প্রেয়সী পর্ব ১৯

0
547

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৯

৩৭.

হৃদ মেয়েটাকে ছেড়ে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। একপ্রকার ছিটকে পড়ার মতো! ফ্যাকাসে মুখে কতক্ষণ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আবারও বিদিশা হয়ে শার্ট খুঁজতে লাগলো। শার্ট খুঁজে না পেয়ে আমার দিকে তাকালো। হৃদের চোখ মুখ আ/তং/কে ভ/য়ং/ক/র লাগছে। ওর র/ক্তশূণ্য মুখ খানা দেখতেই ঘৃ/না/য় মুড়িয়ে গেলো আমার গোটা পৃথিবী টা। তেড়ে গিয়ে ঠাসসস করে চড় বসালাম ওর গাল বরাবর। আমার হাতে চড় খাওয়ার দৃশ্য দেখতে মেয়েটাও ছিটকে পড়লো বিছানা থেকে। অবিরত নিজের জামাকাপড় টেনেটুনে লম্বা করার প্রয়াস চালাচ্ছে। রাহিয়ান ভাইয়া এগিয়ে গেলেন মেয়েটার দিকে। বিছানার চাদর টা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” জীবনটা খুব সুন্দর বোন! আর সেটাকে উপভোগ করতে শেখো। এভাবে শরীর বিলিয়ে কতদিন? যখন এই শরীর থাকবেনা, তখন যে শেয়াল কুকুরেও ফিরে তাকাবে না!”

মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হাতে রাহিয়ান ভাইয়ার থেকে চাদর টা নিয়ে নিজের শরীর পেঁচিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। মেয়েটা বের হয়ে যেতেই হৃদ হুমড়ি খেয়ে পড়লো আমার পায়ের উপর। আমি চমকে উঠে দু’পা পিছিয়ে যেতেই ও হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে লাগল,

—-” লক্ষি.. লক্ষি আমায় ক্ষমা করে দাও লক্ষি! আমি এসব মেয়েগুলোর পাল্লায় পড়ে দিন দিন কতটা নীচে নেমে গিয়েছি নিজেই বুঝতে পারিনি! তুমি যদি আরও আগে আমার এসব ব্যাপারে জানতে তাহলে হয়তো আমার এই অধঃপতন কখনোই হতো না! আমি হয়তো নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম! প্লিজ নিধু.. লক্ষিটি আমার! আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও!”

—-” ক্ষমা? আর তোমাকে? কেন বলো তো? যে মানুষ টা দিনের পর দিন এই কুকর্মের সাথে লিপ্ত থেকেও আমাকে স্রেফ মিথ্যে দিয়ে ভুলিয়ে আসতে পেরেছে তাকে আমি ক্ষমা করবো? যে কিনা নীচে নামতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে আর শুধু নীচেই নেমেছে তাকে কি করে ক্ষমা করি? তুমি বলছো তোমার এই কুকর্মের কথা আমি আগে জানলে হয়তো তোমার এই অধঃপতন হতো না! অথচ দেখো তোমার এই কুকর্মের কথা ধামাচাপা দিতেই দিনের পর দিন তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো। যদি তোমার এই কুকর্ম ধামাচাপা দিতে মিথ্যে বলার সেন্স থাকে তবে তোমার এই কর্ম থেকে বের হতে আমার সাহায্যের কি দরকার? তবে কি আমি ভেবে নিতে পারি যে তুমি সবটা ইচ্ছে করে,ক্ষনিকের সুখের জন্য, ক্ষনিকের উত্তেজনা থামাতে করেছো? সেদিন যখন তুমি আমার কাছে এই মিথ্যের জন্যই ফেঁসে যাচ্ছিলো জাস্ট কলটা কেটে দিয়ে উধাও হয়ে গেলে! আর সেদিন থেকেই তুমি লাপাত্তা।”

হৃদ দাঁড়িয়ে গেলো! আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরতে নিলে আমি আবারও চেঁচিয়ে উঠি,

—-” খবরদার হৃদ! তোমার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমাকে একদম ছোঁবে না! আমার ঘৃ/না হচ্ছে তোমার মুখ দেখতে! আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে তোমার মতো এমন একজন নোংরা মানুষের সাথে আমি পুরো একটা বছর সম্পর্কে ছিলাম! ছিহ্…”

—-” নিধু! নিধু তুমি আমায় ভুল বুঝছো। তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছুই নয়! আমি জানি না আমি এখানে কেন এসেছি? আমার ঠিক মনেও নেই! জানো ঐ মেয়েটা জোর করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে! আমি ইচ্ছে করে…..”

হৃদের কথা সম্পূর্ণ করতে দেওয়ার ধৈর্য্য আমার হয়ে উঠলো না৷ তার পূর্বেই আরও একটা চড়ে ওর কথাদের ইতি টানলাম! হৃদ চড় খেয়ে ঝুঁকে গেলো খানিকটা। গালে হাত চেপে অ/গ্নি/দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে! আমি অবাক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি! হৃদ এতবড় একটা ঘৃ/ণ্য কাজ করেও কোনো অনুশোচনায় ভুগছেনা! ওর চোখে মুখেও কোনো অনুতাপের আভা দেখা যাচ্ছে না! হৃদ অনুতাপহীন! কিন্তু কি করে? তবে কি ও মানতে চাচ্ছে না যে ও কতবড় বাজে কাজ করেছে?

হৃদ গলার স্বর মোটা করে ঝাঁ/জ মেশানো গলায় বলে উঠলো,

—-” একদম আমার গায়ে হাত তুলবেনা নিধি!”

আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলাম। এ কাকে দেখছি আমি! এই মানুষ টাই কি ছিলো আমার ভালোবাসার মানুষ? নাকি কোথাও ভুল হয়েছিলো তাকে চিনতে! বুঝতে!

—-” সেই তখন থেকে বলছি আমি কিচ্ছু করিনি আমি কিচ্ছু করিনি! তবুও বিশ্বাস করছো না তুমি! কেমন ভালোবাসো হ্যাঁ যে ভালোবাসার মানুষ টার উপর তোমার সামান্য ভরসা টুকু নেই! আমার তো ভাবতে অবাক লাগছে তুমি আমার ভালোবাসার মানুষ? তুমি সত্যিই আমার সেই আগের নিধি তো? নাকি আমি তোমায় চিনতে ভুল করছি?”

হৃদ কথা গুলো শেষ করতেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন রাহিয়ান ভাইয়া! আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকালাম! উনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার দশা! দু’হাতে পেট চেপে হাসতে হাসতে উঠে এলেন আমাদের সামনে। উনি আমার অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে হৃদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালেন। কোনো মতে হাসির বেগ চেপে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ালেন। হৃদের দৃষ্টি আমার থেকেও কয়েকগুন বেশি আশ্চর্যাম্বিত। হৃদ কিছু একটা ভেবে উনাকে প্রশ্ন করতে নিলেই উনি হৃদকে থামিয়ে দিলেন। হৃদের কাঁধে হাত রেখে চারপাশে ইশারা করে বলল,

—-” আশেপাশে তো কোনো লুডু বা দাবার কোড দেখছিনা ব্রো! আচ্ছা ছাড়ো… নিধির কথায় মাইন্ড খেয়োনা কেমন? ও বেচারি কি দেখতে কি দেখে ফেলেছে! তবে আমি কিন্তু ঠিকই দেখেছি! আমি জানি, তুমি একদম নির্দোষ! তোমার কোনো দোষ নেই ইভেন তুমি কিছু করোওনি! আমরা যখন রুমে এলাম তখন তো তুমি দাবা খেলছিলে তাই না? ইউ নো হোয়াট? দাবা ইজ মাই ফেভারিট গেম। কোডটা একটু বের করো দেখি, আমিও খেলি তোমার সাথে। বের করো বের করো। এবার খেললে নিশ্চিত নিধিও ঠিক দেখবে! এই নিধি… লুক ও কিন্তু কিছুই করেনি! আর আমি বিশ্বাস করিনা ও কিছু করতে পারে বলে বুঝলে? এই যে এখন আমি আর তোমার হৃদ দাবা খেলবো। এবার অন্তত দেখে বলো যে হৃদ এক্চুয়ালি কিসের প্লেয়ার? দাবার নাকি বেডের! ওহ কামঅন নিধি! ইউ স্যুড ট্রাস্ট অন হিম!”

হৃদ রে/গে গিয়ে ধাক্কা মা/র/লো রাহিয়ানকে! ধাক্কা খেয়ে রাহিয়ান এক’পা পিছিয়ে এলেও চোখের পলকে আবারও হৃদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। হৃদ হিং/স্র চোখে তাকাতেই রাহিয়ানের হাতে শ/ক্তপো/ক্ত একটা ঘুষি খেয়েই ছিটকে পড়লো বেডের পাশে। ওর পড়ার সাথে সাথে ওর সাথেই বেঁধে পড়লো আরও কিছু আসবাবপত্র। হৃদ কোনোমতে বেড ধরে উঠে বসতে বসতে আমাকে তাচ্ছিল্য করে বলল,

—-” এই মাঝরাতে নিজে পরপুরুষ নিয়ে ঘুরে বেড়াও আর আমাকে খারাপ করে চড় মা/র/তে আসো? ছিহ্!”

হৃদের কথায় আমি হতবাক। কি বলছে ও এসব? পাগল হয়ে গেলো নাকি? নিজের দোষটা ও কেন স্বীকার করতে পারছেনা? কেন ও বুঝতে চাইছে না ও ভুল করেছে!
অ/ন্যায় করেছে!

রাহিয়ান ভ/য়ং/ক/র রে/গে গেলেন। হৃদের দিকে তেড়ে গিয়ে ওকে নীচে ফেলেই মা/র/তে লাগলেন। উনার মা/র দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম! উনি রীতিমতো হিং/স্র হয়ে উঠেছেন। হৃদকে খুব করুন ভাবে মা/র/তে লাগলেন সেই সাথে কিছু বলতেও লাগলেন! কথা গুলো আমার কানের পর্দা ভেদ করতেই আমার পৃথিবী উল্টে গেলো!
নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো আমার!! আমি দাঁড়ানো অবস্থাতেই শরীরের ভার ছেড়ে লুটিয়ে পড়লাম মেঝেতে!

৩৮.

এলার্মের তীক্ষ্ণ আওয়াজে খুব বাজে ভাবে ঘুমটা ভে/ঙে গেলো আমার। মেজাজ তুঙ্গে চড়িয়েই ফোনটা উঠিয়ে ছুঁড়ে মা/র/লা/ম বেডের উল্টো পাশে। ছুঁড়ে ফেলার সাথে সাথেই এলার্ম অফ হয়ে গেলো! আবারও মুখে বালিশ চেপে শান্তির ঘুমে নিমগ্ন হতে নিলাম! কিন্তু শান্তি আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আচমকাই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম! বিছানা ছেড়ে ঘড়ি খুঁজতে লাগলাম! উফফ! ফোনটাই বা কোথায় পড়লো? ফোন আর পেলাম না তাই বিরক্ত হয়ে ঘরের মধ্যে ওয়াল ঘড়ি খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে ওয়াল ঘড়ির বদলে ছোট একটা ঘড়ি পেলাম! যা-হোক চলবে। সময় তখন ৯ টা বেজে ৩৫ মিনিট। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ঘড়িটা বিছানায় রেখে নিজের রুম থেকে বের হয়ে রাহিয়ান ভাইয়ার রুমের সামনে এসে হাঁপাতে লাগলাম! দরজাটা লক! ভেতরেই আছেন কিন্তু কি করছেন? ঘুমচ্ছেন নাকি কোনো কাজ? নক করবো কি করবো না? মন সায় দিচ্ছে না নক করতে! কিন্তু না করলেও যে নয়! কাল রাতে যা শুনেছি তাতে করে আমার অনেক গুলো অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি! আর যেগুলোর উত্তর শুধু উনার কাছেই আছে আর উনাকে এর উত্তর আমাকে দিতেই হবে। আমাকে জানতেই হবে সবটা।

মনে মনে সাহস জুগিয়ে ঠকঠক আওয়াজে নক করেই বসলাম! এটা হলো মিনিমাম ভদ্রতা। কিন্তু এটা কি হলো? নক করতেই উনার দরজাটা হাট করে খুলে গেলো। আমি ভ/য় পেয়ে দৌড় দিতেই নিচ্ছিলাম কিন্তু দরজার ওপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবারও দাঁড়িয়ে গেলাম। বুঝলাম দরজাটা চাপানো ছিলো লক করা ছিলো না। কথাটা মনে হতেই নিজের মনে নিজেকে কিছুক্ষণ উরাধুরা বকে উঁকি ঝুঁকি মা/র/লা/ম রুমের ভেতর। উনি রুমে নেই মনে হচ্ছে! ব্যালকনি তে আছেন? এখান থেকেই ডাকবো নাকি ভেতরে ঢুকবো? মনের সাথে যু/দ্ধ বিজয়ী মস্তিষ্ক নিয়ে ঢুকে পড়লাম উনার রুমে! রুমে পা রাখতেই এক অদ্ভুত অনুভূতিতে কেঁপে উঠলাম! পুরো রুম ঠান্ডা হয়ে আছে। বুঝলাম এসি চলছে। বিরক্তিকর!

আশেপাশে নজর দিলাম। এ টু জেড পুরো রুম একদম পরিপাটি সাজানো গোছানো। এ রুমে যে মানুষ একবার পা রাখবে সে নিশ্চিত এখানে থাকার কোনো যৌক্তিক পরিকল্পনা করবেই করবে। তবে আমি করছিনা! সব ঠিক থাকলেও এটা কারোর খুব সখের এবং খুব ব্যক্তিগত শান্তির স্থান। নিজের সামান্য ভালোলাগা থেকে নিশ্চয়ই কোনো যৌক্তিক পরিকল্পনা করা উচিৎ নয়! মানুষ টা একদম পার্ফেক্ট হয়েই জন্মেছে। ঠিক তার ছোট মনির মতো।

ব্যলকনির দিকে পা রাখতেই হঠাৎ থমকে গেলাম! মনে হচ্ছে আমার পেছনের দিকে উনার বড় ড্রেসিং টেবিলের আয়না টা বার বার জ্বলে উঠছে। আমি পেছন মুড়ে তাকালাম। আয়নায় আমাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এর চারপাশ টাও খুব স্বাভাবিক কিন্তু জ্বলজ্বল করছে কিসে? আমি টানা বিশ সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেও আর কোনো জ্বলজ্বল করা জিনিস আবিষ্কার করতে পারলাম না! তাই আর বিশেষ পাত্তা না দিয়ে আবারও ব্যলকনির দিকে পা বাড়ালাম! এক ধাপ ফেলতেই আবারও পেছন থেকে কিছু একটা জ্বলজ্বল করে উঠলো। আমার মনের মধ্যে কামড় দিলো! কি হচ্ছে এখানে? কি আছে ঐ আয়নার মধ্যে? আমি এক আকাশ বিষ্ময় আর কৌতুহল নিয়েই এগিয়ে গেলাম ড্রেসিং টেবিলের দিকে। আমার মন বলছে কিছু একটা ব্যাপার আছে এখানে! কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে এভরিথিং ইজ ফাইন নিধি!

মনের কথাই শুনলাম! কয়েক ধাপ ফেলে ঠিল আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। আয়নাতে আমাকে একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কোনো খুঁত নেই একদম নিখুঁত। আমি উৎসাহ নিয়ে আয়নায় হাত রাখতেই অদ্ভুত এক শব্দ করে একটা ফিতে ঝুলে পড়লো! আমি ভ/য় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম! ও মা গো! এ কেমন ভূ/তুড়ে আয়না!! ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে আবারও কতক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম! ভ/য়ও হচ্ছে আবার ভীষণ কৌতুহলও হচ্ছে! কি এমন আছে এখানে? তাই আবারও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম আয়ানার কাছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ঝুলে থাকা ফিতেটা টান দিতেই যা প্রদর্শিত হলো তা দেখার জন্য আমাকে কোটিপতি করে দেওয়ার লোভ দেখালেও রাজি হতাম না কখনো!

এটা যে ভূতকেও হার মানিয়ে দিবে। থ্রিডি পেইন্টিং এর একটা ভূ/তের ছবি ভেসে উঠলো আয়নার মধ্যে। যেটা দেখতেই আমি দুনিয়া কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলাম! উল্টোদিকে দৌড় দিতেই ধরাম করে বারি খেয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভ/য়া/র্ত মনে তাকে ভূ/ত ভেবে আবারও চিৎকার করে আয়নার দিকে দৌড়ে এলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম যে এখানে ঐ ভূ/তে/র ছবি ভাসছিলো! দৌড়ে আসতে আসতে যখন মনে হলো তখন আবারও সেই চিৎকার। আয়নার উপর যত আসবাবপত্র ছিলো সব আমার সাথেই চিৎকার পেড়ে নীচে পড়ে গেলো। আমি আবারও উল্টো পথে তাকালাম! যেটাকে আসলে ভূ/ত ভেবেছিলাম সেটা যে ভূ/ত নয়! উনি হলেন রাহিয়ান! নিজের সমস্ত হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েই দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরলাম তাকে!

ভ/য়ে ভ/য়ে এমন দশা হলো যেন কান্নাই করে ফেলবো এখন! কাঁপা কাঁপা হাত দুটো দিয়ে উনাকে এমন ভাবে ধরলাম যে উনি নড়াচড়াও ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না! শুধু হতবিহ্বল হয়ে আমার বোকামিই দেখে যাচ্ছিলেন। মিনিট কয়েক এভাবেই পার হতে হতে আমি শুধু আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম! এ কোন অদ্ভুত আয়ানারে ভাই! রাহিয়ানের কি ভ/য়ডর বলে কিছুই নেই নাকি? উনি কি করে এসব ঘরে রেখেছেন? কি করে?

—-” নিধি! নিধি হোয়াট হ্যাপেন্ড?? কি হয়েছে! কি হয়েছে বলো আমাকে? তুমি এভাবে ভ/য় পেয়ে আছো কেন? আর এভাবে চেঁচালেই বা কেন? নি…”

—-” ভ..ভ…ভূততততত! ওওও..ওঐ আয়নার মধ্যে ভ…ভ..ভূতততত!”

কাঁপা কাঁপা স্বরে এটুকুই বলা সম্ভব হলো! বলতে না বলতেই রাহিয়ান ভাইয়া ফিক করে হেসে দিলো। আমাকে নিজের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

—-” আয়নায় ভূত? কোথায় ভূত দেখাও?”

উনি আমাকে নিজের থেকে যতটুকু ছাড়াচ্ছে আমি আরও শক্ত করে তাকে তার চেয়েও বেশি জড়াচ্ছি! ভ/য়ের দরুন মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে। ভালো মন্দ কোনো কাজই করছে না! রাহিয়ান ভাইয়া আয়নায় চোখ বুলালেন। কিছু দেখতে না পেয়ে আমার মাথায় হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললেন,

—-” নিধি আয়নায় ভূত আসবে কি করে? দেখো…বিশ্বাস না হলে তুমি তাকিয়ে দেখো না আয়নায় কিছু নেই! আয়না তো একদম ঠিক আছে। তোমার হয়তো মনের ভুল হয়েছে! তাকাও একবার এদিকে!”

আমি ভ/য়ে থেকে থেকে কেঁপে উঠছি! মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে উনিও আমার সাথে মজা নিচ্ছেন! মনের ভুল! এতো বড় মনের ভুল কি করে হয়? আমি তো নিজের চোখেই দেখেছি। হঠাৎই আমার ভয়টা উবে গিয়ে তা সংকোচে পরিনত হলো! উনার পিঠ ছাড়িয়ে আমার হাত টা উনার লোমশ বিহীন বুকে পড়তেই টনক নড়লো আমার। আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে আছি মনে হতেই আবারও ছিটকে পড়লাম পেছনের দিকে। কাজটা এত দ্রুত করে ফেললাম যে শেষ অব্দি নিজেকে কন্ট্রোল করাও আমার হাতে বাইরে চলে গেলো। পেছনে পায়ের সাথে কিছু একটা বেঁধে পড়ে যেতেই উনি এসে ধরতে নিলেন আমায়! কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না।
কে/লে/ঙ্কা/রি যা হওয়ার সেটাই হলো। উনার শরীরের ভার নিয়ে আমার উপরই পড়লেন! প্রথমে তো মনে হলো এই বুঝি চ্যাপ্টা লেগে গেলাম! কিন্তু না, পড়তে পড়তে উনার হাত আমার পিঠের নীচে এসে পড়লো। যা ব্যাথা পাওয়ার উনার ঐ হাতটাই পেলো!

ইশশ কি কান্ড! কি যে করি আমি! নীচে পড়ে যেতেই বাঁধলো আরেক বিপত্তি! উনি হাত দিয়ে ঠেকাতে গিয়েই আমার ঘাড়ের উপর উনার ঠোঁটের ছোঁয়া লাগলো! আমি তো কারেন্টের শক খেয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলাম! সেই সাথে নিঃশ্বাসও আঁটকে ধরলাম! আমার পুরো শরীর শিহরণে কেঁপে উঠলো! অবশেষে না পেরে উনার দু’হাত খামচে ধরলাম! তবে চোখ দুটো বন্ধ করা অবস্থাতেই আরও কিছু ভেসে উঠলো মনের মধ্যে। সেদিনকার লাইব্রেরিতে ঠিক এমনই এক কাহিনী ঘটেছিলো যার ছোঁয়া টা অনেকটা এমনই ছিলো! আর গতকালও ঠিক…….

আর কিছু ভাবার সময় না দিয়েই আমার হাত ধরে একটানে উঠিয়ে দিলেন রাহিয়ান ভাইয়া। চোখে মুখে
আ/তং/কে/র ছাপ! ধরা পড়া চোরের মতো বারবার নজর লুকাচ্ছেন! আমি আঁড়চোখে উনাকে দেখতে লাগলাম! মুখ তুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চোখে পড়লো উনার লোমশ বিহীন বুক! ব্যস, আমার লজ্জায় মাথা কেটে পড়ে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিলো! অস্বস্তির শেষ সীমা লঙ্ঘন করেই উনার ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম! ছিহ্ কি লজ্জা কি লজ্জা!

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here