#প্রেয়সী 🤎🥀(২৬)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
৫০.
অস্থির মনটাকে শান্ত করেই বাবার আদরের ডাকে সাড়া দিলাম।
—-” কেমন আছো তুমি বাবা?”
—-” নিধি কি কাঁদছে?”
—-” না, নিধি কিন্তু কাঁদেনা! বাবা কি তা জানেনা?”
বাবা ছোট্ট করে হাসলো। বাবার হাসির শব্দে মন জুড়ালো আমার। ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠলাম আমি,
—-” নিধিকে ছেড়ে ওখানে আর কতদিন থাকার মতলব করছো বলবে একটু? তুমি তো দেখছি দিন দিন ভীষণ সেলফিশ হয়ে উঠছো খান সাহেব? তোমার নামে আজই আদালতে মা-ম-লা ঠু-ক-তে যাবো দেখে নিও।”
বাবা আবারও হেসে উঠলো খানিক। আদুরে কন্ঠে বলল,
—-” ডক্টরই যে আমাকে ছাড়ছে না মা। তবে আমিও এই হসপিটালের পাট চুকিয়ে দিয়েছি আজ। ডক্টরকে এক ধমক দিয়ে বলেছি, অনেক হয়েছে আপনার ডাক্তারি পেশার পাঠশালা। এবার আমাকে যেতে দিন দেখি মশাই। আর কতদিন থাকব এখানে? ওখানে যে আমার প্রাণ ভোমরাটা বাবাকে ছাড়া ভীষণ একলা পড়ে গেছে।”
চোখ থেকে গড়িয়ে দু’ফোটা জল পড়লো বুঝি। খেয়াল করলাম না। বাবার বাচ্চামো টাইপ কথা শুনে এবার আমিও বকে উঠলাম,
—-” শুনো খান সাহেব? নিধি তোমায় একটু মিস করে ঠিকই তবে তাই বলে ডক্টরের উপর থেকে তোমার রায় দেওয়া মোটেই বরদাস্ত করবে না বুঝলে? ডক্টর যা বলবেন একদম বিনাবাক্যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
—-” নিধি কি বাবাকে একটুই মিস করে নাকি তার থেকেও সামান্য বেশি?”
—-” নিধি বাবাকে একটু নয় অনেক বেশিই মিস করে। আর নিধির এই বাবাকে ছাড়া ক-ষ্টে-র সময়টা ঠিক করে দিতে হলেও তো বাবাকে আগে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে তাই না? ও বাবা? সত্যি করে একটা কথা বলবে তুমি?”
—-” হ্যাঁ মা। বলনা কি কথা?”
—-” তুমি মাকে আজও ভীষণ মিস করো তাই না?”
—-” তোর মাকে? আরে ধুর কি যে বলিস না তুই? ওকে তো আমি সেই কবেইইই ভুলে গ..গেছি! আমি এখন আর ওকে একটুও মনে করিনা। এখন আমার নিধি মা আছে না? আমার নিধির মতো একটা মেয়ে থাকতে আর কারোর কথা ভ..ভাবতে হয় নাকি? সেই সময়ই পাই না আমি!”
বাবার কন্ঠটা কিঞ্চিৎ কাঁপল বুঝি। কথা গুলো বেশ বাঁধছিলো গলার কাছে। আমার ভেতরটা মোচড় দিলো। প্রশ্নটা করে কি বাবার ক-ষ্ট-টা আরও দু’গুন করে দিলাম? মায়ের কথা ভেবে বাবার ক-ষ্ট পাওয়াটাই কি খুব স্বাভাবিক নয়?
—-” কি রে মা? তুই আবার চুপ হয়ে গেলি কেন?”
—-” বাবা, মানুষ একবার হারিয়ে গেলে আর কখনও ফিরে আসেনা তাই না?”
—-” কেন এসব কথা তুলে নিজের ক-ষ্ট-টা বাড়াচ্ছিস মা? তোর মা আর এই দুনিয়াতে নেই রে। বহুবছর আগে নিজের অস্তিত্ব গুটিয়ে হারিয়ে গিয়েছে সে। আর কখনও ফিরেনি। ফিরবেও না। তাই বলে কি আমরা বোকার মতো তার ফেরার আসায় প্রহর গুনবো?”
—-” সরি বাবা! আমি না বুঝেই বোকার মতো তোমায় এমন একটা প্রশ্ন করে ফেলেছি! আমায় ক্ষমা করে দাও বাবা!”
ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। নিজের উপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
—-” আমার পা-গ-লি মেয়েটা। এই শোন, নিধি নাকি কাঁদেনা? এই মাত্র কে যেন খুব বড় মুখ করে আমাকে বলল, নিধি যে কাঁদেনা তা কি তার বাবা জানেনা? কি রে মা? কাঁদছিস তুই?”
আমি ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলাম। কান্নার বেগটা নিয়ন্ত্রণ করা যে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবুও চেষ্টা চালালাম। অবশেষে সামান্য হলেও সফল হলাম। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে ফুঁপিয়ে উঠে বললাম,
—-” নিধি বাবাকে ভীষণ মিস করছে খান সাহেব। জলদি ফিরে এসো তার কাছে।”
—-” আসবো মা। আজই ডিসচার্জ হলো। পারলে আজই চলে আসতাম। কিন্তু রাহিয়ানের বাবা বললেন যে আজই যাওয়া যাবেনা। যেহেতু আজই ছাড়ল হসপিটাল থেকে। তো একদিন বেড রেস্ট না করে হঠাৎ জার্নি করা ঠিক হবে না তাই আজ থেকে গেলাম। কাল ঠিক আমি আমার মা-টার সামনে থাকব দেখে নিস। আর কখনো তোকে একলা করে বাবা কোথাও যাবে না মা। বাবাও যে তার নিধিকে ছাড়া খুব একলা পড়ে গেছে।”
—-” বাবা? কাল তুমি কি খাবে বলো? নিধি তোমার সব পছন্দের খাবার নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে। কতদিন পর তুমি আসছো বলোতো? কি খাবে জলদি জলদি বলো? তোমার ফেভারিট খিচুড়ি, বিরিয়ানি, চিকেন পাস্তা, আলুপরোটা, আলুপোস্তা, মুগের ডাল, হাসের মাংস, ঝাল মাংস, পোলাও? কি খাবে বাবা? তোমার যা যা ভালো লাগে সব বলো? কাল শুধু একদিনের জন্য তোমার সকল স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সব কিছু খাওয়ার পারমিশন দিয়ে দিলাম।”
বাবা বাচ্চাসুলভ কন্ঠে বলে উঠলো,
—-” সত্যি বলছিস মা? কাল আমি সব খেতে পারবো তো?”
—-” একদম পারবে। বলো তোমার কি খেতে ইচ্ছে করছে। আমি সব রাঁধব।”
বাবা আমোদিত গলায় বলে উঠলো,
—-” তোর যা যা রাঁধতে সুবিধা হবে তুই সেগুলোই রাঁধিস কেমন?”
—-” আমার কোনো কিছুই রাঁধতে অসুবিধা হবে না বাবা। তুমি শুধু নাম গুলো বলো?”
বাবা মিনমিনে সুরে বলল,
—-” তাহলে সবই রাঁধিস।”
আমি হেসে ফেললাম। আদুর কন্ঠে বললাম,
—-” আচ্ছা ঠিকাছে বাবা। কাল আমি তোমার পছন্দের সব খাবারই রাঁধব। খুশি?”
বাবা সন্দিহান সুরে বলল,
—-” হ্যাঁ রে মা? তুই কি আসলেই এতো ভালো হয়ে গেছিস?”
আমি তীক্ষ্ণস্বরে বললাম,
—-” কেন? আমি খারাপ ছিলাম নাকি কখনো?”
—-” না না! আসলে আগে তো খুব কড়াকড়ি করতিস আমার সাথে! এই যেমন, বাবা তুমি এটা খাবে না, বাবা তুমি ওটা খাবে না। এটাতে এলার্জি আছে,ওটাতে ফ্যাট আছে। আজ হঠাৎ সব রাঁধবি বলছিস তো তাই একটু সন্দেহ হচ্ছে!”
—-” এতো এতো বারন করেও কখনো তোমাকে একটা কথাও শোনাতে পেরেছি বলো তো? তুমি তো তোমার ইচ্ছে মতোই খেয়ে এসেছো!”
বাবা খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। বাবা আমার আজও ছেলেমানুষী ছাড়তে পারলো না।
৫১.
সূর্য মামা সময়ের স্রোতে ডুবে গিয়েছে অনেক্ষন। প্রকৃতির বুক চিঁড়ে আঁধার নামলেও মেঘেদের যে মন খারাপ তা ঠিকই ধরা যাচ্ছে। সূর্যাস্ত হওয়ার পর প্রকৃতির হলদেটে রূপ ছাপিয়ে অন্ধকারে ঢেকে উঠছে সময়ের আগেই। আজ বৃষ্টি হবে। এবছরের প্রথম বৃষ্টি। মনটা আনন্দে নাচ পেড়ে উঠলো। বছরের প্রথম বৃষ্টি আর আমি ভিজব না সে যেন অসম্ভব! আগেই বলেছিলাম আমার ঠান্ডার ব্যামো আছে। কিন্তু বাবার মতো আজ আমারও একটু অনিয়ম করতে ইচ্ছে করছে!
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অনন্য রূপে বিমোহিত হয়েই রুমে চলে এলাম। সামনেই নবীন বরন। নাচের প্রোগ্রামে টিম লিডার আমি। যেহেতু বৃষ্টি বৃষ্টি গন্ধ আসছে সেহেতু অনন্যা আপুর সিলেক্ট করে দেওয়া গানটা কয়েকবার শুনে নেওয়া যাক। কয়েক লাইন মুখস্থ হলেও হবে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই প্রাকটিস করব। উফফ ভাবতেই কি যে আনন্দ হচ্ছে। গানটা ছেড়ে বাবার দেওয়া নুপুরটা পায়ে জড়লাম। নুপুরটা বেশ আগের হলেও এই যুগে এসেও এমন সুন্দর কাজ পাওয়া মুশকিল। এক কথায় অসাধারণ। নুপুরটা মায়ের। বাবাই মা কে উপহার দিয়েছিলো। আজ মা নেই তাই মায়ের সব জিনিস আমার।
খাটের উপর বসেই পা দুটো নাচাতে লাগলাম। সাথে সাথে নুপুরের ঝনঝন শব্দে মুখরিত হচ্ছে চারিপাশ। খাট থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে গানের তালে তালে নাচ ধরলাম। নাহ্, কোনো স্টেপই ভুলিনি। সবই ঠোঁটের আগায় মুখস্থ।
বাইরে দমকা হাওয়ার ছুটেছে। বাতাসের তোড়ে রুমের সব পর্দাগুলো উড়ছে। দৌড়ে গেলাম ব্যলকতি। ঝুপ করে বৃষ্টি নামলো। মনটা আর আটকালো না রুমে। ফোনের গান টা কোনো রকমের বন্ধ করেই এক দৌড়ে ছাদে এসে হাজির হলাম। দুনিয়া অন্ধকার করে বৃষ্টি হচ্ছে। ছাদের মাঝ বরাবর এসে দাঁড়ালাম। ঘুরে ঘুরে ভিজতে লাগলাম। কত না আনন্দ হচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হাতে গোনা ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায়ই বৃষ্টির সাথে সাথে ঠান্ডা বাতাসে শরীরে কাঁপুনি উঠে গেলো। তবুও ভিজছি, ভিজতে ভিজতে বৃষ্টির গন্ধে মাতাল হয়ে তাও ভিজছি।
—-” হেই ইডিয়ট! এই সন্ধ্যা বেলায় বৃষ্টিতে কেন ভিজছো?”
কারোর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে! স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। চোখ দুটো আশেপাশে ঘোরাতেই নজরে এলো রাহিয়ানকে। মনের ভেতরটা ধড়ফড় করে উঠলো। উনি এখানে কি করছেন?
—-” কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? ভেতরে এসো! কাম ফাস্ট?”
রীতিমতো ধমকে উঠলেন। বুঝিনা বাপু, এই লোকের আমার সব কিছুতেই এতো সমস্যা কেন?
ধীরপায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। সে চিলেকোঠার দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বোধকরি উনি ছাঁদেই ছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টি আসায় এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
—-” বৃষ্টিতে ভিজছো কেন? জ্বর, ঠান্ডা না বাঁধালেই কি চলছিলো না?”
আমি ঠোঁট উল্টে তাকালাম। এটা তো বছরের প্রথম বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে তো মানুষ সখেও ভিজে।
—-” বৃষ্টিতে ভেজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।”
উনি বুঝি হোঁচট খেলেন আমার আজগুবি কথায়। ভ্রু যুগল কুঁচকে নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। কি বলবেন বুঝতে না পেরে বোকা গলায় প্রশ্ন করলেন,
—-” হোয়াট।”
—-” জ্বী৷ কেন আপনি জানেন না?”
আমার বুকভরা আত্নবিশ্বাস দেখে উনি চটে গেলেন। একে তো আজগুবি কথা তার উপর উল্টে পাল্টে উনাকে কনফিউজড করা! উনি ক্ষে-পে গিয়ে আমার হাত টেনে ধরলেন। এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো কারেন্ট বয়ে গেলো শরীরে। আমি সম্পূর্ণ বরফ আর উনি সম্পূর্ন আগুন। ঠান্ডা শরীরে আরও যেন ঠান্ডা জমে গেলো। উনি আর কোনো কথা না বলেই আমার হাত টেনে ভেতরে নিয়ে গেলেন। চিলেকোঠার এই ঘরটাতে আমার প্রথম পদচারণ। এর আগে একবারও আসা হয়নি এ-ঘরে। এখানে মুলত এই মানুষটারই আসা যাওয়া বেশি চলে তাই বাকিরা তেমন আসেন না। চিলেকোঠায় দুটো ছোট ছোট রুম। দুটোতেই উনার প্রয়োজনীয় অপ্রোয়জনীয় জিনিসপত্রে ভরপুর হয়ে আছে। উনি আমাকে একটা রুমের সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,
—-” এই ভিজে কাপড়ে তো নীচে যাওয়া সম্ভব নয়। তুমি ভেতর থেকে যেকোনো একটা ড্রেস নিয়ে ঝটপট চেঞ্জ করে নাও। ঠান্ডা লেগে যাবে এন্ড দ্যেন জ্বর আসতে সময় লাগবে না।”
আমি বোবা চোখে তাকিয়ে আছি। কত শখ করে এসেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু লোকটা তাতেও বাগড়া দিয়ে দিলেন। উনার সমস্যাই সমস্যা। আমি আর কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলাম। আমার সামনে বড় বড় দুটো আলমারি। একটা আলমারি খুলতেই দেখি এখানে সব শাড়ির দুনিয়া। ভরপুর শাড়ি। অন্যটাতেও একই অবস্থা! শাড়ি ব্যাতিত একটা সুতোও নেই! বাহ্!
দুঃখে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। হামলে পড়লাম আলমারির উপর এই আশায় যদি শাড়ি ছাড়া অন্য কোনো ড্রেস কপালে জুটে। কিন্তু জুটলো না। হাতড়ে হাতড়ে যা পেলাম সবই শাড়ি। সব রেখে একখানা কালো শাড়ির উপর চোখ পড়ল। শাড়ি পড়তে পারিনা জেনেও এই শাড়িটা পড়ার জন্য মনটাও বিচলিত হলো। শাড়িটা পড়ার জন্য রুমটাই ব্যবহার করলাম। রুমের দরজা লক করে শাড়ি পড়ায় মনোনিবেশ করলাম। বউমনির টেকনিক গুলো মনে করে করে শাড়ি পড়ায় উত্তির্নও হলাম একসময়। কিন্তু এই শাড়ি এভাবেই ঠিক কতক্ষন টিকবে সঠিক আন্দাজ করা গেলো না। চারপাশে পানি পিপাসুদের মতো আয়না খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু পো-ড়া কপাল, ঘরের এক কোনেও একটা আয়না নেই। তাই নিজেকে ঠিকঠাক না দেখেই বাইরে বের হতে হলো।
দুটো রুম ছাড়িয়ে সামনের রুমটাতে পা রাখতেই রাহিয়ান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। মনের মধ্যে খুশির ঝিলিক মারলো। উনাকেই আয়না হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মনে সাহস জুগিয়ে উনাকে ডাকতে পারলাম না। তাই আস্তে করে গলা খাঁকারি দিলাম। যেন উনি বুঝতে পারেন আমি এসেছি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আস্তে করে গলা খাঁকারি দিতেই ফোনের থেকে ধ্যান সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন উনি। কি হলো বুঝলাম না কিন্তু উনি আমাকে দেখতেই দাঁড়িয়ে গেলেন। গভীর চোখে আমার পা থেকে মাথা অব্দি তাকাতেই আমি নড়েচড়ে উঠলাম। উনি এভাবে কেন দেখছেন? শাড়িটা কি ঠিকমতো পড়া হলো না?
আমার ভাবনার মাঝেই উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,
—-” মেয়েদের ভেজা চুল নিয়ে কোনো ছেলের সামনে আসা বারন! একথা জানা নেই তোমার?”
আমি করুন চোখে তাকালাম তার দিকে। আমার চুল থেকে এখনো টপটপ করে পানি পড়ছে। চুল মোছার জন্য তো তেমন বিশেষ কিছুই পায়নি! তবে কি করে মুছতাম?
—-” কোনো তোয়ালে তো পাইনি! তাই….”
—-” তোমায় দেখে আমার বুকের ভেতরটায় একটা অসহ্যনীয় ব্যা-থা হচ্ছে নীলাদ্রিতা। এর জন্য কি শা-স্তি দেওয়া যায় তোমায়?”
‘নীলাদ্রিতা’ নামটা শুনতেই ধাক্কা খেলাম বুঝি। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠতেই উনি আবারও বলে উঠলেন,
—-” তোমার ভেজা চুল গুলো মুছিয়ে দেওয়ার এই ছোট্ট অনুমতিটা কি পাওয়া যাবে প্লিজ?”
আমি যেন না বলতে চাচ্ছি। কিন্তু পারছিনা! আমি আমার অদ্ভুত অনুভূতিগুলোর কাছে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে চাচ্ছি কিন্তু তাও যে পারছিনা। উনি ধরে নিলেন মৌনতাই সম্মতির লক্ষন। উনার হাতের পাশেই সাদা তোয়ালেটা উনি হাতে তুলে নিলেন। আমার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে এলেন। উনার কাছে আসাতে আমার শরীর অবস হয়ে আসতে চাচ্ছে। আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সুযোগ পেলেই দৌড়ে পালাবো এখান থেকে। মনে মনে এমন আউলাঝাউলা বুদ্ধি করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি আলতো করে ছুঁয়ে দিলেন আমায়। আমি না চাইতেও চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। উনি তোয়ালে পেঁচালেন আমার চুলে। কোমল ভাবে আমার চুল মুছতে লাগলেন। আমি চোখ বুঁজেও ঠিক অনুভব করতে পারছি উনার গভীর চোখ জোড়া আমাকেই দেখছে।
আচমকাই ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলেন তিনি,
—-” সে রাতে একটা কবিতার জন্ম হয়েছিলো,
খোলা বারান্দায় হাসনাহেনার সুবাস এসেছিলো~~
চাঁদ-মেঘের লুকোচুরি আর ঝুম বরষার বৃষ্টিপাতে,
আমার মনের কাগজ-কলম, কাব্যে ভরেছিলো~~
সে রাতে মৃদু বাতাস ছিলো,
এক টুকরো অলস আকাশ, একাই কেঁদেছিলো~~
ঘোর লাগানো মাতাল হাওয়া, হৃদয় ছুঁয়েছিলো,
চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কষে,ভীষণ ভেবেছিলো!
সে রাতে মেঘের আঁধার ছিলো,
অল্প আলোর ক্যানভাসে, এক রঙিন ছবি ছিলো,
ইচ্ছে মতো রঙ লাগিয়ে, কল্পনাতে মন ডুবিয়ে,
মেঘলা আকাশ,জোৎস্ন্যা নিয়ে,
ঝুম বৃষ্টির সুর মিশিয়ে,
হৃদয় যেন কেমন করে,
তোমায় এঁকেছিলো🥀
উনার কবিতার লাইন গুলো এক ধাক্কায় অপরিচিতর কল দেওয়ার প্রথম দিন থেকে সবটাই যেন মনে করিয়ে দিলো। তার মানে উনিই সেই অপরিচিত! অসম্ভব এক ভালোলাগায় শরীর কাঁপতে লাগলো আমার। অদ্ভুত এক শিহরণে মনখানা মত্ত হতেই চোখ খুলে উনার চোখের দিকে তাকালাম। মোহাচ্ছন্নতায় ছেপে আছে উনার চোখ আর ঠোঁট। আমি বেশ বুঝতে পারছি উনার এই অনুভূতিতে একই ভাবে আসক্ত বোকা আমিও। আমি চোখ ঝাপটে উনাকে কিছু বলতে নিলেই উনি আমার দু’গালে হাত চেপে মুখটা আরেকটু উঁচিয়ে ধরে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালেন আমার ঠোঁটে। এ যেন এক
ভ/য়ং/ক/র অনুভূতি। আমার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে উঠলো অদ্ভুত যা/ত/না/য়। শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে শিহরনে লুটেপুটে যাচ্ছে। আমার চেতন ফিরতেই নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে লাগলাম। কিন্তু আমার চেষ্টাকে বৃথা করে দিলেন উনার হাতজোড়া। উনার শক্তির কাছে পেরে ওঠা আমার সাধ্যে নেই প্রমান দিয়েই আমার কোমর চেপে মিশিয়ে নিলেন নিজের সাথে।
#চলবে____________________
[ কমেন্ট তো বানতাহে! হ্যায় কি নেহি?😏]