#প্রেম_পুকুর
[৪]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন
শিমুদের বাড়ি থেকে কিছুটা সামনে এগুলে কালিগঙ্গা নদী। নদী থেকে সূর্যাস্ত এক অপরূপ সৌন্দর্য বহন করে।
সাফোয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সেই সূর্যাস্ত দেখল।
ফিহা আর রিহা দুই বোন দুলাভাইয়ের হাত ধরে তারাও উপভোগ করছে।
সাফোয়ানের মনে হলো শহর থেকে গ্রাম অনেক সুন্দর। তাদের গ্রামে আসাই হয়না বলতে গেলে। সেই ছোট বেলায় আসতো মায়ের সাথে। আজ এত দিন পর গ্রামের সৌন্দর্য দেখতে পেরে অনেক অনেক ভালো লাগার অনূভুতি হচ্ছে তার।
__________
শিমুর চিন্তা চিন্তায় মুখ কালো হয়ে গেছে।সাফোয়ানের তো চলে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে তো গেলোনা। এখন তাদের এক ঘরেই থাকতে হবে। লোকটা তো তেমন একটাভালো নয় যদি তার কাছে আসতে চায় তবে সে কি করবে।সে কি চেঁচাবে, না এটা করা যাবেনা। নিজের সাথে বোঝাপড়া করে কোন উওর পেলোনা শিমু।তাই হতাশ হয়ে বসে রইল।
ইতিমধ্যেই শশুরের সাথে কথা শেষ করে বউ এর ঘরে ঢুকলো সাফোয়ান। ভিতরে এসেই নজর পরল এক ভাবুক রমণীর দিকে। যে সর্বদাই নিজের ভাবনায় ডুবে থাকে। ভাগ্যিস মা তাকে এই বাড়িতে আসার বুদ্ধিটা দিলো না হলে বউ এর এত কাছাকাছি আসা যেতোনা।
সাফোয়ান গলা খাঁকারি দিলো।
সাফোয়ানের শব্দ পেয়ে শিমু সটানভাবে দারিয়ে গেল।
সাফোয়ান শিমুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।
শিমু সেটা খেয়াল করে আরো অস্বস্তিতে পরে গেল।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল কাছে আসতে চাইলে কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দেবে।
” আপনি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত।”
শিমু সাথে সাথে কথা নাকোচ করে বলল,”না না আমি চিন্তিত নই। আপনি কাছে আসতে চাইলে কি আমি আসতে দিবো নাকি।”
নিজের কথা শেষ করে শিমু ঠোঁটে কামড়ে ধরল। মনে মনে ভাবল এটা কি বলে ফেলল সে।
সাফোয়ানের মুখের হাসিটা আরো চওড়া করে বলল,”ওহ তার মানে আমি কাছে আসব?”
শিমু ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে দারিয়ে রইল অতিরিক্ত চিন্তায় তার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তাই সে আর লজ্জায় কোন কথা বলতে পারলোনা। চুপ করে দারিয়ে রইলো।
সাফোয়ান গিয়ে বিছানায় বসলো।
পুরো ঘরে একটা খাট, একটা পড়ার টেবিল আর একটা টিনের বাক্স ব্যতীত কিচ্ছু নেই।
শিমু এখোনো একই ভাবে দারিয়ে আছে।
“আপনি কি ঘুমাবেননা না, নাকি না ঘুমিয়ে রাত পাড় করে দেবার ইচ্ছে আছে।”
“সত্যি বলতে আমার আপনার পাশে শুতে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।”
শিমুর অকপটে উওর।”
“আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আপনার অনুমতি ব্যতীত আমি আপনাকে কখোনো স্পর্শ করবোনা।”
শিমু তবুও পুরোপুরি শান্ত হলোনা।সাফোয়ান শিমুর অস্বস্তি বুঝতে পেরে বিছানার দিকে একবার তাকালো। বিছানায় একটা কাঁথা আর দুইটা বালিশ।
সাফোয়ান বিছানার মাঝ বরাবর কাঁথা ভাজ করে লম্বা করে বিছিয়ে বিছানা দু’ভাগ করল।
“আপনি এক পাশে থাকবেন আমি একপাশে থাকবো। আশা করছি আপনার কোন অস্বস্তি হবেনা। ”
অতঃপর সাফোয়ান নিজের পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।
শিমু কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সেও নিজের পাশে এক কোণে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
সাফোয়ান হঠাৎ চোখ খুলে বলে উঠল, “আমি অতিক্রম করবোনা কিন্তু আপনি চাইলে আসতে পারেন আমার পাশে। আমি কিছু মনে করব না।”
শিমু মনে মনে সাফোয়ানকে বেয়াদব বলে গা*লি দিল।
তারপর ক্লান্ত থাকায় চোখ বন্ধ করতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
সাফোয়ান কিছুক্ষণ ঘুমের অভিনয় করে শুয়েছিল।
শিমু ঘুমিয়েছে বুঝতে পেরে সাফোয়ান চোখ মেলল।
মেয়েটা তার দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে। সাফোয়ান আস্তে করে বিছানা ছেড়ে উঠল।শিমু যে পাশ করে শুয়ে ছিল উঠে সে পাশে গিয়ে দারালো।
শিমু গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকায় সে বুঝতেও পারলোনা তার দিকে কেউ গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।
সাফোয়ান শিমুর ঘুমের সুযোগ নিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।
নিজের করা ভুল গুলো চরমভাবে অনুভব করল।আজকে তাদের সম্পর্ক সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর মতো হতে পারতো। কিন্তু সে, সেই তো নিজের রাগ ক্ষোভ কে প্রাধান্য দিয়ে চলে গেছিলো।কোন মেয়েই চাইবে না তার স্বামী তাকে বিয়ের পরে একা ফেলে চলে যাক।
মেয়েটার সাথে এটুকু সময় থেকে সে যতটুকু বুঝতে পেরেছে মেয়েটা ভীষণ চাপা স্বভাবের। বুকে ফাটবে কিন্তু মুখে ফুটবেনা।
সাফোয়ানের খুব ইচ্ছে করল নিজের হাত বাড়িয়ে শিমুর গাল স্পর্শ করার।কিন্তু পরক্ষনেই নিজের করা ওয়াদার কথা মনে করে হাত সরিয়ে নিলো।সব যখোন সেই শুরু করেছে তখোন সেই শিমুর ভালোবাসা জয় করে নেবে এতে যতই তারে কাট খড় পোড়াতো হোক না কেন তাকে ।
__________
সকালে আজনের আওয়াজ পেয়ে ঘুম ছুটে গেল শিমুর। নিজের দিকে তাকাতেই অবাক হলো তার শরীরে কাঁথা দিয়ে জড়ানো। সাফোযা নিজের নির্দিষ্ট জায়গায়ই ঘুমিয়ে আছে।
নিজের স্বামীর দিকে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকালো শিমু।
ফর্সা মুখে কালো কালো ছোট ছোট চাপ দাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে ছেলেটাকে। কিছুক্ষণ সাফোয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কি করছিল বুঝতে পেরে নিজেকে গা*লি দিতে দিতে ওজু করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে রোদের আলো এসে পড়ছিল সাফোয়ানের ওপর।সেই আলোতেই সাফোয়ানের ঘুম ভেঙে গেল। সাফোয়ান আশেপাশে তাকালো একবার। শিমু ঘরে নেই।
সাফোয়ান বিছানা থেকে উঠে ঘর থেকে বাহিরে বের হলো।
তার ছোট দুই শালিকা হাতে বল নিয়ে দৌরা দৌরি করছে। শিমু রান্না করছে রান্না ঘরে আর ওর শশুড় এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।সাফোয়ান অনুভব করল তার শাশুড়ি থাকলে হয়তো তার আদর টা আরো কয়েকগুন বেড়ে যেত।
সাফোয়ান শালিকাদের কাছে গেল।
ফিহা আর রিহা সাফোয়ানকে কাছে পেয়ে বায়না করলো তাদের সাথে বল খেলতে।সাফোয়ান তাদের অনুরোধ ফেলতে পারলোনা।
তাদের সাথে খেলতে খেলতে বলটা একটু ঝোপের আড়ালে চলে গেল। ফিহা, রিহা আনতে যেতে চাইলে সাফোয়ান তাদের রেখে নিজেই বল আনতে গেল।
ঝোপড়ার নিচে নিচু হয়ে বল আনতে গিয়ে ভুল বসত ঝোপড়ার কাটা পড়নের শার্ট ভেধ করে পিঠে ঢুকে গেল ব্যাথায় মুখ থেকে আহ শব্দ বের হয়ে এলো সাফোয়ানের।
তবুও কষ্ঠ করে বলটা উদ্ধার করে শালিকাদের হাতে ধরিয়ে দিলো।
রিহা র*ক্ত দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল।
“দুলাভাই র*ক্ত।”
রিহার চিৎককর শুনে শিমু দৌরে এলো।
দেখলো সাফোয়ানের পিঠে থেকে শার্ট ভেদ র*ক্ত বেরুচ্ছে ।
শিমু দ্রুত এগিয়ে গেলো সাফোয়ানের দিকে।
“শার্ট টা খুলেন।”
“আমার তেমন ইনজুরি হয় নাই তো “।
“চুপ করুনতো,আপনি কি কোন ভাবে শার্ট খুলতে লজ্জা পাচ্ছেন নাকি”।
সাফোয়ান ভাবল সে কি মেয়ে নাকি লজ্জা পাবে।
সাফোয়ান একটানে শার্ট খুলে ফেললো। শিমু দেখলো এক জায়গায় কাটা ফুঁটে গেছে, আরেকটা জায়গায় বেশ অনেকটা আচর লেগেছে।
শিমু দ্রুত কাটা টান দিয়ে বেড় করল।
সাফোয়ান ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে নিল।
অতঃপর শিমু কাটা জায়াগা পরিষ্কার করে মলম
লাগিয়ে দিলো।
“আপনি ঝোপঝাড়ার ভিতরে কেন গেছিলেন। দেখতেই তো পাচ্ছো ওখানে বেলের কাটা আর খেজুরের কাটা রাখা।”
সাফোয়ান চোখ বড়বড় করে তাকালো।
বেলের কাটা আর খেজুরের কাটার ভয়া*বহতার কথা শুনেছে সে। আজকে প্রত্যক্ষদর্শীও হলো।
শিমুর এবার সাফোয়ানের উন্মুক্ত বুকের দিকে নজর গেল। শার্ট লেস বুকে বলতে গেলে তেমন একটা লোম নেই।বেশ আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে। শিমু অন্যদিকে ঘুরে ঢোক গিললো।
মনে মনে বললো,”লোকটা কি জিম করে নাকি?”
সাফোয়ান শিমুর চোখ ঘুরিয়ে নেওয়া দেখে মনে মনে হাসল।
ভাবল,”বউ যদি এতো আদর করে মেডিসিন লাগিয়ে দেয় তবে একটু আধটু ব্যাথাতে কিছুই হয়না”।
ফিহা আর রিহা অসহায়ের মতো বোন জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে এই ভেবে তাদের কারনে তাদের দুলাভাই কে এত কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
চলবে,,,
[আজকে পর্বটা ভীষণ অগোছালো হয়েছে জানি। তবুও সবাই একটু কষ্ট করে মানিয়ে নিবেন প্লিজ]