প্রেমোদ্দীপক। পর্ব-১৮

0
1047

#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-১৮)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

অনুভূতি, অনুরাগ, অভিমান, অভিযোগ, রাগ, বিরহের সুতো দিয়ে বাধা থাকে একটা সম্পর্ক। কখনো প্রেম, কখনো বিরহ, কখনো আবার বিচ্ছেদ। সম্পর্কে পুরুষের চেয়ে নারীরা আবেগপ্রবণ থাকে বেশি। অনুভূতিতে ঠাসা থাকে তাদের মন। সঙ্গীর কাছ থেকে প্রত্যাশার মাত্রাটাও থাকে একটু বেশি। তারা চায়, তাদের মত তাদের সঙ্গীর আচরণ ও প্রেমোদ্দীপক হোক। কথায় কথায় ভালোবাসা ফুটে উঠুক। কোমলমতি মনটা যাকে বন্ধক দিয়ে বসেছে সে যেন কোন কষ্ট না দিক। তারা চায় তাদের অনুভূতিগুলো বিপরীত পক্ষের কাছে পৌঁছে যাক, এবং সে এর মূল্য দিক। কিন্তু বিপরীত পক্ষ থেকে যখন তার অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করা হয় তখন প্রেমটা বিরহে রূপ নেয়, অনুভূতি অভিযোগে রূপ নেয়, রাগ, অভিমান জোড় হয়ে বাসা বাধে মনে।

ঠিক এই অবস্থা গুলোর মাঝে দিয়ে যাচ্ছে তাহিয়া। অভীকের পক্ষ থেকে এখনো অবধি কোন প্রণয়পূর্ণ বা প্রেমোদ্দীপক আচরণ না আসায় তাহিয়ার ভাবনা, ওর অনুভূতিগুলো এক পক্ষিক। অভীকের আচরণে মনোক্ষুণ্ণ হয়েছে তাহিয়া। সম্পর্কের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অভীক কোমল হয়েছে ওর প্রতি, এতটা কঠোরতা দেখায়নি। ওর বদ্ধমূল ধারণা ছিল আর যাই হোক দ্বিতীয়বার অভীক তাকে এভাবে ধমক দিবেনা। ওর ভ্রান্ত ধারণা ক্ষান্ত করে ধমক দিল, সেই সাথে ক্লাসসুদ্ধ ছেলেমেয়ের সামনে অপমান করে বের করে দিল! কিভাবে পারল লোকটা? একটাবার বুক কাঁপেনি? সেদিন তো কত বড়ো সংলাপ ছেড়েছিল, সঙ্গীকে এই করবে সেই করবে, অথচ কাজের বেলায় শূন্য! কোনভাবেই মানতে পারছে না তাহিয়া। কখনো রাগে ফোঁসফোঁস করছে, কখনো আবার কেঁদে ভাসাচ্ছে। দ্বিতীয়বার সেই ক্লাসে যাবে না, স্যারের সাথে কথাও বলবে না। কলেজ গেলেও মোটেও ক্লাসে যাবে না। আবেগপ্রবণ মানুষ বলেই হয়তো ছোট্টো ঘটনাকে টেনে এত লম্বা করছে!

এক পক্ষ যখন অভিমানের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, অন্য পক্ষ তখন নির্বিকার। ঘূর্ণাক্ষরেও তার জানা নেই অর্ধাঙ্গিনীর অবস্থা। সেদিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পরপর জানতে পারল তার দাদী রেবুন্নেছার শরীর ভালো যাচ্ছে না। বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকদিন যাবত অসুস্থ। আকস্মিক অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে বিছানায় পড়েছেন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। দাদীর এহেন অবস্থার কথা শুনে বাবা মাকে নিয়ে অভীক ছুটেছিল গ্রামের পথে। আত্মীয় স্বজনে ভরা ছিল বাড়ি, অনেকদিন পর বাড়ি যাওয়ায় আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। দুপুরের ঘটনা মাথা থেকেই সরে গিয়েছে। ঘুমানোর সময় তাহিয়ার খোঁজ নেয়ার জন্য ফোন হাতে নিয়ে টের পেল নেটওয়ার্কের ঘাটতি। ফোন করা হলো না আর। মাঝের দু’দিন ছিল সরকারি ছুটি। ছুটির সময়টা বাড়িতে কাটিয়ে এসেছে।

বাসায় ফিরল কলেজ খোলার দিন সকালে। পথে নেটওয়ার্ক পেয়েই তাহিয়ার খোঁজ নেয়ার জন্য কল দিল। ফোন বন্ধ। অভীক ধরে নিল, চার্জে নেই তাই বন্ধ বলছে। মাহমুদাকে কল দিয়ে খোঁজ নিল সবার।

কলেজে যাওয়ার পর শুনল ফার্স্ট ইয়ারের ফরম ফিল আপ চলছে। ঘোষণা দেখার পরপরই তাহিয়ার কথা মাথায় এলো অভীকের। তাহিয়ার ফেইল করা বিষয় গুলো পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম ফিল আপ করাতে হবে। তারজন্য রেজিষ্ট্রেশন কার্ড আর পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে। যা অভীকের কাছে নেই। তখন ডেস্কে বসে কল করল তাহিয়াকে। এবার কল ঢুকল ঠিকই, তবে রিসিভ হলো না। সকালে মাহমুদার কাছে যখন ফোন করেছে তখন তাহিয়া ঘুমাচ্ছে, আজ কলেজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ওর। মাকে না কি স্পষ্ট জানিয়েছে বেশ বেলা অবধি ঘুমাবে। এখনো উঠেনি? না পেয়ে ম্যাসেজ করে দিল অভীক।

ফোনটা বিছানায় পড়ে আছে। তার পাশে বসে অগ্নিদৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে তাহিয়া। যেন ফোন নয়, স্বয়ং অভীক তার পাশে বসা। রাগটা অভীক ভেবে ফোনের উপর ঝাড়ছে।
‘ আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে এখন কল করতে আসছে, তাও তিনদিন পরে! ধরব না কল। মরে গেলেও না। কত বড়ো নিষ্ঠুর! আমাকে ধমক দেয়! একটু ও দয়ামায়া নেই। আছে শুধু দায়িত্ব। দায়িত্ব দিয়ে কী হবে, যদি ভাব ভালোবাসা না থাকে! লাগবে না এমন দায়িত্ব, একদম না। থাকুক নিজের গম্ভীরতা নিয়ে, আমার কথা ভাবতে হবে না। বদ লোক একটা!’

ফোনটা খাটের অন্যদিকে ছুঁড়ে ফেলল। কল বেজে কেটে গেল। আবার এলো, কেটে গেল। তাহিয়ার রাগ বর্ষন তখনো চলছে। অভীকের কল যেন রাগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা সময় কল দেয়া বন্ধ হয়ে গেলো। বকাবকি ছেড়ে শান্ত হলো তাহিয়া। ফোন বন্ধ করার জন্য হাতে নিল। বদলোকটার কল আসার ও দরকার নেই। ফোন হাতে নিতেই ম্যাসেজ নোটিফিকেশন চোখে পড়ল। ভ্রু কুঁচকে ওপেন করতেই রাগটা বাড়ল,
‘ফার্স্ট ইয়ারের ফরম ফিল আপ চলছে। আমি সব ফর্মালিটি পূরণ করে নিব। তুমি শুধু কাল কলেজে আসার সময় রেজিস্ট্রেশন কার্ড আর ছবি নিয়ে এসো।’

লোকটা এর জন্য কল দিচ্ছিল! ও ভেবেছিল রাগ ভাঙাতে কল দিয়েছে। অথচ লোকটা স্বাভাবিক, যেন জানেই না তার ধমকে বিপরীত পক্ষ বেঁকে বসেছে। সত্যি জানে না, তার রাগের কথা! না কি জেনেও প্রাধান্য দিচ্ছে না! কোনটা?

রাগ মনে পুষে রাখা মানুষ শ্রেণির ভিন্নতা আছে। কেউ নিরবে অভিমান করে যায়, বিপরীত পক্ষকে জানতেও দেয় না। মনে রাগ পুষে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চলে। বিপরীত পক্ষ জানল কী জানল না এতে তাদের কিছু যায় আসে না। আবার কিছু মানুষ আছে, যাদের মূখ্য কথা হলো, তারা যে রাগ করেছে এটা বিপরীত পক্ষকে জানতে হবে, অনুতপ্ত হতে হবে এবং তার রাগ ভাঙাতে হবে। রাগ ভাঙাতে এলে তারা রাগ প্রকাশের মাধ্যমে রাগের অধ্যায় বন্ধ করবে। তাহিয়া দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে পড়ে। ওর কথা হচ্ছে, ওর রাগের কথা অভীককে জানতে হবে, অনুতপ্ত হতে হবে। মুখে নেতিবাচক ভাব প্রকাশ করলেও মনে মনে ঠিকই চায় অভীক তার রাগ ভাঙাক। সে অনুভূতির অনেক গভীরে চলে গেছে, যেখান থেকে এই মুহুর্তে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।

প্রথমে পণ করেছে অন্তত সপ্তাহ খানেক কলেজে যাবে না, অভীকের ক্লাসে তো যাবেই না। অভীকের মুখোমুখি ও হবে না। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত বাতিল করল ও, কলেজ যাবে। অভীকের মুখোমুখি হবে, ওকে বুঝাতে হবে তাহিয়া রেগে আছে। গিয়ে কিছু রাগ ও ঝেড়ে আসবে। এতে যদি কিছুটা প্রশান্তি আসে, তবে মন্দ কী? রেজিষ্ট্রেশন কার্ডকেই মাধ্যম হিসেবে বেছে নিল তাহিয়া।

রাগের বশবর্তী হয়ে পরদিন গেল কলেজে। প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পর ডিপার্টমেন্টে গেল। অফিস রুমের সামনে গিয়ে ভেতরে উঁকি দিল। ডিপার্টমেন্ট হেড আর অভীক বসে কথা বলছে। আর কেউ নেই। জাহাঙ্গীর স্যারের সামনে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না বলে ফিরে যেতে উদ্যত হলো তাহিয়া। তা বাড়াতেই জাহাঙ্গীর সাহেবের চোখ পড়ে গেল। তাহিয়াকে দেখে তিনি হাসলেন। অভীকের উদ্দেশ্যে বললেন,
‘তোমার মিসেস এসেছে। দেখে আসো।’

অভীক দরজার দিকে তাকাল, তাহিয়াকে যেতে দেখা যাচ্ছে। অভীক স্মিত হেসে বলল,
‘ রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দিতে আসছে। বিশেষ কিছু নয়।’

থেমে গলা উঁচিয়ে বলল,
‘তাহিয়া, ভেতরে এসো। ‘

শুনেও ভেতরে গেল না তাহিয়া। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ওকে আসতে না দেখে জাহাঙ্গীর সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। হেসে বললেন,
‘আমার সামনে আসতে দ্বিধা লাগছে বোধহয়। তোমরা কথা বলো। আমি আমার রুমে যাই।’

জাহাঙ্গীর সাহেব বেরিয়ে গেলেন। তাকে বেরিয়ে যেতে দেখে হাফ ছাড়ল তাহিয়া। লম্বা শ্বাস ছেড়ে রুমে প্রবেশ করল। অভীকের দিকে এক নজর পড়ল। তড়িৎ চোখ সরাল। এটা চেহারা নয়, ইন্দ্রজাল। তাকালে বধ নিশ্চিত। রাগ টিকবে না, বেশিক্ষণ তাকানো যাবে না। এই মুহুর্তে ওর মাঝে রাগকে বিচরণ করতে হবে, ভীষণ রাগ। রাগের মাত্রা বাড়াতে সেদিন ক্লাসের ঘটনা মনে করে নিল। দারুন কাজ হলো, রাগ বেড়ে চূড়ায় পৌঁছল। তাহিয়ার হাতে ডকুমেন্ট খাম। যার ভেতরে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড আর ছবি আছে। ডেস্কে কাছে গিয়ে শব্দ করে রাখল খামটা। দৃষ্টি অন্যদিকে।

তাহিয়ার এহেন আচরণে অভীক চমকাল বেশ। তাহিয়ার চোখে মুখে রাগের উল্কি আঁকা দেখে বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল। হলো কি এই মেয়ের? এত রেগে আছে কেন! ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ ক্লাসে আসোনি কেন?’

‘কেন আসব, আপনার ধমক খেতে?’ কথাটা বলতে ইচ্ছে করল তাহিয়ার। কিন্তু করল না। সে বদলোকটার সাথে কোন কথা বলবে না। সিদ্ধান্তে অটল তাহিয়া। নিরবতায় গা মাড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ফোঁসফোঁস করছে। উত্তর না পেয়ে অভীক আবার বলল,
‘ ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে কোথায় গিয়েছিলে?’

তাহিয়া উত্তর দিল না। অভীক প্রশ্ন পাল্টাল,
‘আমার ফোন তুলোনি কেন?’

তাহিয়া এবার ও উত্তর দিল না। অভীক আবার বলল,
‘ চেহারায় এত রাগ কেন? হয়েছে টা কী?’

ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে বলছে কী হয়েছে! সিদ্ধান্তে ফাটল ধরল তাহিয়ার। এ পর্যায়ে চুপ থাকতে না পেরে ঝাঁজালো স্বরে বলল,
‘আপনি ভীষণ খারাপ। আমি খারাপ মানুষের সাথে কথা বলি না।’

বিস্ময়ের সাথে অভীক প্রশ্ন করল,
‘রাগটা আমার উপর? তা খারাপ হওয়ার মতো কী করেছি আমি?’

অভীকের না জানা ভান, তাহিয়ার রাগ বাড়াল। সে তেজী স্বরে বলল,
‘জানতে হবে না আপনার। ‘

খামটা টেবিলের উপরই ছিল। রাগের পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে অভীকের সাহায্য নেয়াও নীতিবিরুদ্ধ হয়ে গেল। যার কাছে ওর অনুভূতির মূল্য নেই, তার কোন সাহায্য লাগবে না। রাগের বশবর্তী হয়ে টেবিল থেকে খামটা টেনে বেরিয়ে গেল। অভীক হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব সে। তাহিয়ার এই আকাশচুম্বী রাগের কারণটা ধরতে পারছে না। গত দুদিন তো বাড়িতে ছিল, মেয়েটার সাথে কথা হয়নি। কোথাও কথা না বলায় ক্ষেপে যায় নি তো! কিন্তু ওদের তো নিয়মিত কথা হয় না। প্রয়োজনে মিনিট খানেক কথা হয়, তাও কালেভদ্রে। সে ক্ষেত্রে রাগার কোন সুযোগ নেই। তবে রাগলটা কেন?

মাথা ভরতি চিন্তা নিয়ে অভীক বসে গেল তাহিয়ার রাগের কারণ বিশ্লেষণ করতে। বিগত দিনের ঘটনা আওড়াতেই ক্লাস থেকে বের করে দেয়ার কথা মনে পড়ল। অনুধাবন করল,শাসনের পর্ব বোধহয় একটু বেশিই ভারি হয়ে গেছে। কিন্তু অভীক তার অবস্থান থেকে সঠিক। তাহিয়ার আচরণ ক্ষমার অযোগ্য বলেই শাস্তি পেয়েছে। এটা রেগে যাওয়ার মতো ব্যাপার বলে মনে হলো না। পরক্ষনেই মনে হলো, যার প্রসঙ্গ আসছে, তার রাগের বাস নাকের ডগায়। পান থেকে চুন খসলেই রাগ এসে হানা দেয়। এখন এই রাগ কবে পড়বে তা হচ্ছে মূখ্য কথা।

আকস্মিক খামের কথা মনে এলো। মেয়েটা খামটা নিয়ে গেছে। এবার একা একা সব করবে না কি! ব্যাংক ড্রাফ করতে হলে ব্যাংকে যেতে হবে, মিনিট দশেকের দূরত্ব। সেখানে গিয়ে আবার লাইনে দাঁড়াতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের লম্বা লাইন হয়, কয়েকহাজার ছাত্রছাত্রী একই দিনে টাকা জমা দেয়। ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কয়েক ঘন্টা, তাও সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেক কষ্টের ব্যাপার। মেয়েটা পারবে না। অন্তত সে থাকতে তাহিয়াকে এত ভীড়ে ঠেলাঠেলি করতে দিবে না। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াল অভীক। তাহিয়াকে কল দিতে দিতে বের হয়ে এলো। করিডোরে হাটতে গিয়ে দেখল, মেয়েদের কমন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফোনটা ওর হাতেই। অভীককে দেখে অন্যদিকে ফিরে গেল। ফোন বাজছে হাতে। অভীকের চোখের সামনেই ওর কল কেটে দিল।

অভীক ম্যাসেজ করল,
‘ভুলেও ব্যাংকের দিকে যাবে না। ওখানে অনেক ভীড়। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তাও সুযোগ পাবে না। আমার এক বন্ধু আছে, ওকে দিয়ে করে নিব। তোমাকে যেতে হবে না। ব্যাংক ড্রাফ হয়ে গেলে রিসিট নিয়ে বাকি ফর্মালিটি আমি পূরণ করে নিব। তুমি খামটা রেখে যাও।’

তাহিয়ার ভাবনা ছিল, মীরাকে দিয়ে দিবে ওর টাকা। নিজে যাবে না। কিন্তু অভীকের ম্যাসেজ দেখে জেদ চাপল। সে যাবেই, লোকটার কথা শুনবে না। জুতা মেরে গরুদানের দরকার নেই তার। সে লিখল,
‘আমি তো যাবোই।’

তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল অভীক। সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে কমন রুমে ঢুকে গেল তাহিয়া। অভীকের ম্যাসেজ এলো,
‘ আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, দেখি কিভাবে যাও তুমি। ‘
‘আপনার চোখের সামনে দিয়ে যাব, আপনি টের ও পাবেন না।’ তাহিয়া চ্যালেঞ্জ করল যেন।

অভীক ভ্রু কুঁচকাল। অসম্ভব। তাহিয়া ওর সামনে দিয়ে যাবে, ও টের পাবে না! রাগে মেয়েটা এলোমেলো কথা বলছে। সে লিখল,
‘যাও দেখি। যদি আমি ধর‍তে পারি তবে খাম দিয়ে যাবে। পুরো মাস আমাকে বিরক্ত করা ছাড়া আমার ক্লাস করবে। মনে থাকে যেন।’

তাহিয়ার উত্তর এলো না। অভীক ফোন দেখার ভান করে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইল। ওকে দেখে ছাত্রছাত্রীরা বারান্দা ছেড়েছে ইতঃপূর্বেই। বারান্দা ফাঁকা, কাক পক্ষী গেলেও টের পাওয়া যাবে।

অভীকের শেষ ম্যাসেজ দেখে তাহিয়া বাঁকা হাসল। ধরা পড়ব, তাও আমি? নো চান্স। এসব কাজে আমি পারদর্শী। কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে চেইন খুলল। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো কালো বোরকা। ভাগ্যিস আজ আশঙ্কা করে নিয়ে এসেছে, নয়তো কী হতো! তাহিয়া চশমা, স্কার্ফ খুলে ব্যাগে ভরে নিল। তারপর ব্যাগ কাধে নিল। ব্যাগের উপর কালো ঢিলেঢালা বোরকা জড়াল। বোরকাটা ওর নানীর। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে একবার নানুবাড়ি গিয়ে নিয়ে এসেছিল। তার সেটা স্কুল পালানোতে কাজে লাগিয়েছে। বোরকার সাথে নিকাব ছিল, আর একটা ওড়না ছিল। প্রথমে নিকাব পরল, তার উপর ওড়না পরল। আপাদমস্তক কালোয় ঢাকা। শুধুমাত্র চোখের মণি দেখা যাচ্ছে। একবারেই চেনা যাচ্ছে না। পিঠের ব্যাগটার জন্য উচিয়ে থাকায় দেখতে কুঁজো মহিলাদের মতো লাগছে অনেকটা। পুরো রূপ দিতে একটু কুঁজো হয়ে গেল। এবার দেখতে বয়োবৃদ্ধার মতো লাগছে। নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিল তাহিয়া। মীরাকে বলল,
‘চেনা যাচ্ছে?’

মীরা মুখ টিপে হেসে বলল, ‘না। একবারে দাদিমা লাগছে তোকে। স্যার কেন, স্যারের চৌদ্দপুরুষ এলে ও চিনতে পারবে না।’

তাহিয়া হাফ ছেড়ে বলল, ‘তুই এখন আসবি না। নিচে গিয়ে কল দিব তখন নামবি। তোকে দেখলে স্যার সন্দেহ করবে।’

মীরা সায় জানাল। তাহিয়া কুঁজো হয়ে হাটা ধরল। অভীক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে মহিলাটাকে দেখল। বিশেষ প্রাধান্য না দিয়ে আবার ফোনে নজর দিল। ভেবে নিল হয়তো কোন ছাত্রছাত্রীর নানী দাদী হবে। মহিলা এদিক ওদিক হেলে হাটছেন, ঠিক মতো হাটতে ও পারছেন না। অথচ নাতি, নাতনীকে দেখতে চলে এসেছেন চারতলা বেয়ে। নিশ্চয়ই খুব আদরের। অভীক কত কী ভাবল।

তাহিয়া অভীকের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। অভীক দেখল, কিন্ত কস্মিনকালেও ভাবতে পারল না, এটা ছদ্মবেশী তাহিয়া। সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে মীরাকে ডেকে নিল। মীরা আসতেই চারতলার কমন রুমে গিয়ে আগের বেশে ফিরে এলো। তারপর নিচে নেমে, তাদের ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে অভীককে ম্যাসেজ করল,
‘ আপনার চোখের সামনে দিয়ে এসেছি, পেরেছেন ধরতে?’

ম্যাসেজটা দেখে ভ্রু কুঁচকাল অভীক। তাহিয়া চলে গেছে? কখন? সে তো এখানেই ছিল। আশপাশ তাকাল। নীচে চোখ পড়তেই দেখল, তাহিয়া মীরা দাঁড়িয়ে আছে। ভালো করে পরখ করতেই চোখে পড়ল, তাহিয়ার হাতে থাকা কালো কাপড় জাতীয় কিছু। অভীককে দেখাতেই বোধহয় কালো ওড়নাটা গায়ে জড়াল। ঠিক তেমনভাবে, একটু আগে যেভাবে জড়িয়ে ছিল। এটা তো ওই বৃদ্ধার গায়ে ছিল, তাহিয়ার কাছে কিভাবে এলো! এক সেকেন্ড, একটু আগে তো বৃদ্ধাই গিয়েছে শুধু। তারমানে ওটা ছদ্মবেশী তাহিয়া ছিল! ঘটনার আঁচ করে বিস্ফোরিত চোখে তাকাল অভীক। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। আজ ওর অবাক হওয়ার দিন। অবাক কাটিয়ে উঠতে পারল না কিছুক্ষণ। কত কী ভাবল সে। বিস্মিত স্বরে বিড়বিড়াল,
‘কী সাংঘাতিক মেয়ে!’

.

মীরার ছল-চাতুরী বুদ্ধিতে ঘন্টার কাজ মিনিট পাঁচেকে হয়ে গেল। ফাঁকিঝুকি কাজগুলোতে মীরা পারদর্শী। ক্যাশ কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো লম্বা লাইনের একবারে সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের। নাম, মৃধা । মীরার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়। মৃধাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে আড্ডা জুড়ে দিল মীরা। এমন ভাব করল, যেন আত্মীয়তার খাতিরে মৃধার খোঁজ নিতে এসেছে, টাকা জমা দিতে নয়। এক সাথে অনেকজন দাঁড়িয়ে ছিল। ভীড়ে কার হাত ক্যাশ অবধি পৌঁছাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। কথা বলতে বলতে মীরা দুজনের টাকা দিয়ে দিল। কথার মাঝে তাদের দু’জনের নাম উচ্চারণ করল। মৃধা ভাবল, মীরা এমনি কথা বলছে। খাতায় নাম লেখিয়ে কথার ইতি টেনে বেরিয়ে গেল মীরা। অন্যদিক থেকে রিসিট নিয়ে ডিপার্টমেন্টে জমা দিল। সেমিনারে অভীক ছিল, একটাবার তাকাল না অবধি। অভীক ভ্রু কুঁচকে কয়েকবার তাকাল। এত রাগ কেন এই মেয়ের!

.

সন্ধ্যার পর রিনাকে দিয়ে ভূট্টা ভেজে পপকর্ণ করল তাহিয়া। আজ সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি মুভি দেখার সিদ্ধান্ত ওর। পপকর্ণ ভরতি বাটি হাতে বসার ঘরে গেল, মুভি ছেড়ে বসল সোফায়। মুভি দেখার মাঝে মীরার কল দিল। কথা বলতে বলতে রুমে গেল। মিনিট পাঁচেক বাদে কথা শেষ করে বসার ঘরে আসতেই চমকাল। অভীক ডাবল সোফাটায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে। টিভিতে খেলা চলছে, দৃষ্টি টিভির দিকে নিবদ্ধ। লোকটা কেন এসেছে! তার রাগ ভাঙাতে? না কি অন্য কোন বাহানা? দেখা যাক কী করে। সে আজ পাত্তা দিবে না।

নির্বিকার চিত্তে অভীকের পাশের সোফায় গিয়ে বসল তাহিয়া। চোখে মুখে রাগের ঝলকানি। অভীকের হাতে রিমোট ধরা। এক টানে হাত থেকে রিমোটটা কেড়ে নিয়ে চ্যানেল পালটাতে শুরু করল। অভীক অবাক হয়ে বলল,
‘ম্যাচ দেখছিলাম তো! পাল্টালে কেন?’

বউকে রাগিয়ে ম্যাচ দেখা হচ্ছে! তাহিয়া অগ্নীদৃষ্টিতে তাকাল অভীকের দিকে। চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে। চোখ দিয়েই শাসাল যেন। অভীক অবিশ্বাস্য চোখে চাইল। কদিন আগে ও তার সামনে অস্বস্তিতে কাঁপা-কাঁপি করছিল এই মেয়ে। আজ তাকে চোখ রাঙাচ্ছে! কীভাবে তাকিয়ে আছে, যেন চোখ দিয়েই বাষ্প করে ফেলবে। অভীকের মনে পড়ে না শেষ কবে তাকে কেউ এভাবে চোখ রাঙিয়েছে। মা বাবার বাধ্য সন্তান ছিল বিধায় শাসন পড়েনি বলতে গেলে। অবনী বিয়ের আগে রাগ দেখাত, তবে এত তীক্ষ্ম চোখে তাকাতো না। অবনীর রাগের স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ থাকতো না, এই রাগ, এই হাসি। ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা তার দিকে তাকাতে ভয় পায়, সেখানে এ মেয়ে চোখ রাঙাচ্ছে! আশ্চর্য! রাগের সাথে ভয় অস্বস্তি কোথায় চলে গেল?

তাহিয়ার আগুনলাল চোখের দিকে তাকিয়ে অভীকের মনে হলো রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতার দুটো লাইন,
‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’

এই মেয়ের সাথে সংসারটা জমবে কিভাবে! রাগ ভাঙাতে ভাঙাতেই জীবন পেরিয়ে যাবে বোধহয়। রাগেই বধ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
অভীক কথা ঘুরাল,
‘ যতটা মাথা আজ খাটিয়েছো ততটা যদি পড়ালেখায় খাটাতে ফার্স্ট ক্লাস পেতে। এত কুটিল বুদ্ধি আসে কোথা থেকে?’

তাহিয়া উত্তর না দিয়ে একের পর এক চ্যানেল পাল্টাতে লাগল। তাহিয়ার নিরবতা দেখে অভীক বলল,
‘চুপ করে আছো কেন? উত্তর দাও।’

‘আমি আপনার সাথে কথা বলিনা।’ তেজী স্বরে বলল তাহিয়া। অভীক ভ্রু কুঁচকাল,
‘কেন বলো না?’

‘আপনি ধমকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন আমায়।’ টিভি থেকে চোখ সরিয়ে রাগত দৃষ্টি ফেলে বলল তাহিয়া। অভীকের হাসি পেল। এখন হাসা ঠিক হবে না, হিতে বিপরীত হতে পারে। হাসিটা চেপে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ তুমি দোষ করলে আমি শাসন ও করতে পারব না?’

প্রশ্নের উত্তরে ধারাল স্বরে প্রশ্ন করল তাহিয়া,
‘তাই বলে ধমকে ক্লাস থেকে বের করে দিবেন?’

‘ ক্লাসে বিশৃঙ্খলা পছন্দ করিনা আমি। এর আগেও কত ছাত্রছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছি, তাও তোমার অজানা নয়। তারপর ও তুমি বিশৃঙ্খলা করছিলে কেন?’

‘আমি ভাবিনি আপনি আমাকে ওভাবে ধমক দিয়ে বের করে দিবেন। আগে এক কথা ছিল কিন্তু এখন…’ পুরো কথা শেষ করল না তাহিয়া।

রগড়ের স্বরে বলল অভীক
‘আগে কাল বৈশাখ ছিল এখন তোমার মনে বসন্ত নেমেছে। তাই আমি তোমাকে ধমকাতে পারব না তাই তো?’
থামল অভীক। স্মিত হেসে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
‘আর তোমার পক্ষ থেকে আসা বসন্ত গায়ে মাখিয়ে আমি অধর টধর এদিক ওদিক নিব, এমন কিছু ভেবেছিলে?’

লজ্জা পেলেও প্রকাশ করল না তাহিয়া। দৃঢ় স্বরে বলল,
‘ আপনি মানুষটা ভীষণ খারাপ। ‘

অভীক এবার শব্দযোগে হাসল। হেসে বলল,
‘তুমি এই খারাপ মানুষটার উপর গভীর প্রেমে পড়েছো, আমি কিন্তু টের পাচ্ছি। তুমি কি টের পাচ্ছো?’

লোকটা তাহিয়ার রাগ ভাঙাতে এসেছে না কি জব্দ করতে বুঝতে পারল না তাহিয়া। রাগ দেখানোর আগেই কথা দিয়ে প্যাচিয়ে ধরছে। এভাবে চলতে থাকলে রাগটা ধরে রাখা যাবে না। একমাত্র উপায় হলো, প্রস্থান। তাহিয়া উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীরমুখে বলল,
‘থাকুন আপনি আপনার ‘টের’ নিয়ে। ‘

হনহন করে বেরিয়ে গেল তাহিয়া। ও বের হলো, তুহিন এসে ঢুকল। সোফায় বসতে বসতে বলল,
‘আবহাওয়া তো সুবিধার না ভাইয়া। ঝগড়া টগড়া হয়েছে না কি?’

অভীক বিড়বিড়াল, ‘এক ধমকে আমাকে যে নাস্তানাবুদ করছে, ঝগড়া করলে তো বোধহয় অন্য গ্রহে পার্সেল করে দিবে।’
তুহিনের উদ্দেশ্যে হেসে বলল,
‘ তেমন কিছু না।’

তাহিয়াকে রেগে বেরিয়ে যেতে দেখেছে তুহিন। রাগারাগি হয়েছে নিশ্চয়ই। তবে অভীকের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে রাগটা এক পক্ষীক। সে উৎসাহী গলায় বলল,
‘ আপুর চকলেট ভীষণ পছন্দ। চকলেট পেলে আপুর রাগ ঝরে যাবে। আপনি চকলেট নিয়ে গিয়ে আপুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারেন। কাজ হবে। ‘

থেমে বলল,
‘আপনি তো চকলেট আনেন নি। আমি কি নিচে গিয়ে নিয়ে আসব? রাগ না ভাঙলে আপু সারারাত মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে, ঘুমাবে ও না। সকালে মাইগ্রেনের ব্যাথায় ছটফট করবে। আপুকে অসুস্থ দেখতে ভালো লাগে না আমার।’ তুহিনের স্বরে স্পষ্ট উদ্ধিগ্নতা, যত্নাভাব।

অভীক উঠে দাঁড়াল। পরিধেয় সাদা টি-শার্টটা টেনে ঠিক করে হেসে বলল,
‘লাগবে না। রাগ এমনিই ঝরে যাবে। তুমি বসো, আমি দেখি গিয়ে। ‘

তুহিন সায় জানাল। অভীক তাহিয়ার রুমের দিকে এগিয়ে গেল। দরজাটা ভেজানো ছিল। নক করল ও। ভেতর থেকে আওয়াজ এলো না। হালকা ঠেলে প্রবেশ করল ভেতরে। তাহিয়া ফুলো মুখে বিছানায় বসে আছে। অভীক গিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে পাশে বসল। অভীকের অস্তিত্ব টের পেয়ে তাহিয়া রেগে বলল,
‘কেন এসেছেন? ‘

‘বসন্ত এসে গেছে, আসতে তো হতোই।’ অভীক মনে মনে বলল কথাটা। মুখে বলল,

‘স্ত্রীর রাগ ভাঙানো সুন্নত। একটা সুন্নত পালানের সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করলাম না।’ হেসে বলল অভীক। তাহিয়ার রাগটাও কমে নি এক বিন্দু। অন্যদিকে ঘুরে বসে বলল,

‘লাগবে না আপনার রাগ ভাঙানো। আপনি থাকুক আপনার গম্ভীরতা আর দায়িত্ব নিয়ে। ‘

অভীকের হাসি থামল। স্বরটা কোমল হয়ে এলো,
‘লেকচারার পাত্রকে বিয়ে করলে এক আধটু ধমক তো খেতেই হবে। এর জন্য এত রাগ করলে হবে?’

তাহিয়া উত্তর দিল না। অভীক ফিরতি বলল,

‘দেখো দোষটা তোমার ছিল। শিক্ষক হিসেবে অন্যায়ে সরি বলাটা শোভা পায় না। আমি সরি বলব ও না। তবে স্বামী হিসেবে স্ত্রীর রাগ ভাঙানোর জন্য ঘুরতে নিয়ে যেতে পারি। এই ভর সন্ধ্যায় ফুচকা খেতে নিয়ে গেলে রাগটা কি ঝরবে?’

‘আমি কোথাও যাব না।’ তাহিয়া অনড়।

অভীক তাহিয়ার মাঝে এক হাত দূরত্ব। অভীক হাত বাড়িয়ে তাহিয়ার কনুই ধরে টেনে নিজের কাছে আনল। তাহিয়ার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠল, শ্বাস আটকে এলো। আলতো ভাবে আগলে নিয়ে অভীক বলল,
‘বসন্ত এসেছে, হিয়া। হোক ঋতুতে কিংবা মনে, বসন্ত এলে ঘুরতে যেতে হয়। তৈরি হয়ে নাও, ঘুরতে যাব। ‘

কী ডাকল লোকটা? হিয়া? ওর নাম তাহিয়া, সবাই এ নামেই ডাকে। কেউ হিয়া বলে ডাকে নি। জীবনে প্রথম শোনা নামটা কানে ঝংকার তুলে বাজল, মনে তীরের মতো বিধল। তিনদিনের রাগ তিন সেকেন্ড ঝরে গেল। নামটায় কী ছিল? এত মধুর লাগল কেন? তিন দিনের হাজারো অভিযোগ, অভিমান ফিকে পড়ল দুই অক্ষরের নামটার কাছে। কী ছিল নামটায়? এত টানল কেন!’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here