প্রেয়সী পর্ব ১৬

0
546

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৬

৩১.

কই মাছের প্রান আমার! যেকোনো মুহূর্তে তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারে! দেয়ালের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট দশেক হতে চলল। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখে সেই যে দোয়া দুরূদ পাঠ করে যাচ্ছি তো করেই যাচ্ছি। ভ/য়ের দরুন চোখ জোড়াও খুলতে পারছি না! এ-কি রূপ রাহিয়ান ভাইয়ার? আমি বিস্মিত, সঙ্কিত! আজ যেন সব কিছুর উর্ধ্বে উঠেও হাসফাস করছি। উনার
র/ক্তি/ম চোখ জোড়া সেকেন্ডই আমাকে ভ//স্ম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এসবের পেছনে মূখ্য কারন টা কি সেটাই তো বুঝতে পারছিনা! কে বলতে পারে এই লোক এমন ভ/য়ং/ক/র ভাবে এতোটা রে/গে আছে কেন?

—-” আবির তোমার নাম্বার কেন নিলো?”

উনার তপ্ত নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর আঁচড়ে পড়লো। সেই সাথে বের হওয়া শান্ত হু/ম/কি সরূপ কথাটায় আমার ভেতরকার ভ/য়/টা আরও দশগুন বাড়িয়ে দিলো! ভুলে গেলাম আবির ভাইয়া মানে, আরফান ভাইয়া আমার থেকে নম্বর কেন নিলেন? কিসের উছিলায় নিলেন!

আমার সাথে এমন কঠিন স্বরে কেউ কখনো কথা বলে না! কিন্তু উনি বলছেন! আর তাই একটা সিম্পল কথা সিম্পল ভাবেও বলতে ক/ষ্ট হচ্ছে আমার। উষ্ণ-শীতল পরিবেশেও ঘামছি আমি। আজ ঘরের মধ্যে এসির পরিবর্তে ফ্যান ঘুরছে। তবে আজ এসির দু/র্গ/ন্ধে আমার গা না গোলালেও উনার অ/গ্নি/মূর্তি রূপে আমার হাত-পা ভে/ঙে আসছে। ঢোক গিললাম। কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছি না!

—-” কি হলো বলো? কেন নিয়েছে নাম্বার? আর কেন ও তোমার হাতের রান্না খেতে চাচ্ছে? তোমাদের এতো মধুর আলাপনটা কিসের আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা! বলো?”

উনার কঠিন স্বর ব্যক্ত রেখেই ভ/য়ং/ক/র রা/গ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন। আমি কেঁপে উঠে খামচে ধরলাম আমার ওড়না। উনাকে এতোটা ভ/য় পাওয়ার কোনো সঠিক কারন আমার জানা না থাকলেও এই মুহুর্তে এই মানুষটা কে পৃথিবীর সমস্ত ভ/য়ং/ক/র প্রানীর চেয়েও ভ/য়ং/ক/র লাগছে। খুব বাজে ভাবে ভ/য় পাচ্ছি উনাকে। এমন সময় যে চোখ তুলেও তাকাতে পারছিনা উনার দিকে। কেবল কাঁপছি আর হাসফাস করছি।

আমার চুপ থাকা উনাকে শান্ত করতে নয় বরং উনার রা/গে/র আ/গু/নে আরও ঘি ঢালার মতো কাজ করলো। উনি আমার বাহু চেপে ধরে উনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমি ব্যা/থা সহ্য করতে না পেরেই কুকিয়ে উঠে উনার টি-শার্ট খামচে ধরলাম। বড় করে টেনে নিঃশ্বাস ছেড়ে আহত নয়নে উনার দিকে তাকানোর দুঃসাহসও করে ফেললাম!

উনি রীতিমতো আ/গু/নে/র লা/ভা গলিয়ে ছাড়ছে চোখ থেকে। উনার চোখের ভাষা যেন বাংলার চর্যাপদের চেয়েও কঠিন। আমার ছোট্ট মাথায় ধারন করা সম্ভব হলো না! তবে অনেক হয়েছে। উনার এই রু/ঢ় বিহেভিয়ার অকারনে নিধি কিছুতেই সহ্য করবেনা! আরফান ভাইয়া যে কারনেই আমার থেকে নাম্বার চান না কেন? তার কৈফিয়ত নিশ্চয়ই আমি উনাকে দিবো না! একদম দিবো না! আমার আত্মসম্মানে আ/ঘা/ত করছেন উনি! খুব বাজে ভাবে, খুব বি/শ্রি ভাবে আ/ঘা/ত করছেন!

কথা গুলে ভাবতেই আমার আত্মসম্মান বোধ যেন মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠলো। আমি উনার কঠিন রূপকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করেই ঝাঁ/ঝা/লো কণ্ঠে বলে উঠলাম,

—-” আমার সাথে এভাবে কথা বলার কোনো অধিকার আপনার নেই! আমার বাবাও আমার সাথে কখনো এমন ভাবে কথা বলে না! আর আপনি? ছাড়ুন আমায়… আমার লাগছে! ছাড়ুন….(উনার বিপরীতেই চেঁচিয়ে উঠলাম)

উনার চাহনী কোমল হয়ে এলো। হাতের বাঁধনও আলগা হয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ। উনার চোখে মুখে অপরাধ বোধের ছাপ ভাসতে লাগলো। আমাকে ছেড়ে দিয়েই উনি দু-পা পিছিয়ে গেলেন। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে হাত তুলে বাহুতে মালিশ করতে লাগলাম। উনার এমন আচরণের পর আর উনার দিকে মুখ তুলে তাকানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে জাগলো না মনে! মোটেই না!

আর দাঁড়িয়ে থাকা বোধহয় উনার ইগো তে আঁটকে এলো। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে গটগট করে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। আমি শেষ মুহুর্তে উনার যাওয়ার পানে তাকালাম। উনার প্রতি কোনো অনুভূতিই কাজ করছেনা আমার! কেবল মাথার মধ্যে একটা কথাই বেজে যাচ্ছে, উনার আচরন খুবই বাজে ছিলো!

—-” নিধি, কি গো কোথায় চলে গিয়েছিলে? কখন থেকে তোমাকে ডেকে ডেকে সবাই হয়রান হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তোমার তো দেখা মেলাই ভার। কোথায় ছিলে? আর রাহিয়ান বাবু কই? ও না তোমাকে ডাকতে গিয়েছিলো?”

বউমনি এক নাগাড়েই কথা গুলো বলতে বলতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি দৃষ্টি মাটিতে বিদ্ধ করে কিছুক্ষন আকাশ পাতাল ভাবলাম। অতঃপর মুখে জোরপূর্বক হাসির ছাপ ফেলে বললাম,

—-” আমি গার্ডেনেই ছিলাম। ওখানে আরফা.. আই মিন, আবির ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো। উনার সাথেই কথা বলছিলাম!”

—-” তোমাদের গার্ডেনে দেখা হয়েছিলো? আমি আরও ভাবলাম তোমার সাথে আবিরের কথা বলিয়ে দিবো! আচ্ছা তুমি এখানে হলে রাহিয়ান কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না!”

—-” র..রাহিয়ান ভাইয়া? উনার ঘরেই হবেন?”

—-” ঘরে নেই। তাইতো তোমায় রুমে এলাম। ভাবলাম হয়তো এখানে থাকতে পারে!”

—-” না.. নেই এখানে!”

—-” আচ্ছা যাক ছাড়ো! নীচে চলো… নীচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। খানিক বাদে আসিফ আসবে। তোমার সাথে তো ওর এখনো আলাপ হয়নি।”

—-” আসিফ?”

—-” রিম্মির হবু হাজবেন্ড।”

—-” রিম্মি আপুর হাজবেন্ড? মানে আমার একমাত্র দুলাভাই?”

বউমনি মুচকি হেসে বলল,

—-” হু! তোমার একমাত্র দুলাভাই! এসো এসো?”

বউমনি আমার হাত ধরে নীচে নিয়ে এলেন। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। জমিয়ে আড্ডা হচ্ছে। আমি নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিলাম। রাহিয়ান ভাইয়া সত্যি নেই এখানে। বউমনি বলল,নিজের রুমেও নাকি নেই সে! তবে গেলো টা কোথায়?

—-” নিধি কাম কাম।”

হাত উঁচিয়ে ডাকলেন আরফান ভাই। উনার ডাক পেতেই বুকের মাঝখানটায় ধুক করে উঠলো। আচমকাই যেন রাহিয়ান ভাইয়ার অ/গ্নি/মূ/র্তি রূপটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। কোনোমতে ঢোক গিলে ভেজা বেড়াল হয়ে রিম্মির আপুর পাশে গিয়ে বসলাম। আরফান ভাই এখনো তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি তার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হসার চেষ্টা করে চোখ ঝাপটে বোঝালাম “আমি এখানে বসে নিয়েছি।” আর ডেকে ঝামেলা বাড়াবেন না!”

ব্যস আমার মনের কথা মনেই রইলো। পাশ থেকে ভেসে আসলো রাহিয়ান ভাইয়ার নাকি সুরে কথা,

—-” এখানে দেখছি চোখে চোখে কথা হচ্ছে!”

আকষ্মিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। কথাটা কি উনি আমাকে মিন করলে? সবাই সবার দিকে ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছে। মূলত কৌতুহল মেটানোর দায়ে যে, ” এখানে কে কার সাথে চোখে চোখে কথা বলছে?”

আমি এখনও স্থীর হয়ে আছি। কোনো ভাবে নড়ছিও না। আর বাকি সবার দিকে তাকানো তো একদমই না!

বউমনি কি বুঝলো সঠিক বুঝলাম না। সে রাহিয়ান ভাইয়ার কথার প্রতিউত্তরেই জবাব দিলো,

—-” কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আবির কখন থেকে ওয়েট করছে তোমার। আর তুমি না নিধিকে ডাকার জন্য গিয়েছিলে? তারওর হঠাৎ কোথায় উধাও হলে?”

আমি ঢোক গিলে আঁড়চোখে তাকালাম উনার দিকে। উনি ভালো-মন্দ কোনো কথাই বললেন না। কেমন একটা নিশ্চুপ হয়ে আছেন। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে আরফান ভাইয়ের পাশে বসলেন। কারোর দিকে কোনো রকম না তাকিয়ে বলে উঠলেন,

—-” একটা কল এসেছিলো ইম্পরট্যান্ট। মা/রা/মা/রি হয়েছে নাকি চৌরাস্তার মোড়ে। রূপ কল করে জানালো!”

“মা/রা/মা/রি/র” কথা শুনতেই বিচলিত হয়ে উঠলেন আরফান ভাই। বললেন,

—-” জাফরদের সাথে আবারও মা/রা/মা/রি? কি যে
ঝা/মেলা ওদের বুঝিনা আমি!”

—-” রাত্রি কে নিয়ে ওদের ক্ষো/ভ মিটেনি। তাই রি/ভে/ঞ্জ নেওয়ার তালে আছে। তাই বারবার আমাদের দলের লোকদের বিপাকে ফেলে ঝা/মে/লা করতে চায়। বড় ধরনের গ্যা/ঞ্জা/ম করতে চায় আরকি।”

—-” তুই একদম ওদের নিয়ে মাথা ঘামাবি না রাফিদ। আমি বুঝতে পারছি ওরা কি চায়? ওরা তোর সাথে ঝামেলা করার জন্যই এসব করছে। তুই বুঝতে পারছিস?”

রাহিয়ান ভাইয়া আবারও নিশ্চুপ রইলেন। জবাব দিলেননা। মনে হচ্ছে উনি আরফান ভাইয়ের বলা কথা গুলো মোটেই গায়ে মাখাতে চাচ্ছেন না। উনার মন বলছে,”যা হবার হবে! ওরা যদি ঝা/মে/লায় পড়ে ম/র/তে চায় তবে তাই হোক।”

বউমনি দু’জনের কথা থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

—-” এই অনেক হলো বাইরের কথা। কি যে বলছো ঠিক শুনতেও পারছিনা। রাখো তো তোমাদের প/লি/টি/কা/ল কথাবার্তা। এই রিম্মি?”

—-” হ্যাঁ বউমনি?”

—-” আসিফ কতদূর গো? আর ফাহিমটাই বা কোথায়? সেই কখন বের হলো, এখনো ফিরছেনা কেন বলো তো?”

—-” আসিফ অন দ্যা ওয়ে বউমনি। আর মিনিট দশেক হয়তো!”

—-” আচ্ছা এবার তবে ফাহিমকে কল করো? জিজ্ঞেস করো কোথায় আছে? দুপুরে খেয়েছি কি?”

রিম্মি আপু মাথা দুলিয়ে ডায়াল করলো ফাহিম ভাইয়ার নাম্বারে। আমি সবার কথা গিলছি বসে বসে। নিজের মুখে আর কিছুই বলছি না। মূলত ধ্যান করছি.. হঠাৎই ফোনে ম্যাসেজের টোনে চমকে উঠলাম আমি। ম্যাসেজের নোটিফিকেশন পুরো পাঁচ সেকেন্ড নিয়ে বাজলো। আমি কোনো মতে নোটিফিকেশন অফ করে সবার কথায় মনোযোগ দিবো কি? এর মাঝেই যেন ম্যাসেজ দাতার নম্বরটা দেখে চোখ আমার রসগোল্লা হয়ে গেলো। আজনাবির ম্যাসেজ!

—-” মিনতি ভরা আঁখি,
কে তুমি ঝড়ের পাখি~~
কি দিয়ে জুড়াই ব্যাথা~~
কি করে কোথায় রাখি!

চোখ ঝাপটে আবারও পড়লাম লেখাটা। লোকটা কবিতা লিখলো নাকি মনের দুঃখের বহিঃপ্রকাশ করলো?

৩২.

সন্ধ্যার দিকে নিতু আপুদের সাথে রাইও এলো। বাবার
অ/সু/স্থ/তা,বাবাকে হসপিটালাইজড করা ইভেন বাবাকে ইন্ডিয়া পাঠানো কোনো কিছুই রাই জানেনা। আমিও ওকে জানাতে পারিনি। হঠাৎ কার থেকে শুনে সোজা এখানে চলে এলো সে আন্দাজও আমার পক্ষে করা সম্ভব হলো না। আমাকে দেখতেই ইমোশনাল হয়ে গেলো! আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবার কথা বলে দু’ফোটা চোখের জলও বিসর্জন দিলো। সন্ধ্যা হতেই সবাই ছাদে উঠলো। আজ নাকি ছোট খাটো একখানা পিকনিকের আয়োজন করেছেন বাড়ির সবাই। আমি তো জানতাম-ই না! আর এই পিকনিকের খাতিরেই রাহিয়ান ভাইয়ার বাকি ফ্রেন্ডসরাও উপস্থিত হলেন এ-বাড়ি তে। ছাদে উঠতে উঠতে ভাবলাম সবাইকে হাতে হাতে সাহায্য করে দিবো। কিন্তু উঠে দেখি এ কি কান্ড! সব আয়োজন শেষ! বিকেল থেকে তো প্রত্যেকটা মানুষ নীচতলাতে থেকেই গল্পের আসর জমিয়েছে তবে এই আয়োজন কখন হলো?

রাই চারপাশ দেখছে আর চোখ জুড়াচ্ছে। সেই সাথে খানিক্ষন পর পর আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব কিছুর বর্ননা দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি রাইকে শুনছিনা! আমার দৃষ্টি রাহিয়ান ভাইয়াকে ঘীরে আবদ্ধ। উনি সেই বিকেল থেকেই এখনও অব্দি আমার সাথে ‘অ থেকে আ’ অব্দি বলেননি! এমনকি চোখ তুলেও তাকাননি পর্যন্ত। আমি কতবার উনার সামনে,পেছনে, আশে-পাশে থেকে এসেছি গিয়েছি কিন্তু উনি এককথায় ভ্রুক্ষেপহীন! এমন একটা হাবভাব করে রেখেছেন যেন নিধি নামের কোনো মানুষ এই দুনিয়াতেই নেই! নেই নেই নেই! উনার এমন ইগনোর করা বিহেভিয়ারে আমার মেজাজ তুঙ্গে চড়ে যাচ্ছে। আরে বাবা উনাকে কে বোঝাবে যে উনি আমার সাথে যে আচরনটা করেছেন সেটা মোটেই সঠিক ছিলো না! ভুল ছিলো! আর আমি তার জন্যই তো উনার উপর রিয়াক্ট করেছি! তাহলে উনার এমন তোতাপাখির মতো মুখ বুঁজে থাকার মানে টা কি?

—-” কি মানে টা কি?”

রাইয়ের হাতে ঝাঁকুনি খেয়ে প্রান পাখিটা ছুটি নেওয়ার ঘোষনা করে দিলো। চমকে উঠে দু’হাতে কোনো মতে চেপে ধরে লক করে দিলাম কলিজাটা। বুকে দু’তিনবার ফু দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে দিলাম এক ধমক!

—-” কি সমস্যা কি তোর হ্যাঁ?”

আমার ধমক খেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো রাই। ইশশ, খামখা নিজের দোষে বেচারিকে ধমকাচ্ছি! নিমিষেই গলার স্বর কোমল করে নিলাম। রাইয়ের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আদুরে গলায় বললাম,

—-” কি হয়েছে বলনা?”

—-” ছাড় আামর হাত! অকারনে ঝাড়ি মা/র/ছিস তুই! যা কথা নেই তোর সাথে!”

—-” না না! সরি সরি কলিজা। এভাবে রা/গ করিস না! আমি তো এক বিশেষ ভাবনায় আঁটকে ছিলাম! আর হঠাৎ করে তুই ডেকে উঠলি তাই না বুঝেই বকে….”

—-” রাই? ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এদিকে এসো না?”

আমার কথার মাঝপথেই লম্বা দেখে একটা বাঁশ এঁটে দিলো রাহিয়ান ভাইয়া। রাইকে ছলেবলে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ধান্দায়!

—-” হ্যাঁ ভাইয়া যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই আমার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো রাই। আমি অসহায় মুখ করে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ওকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু রাই আর ফিরে তাকাল না। সব হয়েছে এই লোকের জন্য! উনাকে নিয়ে ভাবছিলাম বলেই তো রাইয়ের উপর ধমকে উঠলাম! আর এখন আবার উনি এলেন বলেই রাইকে মানাতে পারলাম না! সব জায়গায় এসে বাগড়া দিয়ে চলেছে।

প্রচুড় রা/গ হচ্ছে উনার উপর। এই মুহুর্তে রাইয়ের জন্য হলেও উনাকে দুই এক কথা শুনিয়ে দিতে হবে। হবেই হবে। বেশ দম নিয়েই উনার দিকে তেড়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম। কিন্তু উনি আবারও টাইমিং করে আমার হাতেই আমাকে চড় খাওয়ার পায়তারা করে আমার সামনে থেকে চলে গেলেন! গেলেন তো গেলেন” কিন্তু কোথায় গেলেন? মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাওয়া! এটা কি মানুষ না জ্বীন!

আমার ফোন বাজছে! কিন্তু ফোন তো আমার হাতে না! বাজছে কোথায়? চারপাশে চাতক পাখির মতো চোখ বুলালাম। কিন্তু নজরে বিশেষ কিছুই এলো না! চটপট করে নীচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি অব্দি আসতেই লোডশেডিং হয়ে গেলো। চারপাশে সঙ্গে সঙ্গে ভূতুড়ে পরিবেশের মতো হয়ে উঠলো। আমি ভ/য়ে ছাদের দরজার সাথে সিঁটিয়ে গেলাম। আশেপাশে, সামনে, পেছনে কোথাও একটা মানুষ দেখছি না। শুধু তাদের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভ/য়ে আমার হাত পা কাঁপছে! কাউকে যে ডাকতেও পারছিনা! আর ওদিকে মনে হচ্ছে যেন আমার ফোনটা এখনো বেজেই যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে! ম/রা/র ঘাট_____ সব দোষ ঐ কলদাতার! বেটা একবার যদি কলটা পিক করতে পারি তবে তোকে আজ খাইছি আমি….

আর ভাবার সময় মিললো না আমার। প্রিয় প্রান পাখিটা এক টানে বেরিয়ে এসে হাতের ভাজে আঁটকে গেলো। কারোর হাতে হেঁচকা টান খেয়ে স্কার্ট সামলে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। ভ/য়ে/র দরুন ঘাম ছুটে গেলো! হাত পা খুব বিশ্রী ভাবে কেঁপেই যাচ্ছে। দোয়া-দরুদ যা ছিলো সবই পড়া শেষ কিন্তু প্রশ্ন হলো এমন অমানবিক কাজটা সামনে থেকে করছে কে? ধরাম করে বারি খেয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেলাম! নিজের হার্টবিটের শব্দে যেন কানটা এবার খসে পড়বে আমার। চোখ জোড়া খোলার সাহস না হলেও মুখ খোলার সাহস আছে! এমন দুঃসাহসিক ব্যাক্তিরও তো বোঝা উচিৎ সে কাকে নিয়ে এসেছে!

বিসমিল্লাহ বলে যেই না চেঁচাবো ওমনি দেওয়াল ভেঙে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার দশা হলো। মানুষ টা আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো! আমি কেঁপে উঠে দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরলাম আমার স্কার্ট। রা/গে, ঘৃ/না/য় চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে গাল ভেজালো মানুষ টার। সঙ্গে সঙ্গে সে ছেড়ে দিলো আমায়। আমি রা/গে ফুঁসতে ফুঁসতে হাত চালিয়ে দিলাম অন্ধকারেই! কিন্তু আমার হাত তার শরীরে লাগার আগেই সে ক্ষপ করে ধরে নিলো। আমায় হাত ধরে তার দিকে টেনে নিয়ে আবারও যেতে লাগলো কোথাও একটা। আমি অন্ধকারে পা বাড়ালেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছি। কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ ঝলমল করে উঠলো মহল। হঠাৎ আলো এসে চোখে পড়তেই চোখে সহ্য হলো না! একহাতে চোখ আড়াল করতেই মনে হলো মানুষ টার কথা! চোখ থেকে হাত সরিয়ে তার দিকে তাকাতেই ভেতরটা ধুক করে উঠলো! চারপাশ শূন্য হয়ে আছে।

আমি ব্যতীত এপাশ ওপাশে একটা মশাও নেই!! হঠাৎ হাতের দিকে চোখ পড়তেই ছোট একখানা চিরকুটের দেখা মিললো। বড় কৌতুহল নিয়েই মেলে ধরলাম চিরকুট টা! কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে চিরকুট টা কেবল ফাঁকাই রয়ে গেলো। উল্টো দিকে ঘুরিয়ে আবিষ্কার করলাম ছোট একটা সেন্টি খাওয়া ইমোজি! এটা আবার কি ধরনের ফাজলামি?

রেগেমেগে জায়গা ত্যাগ করে নিজের রুমে চলে এলাম। মানুষ টা কতটা বিকৃত মস্তিষ্কের ভাবতেই রা/গে পুরো দুনিয়া ওলট-পালট কর ফেলতে ইচ্ছে করছে।

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here