প্রেম প্রেম পায় পর্ব ২

0
1199

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব দুই

২.
অপরাজিতা তখন ক্লাস টেনে নতুন উঠেছে। এমনিতেই এই বয়সী মেয়েরা একটু উড়ে বেড়াতে পছন্দ বেশি করে। অপরাজিতাও তার বিপরীতে নয়। বরং সে একটু এডভান্স। চঞ্চলতা যেন তার জন্মের পর থেকেই সঙ্গী।
একদিন হয়েছিল এমন যে স্কুল ছুটির সময়ে গেটেই তার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে।ছেলেটা তার সাথে আগে পড়তো এখন অন্য কোথাও পড়ে। ছেলেটা তাকে একটু ভয় পায়৷ কারন সে একদম পাগল বানিয়ে ছাড়ে যে কাউকে কথার ঠেলায়।ছেলেটাকে দেখেই সে ডাক দিল।
‘রিজু’

অপরাজিতাকে দেখে রিজু যেন একটু পালাতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই অপরাজিতা তার সামনে এসে পরলো।এসেই অবাক হয়ে বলল,
‘চিনিস নি আমাকে? আরে আমি অপরাজিতা। ওই যে ক্লাসে সবচেয়ে ভদ্র,তোর খুব ভালো বন্ধু!’

রিজু মেকি হাসি দিয়ে বলল,
‘হ্যা হ্যা চিনেছি।ভদ্র! ভালো বন্ধু আমার!’

রিজুর এখনো মনে আছে এই মেয়েটা তাকে একবার লবন ভর্তি ফুচকা খাইয়েছিল। সুযোগ পেলেই নাকানি চুবানি খাওয়াতো। আসলে রিজু খুব ভদ্র গোছের তাই জালিয়ে খুব মজা পেত।

‘এইতো চিনতে পেরেছিস। তা এখনো কি আগের মতো বিড়াল দেখলে উল্টাপাল্টা দৌড় মারিস?’

রিজু পারছে না এখান থেকে ছুটে চলে যেতে।সেই ছোট থাকতে একবার ক্লাসে একটা বিড়াল ঢুকে যাওয়ায় সে ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করেছিল। সে কথা মনে রেখে এই মেয়ে এখনো তাকে চেতাবে।
রিজু কথাটা এড়িয়ে গিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ওসব বাদ দে। কেমন আছিস?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।তুই এখানে কেন?’

‘আমার ছোট বোন এখানে পড়ে। আজ ফুপির বাসায় যাব৷ তাই কাজিন নিতে আসছিল।বোনকে নিয়ে ভাইয়ার সাথে সোজা তার বাসায় যাব।’

‘ওহ! তোর ভাই কই?’
আশে পাশে তাকাতে তাকাতে জিজ্ঞেস করলো অপরাজিতা।

এরই মধ্যে রিজুর বোন এসেছে। এসেই অপরাজিতা কে দেখে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘আরে আপু!’

‘ রাফিয়া!’

‘হ্যা ভাইয়াকে চিনো তুমি!’

অপরাজিতা কিছু বলার আগেই রিজু রাফিয়াকে বলল,
‘তুই কিভাবে চিনিস অপরাজিতাকে?’

‘কি যে বলো ভাইয়া? আপুকে কে না চিনে? আপু এতো সুন্দর নৃত্য করে। আবার কেউ বিপদে পড়লে তাকে অনেক সাহায্য করে৷ আমাকেও একবার সাহায্য করেছিল৷’

অপরাজিতা যে ভালো মনের মেয়ে এটা রিজু জানে৷ মেয়েটা একটু দুষ্ট এই আর কি।নৃত্য এর ব্যপারে সে জানে না। আগে করতে দেখেনি। এখন হয়তো করে। তাদের কথা বলার মাঝে একজন এসে বলল,,
‘ রাফিয়া এসেছিস তাহলে। গাড়িতে যা। আম্মু ফোন দিচ্ছে। বাসায় যেতে হবে৷’

কন্ঠ শুনে অপরাজিতা পিছে ঘুরে দেখে বিয়ে বাড়ির সেই লোকটা যার নাম কিনা ফায়াদ। ফায়াদের হাতে আইস্ক্রিম। মূলত সে আইস্ক্রিম কিনতেই গিয়েছিল।ফায়াদ অপরাজিতা কে দেখে ভ্রু কুচকালো।সে চিনতে পেরেছে মেয়েটাকে। ফায়াদ কে দেখেই অপরাজিতা ফট করে বলে উঠলো,
‘আরে বউ না পাওয়া ভাইয়া!’

কথাটা যেন রিজুর মাথার উপর দিয়ে গেল।
অপরাজিতার কথা শুনেই ফায়াদের মেজাজ চড়ে গেল। এই মেয়েটাকে সে চিনেও না ভালোভাবে।তবুও সে শান্ত ভাবে বলল,
‘তুমি আমাকে চিন?’

অপরাজিতা সহজ ভঙ্গীতে বলল,
‘না তো’

‘তাহলে কোন সাহসে আমার সাথে এভাবে কথা বলছো?’

এরকম শক্ত কথা শুনে অপরাজিতা একটু অপমানিত বোধ করলো। সে তো মজা করছিল। যাদের সাথেই এরকম মজা করেছে সবাই সহজ ভাবেই নিয়েছে।অনেকে পালটা মজাও করেছে। এভাবে কেউ কখনো বলে নি।সে বুঝতে পারলো এভাবে অচেনা কারো সাথে মজা করা উচিৎ হয় নি। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মিন মিন করে বলল,
‘ভুল হয়েছে’

মেয়েটার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার একটু মায়া লাগলো।হয়তো বেশি শক্ত ভাবে বলে ফেলেছে। তবুও সে পাত্তা দিতে চাইলো না। রিজুকে বলল,
‘গাড়ি ওদিকে।রাফিয়াকে নিয়ে চল।’ বলে হাটা দিল সে।’

রিজুর অপরাজিতাকে এভাবে চুপ করে যেতে দেখে খারাপ লাগলো। সে জানে না ভাই আর অপরাজিতার পরিচয় কিভাবে। তবে অপরাজিতা তো এমনি মজা করছিল। রিজু অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে হাটা ধরলো।রাফিয়ারও মনটা খারাপ হয়ে গেল। রাফিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে রিজু ফায়াদকে ডাকলো,
‘ভাইয়া!’

‘হুম’

‘অপরাজিতা একটু দুষ্টু তবে সে খারাপ না। হয়তো তোমাকে কিছু নিয়ে মজা করতে চেয়েছিল।তুমি পছন্দ করবেনা এটা বুঝতে পারে নি।’

‘অপরাজিতা?’

‘ওইযে মেয়েটা মাত্র যে দেখলে।আমার ক্লাসমেট ছিল।’

রিজুর কথা শুনে রাফিয়াও বলে উঠলো,
‘তোমার এভাবে বলা উচিত হয় নি ভাইয়া।আপু অনেক ভালো। তুমি তাকে কষ্ট দিয়েছো। গিয়ে স্যরি বলো।’

ফায়াদ অবাক হয়ে বলল,
‘সে না হয় বুঝলাম সে এমনি কিন্তু তাই বলে আমার সাথে মজা নিতে আসবে?’

রাফিয়া ভেঙচি কেটে বলল,
‘সে তো আর জানে না তুমি নিরামিষ’

সাথে সাথে তার মাথাউ গাট্টা মারলো ফায়াদ।বলল,
‘বেশি পেকে গিয়েছিস। আর তোরা অর হয়ে এতো সাফাই গাইছিস কেন?’

রাফিয়া মাথা ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ওতো কিছু বুঝি না তুমি এখন তাকে স্যরি বলে আসো। সাফাই গাচ্ছি না। আপু খুব ভালো।তুমি তাকে জানো না তাই এখন এরকম বলছো।তাকে চিনলে তুমি ফিদাহ হয়ে যাবা ফিদাহ! স্যরি বলে আসো নাহয় আমি আপুকে পরে মুখ দেখাবো কিভাবে? আমার ভাই তাকে বকেছে তাই আমার সাথে যদি কথা বলা অফ করে দেয়!’
বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো রাফিয়ে।রিজু অন্যদিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।

‘ধ্যাত!!’

ফায়াদ ওদের কথায় অসহ্য হয়ে গাড়ি থেকে আবার বের হলো।রাফিয়ার কথা না মানলে এই মেয়ে থামবে না।ওদের গাড়িতেই থাকতে বলে গেল অপরাজিতার খোজে। মনে মনে ভাবছে, ‘চিনি না জানি না।এই পুচকি মেয়েকে আমার স্যরি কেন বলতে হবে?’
খুজতে খুজতে অপরাজিতা কে বাহিরের একটা বেঞ্চ এ বসে থাকতে দেখলো। চুপচাপ বসে আছে সে।ফায়াদের একটু মায়া লাগল।তার কথায় মেয়েটা কি বেশি কষ্ট পেল?সে গিয়ে বসলো অপরাজিতার পাশে। অপরাজিতাকে বলল,
‘তুমি কি কষ্ট পেয়েছো?’

এমন ভাবে বলল অপরাজিতার মনে হলো আলগা দরদ।কিছু বলল না অপরাজিতা। সে একবার ফায়াদের দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকালো।মনে মনে ফায়াদকে হাজারটা ভেঙচি কাটলো সে। অপরাজিতা বসে আছে তার বাবার অপেক্ষায়। তাকে নিতে আসবে তাই।

‘দেখ মেয়ে আমি মজা পছন্দ করি না তেমন না। কিন্তু তুমি আমাকে চেন না তারপরও মজা করছিলে বলে একটু রাগ লেগেছিল।তোমাকে মন খারাপ দেখে রাফিয়া আর রিজু আমার মাথাটা খেয়ে ফেলছে। তারা পাঠিয়েছে স্যরি বলতে৷ রাফিয়ার চিল্লাচিল্লি তে কান নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।তাই আসলাম নাহয় আমি কখনো আসতাম না। বাই দ্যা ওয়ে স্যরি’

অপরাজিতা বিস্ময় নিয়ে তাকালো ফায়াদের দিকে। সে ভাবছে এটা কেমন স্যরি হলো। সে তার মন খারাপ ভুলে গেল।সে কী একবারো বলেছিল তাকে স্যরি বলতে? অপরাজিতাকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে ফায়াদ তার পকেট থেকে কিছু চকলেট বের করে অপরাজিতার হাতে দিল এবং বলল,
‘শুনো পুচকি ফুল এভাবে যার তার সাথে ফান করবানা। আমি নাহয় তেমন কিছু বলি নি। অন্য কেউ হলে আরো বকতো। আচ্ছা বাদ দাও ছোট মানুষ। মাফ করে দিলাম। এখন আমি যাই। ‘

বলেই দাঁড়িয়ে অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে চলে গেল। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অপরাজিতা নাক মুখ কুচকে ফেলল। ‘পুচকি ফুল! এইটা কেমন নাম।’ভেবেই তার মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। আবার বলে কিনা সে ছোট মানুষ! অপরাজিতা মনে মনে বলল,
‘ফা’জিল ব্যাটা আসলেই বউ জুটবে না দেইখেন।’
————–

অতীতের কথা ভেবেই হেসে দিল অপরাজিতা। তাকে হাসতে দেখে কোচিং এর টিচার ধমকে উঠলো। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। টিচার কে স্যরি বলে আবার বসে পড়লো। কোচিং ছুটি হওয়ার পর তার পাশের মেয়েটা বলছিল ‘তুমি হঠাৎ ওভাবে হাসলে কেন?’

মনে পড়ে আবারো হেসে দিল অপরাজিতা। সে হাসতে হাসতেই বলল,
‘তুমি বুঝবে না।’

কোচিং থেকে বেরিয়েই সে রিকশা নিয়ে গেল হসপিটালে।উদ্দেশ্য ফায়াদকে দেখা। গিয়ে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল।ফায়াদ নেই। সে ফোন করলো ফায়াদকে।ফোন রিসিভ করার পর অপরাজিতা বলল,
‘কোথায় আপনি?’

শান্ত গম্ভীর কণ্ঠস্বর টা বলে উঠলো,
‘পিছে দেখো!’

পিছে তাকিয়ে দেখলো ফায়াদ মাত্রই তার পিছে এসে দাড়ালো। ফায়াদকে দেখে সে চমৎকার এক হাসি দিল।
ফায়াদ দেখলো সে হাসি। মন মাতানো হাসি বুঝি একেই বলে?কিন্তু এই হাসি ফায়াদকে ছুয়ে দিতে পারলো? নাকি তার মন পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে কিছুটা?

‘তুমি এখানে কি করো প্রতিদিন? তোমার সামনে এইচএসসি।বাসায় বসে পড়াশোনা করবে। তা না করে এখানে টাইম নষ্ট করো’

অপরাজিতা স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলল,
‘পড়াশোনার জন্যই তো আসি। আপনাকে না দেখলে পড়ায় মন বসে না।’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here