প্রেম পিয়াসী পর্ব ১১

0
578

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_________১১.

রাদ তার চাচী রাজিয়ার ডাকের কোনো রূপ উত্তর দিলোনা। মলিন মুখে প্রস্থান করলো। ইলহাম দেখছিলো রাদের হালচাল। কিছু ঠিক মনে হলোনা তার। মান্নাত বেগম রাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সেও কিছু না বলে প্রস্থান করলো। রাজিয়া চললো তার পিছু পিছু। অবশেষে দাঁড়িয়ে ছিলো অন্তু, ইলহাম এবং অনন্যা। ইলহাম অনন্যার পানে একবার তাকালো। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলল,

—-“আমার রুম টা দেখিয়ে দিবে প্লিজ? অনেক টায়ার্ড লাগছে।”

অনন্যা ব্যস্ত হয়ে উঠলো।

—-“ হ্যাঁ, ভাবি। এসো আমার সঙ্গে।”

ইলহাম চললো অনন্যার পিছু পিছু। অন্তু ইলহামের দিকে কুটিল দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত কামড়ে আপন মনে বলল,

—-“ভাবি মাই ফুট।”

____________

প্রভাতে ঘুম ভাঙতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো ইলহাম। রাদের পাশের রুমটাই দেওয়া হয়েছিল তাকে। অবশ্য রাতে অতো ভাবার সময় ছিলো না। ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুম জড়িয়ে এলো দু’চোখ জুড়ে। রাতে ঘুম ভাঙেনি একবারও। একদম টানা ঘুমিয়ে সবেই ঘুম ভাঙলো তার। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই এমন ঘটনার সাক্ষী হবে ভাবতে পারেনি। রাদ তার বিছানার পাশে ফ্লোরে বসে খাটে মাথা হেলিয়ে ঘুমচ্ছে।

উনি কখন এলেন? ভাবতে পারলোনা ইলহাম। শুধু একটা কথা মনে হলো, রাতে তাকে এঘরে আসতে কেউ দেখেনিতো?

—-“রাদ? রাদ! আপনি এখানে কি করছেন?”

রাদ ঘুম জড়ানো চোখ মেলে তাকালো। ইলহামের এক ডাকেই ঘুম ভেঙেছে তার। ইলহাম উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে তার পানে। রাদ চমৎকার হাসলো। ঘুম জড়ানো চোখে প্রায় দীর্ঘসময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো ইলহামের পানে। অতঃপর কিছু না বলে উঠে বসলো বিছানায়। ইলহামের দৃষ্টি ক্রমশ বিস্ময়ে রূপ নিচ্ছে। কি করছে পা-গল ছেলে? রাদ আচমকাই সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। ইলহাম লাফ মে//রে উঠে যেতে নিলে রাদ তার ওড়নাটা পেঁচিয়ে নিলো হাতের মাঝে। অতঃপর, চোখ বুঁজে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

—-“এখানে চুপটি করো বসো। আমি ঘুমাবো।”

—-“ছাড়ুন! কি করছেন? ঘুমাবেন তো ঘুমোন না? আমায় কেন যেতে দিচ্ছেন না?”

—-“তোমায় ছাড়া আমার ঘুম আসবেনা সুইটহার্ট। প্লিজ, যেওনা।”

ইলহামের বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। রাদের চোখ বুঁজে থাকা ঘুমন্ত মুখ খানার পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তেতে ওঠা গলায় বলে,

—-“কি-সব যা-তা কথা বলছেন। রাদ.. পা/গ/লামি করে না। কেউ দেখে নিলে খারাপ…”

ইলহামের ভাঙা রেকর্ডার শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে হলো না রাদের। ওড়নার তোয়াক্কা না করে এক টানে ফেলে তাকে দিলো নিজের উপর। ইলহাম হকচকিয়ে গেলো ক্রমাগত। বোবা প্রানীর ন্যায় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে রাদ আচমকা তাকে নিজের নীচে ফেলে দেয়। অতঃপর বিছানাতেই শক্ত করে চেপে ধরে তাকে। রা/গী গলায় বলে,

—-“সকাল সকাল কেন রাগাচ্ছো আমায়? সুন্দর সাবলীল ভাষা ভালো লাগছেনা বুঝি?”

ইলহাম ভয়ে শক্ত হয়ে গেলো। বারংবার ঢোক গিলে চলেছে নিজের অবস্থা দেখে। লোকটা সত্যি সত্যি পা/গ/ল হয়ে গেছে। মাথা ন/ষ্ট হয়ে গেছে। নয়তো একরকম কান্ড… উমম…”

রাদের পাগলামি দিগুণ বাড়লো। আকস্মিক ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো ইলহামের ঠোঁটে। আজ রাদের প্রতিটা ছোঁয়াই খুব বেশি অদ্ভুত এবং ভ/য়া/ন/ক মনে হলো ইলহামের। ভ/য়ে, তা/ড়নায় অতিষ্ট হলো তার মন। কেঁপে উঠল ভেতরটা। রাদের মাথায় কোনো উল্টোপাল্টা ভূত চাপলো না তো?

না; ইলহামের মনে আশার আলো রেখে ছেড়ে দিলো রাদ। এমনকি ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। ইলহাম তাকে পাশে ঠেলে উঠে পড়লো চটজলদি। বড় বড় দম ফেলে নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর পেছন মুড়ে তাকে দেখলো একবার। এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। ইলহাম আর কিছু না ভেবে তাকে সোজা করে শুয়ে দিলো। তার হাত থেকে ওড়টানা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে একেবারে সাওয়ার নিয়ে বের হলো। নেভি ব্লু রঙের একটা চুরিদার পড়েছে। ভেজা চুল গুলো দু’বার তোয়ালে দিয়ে মুছে ওমন করেই রাখলো। এখন ইচ্ছে করছেনা শুঁকাতে। প্রভাতের এই স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশটা উপভোগ করতে চায় সে। তাই নিজের রুমে আর এক মুহুর্তও দেরী না করে চলে গেলো ছাঁদে। ভোরের ৬টা বাজে, এখন প্রায় প্রত্যেকেই ঘুমে ডুবে আছে। বিশেষ করে অন্তু।

ছাঁদে উঠতে মনটা আরও ফ্রেশ হয়ে গেলো ইলহামের। চারপাশে প্রভাতের স্নিগ্ধ কোমল হাওয়া। যা একত্রে শরীর মন দুই-ই ছুঁয়ে যায়। ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে এখনও। যার দরুন পেছনের দিকে জামাটা পুরোটাই ভিজে গেলো আবার। তাই হাতে দিয়ে চুল গুলো সব নিয়ে এলো সামনে। হাতের সাহায্যেই চুল চিপে পানি ফেলতে লাগলো। এমন কাজে নিয়োজিত হয়েই ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো ছাঁদের এক কোনে। চারপাশের সুন্দর পরিবেশটা উপভোগ করছে মন প্রাণ দিয়ে। ঠিক এমন মুহুর্তে ভেসে এলো কারোর কান্না জড়ানো গলা,

—-“আমি কি করে থাকবো বলুন? বাবা, মা, ভাইয়া কেউ বুঝবেনা আমার কথা! প্রনয় ভাই, আমি মাকে অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি আপনার কথা! কিন্তু মা.. মা আমার একটা কথাও শুনলো না! (কাঁদতে কাঁদতে) আমি ম//রে যাবো প্রনয় ভাই। আমায় প্লিজ নিয়ে যান আপনার কাছে! আমি ম//রে যাবো! এভাবে বাঁচা যায়না প্রনয় ভাই। এভাবে মানুষ বাঁচতে পারেনা। আপনিও যদি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তবে মনে রাখবেন, আমি নির্ঘাত আ/ত্ম/হ//ত্যা করবো।”

—-“অনন্যা?”

অনন্যার পেছনে এসে দাঁড়ালো ইলহাম। তার চোখেমুখে লেপ্টে আছে একরাশ বিস্ময়। এসব সে কি শুনছে!

পেছন থেকে কারোর ডাক পড়তেই চমকে উঠলো অনন্যা। চটজলদি কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিয়ে সুইচডঅফ করে দিলো কৌশলে। অতঃপর দ্রুত চোখ মুছে নিলো। মুখের ভাব স্বাভাবিক করে তারপরেই পেছন মুড়ে তাকালো সে। অনন্যা দেখতে ভীষণ মিষ্টি। মুখের গড়ন বেশ মায়াবী। ফর্সা চোখ জোড়া ফুলে এক রকম লাল হয়ে উঠেছে। ইলহাম এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। কিছু বলবে তার পূর্বেই অনন্যা হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠলো,

—-“ভাবি? এতো ভোরে উঠে পড়লে!”

অনন্যার স্বাভাবিক ভঙ্গিমা ইলহামের সন্দেহ দিগুন করে দিলো। তবুও মুখে প্রকাশ করলো না সে। অনন্যার ন্যায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নরম হাসলো। বলল,

—-“হ্যাঁ, ঘুম ভেঙে গেলো। তা তুমি এতো ভোরে? সব সময় কি এমন সময়েই উঠো নাকি আজ কোনো স্পেশাল।”

অনন্যার মুখটা ক্রমশ মলিন হয়ে যাচ্ছিলো। অর্থাৎ তার ইলহামের দিকে মনোযোগ নেই। মনোযোগ আঁটকে আছে হাতের ফোনটার দিকে। ইলহাম খেয়াল করছিলো সবই। হঠাৎ অনন্যার কোনো জবাব না পেয়ে বলল,

—-“কারোর কলের অপেক্ষা করছো অনন্যা?”

অনন্যা চমকে উঠলো। ধরা পড়া চোরের ন্যায় ঘাবড়ানো গলায় বলল,

—-“ন্ না ভাবি! ক্ কারোর কলের অপেক্ষা করছিলাম না।”

ইলহাম চাইলো না অনন্যাকে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে। তাই কথা ঘুরিয়ে ফেললো। অন্য টপিকেই দু’জনে পুরোটা সময় গল্প করে কাটিয়ে দিলো। অনন্যা ইলহামের এতো লম্বা চুলের রহস্য জানতে চাইলো। ইলহাম কেবল হাসছিলো তার কথা শুনে। অনন্যা দেখতে যেমন মিষ্টি, তেমন ভীষণ আন্তরিকও বটে। কোনো দিক থেকেই অন্তুর সাথে ওর ম্যাচ হয়না। ইলহাম বুঝে উঠতে পারেনা, অন্তুটার এমন বিগড়ে যাওয়ার কারন কি?

____________________________________________

নাস্তার টেবিলে সবাই এসে হাজির হলো। কিন্তু রাদ এলোনা। মান্নাত বেগম ইলহামকে বলল, “রাদের খাবারটা ঘরে দিয়ে আসতে।” ইলহাম বাধ্য মেয়ের মতো রাদের খাবারটা নিয়ে চলে এলো রাদের ঘরে। রাদ তখনও বেঘোরে ঘুম। অবশ্য মাঝে একবার উঠে নিজের রুমে এসে ঘুমিয়েছে। ইলহাম খাবারটা বিছানার পাশে রাখতে রাখতে রাদের ঘুমন্ত মুখপানে তাকালো একবার। কি নিষ্পাপ মুখ। মনে হচ্ছে, একটা বাচ্চা ছেলে ঘুমোচ্ছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো রাদকে। রাদ দেখতে কোনো হিরোর চেয়ে কম নয়। জিমড বডি, চাপ দাঁড়ি,ডার্ক রেড ঠোঁট, ঘন পল্লব বিশিষ্ট চোখ। সবই পার্ফেক্ট। শুধু একটু মাথায় গন্ডগোল। কথাটা ভাবতেই হাসি পেয়ে গেলো ইলহামের। হাসতে হাসতে বসলো রাদের পাশে। মাথার সিল্ক চুলগুলো এলোমেলো হয়ে লেপ্টে আছে কপালে। ইলহামের ইচ্ছে হলো, হাত দিয়ে নেড়ে দিতে। কিন্তু সাহস হলো না। সকালের ঘটনাটা মনে পড়তে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। গলা খাঁকারি দিয়ে ডাকতে লাগলো তাকে।

—-“রাদ? রাদ! আপনার জন্য ব্রেকফাস্ট এনেছি। রাদ?”

রাদের কানে পৌঁছালো ইলহামের ডাক। তবে উঠলো না। নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। ইলহাম একটু এগোলো তার নিকট। হাত বাড়িয়ে রাদের হাতের উপর রাখতেই আচমকা ফট করে তার হাত ধরে নিলো রাদ। ইলহাম আঁতকে উঠল। অসহায় দৃষ্টি মেলে রাদের দিকে তাকাতেই রাদ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,

—-“একটু আদর করে ডাকতে পারছোনা? অদ্ভুত রমনী।”

—-“ন্ না পারছিনা। উঠুন তো। অনেক ঘুমিয়েছেন।”

—-“সারারাত ঘুমোয়নি। আমার আরও ঘুমাতে হবে। বসো না একটু।”

ইলহাম সকালের কান্ডটি নিয়ে ভ/য় পাচ্ছে। সে চায়না তা আবারও রিপিট হোক। তাই ঢোক গিলে অসহায় কন্ঠে বলল,

—-“প্লিজ উঠুন না।”

রাদ জবাব দিলো না। হেঁচকা টানে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো ইলহামকে। ইলহাম টাল সামলাতে না পেরে বসে পড়লো ধপ করে। তার হার্টবিট অতি দ্রুত ছুটছে। রাদ আকস্মিক তার কোমর জড়িয়ে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে পূণরায় ঘুমের তোড়জোড় করছে। ইলহাম স্তব্ধ হয়ে রইলো রীতিমতো। বাকরূদ্ধ চাহনিতে রাদের পানে তাকাতেই রাদ কেমন করা কন্ঠে বলে উঠলো,

—-“তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসোনা, সুইটহার্ট?”

—-“উফফ! এখন এসব কথা বলার সময় নয়। প্লিজ উঠুন। আমার কেমন অস্থির লাগছে।”

রাদ এক চোখ মেলে তাকালো। এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

—-“কেন? ফিল হচ্ছে আমায়?”

ইলহাম লজ্জায় ভাজ হয়ে পড়লো যেন। শ্বাসরুদ্ধ কন্ঠে বলল,

—-“আমার আপনাকে ফিল হয়না। উল্টে রাগ হয়। ছাড়ুন তো!”

রাদের ধাতে লাগলো ইলহামের কথাটা। সে আরও শক্ত করে চেপে ধরলো ইলহামের কোমর। ইলহাম শক্ত হয়ে জমে গেলো পূণরায়। দু’হাতে খামচে ধরলো বিছানার চাদর। খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলে অনুভব হয় রাদ ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে তার কোমরে। অদ্ভুত সব কান্ড করছে। ইলহাম সহ্য করতে পারলোনা। ছিটকে সরে পড়লো ওখান থেকে। দূরে সরে এসে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেললে পেছন থেকে ভেসে এলো রাদের শীতল কন্ঠ,

—-“ফিল হলো আমায়? নাকি আরও ডেমো দেখাবো!”

ইলহাম দম বন্ধ করে ফেললো রাদের কথায়। এ ঘরে দাঁড়িয়ে থাকা আর সম্ভব হলো না তার। এক ছুট্টে দৌড়ে পালালো।

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here