয়া উড়া কফির মগ হাতে নিয়ে আইমান বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। ইটপাথরে মোড়ানো শহরটাকে দেখছে। গতকাল বোনের বাসায় এসেছে। অনেক আগে থেকেই সাভারের প্রতি তার অন্যরকম টান। বোনের বিয়ের পর প্রায় সময় সাভারে এসে থাকতো। অনেক বন্ধু আছে এখানে। সিটি সেন্টারের পেছনে, রাজালাখে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়া হতো। চার বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। এই শহরে আরো শত উঁচু দালান মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
আচমকা মনে হলো, এমন গুমোট বেলায় চাঁদকে খুব প্রয়োজন। পাশাপাশি এক সাথে দাঁড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে দিনটা শুরু করলে মন্দ হতো না। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবে কফির মগে চুমুক দিলো। আচমকা চোখ যেয়ে আটকালো পাশের ঘরে। মিথিলার পাশে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। সেই অ/গ্নিশিখা মত উজ্জ্বল মুখ। দৃষ্টিতে আগের মতই কঠোরতা। ক্লিপ দিয়ে উঁচু করে চুল বাঁধা। বাচ্চাবাচ্চা মুখখানায় পরিপক্কতা ম্যাচিউর ভাব। এটা কি কোন স্বপ্ন? নাকি তার কল্পনা! কতদিন পর দেখছে? চারবছর দুইমাস! আইমান থমকে গেল। বুক ধুকধুক করছে। ফোঁস করে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলল। বলল,
‘ মেহজাবিন চাঁদ, আমার বুকে জলন্ত অ/গ্নিশিখা অবশেষে আপনার সন্ধান পেলাম। কথা দিচ্ছি এবার আর পিছু ছাড়ছি না আপনার।’

চলবে…..

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক দিন পর গল্প দিচ্ছি পেজের রিচ কম। গল্প পৌঁছালে রেসপন্স করবেন)

টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here