বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব-৩৫

0
1233

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব: ৩৫
.
বর্ষাঋতুর বেশ চমৎকার একটা ব্যাপার হলো সারারাত বর্ষণ হলে পরের সকালটা বেশ সুন্দর হয়। চারপাশে রোদের উজ্জ্বল মৃদু আলো ঝকঝক করে, গাছপালার সবুজ ভাব আরো বৃদ্ধি পায়, ভেজা,সিগ্ধ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরী হয়। । শহুরে অঞ্চলে সবুজ প্রকৃতির তেমন সাক্ষাৎ না পাওয়া গেলেও আদ্রিয়ানের এই বাড়ির ব্যালকনি দিয়ে খুব সুন্দর একটা পরিবেশ চোখে পরে। দূরে একটা মাঠ, সবুজ গাছপালা, একটা বিল খুব চৎকার একটা পরিবেশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে আদ্রিয়ানকে দেখতে পায় নি অনিমা। কোথায় গেছে জানেনা ও। তাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখছে ও
। চোখ বন্ধ করে সকালের এই ফ্রেশ হাওয়া উপভোগ করছে। হঠাৎ পেছন থেকে কারো শব্দ পেয়ে অনিমা পেছন ঘুরে দেখলো আদ্রিয়ান দুহাতে দুটো কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অাদ্রিয়ান অনিমার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

— ” গুড মর্নিং।”

অনিমা কফির মগটা হাতে নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মর্নিং। কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?”

আদ্রিয়ান রেলিং এ হেলান দিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

— ” গার্ডেন এরিয়ার ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছিলাম একটু। ওখান থেকে এসে জুস খেয়ে একটু রেস্ট করে কফি খেতে ইচ্ছে করলো ভাবলাম তোমার জন্যেও নিয়ে আসি।”

অনিমা কিছু বললোনা। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরবে কফি খেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর অনিমা বলল,

— ” আচ্ছা আমার তো অফিস যেতে হবে নাকি?”

আদ্রিয়ান কফির মগের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমার বসের সাথে কথা বলে রেখেছি আমি। উনি মেডিকেল গ্রাউন্ডে ছুটি দেখিয়ে দেবেন।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” কিন্তু কেনো?”

আদ্রিয়ান ঘুরে রেলিং এ ভর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমিতো জানো তোমার এখন একা বাইরে বেরোনোটা কতোটা আনসেফ। তবুও এসব বলছো? ”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” রিস্ক তো আপনারো আছে!”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” ওরা আমার কিছু করতে পারবেনা।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” আপনি এতোটা সিউর কীকরে?”

আদ্রিয়ান মগটা ওখানকার টুলের ওপর রেখে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভরসা নেই আমার ওপর?”

অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে মগটা রেখে বলল,

— ” আপনার ওপর থাকলেও ওদের ওপর নেই। একদমি নেই, দে ক্যান ডু এনিথিং।”

আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহু ধরে বলল,

— ” কিচ্ছু হবেনা আমার একটু ভরসা রাখো আমার ওপর। আই প্রমিস আমার কিছুই হবে না। বাট এই বাড়ি থেকে আমার পার্মিশন ছাড়া বেড়োবেনা । ওকেহ?”

অনিমা মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান হেসে অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আর অনিমাও আদ্রিয়ানের পিঠে আলতো করে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ানের হার্টবিট শুনতে লাগল।

____________________

কাল রাত থেকে রিক ওর মামার বলা কথাগুলোই ভেবেছে। কবির শেখ ঠিকি বলেছেন অনিমাকে পেতে হলে ওকে খারাপ তো হতেই হবে। ও অনিমাকে হারাতে পারবেনা। অনিমাকে পেতে ওকে যা করতে হয় ও করবে। যতো খারাপ হতে হয় হবে। কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে ও পাশ থেকে ফোন তুলে ওর লোকদের ফোন করলো। ফোন রিসিভ করতেই বলল,

— ” আজ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরকে কিডন্যাপ করে আমাদের ঐ সিকরেট গোডাউনে নিয়ে আয়।”

ওপাশ থেকে লোকটা বলল,

— ” ভাই মেরে দেবো?”

— ” আরে না। যা বলছি শোন।”

এরপর রিক লোকটাকে বুঝিয়ে দিলো কীভাবে কী করতে হবে। তারপর ফোনটা কেটে দিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান আবরার এবার তো তোমাকে অনিকে আমায় দিতেই হবে।”

_____________________

একটা রিয়ালিটি শো তে গেস্ট হয়ে গেছিলো আদ্রিয়ান । শো এর শুটিং কম্প্লিট করে সবে বেড়োতে যাবে তখনি বাইরে তাকিয়ে ও কিছু একটা ভাবলো। তারপর ওর গার্ড দের দিকে তাকিয়ে ওদের চলে যেতে বলল। ওর গার্ড রা একটু অবাক হলেও কিছু না বলে চলে গেলো। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বেড়িয়ে গিয়ে ওর গাড়ির দরজা খুলতে নিলেই ওর পাশে একটা গাড়ি এসে থামলো আর সেই গাড়ি থেকে কিছু কালো পোশাক আর মাস্ক পরা লোক এসে ওকে ঘিরে ধরল চারপাশ দিয়ে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ওদের দিকে, সকলের হাতেই গান। আদ্রিয়ান সবাইকে একবার স্ক্যান করে বলল,

— ” কী চাই? অটোগ্রাফ নাকি সেলফি?”

আদ্রিয়ানের প্রশ্ন শুনে ওরা সবাই হাসলো। তারপর আদ্রিয়ানের মাথায় গান তাক করে বলল,

— ” আপনার জান।”

আদ্রিয়ান হালকা পিছিয়ে গানটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সরি ভাই। সেটা আমার হাতে নেই ওপর ওয়ালার হাতে, ওনার কাছে চেয়ে নিন দিলেও দিতে পারেন।”

আদ্রিয়ানের এর দিকে গান তাক করে থাকা লোকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠুন।”

আদ্রিয়ান এবার মুচকি হেসে বলল,

— ” আরে ভাই আমার কাছে গাড়ি আছে তো আর গাড়িতে পেট্রোল যথেষ্ট পরিমাণ আছে। তবুও লিফট দিতে চাওয়ার জন্যে থ্যাংকস।”

পাশের লোকটা এবার হুংকার দিয়ে বলল,

— ” ওই। মজা করছো আমাদের সাথে? ভালোয় ভালোয় গাড়িতে ওঠো নইলে এখানেই শুট করে দেবো।”

আদ্রিয়ান সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বলল,

— ” আরে উঠছি উঠছি এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো? আর এই গান টা তো নামান আগে, লাগেতো।”

লোকটা আদ্রিয়ান এর মাথায় গান ঠেকিয়ে বলল,

— ” চলো ওঠো।”

আদ্রিয়ান চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসল। সাথে সাথে লোকগুলোও গাড়িতে উঠে বসল। আদ্রিয়ানের দুপাশে দুজন। পেছনে তিনজন আর ফন্ট সিট আর ড্রাইভিং সিটে দুজন। আশেপাশের বেশ অনেকেই দেখলো আদ্রিয়ানের কিডন্যাপ হতে। গাড়ি স্টার্ট করতেই পাশের দুটো লোক আদ্রিয়ানের হাত বাঁধতে শুরু করলেই আদ্রিয়ান হকচকিয়ে বলল,

— ” আরে করছেন টা কী? আমাকে দেখে আপনাদের মেয়ে মনে হচ্ছে নাকি যে গাড়িতে তুলে হাত পা বেধে রেপ করবেন? বাই এনি চান্স আপনারা গে নয় তো? বাট এতোগুলো গে একসাথে? ট্রান্সজেন্ডারদের মতো গে রাও আজকাল এক জায়গায় থাকতে শুরু করেছে নাকি?”

ফন্ট সিটে বসা লোকটা আদ্রিয়ানের দিকে আবারও গান তাক করে বলল,

— ” খুব মজা পাচ্ছেন মনে হচ্ছে? কপাল বরাবর গুলি চালিয়ে দিলে পানি চাওয়ার সময়টাও পাবেন না।”

আদ্রিয়ান লোকটার দিকে তাকিয়ে হতাশাজনক একটা চাহনি দিয়ে বলল,

— ” কথায় কথায় এমনভাবে বন্দুক তাক করেন যে দেখে মনে হয় অলেম্পিক চ্যাম্পিয়ন।”

লোকগুলো কিছু না বলে আদ্রিয়ানের হাত বেধে দিলো। আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। এরপর একটা লোক বলল,

— ” আমিতো ভেবেছিলাম এর সাথে গার্ড থাকবে। কিন্তু এ তো পুরো একাই এসছে।”

অন্য একজন বলল,

— “ভালোই হয়েছে আমাদের আর কষ্ট করে মারাপিট খুনখারাপি করতে হলোনা।”

অনেকটা পথ যাবার পর হঠাৎ আদ্রিয়ানের চোখ বাধতে গেলেই আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আরে ভাই আবার চোখ কেনো?”

ফ্রন্ট সিটের লোকটা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে বাধুন, বাধুন।”

লোকগুলো ওর চোখ বেধে দিয়ে একটা গোলিতে ঢুকলো। সেখানকার এক গোডাউনের সামনে গাড়ি থামলো। লোকগুলো আদ্রিয়ানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। তারপর একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত দুটো পেছন দিকে বেধে চোখ খুলে দিলো। চোখ খুলে দিতেই আদ্রিয়ান চোখ ঝাপটে বলল,

— ” বাপরে আরেকটু হলেই অন্ধ হয়ে যেতাম।”

তারপর চারপাশে তাকিয়ে বলল,

— ” বাই দা ওয়ে কোথায় আছি আমি?”

ওদের মধ্যে একটা লোক অাদ্রিয়ানের কাছে এসে বলল,

— ” ভাবী কোথায়?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভাবী? সেটা কোন জায়গা? পৃথিবীর ভেতরে নাকি বাইরে?”

লোকটা রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আমি জায়গা বলিনি। অনিমা ভাবীর কথা বলছি।”

আদ্রিয়ান মাথা নেড়ে বলল,

— ” ওহ আচ্ছা। বাট আমি আপনাদের কোন কালের ভাই বলুনতো? না মানে আমার জানা মতে আমার বাবার একটাই ছেলে আর সেটা আমি।”

লোকটা বুঝতে না পেরে বলল,

— ” কী সব পাকাচ্ছো?”

আদ্রিয়ান চিন্তিত ফেস করে বলল,

— ” না মানে অনি তো আমার বউ। তো ও যদি আপনাদের ভাবী হয়, লজিক্যালি আমি ভাই তাইনা?”

আদ্রিয়ানের এসব ইয়ারকি ওদের একটুও ভালো লাগছে না তাই ওদের মধ্যে আরেকজন রাগে গজগজ করে বলল,

— ” দেখো খুব বেশিই বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি। রিক স্যার আসছেন আর উনার মাথা সবসময় গরম থাকে। খুব ভয়ংকর কিন্তু উনি। তাই নিজের ভালো চাইলে উনি আসার আগেই বলে দাও নইলে…”

— ” নইলে?”

লোকটা সোজা আদ্রিয়ানের মাথায় বন্দুক তাক করে বলল,

— ” সোজা ওপরে যেতে হবে।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এই কথায় কথায় এভাবেই বন্দুক তাক করার কী আছে হ্যাঁ? যদি হার্ট ফেইল টেইল করে মরে যাই তার দায় কী আপনি নেবেন?”

লোকগুলো হেসে দিলো আদ্রিয়ান কথায় তারপর গান সরিয়ে বলল,

— ” এই কলিজা নিয়ে রিক ভাই এর সাথে লড়তে এসছো। আমরা ওনার কথায় কাজ করি তাতেই এই বন্দুক আমাদের কাছে খেলনা। এবার রিক ভাই কী ভেবে দেখো?”

আদ্রিয়ান এক ভ্রু উঁচু করে বলল,

— ” বন্দুক আপনাদের কাছে খেলনা?”

লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” ওই এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি বলো ভাবী কোথায় আছে?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবার ভান করে তারপর বলল,

— ” কোথায় যেনো রেখেছিলাম, ভূলে গেছি।”

লোকটা আর নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলোনা আদ্রিয়ানের পায়ের কাছে একট শুট করে ফেলল। আদ্রিয়ান চমকে গেলো। লোকটা বলল,

— ” এবার বল নয়তো পরের শুটে গুলিটা তোর শরীরের ভেতর দিয়ে যাবে।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,

— ” ও.এম.এ.. এটাকে শুট করা বলে?”

লোকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” তো তোর কী অন্যকিছু মনে হচ্ছে?”

আদ্রিয়ান হেসে হুট করেই পেছন থেকে হাত সামনে এনে পাশের লোকটার কাছ থেকে একঝটকায় বন্দুকটা নিয়ে নিলো আর সোজা সামনের লোকটার পায়ে শুট করলো। লোকটা চিৎকার করে পা ধরে বসে পরলো। সবাই শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে উঠে ঐ লোকটার পাশে গিয়ে বসে বলল,

— ” একে বলে শুট করা। বন্দুক থেকে গুলি চললে কারো রক্তই যদি না বেড়োয় তাহলে ব্যাপারটা পানসে লাগে।”

পাশে থেকে একটা লোক আদ্রিয়ানের দিকে তেড়ে আসতে নিলে লোকটার দিকে না তাকিয়েই তার বাহুতে শুট করলো আদ্রিয়ান। লোকটার বন্দুক হাত ছিটকে ওপরে উঠে গেলো আদ্রিয়ান সেটা ক্যাচ করে সামনে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আর একে বলে টার্গেট।”

এটুকু বলে উঠে দাড়াতেই অন্য একটা লোক আদ্রিয়ানকে শুট করতে গেলে আদ্রিয়ান লোকটার হাতে শুট করলো। সবাই অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে কারণ আদ্রিয়ান এমনভাবে গুলি চালাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে ও যেনো একজন ট্রেইনড শুটার। এবার দুপাশ থেকে দুটো লোক ওকে শুট করার জন্যে বন্দুক তাক করতেই আদ্রিয়ান দু হাত দিয়ে দুপাশের দুজনকে একসাথেই শুট করল একজনের হাটুতে আরেকজনের হাতের কবজিতে। আরেকজন লোক বন্দুক তাক করতেই আদ্রিয়ান তাকালো লোকটার দিকে। সেটা দেখেই লোকটা হকচকিয়ে বলল,

— ” ভাই! ভাই! ভাই!প্লিজ শুট করবেন না আমি তো এমনিই বন্দুক তুলেছি বিশ্বাস করুন। আমাকে মারবেন না। প্লিজ।”

কিন্তু আদ্রিয়ান শুট করে দিলো। আর লোকটা চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিলো কিন্তু কিছুক্ষণ পরেও কোনো ব্যাথা অনুভব না করে আস্তে আস্তে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ওর হাতে নয় বরং বন্দুকে শুট করেছিলো। যার ফলে বন্দুকটা ওর হাত থেকে পরে গেছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে প্রথম যাকে শুট করেছিলো তার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একে বলে বন্দুক নিয়ে খেলা। কী ভাবছিস হাত তো বেঁধে রেখেছিলি আমার, তাহলে হাত খুললো কীকরে তাইতো? আরে গাধা। আই এম আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। তাবু গেরো, পাল গেরো, বড়শী গেরো, ফিশার ম্যানস গেরো এরকম আরো অনেক গেরো বাঁধতেও জানি, একঝটকায় খুলতেও জানি। আর তুই তোর ঐ মোটা মাথা দিয়ে আমায় আটকে রাখবি?”

লোকটা পা চেপে ধরেই হুংকার দিয়ে বলল,

— “ওই।”

আদ্রিয়ান এবার এমন জোরে ‘ওই’ বলে একটা ধমক দিলো যে উপস্হিত সবাই কেঁপে উঠলো। সাথে সামনের ব্যাক্তিটিও। আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” বনের হায়নার হুংকারে শুধু হাতে গোনা কয়েকটা পশু পিছিয়ে যায়। আর সিংহের গর্জনে পুরো বন কেঁপে ওঠে।”

এরপর আদ্রিয়ান সবাইকে ইশারা করে একজায়গায় বসতে বলল। ইতিমধ্যে আদ্রিয়ানের যেই রুপ ওরা দেখেছে তার পর পাল্টা কিছু বলার সাহস আর নেই ওদের মধ্যে। তাই সবাই নিজের আঘাত স্হানগুলো চেপে ধরে কোনোমতে একজায়গায় এসে বসল। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে হাতের গানটা ঘোরাতে ঘোরাতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী ভেবেছিলি? শান্ত, হাসিখুশি, নরম স্বভাবের একজন রকস্টারকে তুলে নিয়ে আসবি, গান তাক করে ভয় দেখাবি? আর সে ভয় পেয়ে সুরসুর করে সব বলে দেবে? লাইক সিরিয়াসলি?”

সবাই হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” যদিও তোদের কোনো দোষ নেই। আসলে আমার সাথে বরুণ ধাওয়ান এর ‘ম্যা তেরা হিরো’ ফিল্মের ঐ ডায়লগটার খুব মিল আছে। সবাই আমাকে শান্ত,নম্র,ভদ্র, মজার একটা মানুষ মনে করে। করবেই তো। ম্যা দিখতা হু সুইট লিটল সোয়ামি টাইপ কা না? কিন্তু এটা ভেবেই সবাই ভুলটা করে ফেলে ঠিক তোদের মতো। কারণ এটা খুব কম লোকেই জানে যে এক্চুয়ালি ম্যা হু বহত বারে হারামী টাইপ কা।”

লাস্ট লাইনটা বলার সময় আদ্রিয়ানের মুখে এক অদ্ভুত হিংস্রতা দেখা গেলো যেটা দেখে ওরা সকলেই একটা শুকনো ঢোক গিলল।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here