#প্রেয়সী
#পর্ব:১৮
#তানিশা সুলতানা
মুহিত পায়ের ওপর পা -তুলে আয়েশ করে চেয়ারে বসে পড়ে। জ্যোতিও কম যায়। সেও মুহিতের মতো বসে। বেজায় বিরক্ত মুহিত। কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো সে?
পা নামিয়ে বসে মুহিত। জ্যোতিও তাই করে।
মুহিত দুই হাত টেবিলের ওপরের রেখে জ্যোতির চোখে চোখ রেখে বলে
“প্রবলেম কি?
জ্যোতি নরেচড়ে মুহিতের মতো করেই বসে ‘ বলে
” আই এম ইন লাভ উইথ ইউ..
মুহিত বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ভালোবাসা টালোবাসা সে চায় না। জীবনে একটা মেয়েকেই ভালো লেগেছে তাকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখতে হবে। আবার দ্বিতীয় কাউকে ভালো লাগলে না জানি কি হিসেবে দেখতে হয়।
ভালোবাসা বড্ড ভয় পায় মুহিত।
জ্যোতি আবার বলে ওঠে
“আমি কিন্তু ফালতু মেয়ে না। জ্যোতি খান আমি। আমার আপনাকে ভালো লেগেছে মানে আমার আপনাকেই লাগবে। এট এনি কস্ট।
মুহিত অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে। কি বলে এই মেয়ে? একটুও ভয় করছে না তার?
” বাড়ি যাও
মুহিত গম্ভীর গলায় বলে।
“বিয়ে কবে করবেন বলুন? তারপর বাড়ি যাবো।
মুহিত হেসে ফেলে। জ্যোতি মুহিতের সেই সুন্দর হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে ” মাশাআল্লাহ ”
মুহিত নিজের ঝাঁকড়া চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে
“বাসায় যাও।
জ্যোতি মাথা নিচু করে ফেলে। তারপর রিনরিনিয়ে বলে
” রাতে কল করবো?
“রাত আসুক আগে
বলেই মুহিত চলে যায়। জ্যোতি তাকিয়ে থাকে। সে মুহিতকে ফলো করে। মিথির সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে তার অনেক আগেই। মিথির থেকেই মুহিতের সব খবরাখবর নেয়। এবং আজকে কি রংয়ের শার্ট পড়েছে এটাও জেনে নেয়।
__
কক্সবাজারের সুন্দর একটা রিসোর্টে উঠেছে মাহিম অধরাকে নিয়ে। সুন্দর করে খাটটা-সাজানো হয়েছে। দামি দামি ফুল মোমবাতি বেলুন। সব কিছু দিয়ে খুব নিখুঁত ভাবে সাজানো হয়েছে খাটটা। মাহিম অবশ্য এসবের কিছুই জানতো না। প্লানিং ও ছিলো না। সে তো টেনশনে মরছে। মাকে কিভাবে মানাবে৷
অধরা রুমে ঢুকতেই থমকে যায়। চারিদিকে নজর বুলাতে থাকে। মাহিমও তাই। তার গলা শুকিয়ে আসছে। মায়ের চিন্তা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। শরীর অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলো। মনটা ছটফটে হয়ে উঠেছে।
অধরা ঘাড় বাঁকিয়ে এক পলক তাকায় মাহিমের দিকে। এতোটা সে আশা করে নি। তার ধারণা ছিলো মাহিম দুটো রুম নিবে। কিন্তু হলো উল্টোটা।
মাহিম দরজা আটকে বড়বড় পা ফেলে ভেতরে ঢুকে সোফায় ধপ করে বসে পড়ে৷ টায়ার্ড লাগছে তার। সাথে অন্য রকম অনুভূতি।
অধরা এক পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় সে নুয়িয়ে যাচ্ছে।
তখনই মাহিমের ফোন বেজে ওঠে।
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে স্কিনে ভাই নামটা জ্বল জ্বল করছে।
মাহিম কল রিসিভ করে
ওপাশ থেকে ভেসে আসে মুহিতের হাসিমাখা কন্ঠ
“ব্রো সারপ্রাইজটা দারুণ হয়েছে না?
ত্রিশ হাজার খরচ পড়েছে আমার। তুমি পঞ্চাশ দিও।
মাহিম হালকা হাসে। তবে সেটা মুহিতকে বুঝতে দেয় না।
মুহিত আবার বলে
” আমি জানতাম তুমি কিপ্টা। বাসর না সাজিয়েই চাচ্চু বানিয়ে ফেলবে আমায়। তাই একটু কষ্ট করলাম। বাই দ্যা ওয়ে মাম্মা কে বলে দিয়েছি তোমাদের বিয়ের কথা।
মাহিম চমকে ওঠে। বুকটা কাঁপছে তার। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“মা
অস্ফুরণ কন্ঠে বলে মাহিম
” রিলাক্স ব্রো
মাম্মা ঠিক আছে। আমি বুঝিয়েছি। সে বুঝেছে। এতো ভীতু কেনো তুমি?
ভালোবাসলে ভয় পেতে হয় না। অধরাকে পেয়েছো তুমি। ভয়কে জয় করো।
মাহিম বলে
“হুমম
মাম্মা খেয়েছে?
” হুমমম খেয়েছে।
ব্রো আমিও একটা মেয়ে পেয়ে গেছি। নাম জ্যোতি। জানো আমার সাথে ম্যাচিং করে ড্রেসআপ পড়ে। কেমন পাগল বলো?
মাহিম এবার শব্দ করে হেসে ওঠে৷ মুহিতও হাসে। গম্ভীর গলায় বলে
“তোমরা ভালো থেকো ভাইয়া। খুব ভালো থেকো।
বলেই কল কেটে দেয়। মাহিম দীর্ঘ -শ্বাস ফেলে। ভাইয়ের মতি-গতি বোঝে না সে।
মাহিম এবার অধরার দিকে তাকায়। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে। এই যে মাহিম হাসলো। এই হাসিতেই আটকেছে অধরা। এটা কি জানে মাহিম। এতো বেশি কেনো ভালোবাসে ছেলেটাকে?
মাহিম কোমল স্বরে ডাকে
” অধরা
অধরা চমকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। মাথা নিচু করে ছোট্ট করে জবাব দেয় “হুমম”
“ব্যাগে শাড়ি আছে একটা। পড়ে আয়।
অধরা মাথা নাড়িয়ে ব্যাগ খুলে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। মাহিম এই ফাঁকে শরীফের সাথে কথা বলে নেয়।
সুন্দর করে শাড়ি পড়ে বের হয় অধরা। মাহিম ততক্ষণে চেঞ্জ করে নিয়েছে। অধরা বের হতেই মাহিমের চোখ আটকে যায়। কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে অধরাকে। শাড়িটা সে কিনেছিলো অনেক দিন আগে। এই দিনটার জন্য তুলে রেখেছিলো।
অধরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েই আছে।
মাহিম এগিয়ে আসে। কোলে তুলে নেয় তাকে। দুই হাতে মাহিমের গলা জড়িয়ে ধরে অধরা।
মাহিম নেশালো গলায় বলে
” বড্ড বেশি ভালোবাসি তোকে। ট্রাস্ট মি। আজকের পর থেকে তোকে কখনো কাঁদতে দিবো না।
অধরা মাথা রাখে মাহিমের বুকে। এখানেই শান্তি মেলে তার।
মাহিম অধরাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। হাত বাড়িয়ে লাইট বন্ধ করে ফেলে।
পূর্ণতা পায় দুজন মানুষের দীর্ঘ দিনের অপেক্ষা। শুরু হয় নতুন জীবন। যে জীবনে দুজন দুজনকে ভালো রাখার দায়িত্বে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
চলবে..
।।