সাদা ফ্লোরে ছোপ ছোপ র*ক্তে*র দাগ বসে গেছে। ফ্লোরে পরে থাকা অধরা একটু পর পর গুঙিয়ে উঠছে। চোখ তুলে তাকানোর শক্তি টুকুও নেই তার। পরনের জামা ছিঁড়ে গেছে বেশ কিছু জায়গায়। ওড়নাটা দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে তার হাত দুটো। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। চোখের কোণে পানি শুকিয়ে গেছে।
শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্কেলের দাগ। কিছু কিছু জায়গা কেটেও গেছে।
মাহমুদা বেগম ক্লান্ত হয়ে হাতের স্কেল ফেলে চেয়ার টেনে বসে। মা*র*তে মা*র*তে সে হাঁপিয়ে গেছে। তবুও তার রাগ কমে নি। আরও মারতে পারলে ভাল্লাগতো। কিন্তু এই শয়তান মেয়ে কাঁদছে না। মরে গেলে আবার তাকেই জেলের ভাত খেতে হবে। তাই সে আপাতত একটু জিরিয়ে নিচ্ছে।
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় মাহিম। মাহমুদার দিকে এক পলক তাকিয়ে তাকায় অধরার দিকে। বিরক্তি ফুটে ওঠে তার চোখে মুখে।
বা হাতে ভ্রু চুলকে মা কে বলে
“তাড়িয়ে দিলেই পারো। এভাবে ড্রামা করার মানে কি? কাজ থেকে ফিরেছি মা টায়ার্ড আমি। রেস্ট দরকার।
মাহিমের কন্ঠ শুনে অধরা পিটপিট করে চোখ খুলে। মাহিমের মুখটা দেখে তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে ওড়নার কোণা দিয়ে মুখটা মুছে দিতে। এক গ্লাস ঠান্ডা পানি ওনার হাতে ধরিয়ে দিতে। কিন্তু শক্তিতে কুলচ্ছে না।
মাহমুদা ছেলের পানে তাকায়।
” কি করেছে এই মেয়ে শোন
মাহিম হাত উঁচু করে মাকে থামায়।
“ইন্টারেস্ট নেই মা।
কফি দিয়ে যাও রুমে।
বলেই মাহিম আরেক পলক তাকায় অধরার দিকে। তারপর হনহনিয়ে চলে যায়। অধরা তাকিয়ে থাকে যাওয়ার দিকে। মনে হচ্ছে একটুখানি সুখ উড়ে গেলো অধরার পাশ দিয়ে। কিন্তু হায় ধরা দিলো না।
এবার চোখ দুটো টলমল করে ওঠে অধরার। চেষ্টা করে একটু বসার। কিন্তু কোমরে খুব বেশি ব্যাথা লেগেছে তাই বসতে পারলো না।
মাহমুদা কটমট চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে কোমরে লাথি দেয়। ব্যাথার জায়গায় আবারও ব্যাথা লাগাতে অধরা একটু শব্দ করে কুঁকিয়ে ওঠে।
ছটফট করতে থাকে
“আওয়াজ করবি না একদম। একদম জানে মে*রে দিবো তোকে ।
চুপচাপ রুমে চলে যা।
বলে মাহমুদা যেতে নেয়। তখনই মাহিমের রুম থেকে ভেসে আসে একটা কথা ” আমার রুমে যেনো কোনো আওয়াজে না আসে”
অধরা ঠোঁট টিপে কান্না আটকায়। মাহমুদা ওর হাত খুলে দিয়ে চলে যায়। অধরা দুই হাতে মুখ আটকে ধরে। যেনো কোনো আওয়াজ না বের হয়। মাহিমের নিশ্চয় অসুবিধা হবে ওর আওয়াজে।
মাহমুদা যেতেই মিথি দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। সে এতোক্ষন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলো। মায়ের ভয়ে এগিয়ে আসতে পারে নি। মিথি কাঁদতে কাঁদতে অধরাকে ধরে উঠাতে চায়। শরীর ছেড়ে দিয়েছে অধরা।
অধরা আধো আধো গলায় বলে
“আমি তোর ভাইকে খুব ভালোবাসি রে।
মিথির কান্নার শব্দ বেরে যায়। ফুঁপাতে থাকে সে। জানে অধরা তার ভাইয়ের জন্য প্রাণটাও দিতে পারবে।
খুব কষ্টে অধরাকে রুমে নিয়ে আসে মিথি। খাটে তুলতে পারছে না। ওইদিকে মাহমুদা ডাকছে মিথিকে। এখুনি না গেলে তাকেও মারবে। তার মা একটা রাক্ষস। খাট থেকে কম্বল নামিয়ে সেটা পেঁচিয়ে দেয় অধরার গায়ে। তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে ছুঁটে চলে যায় মায়ের কাছে।
মাহিম কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর কিছু একটা চিন্তা করছে। কপালে কুঁচকানো দেয়ালের দিকে দৃষ্টি।
মুহিত দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বেশ খানিকক্ষণ হলো। ভাইকে পর্যবেক্ষণ করছে সে। মন পড়তে চাইছে। কিন্তু কিছুই আঁচ করতে না পেরে ফোঁস করে শ্বাস টেনে এগিয়ে যায়। মুখোমুখি দাঁড়ায় মাহিমের। হাইটে দুই ভাই সমান সমান। দুই বছরের ছোট হলেও কেউ এটা বুঝবে না।
মুহিতকে মাহিম খেয়াল করে নি।
মুহিত শুকনো কাশি দিয়ে মাহিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।
মাহিম তাকায় মুহিতের দিকে।
“মা অধরাকে কেনো মারলো?
মাহিম কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে সেটা টেবিলে রেখে বেলকনিতে চলে যায়৷ মুহিত উওরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে
” মা কে জিজ্ঞেস কর গিয়ে।
“করে ছিলাম। সে বলছে তুমি মারতে বলেছো। কেনো? প্রবলেম কি তোমার?
মাহিম শক্ত চোখে তাকায় মুহিতের দিকে
” আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার সাহস হয় কি করে?
এই কথায় ক্ষেপে ওঠে মুহিত। সে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়
“তোমার সাহস হয় কি করে অধরার গায়ে হাত তোলার? ভাই না হলে তোমার হাত আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিতাম। মাইন্ড ইট
” কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস ভুলে যাস না।
“তুমিও ভুলে যেয়ো না অধরা আমার
বাকিটা শেষ করার আগে মাহিম বলে ওঠে
” অধরা তোর বোন। শুধুমাত্র বোন। অন্য কিছু বলা তো দূরের কথা ভাবলেও তোর জিব টে*নে ছিঁ*ড়ে ফেলবো আমি।
মুহিত হাসে। মাহিম অবাক হয় না। এটাই স্বভাব মুহিতের।
“রেস্ট নিবো আমি।
মুহিত দু পা এগিয়ে আসে। ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে বলে
“এই ভুলটা দ্বিতীয় বার করো না। একটা মেয়ের জন্য ভাইয়ের শত্রু হয়ে উঠো না। পরিনাম খারাপ হবে।
চলে যায় মুহিত। মাহিম দেয়ালে ঘুষি দেয়। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
সব কিছুর জন্য দায়ী ওই অধরা।
মাঝরাত মনে হয়। চারদিকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাঝেমধ্যে কুকুরের ডাক আর ঝিঁঝি পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটু আগে খট করে দরজা খোলার শব্দ কানে এসেছে অধরার। শব্দহীন পায়ে কেউ অধরার সামনে এসে বসেছে। অধরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে কেউ একজন তাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দিচ্ছে। অধরা পিটপিট করে চোখ খুলে। লোকটা অধরার পাশে বসে ফাস্ট এইচ বক্স থেকে কিছু খুঁজছে৷ অধরার শুষ্ক ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। হাত বাড়িয়ে লোকটার হাতটা ধরতে ইচ্ছে করছে। অধরা হাত বাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
লোকটা অধরার ক্ষত স্থান গুলোতে মলম লাগিয়ে দিতে থাকে। অধরা ব্যাথায় আহহ শব্দ করে ওঠে। তখন লোকটা আবার ফুঁ দিতে থাকে ক্ষত স্থানে।
এতো যত্নশীল?
” মনের ক্ষত সারিয়ে দিবেন কিভাবে ডাক্তার বাবু? মনটা যে আমার আঘাতে আঘাতে বিষিয়ে যাচ্ছে।
লোকটার হাত থেমে যায়। সে গম্ভীর চোখে তাকায় অধরার দিকে।
#প্রেয়সী
#পর্ব:১
#তানিশা_সুলতানা