#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-২২)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
নিকষ কালো মেঘের ভেলা থেকে অবিরত ঝরছে বৃষ্টি ধারা। বৃষ্টিকন্যার রিমঝিম ছন্দের নৃত্য মাটি স্পর্শ করতেই অস্তিত্ব হারাচ্ছে। এই মধ্যাহ্নে আঁধার নেমেছে, যেন গোধূলি পেরিয়ে গেছে সেই ক্ষণে। কখনো আবার আকস্মিক মেঘের মাঝে আগুনের সরু রেখা টানছে, বিকট শব্দ কানে এসে ঠেকছে। আলো জ্বলে উঠছে চারপাশে।
রেস্টুরেন্টের মাঝামাঝি একটা টেবিলের দুই দিকে বসে আছে অভীক তাহিয়া। রেস্টুরেন্টের চারপাশ স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা। কাঁচ ঘেঁষে বসেছে ওরা। তাহিয়া সচ্চ কাঁচে দৃষ্টি রেখে পরিবেশ দেখছে। অভীকের দৃষ্টি তাহিয়ার দিকে। হাতে মেন্যুকার্ড। দৃষ্টি সেখানে থাকার কথা। কিন্তু ওর পক্ষে মেন্যুকার্ডে দৃষ্টি আটকে রাখা দায় হয়ে উঠেছে, সম্মুখে বসা শ্যমবতীর রূপের ঝলকে। মাথার উপর ঝলতে থালা হলদেটে আলোয় বাদামী চোয়ালের মেয়েটাকে কী সুন্দর লাগছে ! তারপর যখন খানিক পরপর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মেঘ কাঁপা ওই আলো কাঁচ ভেদ করে মেয়েটাকে মুখে পড়ছে, ভ্রু কুঁচকে উঠছে। ঘন ঘন চোখের পলক ফেলছে, চশমা ভেদ করে চোখের চঞ্চলতা স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে। অভীক অন্তর্ভেদী চোখে পরখ করছে।
ওয়েটার যে পাশে দাঁড়িয়ে অর্ডারের অপেক্ষায় আছে সে খেয়াল নেই অভীকের। মিনিট দুয়েক অতিবাহিত হওয়ার পর ওয়েটার বিরক্তিভরে বলল,
‘স্যার অর্ডারটা?’
ধ্যানচ্যুত হলো অভীকের। ঘাড় ঘুরিয়ে ওয়েটারকে দেখে চমকাল। তড়িৎ নড়েচড়ে বসে ওর্ডার দিল। ওয়েটার চলে যাওয়ার পর গলা ঝেড়ে বলল,
‘আমি তোমাকে আকাশ দেখতে আনিনি, হিয়া।’
চোখ ঘুরাল তাহিয়া। অভীকের হতাশ চাহনি দেখে ঠোঁট চেপে হাসল। মজার স্থলে বলল,
‘তবে কি আপনাকে দেখতে এনেছেন?’
‘আনতেই পারি, অধিকার আছে আমার। ‘ দু’কাধ উঁচিয়ে বলল অভীক।
তাহিয়া মজা করে গেল,
‘ আমার চোখ, আমার ইচ্ছে। আমি আকাশ দেখব না কি বাতাস দেখব, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে। তাতে আপনার কী?’
অভীক মজার সুতো টানল,
‘আমার স্ত্রী, আমার ব্যক্তিগত সম্পদ। সে আমার দিকে তাকাবে, আমাকে দেখবে। তাতে তোমার কী?’
বলা বাহুল্য, এখানে ‘সম্পদ’ শব্দটা অভীক ‘সিদ্ধি’ অর্থে ব্যবহার করেছে।
‘আমি আপনাকে দেখব না, একদম না।’ অভীকের চোখে চোখ রেখে বলল তাহিয়া। অভীক হেসে বলল,
‘আচ্ছা দেখো না, শুধু তাকিয়ে থাকো।’
তাহিয়া ভেংচি কাটল। অভীক এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘অয়ন তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। ফোন দিব?’
অবনীর বাসার ঘটনা মনে পড়ল তাহিয়ার। তড়িৎ বলল,
‘একদম না।’
‘কেন?’
‘আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ‘ বিরক্তিভরে জবাব দিল তাহিয়া।
‘আসার সময় আমাকে খুব করে বলল, তোমার সাথে দেখা হলেই যেন কথা বলিয়ে দিই। ছোটো মানুষ বড়ো মুখে একটা আবদার করেছে। আমিও ফেলতে পারিনি। কথা দিয়ে ফেলেছিলাম। কল দিই, দেখো কী বলে।’
অভীকের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি। ফোন বের করল ও।
তাহিয়ার কপট রেগে বলল,
‘ কল দিবেন না। আমি ওই পাজি ছেলের সাথে কথা বলব না।’
অভীক ফোনে চোখ রেখে বলল,
‘ছোটো মনে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। আমি ফোন দিচ্ছি। কথা বলো। বেশি কিছু বলবে না। ওই জন্মদিনের উপহার টুপহারের কথা বলবে হয়তো।’ অভীক বাস্তবিকভাবেই অবনীর নাম্বার ডায়াল করল। তাহিয়া আকস্মিক উঠে অভীকের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিল। নিজের জায়গায় গিয়ে বসে ফোন কাটল।
তারপর বলল,
‘ আপনার ভাগ্নে, আপনি ম্যানেজ করবেন। মাঝখানে আমাকে টানছেন কেন?’
‘উপহারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা তো তুমিই পালন করবে। তোমাকে না টানলে হবে?’
অভীক মুখ টিপে হাসল। তাহিয়ার লজ্জামাখা মুখটা ভীষণ সুন্দর দেখায়। ক’দিন যাবত এই মেয়ে একবারে সহজ হয়ে লজ্জা টজ্জা পাচ্ছে না। ওই চেহারাটা দেখার সুযোগ মিলছে না ওর। সুযোগ পেয়ে আজ অয়নের কথা তুলেছে। অয়নের কথা আসলেই এই মেয়ে লজ্জায় লাল নীল হবে, তা নিশ্চিত ছিল অভীক। হলো ও তাই। অভীকের কথায় তাহিয়ার চেহারায় লজ্জার আভা ফুটে উঠেছে।
অভীক তাকাচ্ছে, হাসছে, লজ্জার সুতো টেনে যাচ্ছে।
‘তুমি লজ্জ পাচ্ছো কেন? আশ্চর্য! আমি লজ্জা পাওয়ার মতো কী বললাম!’
‘আপনি ভীষণ অভদ্র।’
ধীর স্বরে বলল তাহিয়া। অভীক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা ছিল। সোজা হয়ে বসল। আকস্মিক টেবিলের দিকে ঝুঁকে বসে তাহিয়ার হাত টেনে মুঠোয় নিল। চোখে চোখ রেখে গভীর গলায় বলল,
‘ মনের খেয়াল এদিক ওদিক যাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের থেকে ছেলেরা এগিয়ে থাকে সবসময়। আমি কিন্তু ওসব প্রাধান্য দিইনি। অথচ খেয়ালদের নিয়ন্ত্রণহীনতার পরিণাম টানার আগেই তুমি ‘অভদ্র’ উপাধি দিয়ে দিয়েছো। খেয়ালরা নিয়ন্ত্রণহীন হলে কী করবে তুমি, হিয়া! লজ্জায় তো তুমি বোধহয় বিলীন হবে। একবার ভাবো তো!’
কথার সারমর্ম বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগল তাহিয়ার। চেহারায় লজ্জার আভা গাঢ় হলো। কঠিন ভাষায় কী কঠিন কথা বলে ফেলল লোকটা! হৃদপিণ্ড তড়িৎ লাফিয়ে উঠছে। আবার স্বরে কী মাদকতা তার! ঘোর লাগাচ্ছে। তাহিয়া তীর্যক চোখে তাকাল অভীকের পানে। দৃষ্টিতে দৃষ্টি আটকাল। লোকটা ঠোঁট কামড়ে হাসছে। তাহিয়া চোখ ঘুরাল, শব্দ বদলাল। বিড়বিড় করে বলল,
‘অসভ্য।’
তাহিয়ার লজ্জারাঙা চেহারার দিকে তাকিয়ে সার্থকতার হাসি দিল অভীক। হেসে বলল,
‘অসভ্য না হলে বউ টিকে না। বউদের কাছে অসভ্য হতে হয়। সভ্য হলে সার্থকতা মিলে না। মানুষ আবার বলবে, আমি রোমান্টিকের ‘র’ জানি না। ‘
থামল অভীক। নেশালো স্বরে বলল,
‘মূলত আমি রোমান্টিকের ‘র’ যে কারো সামনে প্রকাশ করি না। ‘র’ থেকে ‘ক’ অবধি তোমার জন্য সঞ্চয় করেছি। আমার আবিস্কৃত রোমান্টিকতার যে ডেফিনিশন, সেটা কিন্তু এখনো তোমার উপর এপ্লাই করিনি। করলে তখন কী উপাধি দিবে হিয়ারানী! ভাবনাচিন্তা শুরু করো। সময় বোধহয় বেশি নেই।’
অর্থবহ হেসে চোখ মারল অভীক। তাহিয়ার শ্বাস আটকে এলো। লোকটা অবনীকে বলা প্রতিটা কথার মূল অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছে। কথা বলার ভঙ্গিটা বদলিয়ে কিভাবে যেন কথা বলছে। শিহরিত হচ্ছে ও।
খাবার হাতে ওয়েটারের আগমন ঘটল তখন। কপোত-কপোতীকে কাছেপাশে থাকতে দেখে গলা ঝেড়ে কাশল। অভীক সরে বসল, তাহিয়ার হাত জোড়াকে মুক্তি দিল । সোজা হয়ে বসে লম্বা শ্বাস ফেলল তাহিয়া। লজ্জা কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষণ সময় লাগল।
দুটো প্লেটে ভুনা খিচুড়ি দুজনের সামনে রাখল ওয়েটার। সাথে কালা ভুনা, চিকেন চাপ, বেগুন ভাজা আর আচার ভর্তি বাটি রাখল টেবিলের মাঝামাঝিতে দিয়ে চলে গেল। ওয়েটার চলে যেতেই অভীক চামচ হাতে নিল। সর্বপ্রথম তাহিয়ার প্লেটে চিকেন এক চামচ কালা ভুনা তুলে দিল। প্রিয়তমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চিকেন চাপের দিকে নজর দিল। এক পিস মাংস তাহিয়ার পাতে তুলে দেয়ার সময় বলল,
‘এত লজ্জা পেলে হবে? আমিই তো, তোমার নিজস্ব মানুষ। ‘
তাহিয়া চোখ তুলে তাকাল। অভীকের মুখোভঙ্গি স্বাভাবিক। কোন দুষ্টুমির আঁচ নেই। তাহিয়া তাকাতেই অভীক স্বাভাবিক স্বরে বলল,
‘এবার খাওয়া শুরু করো।’
নিজের পাতে খাবার নিয়ে খাওয়ায় মন দিল অভীক। চামচ দুটো দিয়ে নিপুণ কৌশলে মাংস ছাড়িয়ে খিচুড়ি সাথে খাচ্ছে। তাহিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলো। খাওয়ায় মনোযোগ দিল। খাওয়ার মাঝে আকস্মিক বলল,
‘আমার মনে একটা দারুণ আইডিয়া এসেছে। শুনবেন?’
‘শুনাও।’ খিচুড়ির মাঝে চামচ নেড়ে বলল অভীক। তাহিয়া বলল,
‘আমি আপনার বাসায় যাওয়ার পর, আপনি যখন আমাকে বকা দিবেন তখন আমি রেগে আপনার উপর প্রতিশোধ নিব। ‘
‘কীভাবে!’ ভ্রু কুঁচকাল অভীক। তাহিয়া মুখ টিপে হেসে বলল,
‘খিচুড়ি রান্না করে। সেই প্রথম দিনের মতো।’
অভীক আতঙ্কিত গলায় বলল, ‘ আমাকে মেরে ফেলার বুদ্ধি করে আবার ‘দারুন’ ট্যাগ লাগাচ্ছো! শত্রু ভাবো আমায়!’
‘কেউ আমাকে বকলে তখন তাকে আমি শত্রু ভাবী। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, আপনি বকলেই আমি খিচুড়ি রান্না করব। এবার বকা না বকা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ‘ ঠোঁট চেপে হেসে বলল তাহিয়া।
অভীক করুণ চোখে তাকাল। তারপর বলল,
‘তুমি মেয়েটা আসোলেই ফাজিল, হিয়া।’
তাহিয়া ও তখনকার মতো অভীকের কথার ভঙ্গি নকল করে বলল,
‘বউদের ফাজিল হতে হয়। ফাজিল হওয়া ছাড়া জামাইকে ঠিক করা যায়না। জামাই ঠিক করার দায়িত্বটা আমার কাধে, কতমানুষ আমার দিকে চেয়ে আছে। দায়িত্ব পালন না করলে ‘স্ত্রীগত’ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠবে। সে হিসেবে ফাজিল হওয়াটা বাধ্যতামূলক। ‘
অভীক হেসে উঠল আকস্মিক। বলল, ‘ কাজে নেমে পড়ুন তবে। আমি ও দেখতে চাই, আপনি কিভাবে জামাই ঠিক করেন। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলছে, জামাই ঠিক করতে গিয়ে আপনি নিজেই ঠিক হয়ে যাবেন। দেখা যাক এবার, আপনি জামাই ঠিক করেন, না কি জামাই আপনাকে ঠিক করে।’
তাহিয়া অভীকের দিকে কাটাচামচ তাক করে বলল,’আমি আপনাকে ঠিক করব। ‘
অভীক আবার আগের রূপে ফিরে গেল। তাহিয়ার তাক করা কাটা চামচে নিজের হাতে থাকা কাটা চামচ লাগিয়ে অর্থবহ হেসে বলল, ‘ ঘুষ দিলে আমি অনায়াসে ঠিক হয়ে যেতে রাজি। দিবে?’
তাহিয়া কপট রেগে কিছু বলতে গেল, পারল না। থামতে হলো ওকে। আকস্মিক একটা পুরুষালি গলা ভেসে এলো, ‘তাহিয়া, রাইট?’
দ্বিতীয় পুরুষালি স্বরে নিজের নাম শুনে বিস্মিত হলো তাহিয়া। বিস্মিয়ের মাত্রা চূড়ায় পৌঁছল যখন স্বরটা অনুসরণ করে পিছনে তাকাল। রেহান! এই অবেলায় ! কোথা থেকে এলো! ওকে চিনল কিভাবে! কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল তাহিয়া।
অভীক তাকিয়ে দেখল, শুভ্রবর্ণের একটা অল্পবয়সী ছেলে দাঁড়ানো। পোশাক আশাকে উচ্চবিত্তের চাপ, ঠোঁটের কোণে হাসি। চোখে মুখে উৎফুল্লতা। যেন হারানো কিছু খুঁজে পেয়েছে। চোখ ফিরিয়ে তাহিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
‘তোমার পরিচিত?’
তাহিয়া আতঙ্কিত চোখে চাইল। অভীক যদি শুনে এটা রেহান, কেমন রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না ও। তাহিয়া অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে রইল। আগের থেকে বেশ সুন্দর হয়ে গেছে রেহান, তবে চেহারাটা আগের মতোই আছে।
রেহান ভাবল, তাহিয়া ওকে চিনে নি। নিজ থেকেই বলল,
‘আমি রেহান, ভুলে গেলে! এসএসসির আগে তুমি যে স্যারের কাছে টিউশন নিতে, আমিও একই স্যারের কাছে টিউশন নিতাম। সেই রেহান।’ পছন্দের কথা ইঙ্গিত করল রেহান।
অভীক সবে চামচভরতি খিচুড়ি মুখে নিয়ে চিবোতে শুরু করেছে। ‘রেহান’ নামটা শুনে থেমে গেল। তড়িৎ তাহিয়ার দিকে তাকাল। তাহিয়ার চোখে মুখে কেমন আতঙ্ক। অভীক ভ্রু কুঁচকাল। সচেতন চোখে পরখ করল তাহিয়াকে। রেহান ওর সিলিবাসের বাইরে, ওকে পড়া অভীকের কর্ম নয়। তাহিয়াকে পড়াই ওর মূখ্যকাজ। এখন স্পষ্ট হবে মেয়েটা ওকে বাস্তবিকভাবে মেনে নিয়েছে না কি এটা শুধুই আবেগ। রেহানকে দেখে যদি অভীক পিছলে যায় তবে উত্তরটা ইতিবাচক হবে। অভীকের জানামতে, রেহান ‘তাহিয়া’র প্রথম ভালোবাসা। অবনীর সাথে বলেছিল, রেহানকে পেলেই বিয়ে করে ফেলবে। বিয়ের আগ অবধি রেহানের প্রতি প্রবল অনুভূতি ছিল তাহিয়ার। বিয়ের পর ওর প্রেমে পড়েছে। তখন কি ওর মন থেকে রেহান মুছে গিয়েছে? না কি ছিল? প্রথম ভালোবাসা না কি ভোলা যায় না, ওর মনে যদি কোন অনুভূতি থাকে এবং অনুভূতির তাড়ানায় যদি ওকে ছেড়ে চলে যায়, তখন! ভেতরটা কেঁপে উঠল। এ কদিনে মেয়েটা হৃদয়ের গহীনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এখন ছাড়াছাড়ির কথা ভাবতেও বুক কাঁপে, এমন কিছু হলে সহ্য করা যাবে? কিভাবে?
তাহিয়া রেহানের দিকে তাকাল। তারপর সৌজন্যবোধে বলল,
‘ মনে পড়েছে। ‘
রেহান প্রসন্ন হাসল। চঞ্চল গলায় বলল, ‘ কেমন আছো তুমি?’
‘আছি ভালো। তুমি ভালো আছো?’ কৃত্রিম হেসে বলল তাহিয়া।
জীবনে প্রথমবার কারো প্রতি হিংসা হলো অভীকের। রেহানকে তাহিয়ার ‘তুমি’ সম্বোধন কেন যেন অসহ্য লাগছে ওর। কই ওকে তো ‘তুমি’ সম্বোধন করে না। কোথাকার কোন ছেলের সাথে যুগ পরে দেখা হওয়াতেও ‘তুমি’ সম্বোধন করছে। ফাজিল!
মুখভঙ্গি একবারেই স্বাভাবিক অভীকের। অথচ মনে কত ভাবনা বিচরণ করছে! সে ভাবনাগুলো রাগ মিশানো। মুখের খাবারটা গিলা সম্ভব হচ্ছে না। দুজন মানুষ কথা বললে মাঝের জন স্থির দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে তাদের কথা শোনাটা অভদ্রতা। অভদ্রতার খাতায় নাম লেখানোর ঘোর বিরোধী অভীক। ভদ্র স্বাভাবী ছেলেটা দৃষ্টি নামাল। প্লেটে দৃষ্টি রেখে চামচ দিয়ে খাবার নেড়ে গেল। তবে, ঘোর বিরোধীতা ভুলে অভদ্রতার অধ্যায়ে গিয়ে কানটাকে ঠিকই তাহিয়াদের কথার মাঝে পাঠাল।
রেহান জবাব দিল,
‘যা ভালো ছিলাম। তোমায় দেখে ভালো লাগার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। তা এখানে কিভাবে?’
‘লাঞ্চে এসেছি।’ অভীকের দিকে ইশারা করল তাহিয়া। রেহান এবার অভীককে পরখ করল। তারপর অভীকের কাঙ্খিত প্রশ্নটা করল,
‘কার সাথে এসেছো? উনি কে?’
অভীক চামচ নাড়ানো বন্ধ করে নিশ্চল বসে রইল। তার অনুভূতিটা এখন ক্রিকেট ম্যাচের শেষ বল করার আগে গ্যালারি ভরতি দর্শকের মতো। এই বলে হয় হার, নয় জিত। তাহিয়া যদি এখন স্পষ্ট উত্তর না দেয়, তবে অনেককিছুই বুঝা হয়ে যাবে ওর। তাহিয়া উত্তর দিতে সময় নিচ্ছে। কাচুমাচু করছে। অভীকের হৃদস্পন্দন বাড়ছে। ভয়ে? কিন্তু সে তো ভয় পায় না। আজ হঠাৎ ভয়েরা জেঁকে ধরল কেন? কী কারণে? আপনজন হারানোর ভয়ে? হয়তোবা। অভীকের মন থেকে তড়িৎ ভয়েরা চলে গেল, যখন তাহিয়া মুখ খুলল। শ্বাসরুদ্ধকর মুহুর্তের ইতি টেনে তাহিয়া বলল,
‘আমার জীবনসঙ্গী।’
তাহিয়ার স্বরে দ্বিধা নেই, আছে দৃঢ়তা। অভীকের হৃদয়ে শীতলতা ছুঁয়ে গেল। এতটা প্রশান্তি ইতঃপূর্বে তাকে স্পর্শ করতে পেরেছিল কখনো? হয়তো না। অভীক তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে তাকাল। তাহিয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি, গালদুটোয় লাজুক ভাব। দৃষ্টি ওর দিকেই নিবদ্ধ। চোখাচোখি হতেই অভীক হাসি ফেরত দিল। সে হাসিটা বিজয়ের, প্রশান্তির। যেই হাসির আগমন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।
রেহান অবাক হয়ে বলল,
‘বিয়ে করে ফেলেছো তুমি!’
‘হ্যাঁ।’ তড়িৎ মাথা নাড়াল তাহিয়া। রেহানের চোখে হতাশা। এতকাল খুঁজে মেয়েটাকে যেই পাওয়া গেল, তাও বিবাহিত! ওর কষ্ট হলো। প্রকাশ না করে সৌজন্যবোধে অভীকের সাথে কুশল বিনিময় করল। তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘লাভ ম্যারেজ?’
রেহান জানতো কোন এক সময় ওর জন্য তাহিয়ার মনে অনুভূতি ছিল। সেই অনুভূতি কতখানি গভীর যাচাই করতে ইচ্ছে করল ওর। ওর পরে অন্য কাউকে জীবনে জড়িয়েছে কি না সেটা জানতেও কৌতুহলী হলো মন। তাহিয়া অভীকের দিকে তাকাল। চমৎকার হেসে বলল,
‘লাভ আফটার ম্যারেজ।’
সুন্দর শুনলান কথাটা। অভীক হাসল আবার। রেহান বুঝল না সে কথার সারমর্ম। ভ্রু কুঁচকাল। সামনে বসা দম্পতি তখন হাসি বিনিময়ে ব্যস্ত। তাদের হাসি বলে দিচ্ছে, কতখানি প্রেম তাদের মাঝে, কতটা সুখে আছে তারা! রেহান ‘ভালো থেকো। ‘ বলে দ্রুত বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল।
রেহান যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তাহিয়া। চঞ্চল গলায় বলে ফেলল,
‘যাক চলে গেছে, আমি কী যে ভয় পেয়েছিলাম!’
অভীক ভ্রু কুঁচকাল, ‘কেন?’
‘আপনি আবার যদি আমায় ভুল বুঝেন এটা ভেবেই আমার অন্তরাত্মা কাঁপছিল। ওর জন্য আমার কোন একসময় হালকা অনুভূতি ছিল, সেটা মোহ মাত্র।তবে যা সময়ের সাথে কেটে গিয়েছে। আজ ওকে দেখে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস হয়নি, শুধুমাত্র আপনার ভুল বোঝার আতঙ্ক চেপেছে। আমার মনে ওর জন্য এক বিন্দু পরিমাণও অনুভূতি নেই। আমার অনুভূতিগুলো ‘আপনিময়’। প্লিজ ভুল বুঝবেন না আমায়! আমি ভীষণ কষ্ট পাব।’ তাহিয়া অভীকের হাত ধরে করুণ গলায় বলল।
মেয়েটা ভয়ে কাঁচুমাচু করছিল, আর সময় ও ওর কথা ভেবেই নিয়েছিল! কী আনন্দের কথা! মেয়েটা ওকে ‘ভালোবাসি’ বলে নি। অথচ সব অনুভূতি প্রকাশ করে ফেলেছে। অভীক তাহিয়ার চোখে হারানোর ভয় দেখতে পেল, যেই ভয়ে একটু আগে নিজে তটস্থ ছিল সেই ভয়। ভয়ের পেছনে সৌন্দর্য থাকে, চমৎকার সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য অভীককে বাকরুদ্ধ করে দিল, কথা বলতে পারল না কিছুক্ষণ।
তাহিয়া যদি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ‘ভালোবাসি’ বলতো তবেও এতটা প্রশান্তি আসত না, যতটা ছোট্টো ওই স্বীকারোক্তিতে ছিল।
অভীকের মনে পড়ে না শেষ কবে এতটা খুশি হয়েছিল সে। আগে ভয়ে, এখন খুশিতে খাবার নামল না গলা দিয়ে। এই মুহুর্তে একটা কাজ না করলেই নয়।
ইশারায় ওয়েটারকে বিল আনতে বলল। ওয়েটার বিল নিয়ে এলে ঝটপট ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে কার্ডে রেখে তড়িৎ উঠে দাঁড়াল সে। তাহিয়ার উদ্দেশ্যে ছোট্টো করে বলল,
‘চলো।’
ভয়ে তাহিয়ার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। সে ধরেই নিল অভীক ওকে ভুল বুঝেছে, নয়তো খাওয়া ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে কেন! কিন্তু একটু আগে তো হাসছিল। তবে কি তা শুধুমাত্র রেহানকে দেখানোর জন্য? মূলত, উনি ভুল বুঝেছেন?
গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তাহিয়ার, হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে, শরীর কাঁপছে। হারানোর ভয়টা এতটাই গ্রাস করে ফেলেছে ওকে। অভীক আগে আগে হাটা ধরল, তাহিয়ার হাত ধরল না। চোখে সরষে ফুল দেখল তাহিয়া। এই মুহুর্তটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, অভীকের প্রতি ওর অনুভূতি কতটুকু। অভীকের ভাবনার সাথে কতটা জুড়ে আছে সে, অভীকের ভাবনা কতটা ইফেক্ট করে ওকে। দুই পক্ষীয় রাগে কথা বলা বন্ধ করা রাখা যায়। কিন্তু এক পক্ষীয় রাগে কি দূরে থাকা যায়? যদি অপর পক্ষের অনুভূতি পরিপূর্ণ হয়। তবে কি থাকা যায়? বিরহ মেনে নেয়া যায়? লোকটা যদি এখন ভুল বুঝে দূরে সরে যায়, তখন কী করবে ও? লোকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, নিত্যরুটিনে ওকে লাগবেই। রাগহীন এ বিরহ সইতে পারবে না, একবারেই না।। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াল আবেগী তাহিয়ার।
কলেজ থেকে আসার সময়, রেস্টুরেন্টে নামার আগে অভীক দরজা খুলে দিয়েছে। আগে তাহিয়া উঠে বসেছে তারপর অভীক বসেছে পাশে। অথচ এখন লোকটা ওর অপেক্ষা না করে নিজেই উঠে বসে গেল। দরজাটা অবধি খুলে রাখল না। সন্দেহগুলোকে সত্য প্রমাণিত হতে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল তাহিয়া। গাড়িতে উঠে কান্নামাখা গলায় বলল,
‘ সত্যি ওর জন্য আমার মনে কিছু নেই। ভুল বুঝবেন না। আমার সহ্য হচ্ছে না, কষ্ট হচ্ছে। আমি….
কথার মাঝে থামতে হলো তাহিয়াকে, বাধ্য হলো। বাধ্যকারী অভীক। আকস্মিক টেনে বুকে জড়িয়ে, কপালে চুমু খেয়ে বসল। তারপর আবার আগলে নিল। শক্তভাবে। যেন বাঁধন ছেড়ে যেতে না পারে। মুখে কিছুই বলল না। অনুভুতিগুলোকে মুখে প্রকাশ করতে পারছিল না তখন। কাজটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল, তাই রেস্টুরেন্টে ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। অথচ তাহিয়া কিসব ভেবে বসল। শেষ মুহুর্তে কেঁদে ও দিয়েছে, এখনো কাঁপছে থরথর করে। আগে তাহিয়ার কাঁপা-কাঁপিটা বিরক্ত করত অভীককে। আজ এত প্রশান্তি দিল কেন? আজ অস্বস্তির বদলে ওর প্রতি অনুভূতি ছিল বলে? কাঁপা-কাঁপির কারণ ওকে হারানোর ভয় ছিল বলে? হয়তোবা।
তাহিয়া স্তব্ধ। আকস্মিক ঘটা ঘটনাটা অকল্পনীয় ছিল। মনে একটাই কথা ভাসছে, ‘ভুল বুঝলে উনি আমাকে জড়িয়ে নিতেন না। তারমানে ভুল বুঝেন নি!’ ভাবতেই কান্নাহাসিতে মেতে উঠল তাহিয়া। কাঁপা স্বরে বলল,
‘আপনি…
অভীক তাহিয়ার মাথায় অধর ছোঁয়াল। মিষ্টি হেসে বলল, ‘ভুল বুঝিনি। হঠাৎ কেন যেন তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো, তাই চলে এলাম। ‘
তাহিয়া আবার কাঁদল। এবার ভয়ে নয়, খুশিতে। অবিশ্বাস্য গলায় বলল, ‘সত্যি!’
অভীক হাসল আবার। আজ ওর খুশির দিন, হাসার দিন। আজ শুধু হাসবে। কারণে অকারণে, বাধাহীনভাবে। তাহিয়ার ভয় কাটল। বলল,
‘ভয়ে আমার প্রাণ ভোমরে উড়ে যাচ্ছিল।’
অভীক নিজের অনুভূতিটা সরাসরি প্রকাশ করল না। ঘুরিয়ে বলল,
‘রেহান আসায় কিন্তু লাভ হয়েছে।’
তাহিয়া আকস্মিক রেগে গেল। সরে বসে বলল,
‘ কত সুন্দর সময় কাটছিল, এসে সব ভেস্তে দিল। আপনি লাভ পেলেন কোথায়?’
‘আমাদের সম্পর্কে স্বচ্ছতা তো ছিলই। রেহান আসার পর অনুভূতির স্বচ্ছতাটাও এসে গেল। কত কী বুঝিয়ে দিল! আজ রেহানের আসার প্রয়োজন ছিল, ভীষণ প্রয়োজন। সম্পর্কের শুরুতেই তৃতীয় ব্যক্তির বিদায় হলো। বুঝিয়ে গেল, আমার আর হিয়ারানীর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির স্থান নেই। ‘
হাসির রেখা টেনে কোমল স্বরে বলল অভীক। রেহানের আগমনের লাভটা ক্ষণে ক্ষণে টের পাচ্ছে সে। রেহান বুঝিয়ে গেল, একে অপরের প্রতি অনুভূতি, ভালোবাসা। অভীককে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল, মেয়েটা ওর হৃদয়ে কতখানি জায়গা জুড়ে আছে। আবার তাহিয়ার উত্তরে তাহিয়ার জন্য ভালোবাসাও বৃদ্ধি করেছে। হারানোর ভয় জাগিয়ে এক মুহুর্তে অনুভূতির পাল্লা ভারি করেছে।
তাহিয়া ভাবল। আসোলেই তো অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে। অনুভূতিগুলো পরিষ্কার হয়েছে, মনটাকে পড়তে পেরেছে, কত কথা জেনেছে। অভীকের প্রতি ওর অনুভূতি টের পেয়েছে। ভাবনার মাঝেই হেসে উঠল তাহিয়া। উৎফুল্ল মনে বলল,
‘আসোলেই লাভ হয়েছে।’
অভীক পকেট থেকে একটা বক্স বের করল। ফিঙ্গার রিং বক্স। বক্সের ভেতরে একটা রূপালি রিং, মাঝে একটা ছোট্টো হীরের পাথর। গাড়ির ভেতরে অন্ধকার। আলোহীন গাড়িটায় আলো দিতে যেন বিদ্যুৎ চমকাল তখন। সেই আলোতে অভীক তাহিয়ার বাঁ হাতের অনামিকা আঙুলে রিংটা পরিয়ে দিল, কাজটা করল সেকেন্ড বিশেকে।
তাহিয়ার আজ অবাক হওয়ার দিন। সে পাল্লা দিয়ে অবাক হবে। এই যে আবার অবাক হলো। অবাক হয়ে চাইল অভীকের পানে,
‘হঠাৎ এটা কেন!’
গাড়ির ভেতরে আঁধার ছেয়ে গেল। অভীক আঁধারে দ্বিতীয়বার আগলে নিল প্রিয়তমাকে। গভীর গলায় বলল,
‘ বিয়ের উপহার দেয়া হয়নি তোমায়। তখন দেয়ার মতো অনুভূতি বা পরিস্থিতি ছিল না। ভেবে রেখেছিলাম, অনুভূতিতে ঠাসা একটা সুদিনে চমৎকার মুহুর্তে পরিয়ে দিব আংটিটা। আমার মনে হচ্ছে এর চেয়ে সুদিন আর দুটো হবে না। তাই আজ পরিয়ে দিলাম। ‘
লোকটা ‘ভালোবাসি’ বলল না। ‘সুদিন’ বলেই সব বুঝিয়ে দিল। তাহিয়া হাসল। অন্ধকার আংটিটা ছুঁয়ে দেখল, চুমু খেল। অভীক হাসল টের পেয়ে। তাহিয়া প্রশ্ন করল,
‘আপনি আংটি নিয়ে ঘুরেন না কি!’
‘আজ কেন যেন বের হওয়ার আগে পকেটে নিয়েছিলাম। কাকতালীয়ভাবে সুদিনটা আজই এলো।’
‘এই সুদিনে আমি কি দিব আপনাকে? আমার কাছে তো কিছুই নেই।’ হতাশা ঝরে গেল তাহিয়ার স্বরে।
অভীক হেসে তাহিয়া গাল টেবে বলল, ‘স্ত্রীদের প্রতি স্বামীদের খুব বেশি চাওয়া থাকে না, উপহার পাওয়ার আশা থাকে না। তারা চায় শুধু তার স্ত্রী তার প্রতি একটু আগ্রহ, যত্ন, অনুভূতি, বুঝার চেষ্টাকারী হোক। লক্ষ কোটি থাকার চেয়েও দামি এগুলো স্বামীদের কাছে। তুমি না হয় সেগুলোই দিও!’
লোকটা এত সুন্দর করে কথা বলে কেন? সে তো পারে না! একটা মানুষকে এত সুন্দর করে কথা বলতে হবে কেন? প্রতি কথায় মুগ্ধ করতে হবে কেন? মুগ্ধতার সিস্টেম অকেজো হওয়ার জো হবে যে কোন সময়। এটা উচিত নয়, একদমই না। হেসেই কত কী ভেবে গেল তাহিয়া।
.
বৃষ্টির বেগ কমে এলো। আলোকিত হতে শুরু করল চারপাশ। গাড়িটা তখনো রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড় করানো। গাড়ি চলছে না, পরখ করে দেখা গেল চালকের আসনে চালক নেই। তাহিয়া হকচকিয়ে বলল,
‘ড্রাইভার কোথায়?’
তাহিয়ার কপালে আসা চুল সরিয়ে দিয়ে অভীক বলল,
‘মিয়া বিবির একান্ত সময়ে তৃতীয় ব্যক্তি থাকতে নেই। ড্রাইভার লাঞ্চ করছে রেস্টুরেন্টে। ‘
তাহিয়া হাসল। লোকটা আটঘাট বেধে নেমেছে তবে! বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বৃষ্টিতো কমে গিয়েছে, এখন কি বাসায় ফিরব?’
‘আজ কোন বাসায় ফিরাফিরি হবে না, এই বৃষ্টিস্নাত শহরে ঘুরাঘুরি হবে। ‘
‘এটা কি সুদিনের পুরষ্কার?’
‘হ্যাঁ।’ অভীক শব্দযোগে হাসল। ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলল। এলো, গাড়ি চলতে শুরু করল।
বৃষ্টির পর আকাশ নীল হলো, রংধনু উঁকি দিল আকাশের বুকে। বৃষ্টির পর সুদিন এলো তাহিয়ার দিন পঞ্জিজায়। আকাশ যখন রংধনুতে মাতানো, তাহিয়া- অভীক তখন সাত রঙা অনুভুতিতে মাতল।
চলবে….
শেষ শেষ একটা গন্ধ পাচ্ছেন? আমি পাচ্ছি বোধহয়। এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা ঘটনা ভাজ করে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বিদায় নিব? না কি ব্যাগ পত্র মেলে নাইওর থাকব? আজ আপনাদের দিন, বলুন। আমি শুনব, মানবো।