প্রেয়সী পর্ব ২৯

0
471

#প্রেয়সী (২৯)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৫৬.

বাবা মা//রা গেলো আজ ২১দিন। আগের থেকে সব কিছু এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সবাই সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বার্তা বলতে পারছে। একভাবে দেখতে গেলে আমিও স্বাভাবিক। বাবার দাফনকাজ শেষ হওয়ার পর থেকে টানা ১৫ টা দিন, নিজেকে একরকম ঘর বন্ধিই করে ফেলেছিলাম। নিজের সাথে কোনো ক্রমেই এমন ঘটনা মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। কি করে মানাবো? ওমন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ টা এভাবে হঠাৎ করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে কেই-বা ভেবে ছিলো? বুঝতে তো আমিও পারিনি। কত খুশি ছিলাম ঐ দিনটা। বাবা আসবে, বাবার জন্য কত তোড়জোড় ছিলো আমার! কিন্তু এখন আর সেসব নেই। বাবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে সেই আশা টুকুও যে বাবার কাফনের কাপড়ের সাথে মুড়িয়ে বিদায় করেছি। আর সে আশা করতে সাহস করি না। এ’কদিনে বাবা বেশ ক’বার স্বপ্নে এসেছে। নিজের বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে অনেক্ষন গল্প করে গিয়েছে আমার সাথে। আমায় ভালে মন্দ অনেক কথা বলেছে। নিজেকে শক্ত করতে বলেছে। বলেছে, “ভাব না মা যে কিছুই হয়নি! সব কিছু ঠিকাছে?” বাবা বললেও আমি ভাবতে পারলাম না। এখন যে ইচ্ছে করলেই দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে পারিনা! এখন যে আর চোখের দেখাটুকুও দেখতে পারিনা! তার বেলা?
মনে মনে তো প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছি, আর কখনোও কাউকে নিজের প্রানের থেকে বেশি ভালোবাসব না। যাকেই ভালোবাসি সেই হারিয়ে যায়। লোকে তো ঠিকই বলে, আমি অপয়া!

—-” কি রে কি ভাবছিস? চল জলদি? নীচে কিন্তু সবাই অপেক্ষা করছে।”

বড় খালামনিরা এসেছেন নীচে। বলছেন তো সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বাবার শেষ স্মৃতি গুলো থেকে আলাদা হতে যে মন মানছে না। আমি শক্ত চোখে তাকালাম নিতু আপুর দিকে। তপ্ত গলায় বললাম,

—-” আমি কোথাও যাবো না নিতু আপু। তুমি নীচে গিয়ে খালামনিদের বলে দাও। আমি এখানেই থাকব। বাবা কে ছেড়ে আমি কিছুতেই নড়ব না এখান থেকে। আমি চলে গেলে বাবার সব জিনিসপত্র গুলো অবহেলায় পড়ে থাকবে। তাতে বাবা খুব ক/ষ্ট পাবে। প্লিজ আমায় কোথাও যেতে বলো না আপু।”

নিতু আপু গেলো না কোথাও। আমার পাশেই বসে রইল। মুখে ম্লান হাসি তার। ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

—-” তুই না থাকলে চাচার জিনিসগুলো হেলায় পড়ে থাকবে তা তুই ভাবছিস কি করে বলতো? আমি কি তোদের কেউ না হু? আমি কি কিছুদিনের জন্য চাচার জিনিসগুলো যত্নে রাখতে পারব না?”

—-” সেরকম কোনো ব্যাপার নয় গো আপু। আমি আসলে আমার মনটাকেই মানাতে পারছিনা! কি করে যাই বলোতো?”

—-” পা/গ/লি! তুই কি সারাবছরের জন্য যাচ্ছিস নাকি রে? মাত্র কয়টা দিনের জন্যই তো যাবি। আবার চলেও আসবি! এতো কেন ভাবছিস?”

—-” আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে, আমি একবারের জন্য যাচ্ছি ঐ বাড়িতে। আর বোধহয় কখনও ফেরা হবেনা!”

—-” ধ্যাৎ পা/গ/লি। এ আবার কি কথা শুনি? তুই জানিস সামনেই রিম্মি আর আসিফ ভাইয়ের বিয়ে। তাই তো ওরা তোকে নিতে এসেছে। ওখানে কত মানুষ জন থাকবে! কত মজা হবে ভাব? তুই ওখানে গেলে তোর মনটা ঠিক ভালো হয়ে যাবে সোনা। না করিসনা লক্ষীটি। বড় বোনের কথা ফেলিস না! বলছি ওদের সাথে চলে যা। আমিও কিন্তু থাকছি এই বিয়েতে। আমরা খুব মজা করব দেখিস! তোর খুব ভালো লাগবে।”

আমি ছোট্ট করে হাসলাম। নিতুর আপুর দিকে একবার তাকিয়ে লাগেজটা হাতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,

—-” এখন আর আমার কোনো কিছুতেই ভালো লাগা নেই আপু! আমার সব ভালো লাগা গুলো দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে। বাবার মতোন একদিন আমিও হারিয়ে যেতে চাই। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই। যদি কখনো সুযোগ হয় তবে বাবাকে বলব, তুমি ভীষণ স্বার্থপর বাবা! ভীষণ স্বার্থপর!”

পেছন মুড়ে আর তাকালাম না। লাগেজ নিয়ে নীচে নেমে আসতেই এগিয়ে এলো ফাহিম ভাইয়া, আর বউমনি। সবার মুখই ভার হয়ে আছে। কারোর মুখে হাসি নেই। সবাই মনমরা। ফাহিম ভাইয়া আমায় একহাতে আগলে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

—-” খাওয়া দাওয়া কি একদম বন্ধ? এমন রো-গা হচ্ছিস কেন দিন দিন?”

আমি মেকি হাসলাম। বউমনিও মাথায় হাত বুলালো আমার। ছোট্ট করে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,

—-” অনেক অযত্ন হয়েছে নিজের। এবার রোজ আমি নিজ হাতে তোমায় খাওয়াবো। দেখবো কেমন না খেয়ে দেয়ে দিন কাটাও?”

সবার পেছনে শুঁকনো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন রাহিয়ান। তার দৃষ্টি পুরোটাই আমাতে নিবদ্ধ। যা এদিকেও নড়ছেনা ওদিকেও নড়ছেনা।

বড় খালামনি আর বড় খালু পাশাপাশি বসে আছেন। তাদের পাশেই চাচাও আছেন। তারা কোনো এক বিষয়ে কথা বলছেন। যা আমার কানে স্পষ্ট না। আমি আর খেয়ালও করলাম না তাদের দিকে। কোনো কিছুই এখন আর ভালো লাগেনা। চারপাশটা বাবাকে ছাড়া বড় শূন্য হয়ে আছে। এখন আর কান্না পায়না। তবে, আমার একাকীত্ব বড় দং-শ-ন করে আমায়। মাঝে মধ্যে মনে হয় নিঃসঙ্গতা খুব বাজে ভাবে নিগড়ে নিচ্ছে আমায়। আমার একমাত্র সঙ্গী আমার বাবা। তবে আজ আর নেই। নেই বাবা নেই!

—-” মা, তোমরা কথা বলে এসো আমরা না হয় নিধিকে নিয়ে বের হই?”

রাহিয়ানের মুখ চেয়ে তাকালেন বড় খালামনি। মৃদু হেসে বললেন,

—-” ঠিকাছে যাও। আমরা আসছি খানিক বাদে।”

কথাটা “আমরা” বললেও “আমরা” গেলাম না। আমাকে নিয়ে তিনি একাই বের হলেন। বাকিরা পরের গাড়িতে আসছি বলে বাহানা করে থেকে গেলো। হাতের লাগেজটা তারাই রেখে দিলো নিয়ে আসবে বলে। আমিও আর কিছু বললাম না। চুপচাপ চলে এলাম উনার সাথে। গাড়ি কোন পথ ধরে যাচ্ছে জানা নেই। আমি চুপচাপ করে বসে আছি সিটের সাথে হেলান দিয়ে। দৃষ্টি গাড়ির কাচ ভেদ করে পেছনের দিকে ছুটে চলা ঘাস আর বনের দিকে। উনিও চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন।

—-” পানি খাবে?”

উনার ছোট্ট প্রশ্নে ভাবান্তর হলো না আমার। আমি একই ভাবে বসে রইলাম। জবাবেও কিছু বলতে ইচ্ছে করল না। উনি হালকা স্বরে কাশলেন। গলা খাঁকারি দিয়ে আবারও বলে উঠলেন,

—-” কোথাও দাঁড়াবে? সামনেই ছোট্ট একটা পার্ক আছে। তুমি চাইলে গাড়িটা ওখানে রাখবো। আজ ওয়দারটা খুব সুন্দর। কিছুক্ষণ বসলে তোমার ভালো লাগতে পারে। বসবে….”

উনি ক্রমাগত কথা বলেই গেলেন। উনার কথা গুলো প্রথম দিকে শ্রবণগোচর হলেও পরে যেন সব হাওয়ায় ভেসে উড়ে যেতে দেখলাম। কিছুক্ষনের মাথায় হঠাৎই উনি গাড়ি থামালেন। গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি কিছুক্ষন তার হাতের দিকে তাকিয়েই রইলাম। উনি বুঝি অধৈর্য্য হয়েই নিজের থেকে আমার হাতটা টেনে নিলেন। আর আমায় অগত্যাই বের হতে হলো। আমি বের হতেই উনি অন্য হাতে গাড়ির দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাতের বাঁধন শক্ত রেখেই সামনের দিকে এগোতে লাগলেন। পরিবেশটা খুব শান্ত, গম্ভীর। কিন্তু মন মাতানো। উনি কিছুদূর এগিয়ে একটা বসার জায়গা দেখে আমাকে বসতে ইশারা করলেন। আমি বসতে বসতে উনি আমার কাঁধ ধরে বসিয়ে দিলেন। ঠোঁটের কোনে এক চিলতি মিষ্টি হাসি জুড়ে বললেন,

—-” ক্ষিধে পেয়েছে ম্যাডাম? নিতু তো বলল দু’দিন আগে জোর করাতে অল্প কিছু খাবার খেয়েছিলে! আর এই দু’দিনে কেউই তোমায় কিছু খাওয়াতে পারল না! তাই মাকে বলেই চলে এলাম সব ব্যবস্থা করে। কিছু খাবে? তোমার পছন্দের কোনো খাবার? আচ্ছা তোমরা মেয়েরা তো ফুচকা ভীষণ পছন্দ করো? ঐ যে দেখো? ঐদিকটাতে ফুচকা মামাদের ভীড় লেগে আছে। আইসক্রিমও আছে। তোমার যেটা ইচ্ছে সেটাই খাবে। বলো কি খাবে? ফুচকা নাকি আইসক্রিম? এই মেয়ে, এভাবে চুপচাপ আর কতদিন থাকবে বলোতো? তোমার এই চুপচাপে যে কারো বুকের র-ক্ত-ক্ষ-র-ন দিগুণ হারে বৃদ্ধি পায় তুমি জানো কি সে কথা? তোমার এই মলিন মুখটা দেখলে যে কারোর শ্বা-স-ক-ষ্ট হয়! নিঃশ্বাস আঁ-ট-কে যায়! এতো চাঞ্চল্য যার স্বভাব তার নিরবতায় যে প্রকৃতিও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে! পৃথিবীও তার সব নিয়ম কানুন ছেড়ে কেমন গুমরে ম-র-ছে দেখোনা একবার? এই নীলাদ্রিতা? তাকাও একবার? শোনো আমার কথা, মানুষের জীবনটা কিন্তু খুব বেশি সুন্দর তবে নিজেদের ইচ্ছে মতো নয়! প্রকৃতির ইচ্ছে মতো। তুমি সারাদিনে এই নিজের জীবনটাকেই অসুন্দর বলে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করে ম/রে যাবে। কিন্তু সেই তুমিই দেখবে কখনও না কখনও ঠিক বলে উঠবে, জীবনটা কত সুন্দর! আজ ছোট খালু আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে বলে কিন্তু কারোর দিন ঠেকে নেই। সবাই নিজের মতো সবটা মানিয়ে নিয়ে আবারও আগের মতো হয়ে উঠেছে। তবে তার ছোট্ট মেয়েটা কেন তা পারছেনা? কেন বাবার কথা ভেবে শুধু ক-ষ্ট-ই পেয়ে যাচ্ছে হু? বাবা কি তার মেয়েকে এই শিখিয়েছে হ্যাঁ? যে কোনো ছোট খাট ধাক্কা তার মেয়েকে মাঝপথেই পথভ্রষ্ট করে দিবে? আমার তো মনে হয় ছোট খালু তার মেয়েকে এত সহজে ভে-ঙে পড়তে শেখায়নি। আরে সে তো কখনও কাঁদতেই শিখেনি। কত বড়বড় ঝড় সে একা হাতে হ্যান্ডেল করে ফেলেছে তবে আজ কেন এভাবে চুপচাপ হয়ে আছে। কেন লড়াই করছেনা মনের বিরুদ্ধে? কেন নিজেকে এতটা অসহায় ভাবছে? কেন ভাবছে সে একা? সে কেন ভাবছে তার আপন বলতে আর কেউ রইল না? বলো?”

আমি মুখ তুলে তাকালাম উনার দিকে। উনার চোখজোড়া টাটকা জলে চিকচিক করছে। উনার ডার্ক রেড ঠোঁট জোড়াও মৃদু কাঁপছে। আচ্ছা উনারও কি ক-ষ্ট হচ্ছে? বাবা হারানোর ক-ষ্ট? সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টাকে হারানোর ক-ষ্ট? যাকে ছাড়া তার কোনো শুভ কাজের সূচনা ঘটে না তাকে হারানোর ক-ষ্ট? হয়তো হচ্ছে আবার হচ্ছে না! কিন্তু আমার ভীষণ ক-ষ্ট হচ্ছে!! আমার বাবাকে হারিয়ে আমার ভীষণ ক-ষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতরটা তোলপাড় করতে লাগল। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে কান্না পেতে লাগল। গলার কাছে তীক্ষ্ণ ব্যা-থা-য় গোঙানির আওয়াজ বের হতে লাগল। উনি আমার অবস্থা দেখে আমায় বুকের সাথে চেপে ধরলেন। মাথায় কপালে বারবার হাত বুলাতে লাগলেন। আমায় নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,

—-” কিচ্ছু হয়নি! সব ঠিকাছে্! কিচ্ছু হয়নি। এই মেয়ে, এতো কেন ক-ষ্ট পাচ্ছ হ্যাঁ? আমি আছি না?? আমি থাকতে তোমার কোনো ক-ষ্ট-ই হতে পারেনা। কখনও না।”

৫৭.

রিম্মি আপুর গায়ে হলুদের তোড়জোড় চলছে সারা বাড়িময়। মেহমানদের আনাগোণায় গিজগিজ করছে বাড়ি। কাজের এতো চাপ যে সময় একটু দম ফেলারও জো নেই কারও। আমিও এসবের মাঝেই নিজেকে পুরোপুরি ব্যস্ত করে ফেলেছি। সারাদিন সবার সাথে খুনসুটি,হাসি মজায় সবাই আমাকেই পাবে। বলতে গেলে এমন পরিবেশে সব থেকে আমিই বেশি খুশি। সবার সাথে ঘুরেফিরে কাজে সাহায্য করা, আড্ডা দেওয়া, মজা করা সব কিছুতেই আমি। বিয়েতে রাইকেও দাওয়াত করা হয়েছে। উনি নিজে গিয়ে রাইকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে আমার খুশির জন্য। এখন আপাতত আমাদের দুই বান্ধবীর হই হুল্লোড়ই বাড়ি মাথায় তুলে নাচানাচি হচ্ছে।

রিম্মি আপুর হলুদের সব আয়োজন করা হয়েছে গার্ডেনে। সুবিধা মতো পাশেই সুইমিংপুল আছে। সব ঝামেলা ওখানে থেকেই চুকিয়ে নেওয়া যাবে।

—-” উহুম উহুম…”

লণ্ডভণ্ড করে শাড়ি পড়ছিলাম। আচমকা কারোর গলা পেতেই চমকে উঠে শাড়ির কুঁচি গুলো ছেড়ে দিলাম। এই অসময় জ্বা/লা/নো/র মানুষ গুলো যে কোত্থেকে টকপে পড়ে কে জানে?”

পেছন মুড়ে তাকাতে তাকাতে সামনে এসে দাঁড়ালেন
ভ/য়ং/ক/র রূপি কেউ। আমি পেছনের দিকে তাকিয়ে কারোর অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে সামনে তাকাতেই তার মুখটা ভেসে উঠল। আঁ-ত-কে উঠে পেছনে হেলে পড়তেই কোমরে হাত চেপে শক্ত করে ধরে নিলেন তিনি। আমার চোখ জোড়া চড়কগাছ! এমন সময় উনি এখানে কেন? কেউ দেখে ফেললে কি কে/লে/ঙ্কা/রি যে হবে!

—-” আপনি!”

—-” হু আমি!”

—-” এখানে কি করেন?”

—-” ইচ্ছে ছিলো রোমান্স করবো, কিন্তু এই কিছুক্ষন আগেই নীচ থেকে শুনে এলাম বিয়ের আগে নাকি এসব করা ঠিক না। প্রকৃতি রু-ষ্ট হবে।”

আমি মুখ কুঁচকে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম,

—-” কোনো কালেই এসব করা ঠিক না বুঝেছেন। আপনি এখন বের হন এখান থেকে। দেখুন আমার শাড়ির কি দশা। আর এই অবস্থায় আপনার এসব প্যাঁচাল শোনার একটুও মুড নেই আমার। শাড়ি পড়ে জলদি করে নিচে যেতে হবে। খালামনি ডেকেছে আমাকে। কিছু বলবে বলছিলো?”

—-” এখনও খালামনি হ্যাঁ? মা কবে ডাকবে শুনি?”

—-” যখন সময় হবে তখন ডাকব।”

—-” সময় তো আরও সপ্তাহ খানিক আগেই হয়ে গিয়েছে নিধু। তবুও কেন?”

—-” সপ্তাহ খানিক আগে কি হয়েছে?”

আমার প্রশ্নে উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকাতেই উনি এগিয়ে এলেন আমার দিকে। পূর্বের ন্যায় আমার কোমরে হাত রেখে হঠাৎ কাছে টেনে নিলেন। আমি বড়বড় চোখ করে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন,

—-” এমন রিয়াকশন দিচ্ছ যেন পাশের বাড়ির ছখিনা বিবিকে ধরেছি। আরে বাবা নিজের বউকেই তো ধরেছি! এমন করছ কেন?”

—-” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন জনাব আমি এখনও আপনার বউ হইনি! কেবল আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে। তাও সেভাবে নয়। সো, যেদিন সাত কলেমা পড়ে তিনবার কবুল বলব সেদিন থেকে হবো আপনার বউ। বুঝেছেন? এবার ভাগুন তো জলদি। আমাকে শাড়িটা পড়তে দিন। ওদিকে লেট হচ্ছে!!”

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। উনি মুখে না বললেও উনার চোখ জোড়া বলছে উনি কোনো দুষ্টবুদ্ধি পাকাচ্ছেন। পরনে হলুদ পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে কনুই বরাবর রেখে বেশ ভাবুক কন্ঠে বলে উঠলেন,

—-” শাড়ি পড়ায় আমি তোমায় কিছু হেল্প করি? আমার মনে হচ্ছে তোমার শাড়িটা পড়তে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। আমি তোমায় হেল্প করলে আই থিংক তোমার সুবিধাই হবে কি বলো?”

কথাটা বলেই মুচকি হেসে চোখ টিপলেন উনি। আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,

—-” আপনি তো ভারি অ-স-ভ্য লোক। আপনি এক্ষনি বের হবেন এখান থেকে। আমি আর একটা কথাও বলতে চাইনা আপনার সাথে। বের হন বলছি জলদি!”

আমার লজ্জায় ডেবে যাওয়া কন্ঠে উনি হেসে উঠলেন। বের হয়ে যাওয়ার অভিনয় করে আবারও এগিয়ে এলেন আমার কাছে। আমার মুখোমুখি হয়ে আমার দু’গালে হাত রেখে গাঢ় কন্ঠে বলল,

—-” লজ্জা পেলে তোমার গাল দুটো একদম লাল টমেটো হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে তো রসগোল্লার মতো লাগে। ইচ্ছে হয় টুপ করে গিলে খেয়ে নেই। অধিকার অবশ্য আছে। তবে শুধু সময়ের অপেক্ষা। অপেক্ষা করছি, সময় মতো সব কিছু আদায় করবো ম্যাডাম।”

উনার কথা গুলোতে বুকের ভেরতটায় অনবরত ধকধক করে যাচ্ছে। ভেতর থেকে যেন কেউ স্ব জোরে ঢোল পিটিয়েই চলেছে। লজ্জায় মাটি দু’ভাগ করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ভুল ক্রমেও উনার চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা! উনি হাসলেন ছোট্ট করে। আমাকে আর লজ্জায় না মে/রে কপালের মাঝখানে ছোট্ট করে চুমু খেয়ে বললেন,

—-” জলদি এসো নীচে। সবাই অপেক্ষা করছে।”

কথাটা বলে নিজেও চলে গেলেন নীচে। আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে মুচকি হেসে শাড়ি পড়ায় মনোযোগ দিলাম।

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here