প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব ৩৬

0
1786

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৩৬

কুয়াশা ছড়ানো শীতকাল এসে প্রকৃতিতে হাজির। চারিপাশ ঘোলাটে চাদরে আবৃত। হেমন্ত পালিয়েছে শীতের প্রকোপে লেজ গুটিয়ে। বদলেছে প্রকৃতির রূপ,পরিবর্তন হয়েছে মানব জীবনের ছন্দ। আনন্দ ঝলমলিয়ে ধরা দিচ্ছে কারো মনের খাঁচায়, কারো মন অম্বরে আবার বিষাদেরা ওড়ছে পাখি হয়ে। মানুষের মন পাল্টেছে, জীবন পাল্টেছে। পাল্টে গেছে নিশাত, ঊষা, প্রত্যয় সকলের জীবন। এই যে ঊষার বিয়ে হয়ে গেছে দুই মাস, প্রহরের ইলেকশন দু’দিন পর, নিশাত ও শিমুলের দিনরাত কাটে পড়তে পড়তে। এ মাস বাদেই ফেব্রুয়ারিতে বিনা ডাকে উপস্থিত হবে ম্যাট্রিক পরীক্ষা। তারই প্রস্তুতিতে নিঃশ্বাস ফেলবার জো নেই নিশাত ও শিমুলের। দুই বান্ধবী একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পায় না। অথচ ভালোবাসার মানুষের সাথে এক দন্ড কথা বলতে ভোলে না তারা। দুজনেই অনুরাগের অনলে দগ্ধ।

নিশাত ঘরের খিড়কির কপাটদ্বয় মেলে দাঁড়াল। হিমশীতল, মাতাল এক হাওয়া তার হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়ে গেল অবলীলায়। কাঁপা কাঁপা হাতে অনেক কষ্টেসৃষ্টে জানালা লাগিয়ে ঘরে আসল সে। পেছন ঘুরতেই মাকে দেখে অবাক হলো। অস্ফুটেস্বরে বলল, ” তুমি এখানে আম্মু? ”
হাতের দিকে ইশারা করে ফের সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে দেখল মাকে। রোকেয়া চকচকা গোলাকার পাত্রের উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে কণ্ঠে আদর মেখে বললেন,
” তোর ফুপুর সাথে কথা হইল। কইল,তোরে যাইতে। ভাপা পিঠা বানাইছি লইয়া যা। তোর আব্বা নামাজ পইড়া আইয়া ঘুমাইতাছে। জলদি ফিইরা আসিস। ”

নিশাতের মনের ময়ূরী পেখম মেলে নাচছে বেশ কতদিন ধরে। কেন যে,কীসের কারণে এটা অত নাচে! বিছানার ওপর থেকে মখমলের সোয়েটারটা গায়ে জড়িয়ে হেলেদুলে চলল সে স্মরণিকা নিবাসে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রহর ভাই তার ফোনের জবাব দিচ্ছে না। হয়তো ইলেকশন নিয়ে জোরদার ব্যস্ত। তার এ ক’দিনে মনে হলো রাজনীতিবিদ প্রেমিক হিসেবে নিরামিষ।

বাড়িতে ঢুকে নিশাত চিন্তিত হয়ে পড়ে এই সাতসকালে কেউ জেগে আছে কি-না! বাড়ির কাজের কর্মী সাহেলা খাতুন দরজা খুলে দিয়ে বলল,
” বও তুমি,ডাক্তার ম্যাডাম রুমে আছে,খবর দিতাছি। ”
” আচ্ছা। ”
বলতেই বলতেই আলতা ত্রস্ত পায়ে এলেন। হাতে তার একটা সিঁদুর লাল রঙের লেহেঙ্গা। বেশ ভারী মনে হচ্ছে। বুকে জড়িয়ে রেখে এগিয়ে আসলেন তিনি। সোফায় রেখে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” যাক, আসলি তবে। গত দুই মাস ধরে এই বাড়িতে পা রাখিস নি। নে দেখ,তোর হবু বর গতকাল এনেছে এটা। বিয়ের সব প্রিপারেশন প্রায় শেষের পথে। আপাতত ভাইয়ার মাথা ঠান্ডা হবার অপেক্ষা করছি,তারপরই তোদের বাড়িতে যাব সরাসরি। ”

গোল গোল চোখে লেহেঙ্গার দিকে চেয়ে আছে নিশাত। ধরার সাহস পাচ্ছে না। বিয়ের শাড়ি,লেহেঙ্গা নিয়ে প্রতিটা মেয়ের স্বপ্নের শেষ থাকে না,তারও স্বপ্ন আছে। তার স্বপ্নের,কল্পনার অনুরূপই লেহেঙ্গাটা। চেয়ারম্যান ইলেকশন হারার পর থেকে আব্বার মনটা ভালো নেই। সর্বদা রে**গে থাকেন তিনি। এটা হবারই কথা ছিল। ফুপার নামডাক, আধিপত্য মহানন্দ গ্রামে ঢের। বড় বড় জায়গায় হাত আছে তাঁর। তাছাড়া উনার সব থেকে বড় শক্তি প্রহর ভাই। তৎক্ষনাৎ হবু বর কথাটা মনে হওয়া মাত্র জোরেশোরে ধাক্কা খেল সে। মিহি স্বরে জানতে চায়, ” প্রহর ভাই এসেছেন?”

” হ্যাঁ। রাতেই এলো বিয়ের লেহেঙ্গা, শাড়ি সব নিয়ে। রাত একটাই আমাকে জাগিয়ে বলল গয়না যেন আজকের মধ্যে চলে আসে। কালকেই যেন তোদের বাড়ি যাই। ঊষাদের বাড়িতে বলল, একেবারে ইলেকশনের পর বিয়ে করবে। কিন্তু গতরাতে এসেই তোরজোর শুরু করল। শপিংও সেরে ফেলল। আমার ছেলেটা এমন কেন রে মা! সবসময় মনে হতো তোকে খুব ভালোবাসে। যখন জিজ্ঞেস করতাম তোকে ভালোবাসে কি-না, তখন মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তনুজাকে বিয়ে করবে বলে ঘোষণা দিল। তনুজাকে মেনে নিলাম হুট করে ঊষার বিয়ের সময় এসে বলে তোকে বিয়ে করবে। এমন হলে শুধু শুধু তনুজার সাথে এনগেজমেন্টের কী দরকার ছিল?”

” তনুজাকে আমি আংটি পড়াই নি,পড়িয়েছি তোমার ভাইয়ের মেয়েকে। তনুজাকে আংটি পড়ানোর সময় আমার ইমারজেন্সি কাজের বাহানা দিয়ে তোমার হাতে আংটি গুঁজে দিয়ে বলেছিলাম তাকে পড়িয়ে দিও। মনে নেই? ”

নিশাতের পাশে বসে স্থির গলায় কথাগুলো বলল প্রহর। বক্রচাউনি নিক্ষেপ করল মেয়েটার মায়াবী গড়নে,চেহারায়। কেমন একটা ভয় থম থম করছে মুখশ্রীতে। প্রহর মজা পেল। বাঁকা হাসিতে মাখামাখি হয়ে গেল তার ঠোঁট দু’টো। মায়ের দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাল।

নিশাতের বুকের কোথাও ভয় ঘুর ঘুর করছে। গতরাতে যে লম্বা রচনা লিখেছিল ম্যাসেজে, মন বলছে সেটা গুরুতর প্রভাব পড়বে ওর ওপর। কি সাহস টা-ই না দেখাল সে! আর তনুজা নামটা শুনলে এখন আর মনের মণিকোঠায় বিষাদেরা বসত করে না, মেঘ জমে না,হৃদয় চিরে সূক্ষ্ম একটা যন্ত্রণা জল হয়ে নেমে আসে না চোখের কোল বেয়ে। এ দু মাসে অনেক! অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। তনুজার হুট করে তাদের জীবনে আসা,প্রহর ভাইয়ের তনুজার প্রতি মেকি আগ্রহ দেখানো সবই একটা রহস্য। এই সব সম্পর্কে অবগত সে। ঊষার বিয়ের পরদিন প্রহর ভাই সকল রহস্য পানির মতো স্বচ্ছ করে বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে।
সেদিন, সেই মুহূর্তে নিশাত বুঝল,জানল রাজনৈতিক প্লাটফর্মটা মোটেও সহজ নয়। না জানি প্রহর ভাইকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে অনিশ্চিত প্রাণ নিয়ে কত লড়তে হবে সমাজের জন্য, প্রিয় মানুষদের জন্য, দেশের জন্য! তার সম্পূর্ণ ভয়নামক কারণটার জন্য মূলত দায়ী প্রহর ভাই। নিশাত সুনিশ্চিত যে,প্রহর ভাই আজ ওকে ছাড়বে না। এক বুক সাহস নিয়ে বার্তা মাধ্যমে যেই যেই বাক্যগুলো লিখেছে সেগুলোর রফাদফা করবেই। নিশাত একটু সরে বসল। ভরসা নেই মানুষটার।

আলতা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,” প্রহর তুই লেহেঙ্গা নিয়ে আসলি,মেয়েটার পছন্দ হলো কি-না কে জানে! নাহলে পাল্টিয়ে আনবি। দেখে নিক ও আগে ভালো করে। আমি নাস্তা বানিয়ে ফেলি নিশুটা খেয়ে যাবে। কতদিন পর আসল আমার মেয়েটা। ”

প্রহর হাতে একটা ভাপা পিঠা তুলে নিয়ে বলল,” মামী পাঠিয়েছে?”
” হ্যাঁ। নিশু নিয়ে এলো। ”
” আচ্ছা তুমি যাও মা। নিশুর জন্য ওর পছন্দের নুডলস বানিয়ে নিয়ে আসো। বিয়ের পর তো সে রাঁধবে, তার আগে শ্বাশুড়ির হাতের খাবারের স্বাদ নিক। ”
” বললেই হলো? ও এখনো ছোট,রাঁধবে কী? আমিই রেঁধে খাওয়াব আমার মেয়েকে। ”

প্রহর সোজা নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্টত কড়া কণ্ঠে বলে উঠল,” শোন,একদমই কাজ না শিখে এ বাড়িতে আসবি না। বাসায় গিয়ে মাছ,মুুরগি সব কা**টা শিখবি,রান্না শিখবি। নিজেকে প্রিন্সেস কিংবা সিন্ড্রেলা ভাবার ভুল করবি না। বিয়ের পর আমার হাতের উত্তম-মধ্যম খেলে এসব একেবার ছুটে যাবে। আবার ভাবিস না এসব কাজের ভয়ে বিয়ে বসবি না। প্রেম করেছিস, বিয়ে তোর বসতেই হবে। বুঝেছিস?”

নিশাত দ্রুত দ্রুত হ্যাঁ বলল। আলতা মুখে হাত রেখে হাসি লুকানোর চেষ্টা করে ধম***কালেন ছেলেকে,” এসব কী প্রহর! তোর সামনে তোর মা দাঁড়িয়ে আছে,মায়ের সামনে তোর ছোট হবু বউকে থ্রে**ট দিতে লজ্জা করে না?”

প্রহর ঠোঁটে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে বলল,” ছোট থেকেই দিচ্ছি মা। বাচ্চা মানুষ, শা**সন না করলে আদরে বাদর হয়ে যাবে। ”

নিশাত বিস্ফোরিত চোখে চাইল প্রহরের দিক। কোথায় ছোট সে! ওর বয়সী মেয়েরা বিয়ে করে সংসার করছে। তারই ছোট্টবেলার খেলার সাথী এক মেয়ের দেড় মাসের একটা বাচ্চা আছে। প্রহর ভাই কোন যুক্তিতে বাচ্চা বলে তাকে! বাচ্চা না,কিশোরী সে।

আলতা ছেলে ও ভাইঝিকে রেখে রান্নাঘরে চলে গেলেন। সুযোগ পেয়ে লুফে নিল প্রহর। একটানে নিশাতের কব্জিতে শক্তপোক্ত হাতের থাবা বসিয়ে দিয়ে সে কঠিন কণ্ঠে আদেশ করে,
” রুমে চল তুই। মাকে বলেকয়ে আনিয়েছি তোকে। ভোর থেকে অপেক্ষা করছি তোর জন্য। ”
নিশাত বহু কষ্টে নিজেকে রক্ষা করার জন্য শক্ত হলো। বাঁধা দিয়ে বলল, ” আম্মু বলেছে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে। ”
সামনের মানুষটা ঘাড় ঘুরিয়ে হৃদয় কেমন করা হাসি হেসে বলল,” পাঁচ মিনিটে কি খুব বেশি দেরি হবে তোর?”
“না। “– মিইয়ে কণ্ঠে জবাব দিল সে।

প্রহর টেনে ওকে রুমে নিয়ে এসে দরজা আঁটকে দিল। থতমত হাল নিশাতের। নিজের করা কর্মের জন্য ভুলের মাশুল গুণতে হবে তার। কি দরকার ছিল ওসব বলার! কেন যে অন্তরে ভালোবাসা ঢলে ঢলে পড়ছে? সব ভালোবাসার দো**ষ। এই ভালোবাসা জানে প্রহর ভাই তাকে কতটা ভালোবাসে,সে কতটা ভালোবাসে প্রহর ভাইকে। তাহলে শুধু শুধু একটুখানি ব্যস্ততার ফলে সৃষ্ট দূরত্বে কি ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটে? ভালোবাসা কখনো নিঃশেষ হয় না,প্রকাশের সকল রাস্তা বন্ধ হলেও ভালোবাসা চিরকাল সজীব রয়ে যায়,থেকে যায় ভিতরে,সযত্নে, গোপনে।

শরীর গুটিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা নিশাতের দিকে তাকিয়ে প্রহর অদ্ভুত ভঙ্গিতে নিঃশব্দে হাসল। ইদানীং তার হাসির রোগ হয়েছে বলা যায়। এই লম্বা, চিকন দেহের হলুদিয়া মেয়েটাকে দেখলেই তার এমনতর অবস্থা হয়। এক পশলা বৃষ্টি নেমে আসে ঝমঝমিয়ে হৃদয় জমিনে,ভিজিয়ে দেয় সকল চিন্তা, হতাশা,কষ্টকে,মনপ্রাণ করে তোলে সুখময়। পৃথিবীর সবার কাছে শান্তির মতো অমূল্য জিনিসটা খোঁজে পাওয়া দুষ্কর, যার কাছেই মিলে সে আমাদের প্রিয়জন,ভালোবাসার মানুষ। প্রহরের শান্তি, ভালো লাগার,হৃদয়ভূমির একমাত্র মালকিন সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা। নিশাতকে একটু বিব্রত করে দিতে সে গমগমে সুর তুলল,
” তুই কি বলেছিস, আমি নিরামিষ? রাজনৈতিক প্রেমিক নামেই নিরামিষ? ”
” আমার ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দাও প্রহর ভাই।”
নিশাতের গলাটা করুণ শোনাল। প্রহর দমল না৷ ওর কোমরে বা হাতটা সা””পের মতো পেঁচিয়ে কাছে টেনে নিয়ে চেপে ধরল বুকের সাথে। নিশাত চমকালো,হতবিহ্বল হয়ে পড়ল সে। বুকের গহনে বাজতে শুরু করে তানপুরা। অদৃশ্য সেতারের শব্দে মাথা ভার ভার হয়ে এলো তার। এত! এত কাছে কখনো আসে নি সে। এই বুকে ছুঁয়ে দেখে নি হাত। এক অপরিচিত,অচেনা নেশায় ডুবে গিয়ে ধীরে ধীরে হাতটা রাখল সে শক্ত বক্ষে। কি অস্থির নেশা! হরমোনের অনিয়ন্ত্রণ ক্রিয়াকলাপে চিত্ত সামলাতে অপারগ সে। দুলতে লাগল সমস্ত কায়া। কুচকুচে কালো মণির চোখ দুটো ওর দিকে তাকিয়ে মাদকময় স্বরে বলে উঠল,

” আর কি বলেছিস, কল ধরছি না বলে শা**স্তি হিসেবে বিয়েতে না করে দিবি? এত সাহস তোর? দেশের সেবায় মনস্থির করেছি বলে ক্ষমতা দরকার, কিন্তু আমার সুস্থ থাকার জন্য তোকে দরকার। বেঁচে থাকতে চাই বলেই,তোকে চাই আমরণ। ”

নিশাত মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে কথাগুলো। এমন কখনো হয় নি তার। প্রহর ভাইয়ের সান্নিধ্য চঞ্চল করে তোলছে তাকে।মন চাইছে ছুঁয়ে দিতে নড়বড় করা ওই অধরদ্বয়, মোলায়েম হাতে স্পর্শ করতে শ্যামবরণ পুরুষের অমসৃণ গাল।

প্রহর বলতে বলতে থেমে গেল। চোখে পড়ল,ভালোবাসা,ভালোবাসা পাবার আকুতি,নেশাতুর চাহনি। সে বিশদ কণ্ঠে কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল,

” আমি যদি তোকে আমার কালচে ঠোঁট দুটো দিয়ে একটা চুমু খাই,তোর কি খারাপ লাগবে নিশু?”

নিশাত বিস্ময়ে, বেসামাল হয়ে ঝাপটে ধরল প্রহরকে। লজ্জিত কণ্ঠে শুধালো,

” হ্যাঁ, ভীষণ খারাপ লাগবে। ”

প্রহর এবার কোমরে দুই হাত দিয়ে ধরে শরীরটা আরেকটু আগলে নিয়ে দুষ্টমি করে জিজ্ঞেস করল,

” কেন খারাপ লাগবে তোর? আমার ঠোঁট কালো বলে?”

নিশাত অবাক হয়ে হড়বড়িয়ে উত্তর দেয়,

” তুমি কালো নও,শ্যামলা। ”

” তাহলে চুমু খেলে কী সমস্যা? ”

” আমার মনে হচ্ছে চুমুতে আমার জ্বর উঠবে। ”

বুকে মুখ গুজেই আস্তে করে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে কথাটা বলল নিশাত। আসলেই, চুমুর কথা শোনে তার শরীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। মনে হচ্ছে পুরোনো রোগটা ধরা দিবে,অকস্মাৎ জ্ঞান হারানোর অসুখ। চুমু খেতে গিয়ে সে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছে এটা বলে সারাজীবন পচাবে প্রহর ভাই।

প্রহর ওর মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটজোড়া খুব কাছে নিয়ে গেল। উম্মাদ প্রেমিকের মতো ধৈর্য্য হারিয়ে অসহিষ্ণু গলায় বলল,

” স্বপ্নে তোকে শত,হাজার,লাখ বার চুমু খেয়েছি নিশু। বাস্তবে একবার আমার ঠোঁট তোর নরম ঠোঁটে ছুঁয়ে দিলে খুব বেশি অ**পরাধ হয়ে যাবে কি? তোর জ্বর আসলে আমি ডাক্তার ডাকব,প্রমিস। একটা চুমু খাই? ”

ভেতরে সামাল সামাল রব উঠল। কিন্তু নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয় কিশোরী, আবেগি নিশাত। প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজে বাচ্চাদের ন্যায় বলে বসল,

” আমি যদি বেহুঁশ হই, সামলে নিও। ”

মিলে গেল দুইজোড়া অধর। কতক্ষণ ছিল তাহাদের মিল সেটা অজানা। তবে নিশাতের সমস্ত মনে ছড়িয়ে পড়ে কস্তুরির সুবাস। তার প্রথম প্রেম,তার প্রিয় মানুষের প্রথম ছোঁয়া। স্মৃতির এলবামে যত্ন করে রেখে দিবে সে এটা। বৃদ্ধবয়সে কোনো একদিন বসন্তের প্রেমে মগ্ন হয়ে কিংবা বারান্দায় বসে ঝুম বৃষ্টি দেখতে দেখতে সে উপভোগ করবে পুনরায় মহূর্তটুকু।
_________________________________

স্ত্রীর গায়ে ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে প্রথমার হাত তুললেন রফিক আজম। রাগে গা রি রি করছে তার। থা**প্পড় দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। চোয়াল শক্ত করে গর্জে উঠলেন,

” তুমি এরকম কইরা আমার বিশ্বাস ভাঙবা, কোনোদিন ভাবি নাই সৌরভের আম্মা। মেয়েটারে নিয়া আমার মেলা স্বপ্ন আছিল,সব শেষ কইরা দিলা। সব তোমাদের মিলিত কাজ। আমার মেয়েরে এই ভুলের পথ,খারাপ পথ থাইকা সরাইয়া আনমু আমি। রান্না করো গিয়ে, অতিথি দুপুরেই আইব। ”

#চলবে,,,!
( গল্পের এত এত চরিত্র, জুটি এক পর্ব দুই হাজার শব্দ লিখলেও কম। আজও এ পর্বে কাহিনী যতদূর সাজালাম লিখতে পারলাম না। সারাদিন ক্লাস, টিউশনি,পড়া সবমিলিয়ে আমার লিখার সময়ই হয়ে ওঠে না। তবুও সময় বের করি,কথাও শুনি অনেক। যাইহোক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর যারা গল্পটা শেষ হলে পড়বেন ভাবছেন পড়ে ফেলুন,এ মাসেই শেষ হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here