#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব______৪০.
বেশ দামী একটা জামদানী শাড়ি পরিহিতা সুন্দরী মহিলাকে একপলক দেখলো রাদ। বয়স মোটামুটি পঞ্চাশের ঘরে। এই বয়সের মানুষদের মধ্যবয়স্কা বললেও এই সুন্দরী মহিলাকে সেই উপাখ্যান একদমই দিতে পারলোনা রাদ। কেননা, বয়সের জোয়ারভাটা একদমই পাল্টাতে পারেননি এই মহিলাকে।
রাদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুন্দরী মহিলা তাকে হাত ইশারা করে বসতে বলল। রাদ বসলো। রাদের সঙ্গে অন্তুও আছে। রাদ ওকে বসতে ইশারা করতে সেও বসে রাদের পাশে। ভদ্র মহিলা আর কেউ নয়, মিসেস লাবনী খান।
—-” মা/ফি/য়া/র পদ থেকে সরে এলে কেন রাদ?”
প্রশ্নটা বেশ রসালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো লাবনী খান। রাদ বুঝতে পারে, ‘মা/রা/মা/রি, খু/ন-খা/রা/বি এসবের প্রতি লাবনী খানের এক অদ্ভুত নেশা রয়েছে। যার দরুন, তিনি একজন বিজনেস ম্যানকে তার বর্তমান প্রফেশন সম্মন্ধে জিজ্ঞেস না করে প্রথমেই সেই লিস্টে নেমে গেছেন। রাদ মনেমনে বাঁকা হাসলো। তবে, এই মহিলাকে সে নিতান্তই সন্দেহের বসে ডাকেনি। একদম, শতভাগ সিওর হয়ে তবেই দেখা করতে এসেছে।
—-” লাইফে কিছু পেতে হলে এই সব কিছু পদ নিজের মাঝে আত্মস্থ করে রাখতে। বলা যায়না, কখন কোন কাজে লেগে যায়।”
—-” আপনার মতো চিন্তা করলে হয়তো পদটা ছেড়ে আমি ভুল করেছি। তবে ম্যাম, আন্ডারগ্রাউন্ডের দুনিয়ায় মিহাদ আবরিশাম রাদকে এখনোও কেউ ভুলেনি। কিংবা বলা যায়, রাদ ভুলতে দেয়নি। আমাকে ভুলে যাওয়া এতো ইজি নয়।”
রাদের এহেম জবাব হয়তো লাবনী খান আশা করেনি। উনার মুখের দাম্ভিক ভাবটা একটু হলেও ডেবে গেলো। কালো ফ্যাকাসে রঙ ধারন করলো উনার মুখটা। কয়েক লহমা চুপ থেকে ফের বলে উঠলেন,
—-” গ্রেট। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কিছু তো রেখেছো নিজের জন্য।”
—-” অনেক রিসার্চ করেছেন মনে হচ্ছে আমার ব্যাপারে!”
—-” নট লাইক দ্যাট এক্টচুয়েলি। বাই দ্য ওয়ে, আমাদের কাজটা কতদূর কি এগোলো? আমরা আর এক সপ্তাহের মতো আছি। ইংল্যান্ড থেকে প্রোপার্লি কাজের দেখাশোনাও হবেনা। তাই একটু জলদি চাচ্ছি।”
—-” জলদিই হয়ে যাবে। আর বেশি হলে ৩-৪দিন। এরমধ্যে আপনাদের বিল্ডিং রেডি থাকবে। বাই দ্য ওয়ে ম্যাম, ম্যে আই আস্ক ইউ সামথিং?”
—-” ইয়েস, অফকোর্স। বলে কি জানতে চাও?”
—-” আপনি মিশমিশ নামের কাউকে চিনেন?”
“মিশমিশ” নামটাতে যেন কেউ ব/ন্দু/ক তাক করলো লাবনী খানের দিকে। তৎক্ষনাৎ তিনি আঁতকে উঠলেন বন্দুক দেখে। চোখমুখ ঢেকে গেলো আঁধারে। “মিশমিশ” ইলহামের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। আর সেই মেয়েটির ব্যাপারে এই মা/ফি/য়া কেন জানতে চাচ্ছে?
—-” ম..মিশমিশ! ক..কে মিশমিশ?”
—-” আপনাকে এমন আ/তং/কিত লাগছে কেন? আর ইউ ওকে?”
রাদের চোখ এড়ালো না লাবনী খানের আঁ/তকে ওঠা মুখখানা। রাদ যেন এটাই চাচ্ছিলো মনে মনে। অন্তু বাঁকা হাসলো রাদের পানে চেয়ে। রাদও তাই।
—-” ঠ..ঠিকাছি। আমি কোনো মিশমিশকে চিনিনা।”
—-” ওহ, ওকে। ইট’স ফাইন। কাল তবে কাজের সাইটে গিয়ে দেখা হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে। আজ উঠি। কেমন?”
লাবনী খান আর জবাব দিলোনা। রাদ আর অন্তু জবাবের অপেক্ষা না করেই উঠে বেরিয়ে গেলো। তারা বেরিয়ে যেতেই বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো লাবনী খান। অর্থাৎ, ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।
_________
ইলহামের বক্তব্য অনুযায়ী রনো আঙ্কেলই হলো মিমির মামা। অর্থাৎ, কুহেলিকা খানের পার্সোনাল এসিসট্যান্ট। ইলহাম বলেছিলো, তার মায়ের মৃ//ত্যু সম্মন্ধে যেন রনো আঙ্কেলকে জানানো হয়, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত কুহেলিকা খানের মৃ//ত্যু//র কয়েকদিনের মাথায়ই রনো আঙ্কেলেরও মা//র্ডা//র হয়। আর যা নিখুঁত পরিকল্পনায় সম্পন্ন করেছে লাবনী খান।
আবদ্ধ ঘরটায় কোনো জানালা নেই। কেবল একটা দরজা। দরজাটা বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। গত ১২ঘন্টায় দরজাটা একবারের জন্যও খোলা দেখেনি লাবনী খান। যখন থেকে সে এখানে এসেছে তখন থেকেই বন্ধ পড়ে আছে জায়গাটা। আ/তং/কি/ত চোখজোড়া বারবার সেই বন্ধ দরজাতেই এঁটে যাচ্ছে লাবনী খানের। সে এখানে কি করে এলো, তাকে কারা নিয়ে এলো কিচ্ছু জানেনা সে। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন থেকেই তিনি এক ঘোরের মাঝে তলিয়ে আছেন। যতটুকুতে নিজেকে স্বাভাবিক করতে পেরেছেন ততটুকুতেই আন্দাজ করে নিয়েছেন, তাকে কেউ কি/ড/ন্যা?প করেছে। কিন্তু, এতো বড় দুঃসাহস কার হবে? কে তুলে আনবে লাবনী খানকে?
খট করে একটা তীক্ষ্ণ শব্দে ভেসে এলো কানে। লাবনী খান চমকে উঠলো। ভ/য়া/র্ত চোখ জোড়া ছুটে গেলো বন্ধ দরজায়। কেউ দরজা খুলছে। লাবনী খান ভেতরে ভেতরে ভ/য় পাচ্ছে। তবে চোখমুখ রেখেছে ধারালো ছু/রি/র মতো। যেন শ/ত্রু পক্ষ তার এমন ভ/য়া/ন/ক চাহনিতেই কুপকাত হয়ে যায়। তবে আরেকটা চিন্তার বিষয় পুরো ঘরটা এতোটাই অন্ধকার যে, সে চাইলেও নিজের অবস্থান বুঝতে পারছে না।
কেউ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। একটা ছায়া মানব ভাসছে লাবনী খানের অক্ষিপটে। লাবনী খান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
—-” ক..কে! কে ওখানে?”
তার এই প্রশ্নের কোনো জবাব এলোনা। কেবল ভেসে এলো ভ/য়া/ন/ক এক শব্দ। শিষের শব্দ। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি শিষ বাজাচ্ছে। কেমন অদ্ভুত এই শব্দ। আর বড্ড চেনা। চেনা হবে নাই বা কেন? এই শিষের মাস্টার মাইন্ড যে সে নিজেই। বহুবছর পূর্বে এই শিষের সূচনা করেছিলো লাবনী খান। অবশ্য, তার নামের শেষ খানের ট্যাগটা তখনও যুক্ত হয়নি। তখন সে ছিলো লাবনী রহমান। গরীব বাবা রহমান মাস্টারের মেয়ে লাবনী রহমান।
—-” ক..কে! ক..ককে তুমি! এমন করে শিষ বাজাচ্ছো কেন? কে তুমি? সামনে এসো? সামনে এসো!”
বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো লাবনী খান। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা বোধহয় মুচকি হাসলো। লাবনী খানকে খুশি করতে সে এক কদম সামনেও এগোলো। তবে, পূর্বের ন্যায় মুখটা তখনও আড়ালে লুকিয়ে রাখলো।
—-” লাবনী রহমান। ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা গরীব মাস্টার মশাইয়ের মেয়ে লাবনী রহমান। শহরে গ্রাজুয়েশন করতে এসে হুট করে প্রেমে পড়ে যায় একজন নামকরা সিঙ্গারের। দ্যা গ্রেট রেজা খান। তার প্রেমে পাগল প্রায় লাবনী রহমান। খোঁজ নেয় সিঙ্গারের আগাগোড়া। জানতে পারে, সে বিবাহিত। তবে হেব্বি বড়লোক। একেতো রূপ আর তারউপর টাকাপয়সা! কোনোদিক থেকেই লোভ সামলাতে পারলো না লাবনী রহমান। বিবাহিত হলে হবে, তবুও তার রেজা খানকেই চাই। তার এক সময়ের দারিদ্র্যতা তার মনে অনেক আগে থেকেই প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছিলো। অবশ্য সময় এবং সুযোগে অভাবে লাবনী খান টের পাননি তার মনের কথা। অবশেষে বুঝে যান নিজের মনের কথা। একবার দ্বিমত এলেও নিজেকে পূণরায় বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আদাজল খেয়ে পড়েন রেজা খানের পেছনে। রেজা খানকে হাত করতে না পারলেও লাবনী রহমান জানতে পারেন, রেজা খানের একমাত্র স্ত্রী অর্থাৎ কুহেলিকা খান সেই সময়ে রেজা খানের চেয়েও কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলেন সুনামে। যেটা রেজা খানকে প্রতিনিয়ত ধ্বং/সে/র দিকে ঠেলে দিতো। রেজা খান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তার স্ত্রী তার চেয়ে বেশি ফেমাস। এই নিয়ে তিনি সর্বদা তার পত্নীর সঙ্গে তর্কে থাকতেন। লাবনী খান এর সমস্তটা ইতিমধ্যেই আয়ত্ত করে নিলেন। এখন সুযোগ বুঝে দান দেওয়ার অপেক্ষা। অবশেষে এসেও গেলো সেই সুযোগ। ইতিমধ্যে রটিয়ে পড়লো বিশিষ্ট সিঙ্গার কুহেলিকা খান প্রেগন্যান্ট। অর্থাৎ রেজা খান এবং কুহেলিকা খান বাবা-মায়ের ট্যাগ পেতে যাচ্ছেন সামনেই।”
—-” চুপ করো! চুপ করো(চেঁচিয়ে) ক..কে তুমি? কে কে? আর এসব কথা তুমি জানলে কেমন করে? কেমন করে জানলে!”
লাবনী খানের গলা কাঁপছে। কথা বের হচ্ছে আবার বের হচ্ছে না। বুঝে কুলোতে পারছেনা তার সাথে ঠিক কি হচ্ছে। তারই সামনে একটা পুরুষালী কন্ঠ বইয়ের পাতার ন্যায় তার কালো অতীত কেমন করে চর্চা করে যাচ্ছে। কে এই মানব! কে?
—-” এখনোও তো কাহিনী বাকি ম্যাম। আরেকটু ধৈর্য্য ধরুন। সবটা শুনুন। এরপর না হয় মন্তব্য করবেন?”
লাবনী খানের শরীর ঝ/ল/সে যাচ্ছে রা/গে। কিন্তু তাতে সামনের মানুষটার কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। সে পূণরায় বলতে শুরু করলো,
—-” ভক্তের রূপ নিয়ে অবশেষে লাবনী রহমান এসে দাঁড়ালো রেজা খানের সামনে। বিক্ষিপ্ত রেজা খান হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে গেলেন তার এমন ভ/য়া/ন/ক সুন্দরী ভক্তের দেখা পেয়ে। তিনি আরও শান্ত হয়ে গেলেন, যখন জানতে পারলেন তার এই সুন্দরী ভক্ত নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তাকে। ওমন একটা সিচুয়েশনে রেজা খান দুর্বল হতে শুরু করলেন তার সুন্দরী পাগলা ভক্তের প্রতি। তার পাগলা ভক্তও ঝোপ বুঝে কো/প দিতে বিন্দুমাত্র দেরী করলেন না। ভালোবাসার নাম করে শুরু করে দিলেন তার উদ্দেশ্য হাসিল। কুহেলিকা ম্যামের সন্তানকে অস্বীকার এবং কুহেলিকা ম্যামকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ দিতে শুরু করলেন রেজা খানকে। রেজা খানও ঠিক তাই তাই করলেন, যেটা আপনি তাকে করতে বাধ্য করেছেন। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা একজন মহিলাকে মে/রে ধ/রে আধম/রা করে, মিডিয়ার সামনে গলা উঁচিয়ে নিজেরই স্ত্রীর নামে কুরুচিপূর্ণ শব্দগুলো ব্যবহার করতে এই আপনি, লাবনী রহমান তাকে বাধ্য করেছিলেন! এমনকি তাকে ডিভোর্সের নোটিশটাও আপনি নিজ হাতে পাঠিয়েছিলেন। এই অব্দি তো সবটা ঠিকই ছিলো মিসেস খান! এরপর এটা আপনি কি করলেন? একটা জলজ্যান্ত মানুষকে এভাবে খু//ন করলেন? নিঃশেষ করে দিলেন দুনিয়ার বুক থেকে? কেন! সে তো তার সন্তানকে নিয়ে আপনাদের থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছিলো, তবে কেন তাকে খু//ন করা হলো? এবার আপনি বলুন!”
—-” না!(চেঁচিয়ে) আ..আমি কাউকে খু//ন করিনি! আ..আআমি! আমি খু//ন করিনি।”
—-” করেছেন! আপনিই খু//ন করেছেন। তবে শুধু কুহেলিকা ম্যামের নয়, তার সঙ্গে আরও দুটো জান আপনি বিনা সংকোচে কেঁড়ে নিয়েছেন। এক রনো আর দুই মিশমিশ! এরা আপনার কি এমন ক্ষ/তি করেছিলো বলতে পারেন? কেন এতো গুলো নিষ্পাপ জীবন আপনি কেঁড়ে নিলেন? সামান্য কিছু লো/ভের জন্য!”
—-” ম..মমিথ্যে! সব স..সব মিথ্যে। আমি কিছু করিনি.. সব রেজা করেছে। হ..হ্যাঁ! র..রেজা করেছে। আমি কিছু করিনি!”
বিকট শব্দে হেসে উঠলো মানুষটা। তার হাসির শব্দে কেঁপে উঠলো লাবনী খান। এমন ভ/য়ং/ক/র হাসির শব্দ সে এর পূর্বে কখনোও শুনেনি যেন। আবার সেই শীষের শব্দ। আবারও কেঁপে উঠলো লাবনী খান। কুহেলিকা খানকে মে//রে ফেলার পূর্বে প্রায় প্রতিদিনই তাকে এই শীষের শব্দ শুনিয়ে ভ//য় দেখানো হতো। কেউ বা কারা রোজ তার ঘরের সামনে থেকে এইরূপ শব্দ করতে করতে চলে যেতো। কুহেলিকা খান ভ//য়ে ঠিক করে ঘর ছেড়েও বের হতেন না। গোটা একটা বছর এমন করেই কেটেছে তার। অতঃপর মোক্ষম সুযোগ পেয়ে তাকে দুনিয়া থেকেই তাড়িয়ে দিলো এই নি/কৃ/ষ্ট মহিলা।
শিষের শব্দটা ক্রমশ মিলিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ অন্ধকার ঘরটার দরজাটা পূণরায় বন্ধ হয়ে গেলো। ফের কেঁপে উঠলো লাবনী খান। এ কেমন
মৃ/ত্যু/পু/রী/তে রেখে গেলো তাকে!
—-” ক..কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমাকে একা রেখে যেওনা। আমার ছেড়ে দাও! আমি কাউকে খু//ন করিনি। আমাকে যেতে দাও। রেজা, র..রেজা কোথায়? রেজাকে এ..এনে দাও আমার কাছে? ক..কোথায় গেলে তুমি? এই ছেলে!”
#চলবে