# প্রেমে পড়া বারণ
# পার্ট- ১১
# Taslima Munni
এইজন্য কাঁদছিস?!! বোকা মেয়ে।
রেহান বুকে জড়িয়ে ধরলো।
– তুই কেন ভাবছিস তোকে দূরে পাঠিয়ে দিতে চাই??
– তাহলে এটা করলা কেন?
– হুম। ঠিক আছে। তুই যদি যেতে না চাস তবে আমি জোর করবো না। তবে..
– তবে কি?
– আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তুই ওখান থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করবি।পিএইচডি তো এমনি বললাম। সেটা তো বললেই হয়ে যাবে না।অনেক সময় লাগবে কমপক্ষে ৫-৬ বছর। আর এর আগে কত প্রসেস করতে হবে!! তোর ইচ্ছে হলে করতে পারবি পরে এখানে থেকেই।
কিন্তু এটাতে তো মাত্র এক বছরেরই ব্যাপার।
– এক বছর তোমার কাছে কম মনে হচ্ছে?
আমি কিভাবে থাকবো?
– থাক যেতে হবে না। এখন চুপটি করে ঘুমা।
আর শুন, তুই ছয়টা মাস যদি থাকতে পারতিস,তাহলে আমিও একটা লম্বা ছুটি পেতাম বাইরের যাবার জন্য।
– ছয় মাস!! আর বাকি ছয় মাস??!!
– আরে বুদ্ধু,আমিতো লম্বা ছুটি পাবো।তখন তোর কাছে যাবো আর তোকে নিয়ে তারপর ফিরবো।
– কিন্তু এতো দিন থাকতে পারবো না তো।
রেহানকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম।
যাবো ভাবতেই ভেতরটা মুচড়ে উঠে।
পরদিন বিকালবেলা সবার সামনে রেহান কথাটা তুললো।
সবার আগে আপত্তি করলো আম্মু।
– বাইরে গিয়েই করতে হবে কেন? এখানে করলে সমস্যা কি?
ফুপি বললো – ছয় মাস হিয়া একা একা থাকবে কি করে?
আমার মনে হয় না যাওয়ার খুব প্রয়োজন।
রেহান আব্বুকে জিজ্ঞেস করলো। আব্বু বললেন
– এটা তোদেরকেই ঠিক করতে হবে। আমার আপত্তিও নেই আবার হিয়া বাইরে যাবে এখন! এটাতে খুব একটা সায় ও নেই।
আমি মনে মনে খুশি।সবাই আপত্তি করলে আমার যাওয়া টা আটকে যাবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আব্বু কিছু সময় চুপচাপ থেকে আম্মু আর ফুপিকে বললো
– রেহান যদি চায়, তবে আমাদের মনে হয় আপত্তি করা ঠিক হবে না।
শেষ পর্যন্ত আমার যাবার সিদ্ধান্ত হলো।
রেহান খুব আগ্রহের সাথে যাবার সব আয়োজন করলো।
সবাই আমার প্রয়োজনীয় সব কিছু আস্তে আস্তে গুছানো শুরু করলো।।
কিন্তু আমার হাত পা ভেঙে আসছে। একে তো সবাইকে ছেড়ে যাবো,তার উপর অচেনা একটা দেশে একা!
আমার একটুও ভালো লাগছে না।
যাবার দিন ঘনিয়ে এসেছে। আগামী পরশু ফ্লাইট।
আম্মু,ফুপু,দিয়া, মাহি আপু সবাই মিলে প্যাকিং করলো। মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া এসেছে,আমি চলে যাচ্ছি বলে।
আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
খাবার গলা দিয়ে নামছে না। সবাই একসাথে ডিনারে বসেছি।কিন্তু আমি শুধু নাড়াচাড়া করেই যাচ্ছি।রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর ও একই অবস্থা।
আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে রুমে চলে এলাম।
কিছুক্ষণ পর রেহান রুমে আসলো। এসে দেখে আমি বেডে গুটিসুটি মেরে আছি।ও কিছু না বলে আমার পাশে বসলো।
আমার পিঠে হাত রেখে বললো
– এভাবে যদি মন খারাপ করিস তাহলে তো…
– তোমার বুঝি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
রেহান কপালে চুমু খেয়ে তার বুকে জড়িয়ে রাখে।
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একটু ঘুমালে মনে হয় আরও কম সময় পাবো রেহানের সাথে।
কারো চোখেই ঘুম নেই।
ঘুমহীন একটা রাত কাটলো।
পরের দিন কিভাবে কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি।
সময় মনে হচ্ছে দৌড়ে চলে গেলো।
আজ আমার ফ্লাইট। এয়ারপোর্টের জন্য বের হবো।
রেহান শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে। সারামুখে চুমু খেতে খেতে বললো – তুই একদম মন খারাপ করবি না। দেখবি দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে।
আর রোজ কতবার কথা বলি দেখিস।
আম্মু,ফুপি,দিয়া,আরিফ, মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
আম্মু,ফুপি তারা এমন কান্নাকাটি শুরু করলো যে আমিও কেঁদে ফেললাম।
আব্বুকে দেখতে পেলাম না।
খুঁজে দেখলাম আব্বু গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে যেতেই বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন
– ভালো থাকিসরে মা।আর সবসময় ফোন করবি।
মাথায় একটা চুমু খেলেন।
সবাইকে ছেড়ে আমি উড়াল দিলাম সুদূর প্রবাসে।
জানি যখন আমার প্লেন এয়ারপোর্ট ছেড়েছে তখনও সবাই এখানে দাঁড়িয়েই ছিলো।
অজানা শূন্যতায় ভাসছি আমি।
ঠিক অজানা নয়।শূন্যতা টা কিসের তা আমি জানি।
ল্যান্ডিং এর পরে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করে বের হতে দুই তিন ঘন্টা দেরি হয়ে গেছে।
বের হবার পরই দুজন মানুষ এগিয়ে এলো আমার দিকে।
– হিয়া?
বাঙালি দেখেই বুঝতে পেরেছি।
– জি।কিন্তু আপনারা?
– ওয়েট।
আমার হাতে একটা ট্যাব ধরিয়ে দিলো।
– পৌঁছে গেছিস!
– হা।মাত্র বের হলাম।
রেহান ভিডিও কল দিয়েছে।
– আচ্ছা। ওরা আমার বন্ধু আদিল আর ওর ওয়াইফ জেরিন।
ওরা তোকে সব হেল্প করবে।
এখন গিয়ে রেস্ট নিয়ে পরে ফোন দিবি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
বাসায় সবাইকে বলে দিও।
– আচ্ছা। বলছি এক্ষুনি।
ফোন রেখে দিলো রেহান।
– আমি জেরিন।
– আদিল।
দুজনেই পরিচয় দিলো।
– খুব ভালো লাগছে আপনাদের পেয়ে। আমার তো ভয় করছিলো একা কিভাবে কি করবো!
– আপনি, আপনি করছো কেন?
আমি ভাই, আপনি আপনি করতে পারবো না। তুমি করেই বলবো।
জেরিন ভাবি বললো।
আমি হেসে বললাম – আমাকে তুমি করেই বলবেন।
– এখানে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে? আগে বাসায় চলো।
আদিল ভাই তাড়া দিলেন।
গাড়িতে উঠলাম।জেরিন ভাবি বললেন
– তোমার পাগল বর তো ফোন করে করে পাগল করে দিয়েছে।
তুমি ল্যান্ড করার আরও এক ঘন্টা আগে এসে বসে আছি।
আমি উনার কথা শুনে হাসছি।
এখানে আমার এডমিশন হয়ে গেছে।
একদম অন্যরকম পরিবেশে।
দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। প্রতিদিনই কয়েকবার করে রেহান ফোন দিচ্ছে আর অন্যরা তো দিচ্ছেই।
জেরিন ভাবি আমাকে অন্য কোথাও যেতে দেননি।বাধ্য হয়ে উনাদের সাথেই থেকে গেলাম।
এতে অবশ্য আমার ভালোই হয়েছে। কারণ একা একা সময় কাটতো না।উনাদের সাথে ভালোই সময় যাচ্ছে।
বেশ কিছু দিন পরে ভাবি কিছু বাঙালি পরিবারকে ইনভাইট করলেন।
সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
এর মধ্যে একটা সুন্দরী মেয়ে আসলো। সবার সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো।বুঝতে পারলাম সবার খুব পরিচিত।
মেয়েটা বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।
ভালো করে খেয়াল করলাম মেয়েটা আমাকে ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করছে। এতে আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করছিলাম।
মেয়েটা আমার কাছে এসে বললো
– তুমি হিয়া?
– জি।
– তোমার কথা অনেক শুনেছি।ভালো লাগলো দেখা হওয়ায়।
– আমার কথা শুনেছেন কার কাছে?
– এখানে এতোদিন আছো আর এখানে নতুন কোনো বাঙালি এলে পরিচিত জনদের মুখেই শোনা যায়।
বলেই মেয়েটা মিষ্টি করে হাসলো।
– আমি আফরিন। সবাই ‘ রিন’ বলেই ডাকে।
নাম টা শুনেই বুকে ভেতর ধক করে উঠলো!
আফরিন খুব ভালো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
হয়তো আমার মুখের দিকে চেয়ে মনের কোনো পরিবর্তন আঁচ করতে চাইছে।
আমি মৃদু হেসে বললাম – খুব সুন্দর নাম আপনার।
– তোমার নামটাও অনেক সুন্দর।
– ধন্যবাদ। চলুন ওখানে বসি।
আফরিনকে নিয়ে সবার সাথে বসে গল্প করলাম।
আজ আমার মন ভালো নেই।
রেহান ফোন দিচ্ছে,কিন্তু আমি ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না।
তিনবারের মাথায় ফোন তুললাম।
– কিরে কি করছিস?
– কিছু না। শুয়ে আছি।
– শরীর খারাপ?
– নাতো। ভালো আছি। তুমি কি করছো?
– এতো সময় ধরে ফোন দিচ্ছি, ধরিসনি কেন? কি হয়েছে বল?
– আরে কিছু হয়নি। বুঝতে পারিনি রিং হচ্ছে যে।
একটা মিথ্যা বললাম রেহানকে।
রেহানের মুড অফ হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম।
হঠাৎ মনে হলো কি করছি আমি!! আফরিন রেহানের অতীত! আফরিনের সাথে দেখা হয়েছে তাতে আমার মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে রেহানের উপর তার প্রভাব ফেলবো কেন?
রেহান তো অকপটে স্বীকার করে নেয় যা সত্যি।
এটা ভাবতেই নিজেরই খুব খারাপ লাগলো।
– কি হয়েছে তোর? আজ ভীষণ অন্যমনস্ক লাগছে!
– কিছু হয়নি গো।একটা কথা বলবো?
– বল।
– আজ আফরিনের সাথে দেখা হয়েছে।
– কোথায়?
– জেরিন ভাবি অনেককে ইনভাইট করেছিলো। আফরিন ও এসেছিলো।
– কথা বলেছিস?
– হুমম। ও নিজেকে থেকে এসেই কথা বললো। আমি তো চিনতাম না।
– হুম। বুঝেছি এইজন্যই মন খারাপ তোর।
আর ইচ্ছে করেই ফোন ধরিসনি।
আমি কিছু না বলে চুপ করে নীরব স্বীকারোক্তি দিলাম।
– তুই কি এখানো বাচ্চা আছিস? সত্যি টা তুই জানিস। তারপরও মন খারাপ কেন?এখন তুই ই আমার জীবনের সত্যি।
– এমনি।আমি তো মন খারাপ করতে চাইনি।হয়ে গেছে।
– বুঝলাম। মন ভালো করার মেডিসিন কিন্তু আছে আমার কাছে।
– তাই বুঝি?
– হুমম। আছেই তো।
এখন দুদিন পরে তুই বাচ্চার মা হবি,আর কই এখন নিজেই বাচ্চামি করিস!!
বিষয়টা কেমন হবে জানিস?
– কেমন?
– এক বেবি আরেক বেবির মা!
চলবে….