#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_____১৪.
—-“ভ্ ভাবি!”
ভ/য়ার্ত গলায় ঢোক গেলে অনন্যা। চাতক পাখির মতো একবার ইলহামকে দেখে তো একবার প্রণয়কে। প্রণয়ও একই ভাবে ঢোক গিললো অনন্যার ন্যায়।
—-“ভাবি.. উনি.. উনি ভাইয়ার বন্ধু! প্ প্রণয় ভাই।”
নামটা শুনতেই ইলহামের কুঞ্চিত ভ্রু জুগল কুঁচকে পড়ে আরও খানিকটা। সে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহুর্ত। ভাবতে থাকে ভোরের কথা গুলো! তার স্পষ্ট মনে আছে.. অনন্যা ফোনে যার সাথে কান্না করে কথা বলছিলো, সেই ব্যাক্তিও প্রণয় ভাই নামেরই কেউ ছিলো। তবে কি উনিই সে?
—-“আস্সালামু আলাইকুম, ভাবি। আমি কিন্তু আপনাকে চিনি।”
প্রণয়ের কন্ঠে ভাবনার রেশ কাটে ইলহামের। তবু বিস্ময় কাটেনা যেন। এক প্রকার অবাক হওয়ার চেষ্টা করেই বলে,
—-“আমাকে চিনেন? কিভাবে?”
প্রণয় স্বভাব সুলভ হাসে। একবার অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-“আপনার বরও কিন্তু আমার বন্ধু। এবং খুব কাছের।”
ইলহাম ভ্রু কুঞ্চিত করে। একটু বিরক্ত স্বরে বলে,
—-“আমাদের কিন্তু এখনও বিয়ে হয়নি।”
ইলহামের কথায় প্রণয়ের দৃষ্টি খানা কেমন যেন হয়ে ওঠে। বলে,
—-“মানে? কি বলছেন!”
—-“হ্যাঁ, প্রণয় ভাই! রাদ ভাই আর ভাবির বিয়ে হয়নি তো এখনও। হবে খুব শীঘ্রই।”
প্রণয়ের আকাশসম বিস্ময় কাটেনা এক ইঞ্চিও। কিন্তু সে এই বিষয়ে কথা বাড়ায় না বিশেষ। ভাবে, অজানা ব্যাপারে না জেনে বেশি ঘাটানো ঠিক হবেনা।
—-“ওহ্, ওকে। আজ আমি তবে আসি? ভাবি, আসলাম। ভালো থাকবেন।”
—-“সেকি ভাইয়া? ঘরের কাছে এসে ফেরত যাবেন কেন? একবার বাসায় চলুন? আপনার বন্ধু বাসাতেই আছে।”
ইলহামের প্রস্তাবে বিশেষ স্বস্তি পেলোনা প্রণয়। আঁড়চোখে একবার তাকালো অনন্যার পানে। অনন্যা ব্যকুল নয়নে তাকেই দেখছিলো। সে তাকাতেই চোখাচোখি হলো তাদের। তবে ইলহাম যেন কিছু না বুঝতে পারে, সেই খাতিরেই চটজলদি চোখ সরিয়ে নিলো অনন্যার থেকে। অতঃপর তার পানে চেয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,
—-“না ভাবি। আজ একটু তাড়া আছে। বিয়ের তো এখনও বেশ কয়েকটা দিন বাকি। এর মধ্যে আশা যাওয়া হবে নিশ্চয়ই। তখন একদিন দেখা করে যাবো না হয়? আজ আসি।”
এই বলে প্রণয় আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো। প্রণয়ের যাওয়ার পানে এক পলক দেখে অনন্যার পানে তাকালো ইলহাম। দেখলো, ব্যকুল দৃষ্টিতে তাকে পলকহীন দেখছে অনন্যা। তার ব্যকুল নয়নে কত আক্ষেপ জমে আছে জানা নেই কারো।
—-“অনন্যা? বাসায় ফিরবে নাকি ফুসকা খাবে?”
ইলহামের ডাকে অনন্যার ঘোর কাটে। চটজলদি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে ঠোঁটের কোনে জুড়ে দেয় মেকি হাসির রেখা। এক্ষনি এক গাদা মিথ্যে দিয়ে ভোলাবে ইলহামকে। যেন, সে এই বিষয়ে ওতো গভীরে গিয়ে না ভাবে।
—-“খাবোনা কি বলছো? আলবাত খাবো। আসলে কি হয়েছে বলোতো ভাবি? ফুসকা মামার কাছে যেতে যেতে হঠাৎ দেখি প্রণয় ভাই এখানটাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ভদ্রতার খাতিরে এসে নিজ থেকেই কথা বললাম।”
অনন্যার বানোয়াট কথাতে ইলহাম ঠিক কতটুক সন্দেহ দূর করতে পারলো জানেনা অনন্যা। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করলো ইলহামের মনের সকল সন্দেহ দূর করতে।
অবশেষে ফুসচা খেয়ে বাসায় ফিরলো তারা। তখন গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যার হাট বসেছে। পশ্চিমাকাশের অন্তরীক্ষ গাঢ় হলুদ বর্নে লেপ্টে উঠেছে ক্রমশ। ধীরে ধীরে অন্ধকারের মেলা জমছিলো। ইলহাম নিঝুমকে তার মায়ের হাতে দিয়ে চলে এলো নিজের ঘরে। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো তার বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে রাদ। রাদকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে প্রথম দশায় একটু অবাক হলো। পরক্ষণেই আবার অস্থির হলো মন। ‘সব ঠিকাছে তো?’
—-“কি হয়েছে আপনার? শরীর ঠিকাছে?”
ইলহামের চিন্তান্বিত কন্ঠটি কানের পর্দা বারি খেতে চোখ মেলে তাকালো রাদ। ইলহামকে তার পানেই এগিয়ে আসতে দেখে উঠে বসলো সে। বলল,
—-“আমার ঘরে অন্তুর মামা ঘুমচ্ছেন। বেয়াদব লোক, নাক ডেকে কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে রি-ভ-লবারের এক গু-লি-তে নাকটা ফাটিয়ে দেই।”
রাদের এহেম অদ্ভুত কিসিমের কথা শুনে হেসে ফেললো ইলহাম। বলল,
—-“তো কি হয়েছে? এ বয়সের মুরব্বিরা এমন একটু আধটু নাক ডাকে। তাতে এতো চটে যাওয়ার কিছু হয়নি।”
—-“চটবো না? বেটা এতো…”
—-“মামা!”
ইলহাম রাদকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো। রাদ থেমে গেলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
—-“ঐ হবে একটা।”
—-“কেন ঐ একটা হবে? যার যার প্রাপ্য সম্মান তাকে দিতে হবে। না হলে চলবে না।”
ইলহামের বানীতে কয়েক মুহুর্তে স্থীর নয়নে তাকিয়ে রইলো রাদ। ইলহাম সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন। পূণরায় বলল,
—-“রেস্ট নেওয়ার হলে নিয়ে রাখুন। নয়তো দেখা যাবে রাতে মামার মিষ্টি অ/ত্যা/চা/রে আপনার ঘুমের ইতি।”
—-“মাথা ধরেছে। একটু কফি হবে?”
—-“আমি বানাবো?”
—-“না। সঙ্গে করে আরও পাঁচ-দশটা বউ ধারে এনেছি তো! তাদের বলো গিয়ে!”
—-“উফফ!”
—-“প্লিজ, সুইটহার্ট। মাথায় বড্ড পে;ই;ন হচ্ছে।”
—-“যাচ্ছি তো।”
ইলহাম চলে আসে নীচে রান্নাঘরে। নীচে আসতেই সামনাসামনি দেখা হয় রাজিয়া বেগমের সাথে। সঙ্গে নিহার শাশুড়ী মা-ও ছিলেন। ইলহামকে দেখতেই মুখ বাঁকান নিহার শাশুড়ী মা। তার ইলহামকে মোটেই পছন্দ নয়। কেবল রাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না তিনি। একই দশা রাজিয়া বেগমেরও। কিন্তু এই মুহুর্তে তারা তিনজন ব্যতীত আশেপাশে একটা মশা-মাছিও নেই। সুতরাং, এই সুযোগটা তিনি কোনো মতেই হাত ছাড়া করবেন না।
—-“কি গো বাছা? হঠাৎ রান্নাঘরে কেন কিছু দরকার?”
কড়াইয়ে খুন্তি নাড়তে নাড়তে বললেন রাজিয়া বেগম। নিহার শাশুড়ী মা নিঝুমের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছিলেন। রাজিয়া বেগমের কথার রেশ টেনে তিনি ঠেস মা/রা কন্ঠে বলে উঠলেন,
—-“বুঝলেন বেয়ান, আজ-কালকার ছেলেমেয়েদের কি যে হয়েছে বাপু? বিয়ের আগেই কেমন ঢলাঢলি, মাখামাখি! শরমের কথা বাপু! আমাদের কালে বিয়ের পরেও তো এসব ভাবতে পারতুম না!”
ইলহাম রাজিয়া বেগমের প্রশ্নের পৃষ্ঠে কিছু বলার জন্য তৈরী হতেই তার মুখের কথা একরকম কেঁড়ে নিয়ে বলে ওঠেন নিহার শাশুড়ী। ইলহাম ঠিক বুঝতে পারে ভদ্রমহিলা কথাটা আসলে তাকেই উদ্দেশ্য করে ছুঁড়েছে।
—-“এসব হলো আজকালকার ফ্যাশন না কি জানি বলে বেয়ান। ওসব আমাদের বোঝার সাধ্যি নাই।”
—-“ফ্যাশান না ছাই! মন চায় তো জুতা পেটা করি! কি নির্লজ্জ বাপু? বলিহারি যাই এদের।”
—-“তা আর বলতে ভাই? আজকাল আমরা কি কিছু বুঝি? ছেলেমেয়েরা বলে আমরা নাকি ওল্ড ফ্যাশনে পড়ে আছি। স্মার্ট হতে বলে আমাদের। অথচ এক কালে কি সুন্দর জীবন ছিলো আমাদের।”
এমনই নানাবিধ কথা একেকটা তীরের মতো এসে বিধ্ব করে চলেছে ইলহামের মনকে। ইলহাম নিশ্চুপ, নিরুপায় হয়ে গিলে খাচ্ছে প্রতিটা তীর্যক বানী। এমন সময় হাজির হয় অন্তু। কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সে। মায়ের উদ্দেশ্যে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
—-“মা? জলদি এক কাপ কফি আমার রুমে পাঠিয়ে দাও। তাড়া আছে। বের হতে হবে।”
রাজিয়া বেগম বিরক্ত সূচক দৃষ্টিতে তাকায়। বলে,
—-“পারবো না এখন। হাতে অনেক কাজ।”
—-“মা প্লিজ! অনেক তাড়া আছে। লেট হলে সারে স-র্বনাশ ঘটে যাবে।”
নিহার শাশুড়ী কাজের চক্করে একবার তাকান ইলহামের পানে। ইলহামকে কফি বানাতে দেখে তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
—-“কি গো ইলহাম? তুমিও তো মনে হইতাছে কফি বানাও। একবারও কইতাছোনা মুখ ফুইটা! কি? কাম বাড়ার ভ/য়ে কইতাছো না?”
ইলহাম নিজের হাতে ধরে রাখা রাদের কফির মগ টা একবার দেখে, তো একবার নিহার শাশুড়ীকে। বিরস মুখে বলে,
—-“আসলে আন্টি রাদের ভীষণ মাথা ধরেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে দিচ্ছিলাম কফিটা। আমি উনাকে কফিটা দিয়ে এসে না হয়…”
—-“কফিটা নিয়া গেলে তোমার হবু বর তোমারে আর আসতে দিবো বইলা তো মনে হয়না মা। তার চেয়ে এইটা তুমি ওরে দিয়া দাও। আর রাদের জন্য না হয় আরেকটা বানায় নাও।”
ইলহাম অপ্রসন্ন মুখে তাকায় নিহার শাশুড়ীর দিকে। গুরুজন বলে মুখের উপর না-ও যে করতে পারছেনা। তাই বাধ্য হয়েই কফিটা দিয়ে দিলো অন্তুকে। রাদের জন্য বানানো জিনিস অন্তু এমন করে পেয়ে যাবে ভাবতে পারেনি একদম। মনের অজান্তেই পৈ/শা/চি/ক আনন্দে আত্মহারা হলো একরকম।
ইলহাম আর কিছু না বলে পূণরায় রাদের জন্য আরেক মগ কফি করে নিলো। এর মাঝে নিহার শাশুড়ী এবং রাজিয়া বেগমের আরও শ’খানেক ঠেস মা/রা কথা শুনতে হয়েছে তাকে। যা শুনে মনটা বারংবার অক্ষুণ্ণ হয়েছে বটে। তবে একটাবারের জন্য প্রতিবাদ করলো না।
—-“সামান্য একটা কফি করতে আধঘন্টা?”
রাদের কন্ঠে কিঞ্চিৎ রা/গের আভাস পেলো ইলহাম। রা/গবেই বা না কেন? বলেছিলো মাথা ব্যা/থা করছে। মাথা ব্যা/থা নিয়ে ছোট্ট একটা আবদার করেছে। তাতেও যদি এতোটা তালবাহানা থাকে তবে তো রাগার কথাই।
—-“সরি, আসলে…”
রাদ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইলহাম ভ/য়া/র্ত দৃষ্টিতে দেখলো তাকে। রা/গ/টা কিঞ্চিৎ নয়, একটি বেশিই হয়েছে রাদের। তার দিকে তেড়ে আসতেই দ্রুত বেগে কফিটা নিয়ে পিছিয়ে পড়লে কফির মগ উপচে বেশ খানিকটা গরম কফি ঢেলে পড়ে তার হাতের উপর। সেদিকে রাদের চেতন নেই বললেই চলে। রা/গে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। দিনকে দিনকে একটা মানুষ আর কতকি সহ্য করবে?
—-“আহহহ!”
ইলহামের হাতটা পু/ড়ে গেলো। হাতটা জ্ব/লে ওঠাতে অস্পষ্ট স্বরে কাতরে উঠলো ইলহাম। রাদ কফির মগটা ছুঁড়ে ফেললো দূরে। রা/গে ফোঁস করে উঠে ইলহামকে ঠেসে ধরলো দেয়ালে। আকস্মিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-“আমার জন্য বানানো কফিটা তুমি এতো সহজে অন্তুকে দিয়ে দিতে পারলে? কিভাবে পারলে ইলহাম!”
ইলহামের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তার বানানো কফি যে সে অন্তুকে দিয়েছে এ কথা সে কেমন করে জানলো?
—-“আমার জিনিসের এই এক চিমটি ভাগও আমি কাউকে শেয়ার করিনা! সেখানে তুমি…”
—-“আ্ আমি দিতে চায়নি!”
—-“বারনও তো করোনি!”
ইলহাম ঢোক গেলে। সত্যিই তো। সে দিতে না চাইলেও একবারের জন্যও তো বারন করলো না!
রাদ ইলহামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রা/গে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। ইলহাম অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। এক মুহুর্তের জন্য তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
#চলবে
[ বিঃদ্রঃ মানলাম আমি ভালো লিখিনা। তাই বলে সামান্য, এই সামান্য টুকু রেসপন্সও করা যায়না?]