প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব ৩৫(প্রথম অংশ)

0
1760

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৩৫ ( অর্ধাংশ)

এক গ্লাস নয় বরং এক জগ পানি নিয়ে নিশাত হাজির হলো তার ঘন ঘন রূপ পাল্টানো প্রহর ভাইয়ের দোরগোড়ায়। দরজা বন্ধ। খানিক সময় আগেই না কঠিন মুখে পানি চেয়ে কড়া নির্দেশ করল! অথচ এখন দরজা লাগানো ভিতর থেকে। গিরগিটি না-কি প্রহর ভাই? এই ভালো,এই খারাপ। এই বুঝি শরতের আকাশে উড়ন্ত শুভ্র সুখে আাচ্ছাদিত মেঘ,আবার বুঝি কৃষ্ণাভ মেঘের দেশের পি**শাচ রাজা। মানুষ চেনা,বুঝা ভয়ং–কর দুরূহ।

নিশাতের অন্তরের গহীনে ঢিমঢিম,ঝমঝম করে ঢাকঢোল বাজছে। চিন্তা হচ্ছে আব্বা কি সত্যিই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে? ওর ক্ষুদ্র বয়স থেকে জানা তথ্য মোতাবেক রাজনীতি বিশেষ একটা পছন্দ করেন না আব্বা। তাহলে এটা কি করে সম্ভব? না জানি কেমনতরো কথা শোনাতে আলাপ আলোচনার কথা বলে ডাকিয়েছে প্রহর ভাই? চিকন হাত দিয়ে কাঠের দরজার ওপর কয়েকটা টোকা দেয় নিশাত। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যায়। গমগমে একটা আওয়াজ আসে, ” আয়। ”

চোখের পলক ঝুঁকিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে ভিতরে আসে সে। চোখের কোণা দিয়ে দরজার দিকে তাকায়। খেয়াল করল দরজা লাগিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে গরম মেজাজের মানুষটা। চাহনি মেলে রেখেছে ওর পানে নিষ্পলক, স্থির। দ্রুত গতিতে নজর সরিয়ে জগটা বেড সাইডের টেবিলের ওপর রাখল। মাথা নত করেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিল। এই মাথা এখন তোলা যাবে না। মাথা তোলা মানেই, হাতছানি দিয়ে বিপদ**কে আলিঙ্গন করবার নিমন্ত্রণ জানানো। অমোঘ সত্য কথা হলো, ওর অমন ছোট বুকে অত বড় বি**পদ আঁটবে না। সুতরাং আলিঙ্গন করার বিষয়খানা নিতান্তই তুচ্ছ, একেবারেই বাতিল। গোপনে,নিঃশব্দে প্রলম্বিত শ্বাস টেনে নিয়ে ওই যে বুকের কোথাও ঘাপটি মেরে বসে অবিরত লাব ডাব শব্দ করে চলেছে? সেই নিরীহ অঙ্গকে বাহবা দিল। ছোট কলিজা বড় করল। অতঃপর ঢিমে ঢিমে তালে এগিয়ে চলল দরজার দিকে। নিশাত যেদিন থেকে জানল প্রহর ভাই তাকে চায় সেদিন থেকে ভিতরে ময়ূর নাচে পেখম মেলে,প্রেম প্রেম পায় ভীষণ, আর কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ সাহসও উঁকিঝুকি দেয় তার মনমাঝারে।

প্রহর দরজায় হেলান দিয়ে, সরু চোখে চেয়ে প্রশ্ন করল,
” কোথায় যাচ্ছিস? আর মাথা নুইয়ে রেখেছিস কেন? আজ কি তোর বিয়ে? শরম লাগছে? ”

চারটা প্রশ্ন! ক্রমাগত প্রশ্নের তোপে দাঁড়িয়ে পড়ল নিশাত।মাথা নাড়াল বা দিকে একবার,ডানদিকে একবার। শুনল
অসহিষ্ণু গলা,

” মাথা নেড়ে কোনটার উত্তর দিলি? মুখে কথা বলতে পারিস না?”

মৃদু ধ*মকে অল্প মনোক্ষুণ্ণ হলো নিশাতের। গত দুয়েক দিন ধরে বেশ আহ্লাদী হয়ে উঠেছে সে। প্রহরের তেজের হল্কায় আ**হত হতে নারাজ সে ভীষণ। ভালোবাসলে কি আঘা*ত করা যায়? এমন করে রসকষহীন গলায় কথা বলে কেউ? সে তো শুনেছে ভালোবাসলে প্রেমিকরা কাব্যিক কাব্যিক কথা শোনায়। ওদের ক্লাসের শেফালি নামের মেয়েটা যে প্রেম করে তার প্রেমিক কত মোহনীয় চিঠি লিখে,ছন্দ লিখে,গান শোনায়,প্রেম প্রেম মিষ্টি কথা বলে। ক্লাস এইট থেকে প্রেম করে শেফালি ওদেরই ক্লাসের এক ছেলের সাথে। একদিন তাকে আর শিমুলকে ভাঁজ করা একটা কাগজ দেখাল। লাজুক গলায় বলে, ” এইডা আমার প্রেমিক দিছে। দেখ, কি ছন্দ লেখছে আমার লাইগ্যা। ” শিমুল কাগজটা ছুঁ মে**রে নিয়ে জোরে জোরে ছন্দটা পড়েছিল,❝ তুমি ফুল আমি পাখি। চলো দু’জন মিলে হাঁটি। জান..বলো না একবার ভালোবাসি। ❞

সম্মুখে জলজ্যান্ত উপস্থিত শ্যামবর্ণের পুরুষটা নিশাতকে অমন মধুমাখা বাক্য কেন শোনায় না? কথা বলবে না ও। এই লোক সর্বদা ওকে অপ***মান করার সুযোগ হারিকেন দিয়ে খুঁজে বেড়ায়। একবার তো বলল থাপ্প**ড়েই নাকি ভালোবাসা! থা**প্পড় মে**রে গাল ব্য–থা করে দেওয়া ভালোবাসা নাকি গালে চুমু দিলে ভালোবাসা? এসব কবে বুঝবে এই কাঠখোট্টা লোকটা? কবে দিবে চুমুটুমু?

” কী ভাবছিস তুই?”
সন্দিগ্ধ কণ্ঠস্বর। নিশাত হতচকিত হয়ে পড়ল। পরক্ষণেই মিনমিন করে প্রতুত্তর বলল,
” কিছু না। ”
” যাহ গ্লাসে পানি ঢাল। এক জগ কেন আনলি? তোর কি মনে হয় আমার ভিতর শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে আছে? ”
নিশাত আবারও মাথা নাড়ালো। এ যাত্রায় চরম ক্ষেপে গেল প্রহর৷ খপ করে নরম চিবুকটা ধরে ফেলল। উপরে তুলে আদেশ করে,
” আমার দিকে তাকা। ”
নিশাতের লম্বা পাপড়িগুলো অবাধে ছুঁয়ে আছে ত্বক। অভ্যন্তরে জেগেছে আড়ষ্টভাব। চোখ না-কি কথা বলে? তাকালে যদি প্রহর ভাই ওর চোখের কথা জেনে নেয় তবে কী হবে? আলগা করবে না সে পল্লবজোড়া। কারণ চুমুর মতো মার**ণাস্ত্র সহ্য করার শক্তি এখনও হয় নি তার কোমল দেহে। মিইয়ে গিয়ে আমতা আমতা করল ও,

” নিচে…মেহমান আছে। আমাকে ছোট ফুফু ডেকেছিল আসার সময়। আমি যাই। ”

” দরজা খুলতে পারলে যা। ”

প্রহরের নিরলস,ভারিক্কি গলা শুনে ভারী অবাক হলো ও। চিন্তায় মগ্ন হলো মন মস্তিষ্ক। সটান দাঁড়িয়ে আছে সেই পুরুষ। মুখচ্ছবি বড্ড অস্বাভাবিক। কালো কুচকুচে মণিজোড়ার চাহনি তুখোড়। নিশাত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলল,
” তুমি সরো ভাইয়া। ”
নিশাতকে চমকে দিয়ে প্রহর অতীব শান্ত, কোমল,ঠান্ডা গলায় বলল,
” সরে যাব সুইটহার্ট। তোকে রুমে বন্দী রাখার পারমিট নেই আমার কাছে। আগে কিছু কথা বলে নিই? মনোযোগ দিয়ে শোন। ভুল করেও দরজা খোলার চেষ্টা করবি না। তোকে মা*রব না,ধ*মকও দিব না। ”

প্রহর দরজার কাছ থেকে সরে আসল। হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল,

” পরশু দিন তোদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব যাবে। মামুজান,তোর ভাই এক পায়ে খাড়া হয়ে না করবে এটা শিউর। কিন্তু তোর মুখ থেকে যেন কোনো ❝ না❞ না আসে। যদি বাপের ভয়েও না করিস আমি তোকে শেষ করে দিব। এতকাল,বছর অপেক্ষা করেছি তোর মনে আমার জন্য ভালোবাসার। কারণ আমি জানতাম তুই রাজি না থাকলে তোকে আমার বানানো সম্ভব না৷ তাই সারা দুনিয়া উল্টে গেলেও তোর মুখ থেকে বের হতে হবে মজুমদার বাড়ির সবার সামনে তুই আমাকে চাস। ঠিক আছে? ”

নিশাতের শরীরের রক্ত চলাচল প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। আব্বার সামনে,সৌরভ ভাইয়ের সামনে ভালোবাসার কথা বলতে হবে ওকে? বুক কাঁপছে তার। প্রহর পানির গ্লাস হাত থেকে নামিয়ে সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করল,

” ভালোবাসিস তো? নাকি অল্প বয়সের আবেগে পা***গল বানিয়ে ছেড়ে দিবি আমাকে? এমনটা করিস না তিলবতী। পা*গল হতে রাজি আছি কিন্তু তোকে ছাড়তে না। ”

#চলবে,,!

( এটা ৩৫ নং পর্বের অর্ধেক পর্ব। রাত বেশি হয়ে গিয়েছে। লিখতেও বসেছি দেরিতে। তাই অর্ধেক দিলাম। এই পর্বের বাকি অংশটা আমি কালই দিয়ে দিব। যেহেতু দীর্ঘ দীর্ঘ সময় পরে আমি এই গল্পটা লিখি অনেক ভুল -ত্রুটি থাকতে পারে। ভুলগুলো আমাকে ধরিয়ে দিবেন। আজ রিচেইকও সম্ভব হয় নি। বানান ভুল থাকলে কমেন্টে বলে দিবেন আমি শুধরে নেবো। এবার নিঃসন্দেহে গল্পটা পড়তে পারেন আপনারা। ভালো থাকুন,ভালোবাসা🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here