#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব _____৩৫( বাকি অংশ)
নিশাত নিচে নামতেই ঊষার কাজিন তুবা ছুটে আসল। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল,
” হেই কেমন আছো? আমি তুবা,ঊষা আপির খালাতো বোন। প্রহর ভাইয়ার জন্মদিনে এসেছিলাম। তবে তোমার সাথে কথা হয় নি। ”
হালকা গোলাপি অধরদ্বয় দু দিকে ছড়িয়ে আলতো হাসে নিশাত। তুবার ঝলমলে চেহারায় পূর্ণ দৃষ্টি মেলে শুধায়,
” আমি নিশাত। প্রহর ভাইয়ার মামাতো বোন। ”
তুবা হাসি হাসি মুখ করে নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করল,
” আই নো। ঊষা আপি বলেছে প্রহর ভাইয়ার বিশেষ একজন তুমি। ”
কথাটা শোনা মাত্রই তুবার দিকে বিস্ফোরিত নেত্রে চাইল নিশাত। হতবাক,নিস্তরঙ্গ গলায় বলল,
” বিশেষ? ”
” হুম। কিন্তু দেখো না,ঊষা আপি মনে হয় বুঝতে ভুল করেছে। আমি ভেবেছি প্রহর ভাইয়ার পছন্দের মানুষ বুঝি তুমিই। আজ এসে শুনলাম উনার নাকি এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে, বিয়ে ঠিক। পাত্রীকেও দেখলাম। রাজনীতিবিদ এবং ড্যাশিং মডেল সমীরণ আরবিন এর বোন। এই নিশাত জানো? সমীরণ আমার ক্রাশ। তার ব্যাপারে পুরো গবেষণা করা শেষ আমার। তার বোন তনুজাকেও আমি চিনি। প্রহর ভাইয়ার হবু বউ জানার পর আমি অবাক। বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি ভীষণ এক্সাইটেড। তনুজা ভাবী বলেছেন একটু পর উনার ভাই আসবেন এখানে। আমার বহুদিনের ইচ্ছে পূরণ হতে যাচ্ছে। অনেক অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল সমীরণকে খুব কাছ থেকে এক পলক দেখার। ”
সমুখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে তুবা। মেয়েটা নিঃশ্বাস ফেলতেও কপটতা করছে। কথাগুলো বলতে পারলেই তার ভেতরটা হালকা হবে যেন। সেদিকে মনোযোগের ছিটেফোঁটাও নেই নিশাতের। তার শ্রবণগ্রন্থি আপাতত তালাবদ্ধ। মন সেই কোন ক্ষণেই থমকে গিয়েছে তনুজার আসার সংবাদ শুনে। বক্ষস্থলে ঈর্ষাদের সমাবেশ বসেছে। প্রহর ভাই বলেছে ওকে চায়,ওকে ভালোবাসে তাহলে তনুজা কেন এখনো আসে এখানে? কী চায় প্রহর ভাই? একদিকে বলছে মজুমদার বাড়িতে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবে,অন্যদিকে অন্য এক রূপবতী নারীকে আংটি পড়িয়ে বউ হিসেবে গ্রহণ করবে বলে আশা দিয়ে রেখেছে।
নিশাতের কোমল মনে বিভিন্ন চিন্তা, কথার মেলা বসেছে। প্রহর ভাই কেন এসব করছে,আসলে উনি কী চায় কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ওর। তুবাকে কাটিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পানসে গলায় বলল সে,
” এখন যাই। শিমুলের কাছে যাব। ”
” ওহ! শিমুল ড্রইং রুমেই বসে আছে তনুজা ভাবী, আরুশি আপু,নাহিদ ভাইয়ার সাথে। সেখানেই চলো। আমরা মেয়েরা সবাই একই রঙের শাড়ি পড়ব মেহেদী অনুষ্ঠান আর হলুদের জন্য। তনুজা ভাবী কালার,জুয়েলারি সিলেক্ট করে অর্ডার দিয়েছে। উনার পরিচিত শপ,পাঠিয়ে দিবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এত মিশুক উনি! ”
তনুজা,তনুজা! নামটা কাটার ন্যায় বিঁধছে নিশাতের নরম মাংসপিণ্ডে। শরীর গরম হয়ে উঠেছে। কিড়মিড় করছে দাঁতগুলো। এরকম ঈর্ষণীয় প্রভাব কখনোই পড়ে নি ওর ওপর। কান্না, হাসি,হিংসা সবকিছুর জন্য প্রহর ভাই দায়ী। তনুজার মুখোমুখি হলেই অন্তঃপুরে দ্বিগুণ নয়,তিনগুণ তেজে চলে উঠবে হিংসার বহ্নিশিখা। নিস্পৃহ কণ্ঠে তুবাকে বলতে চাইল,
” আমি যাব না,তুমি যাও। ”
এর পূর্বেই তুবা টেনে তাকে নিয়ে আসল জমজমাট আড্ডার স্থানে। সকলের কেন্দ্রবিন্দু তনুজা। সবার মাঝে বসে আছে সে। বেশবাস অত্যন্ত আকর্ষণীয়, নজরকাঁড়া। প্রথম চাওয়াতেই যেন চোখ ফিরিয়ে আনা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কালো,নীলের রংয়ের ঝলমলে কেশগুচ্ছ পনিটেল স্টাইলে বাঁধা। পড়নে জিন্স,শ্বেত রঙের রাউন্ড শর্ট টপস। টপসটা সৌডুল কোমর পেরিয়ে হাঁটু অব্দি নেমে এসেছে। গলায় নীল স্কার্ফ প্যাঁচানো। নিশাত একটাবার, অনিচ্ছায় নিজের দিক হতাশ দৃষ্টি ফেলল। পরনে তার সাদামাটা একটা গোলাপি থ্রি পিস। তার কিশোরী মনে উদ্বেল তরঙ্গ খেলে যাচ্ছে। সে কোন অংশে কম? চাইলেই তনুজার মতোন ড্রেস পড়তে পারে। ওর পরিবার রাজনীতি করে না,ভাই মডেল না। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে অনেকাংশে কম নয়,যথেষ্ট স্বচ্ছল। অভ্যন্তরের অদ্ভুত জ্বলুনি কমাতে স্বয়ং নিজেকেই হাজার-হাজার,শত-শত বুঝ দিল ও।
” হেই স্লোগানিস্ট! ডিয়ার নিশাত তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এদিকে এসে বসো। ”
উচ্ছ্বসিত, মধুর একটা কণ্ঠস্বর নিশাতের কর্ণকুহরে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে গেল অনায়াসে। মিষ্টি স্বরের মালিক ফিরিয়ে আনল ওর চেতনা। আকৃষ্ট করল আরো বেশি করে নিজের পানে। তাকাল ও। আরুশি, শিমুল,নাহিদ সব তাকিয়ে দেখছে তাকে। তুবা পুনরায় ওর হাতটা ধরে আসরে প্রবেশ করল। বলল,
” আরুশি আপু তোমার আমার দুই বছরের সিনিয়র। আমার আপন রক্তের বোন। ”
আরুশি ধমকে উঠল,
” কী বলছিস এসব? এইভাবে পরিচয় দেয়? এ কারণেই এখনও আম্মুর ঝাঁটার বারি খাস। ”
চারিধারে খিলখিল হাসির আওয়াজে তুবা চিৎকার করে উঠল,” আপু!”
আরুশি ওষ্ঠাধর চেপে হাসি থামানোর প্রয়াসে লেগে পড়ল। নাহিদের কথা বলার আগেই নাহিদ কণ্ঠে একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে জানায়,
” আমি নাহিদ। আরুশির তিন বছর সিনিয়র। ঊষার মামাতো ভাই। ”
” নিশাত আমার পাশে বসো। ”
তনুজার সুমধুর গলাটা আবারও নিশাতকে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করে। বড্ড মায়া মিশিয়ে কাছে বসার আহবান জানাল। নাকচ করতে অসফল হলো নিশাত। বসল পাশে। নতুবা উপায় ছিল না। না বলে অন্যত্র বসা অবশ্যই যুৎসই হতো না। সবাই ওকে বেয়া**দব ভেবে বসে থাকত নিশ্চিত। তনুজার অপর পাশে বসা শিমুলকে পরিপূর্ণভাবে অবজ্ঞার সমুদ্রের লহমায় ছেড়ে দিল ও। তরঙ্গ ওকে ভাসিয়ে ভীনদেশে নিয়ে যাক,অতল গহ্বরে ডুবিয়ে নিঃশেষ করে ফেলুক,নিরুদ্দেশ করুক তাতে এক ফোঁটাও ভ্রুক্ষেপ করার সময়,স্পৃহা কোনোটাই নেই নিশাতের। কেমন বান্ধবী যে ওর হবু সতীনের পাশে বসে হা হা করে হাসে? শিমুলটা যেদিন প্রেম করবে ঠিক ঠিক ওর জন্যও একটা সতীন হাজির করবে নিশাত।
পাঞ্জাবি পাল্টাতে গিয়ে প্রহরের চোখ আঁটকালো বিছানায় অবহেলায় পড়ে থাকা শপিং ব্যাগটার ওপর। কথার তালে এটা দেওয়ার বিষয়খানা মাথায়ই ছিল না তার। প্রচুর চাপে কেটেছে আজকের দিনটা। তার অপজিট আসনে যেহেতু সমীরণ লড়বে মন্ত্রী হবার স্বপ্নটা অতীব সহজে পূরণ হবে না। একটার পর একটা চাল চেলে যাচ্ছে সমীরণ। আজ মন্ত্রীসভার একটা মিটিংয়ে সমীরণ সবার সম্মুখে বলে বসেছে যার ছোট ভাই রাত বিরেতে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে সে নেতা হবার যোগ্যতা কীভাবে রাখে? সাথে একটা ছবিও দেখায় সে। ছবিটাতে স্পষ্টত প্রত্যয় মৃন্ময়ীর হাত ধরে টানছে। দেখেই যে কেউ বুঝবে এতে মেয়েটার বিন্দুমাত্র সম্মতি নেই। ঘটনাস্থলে মৃন্ময়ীকে প্রত্যয়ের প্রেমিকা বলে ধামাচাপা দিয়েছে প্রহর। কিন্তু সমীরণ উঠেপড়ে লেগেছে তাকে সরাতে। সমীরণকে দমানোর নিমিত্তে খেলার গুটিটা তার ধরে রাখতেই হবে।
শপিং ব্যাগটা নিয়ে নিচে আসল প্রহর। তাকে দেখেই নিশাতের মনোক্ষুণ্ণ হলো। তখন প্রশ্নের জবাবে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে আর থামে নি সে। সোজা চলে এসেছে। তাকে কিছু বলার থাকলে প্রহর ভাই তৎক্ষনাৎ আঁটকাত। নিশ্চয়ই তনুজার জন্যই আসা। বক্ষস্থলে জ্বলন সৃষ্ট হলো। উন্মুখ চেয়ে থাকল নিশাত সামনের দিকে। তনুজা লাফিয়ে উঠার কার্যের ইতি টেনেছে দ্রুতগতিতে। পায়ে পায়ে চলে গিয়েছে প্রহরের সামনে। নির্ভেজাল মনে রসিয়ে রসিয়ে বলছে,
” নেতাসাহেব! এখন আসার সময় হলো আপনার? কখন এসেছি জানেন? আধাঘন্টা হবে। ”
প্রহরের হাতের শপিং ব্যাগে চোখজোড়া নিবদ্ধ করে প্রশ্ন করল পুনশ্চঃ,
” এটাতে কী?”
তনুজার চটাংচটাং কথার ধাঁচে ভালোই বুঝা যাচ্ছে প্রহরের সাথে বেশ স্বচ্ছন্দ ভাব তার৷ অল্পস্বল্প রাগে নিশাতের অক্ষিপটে লালের আস্তরণ জমতে লাগল। কান্নার ডেলা উঠে এসেছে কণ্ঠনালি পর্যন্ত। টন টন করছে সমগ্র দেহ।
প্রহর চাইল না ওর দিকে। তনুজার চোহারায় চক্ষুদ্বয় স্থির রেখেই তারস্বরে হাঁক ছাড়ল,
” নিশু এদিকে আয়। ”
বিলম্ব বিহীন নিশাত রুষ্ট মুখে এগিয়ে আসল। প্রহর এইবার নজর ওর দিকে রেখে শান্ত গলায় বলল,
” আজ এটা পড়িস।”
তনুজা ফোঁড়ন কাটল,
” কী এতে?”
” শাড়ি। ”
” কিন্তু আমরা তো শাড়ি অর্ডার দিয়ে ফেলেছি নেতা সাহেব। চলে আসবে এক্ষুণি। ”
প্রহর ঘন ঘন কুচকে কালো ভ্রুঁ জোড়া অল্প উঁচিয়ে প্রশ্নাত্মক বাক্য ছুঁড়ে মা*রল,
” কোন রঙের?”
বিচলিত হলো না তনুজা। বরং শ্যামবর্ণ আদলে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে চেয়ে জবাব দিল,
” সবুজ। ”
” নিশুকে সবুজ পড়লে শেওড়া গাছের পে**ত্নী মনে হয়। আপনারা ভয় পেয়ে যাবেন। ওর জন্য হলুদই ভালো। আপনারা বরং সবুজ পড়ুন। আপনাকে সুন্দর মানাবে। ”
নিশাতের কর্ণদ্বয় ঝা ঝা করে উঠল। শপিং ব্যাগটা জোরে টান দিয়ে নিয়ে নিল প্রহরের হাত থেকে। নিচে ছোট ফুপির রুমের দিকে যেতে যেতে মুখে অনুচ্চারিত শব্দটা মনে মনে তিনবার উচ্চারণ করল প্রহরের উদ্দেশ্যে,
” চরি***ত্রহীন,চরি**ত্রহীন,চরি**ত্রহীন। ”
____________________________________
ঊষা সবুজ জামদানী পরেছে। মাথায়, কানে,হাতে রজনীগন্ধাও গোলাপের অর্নামেন্টস। ফুলের সুভাস বারংবার ওর হৃদয় নিংড়ে দিতে উদ্যত হয়েছে। মন্থর গতিতে বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে এলো সে। প্রত্যয় ডাক পাঠিয়েছে। যেতেই ক্লান্ত প্রত্যয় ওর হাত ধরতে চাইল। সাবধান করল সে,
” ভাইয়া! হাতে মেহেদী দেওয়া। ”
প্রত্যয় সরু চোখে তাকাল। নিরাসক্ত কণ্ঠে বলে,
” আচ্ছা আমার সাথে আয়। ”
” তোমাকে ক্লান্ত লাগছে। মেহেদী দেওয়ার ওখানে দেখি নি তোমাকে। এখানে কেন ডেকেছ?”
” তোকে একটা জিনিস দেখাব। ”
” কী?”
প্রত্যয় ধীর পায়ে ঊষার পশ্চাতে এসে দাঁড়াল। ওর আঁখিদুটিতে হাতের দেয়াল তুলে দিয়ে লহু স্বরে জিজ্ঞেস করে,
” তুই কী দৃষ্টি ছাড়া আমি যেই পথে তোকে নিয়ে হাঁটব, সেই পথে হাঁটতে রাজি?”
ঊষার দ্বিধাহীন কণ্ঠ,
” রাজি। ”
” তাহলে চল। ”
আস্তে আস্তে পা ফেলে কয়েক কদম হাঁটল ঊষা। তার সঙ্গে হাঁটল তার পরাণ জুড়ে বসবাসরত মানুষটা। আহা! এভাবেই যদি প্রত্যয়ের বাহুতে বন্দিনী হয়ে,ভালোবাসায় বন্দিনী হয়ে পাড়ি দিতে পারত ও বহু বহু দূর! কিন্তু তা যে অসম্ভব! মৃন্ময়ীয় সাথে কথা হয়েছে ওর। প্রত্যয়কে আর কাঁদতে দিবে না ও। এই একটা দিনের জন্য,মৃন্ময়ীর সাথে সাক্ষাতের জন্য অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে ঊষা।
” ভাইয়া চোখ মেলব?”
” হ্যাঁ। ”
ঊষার চোখের আয়নায় প্রদর্শিত হলো একটা দোলনা। দোলনাটার দুইপাশ সবুজ লতাপাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো। ঠিক যেমন রাজকুমারীদের হয়। বিস্ময় লুকাতে অপারগ হয়ে আশ্চর্য নেত্রে তাকাল প্রত্যয়ের মুখে। বিনিময়ে প্রত্যয় বেকায়দায় হাসল। তারিয়ে তারিয়ে বলে উঠল,
” এভাবে কি দেখছিস? আয় দোলনায় বসবি। ”
অবাকতার ঘোরে নিমজ্জিত ঊষা। প্রত্যয়ের সাথে আরও দুই পা বাড়িয়ে দোলনায় বসল। প্রত্যয় দাঁড়াল পেছনে। ঊষা ঘাড় বাঁকিয়ে আচ্ছন্নভাবে প্রশ্ন করল,
-“এই দোলনাটা তুমি বানিয়েছ ভাইয়া?”
-” তোর জন্য। তোর মনে আছে স্মরণিকা নিবাসের দোলনাটার কথা? চড়ার জন্য সারাক্ষণ পা*গল হয়ে থাকতি। কিন্তু আমি দিতাম না। ”
-” হ্যাঁ। ছোট থেকেই ত্যাড়া মানুষ তুমি। ”
প্রত্যয় বাঁকা হেসে বলল,
-” ইচ্ছে করেই দিতাম না। তোর রাগী মুখটা দেখতে অসম্ভব ভালো লাগত।
বলেই ফের হাসল প্রত্যয়। পরক্ষণেই ডাকল গাঢ়,নরম স্বরে,
-” ঊষা!”
ঊষার বুকে ঘাপটি মে*রে থাকা উত্তেজনা তরতর করে বেড়ে গেল। অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করল,
-” বলো ভাইয়া। ”
-” তোর মনে আছে একদিন দোলনায় বসে তোকে একটা কথা বলেছিলাম আমি? ”
-” কোন কথাটা?”
-” বর আর বউয়ের ছবি এঁকেছিলাম আমি। মনে পড়েছে? ”
পুরোনো ক্ষত তাজা হয়ে উঠল ঊষার। মনে পড়ে গেল সেদিন প্রত্যয়ের বলা কথাটা-“ তোর জামাইয়ের নাম প্রত্যয় এহসান। ” নিষ্প্রভ কণ্ঠে আস্তে করে প্রতুত্তর করল,
-” আছে। ”
-” তোর কি মনে পড়ে আমি বলেছিলাম, সেই বউটা তুই,পাশের বরটা আমি। ”
-” দুষ্টমির ছলে বলেছিলে তুমি। ”
-” দুষ্টমি মনে হয়েছে তোর?”
-” হ্যাঁ। নয়ত মৃন্ময়ী নামের মেয়েটা কি তোমার নিশিরাতের কষ্টের কারণ হত?”
প্রত্যয় একটুও থমকালো না,হোঁচট খেল না। কায়দা করে এড়িয়ে গিয়ে উত্তর দিল,
” কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না৷ তুই চোখে যা দেখেছিস তা মেকি হতে পারে। আড়ালে সত্যটা হতে পারে অন্যকিছু। বিয়েটা তুই করিস না। ”
ঊষা পাল্টা প্রশ্ন করল,
” কেন করব না?”
পেছন হতে সামনে এসে দাঁড়াল প্রত্যয়। হাঁটুগেড়ে বসে দুটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অশ্রুসজল চক্ষু মেলে ধরল। নিভন্ত তার কণ্ঠস্বর,
” তুই কিছু বুঝতে পারছিস না ভোরের পাখি?”
” বুঝতে পারছি। তোমার মনে আমার জন্য মায়া জেগেছে। আমি চলে যাব ভেবে শূন্যতার ভয় হচ্ছে। চিন্তা করো না ভাইয়া,খুব জলদিই তোমার খুশি তোমাকে ধরা দিবে। ”
প্রত্যয় নিস্তেজ, অশ্রুসিক্ত বাক্য আওড়ায়,
” এটাই বুঝেছিস তুই? ”
” হুম।”
” বিয়েটা করিস না প্লিজ। ”
ঊষার অত্যন্ত স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করছে। প্রত্যয়কে অনুরোধ করতে মন চাইছে,” একটা বার কি ভালোবাসি বলবে ভাইয়া? ”
মুখে বলল,” তোমার কী সমস্যা ভাইয়া?”
প্রত্যয় মাদক হেসে জবাবে বলল,” কারণ আমি চাই তুই সারাজীবন আমার ভোরের পাখি হয়ে থাক। তুই অন্য কারো ঘুম ভাঙানো পাখি হবি এটা আমি সহ্য করতে পারব না। ”
ঊষা ভয়ার্ত মুখে প্রশ্ন করল দৈবক্রমে,
” তুমি না মৃন্ময়ীকে ভালোবাসো ভাইয়া? মাথা ঠিক আছে তোমার? কীসব বলছো? এসবের মানে কী?”
” ছোট থেকেই তুই আমার ভালো লাগা ছিলি ঊষা। তোকেই চেয়েছি আমি,তোকেই চাই। আমার তোকেই লাগবে। ”
#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দিনে দেওয়ার কথা। কিন্তু বাসায় মেহমান ছিল। সন্ধ্যার দিকে লিখতে বসেছি,বড় পর্ব লিখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। পরবর্তী পর্ব পাবেন একদিন পর।)