ফিলোফোবিয়া দ্বিতীয় পরিচ্ছদ (পর্ব ৪২)

0
662

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা ( সাজিয়ানা মুনির )

৪২.

(কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ )

দিনের আলো নিভিয়ে চারিদিক অন্ধকারে ডাকছে। বিকালের অন্তিম প্রহর কাটিয়ে, সন্ধ্যা নামছে ভুবনে। বিছানায় অচেতন পড়ে আছে প্রভা। পাশে বসে নিগূঢ় চেয়ে আছে সমুদ্র। সবার সামনে সবকিছু স্বাভাবিক দেখালেও, ভেতর ভেতরে দুজনের মধ্যেকার দূরত্ব বিশাল। অনেকবার প্রভাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। সে শুনতে নারাজ। এরপর হাল ছেড়ে নিজের মত থাকতে শুরু করেছে সমুদ্র। প্রভার অচঁচল, অন্ধ জেদের সামনে বরাবরই দুর্বল হয়ে পড়েছে। সবটা সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছিল। আজ দুপুরে টিভি চ্যানেলের নিউজ দেখে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রভা। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে জানায়, খাওয়াদাওয়ার, অনিয়ম, মাত্রাতিরিক্ত চিন্তায় প্রেসার লো হয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। বাসায় ফিরেছে খানিক পূর্বে, ঘুমের ঔষধ দিয়েছে। ঘুমাচ্ছে।

সন্ধ্যার পর ঘুম ভাঙ্গল প্রভার। দুর্বল চোখের পিটপিট চাহনি। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই সমুদ্রকে দেখল। দুহাতে বিছানায় ভর ঠেকিয়ে উঠতে চাইল। আটকালো সমুদ্র। বলল,
‘ অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠছ কেন! কিছু লাগবে? আমি দিচ্ছি।’
কোন উত্তর দিলো না প্রভা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো, একপ্রকার জোর খাটিয়ে বিছানা থেকে নামতে চাইল। তেতে উঠল সমুদ্র। প্রভার হাত চেপে ধরল। ক্রো*ধান্বিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ সমস্যা কি তোমার! কথা বলছি কানে যাচ্ছে না?’
এবারো উত্তর দিলো না প্রভা। ছলছল চোখ নিয়ে হাত ছাড়ানোর জোরালো চেষ্টা চালাল। অকপটে ক্ষেপে আছে সমুদ্র। ছাড়বে না সে। একটা সময় প্রভা ক্লান্ত হয়ে কেঁদে ফেলল। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ল। সমুদ্র হতভম্ব, বিমূঢ়! বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে।
প্রভা পা ভাঁজ করে বসে, হাউমাউ করে কাঁদছে। সাথে সাথে মুখোমুখি বসে পড়ল সমুদ্র। প্রভার দুগালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে তোমার। এভাবে কাঁদছ কেন?’
সমুদ্রের জিজ্ঞাসায় কান্নার বেগ আরো বাড়ল। কোথাও চাপা পড়ে থাকা অভিমানটা ফুপিয়ে উঠল। সমুদ্রের বুকে মাথা ঠেকাল। টিশার্টে খামচে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। বিহ্বল সমুদ্র যন্ত্রের মত হাত তুলে, প্রভার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করতে চাইল। প্রভা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তখনো। সমুদ্র আবারো জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি কি এখন তোমার এতই অপছন্দ! যে আমার স্পর্শে য*ন্ত্রণা বেড়ে যায় আরো।’
সমুদ্রের বাঁকা কথায় প্রভার কান্না বেড়ে গেল। সে কি করে বুঝাবে কতটা ভালোবাসে সমুদ্রকে। এই কয়েকদিন সমুদ্রের এড়িয়ে চলা তাকে কতটা যন্ত্র*ণা দিয়েছে। কতটা পু*ড়িয়েছে। হুট করে তানহার কথা জেনে প্রচন্ড আঘা*ত পেয়েছিল প্রভা। মেনে নিতে পারেনি নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার প্রথম প্রেমকে। অভিমান, ইগোর তলে দেবে গিয়েছিল সে। উপচে উঠতে পারছিলনা নিজের জেলেসি, অভিমান থেকে। সমুদ্রকে দেখা মাত্রই পুরানো ঘা’য়ে লবণের ছিঁটা পড়ত।তাই বারবারই এড়িয়ে চলত। কিন্তু যেই সমুদ্র মুখ ফিরিয়ে নিলো। এড়িয়ে চলতে শুরু করল! অমনি নিজেকে নিঃস্ব মনে হলো। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ক্ষণে ক্ষণে তপ্ত আগুনে পু*ড়ছিল। রাতের ঘুম, খাওয়া দাওয়া সব উঁড়ে গেল। দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত কাটাতে লাগল। অনেকবার নিজের থেকে এগিয়ে সবকিছু মিটমাট করে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওইযে ইগো! দেয়াল হয়ে দাঁড়াল। কোনভাবেই মুখোমুখি দাঁড় হতে পারছিলনা সমুদ্রের। শক্ত অভিমান চেপে এড়িয়ে চলছিল। আজ পারছেনা আর। অভিমানের পাথর ঠেলে, ভালোবাসা সুপ্ত চারাগাছের মত মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়েছে। মনের গহিনে হাজারো কন্ঠে স্লোগান তুলছে, আজ নয়তো, কোনদিন নয়! হয়তো হারিয়ে ফেলবে তার ভালোবাসা সমুদ্রকে।
কান্নাভেজা আধোআধো কন্ঠে ফিসফিস করে বলল প্রভা,
‘ ভালোবাসি সমুদ্র! অনেক বেশি ভালোবাসি।’
হতভম্ব সমুদ্র পাথর হয়ে বসে রইল। তার কানে আওয়াজ এলোও মস্তিষ্কে বসতে সময় লাগছে। যা শুনেছে সত্যি তো!
আচমকা হেসে ফেলল। ঠোঁটের কোণে হাসির বিশাল রেখা ফুটে উঠল শক্ত করে বউকে বুকে জড়িয়ে নিলো। জোরালো অকপটে আওয়াজে বলল,
‘ আমিও প্রচন্ড ভালোবাসি বউ। তুমি আমার জীবনের আঁধার রাতের উজ্জ্বল আলো! তোমাতে তুমি শ্রেষ্ঠ। না, তোমার মত কেউ ছিল। না থাকবে কখনো। তুমি আমার একমাত্র’
ছলছল চোখ নিয়ে হেসে ফেলল প্রভা। সমুদ্র কানের কাছে মুখ নিয়ে আবারও ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ অতীতের সব স্মৃতি পু*ড়িয়ে দিয়েছি। ছুড়ে ফেলে দিয়েছি আমাদের দূরত্বের সব কারণ। হাজার তানহা আসলেও, আমার প্রভার সামনে ফিকে পড়বে সব!’
সমুদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা রাখল প্রভা। অনেক দিন পর আজ শান্তি মিলল। এরচেয়ে মধুর অনুভূতি কি আছে কোথাও!

রাত করে বাড়ি ফিরল প্রিয় শতাব্দ। পথেই প্রভার অসুস্থতার কথা শুনেছিল। জ্যামে আটকে ফিরতে দেরি হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে তড়িঘড়ি করে বোনের ঘরে গেল প্রিয়। দরজা ভিড়ানো একপ্রকার হুড়মুড়িয়ে ডুকে গেল। ভিতরে ডুকে বেক্কল বনে গেল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে প্রভা। পাশে বসে মুখে ফল তুলে দিচ্ছে সমুদ্র। প্রিয়কে দেখে খানিক দূরে সরে বসলো। লজ্জায় পড়ে গেল প্রিয়। আমতা আমতা করে বলল,
‘ সরি, আসলে দরজা খোলা ছিল। তাই…’
বিব্রত পরিস্থীতি এড়াতে সমুদ্র স্বাভাবিক হয়ে বলল,
‘ সমস্যা নাই। ভিতরে আসো।’
জড়সড় ছোটছোট পা ফেলে প্রিয় ভেতরে গেল। প্রভাকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছিল? হ্ঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লি কি করে? বেবি ঠিক আছে তো!’
‘ বেবি’র’ কথা জিজ্ঞেস করতেই প্রভা ঘাবড়ে গেল। সমুদ্র চুপচাপ। বিয়ের আগে প্রভা বলেছিল, সে প্রেগন্যান্ট তাই প্রিয় বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিল। বিছানা ছেড়ে উঠল সমুদ্র, কায়দা করে বলল,
‘ তোমরা কথা বলো, আমি আসছি।’
বাহানা দেখিয়ে বেরিয়ে গেল। সমুদ্রের যাওয়ার দিক প্রভা অসহায় চেয়ে রইল। সে জানে তার আপাকে। এই মিথ্যা কথার জন্য নিশ্চয়ই রাগে ঘাড় ভাঙবে তার। প্রিয় অস্থির কন্ঠে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ কি হলো, বেবি ঠিক আছে তো?’
ছোট ঢোক গিলল প্রভা। আমতা আমতা আওয়াজে বলল,
‘ আমি প্রেগন্যান্ট না আপা। তোকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য মিথ্যা বলেছিলাম।’
চোখমুখ খিঁচে নিলো প্রভা। বোনের ধমক, রাগ ঠেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো। প্রিয় চুপ, শান্ত। হতভম্ব চেয়ে আছে। চেহারায় খানিক বিষাদের আভাস। বোনের আওয়াজ না পেয়ে চোখ খুলে তাকালো প্রভা। ধপ করে হাত জড়িয়ে ধরলো। আকুতি স্বরে বলল,
‘ আপা রাগ করো না প্লিজ! তখন কোন উপায় মাথায় আসছিল না। যা মনে হয়েছে হুট করে বলে দিয়েছি।’
প্রিয়’র শান্ত আওয়াজ,
‘ আমি ভাবছিলাম, বাড়ির সবাইকে ভয় করে প্রেগ্ন্যাসির কথা লোকাচ্ছিস।তোদের দুজনের ঝামেলা চলছে, মিটে গেলে জানাবি সবাইকে।’
প্রভার অনুতপ্ত নিস্তেজ স্বর,
‘ সরি আপা, ভুল হয়ে গেছে। রাগ করিও না। আমি তোমাকে মিথ্যা বলতে চাইনি! ঠকাতে চাইনি।’
‘ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঠকে গেলাম।’
প্রভা বোনের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আকুতি জুড়ে বলল,
‘ সরি। প্লিজ রাগ করো না।’
‘ উহু, রাগ করিনি। এমনিতেও আমি তোর কথাতে বিয়ের জন্য রাজি হইনি। আমার উদ্দেশ্য অন্য। হ্যাঁ, সামান্য আপস্যাড হয়েছি। বাড়িতে বাচ্চা আসবে শুনে খুশি হয়ে ছিলাম। কোলে নিবো, আদর করব, সন্তানের মত….’
এতটুকু বলে চুপ হয়ে যায় প্রিয়। খানিক শান্ত থেকে উদাসীন কন্ঠে বলল,
‘ ব্যাপার না। আজ না হয় কাল, বাড়িতে বাচ্চা আসবে। মা হবি তুই। কারো কারো হয়তো মাতৃত্বসুখ অনুভব করার সেই সুযোগটাও নেই।’
বোনের গম্ভীর ছলছল চোখজোড়ায় তাকিয়ে আছে প্রভা। হ্ঠাৎ কি হলো তার। রেগে যাওয়ার বদলে এতটা আবেগী হচ্ছে কেন আপা!

সমাবেশে ঝামেলার ব্যাপারটা নিয়ে টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ চলছে। ইতোমধ্যে মোটামুটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপারটা ছড়িয়ে গেছে। জল এতটা ঘোলা হতোনা যদি না প্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার না হতো। তার আইডি পেজে নানারকম ম্যাসেজ আসছে। সাংবাদিকরা শোয়েব হকের অতীত বর্তমানের পুরো হিস্ট্রি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। সবার একটাই প্রশ্ন, ‘আসলেই কি শোয়েব হকের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে অশীতা জাফর প্রিয়!’
বাড়ি ফিরে শতাব্দের মুখোমুখি হয়নি প্রিয়। আসার পর একের পর এক ফোনে ব্যস্ত। প্রিয়কে সুরক্ষা করতে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আজকের ব্যাপারটা নিয়েও কেউ কোন কথা বলছেনা। না প্রিয়’কে কিছু জিজ্ঞেস করছে বাড়ির কেউ। অভিলাষা বেগম অনেক আগেই এমন কিছু হবে বলে ধারণা করেছিল। ভাইয়ের দিক আঙুল তুলছে, বা*জে মন্তব্য উঠছে তা নিয়ে কোন আফসোস নেই। বরং তার ভাষ্যমতে এমনটা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল। তারা আরো ভ*য়ানক কিছুর কাম্য!

গভীর রাত। শতাব্দের ঘরে আলো জ্বলছে। ভিতর থেকে হু*মকি ধ*মকির আওয়াজ। দরজার কাছে কান পাতল প্রিয়। ভেতর থেকে শতাব্দের ক্রো*ধান্বিত আওয়াজ ভেসে আসছে। কাউকে রাগী স্বরে বলছে,
‘ এতকিছু বুঝিনা আমি! কে মামা, কে ফুপু ! তাতে আমার কি! আমার ওয়াইফকে নিয়ে যেন কোন বা*জে নিউজ না ছাপে। বাকিরা সবাই গোল্লায় যাক। আমার তাতে আসেযায় না কিছু।’
অপর পাশ থেকে কিছু বলল। শুনে শতাব্দ ক্ষে*পে গেল। রাগে দেয়ালে বাড়ি দিলো। সাথে সাথে হাতের কা*টা জায়গা থেকে ফি*নকি দিয়ে র*ক্ত ঝরতে শুরু করল। সেই দিকে খেয়াল নেই শতাব্দের। ফোনে চেঁচিয়ে বলল,
‘ ছবি বেগম যত টাকা দিয়েছে আমি তার ডাবল দিবো। যদি আমার ওয়াইফকে নিয়ে কোন বা*জে নিউজ ছাপে, আমি তোদের অফিসে আ*গুন ধরিয়ে দিবো। মাইন্ড ইট!’
ফোন কে*টে বিছানায় ছু*ড়ে ফেলল। অকথ্য ভাষায় সাংবাদিককে গালি দিতে দিতে সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় গেল। মাথা বিগড়ে আছে প্রচন্ড। অমনি ঘর থেকে খটখট আওয়াজ ভেসে এলো। ঘাড় ফিরিয়ে একবার চাইল। প্রিয় এসেছে। অস্থির হয়ে, কিছু খুঁজছে। ভীষণ শান্ত দৃষ্টিতে চোখ ফিরিয়ে নিলো, সামনে তাকালো। মিনিট দুএকের ব্যবধানে প্রিয় ফাস্ট এইড বক্স হাতে বারান্দায় এলো। অকপটে চাহনি, অস্থির আওয়াজ,
‘ বসুন, ওষুধ লাগিয়ে দেই হাতে।’
শতাব্দ যেন শুনেও, শুনলো না। নীরবে সিগারেট ফুঁকছে। প্রিয় আবার বলল,
‘ কতটুকু কে*টেছে! র*ক্ত ঝরছে।’
এবারো শতাব্দ চুপ। প্রিয় উত্তরের অপেক্ষায় রইল। কোন জবাব না পেয়ে। জোর করে হাত টেনে ঘরে আনলো। বিছানায় বসিয়ে, মুখোমুখি বসলো। স্যাভলন দিয়ে কাটা জায়গা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। প্রিয়’র চিন্তিত মুখখানায় নিগূঢ়, নিমিষ চেয়ে আছে শতাব্দ। কন্ঠে অভিযোগ এঁটে প্রিয় বলল,
‘ কতখানি লেগেছে! কা*টা জায়গাটা খোলা রেখেছেন কেন? ইনফেকশন হবে, ব্যথা বাড়বে।’
‘ কিছু হবেনা, হাত ছাড়ো।’
শতাব্দ হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইল। আটকালো প্রিয়। হাতটা আরো শক্ত করে কোলে উঠিয়ে নিলো। কা*টা জায়গাটা পরিষ্কার করতে মন দিয়ে বলল,
‘ হবে। ইনফেকশন হবে।’
‘ ডাক্তার আমি না তুমি!’
বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নিলো প্রিয়। বলল,
‘ আপনি! তো? তাই বলে কি ডাক্তারদের ওষুধদের প্রয়োজন হয়না?’
শতাব্দ উত্তর দিলো না কোন। প্রিয় জোর খাটিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। শতাব্দ এক দৃষ্টিতে তখনো চেয়ে। বাতাসে প্রিয়’র অবাধ্য চুল উড়ছে। শতাব্দ হাত বাড়িয়ে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ আজকাল তোমাকে বড্ড অচেনা লাগে প্রিয়। কখনো মনে হয় তুমি শুধু আমার। কখনো আবার ভিন্ন কেউ। এই রহস্যময়ীর এতো রূপ কেন?’
চোখ উচিয়ে তাকালো প্রিয়। শতাব্দের গভীর চাহনি। ব্যথাতুর আ*হত। কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেল প্রিয়। হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই, টেনে বসিয়ে দিলো শতাব্দ। কাছে এনে বুকে মিশিয়ে নিলো। রাগী, গম্ভীর মুখ। চোয়াল শক্ত। অকপট কন্ঠে বলল,
‘ সব ইচ্ছা তোমার! যখন ইচ্ছা অধিকার খাটাবা, যখন ইচ্ছা ছেড়ে যাবা। আর আমার? আমার কোন ইচ্ছা, অধিকার নাই।’
প্রিয়’র ভীতু, ভড়কানো মুখ। হাত ছাড়াতে, ছটফট করছে প্রচন্ড। শতাব্দ দমলো না। বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিলো। চোখ বুজে, নাকের সাথে নাক ঘোষতে ঘোষতে নিগূঢ় কন্ঠে বলল,
‘ আমারও তোমার উপর অধিকার খাটাতে ইচ্ছে করে প্রিয়। জোর করে কোলে বসিয়ে চুমু খেতে ইচ্ছে করে। বুকে জড়িয়ে গভীর রাতে তোমার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। আমাকে কেন বাঁধা দেও?’
চোখ বুজেই ভীতু ঢোক গিলল প্রিয়। খাল কে*টে কুমির আনাটা কি খুব দরকার ছিল!

চলবে……

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

টাইপোগ্রাফি : Maksuda Ratna আপু❤️🌺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here