#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৩২
‘ দিয়েছি। ‘
দৃঢ়,শান্ত গলার সংকোচহীন উত্তর। প্রত্যয় অল্প সময়ের জন্য কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলল। সচেতন দৃষ্টি মেলে তাকালো ঊষার পানে। ঈষৎ কিরণে ঝলমলিয়ে চক্ষুগহ্বরে ধরা দিচ্ছে ঊষার মুখের কাঠিন্য রূপ। কণ্ঠের সমস্ত উত্তাপ কমিয়ে প্রশ্ন করল,
‘ তুই হঠাৎ করেই বিয়েতে রাজি হলি কেন?’
ঊষা বইটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে স্মিতহাস্যে অনুরোধ করে, ‘ পাশের চেয়ারটায় বসো ভাইয়া। ‘
‘ বসব না। আগে জবাব দে। ‘
আবারও রাগ এসে জড়ো হয়েছে প্রত্যয়ের গ্রীবাদেশে। ঊষা শীতল গলায় বলল,
‘ জবাব দিচ্ছি তো। তুমি আগে বসো না। ‘
গা থেকে জিন্সের কালো জ্যাকেটটা খুলে ঊষার পরিপাটি বিছানার উপর ছুঁড়ে মা”রল প্রত্যয়। পরনে রয়ে গেল পাতলা ছাঁই রঙের টি-শার্টটি। প্রলম্বিত, উষ্ণ নিঃশ্বাস নাসারন্ধ্র গলিয়ে বের হয় বড্ড আওয়াজ করে। ধপ করে চেয়ারে বসে চুলগুলো মুঠোয় পুড়ে নেয়। প্রচন্ড জোরে জোরে টেনে ঠেলে দেয় পেছনে। ঊষার চোখ ছানাবড়া। আঁতকে ওঠে,
‘ জেদ চুলের ওপর দেখাচ্ছ কেন? চুল ঝরে যাবে সব। কী লাভ মাসে দশবার জেন্স পার্লারে গিয়ে শেষে যদি মাথায় চুলই না থাকে!’
রক্তাভ নেত্রে তাকায় প্রত্যয়। বলল,
‘ দশবার না একবার যাই। ‘
‘ ওটাই। গেলেই হলো। এখন মাথাটা ঠান্ডা করো। মালিশ করে দেবো আমি?’
‘ না। লাগবে না। পরে অভ্যাস হয়ে যাবে। অন্য বাড়ি থেকে এসে মালিশ করে দিতে পারবি না। অভ্যস্ত হয়ে গেলে তোর হাতের ছোঁয়ার জন্য তপড়াতে হবে আমার। ‘
কণ্ঠে বেদনা বোধ পরিস্ফুটিত। প্রত্যয়ের অভিমান উপেক্ষা করে ঊষা খোঁচা মা””রে,
‘ তোমার এমন কত অভ্যাসেই আমি আছি ভাইয়া। এই যেমন তোমাকে সকালে কফি করে দেওয়া, তোমার রুম গুছিয়ে দেওয়া, বুয়া যেন তোমার বিয়ার এর বোতলগুলো খাটের তলানি হতে খুঁজে না পায় ঝাড়ু দিতে গিয়ে, তাই ডাস্ট এলার্জি নিয়েই নিজে কোমরে ওড়না বেঁধে ঝাড়ু দেওয়া। এই অভ্যাসগুলো কীভাবে ছাড়বে? এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা, তোমার আন্ডারওয়্যার গুছিয়ে দিবে কে? আমি না থাকলে তোমার গুছাতে মনে থাকবে নাকি সবসময়ের মতো ফ্লোরে একটা,বিছানায় একটা এভাবে ফেলে রাখবে? এমনটা করো না ভুলেও। বুয়া এমনিতেই তোমার জন্য ধারে ধারে ভোট চাইবে বলে ওইদিন এসে বলল, ” আপা সুন্দর দেইখা দুইডা কথা শিখান না আমারে। আমি যেই বাড়িডিত কাম করি,তাদের হুনাইয়া কমু বড় ছ্যার,ছোডো ছ্যারেরে ভোট দিত সামনের ইলেকট্রনে।” হাতের নাগালে পেলে এ বাড়ি,ওই বাড়ি করে পুরো ঢাকা শহরে কুখ্যাত বানিয়ে ফেলবে তোমাকে। প্রচার করবে উনার শুদ্ধতম স্বরে,” মহল্লাবাসী,শহরবাসী দেইখা লন আমার হাতে কিতা৷ প্রত্যয় ভাইয়ের জাইঙ্গা পাইছি আমি কোমর ভাইঙ্গা। এবারের মার্কা সেরা মার্কা,প্রত্যয় মিয়ার জাইঙ্গা মার্কা। ”
ঊষার হাস্যকর কথাগুলো শুনেও দৃষ্টি নড়বড়ে হলো না প্রত্যয়ের। আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে।
‘ আমি কিন্তু সিরিয়াস। তোমার মনে নেই। একবার তোমার ছোট প্যান্ট নিয়ে বুয়া সারা বাড়ি,বডিগার্ড, দারোয়ান সবার কাছে ঢোল পিটাচ্ছিল “ছোডো ছ্যারে আবুইদ্দাদের লাহান ছোডো হাপ্পেন পরে। ”
বাক্যটার সমাপ্তি টেনেই অট্ট হাসিতে লুটিয়ে পড়ল ঊষা।প্রত্যয় বক্র চাউনি নিক্ষেপ করে রেখেছে। চাহনি নিষ্পলক,স্থির। ঊষা চেয়ার ছেড়ে দিয়ে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ কী হয়েছে? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?’
‘ তোকে দেখছি। তোর হাসি দেখছি। বিয়ের ফুল তোর মনে এত জলদি ফোটে গেল! পাত্র কি দেখতে বেশি সুন্দর? বছর গড়ানোর পথে,আজ তোকে এতটা সুন্দরভাবে হাসতে দেখছি। ‘
শ্লেষাত্মক কণ্ঠস্বর বাজছে ঊষার শ্রবণগ্রন্থিতে। ও হলফ করে বলতে পারবে প্রত্যয়ের চাহনি,কণ্ঠ কিছুই স্বাভাবিকের কাতারে পড়ছে না এই মুহূর্তে। মিশে আছে ঝাঁঝ, পরিহাসের কড়া গন্ধ। হড়বড় করে বলল সে,
‘ এমন কিছুই না ভাইয়া। ‘
প্রত্যয় ওর হাতে স্পর্শ আঁকল। আলতো করে ধরল। চেয়ারে বসিয়ে খানিকটা কাছে গিয়ে অবিচলিত, নরম কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ তাহলে বিয়েতে রাজি কেন হলি?’
ঊষার অভ্যন্তরের যন্ত্রণার জোয়ার থামিয়ে মুখে মৃদু হাসি টানে। হাসিটার জায়গা হয় ঠিক ফ্যাকাশে অধরের কোণে।
সর্বদার ন্যায় আর্দ্র স্বরটা লুকোতে সময় নেয় সামান্য। চেহারায় চনমনে ভাব এনে উত্তর সাজায়,ব্যক্ত করে,
‘ বিয়েতে রাজি হবার অনেক অনেক কারণ আছে। বিয়েতে রাজি হলে জামাইয়ের সাথে আমিও আমার পছন্দের একটা দেশের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারব। এটা গেল প্রথম কারণ। তারপর আসি সুন্দর একটা ব্যাপারে। আমি আর বছর দুটো গেলে ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে যাব,জামাইও ডাক্তার। আমাদের ভবিষ্যৎ বাচ্চাকাচ্চাও ডাক্তার হবে। অবশেষে আমরা পরিণত হতে পারব একটা ডাক্তার ফ্যামিলিতে। এটা আমার ড্রিম ছিল। তাছাড়া বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলা উচিত। কারো ভালোবাসা, সঙ্গ,সুখ,শান্তি পেতে হলে, অন্যের জন্য নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হলেও বিয়ে করা প্রয়োজন। এসব ভেবেই আমি রাজি হয়ে গিয়েছি। আকদ হলেই চলে যাচ্ছি না। মেডিক্যাল কমপ্লিট হলে তবেই শ্বশুর বাড়িতে ট্রান্সফার হবো। ততদিনে আমি তোমাকে একটা বিয়ে করিয়ে দেবো যেন আমাকে ঘিরে থাকা তোমার বদঅভ্যেসগুলো দূর হয়ে যায়। ‘
হাতে কঠিন চাপ অনুভূত হওয়া মাত্র ঊষা দুর্দমে প্রত্যয়ের চাহনিতে আবিষ্ট হয়ে পড়ল। শানিত চাহনি। লালচে মণিজোড়া হতে ঠিকরে রক্ত ঝরা বাকি কেবল। ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ডাক দেয়, ‘ ভাই য়া। ‘
প্রত্যয় চৈতন্য ফিরে পায়। চোখ বুঁজে ফের মেলে। রাগান্বিত কণ্ঠে আদেশমূলক বাক্য,
‘ তুই এক্ষুণি গিয়ে বড় আব্বুকে না করে আসবি। ‘
‘ কেন?’
‘ যা বলেছি সেটা করবি। আগে পড়াশোনা তারপর বিয়ে। ‘
‘ আমার সমস্যা নেই। আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত। এছাড়া বছর দুয়েক আমি এখানেই থাকব তোমাদের সাথে। অভ্যাস ছাড়ার ভয় পাচ্ছ? কয়েক বছর পর্যন্ত অভ্যাসের মেয়াদ আছে। তারপর চলে যাব। ‘
‘ সাথে আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যাবি। এমনটা হতে দেবো না আমি। ‘
বিড়বিড় করে উঠে দাঁড়ায় প্রত্যয়। ঊষা শেষোক্ত কথাটা শুনে নি স্পষ্টত। প্রত্যয় দরজার চৌকাঠে গিয়ে ফিরে আসে। জ্যাকেটটা বিছানা থেকে তুলে নেয়। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
‘ তুই বিয়ের জন্য প্রস্তুত তাই না? যখন থেকে ত্যানা গায়ে প্যাঁচিয়ে মানুষের কোলে চড়ে বেড়াতি, তখন থেকেই চোখে চোখে বড় করেছি তোকে। আমার একটা দায়িত্ব আছে না আমার ভোরের পাখি ঠিক কতটা প্রস্তুত বিয়ের জন্য সেটা পরখ করে নেওয়ার? কাল সারাদিন তোর প্র্যাক্টিস ডে চলবে। সকালে উঠেই গোসল করে একটা শাড়ি পরে নিবি। ভেজা চুলে আমার রুমে এসে আমাকে ডেকে তুলবি। আমি নাস্তায় কী কী খাব লিস্ট করে রান্না করবি,আমার পাশে বসে আমাকে সার্ভ করবি। বাকিটা দিনেই বলব। আপাতত এগুলোই মাথায় রাখ। নয়ত তোর বিয়েতে আমি ভেজাল বাঁধিয়ে দিব। ‘
গটগট করে বেরিয়ে গেল প্রত্যয়। ঊষা স্তব্ধ,ভাষাহীন। শরীরটা জমে গিয়েছে। বিহ্বলিত অতীব। এ যেন পুরোনো প্রত্যয়কে দেখতে পাচ্ছে ও। মৃন্ময়ীর প্রেমে মজনু হওয়া প্রত্যয় নয় এটা, এই ছেলে ওর প্রত্যয় ভাইয়া। বিয়েতে নাকচ করতে,ঘোর বিরোধিতা করতে বাবার কক্ষে প্রবেশ করেছিল সে। প্রসঙ্গ তুলতেই মোশতাক সাহেব কড়া গলায় বললেন বিয়েটা করতেই হবে। তিনি আর না শুনবেন না। উনি চান না প্রত্যয়ের জন্য ওর জীবন ধ্বংস হয়ে যাক। বাবা হয়ে এটা মানতে অত্যন্ত নারাজ উনি। তবুও ঊষা দমে নি। বাড়ি ছাড়বে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে চলে আসতে নিলে মোশতাক সাহেব ভরাট কণ্ঠে জানান,
‘ প্রহর,প্রত্যয় কাউকেই আমি এমপি আসনে বসতে দেবো না,তুমি বিয়েটা না করলে। তোমার বাবা কতটা ভালো,খারাপ তা তুমি জানো। নিজের মেয়ের ব্যাপারে আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক স্বার্থপর আমি। প্রত্যয় তোমাকে ভালোবাসে না,ওর জন্য জীবন একা পার করা নিঃসন্দেহে বোকামি। ‘
ঊষা অবাক হয় নি। বাবা এমনই। রাজনীতি, স্বার্থপরতা যেন তাঁর দম্ভ। ওকেও ভালোবাসে এটা নিরন্তর সত্য। ওকে রাজি করানোর জন্য ভাইদের স্বপ্ন বলি দেবে এটাও মিছে নয়। নিস্তেজ কণ্ঠে বলে,
‘ ভাইয়াদের এ পথে এনে তুমি পথহারা কেন করবে বাবা? তুমি বরং আমাকেই ভেঙে দাও। ‘
__________________________________
রোকেয়া গত রাতের ময়লা থালাবাসন নিয়ে পুকুরঘাটে এসে বসলেন। ট্যাংকের পানিতে ধুয়ে স্বস্তি পান না উনি। ফলপ্রসূ থালাবাসন, হাঁড়ি পাতিল এখানেই ধোয়ার কাজটা শেষ করেন। পাড়ে কারো পায়ের শব্দ কর্ণপাত হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে উপরের দিকে চাইলেন। টুনির আম্মা এসেছে।
‘ কিছু কইবা টুনির আম্মা? আজ সক্কালে আইলা?’
টুনির আম্মা চিন্তাগ্রস্ত কণ্ঠে বলে,
‘ কমু কি-না ভাবতাছি ভাবী। ‘
রোকেয়ার হাত থেমে গেল। ভাবুক হয়ে বললেন,
‘ কী কথা?’
টুনির আম্মা নিম্নকণ্ঠে বলে উঠল,
‘ গত কাইল টুনির আব্বা বাড়ি ফেরবার পথে নিশুরে বাসস্ট্যানে দাঁড়ায় থাকে দেখল। স্কুলের টাইমে মাইয়া ওইখানে কী করতাছিল ভাবী? কইয়া গেছে আপনারে? যুগ ভালা না। এমনে এ বাড়িত একটা কলঙ্ক লাইগা আছে,মাইয়াডা যদি বখে যায়! এইজন্য আপনেরে কইতে আইলাম। ‘
রোকেয়ার চেহারায় বিস্ময়ের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। ভাবে এমন যেন তিনি মোটেও অবাক হন নি। উল্টে বললেন,
‘ আমিই পাঠাইছি নিশুরে। কাম আছিল। ‘
অপ্রসন্ন হলেন টুনির আম্মা।
‘ ওহ!’
‘ হ। ‘
গ্রামে কথা বিলি করতে অতিশয় পটু সে। জবাবটা তার ভালো লাগে নি। বাহ্যিকভাবে স্বাভাবিক রইলেও ভিতরে ভিতরে হুতাশনে পুড়ছেন রোকেয়া। দাঁতে দাঁত চেপে থালা বাসন মেজে বাড়ির দিকে ছুটলেন তড়িৎ গতিতে। রান্না ঘরে রেখে দোতলায় উঠে সোজা নিশাতের ঘরে এসে উপস্থিত হলেন।
শুয়ে শুয়ে মোবাইল নিয়ে প্রহরের কলের অপেক্ষায় নিমজ্জিত নিশাত। অনুভূতিগুলো উন্মাদনায় দিশেহারা হয়ে ছুটছে অন্তরের সর্বত্র। মা’কে ধপধপ শব্দে এগিয়ে আসতে দেখে মোবাইল রেখে অতি দ্রুত উঠে বসল। কিছু বলবার জন্য মুখ খুলতে যাবে সবে,বিনা বার্তায় শক্ত হাতের থাবা বসিয়ে দেন রোকেয়া ওর গালে। চিড় চিড় করে জ্বলে ওঠে গালটা। অশ্রুধারা বইতে থাকে বাঁধাহীন। অপ্রকৃতস্থ দৃষ্টি মেলতেই রোকেয়া আবারও চ*ড় বসালেন। চিবুকে আঙুল ধাবিয়ে গর্জে উঠেন,
‘ বাসস্ট্যান্ডে কেন গেছিলি?’
নিশাত হাপুস নয়নে চেয়ে কেঁদে যাচ্ছে অনবরত। ব্যথায় মুখশ্রী সম্পূর্ণ রক্তিম। রোকেয়ার হৃদয় গলছে না।
‘ তুই প্রহররে পছন্দ করিস?’
মায়ের প্রশ্নে রুহু কেঁপে ওঠে ওর। কথা বলতে পারে না। ডুকরে কাঁদতে শুরু করে। চিবুক ছেড়ে বিছানায় বসে পড়লেন রোকেয়া ক্লান্ত দেহে।
‘ আমি তোর আম্মা। তোর হাবভাব চেনা আমার। প্রহরের বিয়া ঠিক। শরম লাগল না তোর ওরে পছন্দ করতে? লজ্জা নাই তোর? তোর আব্বা জানলে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলব তোরে। সময় থাকতে আবেগ শেষ কর। আবেগ দিয়া দুনিয়া চলব না। আজ থিকা প্রহরের লগে কথা কইবি না। তোর আবেগ আমি ধ্বংস কইরা সাড়মু। ‘
নিশাত নিশ্চুপে, মৌনমুখে মা’য়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মা কী করে এসব জানল ঠাহর করতে পারছে না সে। গাল ব্যথায় দুই হাতে বিছানার চাঁদর খামচে ধরে ঠোঁট ঠোঁট চেপে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে নিঃশব্দে। প্রহর ভাইয়ের প্রেমে পড়ার পর থেকে ওর এত এত দুঃখ কেন পেতে হচ্ছে! মোবাইলটা ভাইব্রেট করে জানান দিচ্ছে লাগাতার মালিককে এখন প্রয়োজন ভীষণ। কম্পনরত হাতে নাম্বার না দেখেই কানের কাছে ধরে।
‘ ভিডিও কল দিচ্ছি। ধরতে এক সেকেন্ড লেইট হলে আমি মহানন্দ গ্রামে এসে তোকে শায়ে**স্তা করব। ‘
বলার আগে,বুঝবার আগেই ভিডিও কল এলো। কাঙ্ক্ষিত মানুষের কল পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখের একেকটা অশ্রুকণা এলেমেলো হাতে মুছতে লাগল নিশাত। পাছে প্রহর ওর কান্নার চিহ্ন না বুঝে যায়। কলটা ধরে মাথা নুইয়ে রাখল। প্রহর ধম**কায়,
‘ মিটিংয়ে সবাইকে বসিয়ে রেখে তোকে দেখব বলে বাহিরে এসেছি। তুই মাথা নুইয়ে রাখলে মুখটা দেখব কী করে? মাথা তোল। ‘
নিশাত আঁড়চোখে প্রহরকে দেখে নেয় এক পল। আস্তেধীরে মাথা উঠায়। নিমিষেই প্রহরের সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্নের সূচনা,
‘ গালে কী হয়েছে তোর?’
নিশাত হাসফাস করতে লাগল। মিথ্যা সাজাতেও দম বন্ধ হয়ে আসছে।
‘ তোর গালে আঙ্গুলের দাগ ভেসে আছে। কে মে**রেছে সুইটহার্ট? ‘
নিরুত্তর সে। শ্রবণ হলো রোষপূর্ণ কণ্ঠস্বর,
‘ তোকে বলতে বলেছি। ‘
নিশাত এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করে, ‘আম্মা। ‘
ব্যস কলটা কেটে গেল। পর পর ডায়াল করলে দেখালো ব্যস্ত।
পিংকির মা মোবাইল হাতে নিয়ে রান্নাঘরে আসল,
‘ আপনার ফোন বাজতাছে ভাবী। ‘
রোকেয়া হাতে নিয়ে প্রহরের নাম্বার দেখে চমকালেন। সরে আসলেন রান্নাঘর থেকে। ” হ্যালো” উচ্চারণ করতেই প্রশ্ন শুনল এমন,” আপনি নিশাতকে মে*রেছেন মামী?”
রোকেয়া হতবুদ্ধি, বিহ্বল হয়ে পড়লেন,” কে বলেছে?”
” প্রমাণ দেখেছি। কেন মা*রলেন মামী?”
সংকোচ, জড়তা জিহ্বায় রেখে রোকেয়া বললেন,
” এটা আমি তোরে বলতে পারমু না বাবা। আমার মেয়েটা নষ্ট হয়ে যাইতেছে। ”
” কী করেছে ও?”
” এ বয়সেই প্রেমে পড়ছে,আমি বুঝি এগুলা ওর বয়সের দোষ। ”
” কার প্রেমে পড়েছে?”
রোকেয়া ভাবলেন প্রহরকে বলে দেওয়া ভালো। এতে সে নিশাতের থেকে দূরে দূরে থাকবে। যেই ভাবনা সেই কাজ,
” ভুল করে ফেলছে। আবেগে তোরে চাইতেছে। তুই ওরে বুঝাইস এসব প্রেম না। ”
” ও আমাকে চাওয়ার আগেই আমি ওকে আল্লাহর কাছে চেয়ে ফেলেছি। বিয়ের প্রস্তাব মজুমদার বাড়িতে যাবে শীগ্রই। আপনারা প্রস্তুত থাকুন। ”
#চলবে,,,!
( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। না ঘুমিয়ে ঢুলুঢুলু চোখে লিখা। পরবর্তী পর্ব আসবে তিনদিন পর। কারণটা প্রতিদিন বলি। তবুও বলছি সাফারাত চৈত্রিকাকে নিয়েও নতুন এক প্রেম অধ্যায় রচনা করতে হচ্ছে আমার।)