প্রেয়সী পর্ব ২১

0
560

#প্রেয়সী ♥️🥀
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ২১

৪১.

—-” নিধি মা? কিরে.. এ বেলায় হঠাৎ ঘুমচ্ছিস? শরীর খারাপ মা? উঠ তো একটু? আমায় কফি দে! না কফি না! আজ বরং আমায় পাস্তা করে খাওয়া। বাপ বেটিতে বেশ আয়েস করে খাবো আজ। কিরে উঠলি?”

বাবার অগোছালো কথা গুলো ধীরেধীরে মিলিয়ে যেতেই ‘বাবা’ বলে চিৎকার করে উঠে পড়লাম। মাথার মধ্যে টনটন করে ব্যা/থা করে উঠলো। দু’হাতে শক্ত করে মাথাটা চেপে ধরতেই আবারও বাবার কন্ঠ পেলাম যেন। ঝটপট চোখ খুলে তাকাতেই সব কিছু ফাঁকা বলে অনুভব হলো। সেই সাথে নি/স্ত/ব্ধ পরিবেশ। রাত হয়ে গিয়েছে অনেক্ষন। প্রহর ক’টা কাটলো ঠিক বুঝতে পারছিনা। এ-ঘরে কি কেউ এসেছিলো? বিছানা ছেড়ে নামতেই কিছুতে খোঁচা খেয়ে কাতর কন্ঠে গোঙ্গিয়ে উঠলাম। রাফিদ ভাইয়ার এসাইনমেন্টের বড় ফাইলটা। তার সুউচ্চ মাথাতে হাতের চাপ পড়তেই সেও পাল্টা আ/ঘাত করলো আমার হাতের কব্জিতে। কপাল কুঁচকে সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত ডলতে ডলতেই হঠাৎ আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো।

‘এসাইনমেন্ট গুলো যে সব বাকি’ মনে হতেই মাথা ঘুরিয়ে উঠলো। আমি যে সব গুলো ইনকমপ্লিট রেখেই… আচ্ছা ক’টা বাজে? কাল ভেবেছিলাম ভার্সিটি যাবো! এই ম/র/ন দশার জন্য তো মনে হচ্ছে আগামী এক মাসেও ভার্সিটিতে পা রাখা সম্ভব হবেনা! দৌড়ে উঠে গেলাম ওয়াসরুমে। কোনো রকমের চোখে মুখে পানি ছিটিয়েই বের হয়ে আসলাম। মানবতার খাতিরে হলেও এগুলো আমায় কমপ্লিট করতে হবে! এতোদিন তাদের এসাইনমেন্ট গুলো আঁটকে রেখেও যদি কমপ্লিট না করে দেই তবে উনারা আমায় কথা শোনাতে বা আদারস্ পানিশমেন্ট দিতে দু-বারও ভাববেনা! রাহিয়ান ভাইয়া হয়তো তার কাজিন হওয়ার সুবাদে ছেড়েও দিতে পারে কিন্তু বাকিরা? মনে মনে নিজেকে বকা দিয়েই রাহিয়ান ভাইয়ার এসাইনমেন্ট টা নিয়ে বসলাম। দরকার হলে না হয় রিম্মি আপুর থেকে হেল্প চেয়ে নিবো। প্রশ্নপত্র টা কই জানি ছি….! অ্যা…. এগুলো কি?

পুরো এসাইনমেন্ট কমপ্লিট!! হাউ ইজ দিস পসিবল! মাম্মিইইইই….. ফাইলটা ফেলে দিয়ে সিঁটিয়ে গেলাম দেয়ালের সাথে। এ-কি ভূ/তু/ড়ে কান্ড! এগুলো তো সব ইনকমপ্লিট ছিলো পাপ্পাজি! তবে কমপ্লিট হলো কি করে? আআআআআ……. (গলা ফাটিয়ে দিলাম এক চিৎকার) আমার মাথা ঘুরছে। এখনি আমি জ্ঞান হারাবো। হেইয়ো… আমি জ্ঞান হারাবো ম/রে যাবো বাঁচাতে পারবে না কেউ!

আমার চিৎকারের উৎস খুঁজেই সবাই এক এক করে হাজির হলো আমার রুমে। বউমনি আর রিম্মি আপু আমাকে ভ;য়ের দরুন কাঁপা-কাঁপি করতে দেখে দৌড়ে এসে ধরলো। ‘কি হয়েছে, কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করতে করতে নিজেরাও হ/য়রান হচ্ছে আমাকেও হ/য়রান করছে। নীচে এসাইনমেন্টের ফাইলগুলো পড়ে থাকতে দেখে ফাহিম ভাইয়া এসে সব গুলো তুলে বেডের উপর রেখে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করল,

—-” পিচ্চি? কি রে কি হয়েছে? চেঁচালি কেন? ভ/য় পেয়েছিস? আর এগুলো কি? কার এসাইনমেন্ট?”

লিয়া জল ভর্তি গ্লাস এনে আমার সামনে ধরে ভী/ত কন্ঠে বলল,

—-” আপু পানিটা খেয়ে নিন। খেয়ে নিন।”

বউমনি লিয়ার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরতেই আমি চোখ বুঁজে ঢকঢক করে সব পানি গিলে খেলাম। আহ্ শান্তি। বড় করে বার কয়েক দম ফেলে সবার দিকে চোখ বুলালাম। সবার মুখই কমবেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু কথা হলো আমি কি জবাব দিবো?

রিম্মি আপু আমার হাত ধরে বেডের উপর বসিয়ে দিলো। বউমনি লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল ফ্যানের পাওয়ারটা আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে। লিয়া মাথা নেড়ে ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে আবারও এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। ফাহিম ভাইয়া এসাইনমেন্টের ফাইল গুলো গোছাতে গোছাতে বলল,

—-” এগুলো তো ভাইয়াদের এসাইনমেন্ট মনে হচ্ছে। পিচ্চি? এগুলো তোর রুমে… মানে তোর কাছে কি করে?”

আমি জবাব দিলাম না। এদের কারোর আগ্রহই আমার গায়ে লাগছে না। আমি তো ভাবছি অন্য কথা। এই ইনকমপ্লিট ফাইল গুলো কমপ্লিট কি করে হলো আর এই টুকু সময়ের ব্যবধানেই বা কি করে সম্ভব?

—-” বউমনি? কি হয়েছে! কে চিৎকার করলো? কার কি হয়েছে?”

হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলেন রাহিয়ান। আমি চোখ তুলে তাকাতে তাকাতে উনি আমার সামনে এসে হাজির হলেন। বউমনি সবার মুখ চেয়ে উনার দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,

—-” নিধি!… ও বোধহয় কিছু দেখে ভ/য় পেয়েছে! দেখছো না এখনো কেমন ঘাবড়ে আছে মেয়েটা?”

—-” নিধি? আর ইউ ওকে?”

আমি ঢোক গিললাম। ওকে আর কি? কিছুই ওকে নয়!

—-” ভ/য় পেয়েছো? কি দেখেছো?”

আমি ফুস করে নিঃশ্বাস ফেললাম। ডানে বামে মাথা নেড়ে বললাম,

—-” কিছু না। আমি ঠিকাছি ভাইয়া।”

আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো ফাহিম ভাইয়া। আমাকে খোঁচা মা/রা/র উদ্দেশ্য বলল,

—-” হ্যাঁ রে পিচ্চি? তোর কি আমাদের কাউকে নজরেই পড়ছে না? না মানে এতক্ষণ ধরে যে আমরা বারবার জিজ্ঞেস করেই চলেছি তোর কি হয়েছে, কি হয়েছে? তুই কোনো জবাবই দিলিনা! অথচ ভাইয়া এসে জিজ্ঞেস করতেই তুই সুন্দর করে বলে দিলি? মানে, হলো কিছু এটা? আমাদের কোনো পাত্তাই দিলিনা তুই!”

বউমনি হেসে ফেললো ফাহিম ভাইয়ার কথায়। রিম্মি আপু হাসতে নিয়েও হাসলো না রাহিয়ান ভাইয়ার উপস্থিতির ভ/য়ে। আমি লজ্জায় পড়লাম। ভারী অদ্ভুত কান্ড করে বসলাম। সত্যিই তো এতোক্ষণ ধরে এতগুলো মানুষের প্রশ্নের কোনো জবাবই দিলাম না!

রাহিয়ান ভাইয়া গম্ভীর মুখে বললেন,

—-” চুপ কর তুই। নিধি?”

রাহিয়ান ভাইয়ার গম্ভীর স্বরে ঢোক গিললেন ফাহিম ভাইয়া। রাহিয়ান ভাইয়া আবারও বলে উঠলেন,

—-” কি হয়েছে ঠিকঠাক বলো? এনি প্রবলেম?”

আমি করুন চাহনি দিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম। অর্থাৎ না! নো প্রবলেম। আর হলেও তাকে জানানো পসিবল না। আর কথা বাড়ালেন না রাহিয়ান ভাইয়া। চুপচাপ বের হয়ে গেলেন রুম থেকে। উনার ভয়ে টটস্থ সবাই হঠাৎই হু হা করে হেসে উঠলো। ফাহিম ভাইয়া আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,

—-” তুই হঠাৎ গঞ্জিকা সেবন করছিস কবে থেকে রে?”

আমি তো নির্বাক! মানে? গঞ্জিকা? আর আমি? কি করে কি? আমি মাথায় হাত ডলতে ডলতেই বোকা গলায় প্রশ্ন করলাম,

—-” মানে কি ভাইয়া? এসব তুমি কি বলছো?”

রিম্মি আপু মুখ বাঁকিয়ে বলল,

—-” ঐ কু/ত্তা কি বলছিস এসব? ও কেন গাঁজা খেতে যাবে?তুই খাস, আর সেটা ওকে বলছিস?”

ফাহিম ভাইয়া রিম্মি আপুকে পাল্টা বকে বলে উঠলো,

—-” গাঞ্জা না খেলে এমন কবুতরের মতো নাক ডেকে ঘুমায় কি করে?”

ফিক করে হেসে উঠলো লিয়া। ফাহিম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” কবুতর কি নাক ডেকে ঘুমায় ফাহিক ভাইয়া?”

ফাহিম ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো। তার কথায় কোনো যুক্ত নেই বুঝতেই জোরপূর্বক হাসলো। কথা ঘুরানোর তালে বলল,

—-” ঐ তো একই হলো! আসল কথা হলো গাঞ্জা খেলে মানুষ দিন দুনিয়া ভুলে হারিয়ে যায়। বিশেষ করে একবার ঘুমোতে পারলে তাকে তুলে নিয়ে পুকুরে ফেললেও তার ঘুম ভা/ঙে না। ওর বেলায়ও এমন হয়েছে!”

আমি ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম,

—-” আমি তো টেনশনে ঘুমিয়ে গেছি ভাইয়া।”

আমার কথায় চারজনেই বেশ মনোযোগী হলো আমার প্রতি। ভাবুক গলায় লিয়া বাদে বাকি তিনজনই বলে উঠলো,

—-” কিসের টেনশন?”

আমি এসাইনমেন্ট গুলোর দিকে ইশারা করে বললাম,

—-” এগুলো রাহিয়ান ভাইয়া আমাকে দিয়েছিলেন। কমপ্লিট করতে।”

ফাহিম ভাইয়া বুকে হাত চেপে গোল গোল চোখ করে বলল,

—-” ওদের এসাইনমেন্ট নোট হঠাৎ তোকে কেন দিলো? হুয়াই?”

—-” পা/নি/শ/মে/ন্ট!”

‘পা/নি/শ/মে/ন্ট’ আবারও একই সাথে বলে উঠলো তিনজনে। আমি তিনজনেরই মুখ চেয়ে বললাম,

—-” হু পা/নি/শ/মে/ন্ট!”

ফাহিম ভাইয়া ধপ করে উঠে বসল আমার পাশে। বেশ আগ্রহ করেই গোলাকার চোখ নিয়ে বলল,

—-” ইন্টারেস্টিং ইয়ার। কিন্তু প্রশ্ন হলো ভাইয়া এজ আ সিনিয়র তোকেই কেন এতবড় পা/নি/শ/মে/ন্ট দিতে গেল? কাহিনি কি?”

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে আবারও বললাম,

—-” সেটা আমারও প্রশ্ন। ভার্সিটি উঠেই কেন এই সিনিয়রদের র‍্যাগিংএর খাতায় সেরা ইডিয়ট হিসেবে আমার নামটাই উঠলো আর আমার সাথেই বা এতোকিছু কেন হলো?”

রিম্মি আপু আমার পাশ ঘেঁসে বসলো। ফাহিম ভাইয়ার ন্যায় সেও একই ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,

—-” এই নিধু বলনা? বলনা কি হয়েছিলো?”

আমি ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। সবার মুখ চেয়ে রাহিয়ান ভাইয়া আর তার ফ্রেন্ডদের সাথে আমার হাড্ডাহাড্ডির কাহিনী শোনাতে লাগলাম। ফাহিম ভাইয়া ভিসি আর চিতা বাঘ স্যারের কাহিনী শুনতেই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল। রিম্মি আপুও হাসতে হাসতে আমার উপরই ঢলে পড়লো। বউমনি আর লিয়ারও একই দশা। তাদের এতো হাসি দেখে আমিও হেসে উঠলাম। সত্যিই সে এক ইতিহাস হয়েছিলো মাত্র কয়টা দিনে।

—-” আচ্ছা এখন বল হঠাৎ চেঁচালি কেন এখন??
ভূ/ত-প্রে/ত দেখলি নাকি?”

ফাহিম ভাইয়া পেট চেপে ধরে বলে উঠলো কথাটা। আমি মাথা নেড়ে বললাম,

—-” না গো ভাইয়া। এই এসাইনমেন্ট গুলো ইনকমপ্লিট রেখে আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু উঠে দেখি এগুলো সব কমপ্লিট হয়ে আছে! ভাবতেই তো আমার গায়ে কাটা দেয়। এগুলো কমপ্লিট কে করলো? তাও মাত্র বিকেল থেকে রাতের মধ্যে?”

ফাহিম ভাইয়া চিন্তিত ভঙ্গিমা টেনে বলল,

—-” ভাইয়া করেনি তো?”

রিম্মি আপু অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

—-” ভাইয়া কি করে করবে? ও তো সন্ধ্যার পরপরই বেরিয়ে গেলো ফ্রেন্ড’দের আড্ডায়। আর এলো কখন? রাত এগারোটায়। তবে ওর দ্বারা কি করে সম্ভব?”

বউমনি বলল,

—-” হ্যাঁ গো নিধি। রিম্মি কিন্তু ঠিকই বলেছে।”

ফাহিম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ভ/য় দেখানোর চেষ্টা করে বলল,

—-” তবে কি জ্বী/ন বাবাজিই খেল দেখালো নিধু?”

আমি আঁতকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলাম। রিম্মি আপু আমায় ধরে ফাহিম ভাইয়ার বিরূদ্ধে বলল,

—-” সর বেয়াদব ফাজলামো করিস না। ও কিন্তু এমনেই ভ/য় পেয়ে আছে।”

ফাহিম ভাইয়া চোখ দুটো সরু করে নিয়ে শীতল কন্ঠে বলল,

—-” আমি তো তোকে ভ/য়/ই দেখাতে চাই বাচ্চে। ভ/য় পা… তুই ভ/য় পা!”

আমি ভ/য়ে গুটিয়ে গিয়ে চেপে ধরলাম রিম্মি আপুকে। বউমনি আমাদের কান্ড দেখে বকা দিলো ফাহিম ভাইয়াকে। ফাহিম ভাইয়া ফিক করে হেসে উঠতেই লিয়া বলল,

—-” বউমনি, রাত তো দেড়টা বাজে। নিধি আপু তো এখনো খায়নি। আমি কি আপুর খাবার দিবো টেবিলে?”

খাবারের কথা শুনতেই যেন ক্ষিধেয় মোচড় দিলো পেট। আমি বউমনির দিকে অসহায় মুখে তাকালাম। বউমনি লিয়াকে যেতে বলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” সেই বিকেলে রুমে এসে ঘুমিয়েছো। আর একাবারও উঠলেনা। আর কিছু খেলেও না। রাত এখন দেড়টা। অনেক হয়েছে গল্প আর এসাইনমেন্ট। এসো চলো? খেতে চলো।”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই হোহো করে হেসে উঠলো ফাহিম ভাইয়া। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আমি কি আর সাধে বলেছি তুই গ?ঞ্জি/কা সেবন শুরু করেছিস? মানুষ গা/ঞ্জা খেলেই এমন ম/রা/র মতো ঘুমায় বনু!”

আমি ঠোঁট উল্টে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম,

—-” আমার নামে মিথ্যে অপবাদ জাতি মেনে নিবেনা ভাইয়া।”

ভাইয়া হেসে ফেললো। সাথে বউমনি আর রিম্মি আপুও হাসতে লাগলো।

৪২.

টানা ৬দিন বাদে আজ আবারও ভার্সিটির প্রাঙ্গণে নিধির পায়ের ধুলো পড়লো। উফফ! এতোদিন পার হওয়ার পর ফিলিং লাইক “ভার্সিটি টা আমার জন্যই হয়তো অকেজো পড়েছিলো।” আমিও আসলাম আর ভার্সিটিও তার সতেজতা ফিরে পেলো।

ভার্সিটির সামনে বড় বটগাছটাকে কেন্দ্র করেই তার ছায়াতলে বসে আছে অসংখ্য স্টুডেন্ট। তাদের মাঝেই সিনিয়রদের গ্রুপ টা দেখা যাচ্ছে। রাতে হুলস্থুল কান্ডটা হলেও এক দিক থেকে বলা যায় আখেরে লাভ আমারই হয়েছে। এসাইনমেন্ট গুলো কমপ্লিট তো হলো। কথাটা ভেবেই ফাহিম ভাইয়ার মতে লাইক গা/ঞ্জাখোরদের মতো করে একখানা হাসি দিতে ইচ্ছে করলো। হাঁটতে হাঁটতে তাদের দিকেই এগোচ্ছি। মনে মনে একগাদা ঠাঁসা সুখ থাকলেও সমস্যা হলো ওয়েদার। আজ ওয়েদারটা খুব বেশি ঝলসানো। রোদের প্রখরতায় চারপাশের সবুজ ঘাস গুলোও যেন হলুদ হয়ে উঠেছে। বেশিদূর তাকাতে নিলেই চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো দশা হয়ে যায়। তাই কপালে হাত ঠেকিয়েই এমন অমানবিক রোদের থেকে নিজেকে সেফ করছি।

—-” হেই নিধি! হোয়াটসআপ?”

একটু দূর থেকেই আরফান ভাইয়ের উচ্ছ্বাসিত কন্ঠটা পাওয়া গেলো। চোখ তুলে তাকিয়ে জোরপূর্বক একখানা হাসি টেনে মাথা নাড়তে নাড়তে অবশেষে হাজির হলাম তাদের সামনে। আমাকে দেখতেই চোখের মাঝে সূর্য এঁটে তাকালেন অরিন আপু। বুঝি ছোটখাটো একখানা মুখ ভেংচিও কেটেছেন। আমার দশআনা দামের পাত্তা তাকে আর ছোঁড়া হলো না। আমি নিজের মতো করে ব্যাগ থেকে এসাইনমেন্ট গুলো বের করে তাদের দিকে এগিয়ে দিলাম। আরফান ভাই হাসি মুখে সেগুলো হাতে তুলে নিয়ে যার যার হাতে দিয়ে দিলেন। রাহিয়ান ভাইয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে ফোন চেপে চলেছেন! মুডের উনিশ বিশ চলছে নাকি? বাসা থেকে তো ভালো মানুষই বের হয়েছিলেন!

—-” ভাই এটা কি আমার এসাইনমেন্ট? নিধি তুমি আমারটাও নিজ হাতে নিয়ে এলে?”

রূপ ভাইয়ার অসহায় কন্ঠে খানিক ভাবুক হয়ে তাকালাম আমি। যেহেতু এসাইনমেন্ট গুলো করার দায়িত্ব আমারই ছিলো তবে তো তা সহীহ্ সালামিতে নিয়ে আসার দায়িত্বও আমার। পাশ থেকে খোঁচা মে/রে উঠলেন দিপু ভাই।

—-” কেন রে তোর এসাইনমেন্ট কি অন্যকারোর নিয়ে আসার কথা ছিলো নাকি?”

জিয়ান ভাই নাকি সুরে বললেন,

—-” আরে বুঝোছ না বেটা? মনে সুখ চলছে।”

হেসে ফেললেন অনন্যা আপু আর আরফান ভাই। আমি তাদের মশকরার “ম” টাও ঠিক ধরতে পারছিনা। আমার পাশে দাঁড়িয়ে রাই এর দিকে প্রশ্নসূচক মুখ করে তাকাতেই ঠোঁট উল্টালো রাই। অর্থাৎ তাদের ঠাট্টা মশকরা ওর মগজেও ঢুকছেনা ঠিক। আমি জোরপূর্বক হেসে রূপ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,

—-” কেন ভাইয়া? এসাইনমেন্টে কি কোনো প্রবলেম…”

আমাকে থামিয়ে দিয়েই মাঝপথে বলে উঠলেন আরফান ভাই,

—-” আরে না না কোনো প্রবলেম নেই নিধি। ও বেটা এমনেই ফাজলামো করছে।”

আমি সবার মুখ চেয়ে তাকালাম। আসলেই কি এমনি ফাজলামো করলো নাকি ডালমে কুছ কালা ধলা হ্যায়?

—-” নিধি? তোমাদের ক্লাস আই থিংক অনেক্ষন স্টার্ট হয়ে গিয়েছে। জলদি যাও এন্ড ক্লাস জয়েন করো।”

দৃষ্টি সম্পূর্ণ ফোনে রেখেই গম্ভীর স্বরে কথাটা বলে উঠলেন রাহিয়ান ভাইয়া। কেন জানিনা তার গম্ভীর গলা আমার ভেতরটায় ঝড় তুলে দিলো। উনার এই গম্ভীর চেহারার পেছনে এক্স্যাক্ট কারনটা কি সেটা যতক্ষণ জানতে না পারছি ততক্ষণে তো শান্তি পাচ্ছি না!

রাই আমার হাত টেনে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল,

—-” হাওয়া তো বেশ গরম মনে হচ্ছে নিধু। চল চল ক্লাসে যাই!”

—-” কিন্তু….”

আমার কথার মাঝেই আহত গলায় বলে উঠলেন রূপ ভাইয়া,

—-” রাই? তুমি চলে যাচ্ছো?”

তার প্রশ্নের ধরনে হাসির বেগ যে আমারও চাপল না তা ঠিক নয়। আমি মুখ টিপে হেসে উঠতেই হু হা করে হেসে উঠলেন সবাই। শুধু গুমোট বাঁধা মুখ করে বসে রইলেন মহাশয়! হয়েছে টা কি কে জানে?

দিপু ভাই ধরাম করে এক কিল বসিয়ে দিলো রূপ ভাইয়ার পিঠে। স্বজোরে কিল খেয়ে পিঠ চ্যাপ্টা করে মুখ কুঁচকে ফেললেন রূপ ভাইয়া। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে
মা/রা/ত্ম/ক টাইপ এক গালি আওড়াচ্ছেন দিপু ভাইয়ের জন্য। আমি আর হাসি চেপে রাখতে না পেরেই ভূমি কাঁপিয়ে হেসে ফেললাম। আমার সেই হাসিতে যোগ হলো বাকি সবাই। হাসতে হাসতে হঠাৎ রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে চোখ পড়তেই খাঁড়ার উপর হাসি থেমে গেলো আমার।

ভ/য়ং/ক/র এক হেঁচকি তুলে রাই-এর হাত ধরে উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম। সত্যিইতো হাওয়া বেশ গরম মনে হচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে কিছু পথ এগোতেই রূপ ভাইয়ার ভাঙা গলার গান ভেসে আসল কিঞ্চিৎ।

—-” যেও না সাথিইই… ও সাথি রেএএএ….”

বুঝলাম, রূপ ভাইয়া আমার পাশের এই সুন্দরীর প্রেমে পড়েছে।

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here