প্রেম পিয়াসী শেষ পর্ব

0
1019

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______৪১(শেষ পর্ব)

—-” আপনার ফাইনাল শা/স্তি শুরু হবে ঠিক তিন দিন বাদে। আর এই তিনদিন আপনি আমাদের সঙ্গে, আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন। আমার প্রিয়তমা অর্থাৎ আমার স্ত্রী, আমার মা, আমার বোন এবং আমার ভাইয়ের সঙ্গে। একটা পরিবার ঠিক কতটা সুন্দর হয়, আপনি উপলব্ধি করবেন। অনুভব করবেন। এবং আপনার নি/কৃ/ষ্ট অ/প/ক/র্মে/র জন্য আপনি অনুতপ্ত হবেন। আর এটাই হবে আপনার শা/স্তির প্রথম পদক্ষেপ। আপনার শা/স্তি আজ থেকেই শুরু হলো মিস্টার খান।”

রেজা সাহেব রাদের পানে চেয়ে মলিন হাসলো। শা/স্তি কি কেবল শরীরেরই হয়? মনের হয়না বুঝি? এই যে এতোগুলো বছর অব্দি একটা স্বা/র্থপর মানুষের সঙ্গে দিনের পর দিন এক ছাদের নীচে সংসার করাটা কি কম শা/স্তির ছিলো? একটা মানুষকে বিনা অপরাধে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে নিকেশ করার পর যে অপরাধবোধ তাকে দিনের পর দিন কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে, সেই শা/স্তিটাই কি কম ছিলো? সে নিজেই নিজেকে শা/স্তি দিয়ে এসেছে। হয়তো শরীরের ছিলো না বলে কেউ টের পায়নি। কিন্তু দিয়েছে তো!

—-” সেই তখন থেকে দেখছি দু’জনে আলাপচারিতা চালিয়েই যাচ্ছেন, বলছি কি বাড়িতে মেহমান আসলে যে ভালোমন্দে খাওয়াতে হয় ভুলে গেলেন? আমি আর মা যে সেই কখন থেকে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছি, সেই খেয়াল আছে কারো?”

ডাইনিং টেবিলের কাছ থেকে ইলহামের বকার সাথে হাজারও একটা অভিযোগের সুর ভেসে এলো। টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে আরেকবার পেছন মুড়ে তাকালো ইলহাম। রাদ ওর ডাক পেয়ে তাড়া দিলো রেজা সাহেবকে। জরুরি ভিত্তিতে বউ-এর হুকুম মানার দাবি করে তাকে নিয়ে সোজা চলে গেলো ডাইনিং টেবিলের কাছে।

মধ্যবয়স্ক এই লোকটিকে দেখলেই ইলহামের এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে মনের ভেতর। যেন বহুকালের পরিচিত এই মানুষটি। যেন কত আপন। তবে সেই ভাবে দেখতে গেলে মানুষটা আজই এসেছে ওদের বাড়িতে। সকালের দিকে। এখন দুপুর। মাত্র এক প্রহরেই লোকটার প্রতি ইলহামের মায়া বেড়ে গেছে। এমন স্নেহের অনুভূতি ওর আগে কখনোও কারোর জন্য হয়নি। কেন জানা নেই, এই অপরিচিত মানুষটার প্রতি ও এক টান অনুভব করছে।

—-” আঙ্কেল, আপনি যা যা বলেছিলেন মা সেই সব আইটেম রেঁধেছে আপনার জন্য। এবার আপনি টেস্ট করে বলুন, কেমন হয়েছে?”

বাবাকে কেউ আঙ্কেল ডাকে রে মা?”মনটা হাহাকার করে উঠলো রেজা খানের। হায় দুর্ভাগ্য! জীবনে এতটাই অ/পক/র্ম সে করেছে যে আজ নিজের সন্তানের মুখে বাবা ডাকটা শোনারও অধিকার নেই তার। এমন ভাগ্য যেন দুনিয়ার কোনো হতভাগ্য পিতার না হয়।

—-” কি হলো, দাঁড়িয়েই থাকবেন? এই যে মশাই, আঙ্কেলকে বসান!”

ইলহাম রাদের দিকে তাকিয়ে বলল শেষোক্ত কথাটা। রাদ ইলহামের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে রেজা সাহেবের কাঁধে হাত রেখে তার ঘোর কাটালো। অতঃপর চেয়ারে বসতে সাহায্য করে বলল,

—-” স্যার, বসুন প্লিজ। এই যে দেখুন, মা নিজ হাতে সব রান্না করেছে। সত্যি বলতে আমার মা এবং বউ কারোরই রান্নার কোনো তুলনা হয়না। দু’জনেই পাকা রাঁধুনি। একবার খেলে সারাজীবন লেগে থাকবে মুখে। বাট, সরি টু স্যে, ইলহামকে এই অবস্থায় রান্না ঘরে পা রাখতে দেইনা। নয়তো এই মেয়ে যা ধুরন্ধর, বকি বলে একটু ঠিক হয়েছে। না হয়, আজকেও একটা খাবারও মাকে করতে দিতোনা।”

ইলহামের ব্যাপারে কথাগুলো শুনতে ভীষণ ভালো লাগছে রেজা সাহেবের। তিনি শুনছেন মন দিয়ে। বারবার দেখছেন তার মেয়ের পানে। ইলহাম মিটিমিটি হাসছে রাদের কথায়। যেন আজও কিছু করেছে তাকে লুকিয়ে।

ওদের কথা শুনতে শুনতে ইলহাম খাবার বেড়ে দিলো রেজা সাহেবের প্লেটে। রেজা সাহেব ইলহামের গল্প শুনছেন আর মুচকি হাসছেন। এদিকে ইলহামের বেড়ে দেওয়া খাবার আস্তেধীরে মুখে তুলে খাচ্ছেন।
খাবারের স্বাদ যে অতুলনীয় হয়েছে সেটা রেজা সাহেবের মুখ দেখেই আন্দাজ করে নিয়েছে রাদ-ইলহাম। তিনি কিছু বলবেন, এর মাঝেই একটা কল আসে রাদের। রাদ ফোনটা নিয়ে চলে যায় ওদিকে। ঠিক তখনই সুযোগ বুঝে ইলহাম কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে উঠলো,

—-” আঙ্কেল এই যে ডিম, মাংস আর পোলাও টা দেখছেন? সেটা আমিই করেছি। আপনি খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে? আসলে কি বলুন তো, উনি ভীষণ রাগ করেন আমার এই অবস্থায় কিছু করতে গেলে। তবে সত্যি বলতে, আজ এতোদিন বাদে কারোর জন্য রান্না করতে পেরে মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে। এমন কেন হচ্ছে জানিনা। তবে আপনাকে দেখলেই আমার ভালো লাগছে ভীষণ। একটা শান্তি হচ্ছে ভেতরে ভেতরে।”

ইলহামের টানটা হয়তো রেজা সাহেব উপলব্ধি করতে পেরেছেন। যার দরুন উনার ভেতরের হা/হাকারটা আরও তী/ব্র আকার ধারণ করছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিজের সমস্ত পা/পগুলো
বি/সর্জন দিতে। কিন্তু, মানুষ চাইলেই কি পা/প
বি/সর্জন দিতে পারে!

রাদ কথা শেষ করে পেছন মুড়ে তাকাতেই দেখতে পেলো ইলহাম রেজা সাহেবের কানে কানে কিছু একটা বলছে। রাদের বুঝতে বাকি রইলোনা, সে কি বলছে তার বাবাকে। যা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রাদ। মানুষ না জেনেও র/ক্তের টান গভীর ভাবেই উপলব্ধি করতে পারে।

_____________

দেখতে দেখতে দু’দিন পেরিয়ে গেছে। এই দু’দিনে বাবা-মেয়ের খুনসুটি ফ্রেমে বন্দী করার মতো ছিলো। ইতিমধ্যে রেজা সাহেবের সঙ্গে এ বাড়ির প্রত্যেকেরই একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যেমন অনন্যা, নিহা ওদের দু’জনকেই ভীষণ স্নেহ করেন তিনি। আর নিঝুম যেন তার প্রাণ। সারাদিন দাদু দাদু করে পাগল করে রাখে রেজা সাহেবকে। মান্নাত বেগম, নিহার শাশুড়ী, রাদ, অন্তু এবং প্রণয়। সবার সঙ্গে ভীষণ সহজ হয়ে গেছেন তিনি। তবে এসবের মাঝেও তার অ/প/ক/র্মে/র কথা রাদ এক মুহুর্তের জন্যও তাকে ভুলতে দেয়নি।

আজ রেজা সাহেব মনেমনে ঠিক করে নিলেন, তিনি যে করেই হোক নিজের মেয়েকে সবটা খুলে বলবেন, এবং এটাও বলবেন তিনিই ওর হতভাগা পিতা! যে ওর জন্মটাকেই অস্বীকার করেছিলো করুন ভাবে।

কিন্তু মানুষ চাইলেই যে সবটা সঠিক হয়না। আজ সেটা আরও একটা প্রমান হলো। রেজা সাহেব সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে যখন ইলহামের কাছে রওনা হলেন, ঠিক তখনই রাদ তাকে মনে করিয়ে দিলো, একজন অপরিচিত হয়েও যতটা ভালোবাসা সে ইলহামের থেকে পেয়েছে ঠিক ততটাই ঘৃ/ণা সে একই ব্যাক্তির থেকে পাবে, যখন সে জানবে এই মানুষটাই ছিলো তার মায়ের মৃ//ত্যুর কারন! তখন কি হবে, একবারও ভেবে দেখেছেন?

রাদের যুক্তিতে নিজের আবেগ,অনুভূতির কাছে হেরে গেলেন রেজা সাহেব। আর চেয়েও পারলেন না মেয়ের কাছে সত্যিটা স্বীকার করতে যেতে। কেননা, তিক্ত হলেও রাদের প্রত্যেকটা কথাই একদম ঠিক।

কাল সকালেই রেজা সাহেবকে নিয়ে যাবে পু/লিশ। পু/লিশের কাছে সমস্ত প্রমান পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে। এখন কেবল রাদের অর্ডার পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।

ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে। বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো অন্তু। সঙ্গে এসেছে আরও একজন। আর সে হলো মিমি। ইদানীং মিমিকে অন্তুর সঙ্গেই দেখা যায়। তাদের সারাদিন ঘোরাঘুরি, মিট করা একটু বেড়েছে ক’দিনে। বাড়ির সকলে আন্দাজ করছে, হয়তো খুব শীঘ্রই মিমিকেও বাড়ির সদস্য করে ফেলতে হবে।

—-” তোমরা সবাই কে কি খাবে বলো? আজ সবার পছন্দের নাস্তা বানানো হবে সন্ধ্যায়!”

ড্রয়িং রুমে সকলে জমজমাট আড্ডার আসর জমিয়েছে। সেখানে উপস্থিত আছে রাদ-ইলহাম, প্রণয়-অনন্যা,অন্তু-মিমি, নিহা, নিঝুম, রেজা সাহেব, রাজিয়া বেগম আর নিহার শাশুড়ী। ছোটরা এবং বড়রা কেউই গল্প বলার পারদর্শীতায় পিছিয়ে নেই। সকলেই সমান পারদর্শী। বিশেষ করে নিঝুম। উপস্থিত মহলের সবচেয়ে ছোট সদস্যের গল্পের ভান্ডার যেন ফুরোবার নয়।

মান্নাত বেগমের হাঁক পড়লো রান্নাঘর থেকে। তিনি আজ একাই সবার জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানাবেন। কারোর থেকে এক চুল পরিমাণও সাহায্য নিবেন না বলে জানিয়েছেন। অবশ্য রাজিয়া বেগম আর নিহার শাশুড়ীমা তাকে সাহায্য করার জন্য কয়েকবার ছুটে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনিই আবার সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন গল্প করতে। এদিকে ইলহামের হাতপা নিশপিশ করছে কখন রান্নাঘরে যাবে, আর মাকে সাহায্য করবে।

—-” আমি নুডলস,
আমি চপ,
আমি মুড়ি মাখানো,
আমি পাস্তা!”

এরকম আরও কয়েকখানা অর্ডার শোনা গেলো ড্রয়িংরুম থেকে। মান্নাত বেগম অর্ডার গুলো নিয়ে দ্রুত চললেন রান্নাঘরের দিকে। আজ তাকে রান্নার ভূতে পেয়েছে। তাই সব রান্না একাই করবেন।

—-” শুনুন না রাদ, বলছিলাম আমি একবার যাবো রান্নাঘরে?”

পাশ থেকে রাদকে খুঁচিয়ে কাঁচুমাচু করে কথাটা বললো ইলহাম। রাদ সবার সঙ্গে গল্পে মসগুল ছিলো। হঠাৎ ইলহামের আবদার শুনে চোখ পাকিয়ে তাকালো ইলহামের পানে। কন্ঠ খাদে নামিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

—-” তোমার কপালে না মা//র অপেক্ষা করছে! এই অবস্থায় খুব সখ হচ্ছে রান্না ঘরে যাওয়ার তাইনা? চ্যাম্প অর প্রিন্সেসকে একবার আসতে দাও! তারপর রাত দিন তোমাকে রান্না ঘরেই বন্দী করে রাখবো।”

—-” হিহিহি, ওকে।”

—-” হোয়াট! তুমি হাসছো? এতো মজা লাগছে?”

দাঁতে দাঁত চেপে পূণরায় ধমকে উঠলো রাদ। ইলহাম ধমক খেয়ে চুপসে গেলো। হাতজোড়া মুখের সামনে এনে ঠোঁট উল্টে তাকালো রাদের পানে। অতঃপর ঠিক বাচ্চাদের ন্যায় মেকি কান্না জুড়লো। যদিও সবটাই গলা খাদে নামিয়ে। যেন অন্যরা শুনতে না পায়।

ওর কান্নাটা মেকি হলেও রাদ যেন সত্যি ভড়কে গেলো। ওর সাথে এই অবস্থায় মোটেও বকাবকি করে কথা বলা উচিৎ নয়। এতে ওর বা বাচ্চার উপর প্রেশার পড়তে পারে। তাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে ঝটপট ইলহামকে বুকে জড়িয়ে ধরলো ওর কান্না থামাতে। আচমকা রাদের বুকে জায়গা পাবে ইলহাম যেন ভাবতেও পারেনি। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে গুটিশুটি হয়ে লেপ্টে রইলো রাদের বুকে। রাদ ওর বাচ্চামো দেখে মুচকি হেসে মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে চুমু খেলো আলতো করে।

ওদের এই খুনসুটি টুকু মনের ফ্রেমে বন্দী করে নিলো রেজা সাহেব। ইলহাম রাদের সঙ্গে ঠিক কতটা ভালো আছে, তা যে নিজের চোখে না দেখলে কোনো দিন জানতেই পারতেন না তিনি। কুহেলিকা হয়তো, দূর থেকেই দেখছে মেয়ের সুখ। কুহেলিকা পেরেছে একজন স্বার্থক মা হতে। কিন্তু তিনি কোনোদিন পারেননি একজন স্বার্থক মানুষ হতেই। তিনি মানুষ নন। মানুষের কাতারে তাকে ফেলাও যেন উপহাস করার সমান।

—-” আহহ্ মাগো!”

হঠাৎ ব্যা//থায় কুঁকিয়ে উঠলো কেউ। চমকে উঠলো উপস্থিত মহল। হঠাৎ থমকে গেলো তাদের কোলাহল। সবাই একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো সকলের। কার কি হলো? কথাটা ভাবতেই সকলের মনে হলো ইলহামের কথা। চটজলদি ইলহামকে দেখতে নিলে ইলহাম পূণরায় বিকট চিৎকারে কাঁপিয়ে তোলে সবকিছু। রাদ আ/তং/কি/ত নয়নে তাকায় ইলহামের পানে। ইলহামের মুখটা হঠাৎ কেমন নীল বর্ন ধারণ করে। সকলের মুখে আ/তং/ক লেপ্টে যায়। বিশেষ করে রেজা সাহেবের মুখে।

—-” আ..আমার ভীষণ ক..ক/ষ্ট হচ্ছে রাদ! আ..আমি সহ্য করতে পারছিনা!”

এই বলেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানতে শুরু করে ইলহাম। রাদ বুঝতে পারে শ্বাস নেওয়াতে সমস্যা হচ্ছে ইলহামের। নির্ঘাত লেবার পে/ই/ন উঠেছে। এক্ষনি ওকে হসপিটালে নিতে হবে।

অন্তু মহল ভে/ঙে রাদকে বলে দৌড়ে গেলো গাড়ি বের করতে। রেজা সাহেব ছুট্টে এলেন ইলহামের কাছে। কেমন ম/রি/য়া হয়ে উঠেছেন তিনি। মেয়ের এমন করে নিঃশ্বাস ওঠানামায় তার নিঃশ্বাসটা যেন ব/ন্ধ হয়ে যাচ্ছে করুন ভাবে। বারবার করে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন মেয়ের। এমনকি অসহায় কন্ঠে বারবার করে বলে যাচ্ছেন, “তোর কিচ্ছু হবেনা মা, তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি। তোর কিচ্ছু হবেনা!”

মান্নাত বেগম ছুটে এলেন কোলাহল পেয়ে। কি হয়েছে তার ইলহামের! মেয়েটা এই ক’টা মাস ধরে ঠিক কতটা য/ন্ত্র/না যে ভুগেছে হিসেব নেই কোনো।

—-” ম..মা! মা গো!( কাতর কন্ঠে)

—-” হ্যাঁ মা বল? বেশি ক/ষ্ট হচ্ছে। আর একটু সহ্য কর মা!”

মান্নাত বেগম কান্না করছেন ইলহামের অবস্থা দেখে। ওরা পৌঁছে গেছে হসপিটালে। ডক্টর জরুরি ভিত্তিতে ওটিতে নিলো ইলহামকে। এদিকে সবার অবস্থা
শো/চনীয়। গতবারের চেয়েও এবারের অবস্থা বেশি ক্রি/টিকাল ইলহামের। মান্নাত বেগম, রাজিয়া বেগম আর নিহার শাশুড়ীমা তিনজনেই ছুটে গেলেন নামাজ পড়তে। এমন ক্রি/টিকাল মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।

অনন্যা কাঁদছে ভ/য়ে। নিহা আর মিমি ওকে স্বান্তনা দিচ্ছে। মা হতে গেলে কি এতোটা ক/ষ্ট সহ্য করতে হয়? তাহলে ও কোনোদিন মাই হতে চায়না। একদম না।

রেজা সাহেবের অবস্থা সবার চেয়ে শো/চ/নীয়। তিনি না পারছেন কিছু বলতে আর না কারছেন কিছু সহ্য করতে। এর ভবিষ্যৎ কি, জানেনা সে! সে কি কোনোদিনই নিজের মেয়ের সামনে বাবার পরিচয়ে আসতে পারবেনা? তার মেয়েটাকে একবারের জন্যেও বাবার অধিকারে বুকে জড়িয়ে রাখতে পারবে না? কে জানে!

_____________

পাঁচ বছর পর।

শা করে ছুটে আসা গাড়িটা হঠাৎ থামলো বড় স্কুলটার সামনে। গাড়ি থেকে নামলো এক স্বল্প বয়সী মেয়ে। সঙ্গে নামলো ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে। বয়স তিন বছর। ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটাকে দেখতে কোনো পরীর চেয়ে কম নয়। স্বল বয়সী মেয়েটা বাচ্চা মেয়েটাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ধরে আস্তেধীরে পা বাড়ালো স্কুলের দিকে। সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটি তার ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটার পিছু পিছু। ওরা স্কুলের ভেতর চলে গিয়েছে। কতক্ষন বাদে আবার ফিরেও এলে। তবে এবার সঙ্গে এলো আরও একজন। একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলে। স্কুল ড্রেস পড়নেও ভীষণ সুন্দর লাগছে তাকে। হয়তো তাকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতেই এসেছে মেয়েটি। বাচ্চা ছেলেটির নাম জাইন। জাইন স্বল বয়সী মেয়েটার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,

—-” ফুপপি? মা আছেনি কেন?”

—-” মা একটু বিজি, বাবা। তাই আসতে পারেনি।”

—-” কেন বিজি?”

—-” জাইনের জন্য তার ফেভারিট চিকেন ফ্রাই করছে। জাইন বাসায় গিয়ে খাবে তো?”

—-” তাই? ছত্তি?”

—-” হ্যাঁ, সত্যি।”

“অনন্যা?”

জাইনকে আর বাচ্চা মেয়েটিকে গাড়িতে তুলতে গেলে হঠাৎ কেউ পিছু ডাকে স্বল্প বয়সী মেয়েটাকে। মেয়েটা পেছন মুড়ে তাকায়। তাকায় জাইন আর নিতুনও। অনন্যার মেয়ে ও। ওর নাম নিতুন। ওদের থেকে খানিক দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক পরিচিত লোক। অনন্যা তাকে চেনে। আর খুব ভালে করেই চেনে। লোকটা ইলহামের বাবা। রেজা সাহেব।

—-” আঙ্কেল?”

—-” কেমন আছো মা?”

—-” দাদুভাই?”

জাইন আমোদিত কন্ঠে বেশ জোরেশোরেই ডাকলো রেজা সাহেবকে। রেজ সাহেব হো হো করে হেসে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলেন জাইনের দিকে। জাইন দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরলো রেজা সাহেবকে।

—-” তুমি এতোদিন আছোনি কেন দাদু?”

জাইনকে কোলে তুলে নিলেন রেজা সাহেব। হাস্যজ্বল কন্ঠে নাতিকে আদর করতে করতে বললেন,

—-” একটু কাজ ছিলো দাদুভাই! তাই তো আসতে পারিনি। তবে দেখো, আজ এসে গেছি।”

—-” তোমরা ছব্বাই এতো বিজি থাকো কেন? এতো কাজ কেন তোমাদের?”

হাসলেন রেজা সাহেব। কি জবাব দিবেন ভেবে পেলেন না। গত ২বছর ধরে নাতির সঙ্গে সে এভাবেই দেখা করেন মেয়েকে লুকিয়ে। পাছে মেয়ে তার সত্যিটা জেনে বরাবরের মতো হারিয়ে যাবে সেই ভ/য়ে। রাদ অবশ্য কিছু বলেনি আর এই বিষয়ে। সবাই জানে এই মানুষটাই ঐ হতভাগীনির বাবা। কেবল ইলহাম ব্যতীত। হয়তো আর কোনোদিন ওর জানা হবেনা, তার আসল বাবার মুখ। হয়তো কিছু মানুষ পরিচয় বিহীনই সুখী। যেমন ইলহাম। ইলহামের খুশির জন্য হয়তো রেজা সাহেবও কখনোও নিজের পরিচয়টা দেবেন না মেয়েকে। হয়তো এভাবেই কাটবে তার গোটা জীবনটা। হয়তো এটাই তার সবচেয়ে বড় শা/স্তি।

_________________সমাপ্ত_____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here