#ফাগুন_ছোঁয়া
#পর্ব_৮
#লেখিকা_সারা মেহেক
মায়ের কথামতো ওয়ার্ড শেষে হোস্টেলে ফিরে ফ্রেশ হয়েই মিম কল দিলো আদ্রিশকে। আদ্রিশ তখন মাত্র রুমে ঢুকেছে। হঠাৎ এ সময়ে মিমের কল দেখে খানিক ভ্রু কুঁচকালো। ভাবলো, এভাবে অকস্মাৎ ফোন দেওয়ার কারণ কি? সে কল রিসিভ করলো। সাথে সাথেই ওপাশ থেকে মিম সালাম দিলো। আদ্রিশ সালামের জবাব দিলো। জিজ্ঞেস করলো,
” তুমি ওয়ার্ডে না?”
” না। ওয়ার্ড শেষ হয়েছে আরোও প্রায় আধ ঘণ্টা আগে। আজ একটু তাড়াতাড়িই ছুটি হয়েছে।”
” ওহ। কি করছো তুমি?”
এই জিজ্ঞেস করতে করতে আদ্রিশ পরনের শার্ট খুলতে লাগলো। ওপাশ হতে মিম তখন জবাব দিলো,
” বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনার সাথে কথা বলছি। আপনি কি করছেন?”
” আমি কেবল রুমে ঢুকলাম। চেঞ্জ করছি।”
” ওহ, সরি সরি। আমি পরে ফোন দিচ্ছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।”
বলেই মিম ফোন রাখতে চাইলো। কিন্তু আদ্রিশ তাকে বাঁধা দিয়ে বললো,
” না সমস্যা নেই। তোমার সাথে কথা বলে একেবারে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করবো। তুমি রাতের খাবার খেয়েছো?”
” এখনও খাইনি। একটু পর খাবো।”
” ওহ।”
বলে আদ্রিশ কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। গতকাল রাতে সে মিমকে ফোন দেয়নি বলে বললো,
” গতকাল রাতে তোমাকে ফোন করা হয়নি। ভেবেছিলাম দশটার দিকে একবার কল দিয়ে কথা বলবো। কিন্তু কালকে ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। এজন্য দশটার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ”
আদ্রিশের এ কথা শুনে মিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এই এক ফোন না দেওয়ার কারণে কাল তার মায়ের সাথে ছোটখাটো একট গ্যাঞ্জাম বেঁধে গিয়েছিলো! অথচ মায়ের কথা প্রথমবারেই শুনে আদ্রিশকে কল দিলে হয়তো আদ্রিশের বিরক্তির কারণ হতো সে!
মিম স্বাচ্ছন্দ্যে প্রত্যুত্তর করলো,
” সমস্যা নেই। আমিও কালকে একটু ক্লান্ত ছিলাম। ”
” তাহলে আজ আমাকে সরি বললে কেনো? ”
” ঐ যে, ফোন না দেওয়ার কারণে।”
” এ কারণে আবার সরি বলতে হয়!”
” হুম হয়। যদি আপনি আবার এ নিয়ে মাইন্ড করেন তাহলে!”
আদ্রিশ ওপাশে হেসে উঠলো। বললো,
” মাইন্ড করার কি আছে শুনি? তুমিও ক্লান্ত ছিলে, আমিও ক্লান্ত ছিলাম। এ কারণে ফোন না-ই করা হতে পারে। এত বড় ইস্যু না এটা।”
মিম সামান্য খুশি হলো বোধহয়। উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” সত্যিই আপনার সমস্যা নেই এতে?”
” উঁহু। কোনো সমস্যা নেই। তবে এটা একদিন হলে মানা যাবে। পরপর দুদিন হলে আমি সহ্য করবো না বলে দিলাম। ”
মিম এপাশে মৃদু হাসলো। বললো,
” দুদিন হবে না, বলে দিলাম আমি।”
আদ্রিশ ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির ধারা বজায় রেখে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। বললো,
” মনে থাকে যেনো আদ্রিশের মিসেস।”
মিম পুনরায় হাসলো। ‘আদ্রিশের মিসেস’ সম্বোধনটা শুনলে তার ভালো লাগে। খানিক হাসিও পায়। তার মনে হয়, আদ্রিশের জবানিতে এ সম্বোধনটা বেশ মানায়। আদ্রিশ যতবার এ নামে তাকে ডাকবে সে বোধহয় ততবারই হেসে উঠবে, অতঃপর চাপা লাজুক হাসি হেসে উত্তর নিবে!
মিম অন্য কথায় চলে গেলো। জিজ্ঞেস করলো,
” আপনার যে আরো দু একদিন ছুটি ছিলো। এর আগেই ডিউটি শুরু করলেন যে?”
আদ্রিশ লম্বা শ্বাস ফেললো। বললো,
” হাহ, যেখানে বউ পাশে থাকে না সেখানে এতো ছুটি নিয়ে কি লাভ বলো।”
” শুধু বউয়ের জন্য ছুটি নেয় নাকি সবাই! মাঝে মাঝে নিজের রেস্টের জন্যও ছুটি নিতে হয়। ”
” এখন এতো রেস্ট নিয়ে কি হবে। একেবারে হানিমুনের সময় রেস্ট নিবো।”
অকস্মাৎ হানিমুনের কথা শুনে মিম কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো। তবে এ নিয়ে সে লাজুকতায় না মেতে মৃদু কঠোরতা নিয়ে বললো,
” আবার হানিমুন! আমাদের কারোর সময় আছে নাকি?”
ওপাশে আদ্রিশ ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে বললো,
” আমরা এতোটাও ব্যস্ত না যে হানিমুনে যেতে পারবো না!”
” আপনি কি ভুলে গিয়েছেন আমার দু মাস পর ফাইনাল প্রফ?”
” তো এখন কে যাচ্ছে হানিমুনে? তোমার প্রফের পর যে ছুটি থাকবে তখন যাবো। ”
” তখন কি আর সেই আমেজ থাকবে যা এখন আছে? শুধু শুধু যাওয়া হবে। ”
আদ্রিশ এবার অল্পস্বল্প রেগে অভিযোগের সুরে বললো,
” তুমি মেয়েটা ভীষণ আনরোমান্টিক। কোথায় হানিমুনের কথা শুনে লজ্জায় লজ্জায় জিজ্ঞেস করবে, কোথায় যাবো, কতদিনের জন্য যাবো৷ তা না করে উল্টো নিষেধ করছো! তোমার মধ্যে রোমান্টিকতার কোনো রসকষ নেই।”
আদ্রিশের এহেন অভিযোগ শুনেও যেনো মিমের মনে হলো সে প্রশংসা শুনছে। বললো,
” আমি এমনই। রসকষহীন, বেরঙ মানুষ। বেশি রঙচঙ, বেশি ঢঙ আমার স্যুট করে না। ”
ওপাশে আদ্রিশ ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। উদ্যমী হয়ে বললো,
” বুঝেছি বুঝেছি। এই ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট আদ্রিশের মিসেসকে রঙের জোয়ারে ভাসাতে হবে। তোমাকে আগাগোড়া বদলাতে হবে।”
মিম আদ্রিশকে খোঁচা মেরে বললো,
” একজনকে বদলানো কি এতোই সহজ? যদি না বদলাতে পারেন আমাকে?”
” চ্যালেঞ্জ করছো? যদি বদলাতে পারি তোমাকে?”
” পারবেন না। বলে দিলাম।”
” আচ্ছা, সময় আসুক। দেখা যাবে।”
আদ্রিশ আর কথা বাড়াতে পারলো না। তার বাসার দরজায় কড়াঘাতের আওয়াজ পেলো। মিমকে বললো,
” আমি রাখছি এখন৷ পরে কথা বলবো। হাবিব চলে এসেছে বোধহয়। ”
” আচ্ছা। ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ুন।”
বলে ফোন রেখে দিলো সে।
ফোন রেখেই লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিলো মিম। ভেতরে ভেতরে ভীষণ হালকা অনুভব করছে সে। সন্দেহ নেই,আদ্রিশের সাথে কথা বলে বেশ ভালো বোধ করছে সে। মনের মাঝে একটু একটু খুশি অনুভব হচ্ছে। এই অনুভূতি নিয়ে সে রুমে এসেই ডায়েরি খুলে বসলো।
আজ ফারহা হোস্টেলে নেই। এজন্য নিশ্চিন্তে ডায়েরি খুলে লিখতে আরম্ভ করলো সে,
” মানুষের তিক্ত অনুভূতি বদলাতে কি সময় লাগে? নাকি এসব ছোট ছোট খুশির মুহূর্তগুলো সেই বৃহৎ তিক্ত অনুভূতিকে তুচ্ছ মনে করে দূরে সরিয়ে রাখে? আমায় এসব ছোট ছোট কিছু সুখের মুহূর্ত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে । আমি না মানলেও এতে সন্দেহ নেই যে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কথোপকথন, অনুভূতি আমার মাঝে ভালোলাগা বাড়ায়।
প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম আমি বোধহয় একদমই মানিয়ে নিতে পারবো না এ বিয়েতে। হয়তো রোজ আমাদের ঝগড়া হবে, কোনো কারণে মনোমালিন্য হবে, অতীতের ঘটনাগুলো স্মৃতিতে আসবে। অথচ আমার এ অদ্ভুত, ভীষণ অদ্ভুত এ মন আমার অনুমানকে দু’ম’ড়ে’মু”চ’ড়ে দিয়ে সবকিছু মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। হ্যাঁ, গতকাল অবশ্য মেজাজটা ভালো ছিলো না৷ মুড সুইং এর ফাঁদে পড়ে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো। মাঝে মাঝে এমন মুড সুইং অবশ্য মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এই মুডকে পাশ কাটিয়ে দেখলে আমি দেখি নিজের মাঝে ক্ষুদ্র কিছু পরিবর্তন। এটা ঠিক যে সময় খুব একটা যায়নি। হাতে গুণে তিন থেকে চারদিন। আমি বুঝতে পারছি বোধহয়, এই বেরঙ আমি হয়তো খুব দ্রুতই বদলে যাবো।
নিজেকে আজ বুঝিয়েছি, বিয়ে যেহেতু হয়েছে সেহেতু তা মেনে নিতেই হবে। আজ হোক বা কাল হোক। তাহলে আজই কেনো নয়। আমি দেখছি আদ্রিশ নিজের পক্ষ হতে সম্পূর্ণ ইফোর্ট দিচ্ছেন। তাহলে এতে আমারও কিছুটা ইফোর্ট দেওয়া উচিত। তবেই তো ভালো কিছু হবে। আমি চেষ্টা করছি। হয়তোবা খানিক সময় লাগবে। তবে আমি জানি, আমাদের এ সম্পর্কে আমাদের দু পক্ষ হতে প্রয়াস চালালে একসময় আমাদের সুখের সংসার হবে। এ বিষয়ে অবশ্য আদ্রিশকে কিছু বলা যাবে না। যা করবো, চুপিচুপি করবো আমি। একদম চুপিচুপি। ”
————-
দুদিন বাদে মিম দুপুরে আদ্রিশের মা’কে কল দিলো। একমাত্র ছেলের বউয়ের ফোন পেয়ে খুশিতে আটখানা হলেন আসমা বেগম। মিমকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কেমন আছো বউ মা?”
মিম সৌজন্যের সহিত জবাব দিলো,
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা। আপনি কেমন আছেন?”
” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ”
এভাবে তাদের মাঝে কথা এগুলো। এক পর্যায়ে আসমা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
” তাহলে বাসা দেখতে কখন যাচ্ছো মা?”
মিম আসমা বেগমের প্রশ্ন শুনে খানিক অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো,
” বাসা দেখা মানে? বুঝলাম না মা।”
” জানো না? আদ্রিশ বললো আজ সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে নতুন বাসা দেখতে যাবে।”
” না মা। এ ব্যাপারে উনি তো আমাকে কিছু বলেনি।”
” ওহ। হয়তো কাজের চাপে বলতে পারেনি। আমাকে কাল রাতে একবার বলেছিলো। ”
” আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আদ্রিশ হয়ত পরে বলবেন আমাকে।”
” হ্যাঁ বলতে পারে। জানো বউ মা, আমার শুধু মন চাইছে তোমাকে যত দ্রুত পারি বাড়িতে নিয়ে আসি। একবার ভাবলাম কোনো এক শুক্রবারে আদ্রিশকে বলবো তোমায় নিয়ে আসতে। কিন্তু পরে তোমার শ্বশুর বললো, এভাবে না নিয়ে একেবারে বড়সড় আয়োজন করে আনবো তোমায়। সেটা ভালো হবে। ”
ওপাশে মিম মৃদু হাসলো। এভাবে খানিক সময় কথাবার্তা চললো দুজনের মাঝে। পরে আসমা বেগম ফোন রেখে দিলেন। এরপর মিম ফোন করলো আদ্রিশকে। আদ্রিশ কল রিসিভ করে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
” হ্যাঁ বলো।”
মিম নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” ব্যস্ত আপনি?”
” কোনো দরকার ছিলো তোমার? বলতে পারো।”
” দরকার ছিলো না ঠিক। মা বললো আপনি বলে আজ বাসা দেখতে যাবেন?”
আদ্রিশ এক রোগীর রিপোর্ট দেখছিলো তখন। রিপোর্ট দেখা বাদ দিয়ে বললো,
” আম্মা তোমাকে বলে দিয়েছে?”
” হ্যাঁ কেবলই কথা হলো উনার সাথে।”
” ইশ, ভাবলাম সন্ধ্যায় তোমাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে সারপ্রাইজ হিসেবে বলবো এটা। তার আর হলো কোথায়।
আজ প্ল্যান করেছিলাম বাসা দেখতে যাবো। সন্ধ্যায় রেডি থেকো। ”
মিম ছোট্ট করে প্রত্যুত্তর দিলো,
” আচ্ছা।”
————-
সন্ধ্যায় আদ্রিশ ও মিম বের হলো। আদ্রিশের সাথে দেখার হওয়ার পরপরই সে জিজ্ঞেস করলো,
” এখনই বাসা দেখছেন কেনো? আরোও দু তিন মাস সময় আছে।”
আদ্রিশ মৃদু হেসে বললো,
” এখন দেখলে এখনই বাসা পেয়ে যাবো নাকি। ভালো বাসা খুঁজতেও তো সময় লাগে। আমি অবশ্য একটা দেখেছি। পছন্দ হয়নি। বেশ ছোট। এখন যে বাসাটা দেখতে যাবো সেটা এক সিনিয়র ভাই খুঁজে দিয়েছে। বললো ভালো বাসা এটা। চলো দেখে আসি।”
আদ্রিশ ও মিম বাইকে উঠলো। আজ মিম আদ্রিশকে শক্ত করে ধরতে ইতস্তত বোধ করলো না। উল্টো স্বেচ্ছায় সে আদ্রিশকে ধরলো। যদিও খানিক লজ্জা পাচ্ছিলো সে। তবে সে লাজুক ভাব পশ কাটিয়ে আদ্রিশকে ধরলো। ওদিকে আদ্রিশ মিমের অগ্রসরমান আচরণে মুচকি হাসলো। খুশি হলো সে। তবে কিছু বললো না।
আদ্রিশ ও মিম বাসা দেখতে চলে এলো। তৃতীয় তলার দু রুমের একটা বাসা। আয়তনে যে খুব বড় তা নয়। তবে নতুন দম্পতির বসবাসের জন্য আদর্শ বাসা।
মিম ঘুরে ঘুরে দেখছে। সাথে আদ্রিশও তার পিছু পিছু দেখছে। বাসার একমাত্র ব্যালকনিতে এসে আদ্রিশ বললো,
” এখানে দুটো চেয়ার রাখবো। আর কিছু কিছু হ্যাংইং প্ল্যান্ট রাখবো। ”
মিম আগ্রহী হয়ে বললো,
” আমি কয়েকটা ফুল গাছও রাখবো। আর আমার মনে হয় চেয়ার না রেখে একটা ম্যাট রাখলে ভালো হবে। নিচে বসে চা খাওয়া যাবে।”
আদ্রিশ মিমের আগ্রহ দেখে ভীষণ খুশি হলো। আড়ালে মুচকি হাসলো সে।
মিম পুনরায় বললো,
” ব্যালকনির দরজায় একটা উইন্ড কাইম রাখবো। সারাদিন হালকা টুংটাং শব্দ শোনা যাবে। মনটা ভালো থাকবে।”
” আচ্ছা, চলো রুমগুলো দেখি।”
মেইন বেডরুমে এসে আদ্রিশ বললো,
” একটা খাট বানাতে হবে বুঝলে। আমি মেসে তো সিঙ্গেল খাটে ঘুমাই। আমাদের খাটটা রাখবো ঐ জানালার কাছে। একদম মাঝ বরাবর। জানালায় একটা সুন্দর পর্দা দিতে হবে। সাথে একটা ড্রেসিং টেবিলও বানাতে হবে। আলমারিও বানাতে হবে।”
এতক্ষণ যাবত বেশ হাসিখুশিই ছিলো মিম। কিন্তু নতুন নতুন সংসারে এতকিছু বানাতে হবে দেখে খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো সে। খানিক ইতস্ততার সহায়তায় বললো,
” একটা কাজ করি। আলমারি আরো পরে বানাই। আপনারও সিঙ্গেল আলমারি আছে, আমারও সিঙ্গেল আলমারি আছে। শুধু শুধু এখন আলমারি বানানোয় অতিরিক্ত খরচ করার দরকার নেই। ”
মিমের প্রস্তাবে যুক্তি পেলো আদ্রিশ। তার সাথে সহমত পোষণ করলো। বললো,
” হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। পরে আলমারি বানানো যাবে তাহলে। কিন্তু অন্যান্যগুলো বানাতে হবে। ”
” হ্যাঁ।”
পুরো বাসা দেখা শেষ হলে মিম যখন ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করলো তখন তার মুখ চুপসে গেলো। কেননা ভাড়া খানিকটা বেশিই মনে হলো তার কাছে। আদ্রিশের যে বেতন তাতে এ বাসা নিয়ে থাকা খানিকটা কষ্ট হয়ে যাবে। সে আর কথা বাড়ালো না। মন খারাপ হয়ে আছে তার। আদ্রিশ বোধহয় বুঝতে পেলো তার মনের কথা। বাসা হতে বের হয়ে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো,
” ভাড়া পছন্দ হয়নি তাই তো?”
মিম চট করে তাকালো আদ্রিশের দিকে। কিঞ্চিৎ বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” আপনি বুঝলেন কি করে?”
আদ্রিশ মৃদু হেসে বললো,
” তোমার কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছি। ভাড়া নিয়ে চিন্তা করো না। আমি ম্যানেজ করে নিবো।”
মিমের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়লো। জিজ্ঞেস করলো,
” কিভাবে ম্যানেজ করবেন? এই বেতনে এতকিছু কি করে সম্ভব? ”
” সবই সম্ভব। আমার ব্যাংকে টাকা আছে। দরকার হলে আব্বার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিবো।”
মিম বোধহয় ভরসা পেলো। তবুও বললো,
” কষ্ট হয়ে যাবে না?”
” কষ্ট হবে কেনো? এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। একটা ক্লিনিকে সপ্তাহে তিনদিন ডিউটি করবো। সেখান থেকেও টাকা আসবে। সো টেনশনের কিছু নেই৷ ”
” আবার ক্লিনিক! আপনার উপর খুব চাপ পড়ে যাবে কাজের!”
” সপ্তাহে তিনদিন কিছু মনে হবে না। তুমি আপাতত পরীক্ষার চিন্তা করো। আর পাশাপাশি টুকটাক ঘর সাজানো গোছানোর আইডিয়া নাও। কিন্তু পড়ালেখার ক্ষতি না করে।”
মিমের মনটা খানিক ভালো হলো। নিকাবের আড়ালে মৃদু হাসলো সে।
আকাশে মস্ত বড় এক চাঁদ উঠেছে। থেকে থেকে মেঘের আড়ালে ঢেকে যাচ্ছে চাঁদটি। আবারও মেঘ সরে গিয়ে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। আদ্রিশ ও মিম দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে। রাস্তার ভেতরের দিকে মিমকে দিয়ে হাঁটছে সে।
নির্জন নীরব রাস্তায় জ্যোৎস্নার আলোয় হাঁটছে তারা। দুজনের মাঝে কোনো কথা হচ্ছে না। দুজনেই নীরবতাকে বেছে নিয়েছে। এক পর্যায়ে আদ্রিশ আড়চোখে মিমকে দেখলো। মিম আনমনে হাঁটছে। মাঝে মাঝে দৃষ্টি তুলে চাঁদের পানে চাইছে।
আদ্রিশের এ পর্যায়ে মন চাইলো মিমের হাতে হাত রেখে এ নির্জন রাস্তায় হাঁটতে। কিন্তু কি মনে করে সে ইচ্ছে চাপা দিলো সে। তবে কিছুদূর যাবার পর তার আর তর সইলো না। সে পকেট হতে হাত বের করে মিমের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল জড়ালো।
অকস্মাৎ আদ্রিশের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মিম। এক নজর আদ্রিশের দিকে চাইলো। আদ্রিশ সম্মুখে চেয়ে হাঁটছে। ভাবখানা সে এমন ধরে রেখেছে যে এ হাতে হাত মিলানো ব্যাপারটা সম্পূর্ণরূপে তার অজান্তে ঘটেছে। মিম আদ্রিশের এহেন কান্ডে ঈষৎ হাসলো।
হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে মিম আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলো,
” মা বাবা এত টাকার বাসা ভাড়া নিয়ে কিছু বলবে না?”
” নাহ। তারা কি বলবে। তারা চায় তাদের ছেলে বউ যেনো সুখে শান্তিতে বসবাস করে। এই তো তাদের চাওয়া। এর চেয়ে বেশি আর কি চাইবে তারা।”
মিম প্রত্যুত্তর জানালো না৷ আদ্রিশও আর কথা বাড়ালো না৷ তবে খানিক বাদে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছেড়ে তৃপ্ত কণ্ঠে বললো,
” আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে মিশমিশ। দুজনের ছোট্ট একটা সুন্দর সংসার। টোনাটুনির সংসার। ”
#চলবে
®সারা মেহেক