প্রেম পুকুর পর্ব ৫

0
119

#প্রেম_পুকুর
[৫]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একাকী জীবনযাপন করতে পারেনা তার জন্যই গড়ে উঠে পরিবার।পরিবারের মানুষ গুলো একে ওপরের সাথে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু সেই বাধন ছেদ করে মেয়েদের চলে যেতে হয় শশুড় বাড়ি এক মুহুর্তেই পর হয়ে যায় নিজের পরিবার আর শুরু হয় অন্য পরিবারের সাথে মানিয়ে চলা।এই জটিল সময়টাতে প্রত্যেকটা মেয়ের সাথে তার স্বামীর ভালোবাসাটা থাকা প্রয়োজনীয়।

গাড়িতে চুপ করে মন খারাপ করে বসে আছে শিমু। ভেবেছিলো এতোদিন পর বাড়িতে এসেছে কিছুদিন থাকতে পারবে কিন্তু আপসোস সেটা আর হলোনা। সকালে আয়ান ফোন করেছিল, বলল দাদী নাকি বাথরুমে পড়ে গিয়েছে। যার ফলে পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে।সাফোয়ানকে বার বার নাকি দেখতেও চাইছে, তাই এত তাড়াহুড়ো করে চলে আসা।
শিমু ইচ্ছে করছিলো না বাবা আর ছোট দুই বোন কে ফেলে আসতে। বাবার একাকী এইবয়সে থাকাটা অনেক কষ্টের। তার পরে তার ছোট দুই বোন ও মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত।
কত বলেছে বাবাকে বাবা আরেকটা বিয়ে করো কিন্তু বাবা মানতে নারাাজ।
কালকে রাতে সাফোয়ান ও কথায় কথায় বলছিল,”আব্বু আপনার একজন সঙ্গির প্রয়োজন ফিহা রিহার ও একজন মায়ের প্রয়োজন। ”
মজিদ এক গাল হাসি দিয়ে বলেছিল,”বাবা ভালোবাসার মানুষটার জায়গা তার জন্য একান্তই তোলা থাকে।তুমি যদি তাকে গভীর ভাবে ভালোবাসো তার অনুপস্থিতিতেও তোমার কখনো একা মনে হবেনা। মনে হবে সে তোমার আশে পাশে আছে।আর ফিহা রিহার কথা বলছো ওদের জন্য আমি মা আনতেই পারি কিন্তু সেই মা যে ওদের কে ভালোবাসবে তার কি গ্যারান্টি আছে।আর আমার কোন সঙ্গিনীর প্রয়োজন নেই।এক জীবনে যার সঙ্গ পেয়েছি তাকে ভেবে ভেবেই চলে যাবে আমার”

সাফোয়ান মুগ্ধ হয়ে শুনে তার শশুড়ের কথা। ভালোবাসা যে কতটা সুন্দর শুধু মাত্র যে ভালোবাসতে জানে সেই এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারে।আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে যে ভালোবাসা থাকে সেটা হয় পবিত্র। যার মাঝে রয়েছে অন্যরকম প্রশান্তি।

শিমুর চিন্তা ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে থামলো সাফোয়ানদের বাড়ির সামনে।
সাফোয়ান নিজ স্ত্রী দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল।
শিমু ও বেড়িয়ে এলো গাড়ি থেকে। দুজনে একসাথে ভিতরে আসল। কলিং বেল চাপতেই রহিমা খালা এসে দরজা খুলে দিল।

সাফোয়ান ভিতরে আসতেই দেখলো দাদী সোফার ওপর পা টান টান করে বসে আছে। পায়ে ব্যান্ডেজ করা।
সাফোয়ান এগিয়ে গিয়ে দাদীর পায়ের কাছে বসল,”কেমন আছো এখন?”
দাদী কাঁদো কাঁদো হয়ে উওর দিল,”এইতো যা দেখছিস”।
“বাথরুমে পড়ে গেলে কি করে?”

“কিভাবে যে পড়ে গেলাম “।

“ওহ! তাহলে তুমি রেস্ট করো আমি এখনই ফ্রেস হয়ে আসছি।”

শিমু গুটিশুটি মেরে এক কোণে দারিয়ে ছিল।
মনে মনে ভাবল মহিলাটা যতই খারাপ হোক ব্যাথা যেহেতু পেয়েছে তার একবার জিজ্ঞেস করা উচিত।
শিমু কাছে গিয়ে দাদী বলে ডাক দিল একবার। রাজিয়া বেগম অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। যেন সব কিছুর জন্য শিমু দায়ী। শিমু কিছুটা অপমান বোধ করল।

আর কিছু না বলে নিজের ঘরে ফ্রেস হতে যাবে অমনি শাশুড়ি কথা থেকে যেন ছুটে আসল

“শিমু ওই দিকে কই যাচ্ছো?”

“জ্বী আম্মা ফ্রেশ হতে যাচ্ছি”।

“ওই দিকে না তুমি সাফোয়ানের ঘরে যাও। আমি তোমার সব কিছু ওই ঘরে রেখে এসেছি “।

“কিন্তু আম্মা! ”

“আমি আশা রাখছি তুমি আমার ওপরে কোন কথা বলবেনা”।

দাদী মুখ বাকিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল,”আদিক্ষেতা। ”

লায়লা বেগম তার কথায় কোন পাত্তা দিলেন না।

শিমু গুটি গুটি পায়ে সিড়ি ডিঙিয়ে সাফোয়ানের কক্ষে দরজার সামনে গেল।দরজা খোলাই আছে।

তবুও শিমু দরজায় খটখট আওয়াজ করল।

সাফোয়ান ভিতর থেকে আওয়াজ দিয়ে বললো ,”ভিতরে আসো”।

শিমু জানে এটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি তবুও সে ভিতরে গেল।
সাফোয়ান বাথরুমে আছে সেখান থেকেই পানির শব্দ আসছে।শিমু পৃুরো ঘরে চোখ বুলালো।অতঃপর তার নজর পরল ঘরের এক কোণে রাখা লাগেজ গুলোর দিকে যেখানে লায়লা তার পোশাক জিনিস পত্র রেখে গেছে।
গুটি গুটি পায়ে সে দিকে এগুলো। লাগেজ খুলে একটা হালকা গোলাপি রঙের থ্রিপিছ বের করল।
এর মাঝেই দরজা খোলার শব্দ এলো, শিমু দ্রুত পিছনে ঘুরলো সাফোয়ান দারিয়ে আছে। আর তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে এখানে শিমুকে দেখবে ভাবতেও পারিনি।
পড়নে একটা জিন্সের প্যান্ট আর কালো রঙের গেন্জি।আর কাধে টাওয়াল। চুল দিয়ে টপ টপ করে পানির ফোটা পড়ছে।
শিমু উঠে দারিয়ে নিজের লাগেজ গুলোর দিকে ইশারা করে বলল,”আম্মা বলেছে আজ থেকে এই রুমে থাকতে।”
সাফোয়ান লাগেজ গুলোর দিকে তাকালে সে এগুলো কিছু খেয়াল না করেই ওয়াশ রুমে চলে গেছিলো।
মনে মনে মায়ের সিদ্ধান্তে খুশি হলো। কিন্তু শিমুকে কিছু বুজতে দিলোনা চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।শিমু তার যাবার দিকে তাকিয়ে ভাবল। লোকটা কি তার এই ঘরে আসাতে বিরক্ত হয়েছে।

সাফোয়ান নিজের রুম থেকে বেরিয়েই মায়ের কাছে চলে গেল।মাকে একটা বিশাল ধন্যবাদ দিতে হবে।মনে মনে আওরালো,”আসলেই মা গ্রেট।”

তারাতারি মায়ের কাছে গিয়ে মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
“মা তুমি বেস্ট “।

“ধন্যবাদ যদি কাওকে দেওয়ার থাকে আমাকে দে ব্রো।”

সাফোয়ান আয়ানের দিকে ভ্রকুচকে তাকালো।আয়ান বেশ আরাম করে বসে আপেল খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

“কেন তোকে দিবো?”

“আমাকে দিবি না তো কাকে দিবি আমিই তো বুদ্ধিটা মাকে দিলাম”।

সাফোয়ান আয়ানের হাত থেকে আপেল নিয়ে কামড় বসিয়ে বলল,”ধন্যবাদ।”

“আমি শুধু ধন্যবাদ নিবোনা”।

“বল কি লাগবে তোর?”

“কানে কানে বলি”

“আচ্ছা”।

“আমার না বউ লাগবে”।

সাফোয়ান আয়ানের পিঠে জোড়ে করে থাপ্প*র বসিয়ে দিল,”কথা ঠিক করে বলিস আমি তোর বড়ো ভাই।”

আয়ান পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে ভাইয়ের দিকে অসয়াহের মতে তাকিয়ে আছে।যার জন্য এতো কিছু করতেছে।সেই ভাইও তার দুঃখ বুঝলোনা রে।
_________

ডিনারে সবাই একাসাথে খাবার খেতে বসেছে।
শিমু আর লায়লা বেগম খাবার সার্ভ করছে।
আলতাফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,”সাফোয়া তুমি ঢাকায় ফিরছো কবে “।

“আব্বু ফিরবো ৩ তারিখে ।”

“ওহ তার মানে দু’দিন আছো।”

“জ্বী”।

আলতাফ এবার আরো গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,”তাহলে তোমার তো সেখানে একা সব কিছু করতে কষ্ঠ হয়। তুমি বরং বউমাকে নিয়ে যাও।”

রাজিয়া বেগম খাবার রেখে আলতাফের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালেন।
“কি বলছিস তুই আলাতাফ শিমু চলে গেলে বউমার কষ্ঠ হবে তো।”

আলতাফ মায়ের দিকে ভ্রকুচকে তাকিয়ে বললেন, “মা লায়লার জন্য রহিমা আর অনিকা আছে। কিন্তু সাফোয়ান সেখানে একা থাকে।তাই শিমু গেলে সাফোয়ানেরই ভালো হবে।”

লায়লা মনে মনে খুশি হলেন স্বামীর সিদ্ধান্তে। তার ছেলে আর ছেলের বউয়ের মধ্যকর সম্পর্ক ঠিক করার জন্য তাদের একত্র থাকা প্রয়োজন।
সবাই খুশি হলেও রাজিয়া বেগম মুখ ভার করে বসে রইলেন।
আয়ান অনিকা দাদীর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
অনিকা আয়ানের কানে কানে বলল,”ভাইয়া ভালো হইছে কিন্তু বুড়ির বেশ শিক্ষা হয়েছে। ”

আয়ান দাদীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,”দাদী খাচ্ছো না কেন?”

আয়ানের কথা শুনে দাদী ভাতের লোকমা গালে নিয়ে চিবুতে শুরু করল।
আবারও ছেলের বউ এর কাছে হেরে গেল।ছেলে নাতি কাওকে তার আর নিজের বসে করা হলো না।

এই সবের মাঝে শিমু চোখ ছল ছল করে দাড়িয়ে রইল। সবাই তাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করল না।

সাফোয়ান খেতে খেতে শিমুর দিকে তাকালো। শিমুর অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো শিমু তার সাথে যেতে চায়না।

চলবে,,

[আয়ানকে এবার বিয়ে দিয়ে দেই কি বলেন😌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here