প্রেমের জোয়ার ভাটা পর্ব ৬

0
648

#প্রেমের_জেয়ার_ভাঁটা
#পর্ব_ছয়
#অধির_রায়

আরুশের ব্যস্ততা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে৷ মীরাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছে না৷ মীরা বাসার কোন কাজ করে না৷ আরুশ বাসায় কাজের লোক রেখে দিয়েছে৷ কিন্তু শ্বাশুড়ির সাথে যুদ্ধ শেষ হয়নি৷ প্রতিনিয়ত অপমানের স্বীকার হতে হয় মীরাকে। দুপুরে খাওয়ার পর মীরা ডাইনিং এ বসে বসে রবীন্দ্র সংগীত শুনছিল৷ আয়াত চৌধুরী টিভি বন্ধ করে বললেন,

“আমার বাড়িতে বসে রবীন্দ্র সংগীত শুনা যাবে না৷ রবীন্দ্র সংগীত শুনতে হলে কাজ করতে হবে৷”

মীরা বুঝতে পারছে এখানে কথা বলা মানে বেকার সময় নষ্ট করা৷ মীরা এক পলক আয়াত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছিল৷ তখনই আয়াত চৌধুরী বললেন,

“গ্রামের মেয়ে রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া কি শুনবে? অন্য কিছু বুঝে! ক্ষেত একটা৷”

তবুও মীরা কোন জবাব দিল না৷ রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে৷ মীরা জানে বাজনা একসময় এমনি বন্ধ হয়ে যাবে৷ কিন্তু আয়াত চৌধুরী মানুষকে ছোট করতেই ভালো লাগে৷ তিনি বিষাক্ত তীরের মতো নরম কন্ঠে বললেন,

“ফ্যামিলি কোন শিক্ষা দেয়নি৷ মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলে ভালোভাবে চলতে হয়? ক্ষেত ফ্যামিলির ক্ষেত শিক্ষা৷”

কোন মেয়েই সহ্য করতে পারে না তার ফ্যামিলি নিয়ে কোন কথা বললে৷ মীরাও ভিন্ন প্রাণী নয়৷ মীরা মুখের উপর জবাব দিল,

“বড়লোকের বাচ্চা আয়াত শ্বাশুড়ি আম্মা৷ আপনি আমার পিছনে পড়ে আছেন কেন? আমি আপনাকে বলছি আমার পিছনে লাগতে আসবেন না৷ আমি অনেক খারাপ মানুষ৷ কখন কি করে ফেলব জানা নেই। আমাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন৷ আমি নিজেকে আপনার মন মতো মানিয়ে নিব৷”

কড়া জবাব দিয়ে দ্রুত কদম ফেলে নিজের রুমে চলে যায়৷ আয়াত চৌধুরীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চায় না৷ বুঝাতে চাচ্ছে মীরার জায়গায় অন্য কেউ হলে উনার কোন উপকারে আসত না৷ বউমা যদি শ্বাশুড়িকে মায়ের স্থান আর শ্বাশুড়ি যদি বউমাকে মেয়ের স্থান দেয় তাহলে ঘরের মধ্যেই স্বর্গ সুখ খুঁজে পাওয়া যায়৷
__________

মীরা আরুশের জন্য খাবার নিয়ে রুমে বসে আছে৷ প্রায় লেট করেই আসা হয়৷ ইদানীং একটু তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আরুশ রুমে প্রবেশ করে মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি এখনও খাবার নিয়ে বসে আছো? তোমাকে ফোনে বলেছিলাম সময় মতো খাবার খেয়ে নিতে৷”

মীরা রাগী কন্ঠে বলল,

“হ্যাঁ! আমার খাওয়া উচিত ছিল৷ আমি ভুলেই গেছি আমি পাথরের মূর্তির সাথে সংসার করি৷ আপনার ইচ্ছা হলে খেয়ে নেন৷ আমি ঘুমাব৷”

মীরার পাশে আরুশ বসতে নিলে মীরা উঠে যায়। রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিছানার দিকে পা বাড়ায়৷ আরুশ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমার প্রতি খুব রাগ তোমার? তোমার রাগ ভাঙাতে আমায় কি করতে হবে? এতো রাগ তোমার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়৷”

মীরা গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“ছাড়েন আমাকে৷ আমাকে টার্চ করবেন না৷ আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে ভালো হবে না৷ ইচ্ছা করছে আপনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে৷”

মীরার খোলা কেশে মুখ লুকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলল,

“আমার কোন সমস্যা নেই৷ লোকে তোমার টাকলুর বউ বলবে৷ শুনতে ভালো লাগবে সুইটহার্ট।”

মীরাকে লজ্জায় ফেলতে মীরার ঘাড়ে আরুশ আলতো করে লাভ ব্রাইট দিল৷ মীরার সমস্ত দেহ কেঁপে উঠল৷ আরুশের মুষ্টি বদ্ধ কব্জি শক্ত করে চেপে ধরে৷ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“ছাড়েন বলছি৷ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে৷ আপনার জন্য না খেয়ে বসে আছি৷ কই আমায় ভালোবেসে এক লোকমা খাবার খাইয়ে দিবে তা নয় এখানে…”

মীরা কিছু বলতে পারল না আর৷ আরুশ মীরার ঘাড়ে নাক দিয়ে সুরসুরী দিয়ে যাচ্ছে৷ মীরা ভালোবাসায় মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে৷ নিজেকে সামলিয়ে নিল৷ আরুশের বাহুদ্বয় থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

“ফ্রেশ হয়ে আসেন৷ আপনার জন্য খাবার গরম করে আনছি৷ কোন কথা বলার চেষ্টা করবেন না৷ আমি যা বলব তাই করতে হবে৷”

আরুশ বাধ্য ছেলের মতো মীরার কথা মেনে নিল৷ মীরার কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে ওয়াশরুমে চলে যায়৷ মীরা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলে৷ একটু ভালোবাসা হলেই সমস্ত রাগ উড়ে যায়৷ মীরা আরুশের জন্য খারাপ গরম করে নিয়ে আসে৷ প্লেট নিয়ে আসে একটা৷ মীরা দেখতে চাই আরুশ মীরার মুখে খাবার তুলে দেয় নাকি নিজেই একা খেয়ে নেয়৷ আরুশ ফ্রেশ হয়ে হাতে খাবার নিয়ে মুচকি হাসল৷ মীরা হাসির কারণ বুঝতে পারল না৷ ইশারা মীরাকে কাছে টেনে বাম থ্রাইয়ের উপর বসাল৷ মীরার মুখে এক লোকমা খাবার দিয়ে বলল,

“তোমাকে আমি সময় দিতে পারছি না বলে অভিমান করছো! আমার অভিমানী বোকা ফুল৷”

মীরা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,

“বুঝতেই যখন পারেন দূরে থাকেন কেন? ভালোবেসে মাঝে মধ্যে কাছে টানলেই হয়৷ আমি আপনাকে বলিনি কাজ ফেলে আমার পাশে বসে থাকতে৷”

“আমাদের কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত৷ কোথায় গেলে ভালো হয়?”

মীরা যেন নিজ হাতে চাঁদ পেল৷ খুশিতে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,

“আমি আকন্দপুর যেতে চাই৷ সেখানেই গেলেই হবে৷ আর আমার সাথে আপনিও যাবেন৷ আপনাকে বেশিদিন থাকতে হবে না৷ মাত্র দুইদিন থাকব৷”

আরুশ মুচকি হেঁসে জবাব দিল,

“ওকে৷ আমরা কালই আকন্দপুর যাচ্ছি৷ তবে দুইদিন নয়৷ আমরা তিনদিন থাকব আকন্দপুর৷ তুমি চাইলে বেশ কিছুদিন থাকতে পার।”

মীরা আরুশকে আলতে করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আপনি আমার কাছে বেস্ট৷ আমার খাওয়া হয়ে গেছে৷ আপনি খাওয়া শেষ করেন৷”

দু’জনেই ভালোভাবে রাতের খাবার খেয়ে নিল৷ মীরা এঁটো খাবার রান্না ঘরে রেখে আসল৷ রুমে প্রবেশ করে দেখল আরুশ ঘুমিয়ে পড়েছে৷ মন খারাপ করে পাশে শুয়ে পড়ে৷ আরুশ পিছন থেকে মীরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তুমি সব সময় মন খারাপ করে থাকো কেন? আমার জড়িয়ে ধরা ছাড়া ঘুমাও না৷ আজ কেন উল্টো হয়ে ঘুমাতে যাচ্ছো?”

“আমি ভেবেছিলাম আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ সারাদিন অনেক কাজ করেন। সেজন্য বিরক্ত করতে চাইনি৷”

“কিন্তু আমার পাগল মন তোমাকে কাছে চাচ্ছে৷ তোমার মায়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে৷”

মীরা আরুশের কথা বুঝতে পেরে লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নিল৷ আরও লজ্জায় ফেলতে মীরার ঘাড়ে ভালোবাসার পরশ একে নেশা ভরা কন্ঠে বলল,

“আমার লজ্জাবতীকে খুব ভালো লাগে। লজ্জা মাখা তোমার মায়াবী হাসি, ডাগর আঁখি জ্যোংসার আলোকে হার মানাবে৷”

মীরা লজ্জায় আরুশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লোমহীন বুকে মুখ লুকাল৷ আরুশের চোখের দিকে তাকানোর শক্তি পাচ্ছে না৷ মীরার ওষ্ঠদ্বয় আরুশ নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে আবদ্ধ করে নিল৷ হারিয়ে গেল ভালোবাসার অসীম সাগরে৷ সেখানে নেই কোন মায়া। সেখানে আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
_______

সকালে ঘুম থেকে উঠে মীরা নিজেকে আবিষ্কার করে আরুশের উম্মুক্ত বুকে৷ রাতে কথা মনে পড়তেই লজ্জায় ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি চলে আসে৷ ইচ্ছা করছে আরুশের ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ একে দিতে৷ অবাধ্য মন বাঁধা মানতে চাচ্ছে না৷ জেগে উঠলে কি না কি ভাববে? দু-টানায় ভোগছে মীরা৷ সকল কল্পনা জল্পনা এক সাইডে রেখে আরুশের ঠোঁটে ঠোঁট লাগাবে ঠিক তখনই আরুশ আঁখি মেলে তাকায়৷ সরে আসতে নিলেই নিজের বাহুদ্বয়ে আবদ্ধ করে ফেলে৷ মুচকি হেঁসে বলল,

“আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে তুমি এসব করো! কতোদিন থেকে চলছে এসব কাজ।”

মীরা আমতা আমতা করে বলল,

“তেমন কিছু না৷ আপনাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য ডাক দিব ভাবছিলাম৷ সব সময় ভুল ভাবেন কেন?”

“আমি কি ভুল ভাবলাম? তুমি নিজেই কথা মায়াজালে ফেঁসে যাচ্ছো৷ এইতো ঠোঁট বাড়িয়ে দিচ্ছি৷ যত ইচ্ছা করতে পারো৷”

আরুশকে ধাক্কা দিয়ে মীরা ওয়াসরুমে চলে যায়৷ অল্প সোহাগেই মেয়েরা সোহাগী হয়ে উঠে৷ একটু ভালোবাসা এবং যত্ন পেলেই দুঃখ ভুলে সমস্ত সুখ খুঁজে পায়৷

চলবে……

ভুলত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷ কাল দিতে পারব না৷ কাল বই মেলায় যাব৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here