#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৩১
#নিশাত_জাহান_নিশি
“মানে? কী বলতে চাইছেন আপনি?”
রূপলের রাগী গলার আওয়াজ শোনা মাত্রই নীহারিকার মাথা আরও গরম হয়ে গেল! কোথায় সে রূপলের সাথে ঝারি মেরে কথা বলবে তা নয় বরং রূপল উল্টো তার সাথে গলা তুলে কথা বলছে? মগের মুল্লুক না-কী সব? গাল ফুলালো নীহারিকা। রাগে কটমট করে প্রত্যত্তুরে রূপলকে বলল,
“বড়ো ভাই হয়েও বোনের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই আপনার? আবার বড়ো গলায় বলছেন কী বলতে চাচ্ছি আমি?”
সিগারেটটিতে ফুঁক দিতে গিয়েও থেমে গেল রূপল। কপাল কুচকালো সে। মেজাজাটাও তুঙে ওঠে গেল। ঝাঁজালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমি আমার কোনো দায়িত্বটা অস্বীকার করেছি? কী করেছি কী আমার বোন? ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কথা না বলে যা বলার ডিরেক্টলি বলুন।”
“তার রুমে গিয়ে একবার খুঁজ নিয়ে দেখুন। তার সাথে একবার কথা বলে দেখুন সে চাইছেটা কী! আমার ভাইয়াকে এমনকি আমার পরিবারকেও এভাবে ইগনোর করার কারণটা কী তার।”
“কে কাকে ইগনোর করছে? হয়েছেটা কী?”
“আপনার বোন আমার ভাইকে ইগনোর করছে। না ভাইয়ার কল তুলছে, না আমাদের বাড়িতে ফিরে আসবে বলে এই ব্যাপারে আমাদের সাথে কোনো কথা বলছে। এভাবে একটা সম্পর্ককে ঝুলিয়ে রাখার কারণ কী?”
বিস্তারিত শোনার পর রূপল সিগারেটটিতে ফুঁক দিলো। সিগারেটটিতে লম্বা একটি টান দিয়ে সে নাক থেকে হরদমে ধোঁয়া বের করল। নিমিষেই রাগী ভাব ভুলে অত্যন্ত শান্ত গলায় বলল,
“এখানে অযথা রাগ দেখানোর কিছু নেই। ইট’স নরমাল। এটা তাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার তারা বুঝে নিবে। হয়ত রাগারাগি হয়েছে দু’জনের মধ্যে। সময় দিন। ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমি সিরিয়াস মিস্টার রূপল! ব্যাপারটা আর তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ আমার মনে হচ্ছে আপনার বোন এই সম্পর্কটাকে মন থেকে মানতে পারছেনা কিংবা সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেনা। তার হয়ত আমার ভাই কিংবা আমার পরিবারকে পছন্দ হয়নি। অতীত নিয়েই এখনও পড়ে আছে সে। এভাবে চলতে থাকলে তো সম্পর্কটা ভাঙতে বেশী সময় লাগবেনা।”
পর পর তিনটি টানে সম্পূর্ণ সিগারেটটি শেষ করল রূপল। দীর্ঘ এক রুদ্ধশ্বাস ফেলে সে ধীর গলায় নীহারিকাকে বলল,
“আচ্ছা আমি এই বিষয় নিয়ে পিয়াসার সাথে কথা বলছি।”
“হ্যা এখনি বলুন। কথা বলার পর আপনার বোন কী জানালো সেটাও আমাকে জানাবেন।”
“রাত-বিরাতে ফোন দিয়েছেন আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য?”
“তো কীসের জন্য ফোন দিব? আমি নিশ্চয়ই সুহাসিনী নই যে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার জন্য আপনাকে ফোন দিব!”
হাপিত্যেশ করে রূপল বলল,
“হাহ্! চাইলেই তো আর সুহাসিনী হওয়া যায়না! সুহাসিনী ছিল, আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে।”
“হ্যাঁ। কঙ্কাল হয়ে থাকবে! কঙ্কালের ভূত হয়ে আপনার ঘাড় মটকাবে। আমি চাই সত্যিই সুহাসিনী ভূত হয়ে ফিরে আসুক। আপনার ঘাড় মটকাক।”
বলেই নীহারিকা চট করে কলটি কেটে দিলো। তীব্র রাগ নিয়ে ঘরের দরজাটি লাগিয়ে দিলো। ঘুমানোর জন্য অগোছালো বিছানাটিকে গুছাতে লাগল। শলার ঝাড়ু দিয়ে বিছানাটা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
“কথা শুরু করলাম ভাবি আর ভাইকে দিয়ে। আর শেষ হলো সুহাসিনীকে দিয়ে! প্রবলেম সলভ করতে গেলাম সেখানেও সুহাসিনী। এই লোক কবে যে সুহাসিনীকে ভুলতে পারবেন আল্লাহ্ তা’আলাই ভালো জানেন।”
ঘরের লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল নীহারিকা। চক্ষু জোড়া ক্লান্তি নিয়ে চোখ বুজতেই তার চোখে আরামের ঘুম ধরা দিলো। ধীরে ধীরে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল সে।
মুখ থেকে যেন সিগারেটের গন্ধ বের না হয় সেজন্য রূপল কয়েকবার ভালোভাবে কুলি করে ফ্রেশ টেশ হয়ে পিয়াসার ঘরে গেল। বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছিল পিয়াসা। অপ্রত্যাশিতভাবে রূপলকে তার ঘরে দেখামাত্রই সে শোয়া থেকে ওঠে বসল। মৃদু হেসে রূপলকে বলল,
“আসো ভাইয়া।”
কিঞ্চিৎ গম্ভীর ভাব নিয়েই রূপল পিয়াসার পাশে বসল। ক্ষীণ দৃষ্টিতে পিয়াসার দিকে তাকালো। রাশভারী গলায় শুধালো,
“তোর ঐ বাড়িতে যাচ্ছিস কবে?”
কপাল কুঁচকে এলো পিয়াসার। তীক্ষ্ণ গলায় শুধালো,
“ওটা আমার বাড়ি হলো কবে থেকে?”
“বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িও মেয়েদের আরেকটা বাড়ি হয়।”
“কিন্তু ওটাকে আমি বাড়ি মনে করিনা!”
“কারণ?”
“কারণ, আমি ঐ বাড়িতে যেতে চাইনা।”
চোখেমুখে রাগী ভাব ফুটিয়ে তুলল রূপল। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। রুক্ষ গলায় বলল,
“আমি যে কারণটা তোকে জিজ্ঞেস করছি তুই কিন্তু সেই কারণটা আমাকে বলছিস না!”
রূপলকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে পিয়াসা উঁচু গলায় বলল,
“আমার ঐ বাড়িতে ভালো লাগেনা ব্যস এটাই কারণ।”
পিয়াসার সাহস দেখে রেগে গেল রূপল! ঠাস করে পিয়াসার গালে জোরে এক চড় বসিয়ে দিলো সে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“যেমন আদর করে মাথায় তুলতে পারি। তেমনি বেয়াদবি দেখলে মাথায় তুলে আছাড়ও দিতে পারি! তুই যদি মনে করিস যে, দিনের পর দিন তুই অন্যায় করে যাবি আর আমি বা আমরা চুপ করে থাকব তাহলে কিন্তু সেটা ভুল ভাবছিস তুই! আমাদের ফ্যামিলির একটা মান-সম্মান আছে। সেই সম্মান আমরা তোর জন্য নষ্ট হতে দিবনা। কালই তুই ঐ বাড়িতে ফিরে যাবি। আমি তোকে ঐ বাড়িতে রেখে আসব। যদি আমার কথা অমান্য করার চেষ্টা করিস তো আমার আগের খারাপ রূপটা দেখতে তোর দুই সেকেন্ডও সময় লাগবেনা! মাইন্ড ইট।”
পিয়াসাকে ঠাণ্ডা মাথায় হুমকি দিয়ে রূপল হনহনিয়ে পিয়াসার রুম থেকে বের হয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে চোখে টলমল জল নিয়ে পিয়াসা রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। ঠোঁট ভেঙে কেঁদে বলল,
“ঐ নিহাল ইডিয়টটার জন্য আজ আমার ভাইয়াও আমার গাঁয়ে হাত তুলল! হাতের কাছে পেয়ে নিই তাকে আমি। ঠিক গলাটা টিপে ধরে মে’রে ফেলব!”
ইতোমধ্যেই নিহাল বেহায়া হয়ে পুনরায় পিয়াসার নাম্বারে কল করল! ফোনে নিহালের কলটি বেজে ওঠা মাত্রই পিয়াসা রাগে গজগজ করে কলটি তুলল। কাতর গলায় নিহাল হ্যালো বলতেই পিয়াসা শনশনিয়ে বলল,
“নিজে আমাকে মারতে পারছেন না বলে এখন আমার ভাইয়াকে পাঠিয়েছেন আমাকে মারধর করার জন্য? এত ধূর্ত আপনি? সাপও মারবেন কিন্তু লাঠি ও ভাঙবেন না?”
বেকুব হয়ে গেল নিহাল। পিয়াসার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলনা সে। নির্বোধ গলায় শুধালো,
“হোয়াট? এসব কী বলছ তুমি? আমি আবার কখন রূপলকে পাঠালাম তোমাকে মারধর করার জন্য?”
“এখন খুব দুধের ধোঁয়া তুলসী পাতা সাজা হচ্ছে তাইনা? ভন্ড লোক একটা!”
“আমি জাস্ট অবাক হয়ে যাচ্ছি৷ আমি থাকতে রূপল আমার বৌ এর গাঁয়ে হাত তুলল কীভাবে? এত বড়ো সাহস তাকে কে দিলো?”
“ইশ। মার টার খাওয়ানোর পর এখন খুব নাটক করা হচ্ছে তাইনা? পেয়ে নিই আপনাকে হাতের কাছে! এরপর দেখাব মজা। আমাকে মার খাওয়ানো না?”
পিয়াসা একটু নরম হতেই নিহালের প্রেম প্রেম ভাব উদয় হলো! দুষ্টু হেসে সে রোমাঞ্চকর গলায় বলল,
“তোমার হাতের মার খেতে আমার কোনো সমস্যা নেই জানোমান! তোমার যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে কী আমি এখনই আসতে পারি মার খেতে?”
তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজ নিয়ে পিয়াসা বলল,
“মার খাওয়ার খুব শখ হয়েছে না? কাল আপনার বাসায় গিয়ে আপনার পিন্ডি চটকাব আমি!”
খুশি হয়ে গেল নিহাল! স্মিত হেসে প্রফুল্ল গলায় বলল,
“তুমি সত্যিই কাল আসবে পিয়াসা?”
“আমি মানুষকে মারতে রাজি কিন্তু মার খেতে রাজি নই! কাল আপনাদের বাড়িতে না গেলে ভাইয়া আবারও আমাকে মারবে। সেজন্য বাধ্য হয়ে যেতে হবে!”
বলেই পিয়াসা টুট টুট করে কলটি কেটে দিলো। রাগে রি রি করে হাত-পা কচলাতে লাগল। ঐদিকে নিহাল খুশিতে প্রায় আত্মহারা। কাল পিয়াসা তার কাছে তার বাড়িতে ফিরে আসবে। এরচেয়ে খুশির খবর আর যেন কিছু হতেই পারেনা!এবার পিয়াসা তার এলে সে কিছুতেই পিয়াসাকে আর তার কাছ ছাড়া করবেনা। তার ভালোবাসা দিয়ে সে যত দ্রুত সম্ভব পিয়াসাকে আপন করে নিবে!
______________________________________
পরের দিন থেকেই রূপল কোট কাচারিতে দৌড়োদৌড়ি শুরু করল। রাতুল এবং মিস চারুলতা সেনকে কোটে তোলা হয়েছে৷ তাদের পক্ষে কোনো উকিল না থাকায় কেইস ঘুরে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা ছিলনা! তারা নিজেদের দোষ নিজেরাই কোটে স্বীকার করেছে। সেই অনুযায়ী রাতুলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং মিস চারুলতা সেনকে দশ বছরের সাজা শুনিয়েছে কোট! রাতুল অনেক চেষ্টা করেছিল তার বাবার সাথে একটিবার কথা বলতে। কিন্তু আফজাল হক সেই সুযোগটি দেননি রাতুলকে! বার বার তিনি রাতুলকে এড়িয়ে গেছেন। রাতুলের প্রতি মায়া হওয়ার পরেও তিনি রাতুলকে এড়িয়ে গেছেন! হৃদি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সবিতা কোটে আসতে পারেনি। হৃদিকে নিয়ে তার বাসাতেই রয়ে গেল।
কোট থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল হলো রূপলের। ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে রূপল পিয়াসাকে বলল রেডি হতে। কিছুক্ষণ নাকে কেঁদে পিয়াসা রেডি হয়ে গেল ঐ বাড়ি যেতে। নাজনীন বেগমকে ধরে কেঁদে কেটে দিশেহারা সে। যদিও সে অনেকবার বায়না ধরেছিল ঐ বাড়িতে যাবেনা সে। তবে নাজনীন বেগম তাকে আশকারা দেয়নি। উল্টো রাগ দেখিয়েছে। রূপলের ভয় দেখিয়েছে। এক প্রকার জোর করেই তাকে ঐ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
পিয়াসাকে পেছনে রেখে রূপল নীহারিকাদের বাড়ির কলিংবেল চাপল। অমনি নীহারিকা ব্যস্ত ভঙ্গিতে এসে দরজা খুলে দিলো। রূপলের দিকে এক পলক তাকানো মাত্রই নীহারিকা আহ্ বলে এক চিৎকার করে উঠল! নীহারিকার সাথে সাথে রূপলও ভূত দেখার মত চিৎকার করে উঠল! নীহারিকা ঠাস করে রূপলের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। দৌড়ে সে তার রুমে চলে গেল। রুমের দরজা আটকে সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“ব’জ্জা’ত বেটা! আর সময় পেলনা আসার?”
মুখের উপর চিৎকার করে নীহারিকা দরজাটি বন্ধ করে দেওয়ায় রূপলও তার হা করে থাকা মুখটিকে বন্ধ করে নিলো। ভাবশূণ্য হয়ে সে তার মুখটা হাত দিয়ে কিছুক্ষণ হাতালো। অতঃপর হতাশ হয়ে সে নির্বোধ গলায় বলল,
“বুঝলাম না। এই মেয়ে হঠাৎ আমাকে দেখে এত ভয় পেল কেন? আমি তো তার মত মুখে কিছু মাখিও নি! তাহলে রিজনটা কী?”
পরমুহূর্তেই রূপল আবার মিনমিনিয়ে বলল,
“তাহলে কী সে লজ্জা পেল? কিন্তু লজ্জা পেলে তো মেয়েরা ন্যাকামো করে! তার মত চিৎকার কে করে?”
#চলবে…?
এই গল্পের ৩২ পর্ব পাচ্ছি না আপু।😒😒😒
আমি অপেক্ষায় আছি ৩২ পর্বের জন্য। দয়া করে লিংক দিয়েন আপু।
এই গল্পের ৩২ পর্ব পাচ্ছি না আপু।😒😒😒আমাকে একটু ৩২ পর্বের লিংক দিয়েন।
appi apne ki 32 part paicen ?
plz 32 part