#প্রেয়সী
#পর্ব:১৩
#তানিশা সুলতানা
মাহমুদা মিথিকে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। আজকে সে অধরাকে মেরেই ফেলবে। তার সংসারটা ভেঙে দিচ্ছে বজ্জাত মেয়েটা। তার দুই ছেলেকেই বশ করে ফেলেছে। আজকে অধরাকে সে উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে। মায়ের মতোই চরিত্রহীন মেয়েটা। আজকে যদি চরিত্র ঠিক করতে না পেরেছে তাহলে তার নামও মাহমুদা না।
মিথি কিছুই বুঝতে পারছে না। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিঁয়ে আছে মায়ের দিকে। দাদু বাড়িতে কেনো নিয়ে আসলো অনেকবার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করতে পারে নি।
চৌধুরী বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি মেয়ের হাত ধরে। শরীফ সবেই বেরচ্ছিলো। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না বলে দুপুরে খাবার খেয়ে একটু শুয়েছিলো। কখন চোখ লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারে নি। মাত্রই ঘুম ভাঙলো তার। তারাহুরো করে রেডি হয়ে ছুটছিলো দোকানের উদ্দেশ্য।
মাহমুদাকে দেখে বেশ অবাক হয় তিনি। মিথিকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। মিথিও হেসে বলে ওঠে
“বাবা কেমন আছো?
শরীফ হাত বাড়িয়ে দেয়। মিথি মায়ের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বাবার কাছে চলে আসে। মাহমুদা রেগে গেলেও প্রকাশ করে না। সে এদিক সেদিক তাকিঁয়ে মুহিতকে খুঁজছে। মনি কিচেন থেকে বেরিয়ে মাহমুদাকে দেখে ভাবি বলে চেঁচিয়ে ওঠে। মাহমুদা চোখ মুখ শক্ত করে তাকাঁয় মনির দিকে। মনি এগিয়ে যায় মাহমুদার দিকে।
” ভাবি ভেতরে এসো। কতোদিন পরে আসলে তুমি। তোমাকে সত্যিই খুব মিস করি আমি। এসো এসো ভেতরে এসো।
মাহমুদার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে মনি। মাহমুদা কিছুই বলতে পারে না।
মাহিম বেরিয়ে আসে। মাহমুদাকে দেখে বলে
“মা তুমি এখানে?
মাহমুদা মাহিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়
” তুমি এখানে আছো। আমাকে বলে কেনো আসো নি? মাকে ভালো লাগছে না আর? হাঁপিয়ে গেছো?
মাহিম মাহমুদাকে হাত ধরে বলে
“আমি তো চলে যেতে চেয়েছিলাম তাই বলে আসি নি। তাছাড়া এখানে আসবো জানাছিলো না। একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম। ভাবলাম বাবাকে দেখে যাই।
মিথ্যে বলে মাহিম। মাকে সে কষ্ট দিতে চায় না।
মুহিত শিষ বাজাতে বাজাতে তার রুম থেকে বের হয়। সোফায় আয়েশ করে বসে বলে
” ব্রো তোমাকে একটা মেয়েকে কিস করতে দেখলাম। সেটাই কি কাজ ছিলো?
মাহিম বিষয় খায়। বাকিরা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। মাহমুদা মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহিম শক্ত গলায় মুহিতকে বলে
“মুখটা বন্ধ রাখবে তুমি?
” আমি মুখ বন্ধ রাখলে মাম্মা তুমি কিন্তু দুদিন পরে জানতে পারবা দিদুন হচ্ছো। তখন কি করবে তুমি? তোমার ডান হাত তোমাকে পল্টি মেরে দিবে যে।
মাহমুদা ভয় পেয়ে যায়। মাহিমের ইচ্ছে করছে মুহিতের গালে দুই চারটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।
মিথি শরিফের সাথে চলে যায়। এদের ঠোঁট কাটা কথা শুনতে রাজী না তারা।
মাহমুদা মুহিতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়
“বউ না কি দেখাবা?
মুহিত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে
” বউ দেখে তো তুমি সেন্স লেস হয়ে যাবে না? আমার বউয়ের রূপের আগুনে যদি তুমি জ্বলে যাও।
“আমি তোমার মা হই। ঠিক করে কথা বলো
” আমার বউয়ের তো শাশুড়ী হবে।
মাহমুদা কথা খুঁজে পায় না। তার ছেলে এরকম বাঁদর হলো কি করে?
“মা তুমি এসো আমার সাথে। ও পাগল হয়ে গেছে। ওর কথায় কান দিতে হবে না।
মাহিম মাহমুদাকে নিয়ে চলে যায় তার রুমের দিকে। মুহিত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” মধু খেতে ভালো লাগে কিন্তু স্বীকার করতে ভালো লাগে না। ব্যাপার না আমি আছি তো।
মাহমুদা আজকে থেকে যাবে এখানে। না থেকে উপায় নেই। রাত হয়ে গেছে। তাছাড়া দুই ছেলেকে বাঘের গুহায় রেখে সে কিছুতেই যাবে না। ছেলেদের সাথে নিয়েই এই বাড়ি ছাড়বেন তিনি।
মাহমুদা আসার খবর পেয়ে বাড়ির সবাই ভীষণ খুশি। হৈ-হুল্লোড় লেগে গেছে। মনি আর শিলা রান্না করছে সব মাহমুদার পছন্দের। মমতা বেগম মাহমুদার সাথে কথা বলার জন্য তার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কিন্তু মাহমুদা কথা বলছে না। সে বিরক্ত এটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
মুহিতের কষ্ট হয়। খারাপ লাগে। এই মানুষ গুলো এতো ভালোবাসে তাকে অথচ কি সুন্দর তাদের ছেড়ে থাকেন উনি। কিসের লোভে? কিসের দাপটে? তাদের তিন ভাইবোনকে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করেছে। পরিবার থেকে দূরে রেখেছে। যা উনি একদম ঠিক করেন নি। ভুল করেছে।
অধরা সবেই রুম থেকে বের হয়েছে। এতোক্ষণ সে পড়েছে। সামনেই ইনকোর্স পরিক্ষা।
ড্রয়িং রুমে মাহমুদাকে দেখে চমকে ওঠে অধরা। খানিক টা দূরে মিথি বসে গল্প করছে শরীফের সাথে। দুজনের চোখে মুখেই খুশির আমেজ। শরীফ মেয়ের জন্য আর দোকানে যায় নি।
অধরা দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে কোন দিকে যাবে কি করবে বুঝতে পারছে না। মাহমুদার সামনে গেলে যদি দুই চারটা থা*প্পড় মেরে দেয়?
মুহিত খেয়াল করে অধরাকে। সে এক গাল হেসে বলে
“অধরা কি সুন্দর লাগছে তোমায়। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম।
এবার সবার নজর অধরার দিকে। অস্বস্তিতে পড়ে যায় অধরা। মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলে। কেউ ব্যাপারটা সিরিয়াসলি না নিলেও মাহমুদা নেয়। তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে।
তখনই হুইল চেয়ার ঠেলে সেখানে উপস্থিত হয় আব্দুল্লাহ। সে মাহমুদাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করে
” মা ভালো আছো?
মাহমুদা জবাব দেয় না। তাকাঁয় না পর্যন্ত। অপমানিত হয় আব্দুল্লাহ। হাসি মুখটা চুপসে যায়।
রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে মুহিত। মা না হলে এতোক্ষণে গায়ে হাত তুলে ফেলতো।
শরীফ আহত হয়।
মিথিকে ইশারা করে দাদুর কাছে যেতে। মিথি যায়। দাদুকে জড়িয়ে ধরে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে আব্দুল্লাহর মন খারাপ ঠিক হয়ে যায়।
আর তখনই বোমা ফাটায় মুহিত।
সে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে
“আমি অধরাকে বিয়ে করতে চাই।
সবাই স্তব্ধ হয়ে যায় মুহিতের কথায়। অধরা চোখ বড়বড় করে মুহিতের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাহিম খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। এই মুহুর্তে সে নিজের মধ্যে নেই। ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয় মনের মধ্যে জেগে উঠেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির সবাই রাজী হয়ে যাবে এটা জানা মাহিমের।
কি করবে সে এখন?
মাহমুদা দাঁড়িয়ে যায়।
” মুহিত পাগলামির একটা সীমা থাকা দরকার।
“মাম্মা রিলাক্স
পাগলামির তো এখনো কিছুই দেখলে না। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী
শরীফ হেসে ফেল। নিজের জায়গা থেকে উঠে ছেলের পাশে এসে বসে
” আমার বাজান প্রথমবার তার ইচ্ছের কথা জানিয়েছে আর আমি তা পূরণ করবো না? ধুমধাম করে বিয়ে দিবো তোদের।
অধরা মাহিমের মুখের দিকে তাকায়। মাহিম কেনো কিছু বলছে না?
মাহমুদা তেরে এসে বলে
“এই মেয়েকে বিয়ে করলে আমার মরা মুখ দেখবে তুমি।
“তুমি যে ভীতু মাম্মা। সুইসাইড তোমাকে দিয়ে হবে না।
মাহমুদা ভাষা হারিয়ে ফেলে মুহিতের একেকটা কথায়।
চলবে
ফলো করুন 👉 Ahmmed Kabbo