বামনের ঘরে চাঁদ
সাজিয়ানা মুনির
১৩.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
অন্যায়ের আলাদা একটা বোজ আছে যা মানুষকে মনের অজান্তেই নিজের কাছে নিজেকে নত করে দেয়। আপনা আপনি বিবেকের অব্যক্ত কথাগুলো নানারকম অনুভূতির মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে।
ফুলে সজ্জিত বাগান। পাখিরা কিচিরমিচির ডাকছে। চারিদিকে হাজারো রঙ সৌন্দর্যে ভরে। যেন কোন স্বর্গ রাজ্যে এসেছে। জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়ে বড় গাছটার নিচে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে রুকাইয়া। চোখজোড়া তার কোটর ভেতর ডুকে গেছে। সারা শরীরের এক ছটাক মাংস নেই। হাড় গুলো ভেসে। উষ্কখুষ্ক অগোছালো চুল। পরনে ছেঁড়া শাড়ি। মনে হচ্ছে বহুদিন যাবৎ অনাহারে কাটাচ্ছে। শাড়ির আঁচলে একটা ফুটফুটে দুধের শিশু জড়ানো। শিকদার সাহেবের দিক বারবার হাত পাতছে। খাবার চাইছে বোধহয়। নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্ত্রীকে এমন বেহাল দশায় দেখে শিকদার সাহেবের বুক কেঁপে উঠল। তড়িঘড়ি পায়ে স্ত্রীর দিক এগিয়ে গেল। হাত বাড়াতে রুকাইয়া হাত ছিটকে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগী কণ্ঠে চিৎকার করে বলল,
‘ খবরদার তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না! তুমি বেইমান শিকদার। তুমি বেঈমান। তোমার কারণে আজ আমার এই দশা।কথা দিয়েছিলে তুমি আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবে। তুমি দেখে রাখনি, আমার মেয়েটা ভীষণ কষ্টে আছে।’
শিকদার সাহেব স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেল। বোঝাতে চাইলো। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে রুকাইয়া বেগমের কাছাকাছি যেতে পারছে না। যত সামনের দিক যাচ্ছে রুকাইয়া বেগম ততই দূরে দেখাচ্ছে। হ্ঠাৎ সুন্দর বাগানটায় ঝড় উঠল। তোলপাড় হচ্ছে চারিদিকের সব। রুকাইয়া বেগমের চেহারা বিদঘুটে রূপ নিচ্ছে। চোখ জোড়া হতে র/ক্তের অশ্রু বইছে।
চিৎকার করে শিকদার সাহেবের ঘুম ভাঙলো। চোখমুখে তখনো তার ভয় আতঙ্ক। ফোঁসফোঁস করে ভারী শ্বাস ফেলছে। তড়িঘড়ি হাতে পানির গ্লাসটা হাতে তুলে ঝটপট পুরোটা শেষ করল সে। বাহিরে ফযরের আজান শোনা যাচ্ছে। ধীরেধীরে আলো ফুটতে শুরু করেছে। খানিক সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। আজ প্রথম না অনেক দিন যাবৎ মৃ/ত স্ত্রীকে স্বপ্নে দেখছে। মূলত এই সমস্যাটা চাঁদ বাড়ি ছাড়ার পর থেকে শুরু হয়েছে। প্রায় প্রায় স্বপ্নে এসে রুকাইয়া কিছু বলতে চায়। অনেকদিন যাবৎ ভাবছে, ব্যাপারটার সুরাহা করতে পারিবারিক পীরের কাছে যাবে যাবে। কাজের ব্যস্ততায় যাওয়া হচ্ছেনা। তাই মন শক্ত করে নিলো। যতই ব্যস্ততা থাকুক পীরের সাথে যেই করেই হোক দেখা করতে যাবে আজ।
দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদ আষাঢ়ের মান অভিমান চলছে। অভিমানটা দুইদিক থেকে নয়। শুধুমাত্র চাঁদের। আষাঢ় বেশ স্বাভাবিক। চাঁদের সবরকম প্রয়োজন অপ্রয়োজন সুবিধা অসুবিধার খেয়াল রাখছে। অথচ আগ বাড়িয়ে চাঁদের মান ভাঙছে না। না বোঝার চেষ্টা করছে। আষাঢ়ের হাবভাব এমন যেন কিছুই জানেনা সে। এতে চাঁদের অভিমানের পাহাড় আরও বেশি জোড়ালো হচ্ছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে গোপনে বুক ভাসাচ্ছে।
এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট এসেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদ চান্স পেয়েছে। সারা বাড়ি উল্লাসে মেতে। মালা বেগম বাজার থেকে মিষ্টি আনিয়েছে, পাড়াপ্রতিবেশিদের বিলি করছে। আষাঢ় আজ বাড়িতে। চাঁদের রেজাল্টের খবর পেয়ে কারখানার কাজ বুঝিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি এসেছে। রাতে যেয়ে হিসাব মিলাবে।
ওদিকে আরশি বাড়িতে আসতে আকুম বাকুম করছে। কিন্তু রাজিব শুনতে নারাজ। ডেলিভারি হওয়ার আগ অবধি, এই কয়েকমাস আরশির জার্নি করার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জাড়ি করেছে।
আরশি আপাতত মুখ ফুলিয়ে বসে। মাতৃত্বকালীন সময়ে মেয়েদের আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। কেউ কেউ বাচ্চাসুলভ আচরণ করে। বাচ্চাদের মত আদর আহ্লাদ নিয়ে পছন্দ করে। চাঁদ মোবাইল স্পিকারে রেখে আরশির মান ভাঙানোর চেষ্টায় লেগে। মন ভালো করার জন্য নানারকম হাসিঠাট্টা করছে। আষাঢ় আড়চোখে চাঁদকে দেখছে। মেয়েটা কথায় কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। কখনো আবার অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে নিচ্ছে। উঠানের আমগাছ তলায় পা ঝুলিয়ে বসে। পাতার আড়াল হতে এক চিলতে রোদ এসে মুখে পড়ছে। ঠিক যেন শিশিরভেজা সুন্দর ভোর। এমন সময় বাড়ির সামনে লম্বা গাড়ি এসে থামলো। কপাল কুঁচকে নিলো আষাঢ়, গাড়িটা তার পরিচিত। গাড়ি থেকে রুবেল শাওনকে নামতে দেখে আষাঢ় নিশ্চিত হলো। ঘাঁড় সোজা করে বসলো। রুবেলদের পেছনে আরো দুই চারজন লোক ঢুকল।
আচমকা ভাইদের এখানে দেখে চাঁদ চমকে উঠল। চোখে মুখে গভীর ভয় আতঙ্ক। শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। ফোনটা হাত থেকে নিচে পড়ে গেল। রুবেল বাড়ির ভেতর ঢুকতে নিয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে একপলক চাঁদের মুখপানে চাইলো। চাঁদ আরও বেশি ঘাবড়ে গেল। ভাইয়ের চোখজোড়া অস্বাভাবিক রকম কঠিন ছিল। কেমন জানো রহস্য, কাঠিন্য লুকানো। চাঁদ আড়ালে লুকিয়ে পড়লো।
অনেকদিন পর রুবেল আষাঢ় মুখোমুখি আজ। এই কয়েক মাস দুজনের মধ্যে অনেক ঝামেলা চলছে। বন্ধুমহলে রুবেল বরাবরই আষাঢ়কে ছোট করে অনেক কটাক্ষ, অপমান করেছে। পাল্টা জবাব দেয়নি আষাঢ়। মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিয়েছে। বন্ধুমহল ছেড়েছে।
রুবেল চাঁদ থেকে চোখ সরিয়ে দুয়ারের দিক পা বাড়ালো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বেশ শীতল কণ্ঠে আষাঢ়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ কিছু কথা ছিল।’
প্রচন্ডরকম অস্বস্তি অনুভব করল আষাঢ়। চাঁদের দিক একপলক চেয়ে, রুবেলের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ ঘরে চল, বসে কথা বলি।’
খানিক পূর্বে বাড়ির উৎসবমুখর পরিবেশটা নিভে গেছে। কেমন জানো গম্ভীর গুমোট ভাব চারিদিকে ঘুরঘুর করছে। মালা বেগম চা নাস্তা নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন। ট্রে থেকে চায়ের কাপ তুলে রুবেলের দিকে এগিয়ে দিয়ে সোফায় বসলেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, রুবেল নড়েচড়ে বসলো। খানিকক্ষণ গম্ভীর থেকে বলল,
‘ আন্টি বিয়েটা যেভাবেই হোক, হয়েছে। চাঁদ আমাদের বাড়ির মেয়ে এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। আত্মীয়স্বজনদের ভেতর নানারকম আনাগোনা চলছে। ইদানীং আব্বার শরীরটাও মন্দ যাচ্ছে। একটু মানসিক চাপ নিলেই হাঁপিয়ে পড়ে। তাই…
মালা বেগম কপাল কুঁচকে চেয়ে। রুবেল চোখ উঁচিয়ে ঘরের সবার দিক এক পলক চেয়ে আবার কথায় মনযোগ দিলো। বলল,
‘ তাই আমরা চাঁদকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছি। ছোট করে ঘরোয়া আয়োজন করে লোকদেখানো বিয়ের ব্যাপারটা মিটিয়ে নিবো। এতে আত্মীয়স্বজনদের বিভ্রান্তি দূর হবে। বাড়ির মান সম্মানও থাকবে।’
মালা বেগম কিছু বলবে। তার পূর্বেই চাঁদের উঁচু স্বর শোনা গেল। এতক্ষণ যাবৎ দুয়ারে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ কথা শুনছিল। নিশ্চুপ থাকতে পারলো না আর। প্রতিবাদী সুরে বলল,
‘ আমি বাড়িতে যাবো না।’
সকলের দৃষ্টি চাঁদের দিকে। মেয়েটির চেহারায় চাপা রাগ, জেদ। কোথাও যেন আবার ভয়! রুবেল ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,
‘ বাবা অসুস্থ। তোকে দেখতে চাইছে।’
চাঁদ তাচ্ছিল্য হাসলো। বলল,
‘ এত বছর যেই মানুষটা আমাকে ঘৃণা করলো। আমার ছায়াকেও অশুভ মানতো। আজ অসুস্থ অবস্থায় তিনি আমাকে দেখতে চায়! আমাকে দেখলে প্রাণসংকটে পড়বে না তার?’
চাঁদের আওয়াজে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য ফুটে। শাওন রেগে গেল। চেঁচিয়ে বলল,
‘ দিনদিন বেয়াদবির সীমানা ছাড়াচ্ছিস। ভাই ওর কথা কি শুনছ! দুই চারটা থাপ্পড় দিয়ে বাড়িতে নিয়ে চলো। দেখি কোন বাপের ছেলে আটকায়।’
শেষ কথাটা আষাঢ়কে ইঙ্গিত করে বলল।আষাঢ় ক্ষেপে গেল।রেগে উঠে দাঁড়াল। শাওনের দিকে এগিয়ে যেতেই রুবেল মাঝে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। রাগী আওয়াজে ধমকে উঠলো। শাওনের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ এখানে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে এসেছি। বাড়তি কোনো ঝামেলা চাইছিনা।’
শাওন দমে গেল। দাঁত চেপে সোফায় বসে পড়লো। রুবেল আষাঢ়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ তোর সাথে আলাদা কিছু কথা ছিল’
রুবেলের ঠান্ডা আওয়াজ। অস্বাভাবিক রকম শান্ত যেন কোনো অতীত রহস্যকে ইঙ্গিত করছে। আষাঢ় কয়েক পলক চেয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ বাহিরে চল।’
দুজন বাহিরে চলে গেল। চাঁদ তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। অস্বাভাবিক রকম ঘাবড়াচ্ছে। ঘামে শরীর ভিজে একাকার অবস্থা তার।
ঘরের দুয়ার ভেতর থেকে আটকে বসে আছে চাঁদ। বাহির থেকে মালা বেগম অনবরত ডাকছে। ভেতর থেকে চাঁদের বেশ স্পষ্ট ভাষার চড়া উত্তর,’ ওদের চলে যেতে বলুন। আমি ওই বাড়িতে যাবোনা।’ মালা বেগম যথাসম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করছে। চাঁদ শুনতে নারাজ। এক সময় বিরক্ত হয়ে থেমে গেল। অতিষ্ঠ হয়ে শক্ত গলায় আষাঢ়কে বলল,
‘ মেয়েটা বারবার বলছে যাবেনা। কেন জোর করে পাঠাতে চাইছিস! কেন ওদের কথা মানছিস?’
আষাঢ়ের চোখেমুখে অসহায়ত্ব। ক্লান্ত সুরে বলল,
‘ কেন মানছি তা তুমিও ভালো করে জানো মা। অতীতে একবার সাহায্য করেছিল ভুলে গেছ?
মালা বেগম চুপ। আষাঢ় খানিক নিরব থেকে আবার বলল,
‘ মা আমার হাত বাঁধা। কারো ঋণ রাখতে পছন্দ করিনা। চাঁদের বাবা অসুস্থ। ওকে একপলক চোখের দেখা দেখতে চাইছে। যদি ওর ওই বাড়িতে একবার যাওয়ায় উনাদের হারিয়ে ফেলা মান সম্মান ফিরিয়ে আনা যায়। তাহলে ক্ষতি কি?’
মালা বেগম আরও কিছুক্ষণ চাঁদকে বোঝানোর চেষ্টা করল পারলো না। এক সময় হতাশ হয়ে ফিরে গেল।
মালা বেগম চলে যাওয়ার পর ,আষাঢ় খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। নিরবতা ভেঙে নিমিষ স্বরে ডাকলো,
‘ চাঁদ!’
ভেতর থেকে কোনো উত্তর এলো না। দরজায় করাঘাত করল আষাঢ়। আবার ডাকলো ঠান্ডা শান্ত সুরে বলল,
‘ একবার দরজা খুলো। আমার কথাটা শোন। তারপর তোমার যা সিদ্ধান্ত তুমি করিও।’
আষাঢ়ের করুণ ডাকে চাঁদের অভিমান খানিক গললো বোধহয়। ভেতর থেকে নুপুরের ঝনঝন আওয়াজ শোনা গেল। চাঁদ এসে দরজা খুলল। অভিমান জুড়ে ভেজা স্বরে বলল,
‘ আমি কি আপনাকে এতই বিরক্ত করি? আমাকে তাড়ানোর আপনার এত তাড়া!’
হতাশ শ্বাস ফেলল আষাঢ়। ঘরে এসে দুয়ার ভিড়িয়ে দিলো। বলল,
‘ আমার হৃদয়ের, চোখের প্রশান্তি তুমি। তোমাকে তাড়ানোর কেন তাড়া থাকবে আমার?’
চাঁদের অভিমানী ভাঙা স্বর,
‘ তাহলে জোর করছেন কেন?’
‘ তোমার বাবা অসুস্থ। একবার চোখের দেখা দেখতে চাইছে তোমায়!’
চাঁদ অধৈর্য হয়ে পড়ল। অতিষ্ঠ সুরে বলল,
‘ কেন বুঝছেন না এসব মিথ্যা, বানোয়াট! আপনি আমার ভাইদের চিনেন না। ওদের চোখে অনেক রহস্য, অনেক কিছু লুকায়িত! আমার মন বলছে, একবার এখান থেকে গেলে কোনোদিন ফিরতে পারবো না আর। সেসব ভেবে দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার। আর যদি বাবা অসুস্থ-ই হয়ে থাকে তাহলে আমাকে কেন ডাকবে? আমাকে তো চিরকাল অলক্ষ্মী মানে। আর যেই মানুষটা আমাকে এত অবহেলা করল, ব্যবসায়ীক সম্পর্ক গড়তে নিজের মেয়ে বলি দিতে প্রস্তুত! আমি তার কাছে কেন যাবো?’
বলতে বলতে কেঁদে ফেলল চাঁদ। আদুরে হাতে আষাঢ় বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ তুমি বেশি ভাবছ চাঁদ। এমন কিছু না। আমি দূরে থেকেও সর্বদা তোমার সাথে থাকবো। মাত্র কয়েকটা দিন-ই তো!’
চাঁদের কান্নাভেজা অভিযোগের আওয়াজ,
‘ এই কয়েকটা দিনের দূরত্ব আমার কাছে হাজার বছর সমান।’
আষাঢ়ের অনেক বোঝানোর পর চাঁদ ভাইদের সাথে বাড়ি যেতে রাজি হলো। মালা বেগম থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। গাড়িতে উঠার সময় পেছনে ফিরে অশ্রুভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে আষাঢ়ের মুখপানে তাকালো। মনে মনে বলল,
‘ এতটা সৎ দায়িত্বশীল না হলেও পারতেন আষাঢ়। আপনার ভালোমানুষি যেন আমাদের সম্পর্কের কাল না হয় আবার!’
চলবে…….
সাধনার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। বাথরুমে সে কতক্ষণ ছিল? যে আরাধ্য এর ভেতর ঘুমিয়েও পড়ল! ঘরের আলো জ্বালিয়ে আরাধ্যের ঘুম ভাঙতে চাইল না। ওড়নাটা পাশে রেখে, ড্রিম লাইটের টিমটিম জ্বলতে থাকা আলোতে খোলা কেশ গুছিয়ে নিলো। জানালা মেলে থাকতে দেখে, বন্ধ করার জন্য সেদিকে পা বাড়ালো। আচমকা অন্ধকার থেকে একজোড়া হাত তার কোমর জড়িয়ে ধরল। যেন তার চোখ ফাঁকি দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। সাধনা থমকে গেল। পাথর বনে দাঁড়িয়ে রইল। মানুষটার উত্তপ্ত ভারী নিশ্বাস সাধনার ঘাড় ছুঁইছে। সারা শরীরে অদ্ভুত শিহরণ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। চোখ চেপে সাধনা ভারী ভারী নিশ্বাস ফেলছে। হাত জোড়া কামিজ ভেদ করে তার উন্মুক্ত কোমর ছুঁয়ে, মেদহীন পেটের দিক বাড়িয়ে দিলো। পুরুষালি তীব্র ঘ্রাণটা জানান দিচ্ছে মানুষটা তার প্রেমিক পুরুষ আরাধ্য ভাই যে। পূর্নিমার চাঁদের আলো ভুবন ছুঁইছে। জানালা মাড়িয়ে চন্দ্রসুধাটা তাদের ছুঁয়ে দিচ্ছে। সাধনার পিঠ আরাধ্যের বুকে মিশে, গভীর ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। আরাধ্যের অবাধ্য হাতজোড়া আরো গভীর ভাবে তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। গভীর চুমুতে গলা ঘাড় ভরিয়ে দিচ্ছে। চোখ বুজে জড়সড় কাঁপছে সাধনা। গলা শুকিয়ে তেষ্টা পাচ্ছে। ছোট ঢোক গিলল। মলিন কাঁপাকাঁপি কন্ঠে ডাকল একবার,
‘ আরাধ্য ভাই’
ডাকটা যেন পছন্দ হলো না আরাধ্যের। ঘাড়ে আলতো কামড় বসিয়ে দিলো। সাধনার মুখ থেকে ব্যথাতুর আওয়াজ বেরিয়ে এলো। আরাধ্য নিজের দিক ফিরিয়ে জানালার সাথে সাধনাকে চেপে ধরল। চন্দ্রসুধার উজ্জ্বল আলোতে আরাধ্যের চোখে স্পষ্ট উন্মাদনা, অস্থিরতা দেখলো। সাধনার বুকের ধুকপুক বাড়লো। নিশ্বাসের উঠানামা আরো গভীর হলো। সরল, নিমিষ দৃষ্টিতে নিগূঢ় চেয়ে রইল। এই রূপে এর আগে কখনো দেখেনি আরাধ্যকে। অস্থির, অধৈর্য আরাধ্য তার দিক দুকদম এগিয়ে এলো। চিবুক চেপে মুখ তুলে বলল,
‘ ভাই না। শুধু আরাধ্য!’
সাধনা থমকে রইল। নিমিষ, বিস্মিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। সাধনার ফ্যালফ্যাল চাহনিটা আরাধ্যের মাথাটা আরো বিগড়ে দিলো। উত্তেজনা, অস্থিরতা কয়েক গুন বাড়ল। আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। সাধনার ঠোঁটের দিক ঠোঁট বাড়াতে সে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আরাধ্য কপাল কুঁচকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। সাধনা যেন সেই চোখের ভাষা বুঝলো। নিজ থেকেই ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,
‘ যা করতে চাইছেন। ভেবে চিন্তে করছেন তো!’
আরাধ্যের অস্থির কন্ঠের উত্তর,
‘ এখানে ভাবার কি আছে, তুমি আমার বউ….
পড়ুন ইবুক ‘সেনিওরিতা’
প্রমোকোড ব্যবহার করে ৫০ টাকার বই মাত্র ৩৮ টাকায় পেয়ে যাচ্ছেন। ঝটপট অর্ডার করে ফেলুন। অর্ডার করেছেন তো?
প্রোমোকোড – EBOOKMELA2023
বিস্তারিত তথ্য, লিংক কমেন্ট বক্সে।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক দিন পর গল্প দিচ্ছি পেজের রিচ কম। গল্প পৌঁছালে রেসপন্স করবেন)
টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺