প্রেম পিয়াসী পর্ব ১৬

0
588

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
পর্ব________১৬.

—-“হা-তে কি-ছু লাগাওনি কেন?”

ইলহামের ঠান্ডা হাতটা নিজের হাতের ভাজে জড়িয়ে নিলো রাদ। অনুরাগী স্বরে বলে উঠলো কথাটা। ইলহাম রাদের তপ্ত ছোঁয়ায় খানিক ঘোরে তলিয়ে যায়। বলে,

—-“এমনি সেরে যাবে।”

ইলহামের ভাবলেশহীন গলায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাদ। বলল,

—-“পু ড়ে গেছে তো!”

—-“ও কিছু না। সামান্য গরম সেক লেগেছে।”

রাদ সহসা খানিকটা ঝুঁকে ইলহামের হাতের উপর গাঢ় একটা চু মু খেলো। ইলহাম কেঁপে উঠে ব্যস্তসমস্ত চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো। রাদ ঝুঁকে থেকেই প্রগাঢ় দৃষ্টিতে অবলোকন করলো লজ্জায় আড়ষ্ট হওয়া তার প্রিয়দর্শিনীকে। ভয়ানক আবেদনময়ী লাগছে তাকে। ভেতরটা অস্থিরতায় দুমড়েমুচড়ে যেতে আবারও কেঁপে উঠলো ইলহাম। তবে এবারেও রাদের অদ্ভুত কর্মকাণ্ডেরই ফল। আকস্মিক তার তপ্ত ওষ্ঠদ্বয় আলতো আকারে স্পর্শ করলো ইলহামের কম্পিত ওষ্ঠদ্বয়ে। ইলহাম ওড়নার পাড় খানা খামচে ধরলো হাতের ভাঁজে। রাদ হাত বাড়িয়ে কোমর ছুঁয়ে দিলো প্রিয়দর্শিনীর। প্রিয়দর্শিনী পূণরায় কেঁপে উঠল। রাদ তাকে নিজের কাছে টেনে আনলে ইলহাম তার শার্ট আঁকড়ে ধরে। প্রায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো।

রাদ ফ্রেশ হয়ে একটা থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর একটা টি-শার্ট পড়ে বের হলো। ইলহাম তার ঘর থেকে এগুলোই নিয়ে এসেছিলো। মাথাটা এখনও ভনভন করে ঘুরছে। নিহার শাশুড়ী এবং রাজিয়া বেগমের কথাগুলোয় নিজের রা/গকে কোনো ভাবে ধরে রাখতে পারেনি সে। যার দরুণ তখন সব রা/গ ইলহামকে দেখিয়ে হনহন করে চলে গিয়েছিলো। অতঃপর সোজা ম দ খেতে। রাদ সর্বদাই একটু-আধটু ম দ খেতো। তবে আজ যে পরিমান পেটপুরে খেয়েছে, তা মনে পড়েনা গত কয়েক মাসে খাওয়া পড়েছে কি না?

ইলহাম লেবুর জলটা এগিয়ে দিলো তার নিকট। বলল,

—-“এটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন!”

—-“ক্ষিদে পেয়েছে!”

বাচ্চা সুলভ কন্ঠে বলল রাদ। ইলহাম ঘড়ির দিকে তাকালো। ৩টা বেজে ১০মিনিট। লেবুর জলটা রাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

—-“দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। কিছু একটা বানিয়ে নিয়ে আসি।”

ইলহামের কথা মতো রাদ দশ মিনিট অপেক্ষা করলো। ইলহাম দশ মিনিটের মাথায় প্লেটে করে একটা পিৎজা নিয়ে হাজির হলো। পিৎজা থেকে শাঁই শাঁই ধোঁয়া উড়ছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে এক্ষনি নামানো হয়েছে চুলা থেকে। রাদ পিৎজাটা দেখে হা সূচক দৃষ্টি মেলে তাকালো ইলহামের পানে। তার ভাবখানা এমন যেন, বিশ্বাস করে উঠতে পারছেনা। সহসা দাঁড়িয়ে গেলো রাদ। ইলহাম পিৎজার প্লেট টা বেডের উপর রাখতেই রাদের অবাক – বিস্ময় কন্ঠখানা শ্রবণ গোচর হলো,

—-“এ্ এটা তুমি বানিয়েছো?”

ইলহামের রিয়াকশন একদমই শান্ত। বলল,

—-“হুম। কেন?”(ভ্রু নাচিয়ে)

—-“এটা পাউরুটি কেটে যে পিৎজা রেসিপি সেটাই তো!”

ইলহাম এবার একটু অবাকই হলো যেন। কপালের মাঝে বিস্ময়ের শতকুটি তীক্ষ্ণ ভাজ ফেলে বলল,

—-“হ্যাঁ, সেটাই। কেন বলুন তো? আর আপনি এতো অবাক-ই বা কেন হচ্ছেন?”

রাদের বক্ষপিঞ্জরে এক অদ্ভুত শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। ভেতরটা শীতল হয়ে যেতে রাদ ইলহামের হাত টেনে কাছে নিয়ে আসে। একপ্রকার আকুতি ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

—-“ত্ তোমার মনে আছে এই রেসিপির কথা?”

ইলহাম এবার অবাকের শীর্ষে এসে ঠেকে। কপাল কুঁচকে বলে,

—-“মানে?”

রাদ মুখে হাত চেপে শূন্যে দৃষ্টি ভাসায়। পরক্ষণেই আবার বলে,

—-“সুইটহার্ট? ত্ তোমার কি সবটা ম্ মনে পড়ে গেছে?”

ইলহামের এবার বেশ বেগ পেতে হয় রাদের কথাটা বুঝতে। সে হা করে তাকিয়ে থাকে। তার চোখমুখ ফুলেফেঁপে উঠছে বিস্ময়ে। হলো কি লোকটার? হঠাৎ কি বলে যাচ্ছে এসব?

—-“আপনি কি মনে করার কথা বলছেন? আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা!”

—-“এ্ এই যে! এই রেসিপিটা তোমাকে কে শিখিয়েছিলো? ম্ মনে আছে তোমার?”

উত্তেজনায় রাদের কন্ঠ কাঁপে। কাঁপে তার হাত ও মুখ। ইলহাম একবার তাকায় বেডের উপর স্থান পাওয়া পিৎজাটার দিকে। কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে ভাবার চেষ্টা করে। তাকে এই রেসিপি কে শিখিয়েছিলো? ধ্যাৎ.. কে আর শেখাবে? সে তো ছোট থেকেই পটু এসব রান্না-বান্নায়।

—-“কে শেখাবে? আমি নিজেই তো পারতাম এসব। আরও অনেক রেসিপি পারি। আপনি তো জানেন, বাসায় আমি ছিলাম এজ আ কাজের বুয়া। মামী এবং তিন্নির একেকদিন একেকটা আবদার ছিলো। আজ এই খাবো তো কাল ঐ খাবো। তাদের আবদার মেটাতে মেটাতে আমি সব রান্নাতেই পারদর্শী হয়ে গেলাম।”

রাদ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নাহ; সে অযথা স্বপ্ন দেখে ফেলছে তার প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে। এতো সহজে কি ওর সবটা মনে পড়বে? হয়তো না! সম্ভবনা নিতান্তই শূন্য। বলেছিলেন ডক্টর ওয়াহিদ আলম।

—-“কিন্তু আপনি কার কথা বলতে চাচ্ছিলেন, মানে আমাকে কে শেখাবে এসব?”

—-“ন্ না! ক্ কিছুনা।”

ইলহাম ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটতে বসেনা। সে পিৎজাটা চার ভাগ করে কেটে রাদকে পুরোটাই খেতে দেয়। সত্যি বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে তার। কেমন করে খেয়ে চলেছে। একে একে পুরোটাই শেষ করলো রাদ। খাওয়া শেষে এখন যেন শরীর ভে ঙে আসলো। আর স্বস্তি নিয়ে বসতে পারলোনা। কিছু না বলেই বিছানায় লেপ্টে পড়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো।

____________________________________________

সমস্ত ক্লান্তি কাটিয়ে রাদ ঘুম থেকে উঠলো দুপুর ঠিক ২টায়। ইলহাম রাতে অনন্যার ঘরে চলে গিয়েছিলো ঘুমানোর জন্য। নয়তো ভোরের দিকে কেউ তাদের একসাথে দেখলে আবারও হাজারটা কথা শুনতে হবে। আজ অনন্যার বিয়ের শপিং করা হবে। আত্মিয় স্বজন বেশিরভাগ এসে হাজির হয়েছে। সবাইকে সঙ্গে করেই শপিং এর উদ্দেশ্যে বের হলো ঠিক ৪টা নাগাদ। অনন্যা সারাক্ষণ ইলহামের সঙ্গে থাকছে। ইলহামের সাথে তার একটা জোড়ালো বন্ডিং দেখা যাচ্ছে। যা দৃষ্টি কটু হয়ে উঠেছে রাজিয়া বেগমের। তবে, ‘মেয়ে আর কয়দিন থাকবে’ এই ভেবে কিছু বলছেন না।

শপিং করতে করতে হাঁপিয়ে ম র ছে সবাই। ইলহাম রাদের হুকুমে দু’টো শাড়ি নিলো। আর এক’টা লেহেঙ্গা। জুয়েলারি তেমন পছন্দ হচ্ছে না বলে নিলো না। বাকি সবকিছু একদম নিখুঁত আকারে পরখ করে কিনে দিচ্ছে অনন্যাকে। অনন্যা হাসি মুখে সবই নিয়ে নিচ্ছে। সে উপরে উপরে হাসলেও ভেতরটা যে কেমন করে পু/ড়ে যাচ্ছে, সেসব যে সে ছাড়া কেউ জানেনা।

শপিংমলে হঠাৎ প্রণয়ের সাথে দেখা ইলহাম এবং অনন্যার। প্রণয়কে দেখতেই অনন্যা এক রকম বাঁধন হারা তৃষ্ণার্ত পাখির মতো ছুটে গেলো। ইলহাম অবাক নয়নে সবটাই নিরক্ষন করলো। অনন্যা করুন কন্ঠে বলতে লাগলো,

—-“আমাকে নিতে এসেছেন, প্রণয় ভাই!”

প্রণয় হঠাৎ অনন্যাকে দেখবে ভাবতে পারেনি। আকস্মিক অনন্যাকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেমন এক তৃপ্তি এসে ছুঁয়ে গেলো মনকে। তবে আকস্মিক অনন্যার কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই নিজেকে কেমন পৃথিবীর সবচেয়ে নি কৃ ষ্ট এক পা পী বলে মনে হলো!

—-“ক্ কি হলো? কথা বলছেন না কেন?”

অনন্যার ডাকে ঘোর কাটে প্রণয়ের। নিজেকে স্থীর করার দায়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। অতঃপর বলে,

—-“ তুমি হঠাৎ এখানে? কার সাথে এসেছো?”

—-“সবার সাথে। বিয়ের শপিং এ!”

বিয়ের শপিং এ কথাটা শুনতেই ভেতরটা কেমন কেঁপে উঠল প্রণয়ের। ছোট্ট একটা ঢোক গিলে বলল,

—-“ওহ। অন্তুও এসেছে? আর রাদ..”

অনন্যা ভাবলেশহীন গলায় বলল,

—-“সবাই!”

—-“কোথায় ওরা? দেখছিনা যে! আর বিয়ের শপিং এ এসে বিয়ের কনে একা একা কেন ঘুরছে?”

প্রণয় কথাটা শেষ করতে তার সামনে এসে দাঁড়ালো ইলহাম। ইলহামকে দেখতে প্রণয় মৃদু হেসে চা’পা দেয় নিজের ভেতরের আ ক্ষে প, আ র্ত না দ গুলো। বলল,

—-“আস্সালামু আলাইকুম, ভাবী।”

ইলহাম মৃদু হেসে সালামের জবাব দেয়। বলে,

—-“ভাইয়া হঠাৎ শপিং এ? কারোর জন্য গিফট নেওয়া হচ্ছে নাকি?”

ইলহাম এই কথাটা একটা ফাঁদ হিসেবে ব্যাবহার করে। সে দেখতে চায় এই কথার পিঠে কে আগে রিয়াক্ট করে অনন্যা নাকি প্রণয়!

তার ভাবনাই মিলে যায়। প্রণয়ের আগেই কেমন ম রা কন্ঠে বলে ওঠে অনন্যা,

—-“গার্লফ্রেন্ডের জন্য গিফ্ট নিচ্ছেন, প্রণয় ভাই?”

অনন্যার কথাটা হেসে উড়িয়ে দেয় প্রণয়। ইলহাম যা বোঝার বুঝে নেয়। একটু মৃদু হেসে বলে,

—-“তাহলে কার জন্য?”

—-“তেমন কিছুনা ভাবী। মায়ের কিছু দরকারী জিনিসপত্র নিতে এসেছিলাম। বাই দ্য ওয়ে, রাদ কোথায়? এখানে যখন আছে একটু সাক্ষাৎ করে যাই।

—-“নিশ্চয়ই। আসুন আমার সাথে।”

________________

—-“কি ভাই? এভাবে হুট করে একদম লাপাত্তা! তারপর আর কোনো খবরই নেই?”

প্রণয়ের প্রশ্নে মলিন হাসলো রাদ। কফির মগটা হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইলহামের পানে। দুই বন্ধুকে মিলিয়ে দিয়ে সে অনন্যাকে নিয়ে পূণরায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো কেনাকাটায়। জুয়েলারির দোকানো দাঁড়িয়ে অনন্যার পছন্দের সব ডিজাইন গুলো খতিয়ে দেখছে।

—-“নিয়তি! নিয়তি আমার থেকে আরও একবার সবটা কেঁ/ড়ে নিলো রে। তাই.. নিজেকে নিয়ে বেঁ’চে থাকার ব্রত করেছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, উপরওয়ালা সেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওকে আবারও আমার কাছে উপহার হিসেবে পাঠালেন, তখন পূণরায় একা থাকার ব্রত উপেক্ষা করে ফিরে এলাম। আরও একবার ওকে সঙ্গে করে হোক বেঁ’চে থাকার বা ম/রে যাওয়ার আক্ষেপে ফিরে এলাম।”

প্রণয় অবোধ দৃষ্টিতে তাকালো রাদের পানে। গুণীদের মতো কপাল ভাজ করলো রাদের অগোছালো, আগাগোড়া বিহীন কথা গুলো নিজের মাঝে আয়ত্ত করার খাতিরে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা। কপাল কুঁচকে রেখেই ভাবপ্রবণ হয়ে বলল,

—-“মানে?”

রাদ হঠাৎ ঘোর থেকে বেরোলো প্রণয়ের কন্ঠ পেয়ে। তড়িঘড়ি ইলহামের থেকে দৃষ্টি লুকিয়ে তাকালো প্রণয়ের পানে। ওমনি প্রদর্শন হলো, প্রয়ণের অবোধ, অর্থাৎ কিছু বুঝতে না পারা মুখটা।

রাদ পূর্বের ন্যায় হাসলো। কফির কাপ টা উঠিয়ে আনলো ঠোঁটের আগায়। কেন যেন, চুমুক দিতে যেয়েও পারলোনা। উনিশ-বিশ ভাবতে ভাবতে একপ্রকার অসহায় কন্ঠে বলল,

—-“ইলহাম সবটা ভুলে গেছে!”

কথাটা শুনতেই মাথার উপর থেকে শা শা করে কিছু উড়ে গেলো প্রণয়ের। তার দৃষ্টি সহসা নি’থর হয়ে উঠলো। গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে আসতে ঢোক গিললো। শুঁকনো স্বরে বলল,

—-“মানে! কি বলছিস এসব?”

—-“ইয়েস, দ্যাট’স ট্রু।”

প্রণয় বুকের ভেতর একপ্রকার জ্বালা অনুভব করলো। অদ্ভুত চাহনিতে রাদকে একবার পরখ করে নিলো। মনে মনে প্রশ্ন জাগলো, “তবে,কি করে বেঁচে আছে ছেলেটা?”। জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠলো না যেন। প্রণয়ের র//ক্ত//ক্ষ/র/ণ হলো অনন্যার কথা ভেবে! সেও কি কোনোদিন মেনে পারবে তাদের এই বিচ্ছেদ? রাদ তো তবুও ভাগ্যবান। অন্তত ভালোবাসার মানুষ টা তো সঙ্গে আছে। হোক সবটা ভুলে! আছে তো? সে তো তার চেয়েও বড় হত’ভা’গা।

—-“ত্ তুই কখনো ভাবিকে কিছু মনে করানোর চেষ্টা করিস নি?”

—-“চাইলেও সম্ভব ছিলোনা। ডক্টরের কড়া নিষেধ ছিলো। ওর ব্রেনে কোনো রকম চাপ পড়লে শর্ট টাইম মেমোরি লস এর প্রবলেম লং টাইমে পরিণত হতে সময় লাগবেনা! তাই..”

—-“আচ্ছা ভাই, ভাবির কি কিচ্ছু মনে নেই? সেই তিনবছর পূর্বে তোদের বিয়ে, সংসার! কিচ্ছুনা?”

রাদের বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। একই সাথে চোখের কোন গুলো কেমন চিকচিক করে উঠলো চোরাবালির ন্যায়। মুখে বলল,

—-“না! কিচ্ছু মনে নেই। একদম কিচ্ছু না।”

—-“ড্যাম ইয়ার! ডক্টর কি বলে?”

—-“ওকে ওর স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু, আমার ভ/য় ছিলো ওর মামীকে নিয়ে। আর যা নিয়ে ভ/য় হচ্ছিলো, আখেরে সেটাই ফললো। উনি আমাকে না জানিয়ে ইলহামের অন্যত্র বিয়ে দিচ্ছিলেন। তাই ইলহামকে জোর করেই নিয়ে আসি আমার কাছে। জানিস, ও এখনও পুরোটা স্বাভাবিক নয় আমার সাথে। তবে কোথাও একটা টান ও ঠিকই অনুভব করে আমার প্রতি। আর যে টানে জোর করে হলেও ও থেকে গেছে আমার সাথে।”

প্রণয় মুখখানা সরু করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। বলল,

—-“তবে, ভাবির এখন কোন কথাগুলো মনে আছে? ছোট বেলার কথা?”

—-“নট সো! আমি এখনও নিশ্চিত নই ওর ঠিক কোন কথাগুলো মনে আছে। আমাদের বিয়ের আগে যেমন করে নিজের জীবন পার করতো, এই মুহুর্তে ও সেটাই করছিলো। তার মানে, হয়তো ওর চার বছর আগের কথা মনে আছে। এন্ড মিশমিশের মৃ/ত্যু/র কথাও মনে আছে ওর। তবে, ওর মায়ের মৃ/ত্যু/র কথা মনে নেই। যখন আমাদের বিয়ে হয়েছিলো, তখন ওর মিশমিশের মৃ/ত্যু/র কথা মনে ছিলোনা। কিন্তু, আন্টির মৃ/ত্যু ওর স্পষ্ট মনে ছিলো। অর্থাৎ ঐ সময়টায় ওর তার কয়েক বছর পূর্বের কথা মনে ছিলোনা। প্রত্যেক বার এমন করেই কাটে। প্রতিটা ধাপে ধাপে, স্তরে স্তরে! মাঝখান থেকে দেখ, আমি কেমন নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ হয়ে গেলাম!”

—-“তোর জীবনে এতকিছু ঘটে গেলো, অথচ তুই একবারও মুখ ফুটে জানাতে পারলিনা আমায়? এই নাকি বলিস আমি তোর কাছের বন্ধু!”

রাদ পূর্বের ন্যায় একাধারে দীর্ঘশ্বাস গুলো বিসর্জন দিতে থাকে। কয়েক মুহুর্ত নিশ্চুপ থেকে এক সময় বলে,

—“জীবনের প্রতি আমার অগাধ বিতৃষ্ণা জমে গিয়েছিলো। তাই কাজের অজুহাতে গত একটা বছর ওর থেকে দূর, মায়ের থেকে দূর! সবার থেকে একটা দূরত্ব করে চলে গিয়েছিলাম থাইল্যান্ডে। কাজের প্রচন্ড প্রেশারে আর মেন্টাল স্ট্রেসে পড়ে তো দেশে ফেরার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। অতঃপর যখন সেই তিন বছর আগের কথা গুলো থেকে থেকে আমার মেন্টাল স্ট্রেস বাড়িয়ে দিতে থাকলো, তখন আর পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে। উন্মাদের মতো চলে এলাম আমার দেড় বছরের ফেলে রাখা ছোট্ট সংসারটা পূণরায় সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার আক্ষেপে। কিন্তু, সময়ের কাছে আমি আবারও অসহায় হয়ে গেলাম। এক বিশাল সময় চাইলো ধরণী। ইলহামের আরও একবার সবটা মনে পড়ার সময়।”

—-“একটাবারও কি এর কিছু.. এই আংশিক কিছুও বলা যেতোনা ভাবিকে?”

—-“হয়তো যেতো! কিন্তু আমি চাইনা, আমার কারনে বেচারি আরও নতুন করে কিছু সহ্য করুক। অলরেডি, ছোট বেলা থেকে অনেক কিছু সহ্য করতে করতে বড় হয়েছে। আর কত সহ্য করবে বল?”

—-“আর তুই?”

—-“ওর ক’ষ্টগুলোর কাছে আমার ক’ষ্ট গুলো নিতান্তই তুচ্ছ রে। আমি চাই, উপরওয়ালা স ইচ্ছেতে আমার প্রাণ ভোমরাকে ফিরিয়ে দিক আমায়। আমি জোর করে কিছু পেতে চাইনা।”

—-“চিন্তা করিস না ভাই। আজ থেকে আমি আছি তোর পাশে। আমি তোকে বলছি, ভাবির খুব শীঘ্রই মনে পড়বে সবটা। তোর প্রাণ ভোমরা খুব জলদি ফিরে আসবে তোর কাছে। শুধু একটু ভরসা রাখ।”

রাদ হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে মলিন হাসলো। ফের পাশ থেকে তাকালো ইলহামের স্নিগ্ধ কোমল মুখাখানার প্রতি। কতটা মায়া জুড়ে আছে ঐ মুখে। ঠিক যেমন তিন বছর পূর্বে দেখেছিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here