ফিলোফোবিয়া
ঊর্মি প্রেমা ( সাজিয়ানা মুনির )
৪৫.
( কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ )
পুরানো খুবলে খুবলে উঠা মানিব্যাগের ভাঁজ থেকে একটা সাদাকালো ছবি বের করল শোয়েব। চোখের সামনে ভেসে উঠল আয়শার হাস্যোজ্জ্বল চন্দ্রপ্রভা মুখ। আনমনে শোয়েবের ঠোঁটের কোণে, মৃদু রেখা ভাসলো। চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল পুরানো সেই দিন গুলো। গা জুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণ। আলতো হাতে আয়শার ছবিটায় ছুঁয়ে দিলো। অশ্রুভারাক্রান্ত দৃষ্টিতে নিমিষ তাকিয়ে রইল। কান্নাভেজা অভিযোগ জুড়ে বলল,
‘ এত অভিমান এত ঘৃ*ণা আয়শা। কেন এমন করলে? আমার অন্যায়ের সাজা নিজেকে কেন দিলে! কেন ছেড়ে গেলে বহুদূরে। তোমার মৃ*ত্যু য*ন্ত্রণার চেয়ে, এই চোখের ঘৃ*ণা সহ্য করা আমার কাছে অনেক বেশি সহজ ছিল। নিজের লোভে সব হারিয়েছি। সারাজীবন শুধু ঘৃ*ণা কুড়িয়েছি। না রইলে তুমি, না রইল প্রিয়। প্রিয় সে যে তোমারি প্রতিচ্ছবি। তোমার মতই গভীর তার ঘৃ*ণার দৃষ্টি।’
বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে শোয়েব বিড়বিড় করছিল। ধুপধাপ পা ফেলে ছবি এলো। কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে ভেজা চোখ মেলে তাকাল। ছবিকে দেখে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে অন্যদিকে তাকালো।
ছবি বাজখাঁই গলা করে বলল,
‘ উকিলের সাথে দেখা করেছিলে? সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ লিখে দিতে চাইছ ওই মেয়েটাকে? এতবড় সাহস তোমার। আমা্দের ভাগের সম্পত্তি লিখে দিবে ওকে। ওই ফ*কিন্নি’র বাচ্চাকে?’
রাগে চেঁচিয়ে উঠল শোয়েব,
‘ সাবধানে কথা বলো। প্রিয় আমার মেয়ে। আর আমি আমার সম্পত্তি কাকে দিবো, তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে কেন?’
ছবি বেগম রাগে গরগর করে উঠলেন। শোয়েবের পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরল। ক্রো*ধে রিরি করে বলল,
‘ অনেক হয়েছে, আর না। আজ যা কিছু আছে সব আমার জন্য। রাস্তার ফকিন্নি ছিলি। কু** ফিরে তাকাত না। আমার বাপ ভাইয়ের টাকা দিয়ে এখানে উঠেছিস। প্রথমে মা, এখন মেয়ে। সারাজীবন ওদের পেছনে কেন দাঁড়াতে হবে আমাকে? ছোট থেকে সবসময় কেন আয়শাই জিতে যায়।এত বছর আমার সাথে সংসার করেছিস, মনে মনে সবসময় শুধু আয়শাকেই চেয়েছিস। কেন? আমি যথেষ্ট ছিলাম না?’
ঝারি দিয়ে হাত ছাড়াল শোয়েব। রাগে গর্জিয়ে উঠল। বলল,
‘ তুমি সবসময় আয়শাকে হিংসা করতে। বিত্তশালী পরিবারে জন্ম নিয়েও, আয়শার বরাবর কখনোই হতে পারোনি।ওর যা আছে তোমার তা চাই। তাই তো যখন মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে গ্রামে ফিরলাম, রাতে আমার ঘরে এসে আমাকে ফাঁসিয়েছিলে। লোক শালিস বসিয়ে বিয়ে করলে! তোমার ঈ*ষা সব জ্বা*লিয়ে দিয়েছে।’
‘ এখন সব দোষ আমার? মেয়ের পরিচয় জেনে পিতৃপ্রেম জেগেছে! র*ক্তের ঘ্রাণ টানছে। তাইনা? তুই যে আমার বাপের টাকা দেখে বিয়ে করলি, আয়শাকে ঠকালি। এখন চাপা পড়ে গেল সব? স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। সামনে আমার নির্বাচন ওই মেয়ের জন্য যদি কোন ঝামেলা বাঁধে নিজের হাতে খু*ন করবো ওকে। এবার ছাড় পাবেনা। শতাব্দও বাঁচাতে পারবেনা। আর যদি তুমি বাঁধা হও, ছাড় দিবোনা তোমাকেও।’
শোয়েব টনটনে আওয়াজ,
‘ তোমার বাপ ভাই যেই টাকা ধার দিয়েছিল, তার তিনগুন ফিরিয়ে দিয়েছি তাদের। এই ব্যবসা সম্পত্তি টাকা পয়সা সব আমার পরিশ্রমে গড়া। আর আমিও দেখবো কিভাবে ক্ষ*তি করো আমার মেয়ের! এবার আয়শার স্বামীর না, প্রিয়’র বাবার মুখোমুখি হবে। একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কতটুকু গভীর যেতে পারে, জানো নিশ্চয়ই।’
রেগে হনহন করে বেরিয়ে গেল শোয়েব। যাওয়ার দিক ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছবি বেগম। না, এভাবে আর চলবে না। আজকাল বড্ড বেড়ে গেছে শোয়েব। সারাজীবন আয়শাকে স্বামীর সুখ থেকে বঞ্চিত রেখেছে। তার ভালোবাসার শোয়েবের সাথে ঘর বেঁধে দিনের পর দিন তিলে তিলে মে*রেছে। এরচেয়ে ভ*য়ানক প্রতি*শোধ আর কি হতে পারে? এখন আয়শা নেই। ম*রে গেছে। শোয়েবকে দিয়ে এখন আর কাজ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পত্তি ট্রান্সফার করার আগে। রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে হবে তাকে। যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুপুর মাড়িয়ে বিকালে এসে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলের বিপরীত পাশের রাস্তাটায় গাড়ি থামিয়ে বসে প্রিয় শতাব্দ। দৃষ্টি হোটেলের গেটে। গেটের দিক তাকিয়ে প্রিয় সন্দিহান সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘ আপনি শিয়োর বাবা আসবে?’
শতাব্দের আত্মবিশ্বাসী আওয়াজ,
‘ আমি ডেকেছি অবশ্যই আসবে।’
‘ যদি না আসে?’
‘ এক্ষুনি চলে আসবে, নিজ চোখে দেখে নিও।’
অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছে প্রিয়। তার অস্থির দৃষ্টি উঁচিয়ে বারবার গেটের দিক তাকাচ্ছে। ঘড়িতে সময় দেখছে। মিনিট দশেক যেতেই, জাফর সাহেবের গাড়ি থামতে দেখল গেটের পাশে। উৎসাহিত হয়ে প্রিয় বলল,
‘ বাবা এসেছে!’
প্রিয়’র মুখপানে একপলক তাকাল শতাব্দ। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ বলেছিলাম আসবে। ভাইয়াদের লাউঞ্জে আসতে বলেছিলে?’
ঠোঁট মেলে হাসল প্রিয়। বলল,
‘ বলেছি। এবার কি হবে! ভাই আর বাবা মুখোমুখি হবে কিভাবে। আর হলেও যদি বাবা এড়িয়ে যায় ভাইকে।’
‘ থিংক পজিটিভ। উল্টোটাও ঘটতে পারে। হয়তো নাতিনাতনিদের দেখে বাবার মন গলতে পারে।’
প্রিয় ক্লান্ত ভঙ্গিতে তাকালো। কন্ঠে চাপা উত্তেজনা ঠেলে বলল,
‘ প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। বাবার সাথে তানিম ভাইকে সরাসরি দেখা করালেই হতো। এই নাটকীয়তার কি দরকার ছিল। যদি সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় এখন!’
শতাব্দ আশ্বস্ত সুরে বলল,
‘ নাটকীয়তার দরকার ছিল। তানিম ভাইকে বললে রাজি হতো না কখনো। বাবার সামনে দাঁড়ানোর তার সাহস নেই এখনো। কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়া, অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হলে তার ট্রু ফিলিংসটা বেরিয়ে আসবে। আর তাছাড়া বাবার সাথে যতবার সময় কাটিয়েছি, বুঝতে পেরেছি ছেলের শূণ্যতা তাকে কতটা খাঁখাঁ করে পো*ড়ায়। তিনি হয়তো কখনো প্রকাশ করবেনা, তবে মনেপ্রাণে চায় ভাইয়া বাড়ি ফিরুক।’
‘ বাবার হয়তো এমনি। স্নেহ, ভালোবাসা আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন।’
প্রিয়’র উদাসীন আওয়াজ। ছলছল চোখ। শতাব্দের চোখে পড়ল। কথা এড়াতে বলল,
‘ অনেকক্ষণ হয়েছে, সব ঠিক আছে কিনা ভিতরে গিয়ে দেখবে?’
শতাব্দের আওয়াজে প্রিয়’র ঘোর কাটল। বলল,
‘ চলুন যাই।’
গাড়ি থেকে নেমে দুজন চলে গেল ভিতরে। হোটেলের লাউঞ্জে পৌঁছাতেই বাপ ছেলের আবেগাপ্লুত হয়ে কান্না জড়িত আলিঙ্গন ভেসে উঠল চোখে। টলমল করে উঠল প্রিয়’র চোখ, এই দিনটা দেখার জন্য কতই না অপেক্ষা করেছিল। কাচের বাহিরে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়। জাফর সাহেব নাতি নাতনিদের কোলে তুলে আদর করছে। চুমু খাচ্ছে। ইডিলি হাত জোড় করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বলছে। দূরে থাকায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছেনা। শতাব্দ ডাকল। বলল,
‘ ভিতরে যাবে?’
মৃদু হাসল প্রিয়। শতাব্দের দিক ফিরে তাকাল। বলল,
‘ ইচ্ছে করছে না। এইসময়টা একান্তই বাপ ছেলের। তাদেরই ইঞ্জয় করতে দিন।’
হাস্যোজ্জ্বল মুখ অশ্রু ভারাক্রান্ত চোখ নিয়ে গাড়িতে বসলো। আজ অনেক দিন পর বুকে প্রশান্তির হাওয়া বইছে। অতি আনন্দে চোখে জল নামছে। এই দিনটার জন্য কতই না অপেক্ষা ছিল। কত শতবার ভাইয়ের আফসোস শুনেছে। আহাজারি কান্না দেখেছে। সবশেষে বাপ ছেলের মিলন তিথি এসেছে।
চোখে জল দেখে এগিয়ে এলো শতাব্দ। হাত বাড়িয়ে আলতো করে মুছে দিলো। দু’গালে হাত রেখে বলল,
‘ আমার সব খাটনি বৃথা গেল। এই চোখে জল না, আনন্দ দেখতে চেয়েছি।’
হেসে ফেলল প্রিয়। শতাব্দ আবার বলল,
‘ চলো, তোমার মন ভালো করার জায়গায় যাই।’
নাকচ করল না প্রিয়। ঠোঁট মেলে হাসল শুধু। আর কয়েকটা দিনই তো! তারপর পাল্টে যাবে সব। সে শতাব্দের সাথে প্রাণবন্ত হয়ে, খোলা আকাশের নিচে একটু বাঁচতে চায়। প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে চায়। কিছু সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করবে, যা ভেবে ভেবে এক জীবন পাড় করা যায়।
ইটপাথরের শহর ছেড়ে, কৃত্রিম আলোর আকাশ মাড়িয়ে। গাড়ি গ্রামের মেঠোপথে নেমেছে। নড়বড়ে রাস্তা দিয়ে, নদীর পাড়ে এসে থেমেছে। চারিদিকে অন্ধকার নামছে, কৃত্রিম আলো জ্বলতে শুরু হয়েছে। পাড়ের দিকের মানুষ কমতে শুরু হয়েছে। ঘাটপাড়ে নৌকা থেমেছে। হুড়মুড়িয়ে লোকজন উঠছে। পাশেই ঝালমুড়ি, আচার অন্যসব মুখরোচক খাবার নিয়ে বিক্রেতারা বসেছে। হুড়মুড় করে লোকজন ঝেঁকে ধরেছে। দোকানীদের বেশ বেচাকেনা চলছে। গ্রাম্যজীবনের এক ব্যতিক্রম পরিবেশ। মুহূর্তেই প্রিয়’র মন হালকা হয়ে এলো।
গাড়ি থেকে নেমে দুজন নিরিবিলি সিড়ির ধারে সবুজ ঘাসে যেয়ে বসল। নদীর শীতল হাওয়া গায়ে এসে লাগছে। শরীর মনের ক্লান্তি কোথাও যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক শান্তি লাগছে। এলোমেলো বাতাসে শাড়ির আঁচল অগোছালো, চোখে মুখে খোলা কেশের ঝাপটা এসে লাগছে। এলোমেলো বাতাসে চোখ বুজে আসছে প্রিয়’র। বুকের বা পাশে হাত রেখে আঁচল সামলাতে চেষ্টা করল। আচমকা একজোড়া হাত থামিয়ে দিলো। পিটপিট দৃষ্টি মেলে সামনে তাকাল প্রিয়। শতাব্দের গভীর দৃষ্টির নিমিষ চাহনি। নেশাতুর, অধৈর্য! দৃষ্টি নামিয়ে নিলো প্রিয়। শতাব্দের হাত ঠেলে দিতে চাইল। মানলো না শতাব্দ। প্রিয়’র কোমর টেনে মিশিয়ে নিলো। দমকা হাওয়ায় অগোছালো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে প্রিয়কে বলল,
‘ তোমার এলোমেলো চুল গুছিয়ে দেওয়ার অধিকার একমাত্র আমার। আর এই অধিকার থেকে তুমি আমাকে বঞ্চিত করতে পারবেনা কখনো!’
প্রিয় বিবস হয়ে নিমিষ চেয়ে রইল শতাব্দের চোখে। কি জানো এক অদ্ভুত যাদু আছে এই চাহনিতে। বারবার ডুবে যায় এই মন্ত্রবদ্ধ আঁখিতে।
ঘন্টা দুএক নদীর পাড়ে সময় কাটিয়ে। গাড়িতে বসলো দুজন। এতটা সময় এক সাথে থেকে কথা না হলেও, চোখেচোখে কথা হয়েছে দুজনের। কখনো কখনো মুখের কথার চেয়ে চোখের ভাষা অনেক গভীর হয়। হাতের হাওয়াই মিঠাই টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে প্রিয়। এই জিনিসটার প্রতি ছোট থেকে ভীষণরকম দুর্বলতা। একবার ইমান্দিপুরে চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে শাদের সাথে ঝগড়া বেঁধেছিল তার। বিক্রেতার কাছে একটাই ‘হাওয়াই মিঠাই’। অথচ ভাগিদার দুজন। একটা সময় ঝামেলা বাড়ে, হাওয়াই মিঠাই নিয়ে টানাটানি শুরু হলে। চেচামেচির আওয়াজ পেয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে শতাব্দ। তখন তাকে প্রচন্ডরকম অপছন্দ ছিল প্রিয়’র। তাকে দেখেই কপাল কুঁচকে বিরক্তির ভঙ্গিতে বাড়ি ফিরে গেছিল। সেই কথাটা এতবছর পর মনে আছে শতাব্দ’র! তাইতো হাওয়াই মিঠাই নিয়ে এলো।
ভাবতে ভাবতেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ভেসে উঠল। আনমনে হাওয়াই মিঠাই ছিঁড়ে মুখে দিলো। গাড়ি চলছে অন্ধকার গ্রামের মেঠোপথে। আচমকা গাড়ি থামল। কপাল কুঁচকে পাশে তাকাতেই, শতাব্দ নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আষ্টেপৃষ্টে গভীরে জড়িয়ে নিলো। কি হচ্ছে কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রিয়’র ঠোঁট জোড়া শুষে নিলো। বিহ্বল প্রিয় আবেশে চোখ বুজে নিলো। শতাব্দের এলোমেলো অবাধ্য হাত প্রিয়’র শাড়ির বেঁধ করে ফর্সা কোমর ছুঁয়ে দিলো। আরো শক্ত ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। অনুভূতিতে ঠকঠক কাঁপছে প্রিয়। নিশ্বাসের গতি উঠানামা করছে বারবার। গলা শুকিয়ে আসছে। মাথা ঝেঁকে বসেছে এলোমেলো অনুভূতিতে। মিনিট কয়েক কা*টল। ঠোঁটের কাছে লেগে থাকা হাওয়াই মিঠাই শুষে নিলো। প্রিয় তখনো ঠকঠক কাঁপছে। শরীর জুড়ে বইছে অদ্ভুত শিহরণ। চোখ ভিজে আসছে ভালো লাগার অনুভূতিতে। খানিক সময় এভাবেই পাড় হলো। শতাব্দের বলিষ্ট বুকে বিড়ালছানার মত চোখ বুজে পড়ে রইল। গায়ের পুরুষালি ঘ্রাণে মগ্ন হয়ে রইল। প্রাণভরে মিষ্টি সুবাসটা টেনে নিচ্ছে মনে। আরো কিছুক্ষণ এভাবে বুকের গভীরে জড়িয়ে রইল নিস্তেজ প্রিয়। আলতো স্বরে ডাকল শতাব্দ। সাড়াশব্দ করল না প্রিয়। লজ্জায় আরো জড়সড় হলো। একটু অপেক্ষা করে বুক থেকে টেনে তুলল শতাব্দ। দু গালে হাত ছুয়ে প্রিয়’র সুশ্রী মুখপানে চেয়ে রইল। নিকষ আঁধারে চন্দ্রসুধার মত চকচক করছে যেন। তার চোখেমুখে পড়ে থাকা চুল গুলো গুছিয়ে দিলো শতাব্দ। সামনের চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে, গালে হাত রেখে মুখখানা উঁচিয়ে ধরল। গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শতাব্দ। লজ্জা পাচ্ছে প্রিয়। নিজের স্বামীর সামনে এভাবে লজ্জা পাওয়াটা কি খুব বেশি অস্বাভাবিক? ভাবতে ভাবতেই কপালে উষ্ণ ছোঁয়ার অনুভব হলো। তারপর একএক করে চোখ গাল, ঠোঁট ছাড়িয়ে গলায় এসে থামলো শতাব্দ। শাড়ির আঁচল নিচে নেমে গেছে। ফর্সা কাঁধ, গলা স্পষ্ট ভেসে। শতাব্দের উন্মদনা যেন বাড়ল আরো। প্রমত্ত প্রেমিকের মত ঝাপিয়ে পড়ল। গভীর ভাবে নাক ঘষতে ঘষতে নিষ্প্রাণ, নেশাতুর সুরে বলল,
‘ প্রিয়! এই প্রিয়, ভালোবেসে কি কেউ পাগল হয়? আমি হচ্ছি। ভয়*ঙ্কর রকম কোন অঘটন ঘটাতে চাইছি। তোমাকে ছোঁয়ার তৃষ্ণা পাগল করে দিচ্ছে আমায়। আর তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নাই।’
কেঁপে উঠলো প্রিয়। শতাব্দের গভীর আওয়াজ, শিহরণ তুলে দিচ্ছে প্রিয়’র। চোখ বুজেই শতাব্দের চুলে আঙুল ডুবিয়ে শক্ত মুঠিবদ্ধ করে নিলো।
( সরি, গল্পের সুবাদে কিছু জিনিস খোলামেলা লেখা হয়েছে। ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল)
চলবে……
( গল্প পৌঁছালে অবশ্যই রেসপন্স করবেন। বানান ভুল চোখ পড়লে ধরিয়ে দিবেন)
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।
টাইপোগ্রাফি: Maksuda Ratna আপু❤️🌺