#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকা: আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৪৭
দাপুটে হাওয়ায় অলকচূর্ণ উন্মাতাল হয়ে উড়ে উড়ে পড়ছে নিশাতের শ্বেতবর্ণ ললাটে। উত্তরের দিক হতে দামাল বাতাস প্রবেশ করছে গাড়ির অভ্যন্তরে খোলা জানালা গলে। ভালোই শরীর শীতলে পরিণত করে দেওয়া বাতাস বইছে। ঠান্ডা লাগছে তার। মাথা ঘুরিয়ে কৃষ্ণ মেঘে ছেয়ে থাকা কালো অম্বরে তাকায় নিশাত। বৃষ্টি নামবে বোধহয়। জোরালো প্রভঞ্জন তারই আগমনের বার্তা বিলি করছে সর্বত্র প্রকৃতিতে। সে পুনশ্চ ঘাড় ঘুরিয়ে তার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে রাখা প্রহরের পানে চাইল। মুখটা কাঁধে হওয়ায় ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না প্রহরের চেহারাটা। সাড়াশব্দ নেই, ঘুমিয়ে গেছে কি! যদি সত্যিই ঘুমিয়ে থাকে তাহলে হৃদয় খু**ন করা অতীব প্রিয় চেহারাটা দেখার এখনই মোক্ষম সময়। জাগনা থাকলে এই চেহারা গাঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে, ছুঁয়ে দেখার সাহস হয় না ওর। চোখ তুললেই কঠিন চাহনি অক্ষিপটে ভেসে ওঠতেই কেঁপে ওঠে ভিতর, তাই ওই চোখজোড়ায় সরাসরি চোখ ডুবিয়ে দেওয়ার সাহসটুকু হয় নি তার কভু।
ঘাড় কাত করেও প্রহরের চেহারাটা না দেখতে পেয়ে বিরক্ত হলো সে। প্রহর এতটাই মুখ ডুবিয়ে আছে তার ঘাড়ে চেহারাটা প্রায় আড়াল। আরেকবার ভালো করে চেষ্টা করতেই তার থুতনি গিয়ে ঠেকল প্রহরের গালে৷ সাথে সাথেই ডান হাতে ছোঁয়া পেল শক্ত হাতের। চকিতে থুতনি গাল থেকে সরিয়ে দৃষ্টি তাক করল নিজের ডান হাতের দিকে। প্রহর চেপে ধরে রেখেছে সেটা। তার মানে ঘুমোয় নি লোকটা! অস্বস্তিতে কাটাকাটা দিয়ে ওঠে শীর্ণ কায়া।
প্রহর হাতটা ধরে রেখে মুখ না তুলেই প্রশ্ন করল ঘুম জড়ানো কণ্ঠে, ” কী করতে চাইছিলি? চুমু-টুমু খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে না-কি তোর? খেলে আমার চোখে চোখ রেখে খাবি,ঘুমে কেন খাবি? আমার ইজ্জত চু**রি করিস। চুরনি কোনখানের। ”
নিশাতের মুখের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেল নিমিষেই। কালো রাত্রিরে সূর্যের অরুণ আলোকচ্ছটা যেন বিচরণ করছে তার সমস্ত বদনে। চুমু! প্রহর ভাইয়ের সব কথা সবসময় কেন এই চুমুতেই এসে আটকে যায়? আর সে কি ইজ্জত হরণ করবে? এই লোকের ইজ্জত তো তার নামেই জনমভরের জন্য লিখিত। মুখে বলতে পারল না কথাগুলো। বলল অন্যকিছু, ” আম্মু বলেছে আপনাকে বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য। ”
প্রহর ঘাড় থেকে মুখ তুলে সোজা হয়ে বসল। চক্ষুযুগল লাল বর্ণে আরক্তিম। ঘুম এসে হানা দিয়েছে চোখ দুটিতে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে। লোকটা কি ক্লান্ত? অমন সন্ধ্যায় চোখে ঘুম! চেহারাটাও কেমন শুকিয়ে গিয়েছে! গতকাল পরীক্ষা শেষে শিমুল বলেছিল নতুন এমপি হওয়ায় প্রহরের কাজের চাপ একটু বেশিই। সবদিক সামলে উঠতে খাটতে হয় দিনরাত। রাতে বাড়িও ফেরে প্রচন্ড দেরি করে। খাওয়া দাওয়ার ঠিক থাকে না।
” আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন তুই? আমার চেহারায় কি দেখছিলি? ”
প্রহর ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করল। থতমত সুরে জবাব সাজায় নিশাত,” দেখছিলাম, আপনি ঘুমিয়ে গেছিলেন কিনা। ”
প্রহর সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে হতাশ কণ্ঠে বলল,” তার মানে তোর মনে অন্য কোনো ইচ্ছে ছিল না?”
” অন্য কোনো ইচ্ছে, কি ইচ্ছে থাকবে?”
” অনেক ইচ্ছে থাকার কথা। এই যেমন ঘুমন্ত বরকে আদর করে একটা চুমু খাওয়া। ”
সিটে মাথা ঠেকিয়েই ঘাড় কাত করে নিশাতের দিকে চেয়ে কথাটা বলল প্রহর। অপ্রতিভ হয়ে পড়ল নিশাত। প্রহরের বেসামাল কথার তীর এসে বিঁধছে বুকে। র**ক্তপাত হবার বদলে দামামা বাজছে সেথায়। কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,” যাবেন না ভিতরে?”
” যাব যদি একটা চুমু খাস। চুমু ছাড়া একটুও নড়ব না। ”
প্রহরের জেদি ও নির্লজ্জ কণ্ঠ শুনে বিপাকে পড়ে গেল নিশাত। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলল,” একটু আগে না দিলেন?”
” কি চুমু? ওটা আমি খেয়েছি,তুই স্বেচ্ছায় খাস নি। জামাইকে আদর করতে তোর এত চিন্তা? তোর কি আমার প্রতি ফিলিং জাগে না? বাচ্চা মেয়ে বুকে হামলে পড়ে চুমু খাবি তা না করে বউ হয়ে দূরে দূরে থাকছিস। বাচ্চাবউ কপালে জুটল ঠিকি কিন্তু চুমু আর জুটবে না বউয়ের ইচ্ছায়। বের হ গাড়ি থেকে, মামুজানের কাছে যাব। ”
শেষোক্ত কথাটা তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়েই বলল প্রহর। নিশাত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই প্রহর পরনের জ্যাকেট খুলে গাড়ির ভেতরে ছুঁড়ে মার**ল। শরীরে রইল সাদা টি শার্টটা। সুঠাম, সুপুষ্ট বাহু দুটি নজরে পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেলল নিশাত। প্রহর ওর দিকে চেয়ে আদেশের বাণ ছুঁড়ে মারল। বলল,” চল। ”
” আব্বার সাথে কী বলবেন?”
ভয়াতুর শোনাল নিশাতের সুকণ্ঠখানা। রফিক আজম বিকেলে সালিশ থেকে আসার পর নিজের কক্ষ ছেড়ে বের হয় নি আর। কথা বলে নি কারো সঙ্গে। এহেন আচরণে স্পষ্টত তাঁর মেজাজের গতিবিধি। প্রহর কথা বলতে গেলে আরও চটে যাবেন তা নিশ্চিত। মিনমিন করে বাধা দেয় প্রহরকে,” আব্বার সাথে আজ কথা না বললে হয় না? আসলে উনার মেজাজ খুব ভালো নেই আজ। ”
” মেজাজ গরম যখন আমি করেছি,ঠান্ডা আমিই করব। তোর এত চিন্তা করতে হবে না। ”
” কী কথা বলবেন?” সাহস সঞ্চয় করে প্রশ্নটা করে ফেলল সে। সামনের মানুষটার মুখের ওপর কথা বলতে অফুরন্ত সাহসের প্রয়োজন হয় তার। একে তো বয়সে অত্যধিক বড়ো, তার ওপর স্বভাবে অতিশয় রগচটা এবং ঘাড়ত্যাড়া।
গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ও। প্রহর আলোক গতিতে কাছে এসে হাত রাখল ওর দুই পাশে। আটকে নিল তাকে বাহুবন্ধনে। আকস্মিক তার কাছে আসায় এলোমেলো দৃষ্টিতে সেকেন্ড কয়েক চেয়ে চোখের পল্লব নেতিয়ে ফেলল নিশাত হৃদয়স্থের অসংযত স্পন্দনে। প্রহর ধীর কণ্ঠে কেমন ফিসফিস করে উচ্চারণ করল,
” এই যে তুই আমার বউ, বাচ্চাবয়সী বউ। তোর জ্ঞান, বুঝের অভাব। এতদিনে খেয়ালে এলো বিয়ের পর জামাইকে কীভাবে মিষ্টি মিষ্টি আদর করতে হয় তা তোর জানা নেই, অনুভূতি নিরামিষ তোর। সেজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাছে রেখে তোকে কীভাবে বরকে আদর করতে হয় তা শেখাব। এজন্য মামুজানকে গিয়ে এখুনি বলব আমার বউ আমাকে দিয়ে দিতে। আমারটাকে আমি বুঝিয়ে পড়িয়ে আদরে একদম দক্ষ বানাব। লজ্জার ‘ল’ ও থাকতে দেব না তোর মধ্যে। এত লজ্জা দিয়ে আমার কী হবে যদি আমি চুমু থেকেই বঞ্চিত হই?”
নিশাতের মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি পাগল হয়ে যাবে,নয়ত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মা**রা যাবে। কেন যে বিয়ে বসতে গেল! বিয়ের পর তাকে বাহুতে বন্দিনী বানিয়ে রাখা মানুষটা যেন বদ উম্মাদ হয়ে গেছে! প্রহর সরে গিয়ে বলল,” যা তোর চুমু দিতে হবে না,একটু জড়িয়ে ধর। ”
মাথা নুইয়ে একটু একটু করে প্রহরের বুকের কাছে এসে দাঁড়াল সে। জড়িয়ে ধরতে বাধা নেই তোর। অন্য বেলায় লজ্জাটা যেন জেঁকে ধরে তাকে। লজ্জা-শরম উচ্ছন্নে দিয়ে প্রহরের দুই বাহুর ফাঁক দিয়ে হাত নিয়ে রাখল পিঠে,জাপটে ধরল প্রহরকে। বিলম্ব না করে নিমেষে কোমলমতি শরীরটা নিজের বুকে মিশিয়ে কোমর আগলে ধরে সামান্য উঁচুতে উঠাল প্রহর। নিশাতের বন্ধ চোখে চেয়ে প্রগাঢ় অনুভূতিতে আচ্ছন্ন গলায় বলল,
“কত আর তোর সাথে গাড়িতে, বাহিরে রোমান্স করব বল? বিয়ে করার পর এমন দূরত্ব আমার মানতে ইচ্ছে করে না। তোকে ছাড়া আমার শোবার ঘরটা, আমার হৃদয়টা মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। তোর প্রেমোত্তাপে বছরখানেক ধরে পুড়ছি,এবার আমি পুড়তে চাই আদরের উত্তাপে। তুই কি আমার চাহনি,ইচ্ছে, কথা বুঝতে পারিস না? এতটা গাধী তো তুই না। ”
নিশাত চোখ বন্ধ রেখে মোটা ঠোঁট জোড়া নেড়ে ক্ষীণভাবে বলে উঠল,” বুঝতে পারি। ”
প্রহর পুনরায় বুকে মিশিয়ে হেসে বলল,” আলহামদুলিল্লাহ, আমার বউয়ের বুঝ হয়েছে। ”
________________________
তনুজা বসে বসে ই-মেইল চেক করছে। আমেরিকাতে পার্ট টাইম একটা জব করত সে। নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে ফিরতে না পারায় হাতছাড়া হয়ে গেছে জবটা। গতমাসেই প্রহরের সাথে দেখা করে চলে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়াতে যাওয়া হয় নি। হুট করেই ব্রেইন স্ট্রো**ক করেছে বাবা। ডাক্তারের অবজারভেশনে রাখতে হচ্ছে সর্বক্ষণ। অর্থব হয়ে পড়ে আছে লোকটা। অকস্মাৎ বাবার এমন করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় চিন্তায় জর্জরিত হয়ে আর ফেরা হয় নি তার ওই দেশে। একটু সুস্থ হলেই ফিরে যাবে। প্রহর এমপি হয়ে যাওয়াতে সবথেকে খুশিটা বোধহয় সে হয়েছে। আজকাল লোকটাকে দেখতে ইচ্ছে করে খুব।লাস্ট বার দেখা হয়েছিল অন্তিম ও মৃন্ময়ীর বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে যাওয়ায়। তন্মধ্যে প্রহরের কাছ থেকে সমীরণের ব্যাপারে আরও একটা অকল্পনীয় সত্য জানতে পেরেছে ও। এটা জানার পর থেকে আরো বেশি ঘৃণা জন্মাল ওর সমীরণের প্রতি, আর চিন্তা বাড়ল প্রহরের জন্য। জানে, প্রহর বিচক্ষণ লোক,সব সামলে নিতে পারবে তবুও সমীরণের কার্যকলাপ ভয় পায় তনুজা। একটা মানুষ এত নিকৃষ্ট কীভাবে হয়!
প্রহরের সহায়তা নিয়ে মৃন্ময়ীকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে তনুজা। তার বাবার ট্রান্সফারও করিয়ে দিয়েছে সেই শহরে প্রহর রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে। কিন্তু সমীরণ হন্য হয়ে খোঁজ করছে তার। সেকারণে তনুজা, মৃন্ময়ীকে নিয়ে চিন্তামুক্ত হতে পারছে না। সে আমেরিকা যাবার গুটি কয়েকদিন পরেই নিয়ে যাবে মৃন্ময়ী ও ভাইয়ের রেখে যাওয়া অংশকে। মানুষ দুটো এদেশে নিরাপদ না। অন্তিমকে কথা দিয়েছিল সে প্রাণ ত্যাগ করে মৃন্ময়ীকে বাঁচাতে হলে বাঁচাবে, তবুও কষ্ট পেতে দেবে না। আদৌ কি ভাইকে দেওয়া কথার পুরোপুরি পালন করতে পারছে সে? পড়ালেখা নষ্ট হয়ে গেল মৃন্ময়ীর। কত স্বনামধন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত মেয়েটা! সমীরণের জন্য মাঝপথে ছেড়ে দিতে হলো সব। অন্তিম একদিন অসুস্থ শরীরে তাকে কলে বলেছিল,” মৃন্ময়ী শুধু আমার বউ না,আমার প্রাণ। তুই আমার প্রাণকে আগলে রাখবি, তনু? আমি যে আমার প্রাণটাকে আর দেখব না রে, কখনো আর জিজ্ঞেস করতে পারব না,’ কেমন আছো প্রাণ?’ তুই কি তাকে বলবি আমার হয়ে আমার প্রাণকে আমি ভীষণ ভালোবাসি? দেখিস, ওর যেন কোনো কষ্ট না হয়। ”
ল্যাপটপ বন্ধ করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল তনুজা। ভাইয়ের কথা আজ মনে পড়ছে খুব। কেন এমন হলো? রাজনীতি! রাজনৈতিক ক্ষমতাই জীবনের সব? কি পেল সমীরণ অন্তিমকে মে**রে? পেল না তো রাজনৈতিক ক্ষমতা। তনুজা চাইলে এক মুহূর্তে শেষ করে দিতে পারে জানো**য়াররূপী ওই ভাইটাকে। কিন্তু সে চায় সমীরণের জীবনে যন্ত্রণা আসুক। এমন যন্ত্রণা, যেই যন্ত্রণায় তিলে তিলে মৃ**ত্যুকে নিজ মুখে আহ্বান করবে সে। মোবাইল হাতে নিয়ে প্রহরের নাম্বারে ডায়াল করল। সংযোগ হলো না। ফের ডায়াল করতে গিয়ে থমকে গেল। অবাধ্য মন প্রহরকে চায় বলে কি সে তাকে সায় দেবে? কখনো না৷ নির্বোধ মনকে তখুনি সায় দেওয়া যায় যখন অপর জন তাহাকেই চায়। অপরজনের মনে যদি থাকে অন্য কেউ তবে কেন বেহায়া হবে সে? আমেরিকা থেকে সে প্রহরের সাথে সমীরণের বিরুদ্ধে প্ল্যান করে আসলেও সত্যিকারে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল প্রহরের। তার অস্থিরতা,আচরণ কিছুই লোকদেখানো ছিল না৷ ভেবেছিল খুলে বলবে প্রহরকে মনের কথা,’দেখুন নেতাসাহেব অভিনয় করতে এসে প্রেমে পড়ে গিয়েছি আপনার,আপনি কি বুঝতে পারছেন?’ কিন্তু বলা হলো না। যার মনে অন্যের বসবাস তাদের জীবনে তৃতীয় পক্ষ হবার মতো বোকা মেয়ে সে নয়।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে গম্ভীর স্বরে বলল,” দরজা খোলা আছে। ”
সমীরণ শব্দ করে দরজা মেলে পাগলাটে ষাঁড়ের ন্যায় ছুটে আসল তার দিকে। টলল না ও। সমীরণের তীক্ষ্ণ আগমনে নিজের জন্য ভয়ংকর কিছুর পূর্বাভাস বুঝে গেল। সত্য তাহলে জেনেই গেল সমীরণ! নির্ভয় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” মা**রতে আসছ ভাই? ”
সমীরণ থেমে গিয়ে বলল,” তুই বোন নামে কল**ঙ্ক। আমার বিরুদ্ধে আমার শ–ত্রুর সাথে আমাকে ধ্বংস করার প্ল্যান করতে বুক কাঁপল না তোর?”
” তোমার বুক তো কাঁপে নি অন্তিম ভাইকে মার**তে। তাহলে আমার কেন কাঁপবে? ”
সমীরণ বাকা হাসল। বি**ষের ছোট বোতলখানা বের করে বলল,” বিশ্বাস কর বোন, তোকে মার–তেও এখন আমার বুক কাঁপবে না। শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখতে নেই, বোন হোক বা ভাই। স্বার্থপর হলেই দুনিয়ায় শান্তি। নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিলে শান্তি পাব নাকি?”
তনুজা মোটেও ভড়কাল না। সে জানত সত্য প্রকাশিত হলে তাকেও ছাড় দেবে না সমীরণ।
____________________
মেয়ের জামাই এসেছে বলে রোকেয়া ও পিংকির মা নানারকম নাস্তা তৈরি করলেন। সেগুলো সাজিয়ে রাখল প্রহরের সামনে। সে কিঞ্চিৎ বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,” এসব খাব না,শুধু কফি হলেই চলবে মামি। ”
রফিক আজম ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুর পাড়ে যাবেন ভাবছিলেন৷ গম্ভীরমুখো হয়ে প্রহরকে এড়িয়ে চলেই যাচ্ছিলেন, নিশাত বসার ঘরে দাঁড়িয়ে দেখল প্রহর তার আব্বাকে ডাক দিল,” দাঁড়ান শ্বশুরজান। আপনার সাথেই কথা বলতে এলাম। ”
প্রহরের ভরাট গলায় আব্বাকে এমন অদ্ভুত সম্বোধন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল নিশাত। রফিক আজমের চেহারাটাও কেমন কুঁচকে গেল। বিরক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করলেন,” এসব কেমন ডাক? আমাকে অসম্মান করে শান্তি হয় নি তোমার? ”
প্রহর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললল,” মামা-ভাগ্নের দীর্ঘকালের হিসেব- নিকেশ ছিল, আজ তা সমাধান হলো ব্যাস। এখন আপনি আমার চোখে কেবল আমার বউয়ের আব্বা, সুতরাং মামুজান থেকে এখন আপনি আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুরজান। এক পা-ও নাড়াবেন না,সিরিয়াস কথা আছে আপনার সাথে। ”
নিশাতের মুখ হা হয়ে গেল, প্রহর ভাই কি আব্বাকে আদেশ করছে না-কি অনুরোধ?
রফিক আজম রেগে গেলেন,” কী বলতে চাও তুমি?”
” বউ চাই,আমার বউ আমাকে দিয়ে দিন, শ্বশুরজান। ”
#চলবে~
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুল থাকলে জানাবেন আমি ঠিক করে নেব। ভালোবাসা রইল।)