#প্রেয়সী
#পর্ব:১৭
#তানিশা সুলতানা
মাহমুদা ছিলেন হাসিখুশি চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে৷ স্কুল কলেজ সব জায়গায় তার চঞ্চলতার জন্য বেশ পরিচিত ছিলো। ষোল বছর বয়সে তার জীবনে প্রথম প্রেম আসে। এক দেখায় মুগ্ধ হয়ে যায় সে। দুই ব্যাস সিনিয়র ছিলে আরিফ। মাহমুদা রোজ তাকে দেখতো। স্ব্প্ন সাজাতো। কিন্তু মনের কথা কাউকে বলতো না। এমনকি তার বন্ধুদেরও না
আরিফ মাহমুদার সাথে একদিন নিজ থেকে কথা বলে। ভাব জমায়, বন্ধুত্ব করে। মাহমুদা ভেবেছিলো তাকে বুঝি পছন্দ করে। তাদের বন্ধত্ব বাড়তে থাকে৷
একদিন আরিফ মাহমুদাকে বলে তার বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাবে। ঠিকানা দিতে এবং বাবার নাম্বার দিতে। মাহমুদা সেদিন ভীষণ খুশি হয়েছিলো। ভাগ্যকে বারবার শুকরিয়া জানাচ্ছিলো।
পরের দিনই আরিফ আর পরিবার নিয়ে মাহমুদাকে দেখতে যায়। লাল টুকটুকে শাড়ি পড়েছিলো মাহমুদা। মুখের ছিলো লজ্জার আভা।
কিন্তু যখনই জানতে পারলো আরিফ আসলে তার বড় ভাইয়ের জন্য মাহমুদার বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অসহায় হয়ে পড়ে। কান্না আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করে।
মেয়ে পছন্দ হওয়াতে আব্দুল্লাহ প্রস্তাব রাখে আজকেই কলমা দিয়ে নিয়ে যাবে। মাহমুদার বাবা মা অমত করে না। এতো ভালো সমন্ধ অমত করবে কি করে?
বিয়ে হয়ে যায় মাহমুদার। চলে আসে শশুড় বাড়ি। মনের মধ্যে একজনকে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করতে থাকে। তার চঞ্চলতা মিয়িয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে গম্ভীর রাগী বদমেজাজি।
দুটো সন্তান হয় তার। কিন্তু যখন আরিফ বিয়ে করে নিয়ে আসে। চোখের সামনে বড়য়ের সাথে খুনশুটি করে। তাদের ভালোবাসা সয্য করতে পারছিলো না মাহমুদা। শরীফকে অনেকবার বলেছে “চলো না আমরা আলাদা থাকি”
কিন্তু শরীফ তার কথা শোনে নি। ডিপ্রেশন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিলো তাকে। কাউকে বলতে পারে নি মনের কথা। কাউকে বোঝাতে পারে নি তার পরিস্থিতি। একা একা দুমড়ে মুচড়ে মরেছে।
মেয়ের জন্মের পরেই চাকরি পেলো। ভালো টাকা বেতন। এবার একটু শান্তি দরকার। তাই সে অযথা ঝগড়া করে ছেলে মেয়ে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলো শহরে। সুখ খুঁজে নিয়েছিলো সে।
শরীফ তারপর থেকে মাহমুদার সাথে সেভাবে যোগাযোগ করে নি। কখনো জিজ্ঞেস করে নি “কেমন আছো?
ফোন দিলে ছেলেমেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতো।
মাহমুদা ভেবে পায় না ” তার দোষটা কোথায়? তার কপালে সুখ কেনো লিখা থাকলো না? ভালোবাসা তো অপরাধ না। সে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে।
“যদি কপালেই না থাকবে তাহলে তাকেই কেনো ভালোবাসতে হলো?”
মুহিত মায়ের ডাইরিটা বন্ধ করে ফেলে। বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। এই ডাইরিটা বহু বছর আগেই মাহিম পড়ে ফেলেছি। তাই সে মাকে কখনো কষ্ট দেয় না।
মুহিত ডাইরিটা জায়গা মতো রেখে দেয়। মাহমুদা রান্না করছে। সে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ব্যস্ত মাহমুদা মুহিতকে দেখছে না। সে ব্যস্ত ভঙিতে কাজ করে যাচ্ছে। একটু পরেই তাকে কলেজে ছুটতে হবে।
মুহিত বলে ওঠে
“মাম্মা ভালোবাসি তোমায়
মাহমুদা থেমে যায়। হাতের খুনতিটা পড়ে যায়। পেছন ফিরে ছেলের দিকে তাকায়। কখনোই এভাবে বলে নি মুহিত। মাহিম বলে। কখনো রান্নাঘরে এসে দাঁড়ায় নি মুহিত। মাহিম দাঁড়িয়ে থাকে।
মুহিত মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরে। লম্বায় মাকে ছাড়িয়েছে সে কিছু বছর আগেই। মায়ের মাথাটা একদম মুহিতের বুকের মাঝে।
মাহমুদার চোখে পানি চলে আসে৷ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
জীবনে অনেক আফসোস রয়েছে তার। সব থেকে বড় আফসোস হলো ” ছেলের ভালোবাসা না পাওয়ার আফসোস ”
সেউ আফসোসটা কি এবার শেষ হলো? তার নাড়ী ছেড়া ধন তাকে ভালোবাসলো?
“মাম্মা আমি সত্যিই তোমায় অনেক ভালোবাসি।
মাহমুদা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মুহিতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
” রান্না শেষ করে কলেজে যেতে হবে।
বলে সে আবারও রান্নায় মনোযোগ দেয়। মুহিত মাকে দেখতে থাকে।
__
অধরা আর মাহিমের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়েছে আরও আধ ঘন্টা আগে। অধরা গাড়িতে বসে আছে।
মাহিমের বন্ধুরা চলে গেছে। মাহিম দূরে দাঁড়িয়ে মাহমুদার সাথে কথা বলছে। তার চোখ মুখ শুকনো। বোঝাই যাচ্ছে মাকে ঠকিয়ে সে অনুতপ্ত। হেরে গেছে সে ভালোবাসার কাছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ভয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিলো। সেই মুহুর্তে বিয়ে ছাড়া ভালোবাসা ধরে রাখার আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলো না।
কক্সবাজার থেকে ঘুরে এসে মায়ের পা জড়িয়ে ক্ষমা চাইবে সে।
কল কেটে গাড়িতে এসে বসে। অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
হাত বাড়িয়ে দেয়। অধরা মাহিমের শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতটা শক্ত করে হাতটা ধরে আঙুলের ভাজে আঙুল গলিয়ে দেয়। তৃপ্তির হাসি হাসে মাহিম৷ চুমু খায় অধরার হাতে উল্টো পিঠে।
“আমি মুহিতের মতো এতো সুদর্শন নই, স্মার্ট নই। ওর মতো ইমপ্রেস করতে পারি না। গুছিয়ে মনের কথা বলতে পারি না। তবে একটা কথা বলছি তোকে। আমার জীবনে তুই আর মা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারী নেই।
তোরা দুজন আমার কাছে সমানভাবে দামী। মা আমাদের সম্পর্ক মেনে না নিলে আমি জোর করতে পারবো না। বা তোকে নিয়ে আলাদা থাকতে পারবো না। আমি তোর থেকে সময় চেয়ে নিবো। মাকে বোঝাবো। আমার মা বুঝবে আমি জানি। তবে একটু সময় লাগবে।
সেই সময়টুকু তুই আমাকে দিবি?
অধরা দুরত্ব ঘুচিয়ে নিয়ে মাহিমের কোলে এসে বসে। গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলে
” হুমম পারবো।
মাহিম দুই হাতে আগলে নেয় অধরাকে। মাথায় পরপর কয়েকটা চুমু খায়।
“বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোকে।
” আমিও
__
ফেসবুকে বেশ কয়েকদিন যাবত একটা মেয়ে মুহিতকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। মেসেজের ওপর মেসেজ রিপ্লাই দিতে লেট হলে কল। প্রতিটা পোষ্টে কমেন্ট।একটা আইডি ব্লক করলে আরেকটা আইডি হাজির।
গতকাল রাতে মেয়েটার প্রবলেম জিজ্ঞেস করতেই সে বলেছে মিট করবে। মুহিত রাজি হয়েছে। দেখা করতে এসেছে মেয়েটার সাথে।
আধঘন্টা আগে মুহিত এসে রেস্টুরেন্টে বসেছে। এখনো মেয়েটার আসার নাম নেই। ভারি বিরক্ত মুহিত। দুই মগ কফি শেষ করেছে ইতোমধ্যে। এবার আর ধৈর্য্য কুলাচ্ছে না। তাই সে পরনের ব্লাক শার্টের কলার ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে দাঁড়িয়ে যায়। চলে যাবে এখন এখান থেকে।
এক পা বাড়াতেই তার সামনে হুরমুরিয়ে একটা মেয়ে একটা দাঁড়ায়।
গোল গোল চোখ করে সে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত ভ্রু কুচকে তাকায়। বয়স কতো হবে? ১৭-১৮। চিপচিপে গায়ের গড়ন। গোলগাল মুখখানা। ব্লাক জিন্স আর ব্লাক শার্ট পড়েছে। শার্টের নিচে সাদা টিশার্ট। একদম মুহিতের সাথে ম্যাচিং করে।
জুতো আর সানগ্লাস পর্যন্ত মুহিতের সাথে ম্যাচিং করে পড়েছে।
মুহিত পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে বলে
“হু আর ইউ?
মেয়েটা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বলে
” জ্যোতি
আপনাকে ফেসবুকে ডিস্টার্ব আমিই করি।
মুহিত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ডিস্টার্ব করে তাও আবার বড় গলায় বলছে।
চলবে
বানান ভুল থাকবেই থাকবে। যে চেক করে তাকে খুঁজেই পেলাম না আজকে৷ দেরি হয়ে যাচ্ছে। কারেন্ট চলে যেতে পারে। তাই এভাবেই দিয়ে দিলাম।