প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব ২০

0
1632

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____২০

একে একে গুঞ্জনে সমগ্র মহানন্দ গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল মিষ্টির কথা। মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে,” মজুমদার বাড়ির মাইয়ারে জ্বিনে নিতে আইছে মিষ্টি সমেত।” এরকম কুসংস্কারে রফিক আজম ক্ষেপে আছেন। কে না কে মিষ্টি পাঠিয়ে ফাতরামি করছে অথচ গায়ের লোকজন উদ্ভট কথা প্রচারণা করে বেড়াচ্ছে। নিশাতকে কঠিন পর্যবেক্ষণে রেখেছেন রোকেয়া। তাঁর মতে,নিশাত কোথাও না কোথাও কোনো কু-কর্ম ঘটিয়ে এসেছে নয়ত প্রেম করছে। নইলে এমন করে কে লিখবে! বাদ বাকি মানুষ ক্ষণিকের জন্য বিশ্বাস করলেও তিনি স্বামীর মতোই এসব আজব কান্ডে বিশ্বাসী নন। সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে জেরায় ফেললেন তিনি মেয়েকে,

” বল,মিষ্টি কে পাঠিয়েছে? কোনো ছেলের সাথে চক্কর কাটছিস না তো?”

দো-ষে, বিনা দো*ষে মায়ের এমন কঠোর ব্যবহার ভালো লাগে না নিশাতের। ব্যাপক পী-ড়াদায়ক মনে হয়। মা থাকবে কোমল, মায়ের কণ্ঠ হবে মমতায়ভরা। তার মা এমন কেন? কথায় কথায় কর্কশ আচরণ কেন করতে হবে? সর্বদা সন্দিগ্ধ কেন থাকতে হবে? চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিস্পৃহ গলায় বলল,

” আমি জানিনা আম্মু। তুমি যা বলছো এসবে আমি নেই। ”

রোকেয়া চিন্তিত বেশ মেয়েকে নিয়ে। তর্জনী তুলে বললেন,

” তুই না জানলে তোর নাম কিরে? এখন সবাই তোর নামে কথা ছড়াচ্ছে। এমনিতেই ভ্যাবলা তুই। এখন একথা রটল,আরেক ঘরে কীভাবে দিমু তোরে? কোন ঘরের লোক বিয়াশাদী করিয়ে নিবে? ”

নিশাত ভেবলে উঠল। অন্য ঘর মানে! ফুপুর ঘর ছাড়া ওর পা অন্য কোনো ঘরে এ জীবন থাকতে ফেলবে না সে। অত্যন্ত আবেগি ও। ফলপ্রসূ ছিঁচকাদুনে বিষয়টা তার স্বভাবজাত। চোখের কোটরে অশ্রু জমতে দেরি হলো না খুব একটা।
রোকেয়া চড় মা*রতে উদ্যত হয়েও নিজেকে দমালেন। এটা পা*গলা ঘোড়ার মতোন দাপাদাপি করার সময় নয়। নাজুক হয়ে আওড়ালেন,

” তুই সত্যি বলছিস?”

মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝালো নিশাত। রোকেয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তবুও মন ঠান্ডা করতে পারলেন না। পিংকির শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পর পরই নিশাতের মধ্যে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন উনি। খেতে দিলে খায় না,মনমরা হয়ে থাকে, মনোযোগ কম সবকিছুতে, ভাবে উদাসীন। এসব নিঃসন্দেহে কু ইঙ্গিত করছে। কোনোমতে মেট্রিকের গন্ডিটা পেরিয়ে যাক নিশাত। ততদিনে নজরে নজরে রাখতে হবে। এমনিতেই গ্রামে এখনও মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার রীতি প্রচলিত। কোনো মেয়ে কলেজে পড়তে গেলেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা,কিছু কিছু মহিলারা ফুসুরফাসুর করে ‘ মেয়ের মেলা বয়স। নিশ্চিত এ কারণেই বিয়ে হয় না। ‘ নিজের ভোলাভালা মেয়েটাকে নিয়ে কোনো হেয় মেনে নিতে পারবেন না তিনি। মজুমদার বাড়ির মেয়েদের একটা সম্মান আছে। মাথা উঁচু করে বড় বাড়িতে মেয়েকে বউ সাজিয়ে পাঠাবেন।

কিশোরী বয়সের প্রেমে কাজ করে একরকম উন্মাদনা। বুনো মাতাল গন্ধ বহে চারিধারে। মনে গাংচিল উড়ে বেড়ায়। চোখ -কান উন্মুখ হয়ে থাকে কাঙ্ক্ষিত জনকে এক পলক দেখবার জন্য, তার হৃদয় নিংড়ে তোলা কণ্ঠস্বর একটুখানি শুনবার তরে। মধ্যম আকৃতির কক্ষে জানালার পর্দাগুলো সকালের স্নিগ্ধ পবনে পতপত করে উড়ছে। মস্তিষ্কে অজানা রুমঝুম শব্দ বাজছে নিশাতের। সমস্ত আবেগ জমে জমে বুক ভার ভার লাগছে। চিন্তাগ্রস্ত মন। সেই কাগজের লেখাটা সে দেখেছে। প্রথমত অবলীলায় ভেবেছিল এ কান্ড প্রহর ভাইয়ের,আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো দেখে সারা দেহে শুরু হলো বিছুটির জ্বলন৷ প্রহর ভাইয়ের আগের লেখার সঙ্গে এটার কোনো মিল নেই। তাহলে কে পাঠাতে পারে এসব? মানুষটা প্রহর ভাই কেন হয় না? তাকে এমন করে রাণী বানাবে বলে চমকে দিলেই তো পারত! ওর বুক শুকিয়ে যে মরুভূমি হয়ে আছে সেই খবর কী প্রহরের কাছে পৌঁছায় না? সতেরো বছর বয়সী ম্যাড়মেড়ে নিশাত প্রহর নামক বাজে লোককে ভালোবেসে একটা মধুর ভুল করে ফেলেছে সেটা জানবে সে? জানবে না হয়ত। কারণ ভীতু নিশাতের এত সাহস হয় নি। অপরদিকে যার প্রেমে বিরহিণী ঘুঘু সে, তার দিক থেকে অনুভূতিশূণ্য। সে মজেছে অন্য নারীতে। কী যেন নাম তার! মন জোরেশোরে উচ্চারণ করল,” তনুজা। ” আবারও! আবারও অদ্ভুত জ্বলুনি টের পেল নিশাত বুকের গোপন কুঠুরিতে।
____________________________

উপন্যাসপ্রেমী মৃন্ময়ী আজ হুমায়ূন আহমেদের ‘ মৃন্ময়ী ‘ বইটা কিনতে নীলক্ষেতে এলো। ক্লাস শেষ করে একাই এসেছে। পরিচিত দোকান। প্রতিদিন একটা বুড়ো লোক থাকলেও আজ একটা বয়স এগারো কি বারো হবে এমনতর একটা মলিন চেহারার ছেলে বই বিক্রি করছে। ছেলেটাকে দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল তার। অজস্র মায়াভরপুর কণ্ঠে প্রশ্ন করল,

” কীসে পড়ো তুমি?”
ছেলেটার ঈষৎ কালো বর্ণ বদনে ছমছমে ভাব। কীসের এত ভয় ভেবে পেল না মৃন্ময়ী। ঝলমলে চক্ষু দৃষ্টি মেলে ধরল। বলল,
” বলবে না?”
ছেলেটা তরতর গলায় জানালো,
” সিক্সে পড়ি আপু। ”
কৌতূহল দমাতে অকৃতকার্য হয়ে মৃন্ময়ীর অভ্যন্তর চিত্তের শব্দগুচ্ছ ফের প্রশ্নে পরিণত হলো,
” এখানে কাজ করো?”
” হু। আমার দাদার দোকান। ”
মৃন্ময়ী কী ভাবল কে জানে! তবে একটার জায়গায় আজ দু’টো বই কিনল সে। দোকান থেকে বের হবার আগে ছেলেটার হাতে আলাদা করে পঞ্চাশ টাকা গুঁজে দিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
” এটা তোমার। কিছু কিনে খেও। আমি মাঝে মাঝেই আসব তোমার সাথে দেখা করতে। ”

ফিরে আসার পথেও বার কয়েক ঘাড় বাঁকিয়ে ছেলেটাকে দেখল মৃন্ময়ী। বুক চিরে দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পড়ল বসুধাতে। এই পার্থিব জীবনে ও কি অপার্থিব এক পরম প্রাপ্তির যোগ্য ছিল না? ওর সাথেই কেন এমন হলো? এত বিষাদময় কেন ওর এই জীবনটা? একটু সুন্দর, একটু সুখময়,একটু জাদুময়ও হতে পারত। হতে পারত সে কোনো মুক্ত বিহঙ্গ, যেখানে পিছুটান তাকে ছুঁতে পারত না,কোনো সমাজ ওর পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত না। কেবলই উড়ার জন্য বিশালাকার আসমান থাকত তার। না জীবন এতটা আমোদে কারোই হতে পারে না৷ সামান্য আনন্দ, অল্পস্বল্প দুঃখ মিলিয়েই রচিত হয় জীবনের ক্ষুদ্র গল্প।

ভাবনার চোরাবালিতে ডুবে যাওয়া মৃন্ময়ী খেয়ালই করে নি বাস্তবতা ঠিক কতটা নি*ষ্ঠুর। টায়ারের কর্কশ শব্দে বুক ধড়ফড় করে উঠল ওর। দিশা হারিয়ে ফেলল। কব্জিতে অনুভব করল আচমকা শক্ত টান। বুকে ঝাপটে ধরেছে কেউ ওর দেহখানি। এতটাই কঠিন বাধঁন যেন একটু ছাড়া পেলেই কায়া গলে যাবে মোমের ন্যায়। অদেখা ব্যক্তির বা পাশের হৃদযন্ত্রের দামামা শব্দ ওর কানে ঢুকছে প্রবল বেগে। পুরো শরীর ঠকঠক কাঁপছে, ভূমিকম্প হচ্ছে তীব্র। চেনা, অপছন্দের একটা সুর বাজল কর্ণ পাতায়,

” ঠিক আছো তুমি? ”

ঝট করে সরে আসল সে। অক্ষি দর্পণে ভেসে উঠল প্রত্যয়ের ফ্যাকাসে মুখ। তাতে ভীষণ ভয়ের উপস্থিতি। চুল গুলো বড্ড এলোমেলো। চমকপ্রদ দৃষ্টিটা জলদি নত হয়ে গেল। উল্টো ঘুরে হাঁটতে শুরু করল ও। প্রত্যয়ের মেজাজ খিটমিটে হয়ে গেল নিমিষেই। পিছন থেকে হাত টেনে ধরল। ক্রোধান্বিত কণ্ঠস্বর,

” সমস্যা কী তোমার? একটু আগে ম*রেই যাচ্ছিলে। এখন আবার ভাব দেখাচ্ছ। কথাও বলছো না। ”

” আমার সমস্যা আপনিই। ”

গলার শান্ত স্বর প্রত্যয়ের মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণার সৃষ্ট করল। আর পারছে না সে। ক্রমে ক্রমে হাঁপিয়ে উঠছে। কঠিন বরফ গলে,শক্ত মাটির উঁচু হয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ও ধ্বসে পড়ে একটা সময়। তাহলে এ তো শুধুই একটা মেয়ে। প্রতিটা মেয়ের মধ্যে নরম স্বভাব থাকেই। তাহলে মৃন্ময়ীর সেই নম্রতার সাক্ষাৎ কেন পাচ্ছে না সে! দৃঢ়ভাবে বলল,

” আমার সাথে চলো। তোমার সাথে কথা আছে আমার। ”
” আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। ছাড়ুন আমাকে। আর সমস্যা তৈরি করবেন না আমার জন্য। ”
প্রত্যয় ছাড়ার বদলে আরো খানিকটা চাপ দিয়ে ধরল হাতটা। নিরব একটা জায়গায় নিয়ে আসল। বুকের খুব কাছে এনে মৃন্ময়ীর মায়ামিশ্রিত চেহারার দিকে তাকাল। ঘন পল্লব জোড়া কাঁপছে,রা-গের চোটে নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে। লজ্জার শ্রী পর্যন্ত নেই, লাল বর্ণ অরুণ রা*গে চাপা পড়ে গেছে হয়ত। ব্যথা লাগবে ভেবে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বিষন্ন হয়ে প্রশ্ন করল,

” আমি তোমার জন্য কী কী সমস্যা তৈরি করেছি?”

মৃন্ময়ী অঘোষিত ক্ষোভে ফেটে পড়ল। দ্রুত কম্পান্বিত দু হাতে প্রত্যয়ের শার্টের কলার টেনে ধরে। প্রলাপ করতে থাকে,

” আপনিই আমার জীবনের সবথেকে বড় সমস্যা। আগে এত বাঁধা, সমস্যা ছিল না। আমি ভালো ছিলাম। ভালো না থাকলেও একটু চিন্তামুক্ত ছিলাম। কিন্তু আপনি এসে আমার বহু কষ্টে সাজানো ছক নষ্ট করে ফেললেন।আমার জীবনের ছক পাল্টে দিলেন। আপনাকে আমি ক্ষমা করব না,কখনো না। আমাকে এমন সমস্যায় আপনি ফেলেছেন যেখান থেকে পরিত্রাণের উপায় রাখেন নি। সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে আমার। ”

দলা পাকানো কান্নার বল মৃন্ময়ীর কণ্ঠনালি চেপে ধরল। শব্দাংশ উচ্চারণ করার শক্তি হারিয়ে ফেলল। অস্থিরভাব কমে এলো। প্রত্যয় আলতো করে ছুঁয়ে দিল ওর নাকের ডগা বহুদিনের শুষ্ক ওষ্ঠযুগল দ্বারা। ঝাঁকিয়ে উঠল ও। ছিটকে দূরে সরে গেল। তাকাল র*ক্তিম দৃষ্টে।

প্রত্যয় নির্বিঘ্নে বলল,” তোমার জীবনের প্রতিটা সমস্যার সমাধান এভাবেই আমি আদরে সমাধান করে দেবো। যেভাবে এখন কমিয়ে দিলাম তোমার ভিতরের অস্থিরতা। সমস্যা যদি আমি হই? সমাধান আমাকেই বানাও। ”

মৃন্ময়ী তিক্ত মুখে বলে উঠল,” আজ আপনি প্রমাণ করে দিলেন আপনি একটা অস—ভ্য লোক। ”
সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যয় স্মিত হাসল। উত্তম স্বীকারোক্তি কণ্ঠে, ” সে আর নতুন কী!”

ঊষা এ পথেই যাচ্ছিল। দূর হতে ওদের দেখে রিকশা থামাতে বলে। মূহুর্তটা বেশ নজর কাড়ে ওর। ছিদ্র করে বক্ষস্থল। ক্ষ*ত হয় কিন্তু কেউ দেখে না। বরঞ্চ অধরে ফুটিয়ে তুলে মেকি হাসি। ভাগ্য কেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওদের কাছে এনে থামায় ওকে? ভালোবাসা পেতে হলে নিজেকে হারাতে হবে,হারাতে হবে নিজস্ব অভ্যেস। তবে যেই ভালোবাসা লিখা হয় নি আমার নামে তার ধোঁয়াতে কেন পথ হারাব?- মনে মনে এটাই আওড়ালো ঊষা।
.
.
.
বিকেলের কোমল রোদ মজুমদার বাড়ির আঙিনায় এসে পড়ছে। সকাল থেকে খুব ঝড়ঝাপটা গেল। পুরুষলোক কেউই আজ দোকানে যায় নি। নিশাতকে রোকেয়া বাদে কারোরই কিচ্ছুটি জিজ্ঞেস করবার সাহস হয় নি। বাড়ির বড় কর্তা রফিক আজমকে সবাই ভয় পান তেমনটা না,পারতপক্ষে মান্য করেন ঢের। মেয়ের দোষ তিনি কোথাও খুঁজে পান না। সব দোষ তো ওই অস**ভ্য লোকের যে কিনা মিষ্টি পাঠিয়েছে। অপরাহ্নে পরিস্থিতি শীতল হয়ে এলেও গেইটেরর সামনে গাড়ির হর্নের উচ্চ শব্দে গরম গরম হয়ে উঠে পরিবেশ। রফিক আজম লুঙ্গি সামলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। আব্বার পেছন পেছন এলো সৌরভ। হঠাৎ কে এমন বেয়া*দবি করছে বাড়ির গেইটের সামনে? গেইট খুলতেই রফিক আজমের মুখে আঁধার নামল। রুষ্ট হলেন তিনি। হরহামেশাই ভারিক্কি গলায় বললেন,

” সবসময় তোমার গন্তব্য এই বাড়ির চৌকাঠে আইসা থামে ক্যান? ”

প্রহর প্রচ্ছন্ন স্বরে জবাব দেয়,

” খাজানা এ বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি। খাজানার টানে এখানে না আসলে কোথায় যাব?”

সৌরভ পেছন থেকে তেতে উঠে,

” ইয়ার্কি মা*রতে এসেছিস এখানে?”

চোখ থেকে কালো চশমাটা খুলে হাতে নিল প্রহর। চুলে ব্যাকব্রাশ করতে করতে স্বহাস্য কণ্ঠে বলে উঠল,

” না। দাওয়াত দিতে। ”

” কীসের দাওয়াত? ”

” মামার বাড়িতে এসে চৌকাঠে দাঁড়িয়েই দাওয়াত দিতে হবে?”

রফিক আজম এত বছর যাবত যেই শাসন, নির্দিষ্ট গন্ডি কায়েম রেখেছিলেন এ বাড়িতে,আজ তা স্বয়ং ভঙ্গ করে সৌরভকে আদেশ করলেন,

” ভেতরে নিয়ে আয়। গেইটে দাঁড়িয়ে ঝামেলা করলে বাড়ির সম্মান থাকব না। ভুলে গেলে হবে না,তাদের মতো অভদ্র আমরা না। ”

প্রহর ভেতরে ঢুকে সৌরভের গা ঘেঁষে দাঁড়াল। ঠোঁটের কোণে সুপ্ত হাসি এঁকে ক্ষীণ স্বরে বলল,

” তোদের ভদ্র হতে দেখে নিজেকে আরো অভদ্র বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ”

কটমট চোখে চাইল সৌরভ। কপালের রগ ফুলেফেঁপে উঠল রা–গের দাপটে। প্রহর চোখে চশমাটা পড়ে সহজাত হাসি মুখে লেপ্টে রেখে বলে,

” কিপ ইট আপ। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ”

প্রহরের আসার খবর নিশাতের কর্ণধারে পৌঁছাতে বিলম্ব হলো না। বেতাল অবস্থা তার। এক মাস পর মানস্পটে নিখুঁতরূপে বসবাসকারী মানুষটাকে দেখবে সে। কতকাল দহন স্পর্শ সহ্য করেছে খরখরে দাঁড়িতে শোভায়িত শ্যামবর্ণ চেহারাটা দেখবে বলে। দূর থেকেই আদ্রতায় ভরিয়ে তুলবে অন্তঃকরণ। এত এত দেখবার উতলায় মেয়েটা নিজেকে পরিপাটি করতে ভুলে গেল। লজ্জাবনত চেহারাখানা এক হাত ঘোমটায় আড়াল করে উন্মাতাল হয়ে নিচে এসে হাজির৷ ব্যাপারটা পিংকির গাঢ় নজরে বিঁধল খুব গভীরভাবে।

#চলবে~

( ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here