প্রেম প্রেম পায় পর্ব ২০

0
983

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব বিশ

২০.
একটু বেলা করে ঘুমাতে চেয়েছিল ফায়াদ। কিন্তু তা আর পারলো কোথায়। সাত সকাল বেলা মা কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে।তাও আবার বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কান্না করছে। ফায়াদ বিরক্ত হয়ে তার সামনে বসা ফারাজের দিকে তাকালো। ফারাজ নির্বোধ বালকের মতো একটা লুক দিল।
ফারাজ এসেছে সকাল বেলা।দরজা খুলেই ফারাজের দেখে এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলেন ফায়াদ এটা। পরক্ষনেই হাসি দেখে বুঝে গেলেন এটা ফারাজ৷ খুশিতে কান্না করে দিয়েছেন তিনি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে এক দফা কাদলেন।তারপর ফায়াদকে জানাতে এসে তার রুমে আবার কাদছেন। ফারাজের আসার খুশিতে আখি বেগম ভুলেই গেছেন যে ফায়াদ তাকে গত রাতে বলেছিল যে সে আজ বেলা করে ঘুমাবে।তাকে যেন না ডাকে। অথচ আখি বেগম তাকে ডেকে কান্না করায় ব্যস্ত।
ফায়াদ এবার অতিষ্ঠ হয়ে বলল,
‘মা! আর কতোক্ষণ?’

আখি বেগম ফোপাতে ফোপাতে বললেন,
‘কতোবছর পর মায়ের কথা মনে পড়ছে এর! এবার আর যেতে দিব না। আমার জোড়া বাচ্চা দুটো আর আলাদা হতে দিব না।’

ফারাজ এসে মাকে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘যাবো না আর। এবার তো থামো!’

ফায়াদ বলল,
‘মা কান্নাকাটি থামাও।আর আমাকে একটা কফি এনে দাও। বলছিলাম ডাকতে না। এখন মাথা ধরে গেছে আমার।’

আখি বেগম উড়না দিয়ে মুখ মুছে বললেন,
‘যাচ্ছি। আর ফারাজ বাবা তুই এই রুমেই থাক আপাতত। তোর রুমটা পরিষ্কার করা হয় নি। বলে আসবি তো ফাজিল!’

ফারাজ ফাজলামো করে বলল,
‘বলে আসলে তো আর তোমাকে কাদাতে পারতাম না!’

‘বদ’মাশ বদ’মাশই থাকবি তুই!’

বলে উঠলেন তিনি রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য। অনেক কাজ। এতো বছর পর তার ছেলে এসেছে অনেক রান্না করতে হবে। সব আজ একসাথে খাইয়ে শোধ নিবেন তিনি। যাওয়ার পথে নীতিকে চোখে পড়লো তার। নীতিকে দেখেই ভ্রু কুচকে তাকালেন তিনি।
নীতি এতোক্ষণ এক কিনারে দাঁড়িয়ে মা ছেলেদের কীর্তি দেখছিল। ফায়াদ আর ফারাজকে দেখে অবাক সে। দুজনের মধ্যে এতো মিল! আলাদা করা মুশকিল। এদেরকে শুধু কাছের মানুষই আলাদা করতে পারবে।
আখি বেগম ফারাজের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো।ফারাজ উত্তর দিল,
‘নীতির কথা বলেছিলাম না?’

আখি বেগম এর মুখে এবার হাসি ফুটলো। তিনি নীতির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে বলে উঠলেন,
‘গল্প করার সঙ্গি পেয়ে গেছি। এখন আর আমাকে পুরো বাড়িতে একা একটা মেয়ে থাকতে হবে না।’

নীতি অবাক হলো আখি বেগমের সাবলীল ব্যাবহার দেখে। ফারাজ হেসে দিল মায়ের কান্ডে।আখি বেগম এবার নীতি কে বললেন,
‘তুমি আমার সাথে আসো। এদের সাথে থেকে মারামারি ছাড়া কিছু দেখতে পাবা না। চলো!’

বলে তিনি আগে চলে গেলেন ফায়াদের রুম থেকে।
নীতি ফারাজের দিকে তাকালো। ফারাজ তাকে মায়ের সাথে যেতে বলল ইশারায়। নীতি বেরিয়ে গেল আখি বেগমের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

নীতি রুম থেকে বের হতেই ফায়াদ ফারাজের পিঠে ধুম করে দিল এক কিল। ফারাজ শব্দ করে উঠলো,
‘উফফ! মারিস কেন?’

ফায়াদ বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘এতো সকালে আসছিস কেন?’

ফারাজ বাচ্চাদের মতো করে বলল,
‘ভাই! আমি বাংলাদেশ এসে পড়ছি।’

ফায়াদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষণেই হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। পিঠ চাপড়ে বলল,
‘ওয়েলকাল ব্যাক, ফারাজ!’

আখি বেগম কফি বানিয়ে কাপে ঢালছেন৷ সেটাই দাড়িয়ে দেখছে নীতি। আখি বেগম প্রশ্ন করলেন,
‘তুমি ফারাজের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলে তাই না?’

‘জি’

আখি বেগম নীচু স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘ফারাজ কি কোনো কিছুতে জড়িয়ে গিয়েছে সেখানে? মানে খারাপ কিছু?’

আখি বেগমকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। নীতি উনার চিন্তা কমাতে বলল,
‘না আন্টি। স্যার বেশির ভাগ কাজেই ডুবে থাকতো৷ আর মন খারাপ থাকলে গানে ডুবে যেত৷ কিন্তু খারাপ কিছুতে দেখি নি উনাকে।’

আখি বেগম স্বস্থির নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।ফারাজকে নিয়ে তার বড্ড চিন্তা হতো।যাক ছেলেটা খারাপ কিছুতে জড়ায় নি। আখি বেগম তিন কাপ কফি ট্রে তে করে ধরায় দিলেন নীতির হাতে।বললেন কফি নিয়ে ফায়াদ আর ফারাজকে দিতে আর নিজেও খেতে।আখি বেগম ব্যস্ত হয়ে গেলেন মহা আয়োজন করতে। দুইমাত্র ছেলে তার ফিরে এসেছে।খুশি খুশি সব কাজ করছেন তিনি। আখি বেগমের মুখে হাসি দেখে নীতির ভালো লাগলো।

নীতি কফি নিয়ে রুমে নক করতে গিয়ে তার চোখ কপালে। ফায়াদ ফারাজকে বিছানার সাথে উলটো করে চেপে তার হাত পিছন দিকে মুচরে ধরেছে৷ ফারাজ ছুটার জন্য চেচামেচি করছে।ফায়াদ বলছে,
‘এখন বল ডাক্তারদের শক্তি কম কিনা?’

ফারাজ ব্যাথায় অস্থির হয়ে বলল,
‘না না ভুল হয়ে গেছে। অনেক বেশি শক্তি।ছাড় ভাই!’

ফায়াদ আরো কিছু বলতে যাবে কিন্তু দরজায় নীতি কে দেখে ফারাজকে ছেড়ে দিল। নীতির উদ্দেশ্যে বলল,
‘ভিতরে আসো নীতি।’

নীতি এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে জানতো ফারাজ অনেক শক্তিশালী কারন সে ফারাজকে ওয়ার্কআউট করতে দেখেছে অনেকবার। তাকে এভাবে পরাজয় স্বীকার করতে দেখে অবাক হলো।ফায়াদ নীতি কে জিজ্ঞাসা করলো,
‘কেমন আছো?’

নীতির মুখে এখনো অবাকের রেশ। সে নিজেকে সামলে বলল,
‘এইতো ভালো।’

কফি দিতে দিতে কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে নীতি জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
‘স্যারকে এভাবে মারছিলেন কেন?’

ফায়াদ উত্তর দেওয়ার আগেই ফারাজ বিচার দেওয়ার মতো করে উত্তর দিল,
‘কারন আমি বলেছি ডাক্তারদের শক্তি থাকে না৷ তারা বসে বসে রোগী দেখতে দেখতে দুর্বল হয়ে যায়। এখানে আমাকে মারার কি আছে বলেন তো!’

ফায়াদ বাকা হেসে বলল,
‘প্রমাণ এখনো হয় নি মনে হয়? আরো কিছু উদাহরণ লাগবে নাকি ডাক্তার শক্তিশালী হয় কিনা!’

ফারাজ ঢোক গিলে বলল,
‘না’

নীতি খিল খিল করে হেসে উঠলো।হেসে বলল,
‘আপনি জোস তো ভাইয়া!’

ফারাজ গাল ফুলালো নীতির কথায়। ফায়াদ হেসে দিল। সেই মুহুর্তে ফায়াদের ফোন বেজে উঠলো। ফায়াদ তাকিয়ে আছে স্ক্রিন এর দিকে।রিসিভ করলে এদের সামনে কথা বলা মুশকিল। ফায়াদকে এভাবে স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারাজ বলল,
‘রিসিভ করিস না কেন?’

ফায়াদ ফোন রেখে দিয়ে বলল,
‘পরে করবো।’

বলতে বলতে ফোনটা আবার বেজে উঠলো। ফারাজ ফায়াদের ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
‘পরে করবি কেন এখন কর।’

ফোনের নাম্বার দেখে বলল,
‘আচ্ছা!! তো এই ব্যাপার।’

বলে ফোনটা রিসিভ করে ফেলল।লাউড স্পিকারে দিয়ে ফায়াদকে ইশারায় বলল কথা বলতে। ফায়াদ রাগীভাবে তাকালো ফারাজের দিকে। ফারাজ পাত্তা দিল না।নীতি দেখছে কি হয়!
অপরাজিতা ফোনের ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে।ফায়াদ এবার বলল,
‘হুম বলো।’

অপরাজিতা বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘কখন থেকে হ্যালো হ্যালো বলছি!’

ফায়াদ একবার ফারাজ ও নীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ঘুমোচ্ছিলাম!’

এবার অপরাজিতা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
‘জ্বর কমেছে?’

ফায়াদ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘জ্বর নেই।’

জ্বর নেই শুনে অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কি হাস্পাতালের গিয়েছেন?’

‘না’

‘হুম ভালো করেছেন। আজ রেস্ট করেন। জ্বর থাকলে আরেকটা মিডিসিন নেন।আমি ক্লাস করতে যাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ’

ফায়াদ মুচকি হেসে বলল,
‘আল্লাহ হাফেজ’

ফোন কাটতেই ফারাজ বলে উঠলো,
‘ডাক্তারকে মিডিসিন নেওয়া শিখাচ্ছে বাহ! এই তাহলে তোর পুচকি ফুল!’

ফায়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার সঠিক করে বলল,
‘অপরাজিতা নাম তার!’

ফারাজ বলল,
‘আচ্ছা যাই হোক দেখা করবো তার সাথে। সে নিশ্চয়ই জানে না তোর মতো দেখতে হুবহু একটা ভাই আছে?’

ফায়াদ কপালে ভাজ ফেলে প্রশ্ন করলো,
‘তো?’

ফারাজ উত্তর দিল না।বাকা হাসলো।নীতি বোঝার চেষ্টা করছে ফারাজ আসলে কি করবে। কারন ফারাজকে এতো চঞ্চল সে কখনো দেখে নি তাই কি করবে তার জানা নেই। তবে মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো শয়তা’নি বুদ্ধি পাকছে তার মাথায়।

দুপুরের একটু আগে ফায়াদকে নিয়ে টানাটানি করছে ফারাজ।
‘আরে একবারই তো। চল ভাই!’

ফায়াদ বলল,
‘কোনো লাভ হবে না।ওর মাথায় শয়তান তোর থেকে বেশি ঘুরে। সে বুঝে যাবে।’

‘বুঝবে না চল তুই!’

ফায়াদ শ্বাস ফেলে বলল,
‘চল!অল দ্যা বেস্ট’

ফারাজ নীতিকে বলল,
‘আপনিও চলেন নীতি।ঘুরাবো।’

দুপুরবেলা ক্লাস শেষ হতেই অপরাজিতা দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। রিকশা যেন একটাও নেই রাস্তায়। হঠাৎ তার সামনে এসে দাড়ালো ফায়াদ। ফায়াদকে দেখে অবাক হলো অপরাজিতা।
‘ আপনি কেন এসেছেন! বাসায় না রেস্ট নিতে বললাম!’

ফায়াদ একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
‘একটা কাজে এসেছিলাম। তাই ভাবলাম দেখা করে যাই। ‘

‘ওহ। আমি কতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। একটা রিকশাও পাচ্ছি না। ‘

ফায়াদ বলল,
‘আসেন পার্কে যাই পাশের। বাসায় একটু পরে যেয়েন।’

অপরাজিতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
‘ এভাবে আপনি সম্বোধন করছেন কেন?’

ফায়াদ ভুল ঠিক করার মতো করে বলল,
‘অহ স্যরি। চলো।’

অপরাজিতা বলল,
‘চলেন!’

তারা পার্কে একটা বেঞ্চে বসলো।অপরাজিতা বলল,
‘আপনাকে আজ দেখবো ভাবি নি৷’

ফায়াদ দাত বের করে হেসে বলল,
‘মিস করছিলেন?’

অপরাজিতা কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে ফায়াদের দিকে। বলল,
‘মিস তো করেছি কিন্তু…’

‘কিন্তু?’

অপরাজিতা চুল টেনে ধরলো সামনের ব্যাক্তির।চুলে টান দিয়ে বলল,
‘আপনি কে?আমার ডাক্তার কোথায়?’

‘আ আয়া ছাড়েন।আমিই তো ফায়াদ ‘

অপরাজিতা ভয় পাচ্ছে। তবুও সে বলল,
‘না। মিথ্যা!.ফায়াদ এরকম না।’

সে আরো জোরে টান দিল চুল। ব্যাথায় চিল্লিয়ে ডাকলো,
‘ভাইই বাচা! তোর ফুল আমার মাথা ছিড়ে ফেলল।’

ফায়াদ পিছন থেকে এসে বলল,
‘আগেই বলেছিলাম এই প্ল্যান কাজে আসবে না।’

অপরাজিতা একবার তার পিছনে ফায়াদের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার হাতের মধ্যে যার চুল ধরে আছে তার দিকে তাকাচ্ছে।কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। ফায়াদের সাথে আবার একটা মেয়েও দাঁড়িয়ে আছে।

ফায়াদ অপরাজিতাকে তার সেই স্বভাবসুলভ গম্ভির কন্ঠে আদেশের মতো করে বলল,
‘ছেড়ে দাও। ‘

শুনে অপরাজিতা সাথে সাথে ছেড়ে দিল।ছাড়া পেয়ে ফারাজ গিয়ে তার ভাইয়ের পাশে দাড়ালো। অপরাজিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পাশাপাশি দুজন একইরকম দেখতে মানুষের দিকে। নীতি ফায়াদের পাশে দাড়ানো ছিল। সে এবার অপরাজিতার পাশে দাড়ালো। অপরাজিতা তীক্ষ্ণ চোখে একবার নীতির দিকে তাকিয়ে আবার দুজনের দিকে তাকালো।
অপরাজিতা কিছু সেকেন্ড ভাবনায় ব্যায় করে ফায়াদের উদ্দেশ্যে রাগী সুরে বলল,
‘আপনার ভাই আছে বলছিলেন কিন্তু জমজ সেটা তো বলেন নাই।’

ফায়াদ মাথা চুলকে বলল,
‘খেয়াল ছিল না!’

ফারাজ এর মধ্যে বলে উঠলো,
‘আপনার এতো শক্তি কেন বলেন তো! মাথা ব্যাথা বানিয়ে দিলেন!এতো তাড়াতাড়ি বুঝলেন কিভাবে।কথা ই তো শুরু করি নি ভালোভাবে।’

অপরাজিতা দুঃখিত হয়ে বলল,
‘স্যরি আপনি আসলে উনি সাজছেন ভেবে রাগ লাগছিল সাথে ভয়ও। আপনাদের চেহারা এক হলেও স্বভাব মিলে না।আপনার কথার স্টাইল, এক্সপ্রেশন উনার থেকে ভিন্ন।তার থেকে বড় কথা আপনার এক কান ফুটো করা। আর..’

নীতি এবার কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলো,
‘আর?’

অপরাজিতা অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
‘ফা ফায়াদের আমার প্রতি চাহনী অন্য রকম।’

ফারাজ অবাক হয়ে ফায়াদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘এই বুদ্ধির ডিব্বা কোথায় পাইলি তুই?ভাবছিলাম একটু বোকা বানাবো কিন্তু উনি উলটা আমার চুল টেনে দিল।’

অপরাজিতা লজ্জিত হলো।ফায়াদ অপরাজিতার অবস্থা বুঝতে পেরে ফারাজকে বলল,
‘পাশে একটা ক্যাফ আছে। নীতিকে নিয়ে গিয়ে বস। আমি আসছি।’

ফারাজ আর নীতি যেতেই ফায়াদ অপরাজিতার কাছে এসে বলল,
‘be easy!’

অপরাজিতা অভিযোগের সুরে বলল,
‘আপনি কেন রাজি হলেন এই ফালতু প্র‍্যাংকে?উনি এখন কি ভাব্বে। ‘

ফায়াদ অপরাজিতা গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘কিছুই ভাবে না।এখন হয়তো বুঝে গিয়েছে তুমি আমাকে কত ভালোভাবে চেনো। ‘

অপরাজিতা ফায়াদের শার্টের এক কোনায় ধরে নিচু স্বরে বলল,
‘আমি ভয় পেয়েছিলাম ভেবেছিলাম কে না কে।যখন ভাই ডাকলো তখন হিসাব মিলাতে পারলাম’

ফায়াদ হেসে দিল। সে অপরাজিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাটা শুরু করলো।ফলে অপরাজিতাকেও পা মিলাতে হলো।হাটতে হাটতে ফায়াদ অপরাজিতাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এখন লাগছে ভয়? আমি যদি ফায়াদ না হই?’

অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকিয়ে চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল,
‘আমার আপনাকে চিনতে কখনো ভুল হবে না।’

ফায়াদ অপরাজিতা হাতে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো। অপরাজিতা হাটতে হাটতে গানের মতো করে বলল,
‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো বলেন তো!’

ফায়াদ সামনের দিকে চোখ রেখেই তার স্বভাবসুলভ কন্ঠে বলল,
‘মোটেও ভালো হতো না। বিয়ের বরযাত্রী দেখতে চাইলে এই পথ শেষ করে তোমার বাড়ির পথ ধরতে হবে।’

অপরাজিতা খিল খিল করে হেসে উঠলো। সেই হাসির শব্দ মন দিয়ে শুনলো ফায়াদ।এই বাচ্চা মেয়েটাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে ভাবতেই মনে শিতল হাওয়া বয়ে যায়। ভালোবাসার অনুভূতি এতো সুন্দর কেন?
ফায়াদ হাটা থামালো। অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকালো হাসি মুখে। ফায়াদ অপরাজিতার দিকে এক কদম এগিয়ে তার দিকে কিছুটা ঝুকে সোজা অপরাজিতার চোখে তাকিয়ে ধীর স্বরে তার গম্ভির পুরুষালি কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমার প্রতি আমার চাহনী কেমন?’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here