বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব-৩৯

0
1208

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৯
.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চরম অবাক হলো আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা। এমন ভয়ংকর ডিল কেউ করতে পারে তা জানা ছিলো না ওনাদের। নিজের ছেলের প্রাণের বিনিময়ে টাকা নেবে? কোনো বাবা মা এই কথা চিন্তাও করতে পারেনা। আশরাফ মৃধা এবার রাগী গলায় বললেন,

— ” কী বলছো কী তুমি হ্যাঁ? আমার ছেলের জীবনের থেকে টাকা বড় নাকি? আমাদের কিচ্ছু চাইনা শুধু আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।”

আদ্রিয়ান হালকা হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে কী বলছেন কী টাকার চেয়ে মূল্যবান কিছু আছে নাকি? সো আপনারা দেখুন আমি আমার কাজ করি।”

বলেই অর্কর শরীরে ছুড়ি দিয়ে আরেকটা টান মারতেই মিসেস রাহেলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

— ” এভাবে জানোয়ারের মতো আমার ছেলেটাকে মেরে যাচ্ছো। তার ওপর বাবা মায়ের সামনে সন্তানের প্রাণ নিয়ে ডিল করছো? তুমি কী মানুষ?”

এবার আদ্রিয়ান অর্ককে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের সামনে গিয়ে বলল,

— ” বাহ। আজ খুব মনুষ্যত্ব জেগে উঠেছে দেখছি? আপনারা আমাকে আজ মনুষ্যত্ব শেখাচ্ছেন? কিন্তু টাকার কাছে তো মনুষ্যত্ব খুব সহজেই বিক্রি হয়ে যায় তাইনা। টাকার কাছে তো সবকিছুই মূল্যহীন। সেটা ছেলে হোক বা ভাগ্নী?”

এবার আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা দুজনেই মাথা নিচু করে ফেললেন। আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” এখন মাথা নিচু করে ফেলছেন কেনো? আচ্ছা এতো লোভ ছিলো আপনাদের? যেই মেয়েটা জন্ম থেকে মায়ের আদর পায়নি, সদ্য বাবা হারা হয়েছে সেই মেয়েটার ওপর একটুও সহানুভূতি হয়নি আপনাদের? অথচ নিজের ছেলের এই কষ্টটুকু দেখে আপনাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটার ওপর ওরকম অত্যাচার করার সময় মনে পরেনি যে ওও কারো মেয়ে। মেয়েটার কান্না আপনাদের মনকে একটুও গলাতে পারেনি তাইনা? আপনাদের এই গুনধর ছেলের কষ্টে কাঁদার জন্যে আপনারা আছেন আর ওর তখন কেউ ছিলোনা বলে আপনারাও এতো নির্দয় হয়ে গেছিলেন? ওই সময়টাতে ওর সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো কারো সাপোর্ট কারো ভালোবাসা কিন্তু আপনারা?”

ওনারা দুজনেই মাথা নিচু করে চুপ করে আছেন। কী আর বলবেন? বলার মতো বাকি কী আছে আর? এতোদিন না বুঝলেও যেই মুহূর্তে আদ্রিয়ান ওনাদেরকে নিজের ছেলের বিনিময়ে টাকা অফার করেছে সেই মুহূর্তে ওনারা বুঝে গেছেন যে টাকার চেয়েও বড় অনেক কিছুই আছে, সম্পর্কের মূল্য টাকার চেয়েও বেশি। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আপনারা যদি ওকে একবার বলতেন যে আপনাদের ওর প্রপার্টি চাই তাহলে ও কোনো প্রশ্ন না করে হাসি মুখেই আপনাদেরকে দিয়ে দিতো সব প্রপার্টি। কিন্তু আপনারা তো.. যাক ছাড়ুন এসব আপনারা বুঝবেন না। আমার কাজ আমি করে চলে যাচ্ছি। বলেই অর্কর গলায় ছুড়ি ধরলো। অর্ক অস্ফুট স্বরে বলল,

— ” ছেড়ে দাও আমায়।”

আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” সেদিন শুধু তোর হাত ভেঙ্গেছিলাম কারণ আমার লোকরা বলেছিলো তুই অনির হাত ধরেছিলো। আর তারপরেই অনির হাতে ঐ অবস্হা দেখেছিলাম। কিন্তু যদি তোর অন্যসব কুকীর্তি তার আগে জানতে পারতাম তাহলে তোর শরীরের একটা হাড় ও আস্তো রাখতাম না।”

অর্কর আপাদত আর কিছু বলার শক্তি নেই। আশরাফ মৃধা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

— ” আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আমার ছেলে টাকে মেরোনা।”

আদ্রিয়ান অর্কর গলায় ছুড়ি রেখে বলল,

— ” আচ্ছা ছেড়ে দেবো যদি একটা পেপারে সাইন করে দেন তো।”

মিসেস রাহেলা উত্তেজিত হয়ে বললেন,

— ” তোমারা যা বলবে করবো তবুও আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও।”

আদ্রিয়ান ইশার করতেই ওর লোকেরা আশরাফ মৃধার দিকে একটা উইল এগিয়ে দিলেন। আশরাফ মৃধা উইল এর দিকে তাকিয়ে দেখলেন ওখানে লেখা আছে যে ওনার সমস্ত প্রপার্টি উনি অনিমার নামে করে দিচ্ছেন। সেটা দেখে আশরাফ মৃধা অবাক হয়ে বললেন,

— ” এসব কী?”

আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” যদি নিজের ছেলেকে বাঁচাতে চান তো আমার এটুকু কথা তো মানতেই সবে। পেপার টাতে চুপচাপ সাইন করে দিন।”

মিসেস সাহেলাও কাগজটা নিয়ে পড়ে যা দেখলেন তাতে চিৎকার করে বলে উঠলেন,

— ” নাহ। আমরা এসব কাউকে দিতে পারবোনা। এগুলো আমাদের।”

আদ্রিয়ান অর্কর গলাত ছুড়িটা আরেকটু জোরে ধরল আর অর্কর গলার কোণ হালকা কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরতে লাগল। তারপর ওনাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— “এবার আপনার ঠিক করুন যে আপনাদের কী চাই? নিজের ছেলের প্রাণ নাকি নিজেদের প্রপার্টি।”

কোনো উপায় না পেয়ে সাইন করে দিলেন আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা কাঁদতে শুরু করলেন। আদ্রিয়ান পেপারটা নিজের হাতে নিয়ে তারপর ওর লোকদের মধ্যে একজনকে অর্ককে দেখিয়ে বলল,

— ” ওকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করে দে।”

বলায় সাথে সাথেই কয়েকজন লোক অর্ককে তুলে নিয়ে গেলো। আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা বসে বসে কাঁদছেন। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ওনাদের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ওনাদের কাছে গিয়ে বলল,

— ” আপনারা যেমনি হন কিন্তু আমার থেকে বয়সে বড়। তবুও আপনাদের আমার সামনে নিজেদের হাত জোর করতে হয়েছে। ইনফ্যাক্ট আমি করতে বাধ্য করেছি। তারজন্যে আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি।”

এটুকু বলে আদ্রিয়ান নিজের হাত জোর করল ওনাদের সামনে। আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা দুজনেই বেশ অবাক হলো। একটু আগের হিংস্র মানুষটার সাথে একে মেলাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” কিন্তু কী বলুনতো? কর্মের ফল সবাইকেই ভোগ করতে হয়। তাই আপনাদেরও করতে হচ্ছে এবং হবে। মানুষ ভূল করে তবে আপনারা যেটা করেছেন সেটা ভূল না পাপ। ভূল যেমন সংশোধন করা যায় ঠিক সেই ভাবেই পাপের প্রাশচিত্যও হয়। আপনারাও চাইলে নিজেদের শুধরে নিতে পারবেন। সেই সময়টা দিলাম আমি আপনাদের। হয়তো সব ফেরত পেলেও পেতে পারেন। ”

আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা আবারো মাথা নিচু করে ফেললো। আদ্রিয়ান আবারও বলল,

— ” অর্কর তেমন কিছুই হয়নি। ছুড়ির আঘাতে শুধু চামড়া গুলোই কেটেছি আমি। ওকে আঘাত করার উদ্দেশ্য শুধু আপনাদের ভয় দেখানো ছিলোনা। আপনারা হয়তো জানেনা ও অনিকে রেপ পর্যন্ত করতে চেয়েছিলো। যদি সেদিন অনি এই বাড়ি থেকে না পালাতে পারতো তো আপনার ছেলে ওর সাথে কী করতো সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারত। ওর শাস্তি এর চেয়েও ভয়ানক হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু শুধু আপনাদের কথা ভেবে ওকে ছেড়ে দিলাম আমি।”

ওনারা দুজনে এবারও অবাক হলেন ওনারা এটা জানতেন না। আদ্রিয়ান চলে যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে বলল,

— ” আর শুনুন এই বাড়ি এখন আর আপনাদের নয় তাই এই বাড়িটা ফাকা করে ফেলুন এক্ষুনি। আমার একটা গাড়ি বাইরে ওয়েট করছে। আপনাদেরকে হসপিটালে ড্রপ করে দেবে। আমি জানি অর্কর চিকিৎসার টাকা এখন আর নেই আপনাদের কাছে। ওর চিকিৎসার সব খরচ সময়মতো হসপিটালে পৌছে যাবে। তবে হ্যাঁ শুধু চিকিৎসার টাকা টুকুই।”

বলে ওখান থেকে চলে গেলো আদ্রিয়ান। আর আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাও ছুটলেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

____________________

বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে অনিমা আর বার বার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রিয়ান কেনো এখোনো আসছেনা সেই চিন্তাই করে চলেছে ও। যদিও একজন সার্ভেন্ট এসে বলে গেছে যে আদ্রিয়ানের আসতে লেট হবে কিন্তু অনিমার মনে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে এতোরাত অবধি কোথায় আছে লোকটা কোনো বিপদ হয়নি তো? এসব নানারকম চিন্তা করতে করতে রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়েই উঠে বসল ও। তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান এসছে। অনিমার দিকে তাকিয়েই আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী ব্যাপার ঘুমাওনি এখনো?

অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাতের খাবারটা এখনো পরে আছে, খায়নি অনিমা। এবার একটু রাগী গলায় বলল,

— ” সমস্যা কী তোমার বলবে? এতো করে বলি যে টাইমলি খাওয়া আর ঘুমটা তোমার জন্যে কতোটা ইমপর্টেন্ট? তবুও তুমি একি কাজ করবে? এতো বাচ্চামো করলে চলে?”

অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে অনিমার দিকে তাকিয়ে তারপর ওয়াসরুমে চলে গেলো। এরমধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে আদ্রিয়ানের খাবারটাও দিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান ভেজা চুল নাড়তে নাড়তে বাইরে এলো। অনিমা তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজকেও আদ্রিয়ানকে আফটার শাওয়ার লুকে বেশ সুন্দর লাগছে। আদ্রিয়ান একটু চুল নিয়ে ওদের সামনে বসে ওর দিকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে পরোটা ছিড়ে অনিমার মুখের সামনে ধরতেই আদ্রিয়ান দেখলো অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে একটা কাশি দিলো আর অনিমা চমকে উঠলো। অাদ্রিয়ান মুখে এক দুষ্ট হাসি রেখেই বলল,

— ” আমাকে দেখার জন্যে অনেক সময় পাবে আপাদত খেয়ে নাও।”

অনিমা সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো আদ্রিয়ানের থেকে। ভীষণ লজ্জা পেলেও নিজেকে সামলে বলল,

— ” বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে।”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে ম্যাডাম খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।”

অনিমা আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে বলল,

— ” এবার আর একটা কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ো।”

অনিমা এক্কেবারে বাদ্ধ মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান ওর খাবারের প্লেটটা নিয়ে সোফায় চলে গেলো। কিন্তু অনিমা শুয়ে শুয়ে আদ্রিয়ানকেই দেখে চলেছে। আদ্রিয়ান সবে খাবারের এক লোকমা মুখে দিয়েছে অনিমাকে ওভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিবোতে চিবোতে বলল,

— ” কিছু বলবে?”

অনিমা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু চুপ থেকে তারপর বলল,

— ” আপনার আজ এতো লেইট হলো যে?”

আদ্রিয়ান স্বাভাবিকভাবেই খেতে খেতে জবাব দিলো,

— ” কাজ ছিলো একটু।”

অনিমা আর কিছু না বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো সেটা দেখে আদ্রিয়ান লোকমা মুখে দিতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল,

— ” অনেক রাত হয়েছে চোখ বন্ধ করো।”

অনিমা চোখ বন্ধ করলো আদ্রিয়ানও খাওয়ায় মন দিলো। কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখলো অনিমা আবারও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলল,

— ” চোখ বন্ধ।”

অনিমা আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে খাওয়াটা শেষ করে সোফায় শুয়ে পরলো। অনিমা এখনো ঘুমায়নি সেটা আদ্রিয়ান ভালোই বুঝতে পারছে। কারণ অনিমা বারবার পিটপিটে চোখে দেখে চলেছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান সেটা খেয়াল করছে। অনিমাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলল,

— ” আমাকে আসতে হবে?”

অনিমা ভয় পেয়ে খিচে বন্ধ করে রাখলো আদ্রিয়ানও মিটমিটিয়ে হাসছে অনিমার বাচ্চামো গুলোকে দেখে। এভাবে নানারকম খুনশুটির মধ্যে দিয়েই রাত পার হয়ে গেলো।

___________________

স্নিগ্ধা কফির মগ নিয়ে রিকের দরজার কাছে গিয়ে দেখলো যে দরজাটা ভিরিয়ে রাখা। ভেতরে যাবে কী না ভাবতে লাগলো। তিন বছর আগে হলে এতো চিন্তা করতোনা হুট করেই ঢুকে যেতো। কিন্তু এখনতো রিক ওকে একপ্রকার সহ্যই করতে পারেনা। পরে নিজেই নিজেকে বললো,

— ” কাম অন স্নিগ্ধা। কী আর করবে? বড়জোর আবার অপমান করবে। ইউ ডোন্ট কেয়ার।”

নিজের মনে এসব আউল ফাউল বকে ভেতরে চলে গেলো আর ভেতর বেশ কয়েক কদম এগিয়ে সামনে তাকাতেই স্নিগ্ধা তো অবাক। কারণ রিক জাস্ট একটা টাওয়েল পরে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে। সিগ্ধা চোখ বন্ধ করে হালকা চেঁচিয়ে বলল,

— ” ইইইহ। ড্যাম ইট।”

রিক পেছনে ঘুরে স্নিগ্ধাকে দেখে চমকে গিয়ে বলল,

— ” আব্বে, তুই? এখানে কী করছিস?”

স্নিগ্ধা চোখ খুলে তাকিয়ে রিকের অবস্হা মনে পড়তেই আবার চোখ বন্ধ করে বলল,

— ” রুমের দরজা লক না করে এভাবে থাকাটা কোন ধরণের ম্যানার্স?”

রিক হেয়ার ব্রাশটা রেখে স্নিগ্ধার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” কারো রুমে নক না করে ঢোকাটাও কোন ধরণের ম্যানার্স সেটা আমিও বুঝতে পারছিনা।”

স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করেই বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

— ” তাই বলে তুমি এভাবে থাকবে?”

রিক হাত ভাজ করে বলল,

— ” ওয়ে ড্রামাকুইন ড্রামা বন্ধ কর। তুই যে এতোটা লজ্জা পাওয়ার মতো জিনিস না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

স্নিগ্ধা এবার চোখ খুলে বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তুমি কী জানো যে তুমি কতোটা ইরেটেটিং একটা মানুষ।”

রিক মুখ ঘুরিয়ে বলল,

— ” তোর চেয়ে অনেক কম। আর তোকেনা বলেছি আমার আশেপাশে আসবিনা।”

সিগ্ধা মুখ ফুলিয়ে কফিটা টি টেবিলে রেখে বলল,

— ” তোমার কফিটা দিয়ে গেলাম। যত্তোসব ফালতু লোক। অনিমা এসে কফি আনলে ঠিক খুশিতে গদগদ হয়ে নিতো। আমি আনলেই ফোসকা পরে।”

বলেই চলে যেতে নিলেই রিক হাত ধরে বলল,

— ” তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস আজকাল।”

স্নিগ্ধা মুখ ভেংচি কেটে বললো,

— ” আমার মুখ আমি যা খুশি তাই বলবো তোমার কী? তুমি তোমার অনিমাকে নিয়েই থাকো।”

রিক স্নিগ্ধাকে আরেকটু কাছে বলল,

— ” ওর সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করছিস?”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” আমি জানি আমি তোমার অনিমার মতো অতো সুন্দরী বা পার্ফেক্ট নই। নতুন করে মনে করাতে হবে না।”

বলেই রিকের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুম চলে গেলো স্নিগ্ধা। রিক স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” তোকে কীকরে বলবো যে তোকে নিজের থেকে দূরে রাখার একটাই কারণ তোর আর ওর অদ্ভুত কিছু মিল। তোদের দুজনের মিলটাই তো আমাকে আরো জ্বালায়। তোর উপস্হিতি আমাকে ওর কথা আরো বেশি করে মনে করিয়ে দেয়। আই এম সরি সিগ্ধু।”

#চলবে…

( গতকাল পার্ট যথেষ্ট বড় দিয়েছি তবুও অনেকের কাছে ছোট মনে হয়েছে। তাদেরকে বলছি আ’ম সরি বাট এর চেয়ে বড় আপাদত আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। গল্প লেখা ছাড়াও বারতি অনেক কিছুই করতে হয় আমাকে। ধন্যবাদ এন্ড হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here