#প্রেয়সী 🤎🥀(৩১)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
৬০.
সকাল থেকেই মনটা ভীষণ খচখচ করছে আমার। মনে হচ্ছে আজ বিয়ে উপলক্ষে মানুষগুলো একটু অতিরিক্তই মাতামাতি করছে। ঘড়ির কাটা ৯টার ঘরে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাতিরেকেই ৯টার ঘরে তার অস্তিত্বের জাগরন ঘটবে। ঠিক সাড়ে আট টার দিকেই ফাহিম ভাইয়ার ছোট চাচার ছেলে জিতু আ-গু-ন লাগিয়ে দিলো সিড়ির কাছটাতে। মজার ছলে দিয়াশলাই নিয়ে আ-গু-ন খেলতে খেলতে সিঁড়িতে সাজানো ঝুলিয়ে রাখা পর্দায় ধাপ দিয়ে আ-গু-ন ধরে গেলো। যার জন্য প্রস্তুত ছিলো না উপস্থিত কেউ! বেচারা ভ-য়ে গুটিশুটি মে-রে ডাইনিং টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়ল। আর তাদের সঙ্গী সাথীরা যে যেখানে পারল লুকিয়ে পড়ল।
এই আণ্ডাবাচ্চােদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলো তৈশি আপুর মেয়ে রাফামনি! তৈশি আপু রিম্মি আপুর ফুপুুর মেয়ে। বছর ছয় আগে বিয়ে হয়েছে। তার একমাত্র কন্যা রাফামনি। বয়স বোধকরি ৪ হবে। সবার উঠেপড়ে দৌড়ে পালানো দেখে ও হতভম্ব হয়ে ওখানেই বসে রইল! আমি সিঁড়ির পাশ থেকেই গতকালের রং খেলার রং গুলো নিয়ে যাচ্ছিলাম বাইরে ফেলার উদ্দেশ্যে। এমন সময় নাকে কিছু পো-ড়া-র গ-ন্ধ পেতেই দেখি সিঁড়ির গোড়ায় এমন দশা। বেচারি রাফমনি দাঁড়িয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে আর আ-গু-নে-র তী-ব্র-তা পর্যবেক্ষণ করছে। বারে বারে মাকে ঠোঁট ফুলিয়ে ডেকেও উঠছে। আগুন ওর থেকে সামান্যই দূরে ছিলো। আমার আসার আর কিছুক্ষণ দেরি হলে ওর গায়ে লেগে যেতেও সময় নিতো না। আমি হাত থেকে সব ছুঁড়ে ফেলেই দৌড়ে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম। আগুন দেখলেই আমার বড্ড গা গোলায়। রোগটা মায়ের থেকে পাওয়া। মায়েরও নাকি আ-গু-নে ফো/বি/য়া ছিলো!
গলা ফাটিয়ে কাউকে ডাকার বদলে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লাম রাফামনিকে নিয়ে। কথায় আছে বিপদের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা! তেমনই ঘটল। আ-গু-ন বাড়তে লাগল অথচ আমি আর রাফামনি বাদে একটা মানুষও নেই আশেপাশে। রাফামনি আমার গলা জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগল। চোখের সামনে আ-গু-নে-র তেজ বাড়ছে! কিন্তু থামানোর জন্য কাউকে পাচ্ছি না।
আমাকে আর রাফামনিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো জিতু। দৌড়ে এলো আমাদের দিকে। আমি ওকে দেখতে পেয়ে ওর দিকে হাত তুলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম কাউকে ডেকে আনতে! ও আর এগোলা না আমাদের দিকে। দৌড়ে গেলো বাইরে। গলা ফাটিয়ে সবাইকে জানান দিলো ঘরের মধ্যে সিঁড়িতে আ/গু/ন লেগেছে! ওর কথাতেই সবাই এক দৌড়ে এসে হাজির হলো। সিঁড়ির পাশেই আমাকে আর রাফামনি পড়ে থাকতে দেখে অর্ধেক মানুষ আমাদের কাছে দৌড়ে এলো। তৈশি আপু কেঁদে ফেললেন মেয়ের কান্না দেখে। মেয়ের কোনো জখম হয়েছে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় হাস ফাঁস করতে লাগলেন তিনি। আমাকে রাহিয়ান আর রাই ধরল। নিজের শরীরের ভার নিজেরই বহন করতে ভীষণ ক-ষ্ট হচ্ছে। কম্পিত হাতে রাহিয়ানের হাতটা চেপে ধরতেই উনি জড়িয়ে ধরলেন আমায়। অস্থির কন্ঠে সান্ত্বনা দিতে দিতে জানতে চাইলেন আমি ঠিকাছি কিনা!
আগুন নেভালেন আরফান ভাইয়ারা! সিঁড়ির একপাশেই সব ফুল,পর্দা খুলে আবারও নতুন করে লাগানো হলো। এখন সব ঠিক আছে। আধঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা আর কেউ মনে রেখে বসে নেই। আবারও আগের উৎসাহে মেতে উঠেছে সবাই! একমাত্র আমিই স্বাভাবিক নই ওমন ঘটনার পর! ভেতরটা কেমন থেকে থেকেই কাঁপছে আমার! আবার কোনো অনাচারের পূর্বাভাস পাচ্ছি! কিন্তু মনে মনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি আর যেন কোনো অ/ঘ/ট/ন না ঘটে! সবটা যেন ঠিকঠাক ভাবে মিটে যায়।
—-” ন’টা বাজে। এখনও কিছু খেলিনা! রাহিয়ান ভাইয়া জানতে পারলে কিন্তু খুব বকবে নিধু!”
রাইয়ের মুখ ভার! কি জানি কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করায় বলেছিলো সব ঠিকাছে! রূপ ভাইয়া বিয়েতে আসেননি! শুনেছিলাম সে পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে! নিশ্চয়ই সেই বিষয় নিয়েই মেয়েটার মন খারাপ! আমি জানালা ছেড়ে সরে এলাম। বিছানার উপর বসতে বসতে রাই মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানার চেষ্টা চালালো। আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
—-” রূপ ভাইয়ার সাথে ঝা/মে/লা কি করে পাকালি? ছেলেটা তো এতটাও ঝ/গ/ড়ু/টে টাইপ নয়!”
রাই তাচ্ছিল্য করে হাসল। কথা ঘোরানোর তালে বলল,
—-” উঠেছিস সেই ভোর ছ’টায়। রাহিয়ান ভাইয়া অনেকবার করে বলে দিয়েছেন তোর সঠিক সময়ে খাবারের কথাটুকু যেন আমি মনে করিয়ে দেই! দরকার পড়লে নিজ হাতে খাইয়েও যেন দেই! কি খাবি বল? আমি নিচে গিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”
—-” কথা ঘোরাচ্ছিস কেন? আজকাল বড্ড পরপর ভাবিস দেখছি!”
—-” কি যা-তা কথা বলিস বলতো? জলদি বল কি খাবি? একটু পর আবার রিম্মি আপুকে নিয়ে পার্লারে যেতে হবে! কতগুলো মানুষ বলতো? এক এক করে সবার সাজতেও তো….”
—-” রিম্মি আপুকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার অনেক লোক আছে। তুই এতো ভাবিস না! এবার চটপট বল কি হয়েছে তোর?”
—-” উফফ নিধি! তুই কিন্তু দিনদিন বড্ড বেশি জেদী হচ্ছিস! বললাম তো সব ঠিকাছে!”
—-” রূপ ভাইয়া বিয়েতে কেন এলো না?”
রাই হঠাৎই ক্ষে-পে গেলো! ক্ষে-পা গলায় বলল,
—-” রূপ হলো রাহিয়ান ভাইয়ার বন্ধু! সে কেন বিয়েতে এলো না তা রাহিয়ান ভাইয়াই সঠিক জানবে! আমি কি সবার খোঁজখবর রেখে বসে আছি নাকি?”
—-” তুই রে-গে যাচ্ছিস কেন! আমি তো এমনিই…”
—-” আমি মোটেই রা-গ-ছি না নিধি! সোজাসাপটা কথা হলো রূপ আর আমার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটেছে! কারন সে তার বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে! আমার সাথে তার এতোটাও লাগাপড়া নেই যে সে আমায় জানিয়ে বিয়ে করবে! যেখানে তার নিজের বন্ধুরাই জানেনা সেখানে আমি দু’দিনের মেয়ে হয়ে কি করে জানবো বল?”
আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম! রূপ ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছেন? মানে কি! রূপ ভাইয়া আর রাইয়ের বিচ্ছেদ ঘটেছে আর আমি সেসব জানিওনা! রাই আমায় কিছুই জানালো না?
—-” এতকিছু ঘটে গেলো আর তুই আমাকে জানালিও না রাই? মনের ভেতর পাথর চাপা রেখে কি বিন্দাস আছিস! কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিসনি! আমাকেও না!”
রাই ছলছল চোখে তাকালো। আমার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে জড়ানো গলায় বলল,
—-” কি করে বলতাম বলতো? তুই নিজেই তো স্বাভাবিক ছিলিস না! আঙ্কেলের হঠাৎ চলে যাওয়া তোকে এতোটা পা-থ-র করে দিয়েছিলো যে আমি নিজেই আমার ক-ষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম! জানিস, রূপের এমন কাজে আমি বিন্দু মাত্র অবাক নই! কারন আমার ভাগ্যটাই এমন! কেউ আমায় ধোঁকা না দিয়ে থাকতেই পারেনা! আর আমার সাথে সবার থেকে ধোঁকা খাওয়াটাই বেশি স্যুট করে! কেন তোর মনে নেই অলি ভাইয়ার কথা!”
অলি রাইয়ের প্রথম প্রেম! ক্লাস টেনে ওদের সম্পর্ক হয়! টানা দুই বছর সম্পর্ক করার পর খুব বি-শ্রি ভাবে রাইকে ধোঁ-কা দেয় ছেলেটা! হঠাৎ এসে রাইয়ের নামে যা-তা বদনাম দিয়ে ছেড়ে যায়! রাই মানতে পারেনি সেই ক/ষ্ট! এক তো আবেগি বয়স তারউপর খুব কাছের কেউ ছেড়ে যাওয়ার ব্যা/থা! সব মিলিয়ে মেয়েটা বড্ড বেশি ক/ষ্ট পেয়েছিলো!
আমি আর কিছু বলতে পারলামনা! রাইকে বুকে আগলে নিয়ে আমিও কেঁদে ফেললাম! রাইও আর শক্ত থাকতে পারল না। আমাকে পেয়ে যেন ওর সব কষ্ট গুলো একসাথে উপচে এলো। শব্দ করে কেঁদে উঠল মেয়েটা! আমি ওকে বাঁধা দিলাম না! আজ ও যত খুশি কাঁদুক! কেঁদে ওর ক/ষ্ট গুলো একটু হলেও হালকা করুক!
৬১.
কাজী সাহেব এলেন দুপুর দুটোর দিকে। বিয়ে পড়ানো হবে ২ টা বেজে ৩০ মিনিটে। আগের সময় টুকু তাকে নিয়ে খাওয়া দাওয়ার পর্ব সারতে নিয়ে গেলেন বাকি মেহমানদের সাথে!
রিম্মি আপুকে পার্লার থেকে নিয়ে ফিরল মিনিট দশেক হলো। আসিফ ভাইয়ারাও এসেছেন অনেক্ষন। তাদের মেহমানেদরই খাতিরদারি করছেন বাড়ির লোক। আমাকে আজ শাড়ি পড়তে দেওয়া হয়নি! মহারাজের আদেশে মেরুনরঙের একখানা ভারি লেহেঙ্গা পড়তে হয়েছে। লেহেঙ্গাটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে আমার থেকে এই লেহেঙ্গার ভার বেশি হবে। এ কথা শুনে রাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়েছে অনেক্ষন।
এখন আপাতত রিম্মি আপুর শশুর বাড়ির মহিলা মহলের খাতিরদারিতে আছি আমরা বাড়ির মেয়ে বউরা। সবাই ছোটাছুটি করে খাবার দেওয়া নেওয়া করছি। বারবার ভারী লেহেঙ্গায় আঁটকে হুমড়ি খেয়েও পড়ার দশা হচ্ছে আমার। তা দেখে আবার হাসতে হাসতে ধরে ফেলছেন বউমনি আর রাই।
খেতে খেতে এক মধ্যবয়স্কা মহিলা আমায় দেখে বেশ কানাঘুঁষা করছেন। আর যার সাথে করছেন সেও তার সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলেছেন। ঘুরে ফিরে আমায় নিয়ে তাদের কানাঘুঁষা মোটে শেষ হচ্ছে না! যা দেখে অস্বস্তিতে মাথা ঘুরছে আমার। আমি ইনিয়েবিনিয়ে তাদের দু’জনকে এড়িয়ে চলছি। কিন্তু তারা দু’জন খাবারের খাতিরদারিতে আমাকেই ডেকে ডেকে তাদের সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছেন! অবশেষে আমি না পেরে বউ মনিকে বলে উঠলাম “দু’মিনিটের জন্য বাইরে যাচ্ছি!” বউমনি মুচকি হেসে সম্মতি দিলেও উনাদের থেকে ছাড়া পেলাম না! তাদের মধ্যে কালো দেখতে করে মহিলা বলে উঠলেন,
—-” নাম কি তোমার?”
আমি জোরপূর্বক হেসে বউমনির দিকে তাকাতেই বউমনি হাসি মুখে বলল,
—-” মাওইমা, ও হলো আমাদের নিধি! রাহিয়ানে….”
বউমনিকে আর বলতে দিলেন না উনি। আগ বাড়িয়ে বললেন,
—-” বেশ বেশ। তা মা তোমার পড়াশোনা কদ্দূর?”
আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম,
—-” জ্বী, অনার্স প্রথম বর্ষ!”
পাশের মহিল খোঁচা দিয়ে কিছু একটা বললেন! ঠিক বুঝতে সক্ষম হলাম না। তাদের কান্ড দেখে রাই বিরক্ত কন্ঠে বলল,
—-” খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে নেই আন্টি! খাবার গলায় আঁটকে যাবে।”
রাইয়ের কথায় দু’জনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। ফর্সা করে মহিলা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
—-” তোমার কি হয়েছে! খাবার দিচ্ছো দাও না!”
রাই ক্ষে/পা চোখে তাকালো তৎক্ষনাৎ! আমি রাইয়ের হাত ধরে শান্ত হতে বলে উনাদের উদ্দেশ্যে বললাম,
—-” আন্টি ও কিন্তু ঠিকই বলেছে! আপনারা বরং খেয়ে উঠুন তারপর না হয় আমরা কথা বলবো ক্ষন।”
আমার কথা মানলেন না উনারা। কালো চেহারার অধিকারী মহিলা পাশের জনকে আস্তে করে বলে উঠলেন,
—-” আমাদের কেশবের জন্য মেয়েটারে বেশ লাগবে কি বলো?”
—-” হ্যাঁ আপা! তুমি ঠিক বলছো। কেশবের মাকে বলে দেখব। না করতে পারবেনা দেখো!”
উনাদের কন্ঠ বেশ সতর্ক হলেও আমার কানে তাদের কথা স্পষ্টই আসছিলো। আমি বিরক্ত চোখে তাকালাম তাদের দিকে! কিছু বলতে নিলেই পেছন থেকে ভেসে এলো কেশবের গলা।
—-” এমন সুযোগ থাকলে সবার আগে প্রস্তাবটা আমিই দিতাম খালা!”
উনার গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো সবাই! রাই আমার দিকে আঁড়চোখে তাকালো। কেশব ওর ক্রাশ হলেও এই মুহুর্তে ওর যেন এদের কানাঘুঁষা আর মশকরা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না!
ফর্সা মহিলা প্রশ্ন সূচক মুখ করে কেশবের দিকে তাকাতেই কেশব ফিচেল গলায় বলল,
—-” উনি কিন্তু তোমাদের আগেই আমার বেশ মনে ধরেছে।কিন্তু যতক্ষণে বলব ভেবেছি ততক্ষণে তার এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে!”
কথা গুলো বলতে বলতে এগিয়ে এলেন কেশব। আমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। আমি সরে যেতে নিলেই সে আবারও বলে উঠলেন,
—-” ভালো মানিয়েছে না ফুপু?”
আমি রাগি চোখে তাকালাম কেশবের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
—-” নাইস জোক্স।”
কেশব দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলেন। আমি তার পাশ থেকে সরে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ালেন রাহিয়ান। কোত্থেকে, কখন তার আবির্ভাব ঘটল আমার মতোই হয়তো সবার মনেও একই প্রশ্ন। এতো কান্ড দেখে বউমনি অসহায় চোখে তাকাতে লাগলেন সবার দিকে। রাহিয়ানের কান দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। চোখ,নাক,ঠোঁট সবারই একই অবস্থা! রা-গে সে আপাতত হিতাহিতজ্ঞানশূন্য! আমি শান্ত চাহনি দিয়ে তাকে শান্ত হতে বললাম! কিন্তু উনি শান্ত হতে পারছেন না। গলার কাছে দু’পাশ দিয়ে মোটা রগ গুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে ক্রমশই! উনি কেশবের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আমি ক্ষপ করে উনার হাত ধরে ফেললাম! চোখের ইশারায় বারন করতে লাগলাম উনাকে! কিন্তু উনি তো উনি! পারলে আমাকে সহই হেঁটে যান কেশবের সামনে! পরিস্থিতির তাল ধরতে পারছেনা বেচারি বউমনি! সামাল দেওয়া তো দূর! তবুও সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললেন,
—-” মাওইমা, ও হলো আমাদের রাহিয়ান! নিধি আর রাহিয়ানের এনগেজমেন্ট হয়ে আছে। রিম্মির বিয়েটা ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হলেই ওদের বিয়েটাও দিয়ে দিবো। আপনারা সবাই আসবেন কিন্তু! স্পে..শাল দাওয়াত রইল!”
মহিলা দু’জনের কপাল কুঁচকে এলো। ফিসফাস করে কিছু একটা বলল! আমার কান অব্দি এলো না! রাহিয়ান আর এক সেকেন্ড সময়ও দাঁড়িয়ে রইলেন না! আমাকে সহই গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে এলেন।
আশেপাশে আর দাঁড়ানো হলো না। আমাকে নিয়ে রুমে এসে ধারাম করে গেটে লক করে দিলেন উনি! আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তার দিকে! তার রূপ ভ-য়ং-ক-র! যখন তখন অঘটন কিছু ঘটিয়ে দিতে বিন্দু মাত্র সময় নিবেননা!
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে তার হাতটা ধরতে নিলেই উল্টে উনি আমায় চেপে ধরলেন দেয়ালের সাথে! চোখ মুখ শক্ত করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলেন,
—-” কেন গিয়েছো ওখানে? এতকাজ কে করতে বলেছে তোমাকে? খুব কর্তব্যপরায়ণ তুমি তাই না? কাজ করে করে একদম দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলছো দেখছি?”
শেষের কথাটা বেশ চেঁচিয়ে বলে উঠলেন উনি! আমি
ভ/য়া/র্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বললাম,
—-” আ,,আপনি অযথা রা/গ করছেন! এটা বিয়ে বাড়ি। এখানে কতশত কাজ থাকে। আমি যদি সবার সাথে হাতে হাতে একটু সাহায্য করি তো তাদের উপকার হবে! আপনি এভাবে কেন ভাবছেন?”
—-” কিভাবে ভাবছি আমি? ওখানে বসে ঐ মহিলা দুজন তোমায় কেশবের বউ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন! আবার কেশব এসে তোমার আর ওর ম্যাচিং নিয়ে কথা বলছিলো! তুমি সবটাই চুপচাপ দেখলে! কিচ্ছু বললে না! এরপরও আমি কিভাবে ভাববো তুমিই বলে দাও?”
—-” কেউ আমায় কারোর জন্য পছন্দ করলেই বুঝি আমি তার ঘরের বউ হয়ে যাবো? কেউ আমার সাথে তার ম্যাচ করেছে কিনা তা নিয়ে আনন্দ পেয়ে একা একাই খুশিতে গদগদ করছে বলে আমিও খুশিতে গদগদ করবো? একদমই তা নয়! আমি শুধু এই মানুষটার জন্যই আছি! বউ হলেও আমি তারই হবো আর ম্যাচিং করুক বা না করুক তবুও আমি তার সাথে থাকবো। আমি তো আপনারই বউ! এই দেখুন? আমার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে আপনার পরিয়ে দেওয়া আংটিটা কত সুন্দর জ্বলজ্বল করছে। তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে! এই প্রকৃতিও জানে নীলাদ্রিতা রাহিয়ান ব্যতীত আর কারোর হবেনা! সেটা অসম্ভব! তবুও কিসের এতো ভয়/? কিসের এতো চিন্তা?”
রাহিয়ান শান্ত হয়ে গেল হঠাৎ! আমায় ছেড়ে দিয়ে তৎক্ষনাৎ উল্টো দিকে ঘুরে গেলো! তার নীরবতা এবার আমাকে সত্যি বড্ড ভাবাচ্ছে। তার আচরন এবার বড্ড বেশি অস্বাভাবিক লাগছে। আচ্ছা এমন কি কোনো গোপন কথা আছে যেটা উনি জানেন কিন্তু আমি জানিনা? যার জন্যই উনার এতো ভ/য়!
#চলবে____________________