প্রেয়সী পর্ব ২০

0
512

#প্রেয়সী ♥️🥀
#লেখনীতেঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ২০

৩৯.

” নিধি আপু, ছোট সাহেব আপনাকে ছাদে ডেকে পাঠিয়েছে।”

লিয়ার মুখে এটুকু শুনতেই এক দৌড়ে ছাদে এসে হাজির হলাম! কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়ার দেখা নেই! আমাকে আসতে বলে এখনও নিজেই এসে পৌঁছাতে পারলেননা। আমি ছাদের এ-মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত চোখ বুলাচ্ছি। সকালের সতেজ হাওয়া এখনও বয়ে চলেছে মৃদুভাবে। সূর্য মামার প্রখর তাপ একটু কম বলেই অনুভব হচ্ছে। বসন্তের সময় এ যেন এক শান্তি। সূর্যের তাপ প্রখর থাকলেও অনুভবে তা সামান্যই বিরাজমান। সবটাই মিলেমিশে। হাল্কা ঠান্ডা সাথে হাল্কা গরম! আমার মনে হয় ছয়টা ঋতুর মধ্যে এই ঋতুটাই বেশি উপভোগ্য।

—-” উহুম উহুম!”

পেছন থেকে রাহিয়ান ভাইয়ার গলার স্বর পেতেই ঘুরে দাঁড়ালাম। মৃদু বাতাসে আমার খোলা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগলে দু’হাতে চেপে কানের পাশে গুঁজে দিলাম। চোখে মুখে একটা সিরিয়াসনেসের ভাব আনলাম! শক্ত গলায় প্রশ্ন করলাম,

—-” আপনি সবটাই জানেন! অথচ আমাকে কিছুই বলেননি? সেদিন বাজারের মধ্যে বাবার সাথে ঠিক কি হয়েছিলো?”

রাহিয়ান ভাইয়া ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। শুঁকনো মুখে বলে উঠলেন,

—-” বলছি। তবে তার আগে তুমি আমাকে এটা বলো, আঙ্কেল কি অর্নব আই মিন হৃদ কে আগে থেকেই চিনতো? তুমি কি আঙ্কেলকে হৃদের কথা বলেছিলে?”

আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,

—-” বাবা আমার বিষয় সবকিছুই জানে। ছোট থেকে বাবাই ছিলো আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড যাকে আমি কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই সবটা শেয়ার করতে পারতাম! ঠিক সেভাবেই হৃদের কথাও বাবাকে বলেছিলাম! বাবা সেদিন ভালো মন্দ কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিলো, যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে যেন ভালো করে ভেবে নেই!”

—-” হৃদকে আঙ্কেল কখনো দেখেনি?”

—-” প্রথমে তো কখনোই দেখতে চায়নি তবে বাবা অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগেই হঠাৎ করে একদিন এসে হৃদকে দেখতে চাইলো। আমি ঐ তখনই বাবাকে প্রথম হৃদের ছবি দেখাই!”

—-” আঙ্কেল হঠাৎ যখন হৃদের ছবি দেখতে চাইলেন তুমি কারন জানতে চাও নি?”

—-” উঁহু! আমি ভেবেছিলাম হয়তো এমনিই…”

—-” সেদিন বাজারের মধ্যে আঙ্কেলের সাথে কিছুই হয়নি! হয়েছিলো বাজারের শেষ দিকের একটা হোটেলের ভেতর।”

আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। বাজারের শেষ দিকে হোটেলের ভেতর! মানে?

—-” কিন্তু বাবা সেদিকে হঠাৎ ঐ হোটেলে কখন গেলো আর কেনই বা গিয়েছিলো? আমাকে তো সেরকম কিছুই বলে যায়নি! উল্টে আমাকে তো রোডের মোড়ে সিএনজি ঠিক করতে পাঠালো।”

—-” হু গিয়েছিলো কারন আঙ্কেল সেই হোটেলের পাশের ছোট একটা মুদি দোকান থেকে সবসময় ছোট ছোট দরকারি কিছু জিনিস কিনে নিয়ে যেতো। যখনই কিছুর দরকার হতো তখনই ওখানে যেতো। আর আমার মনে হয় যেদিন আঙ্কেল তোমার থেকে হৃদের ছবি দেখতে চেয়েছিলো সেদিন ঐ হোটেলে হৃদকে কোনো মেয়ে নিয়ে যেতে দেখেছিলো!”

—-” কিন্তু বাবা তার আগে তো কখনো হৃদের ছবি দেখেনি তবে হঠাৎ করে হৃদকে দেখতেই কি করে বুঝলো ওটাই হৃদ?”

—-” ‘নির্মলা করদি’ হোটেলটার নাম! হোটেলের সামনেই ‘Afoot’ নামের একটা রেস্টুরেন্ট আছে। বেশ নামকরা। আঙ্কেল সেদিনের ঠিক দু’দিন আগে সেই রেস্টুরেন্টে তার এক অফিস কলিগের সাথে গিয়েছিলেন লাঞ্চ করতে। তখন খেতে বসে তার কানে বারবার তোমার নাম নিয়ে কিছু অপ্রত্যাশিত কথা আসে। আঙ্কেল কান উঁচিয়ে কথা গুলো শুনতেই….”

—-” কি ছিলো কথা গুলো?”

আমার প্রশ্নে থেমে গেলেন রাহিয়ান ভাই। আমার দিকে তাকিয়ে ভাবুক কন্ঠে বললেন,

—-” কিছু বাজে কথা! আই থিংক সেটা তোমার না জানলেও চলবে!”

—-” আমি জানতে চাই প্লিজ…”

—-” হৃদ তোমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো ওর প্লানে! আজ যেখানে ও…. ও অন্য মেয়েদের নিয়ে যায় সেখানে তোমাকে…. আই হোপ তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি?”

কি বুঝবো ঠিক বুঝতে পারছিনা! আমার অগোচরে এতো কিছু ঘটে গেলো? অথচ আমি এর এক চুলও টের পাইনি!

—-” ত..তারপর?”

কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম। উনি আমার দিকে এক ধাপ এগোতে নিয়েও এগোলেন না! নিজের জায়গায় দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলেন,

—-” আর ইউ ওকে?”

আমি ঢোক গিললাম। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললাম,

—-” হু, তা..তারপর কি হলো?”

—-” তারপর… তারপর আঙ্কেল হৃদকে ফলো করে! ফলো করতে গিয়ে দেখে সে হোটেলের মেয়েদের সাথে.. যাই হোক! সেদিনও আঙ্কেল হৃদকে একটা মেয়েকে নিয়ে সেখানে যেতে দেখে। তাই আঙ্কেল ওর পিছু নেয়। আর আঙ্কেল যখন ওর পিছু নেয় তখন আমিও ঐ হোটেলের সামনের রোড থেকে কাঁচা বাজারেই ঢুকছিলাম! মায়ের জন্য কাঁচা আম নিতে! মা বাড়ির কোনো কাজের লোককে বাজারে পাঠাবে না কারন তারা নাকি তার জন্য ভালো আম নিতেই পারবেনা! তাই জেদ করে সবসময় আমাকেই পাঠায়। আর আমিও মায়ের বাধ্য ছেলে হয়ে চলে আসি! সেদিনও এলাম৷ গাড়ি রেখে এলাম আবিরের বাসার সামনে কারন এদিকের সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি আসবেনা! আমি বাজারের ভেতর ঢুকতেই হঠাৎ আঙ্কেলকে চোখে পড়লো। হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটছেন কোথাও একটা।। আঙ্কেলকে দেখতেই যেন এক ধাক্কায় আমার ছোটবেলাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মায়ের থেকে আঙ্কেলের ঐ সময়কার ছবি দেখেছিলাম অনেকবার। চেহারায় অনেকটাই মিল খাচ্ছিলো! আর তাকে দেখতেই আমার শুধু আঙ্কেলের মুখটাই ভাসতে লাগলো। মনে হলো উনার সাথে দু’মিনিট কথা বলতে পারলে হয়তো ব্যাপার টা ক্লিয়ার করতে পারবো। তাই আমিও উনার পিছু নেই। একপর্যায়ে আমরা দুজনেই ঐ হোটেলের মধ্যে প্রবেশ করি। হৃদ তখন রুম ঠিক করছিলো। আঙ্কেল ওকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ায়। আচমকা কেউ সামনে এসে দাঁড়াতে হৃদ ভড়কে যায়। রেগে গিয়ে আঙ্কেলের কমন সেন্স নিয়ে পাঁচ কথা শুনিয়েও দেয়। আঙ্কেল কিছু বলেনি কেবল মনে মনে রা/গ পুষছিল! কিন্তু হঠাৎ আঙ্কেল কিছু না বলেই হৃদের কলার চেপে ধরে মা/র/তে শুরু করে। আমি এতক্ষণ সবটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখলেও তখন দৌড়ে গেলাম তাকে ছাড়াতে। তবে আমি দৌড়ে যেতে যেতে হৃদ আঙ্কেলকে ঘুরিয়ে নীচে ফেলে দেয়। তারপর শুরু হয় ধস্তাধস্তি। হৃদ আঙ্কেলের পাঁজরের হাড়ে কয়েকটা লাথিও মা//রে। আঙ্কেল ব্যাথা সইতে না পেরে গোঙ্গাতে থাকে কেবল। আমি আঙ্কেলকে গিয়ে ধরতেই আশেপাশের লোকজন এসে হৃদকে ধরে ফেলে। আঙ্কেল নীচে পড়েই তোমার ব্যাপারে হৃদকে সাবধান করতে থাকে! কিন্তু হৃদ আর ওখানে না থেকে চলে যায়। আমি আঙ্কেলকে হসপিটালে নিতে চাইলে আঙ্কেল তোমার কথা বলে কেঁদে ফেলে! আমি আঙ্কেলের কাছে একজন অপরিচিত হলেও আঙ্কেল আমায় সব কিছু ডিটেইলস বলতে থাকে। তুমি রোডের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছো বলে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে বলে। আমিও উনার কথা মেনে নিয়ে তোমার কাছেই আঙ্কেলকে নিয়ে আসছিলাম। আমি তখনও জানতাম না তুমি আঙ্কেলের মেয়ে। হঠাৎ আঙ্কেলের শরীর অবস হতে লাগে। বুঝলাম আঙ্কেলের স্ট্রোক এসেছে। তোমার কাছে আসতে আসতে আঙ্কেল প্রায় সেন্স হারাচ্ছিলেন। তবুও সে তোমাকে দেখতেই ডেকে উঠেছিলো। আর তুমি তো আঙ্কেলকে ঐ অবস্থায় দেখে পুরো ভে/ঙে/ পরেছিলে! আর আমি যদি তখন আঙ্কেলের কন্ডিশন তোমাকে বলতাম তাহলে তুমি আরও বেশি ভে/ঙে পরতে। তাই তোমায় মিথ্যে বুঝ দিয়ে বলেছিলাম আঙ্কেলের বিপি লো হয়ে গিয়েছে। হৃদকে আমি সেদিনই ওর যথাযোগ্য শা/স্তি দিতে পারতাম কিন্তু দেইনি। কারন আমি চেয়েছিলাম তুমি আগে সবটা জানো আর তারপর ওর ব্যাবস্থা করা যাবে। তোমাকে প্ল্যান করেই সবটা জানানো হয়েছে। আর কাল তুমি সবটা জেনেও গিয়েছো কিন্তু আসল সময় এসে তুমি সেন্স হারালে। তোমার জন্যই কাল হৃদ প্রানে বেঁচে গেলো। নয়তো ওর মৃ/ত্যু….”

—-” হৃদ!!(কান্নাজড়িত কন্ঠে) ও আমার বাবার সাথে…”

আমার পা জোড়া ভে/ঙে আসতেই ফ্লোরের উপর ধপ করে বসে পড়লাম! ভেতরটা ডুকরে কেঁদে উঠলো।পারলাম না আর নিজেকে সামলাতে! দু’হাতে মুখ চেপে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগলাম!

—-” বাবা… বাবা আ’ইম সরি বাবা! আ’ইম সরি! আজ আমার জন্যই তোমার এই অবস্থা হয়েছে। তোমার এই অবস্থার জন্য শুধু আমি দায়ী! যেখানে তোমাকে সবসময় আগলে রেখে এসেছি সেখানে আজ তোমার সবচেয়ে বড় ক্ষ/তি টা আমার জন্যই হয়ে গেলো বাবা… আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দাও… বাবা!”(কাঁদতে কাঁদতে)

এই পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বড় অভাগী কেউ হয়ে থাকে সেটা শুধুই আমি। লোকে হয়তো ঠিকই বলে! আমি হলাম অপয়া,অলক্ষী! জন্মের সময় মাকে খেয়েই কেবল শান্ত হইনি আমি! আবার বাবাকেও খেতে বসেছি! ছিহ্.. ঘৃ/না হচ্ছে নিজের প্রতি। চরম ঘৃ/না হচ্ছে।

কাঁধের উপর কারোর ছোঁয়া পেতেই ফোপাঁতে ফোঁপাতে মুখ তুললাম। রাহিয়ান ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কিছু একটা ভাবছেন তিনি! কিন্তু সেটা জানার আমার বিন্দু মাত্র আক্ষেপ হলো না। আমি কেবল মুক্তর ন্যায় চোখের জল ঝরিয়েই চলেছি।

উনি আচমকাই আমার দু’বাহু চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমি উঠতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে উনার শার্টের কলার আঁকড়ে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। উনার দৃষ্টি কঠিন। আমি ভীত হয়ে উনার শার্ট ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে যেতে নিলেই আরও শক্ত করে আমাকে চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এক তো কাঁদছি মনের ক/ষ্টে তার উপর উনার এই বিহেভিয়ার সত্যি বড় আশ্চর্যজনক।

আমি কান্না ভুলে স্রেফ ফোপাঁতে লাগলাম। বোধকরি উনি এখন মুখ খুলবেন। হ্যাঁ আমার ভাবনাকে সত্যি করে দিয়েই মুখ খুললেন তিনি। কঠিন স্বরে প্রথমেই এক রাম ধমক মা/র/লে/ন আমায়। আমি সটান হয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললাম। উনি আমার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলেন,

—-” অনেক হয়েছে তোমার কান্নাকাটি। তুমি কি পেয়েছো বলোতো? সময় নেই ক্ষন নেই চান্স পেলেই হলো শুধু কেঁদেই যাচ্ছো আর কেঁদেই যাচ্ছো! অনেক সহ্য করেছি তোমার কান্না, আর না। তোমায় যেন আর কখনো কাঁদতে না দেখি নিধি! একদম কাঁদবে না তুমি! তুমি জানো? তুমি যখন কাঁদো তখন আমার….”

একটুকু বলেই ঢোক গিললেন তিনি। আমার টনক নড়লো। আমি যখন কাঁদি তখন উনার… কি? আমার দুঃখ ভুলেই ভালো মনে প্রশ্ন টা করতে নিচ্ছিলাম তাকে কিন্তু তার আর সুযোগ হলো না। পূনরায় সে তার কঠিন রূপটা ব্যক্ত করে বলে উঠলেন,

—-” তোমার কারনে আঙ্কেলের কিচ্ছু হয়নি এটা সবসময় মাথায় রাখবে। তুমি আঙ্কেলের ছোট্ট একটা প্রাণভোমরা নিধি। যে কিনা আঙ্কেলকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগায়। তোমায় দেখে আঙ্কেল নতুন করে বাঁচার শক্তি পায় নিধি। ভালো থাকতে চায়। আর আফসোস করে কি বলে জানো? যদি তার মেয়েটাকে সে আরও একশ বছর আগলে রাখতে পারতো! আঙ্কেল তোমার জন্য বেঁচে আছে। শুধু এবং শুধুই তোমার জন্য। আর সেই তুমি অকারনেই এভাবে কাঁদতে পারো না। তুমি কাঁদবে না! শুনেছো তুমি? আমি বলেছি তুমি কাঁদবে না। আর কখনোই কাঁদবে না। তুমি কাঁদলে যে তোমার বাবা ভালো থাকবেনা।”

আমি ঠোঁট উল্টে আবারও কেঁদে উঠলাম। যে যাই বলুক না কেন? আমার জন্যই তো বাবার আজ এই দশা!

৪০.

বাবার অপারেশন সাকসেসফুল। নীচ থেকে খবরটা শুনেই টলমল চোখে চলে এলাম নিজের রুমে। রাহিয়ান ভাইয়া আঁড়চোখে তাকিয়ে ছিলেন অনেক্ষন। সকালে উনার এতো বুঝানোর পরেও আমি কাঁদছি সেই ভেবে সে ভীষণ অবাক। বাবার অপারেশন সাকসেসফুল তাতেও আবার কিসের কান্না? এটা তো সুখের খবর। তবে সুখে কেন মানুষকে কাঁদতে হবে? হবেনাই বা কেন? হওয়া তো উচিৎ। কান্না এমন এক জিনিস যেটা সব জায়গাতেই খাটে। মানুষ যখন দুঃখে কাঁদে তখন সে ঠোঁট উল্টে, থুতনীতে অসংখ্য ভাজ ফেলে তবে কাঁদে। আর যখন মানুষ সুখে কাঁদে তখন কিন্তু ঠোঁট উল্টে নয় বরং হাসতে হাসতে কাঁদে। ঠিক এখন যেমন আমি কাঁদছি। সুখের কান্না কাঁদছি।

—-” নিধি আপু আসবো?”

লিয়ার গলা পেয়ে দু’হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে পেছনে তাকালাম! দরজার সামনে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে লিয়া। আমি হাসিমুখে এগিয়ে গেলাম। “ভেতরে এসো” বলাতেই লিয়াও হাসি মুখে ভেতরে ঢুকে এলো। ট্রে তে খাবারের বদলে কয়েক টুকরো কাগজ পড়ে আছে। আমি কৌতুহল নিয়ে লিয়ার দিকে তাকাতেই লিয়া মৃদু হেসে বলল,

—-” ডিনারের মেনু লিস্ট। বাসা আজ পুরো ফাঁকা। কাকাকে বাজারে পাঠিয়ে এগুলো আনাতে হবে। আর তারপর রান্না হবে।”

আমি অবাক চোখে তাকালাম। ব্যাপার তো বেশ হাইফাই।

—-” আচ্ছা এই ব্যাপার। তা এগুলো নিয়ে আমার কাছে হঠাৎ? কিছু বলবে?”

—-” হ্যাঁ বলবো। বউমনি আপনার কাছে পাঠালো আপনার কোনো পছন্দের খাবারের নাম থাকলে বলুন সেই অনুযায়ী সব কিছু আনানো হবে আর তারপরে রান্না হবে।”

লিয়ার কথা শুনে আমার ভ্যাবলাকান্ত হাসি দিলাম! ওর প্রস্তাব নাকচ করে বললাম,

—-” নিধি এজ অলওয়েজ সিম্পল। খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার বরাবরই আগ্রহ বেশ কম। তুমি বউমনিকে বলো বউমনি যেন তার পছন্দ মতোই কিছু একটা বলে দেয়। আমি সেটাই খাবো।”

—-” কেন? বলুন না আপনি? দেখুন এখানে কিন্তু সবারটাই লেখা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু আপনিই…”

—-” আমার এখন কোনো খাবারের আইটেম মাথায় আসছেনা গো। তুমি বউমনিকেই বলো না প্লিজ?”

লিয়া আর কথা বাড়ালো না। হতাশ চোখে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে মাথা নেড়ে চলে গেলো। আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে সিনিয়রদের এসাইনমেন্ট গুলো নিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। অনেক দিন হয়ে গিয়েছে তারা আমার বাবার উছিলায় এগুলো এখনো চাননি! আর আমি যদি আজও এগুলো কমপ্লিট না করি তবে কবে জানি অরিন আপু দৌড়ে এসে আমাকে চ্যাং-দোলা করে নিয়ে যায়!!

৬-টা এসাইনমেন্টের এতো মোটা ফাইল দেখে বেশি কিছুনা নদীর পানিতে ভেসে যেতে ইচ্ছে করলো। এতগুলো এসাইনমেন্ট আমি একা.. কি করে.. কি করবো? এগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়াতেই তো মনে হচ্ছে হেলতে দুলতে নীচে পড়ে যাচ্ছি। রব! হেল্প মি! বিসমিল্লাহ বলে প্রথম এসাইনমেন্ট টা সামনে রাখলাম।কেন জানিনা মনে হচ্ছে বিশাল বিশাল গোলমাল পাকাবো এই এসাইনমেন্টে। গোলমাল পাকানোটা কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু না ভায়া বরং গোলমাল না পাকানোটাই অস্বাভাবিক! ফাইলটার কোনায় কোনায় চোখ বুলালাম। উপরে নামটা দেখতেই ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। “রাহিয়ান রাফিদ”। খেয়েছে.. গোলমাল পাকতে প্রথমে নিজেই উঠে এলো?

নামটায় আরেকবার চোখ বুলালাম। মুখ বাকিয়ে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আপনাআপনি বলে উঠলাম,—-” নাইস নেইম!” নিজের এহেম কান্ডে এবার নিজেই বেশ বিরক্ত হচ্ছি! এটা কি করছি আমি? অযথা সময় ন/ষ্ট। দ্রুত ফাইলটা খুলে প্রশ্নপ্রত্রটা হাতে নিয়ে যেন হ্যাং হয়ে গেলাম। বাপের কালে এমন প্রশ্ন দেখিনি! আর এখন নাকি এগুলো আমাকে সল্ভ করতে হবে! মানে ভাবা যায়? ভাবতেই মাথা ঘুরিয়ে অন্ধকার দেখছি চোখে! চোখের মধ্যে আচমকাই রাজ্যের ঘুম যেন খসে খসে পড়তে লাগলো। চোখ দুটো সরু করে সামনের আয়নাটার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম নিজেকে। ঘুমটা কি ঢব না ভ/য়? ভ/য় থেকেই এতো ঘুমাসছে?হে রব!

উফফ নিধি তুই একটু বেশিই চিন্তা করে ফেলছিস! ঘুমা তো। রাতে উঠে না হয় এগুলা কমপ্লিট করে দিবি! হিহি আমার এতো মাল্টিবুদ্ধি আগে জানতাম না তো! কথা গুলো ভাবতেই ভাবতেই হাই তুললাম। উনার ফাইলটা দু’হাতে চেপে ধরেই শুয়ে পড়লাম। আর শুতেই ঘুম। এই বুঝি জীবনের প্রথম পা/প। জানিনা এর পরিনতি কতটা
ভ/য়ং/ক/র হতে যাচ্ছে।

#চলবে____________________

[ গল্প লিখতে গিয়ে নিজেও এমন ঝামেলায় পরি। হঠাৎ এতো ঘুম যে কোথা থেকে আসে আই ডোন্ট নো😑 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here