প্রেমোদ্দীপক। পর্ব-২৬’2

0
901

#প্রেমোদ্দীপক।
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

পর্ব-২৬। (বাড়তি অংশ)

শৈত্য প্রবাহ চলছে। ধূসর কুয়াশার ধুম্রজালে ঢেকে গেছে প্রকৃতি। কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। চাষা ছেলে চাদর গায়ে জড়িয়ে ছুটে চলছে খেজুর গাছের দিকে। খেজুর গাছের আগা কেটে মাটির কলস বেধে এসেছে রাতে। মিষ্টি রসে ভরতি হয়ে গেছে এতক্ষণে। রস নিয়ে হাটে নিয়ে বিক্রি করে দিবে। বেশ ভালো আয় হয় এতে। রাখাল ছেলে গোয়াল থেকে গরু ছাগল বাধা রশির বাধন খুলে হাঁটা ধরেছে মাঠের দিকে। ঠান্ডার প্রকোপে রক্ত জমাট বাধার উপক্রম।
এই শীতাতপ সকালে অভীক-তাহিয়া হাঁটছে গ্রামের মেঠোপথ ধরে।
সকাল তখন সাড়ে ছ’টা। তাহিয়া ঘুমাচ্ছিল, অভীক কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে তুলে এনেছে। ঘুম ঘুম স্বরে তাহিয়া যখন কারণ জিজ্ঞেস করল তখন অভীক ব্যস্ত ভঙ্গিতে গায়ে লেদার জ্যাকেট চাপাতে চাপাতে উত্তর দিল,
‘ শীতে গ্রামে এসে শীতের সকাল উপভোগ না করলে গ্রামে আসাটা বৃথা। দ্রুত তৈরি হয়ে নাও।’

তাহিয়া ঘুম ঘুম চোখে কোনমতে কুর্তির উপর হুডি জড়াল। অভীক এসে উপরে চাদর আর চশমা পরিয়ে দিল। মাথায় উইন্টার ক্যাপ পরিয়ে বলল, ‘বাইরে অনেক শীত, ঠান্ডা লেগে যাবে।’

সবশেষে প্রিয়তমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। উঠোন বাড়িতে মানুষের আনাগোনা নেই। বাড়ির রাস্তা পেরিয়ে গ্রামের মেঠোপথে নামল। তাহিয়ার চোখে ঘুম, তাকাতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে হাটছে, অভীক ওর বাহু ধরে এগুচ্ছে। একবার পথ দেখছে, আরেকবার প্রিয়তমাকে দেখছে। চোখ বন্ধ করে হাটতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে না তো!

কিছুদূর এগুনোর পর তাহিয়া আধো চোখ খুলে একবার পরখ করল। আর বন্ধ করল না, পলক ফেলতে ভুলে গেল। আশ্চর্য! কী দেখছে ও! মীরার বলা সেই সকাল! দু’পাশে ধানের ক্ষেত, সোনালী ঘাসের ডগায়, সোনালি ধানের গোছা। একটু পরখ করলে দেখা যায়, প্রতিটা ধান গাছের ডগায় স্থবির শিশির বিন্দু। মাঝে মেঠোপথ। পথের দুই ধারে সারি সারি খেজুর গাছ দাঁড়িয়ে আছে অবলীলায়। প্রতিটা গাছের ডগায় একটা করে মাটির কলস বাধা। চাষা ছেলে কলস নামাচ্ছে, কেউ বা আবার কলস হাতে নিয়ে এগুচ্ছে বাড়ির দিকে, হাটের দিক। কেউ খাবে, কেউ বিক্রি করবে।
পায়ে পায়ে এগুতে এগুতে মুগ্ধচোখ পরখ করল তাহিয়া। বাংলার এই রূপটা ওর বড্ডো অচেনা, অদেখা। প্রথম দেখায় বিমুগ্ধ, বিমোহীক। শীতকালের এই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা তাহিয়ার চোখ থেকে ঘুম কেড়ে নিল। আনমনে বলল,
‘কী সুন্দর! ‘

‘শীতের সকালের আসল সৌন্দর্য হলো গ্রামে। শহরে এত রূপ রঙ নেই। সামনে চলো, দেখবে আরও কত কী দেখতে পাবে!’ অভীক বলল। তাহিয়া মুগ্ধ চোখে দেখে গেল, পা বাড়াল।

মাঝে মাঝে এক দুইটা সাইকেল সাঁ সাঁ করে চলে আসছে। এরা সকাল সকাল ছাত্রছাত্রী পড়াতে যাচ্ছে। খানিক বাদে দেখা গেল, এক ঝাক বাচ্চা ছেলেমেয়ে দলবেধে গ্রামের পথ ধরে হেটে আসছে, সবার গায়ে গরম কাপড়, ছেলেদের মাথায় টুপি, মেয়েদের মাথায় ঘোমটা টানানো। বুকে একটা বই আঁকড়ে ধরা। সবার চোখ ঘুম, অথচ মুখে হাসি। হাসি আড্ডা দিতে দিতে এগুচ্ছে। তাহিয়ার সুন্দর লাগল। এদের সম্পর্কে জানতে কৌতুহলী হলো মন। ও ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘এত সকালে বাচ্চাগুলো কোথায় যাচ্ছে?’
‘ যাচ্ছে না আসছে। স্থানীয় মসজিদে ফজরের পর ছোটো বাচ্চাদের কুরআন শিখানো হয়। ইমাম সাহেব শেখান। বাচ্চাগুলো ওখান থেকে আসছে। ‘

তাহিয়া অবাক হলো। এমন কিছু শুনেনি ও। শহরে সাধারণত গৃহশিক্ষক রেখে কিংবা নূরানী মাদ্রাসায় ভরতি করিয়ে কুরআন শিখানো হয়। ও যখন ছোটো ছিল, তখন মাহমুদা আরবি শিক্ষক রেখে কুরআন শিখিয়েছিলেন ওকে, তুহিনকেও এভাবেই শিখানো হয়েছে। ভিন্নতা দেখেনি। এভাবে শেখানো হয় জানতো না ও। বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করল,
‘ আজ প্রথম শুনলাম। ভিন্ন পদ্ধতি। ‘

অভীক নিজ থেকে বলল,
‘ নব্বই দশকে এই পদ্ধতিতে বাংলাদের প্রতিটা গ্রামের প্রতিটা মসজিদে কুরআন শিখানো হতো। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও ছিল এ নিয়ম। তারপর প্রযুক্তির আদলে চলে আসায় মানুষ ঘর বন্দি হয়ে গেছে। মসজিদে না পাঠিয়ে গৃহশিক্ষক রেখে ঘরে পড়ায়। তবে এখনো প্রত্যন্ত গ্রামগুলো এই রীতি বজায় আছে। আমাদের গ্রামটা একবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এখনো অনেক ঐতিহ্য প্রথা প্রচলিত আছে। এটাও তেমন একটা নিয়ম। ‘

কথা বলার মাঝে বাচ্চাগুলো পাঠ কাটিয়ে চলে গেল। তাহিয়া মাথা ঘুরিয়ে মায়াবী মুখ করে বলল,
‘এটুকুনি বাচ্চাগুলো ঘোমটা দিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে। কী কিউট লাগছে! চোখে ঘুম, অথচ ঠোঁটে হাসি। কী সুন্দর! ‘

অভীক ও এদের দিকে তাকাল একবার। তারপর তাহিয়ার দিকে তাকাল। সফেদা কুর্তির উপর খয়েরী হুডি পরেছে তাহিয়া। মাথায় উইন্টার ক্যাপ, তারউপর হুডির ঘোমটা টানানো। পকেট্র হাত গুজানো। ঘুমজড়ানো ফোলা চোখ, তারউপর চশমা। মুখে ও একটা ফোলাভাব। প্রসাধনীহীন মুখটায় উৎফুল্লতার আভা,ঠোঁটের কোণে হাসি। মায়াবী লাগছে। কথা বলার ভঙ্গিটা ওর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। অভীক আনমনে হাসল। তারপর বলল,
‘আসোলেই কিউট’

তাহিয়া বুঝল না। ওর দৃষ্টি বাচ্চাদের যাওয়ার দিক। কয়েক কদম বাড়িয়ে বাচ্চাগুলো কুহেলিকার অন্তরালে হারাল। তাহিয়া মাথা ঘুরাল। হাঁটা ধরল।
কয়েক কদম বাড়ানোর পর রাস্তার পাশে টং দোকান চোখে পড়ল। অভীক বলল,
‘এখানকার চায়ের টেস্ট ভালোই। ট্রাই করবে?’

তাহিয়া বিস্ময়ের সাথেই সায় জানাল। রাস্তার পাশে টং দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শীতের সকাল উপভোগ করার আনন্দটাই অনন্য, এটা আজ অনুভব করল তাহিয়া। পরিবেশটা চমৎকার, চায়ের স্বাদটাও অমৃত, পাশে বসা মানুষটাও প্রিয়তর প্রেমপুরুষ। এর চেয়ে চমৎকার স্থান কাল পাত্র আর দুটো হয়? উত্তরটা নেতিবাচক।

চায়ে চুমুক দেয়ার মাঝে অভীক জিজ্ঞেস করল,
‘ কাঁচা ঘুম থেকে তুলে আনার কাজটা ঠিক হলো?’
‘ তা আর বলতে? চমৎকার কাজ হয়েছে। না এলে কত কী মিস করতাম?’

তাহিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল। অভীক হাসল। বলল, ‘ভালো লাগছে?’
তাহিয়া উত্তর দিল না। প্রাণবন্ত হাসল। অভীক উত্তর পেয়ে গেল। বলল,
‘যাক, নিয়ে আসাটা সার্থক। ‘

চা খেয়ে উঠার সময় তাহিয়ার চা খাওয়া কাপটা চড়া দামে কিনে নিয়ে নিল অভীক। তাহিয়া ভ্রু কুঁচকাল। অনেক খুঁজে ব্যাখ্যা বের করতে পারল না। দোকানিকে বলে কাপটা ধুয়ে নিল, তার বেরিয়ে এলো অভীক। আবার হাঁটা ধরল। তাহিয়া প্রশ্ন করল,
‘কাপটা কিনে নিলেন কেন?’

অভীক হেসে বলল, ‘সারপ্রাইজ। ‘
‘কিসের সারপ্রাইজ!’ ভ্রু নাড়াল তাহিয়া। অভীক বলল,
‘বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকল কী?’

পরাস্থ তাহিয়া কথার সারমর্ম বের করতে করতে হাঁটা ধরল। এক চাষার ছেলে কলসি হাতে ওদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল। অভীক থামিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘রস কেনা যাবে?’

ছেলেটা সায় জানাল। অভীক ছেলেটাকে টাকার পরিমাণ জিজ্ঞেস করে পরিশোধ করল। তারপর মাটির কলস থেকে এক কাপ রস ঢেলে নিল টং দোকান থেকে কিনে আনা কাপে। বাকিটা ছেলেটাকে দিয়ে নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। ছেলেটা যেতেই কাপটা তাহিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ শীতের সকালে গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বের হলে খেজুর রস খাওয়া বাধ্যতামূলক। খেয়ে দেখো, দারুণ স্বাদ।’

কাপ হাতে নিয়ে তাহিয়া বলল, ‘এটাই সারপ্রাইজ? ‘ অভীক সায় জানাল। তাহিয়া ইতঃপূর্বে এভাবে রস খায়নি। ইতস্ততভাবে কাপে চুমুক দিল। অমৃত স্বাদ লাগল জিহ্বায়। একবারে মিষ্টি, অন্যরকম স্বাদ। পরপর কয়েক চুমুক দিয়ে বলল,
‘মজা তো! আমি কখনো খাইনি। মীরার কাছে শুনে আমার এমন সকাল উপভোগ করার অনেক ইচ্ছে ছিল। ধন্যবাদ।’

‘তোমার ভালো লেগেছে, এতেই হবে। ধন্যবাদ লাগবেনা।’ হেসে বলল অভীক। তাহিয়া অভীকের দিকে কাপটা বাড়িয়ে দিল,
‘আপনি একটু খেয়ে দেখুন। অনেক মজা।’

অভীক মিষ্টিজাতীয় খাবার খায় না। ছোটোবেলায় একবার রস খেয়েছিল, ইদে বাড়ি এসে। তারপর আর খাওয়া হয়নি। ইচ্ছে হয়নি খেতে, আজ ইচ্ছে হলো। কাপ হাতে নিল, এক চুমুক নিল তাহিয়ার চুমুকের স্থানে। কোন এক ইসলামিক বইতে পড়েছিল, রাসূল (সাঃ) এভাবে খেতেন। এতে নাকি সাওয়াব পাওয়া যায়। চুমুক দিতে গিয়ে মনে পড়ল কথাটা। সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করল না অভীক। পদ্ধতি অবলম্বন করল। এতে সাওয়াব হলো, দৃশ্যটা ও সুন্দর হলো, স্ত্রী ও খুশি হলো। স্বামীদের কত সুবিধা দিয়েছেন আল্লাহ! অভীক হাসল। কাপটা তাহিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিল। তাহিয়া এক চুমুক নিল।
উৎফুল্লতার সাথে বলল,
‘আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সকাল এটা। এতদিন শুধু শুনেছি। আজ কাছ থেকে দেখলাম। এত সুন্দর কেন?’

অভীক হেসে বলল, ‘তোমার নজর সুন্দর আর নতুনত্ব মাখা বলে তোমার চোখে সব কিছু সুন্দর দেখায়। এই এলাকার কাউকে বলে দেখো, মুখ কুঁচকে বলবে, এইডায় ভালার কী আছে?’

‘আসোলেই সুন্দর। আমার তো ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই।’ আনমনে বলল তাহিয়া। অভীক মজার স্থলে বলল,
‘ ঠিক আছে। এবার যাওয়ার সময় তোমাকে রেখে যাব। তুমি স্বামীর ভিটায় সংসার সাজাবে। আমি টাকা পাঠিয়ে দিব, নিজে রেঁধে বেড়ে খাবে। গোয়াল ভরা গরু ছাগল থাকবে, মাঠভরা ধান থাকবে, খড় ভরা হাঁস মুরগী থাকবে, কোলভরা বাচ্চা থাকবে। পড়াশোনা তো হবে না। তারপর বরং পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব সামলাও তুমি। আমি না হয় মাসে একদিন এসে উঁকি মেরে দেখে যাব। ভালো হবে না?’

‘হাঁস মুরখী,গরু ছাগল!’ পালবে তাহিয়া! দেখলেই ভয় লাগে ওর। আঁতকে উঠে বলল,
‘ না বাবা, আমি একবারে থাকব না। মাঝে মাঝে ঘুরতে আসব তাতেই হবে। ‘

অভীক শব্দ করে হেসে বলল, ‘গ্রামীণ বউ হওয়ার শখ মিটে গেছে?’

‘শহুরে বউ হওয়ার চেয়ে গ্রামের বউ হওয়া কঠিন। কথা আর কাজ দুটোর মাত্রা বেশি থাকে। গ্রামের মানুষ একে অপরের দোষ ধরে বেশি, অজ্ঞতাবশত কত কী চাপানো হয় মানুষের উপর। আমি এতসব সইতে পারব না। নাহ, বাবা আমি শহরেই ঠিক আছি। ‘
মজার স্থলে তাহিয়া কথা বলল। অভীক বিড়বিড় করল, ‘শহর থেকে জাহানারা বেগমদের উপস্থিতি গ্রামে বেশি। এই জন্যই বোধহয় শহর থেকে গ্রামীণ নারীর জীবন কঠিন বেশি। ‘

তাহিয়া শুনল না সে কথা। আবার হাঁটা ধরল । কিছুদূর যেতেই দেখল কুয়াশার মাঝে দৃশ্যমান হলো একটা গরু। ওদের থেকে কিছুটা দূরেই রাস্তার উপর একটা গরু দাঁড়িয়ে আছে, গরুর দৃষ্টি ওদের দিকেই। মাথায় বড়ো বড়ো শিং। বাঁধন ছেড়ে পালিয়ে এসেছে বোধহয়। তাহিয়া তড়িৎ দাঁড়িয়ে গেল, চোখে মুখে ভয় দেখা দিল। তা দেখে অভীক বলল,
‘তুমি দাঁড়াও, আমি তাড়িয়ে দিয়ে আসি।’

অভীক কদম বাড়াল। তাহিয়া ওর জ্যাকেট ধরে ফেলল। যেতে বাধা দিয়ে বলল,
‘যাবেন না, আপনাকে কামড় দিবে।’

তাহিয়ার চোখে ওর জন্য চিন্তা দেখে ভালো লাগছে অভীকের। ও হেসে বলল,
‘গরু কামড়ায় না, গুতো দেয়। ‘

‘যাই হোক। আপনি যাবেন না। শুনেছি, এগুলো খুব ভয়ংকর হয়। গুতো দিয়ে নাকি নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে। প্লিজ, আপনি যাবেন না! একদম না। আপনার কিছু হলে আমি মরেই যাব।’ ভীত মনে কত কী বলে গেল তাহিয়া। অভীক আবার হাসল। আজ এত ভালো লাগছে কেন? প্রিয়জনের চোখে চিন্তার রেখাও সুন্দর দেখায়, প্রশান্তি টানে।

‘আরে, কিছু হবে না তো! কাছে গিয়ে একটু তাড়ালেই মাঠে চলে যাবে। তারপর আমরা অনায়েসে রাস্তা পেরিয়ে যেতে পারব। তুমি দাঁড়াও, আমি যাব আর আসব।’
অভীক যেতে নিল। তাহিয়া আটকাল। শক্ত করে ওর বাহু খামচে ধরে রাখল। শাসনের সুরে বলল,
‘বিপদ বলে কয়ে আসেনা। আঘাত করে ফেললে কী করবেন? আমি কোন রিস্ক নিতে চাইছিনা। যাবেন না মানে যাবেন না। কোন ঘুরাটুরা লাগবে না, অনেক ঘুরেছি। এবার বাড়ি ফিরব। দরকার হলে কাল আবার আসব। এখন চলুন।’

তাহিয়ার কড়ার সুরের শাসনটা এত মধুর শোনাল কেন? এত ভালো লাগল কেন অভীকের? স্বামীদের শাসন থেকে স্ত্রীদের শাসনে যত্ন আর কোমলতার পরিমাণ বেশি থাকে বলে? হতে পারে। অভীক কথা বাড়াল না। সম্পর্কে একে অপরের মন পেতে হলে শুধু যে স্ত্রী স্বামীর কথা অনুযায়ী চলবে এমনটা নয়, স্বামীদের ও স্ত্রীর কথা শুনতে হয়, সে অনুযায়ী চলতে হয়। এটাকে সমাজ খারাপ বললেও ইসলাম বাহ্বা দেয়। অভীকের কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। সে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
‘যথাজ্ঞা হৃদয় রানী মহাশয়া।’

তাহিয়া স্বামীর হাত ধরেই ফিরতি পথে পা বাড়াল।
কিছুদূর হেটে পিছু ফিরে চাইল, নাহ, গরুটাকে দেখা যাচ্ছে না। হাফ ছাড়ল তাহিয়া । ভয় কেটে গেছে ওর। নিশ্চিন্তমনে হাঁটছে ও। পাশে অভীক হাঁটছে, প্রশান্ত মনে। জীবনে কত হাজার সকাল পার করেছে, এতটা সুন্দর এতটা প্রশান্তিদায়ক, এতটা প্রেমময় সকাল দুটো পায়নি। আজই প্রথম। আজই শেষ না হোক, চলতে থাকুক।

তাহিয়ার মনটা ফুরফুরে। প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে এগুচ্ছে। আকস্মিক কী ভেবে অভীকের দিকে তাকিয়ে একটা চমৎকার প্রশ্ন রাখল,
‘আমি বিয়ের কথা কলেজে জানিয়ে দিই?’

অভীক অবাক হয়ে চাইল কিছুক্ষণ। তারপর বিস্তৃত হাসল। বলল,
‘ কেউ যদি মজা করে? ‘
‘আমি পরোয়া করিনা। আমি বিয়ে করেছি, চুরি করিনি যে ভয় পাব। ‘

দৃঢ়স্বরে বলল তাহিয়া। অভীক এই সময়ের সাথে মিলাল বিয়ের দিনে ওদের সাক্ষাতের কথা। যখন ও বলেছিল সবাইকে জানিয়ে দিবে, তখন তাহিয়ার চেহারা ভয়ে রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল। অথচ আজ সেই তাহিয়াই দৃঢ়স্বরে বলছে লোক জানানোর কথা, কারো কথার কানে তুলে না সে। মানুষটা কি বদলেছে? নাহ, বদলায় নি। আগের মানুষটাই আছে। মানুষ বদলায় না, সময় বদলায়, অনুভুতি বদলায়। তখন সব বদলে যায়। এই যে এখন বদলে গেছে।
আজ আনন্দরা ঝাকে ঝাকে আসছে অভীকের ভাগ্য ভান্ডারে।
সেই আনন্দে আন্দোলিত হয়ে অভীক আবার প্রশ্ন করল,
‘এত তাড়াতাড়ি লোক জানাজানির ভয় শেষ হলো কীভাবে? ‘

‘আপনি থাকতে দিয়েছেন?’ প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করল তাহিয়া। অভীক হাসল আবার। ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্নপর্বের চেইন টানল,
‘ আমি দিই নি?’

তাহিয়া সন্দেহী চোখে তাকিয়ে বলল,
‘তা নয়তো কী? আমি তো বিয়েতে রাজিই ছিলাম না, বিয়ের কদিনেই কিভাবে কিভাবে যেন হিপনোটিজম করে ফেলেছেন আমায়। অবনী আপুর বাসায় নিয়ে মায়ায় বশ করে জীবনটাকে আপনিময় করে ফেলেছেন। তারপর তো আমার আমিটাই বিলীন হয়ে গেছে, কীসব পাগলামী করে যাচ্ছি। এতে আমি নিরপরাধ, আপনিই অপরাধী।’

অভীক সুন্দর ভঙ্গিমায় বলল, ‘এই অপরাধে অপরাধী হয়ে অপরাধবোধ থেকে আমার অপরাধ আমি স্বীকার করছি সজ্ঞানে, অনায়েসে। কারণ এর চেয়ে সুন্দর অপরাধ আর দুটো নেই। আমি সারাজীবন এই অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকতে চাই।’

‘আমিই অপরাধী করে যাব। যাক গে, এখন উত্তর দিন, সবাইকে জানিয়ে দিব আমি আপনার হওয়ার কথা?’
আগ্রহী হয়ে জানতে চাইল তাহিয়া। অভীক ভ্রু কুঁচকাল। মেয়েটা আজকাল একটু বেশি সুন্দর করে কথা বলছে না? এভাবে কথা বলার কি খুব দরকার? মায়ার পাহাড় বানাচ্ছে, পরে এই মায়া ওকে শাসন করতে দিবে না। ফলাফল, পরীক্ষায় খারাপ করবে।
অভীক দায়সারা উত্তর দিল,

‘ তোমার ইচ্ছে হলে দিতে পারো। আমার আপত্তি নেই। জোরও নেই। এটা তোমার নিজস্ব মতামত। ‘

অথচ ওর ভেতরটা জানে, তাহিয়ার সিদ্ধান্তে কতটা খুশি হয়েছে ও। এই দিনটার অপেক্ষা করছিল বিয়ের আগ থেকে। বাইরে বের হলে তাহিয়ার অসম্মান নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকে প্রতিনিয়ত। এই বুঝি ওদের একসাথে দেখে কেউ খারাপ ভেবে বসল, তাহিয়াকে খারাপ বলে ফেলল। এবার নিশ্চিন্তে থাকা যাবে। অভীক স্বস্তির নিঃশ্বাসটা ফেলল খুব সচেতনে, যাতে তাহিয়া টের না পায়।

কথা বলতে বলতে বাড়ির দরজায় এসে থামল ওরা। বাড়ির গেটে একটা ধূসর কার দাঁড় করানো। কারটার দিকে চোখ যেতেই অভীক আকস্মিক শব্দ করে হেসে উঠল। তাহিয়া কারণ জিজ্ঞেস করলে বলল,
‘গাড়িটা দেখছি।’
‘তো এতে হাসির কী আছে? ‘
‘গাড়িটা কার জানো?’
‘নাহ, কার?’
‘তানভীর ভাইয়ের। ‘

তানভীর ভাই মানে তো অবনীর স্বামী। উনি এসেছেন? উনার আসা মানে অয়নের ও আসা। তাহিয়া হাঁটা থামিয়ে দিল। বলল,
‘আমি বাড়ি যাব না। একদম না।’

অভীক হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে চলো, সুন্দর একটা দৃশ্য দেখা হবে আমার।’

তাহিয়া দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
‘আমি আবার যাব ওদিকে। আজ বাড়িই ফিরব না। আপনার ওই পাজি ভাগ্নের সামনে পড়ব না আমি। কিসব কথা বলে আমার লজ্জা লাগে। বাড়ি ভরতি লোক, সবার সামনে আমি লজ্জায় পড়ব। আমি যাব না।’

‘কী বলে? আমায় বলো দেখি আমিও একটু লজ্জা পাই।’ না জানার ভান করল অভীক। তাহিয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ পারব না। আপনার ভাগ্নে আপনি ম্যানেজ করুন । আমি নেই। আমি গেলাম।’ তাহিয়া যে পথে এসেছিল সে পথে হাঁটা ধরল। অভীক অনুসরণ করল স্ত্রীকে।
হাসি চেপে বলল,
‘ অয়ন এবার জন্মদিনে তোমার কাছে উপহার চাওয়ার পর আমার কাছ থেকে ও উপহার নেয়নি। আমি মোটরবাইকার কিনে দিয়েছিলাম, ফেরত দিয়েছে। নিবে না, ওর বোনই লাগবে। আমার উত্তর ওর পছন্দ না, মামীর কাছ থেকে উত্তর ও লাগবে, বোন ও লাগবে। একটা বোন দিয়ে দাও, এত করে বলছে। ‘

অভীককে পরখ করে তাহিয়া চোখ রাঙাল,
‘আপনি ও মজা করছেন?’

‘একদম না।’ হাসি থামিয়ে বলল অভীক। তাহিয়া হাঁটার গতি বাড়াল। অভীক বলল,
‘আরে বাড়ি চলো, সবাই বোধহয় আমাদের অপেক্ষা করছে।’
‘যাব না।’
‘যাবে।’ অভীকের দৃঢ় স্বর। তাহিয়া চোখ ছোটো ছোটো করে বলল, ‘আমি যাব না। ‘
‘আমি নিয়ে যাব।’
‘কিভাবে?’

অভীক বাঁকা হাসল,
‘ যেভাবে বহুবছর আগে নিয়েছিলাম সেভাবে।’

তাহিয়া বুঝল না। জন্মের পর অভীকের সাথে ওর তো দেখাই হয়নি বলতে গেলে। অভীক থাকতো হোস্টেলে, হলে। মাহমুদার বাসায় আসতো না কখনো। রেজাউল সাহেবের চাকরিসূত্রে অভীকরা থাকত টাঙ্গাইল, তাহিয়ারা তার বিপরীত দিক। দুরত্বের কারণে দুই বান্ধবীর দেখা হতো না। অনেক বছর পর রেজাউল আহমেদের চাকরিসূত্রে ওদের শহরে এসেছিল। তখন তাহিয়া বেশ বড়ো। নীলিমার বাসায় যেত না, মাহমুদা একাই যেতেন আসতেন, অভীক ও আসতো না। কলেজে পড়াকালীন সময়েই জেনেছে অভীক যে নীলিমার ছেলে। এর আগে অভীককে ভালো করে চিনত ও না। তবে অভীক কখনকার কথা বলছেন? তাহিয়া ভ্রু কুঁচকাল।
থেমে প্রশ্ন করল,
‘কলেজে যাওয়ার আগে তো আমাদের দেখাই হয়নি। তবে আপনি কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন?’

‘ কলেজে যাওয়ার বহু আগে ও কিন্তু আমাদের দেখা হয়েছে।’

‘ প্রথম কবে এবং কোথায় দেখা হয়েছিল?’ প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে প্রশ্ন করল তাহিয়া। অভীক ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
‘ যখন তুমি ভুবনে পা রেখেছিলে তার কয়েক ঘন্টা পরে দেখা হয়েছে আমাদের। হাসপাতালের বেবি সিটে। আন্টিকে দেখতে গিয়ে আমাকে তোমার সিটের কাছে নিয়ে মা বললেন, ‘এটা তোর মাহমুদা আন্টির মেয়ে। আমাদের প্রিন্সেস। ‘ তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ছোটো ছোটো হাত পা, মায়াভরা চেহারা ভীষণ সুন্দর লাগছিল। আমি গালটা ছুঁয়ে দিলাম। ওমনি পুরো দুনিয়া কাঁপিয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছিলে তুমি। ‘

তাহিয়া অবাক চোখ চাইল অভীকের পানে। এসব কথা জানত না ও। অভীক আবার বলল,

‘ আমি কানে হাত দিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ”প্রিন্সেস এত কান্না করে কেন।” মা বলল আমার কোলে আসার জন্য কান্না করছিলে। তারপর যখন কোলে নিলাম তখন আমার পুরো মুখে নখের আঁচড় বসিয়ে লাল করে দিয়েছো, চুল টেনে ছিঁড়েছো । যখন ছাড়াতে গেলাম হাত ধরে ফেললে, আর ছাড়লেই না। এই যে কোলে উঠা, হাত ধরাধরি এসবে তুমিই আগে ছিলে। আমি নিরীহ মানুষ। আমি বৈধতার পরেই এগিয়েছি।’

তাহিয়া বিশ্বাস করল না। বলল,
‘ আমাকে রাগানোর জন্য আপনি বানিয়ে ও বলতে পারেন। প্রমাণ কী?’

অভীক পকেট থেকে ফোন বের করল। গ্যালারি ঘেটে এক ছবি স্ক্রিনে এনে বলল,
‘এই দেখো প্রমাণ।’

তাহিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল। লাল জামা পরা একটা নবজাতক শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আট দশবছরের একটা ছেলে। বাচ্চাটা এক হাতে ছেলেটার মুখ খামচে ধরেছে, আরেক হাতে চুল টানছে।ছেলেটা চোখমুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। কোলের বাচ্চাকে তাহিয়া চিনে। বাচ্চা ও নিজেই। মাহমুদার একটা এলবাম ভরতি ওর এই বয়সের ছবি। একটা ছবি ওর রুমের দেয়ালে ও ফটো ফ্রেমে আটকানো আছে। সেম এইরকম লাল জামা গায়ে দেয়া। তাহিয়া তড়িৎ ফোন ফেরত দিল। দায়সারা উত্তর দিল,
‘আমি ছোটো ছিলাম, এত কথা জানতাম না কি!’

অভীক মজা করেই গেল। আরেকটা ছবি বের করে বলল,
‘ তোমার নজর আমার উপর বোধহয় তখনই পড়েছে, কিভাবে তাকিয়ে ছিলে দেখো! দেখলেই কোলে উঠা, কিসমিস দেয়া খামছি দেয়া, আমাদের বাসায় গেলে আমার রুমে দৌড়ে চলে যাওয়া, আমার জিনিসপত্রের উপর নজর দেয়া এসব বউ বউ ধরণের আচরণ করতে শুরু থেকেই। আমিই অবুঝ ছিলাম, বুঝতাম না। তখন ভাবতাম এগুলো সাধারণ ব্যাপার। এখন বুঝতে পারছি, ঘটনা অন্য কিছু। ‘

অভীক হাসছে। তাহিয়া আড়চোখে একবার চাইল স্ক্রিনে। কোলাজ করা কয়েকটা ছবি, একটায় অভীকের দিকে তাকিয়ে আছে তাহিয়া, অভীক অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ছবিটা তাহিয়াদের বাসায়। যখন ওর বয়স এক থেকে দেড় মাস। তার পরের ছবিটা যখন তাহিয়া বসে তখনকার। তাহিয়া একটা খেলনা কারে বসে আছে, কারটা ওর নয়। জায়গাটাও অপরিচিত। তাহিয়া ভ্রু কুঁচকাল, বলল,
‘এটা কোথায়?’
‘আমার রুমে। দেখো, কিভাবে আমার খেলনা দখল করেছো তুমি। এই দখদারিত্বের স্বভাব বেশ পুরনো তোমার। কখনো গাড়ি, কখনো ম…

কথা সম্পূর্ণ করল না অভীক। মাঝপথে থেমে গেল। তাহিয়া ওর অগোচরে হাসল। অভীক প্রসঙ্গ পাল্টাল। গাড়ির পাশে ভাঙা কয়েকটা গাড়ি। অভীক তা দেখিয়ে বলল,
‘এগুলো সব তুমি ভেঙেছো। যতবার আমাদের বাসায় যেতে আমার খেলনা ভেঙে আসতে। ‘

আরেকটা ছবিতে ছোট্টো শিশুকন্যা অভীকের গালে চুমু খাচ্ছে। এটা সম্ভবত তাহিয়ার এক বছর বয়সের ছবি। নীলিমাদের টাঙ্গাইলের বাসায় মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল মাহমুদা। এরপর ওদের আর দেখা হয়নি। ছবিটা ইঙ্গিত করে অভীক বলল,
‘ তুমি মানুষটা তো সুবিধার না হিয়া। আমার মতো অবুঝ বাচ্চার সাথে কিসব করছিলে! ‘

তাহিয়া হাঁটা ধরল, কথা ঘুরাল, ‘ছবি গুলো আপনার কাছে ছিল এতদিন?’
‘না, মায়ের কাছে ছিল। আমার চোখে পড়েছে কদিন আগে। আমি অবাক হয়েছিলাম যখন দেখলাম, তোমার খেয়াল এদিক ওদিক যাওয়ার সময়টা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।’

অভীকের ঠোঁটের সেই ভিন্ন, অর্থবহ হাসি। শৈশবে নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে তাহিয়া, এত বছর পর!

তাহিয়ার লজ্জারাঙা মুখ দেখা হয়ে গেছে। আর বাড়ানো ঠিক হবে না। অভীক কথা ঘুরাল,
‘ বেলা হয়ে যাচ্ছে। রাতে ও কিছু খেলেনা। ক্ষিধে পেয়েছে নিশ্চয়ই? এবার বাড়ি চলো হিয়া, নাস্তা করবে। আপু ভাইয়া অপেক্ষা করছে। এবার যাওয়া উচিত।’

‘আমি যাব না।’ দৃঢ়স্বর তাহিয়ার। অভীক আবার মজার পাল্লায় হাত ফেলল। বলল,
‘কোলে করে নিতে হবে? ‘
‘না।’
‘ইচ্ছে হলে বলো। আগের মতো কেঁদে ভাসাতে হবে না। আমি এমনিই নিব। এখান থেকে কোলে তুলে অয়নের সামনে নিয়ে নামাব।’
অভীক কোলে নিতে উদ্যত হলো। এটা অভিনয় মাত্র। ও এখন কোলে নিবে না, এতটা ফিল্মি নয় ও। আর তাহিয়া যে কোলে উঠবে না এটাও ওর অজানা নয়। ওর কথা সত্য প্রমাণ করে তাহিয়া ওকে বাধা দিয়ে সরে দাঁড়াল। বাড়ি ভরতি লোক, এতক্ষণে সবাই উঠে পড়েছে। কতগুলো শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, দেবর, ননদ ওদের সামনে বাড়ির বউ কোলে চড়বে! ভাবতেই তাহিয়ার লজ্জা লাগল। এই লোককে বিশ্বাস নেই, কোলে নিয়ে যেতে পারবেন অনায়েসে, লজ্জার ভাগিদার ওকেই হতে হবে। তারচেয়ে ভালোয় ভালোয় একা যাওয়া যাক।
এমন ভাবনা থেকে ফিরতি পথে হাটা ধরল তাহিয়া।। মনে মনে দোয়া পড়ল, আল্লাহ অয়ন যেন এখন ঘুমিয়ে থাকে। উদ্ভট আবদার না করে।

কিন্তু হায়! বাড়িতে ঢুকতেই সর্বপ্রথম দেখা হলো অয়নের সাথে। ভণিতা ছাড়াই আবদার জুড়ে বসল বাচ্চাটা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here