#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____১৬
‘ কিরে তুই নাকি চাচ্চুর বাসায়?’
শিমুলের হন্তদন্ত,ব্যগ্র গলা শুনে ঘাবড়ে গেল নিশাত। কল দিয়ে হ্যালো না,সোজাসাপ্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে মা র ল মেয়েটা। কথা বলার ইচ্ছে নেই ওর শিমুলের সঙ্গে। সে কেন কোনোদিনও বলে নি প্রহর ভাইয়ের পছন্দের মানুষ, প্রেমিকা আছে? প্রিয় বান্ধবীর প্রতি ভারী অভিমান জড়ো হয়েছে মনে। নরম গলায় বলে,
‘ হু। ‘
অপর পাশ থেকে শিমুলের দ্বিগুণ তেজী কণ্ঠ,
‘ তুই ভাইয়ার সাথে চাচ্চুর বাসায় গেলি, অথচ আমাকে বললি না। অনেক পর হয়ে গেছিস তুই নিশু। ঊষা আপুর সাথে কথা না হলে কখনো জানতেই পারতাম না আমি। আদৌ তুই বলতি কিনা সন্দেহ আছে। ‘
‘ তুইও তো আমার কাছ থেকে লুকিয়েছিস কথা। বলিস নি প্রহর ভাইয়ের পছন্দের মানুষ আছে। ‘
ওইপাশে বোধহয় বজ্রপাত পড়েছে এবং তা ঠিক শিমুলের ওপর। নিশাতের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
‘ কি তুই জেনে গিয়েছিস?’
‘ হ্যাঁ। আজ প্রহর ভাই আমাকে ওনার হবু বউ মানে পছন্দের মানুষকে দেখাতে নিয়ে যাবেন। আমি গিয়ে কী করব বল? যাব না আমি। ‘
‘ ভাইয়ার বউকে তুই আগে আগে দেখে ফেলবি এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। ‘
‘ কেন তোরা দেখিস নি?’
‘ দেখেছি হাজার বার ভাইয়ার চোখে তার জন্য পেয়ার। ‘
শিমুলের গানের সুর শ্রবণ হওয়া মাত্র নিশাতের মনের ঘরের চাল ফুটো হয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে থাকে, বিরতিহীন। সকালে নাস্তার টেবিলে প্রহরের বিয়ের কথা শুনে অজানা মন খারাপেরা প্রবল আস্থা নিয়ে বসত গড়েছে দীর্ঘদিন থাকার। নিভে যাওয়া কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
‘ তোর ভাবী কেমন?’
তৎক্ষনাৎ শিমুলের গর্বিত কন্ঠস্বর শ্রবণপথে এলো,
‘ প্রহর ভাই যদি হয় ডায়মন্ড? সে হলো প্লাটিনাম। এজন্যই ভাইয়া হয়তো তাকে এত চায়। জাস্ট মুখে বলে না। ‘
নিশাতের বিষন্ন স্বর,’ ওহ। ‘
‘ হু। এবার বল কেমন বোধ করছিস ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে? ‘
নিশাত ঠাশ করে ফোন রেখে দিল। নতুবা মুখ খুলে বেরিয়ে আসত, ‘ খুব জঘন্য, খুবই জঘন্য অনুভব করছি আমি। ‘
প্রহর ভাইয়ের প্রেমিকা,বউ থাকা নিঃসন্দেহে ওর জন্য খুশির সংবাদ। তবে এত কেন খারাপ লাগছে? বক্ষস্থল চিরে সূক্ষ্ম একটা ব্যথার সৃষ্ট হয়েছে। সবাই জানে উনার প্রেমিকা আছে তাহলে সে কেন জানে নি? খোঁজ খবর রাখে নি বলে? ও মনকে বুঝ দিল ছোটবেলা থেকে অপ”মান,মা-ইর দিয়ে আসছে তাই একটু আধটু বিষন্নতার ছোঁয়া হাজির হয়েছে মন দুয়ারে। বউ পেলে ওর প্রতি কি আর আগ্রহ থাকবে প্রহর ভাইয়ের? তখন স্বাধীন জীবন৷ উৎফুল্ল মনে উনার বউ দেখতে যাবে ও। অগ্রিম একটা নাচও শিখে ফেলবে। খুব ভালো নাচ পারে নিশাত। দরকার পড়লে সৌরভ ভাইয়াকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঢাকা থেকে শপিং করবে বিয়ে খাওয়ার জন্য। তারপর সে স্বাধীন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্কুলে সবাইকে ট্রিটও দিবে। বিয়ের দিনটাকে ” নিশুর স্বাধীনতা দিবস” বলে ঘোষিত করবে। সব প্ল্যান ঠিকঠাক, একদম ঝাকানাকা। এখন শুধু বাস্তবায়নের পালা।
নিশাতের এত এত প্ল্যানে বিঘ্ন ঘটে মিনিট খানেক বাদেই। বুকের বা পাশে অবস্থিত হৃৎপিন্ড তার মালিকের সাথেই শুরু করল তীব্র বেই-মানি। যেদিকে তাকায় নিশাতের মনে হচ্ছে সেদিকে এক বোতল বি-ষ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রহর। এক্ষুণি তেড়েফুঁড়ে এসে বলবে, ‘নে বি-ষ খেয়ে ম*রে যা। তোর হাবভাব ভালো না। যদি আমার বিয়েতে বাঁধা হোস? তার আগেই বল বিদায় দুনিয়া। ‘
সইতে না পেরে কিশোরী মনের উতালপাতাল ঢেউ নিয়ে ও গিয়ে উপস্থিত হলো ঊষার রুমের সামনে। ঊষা সবে মেডিকেল থেকে ফিরেছে। একটা জরুরি ক্লাস ছিল। ফলস্বরূপ নিশাতকে বাড়িতে রেখে যেতে হয়েছিল এক ঘন্টার নিমিত্তে। এপ্রোন টা খুলে বিছানার উপর রাখতে নিয়ে দরজার সম্মুখে নজরে পড়ে নিশাতের বিরস, মলিন চেহারায়। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড হলুদ পাখি?’
‘ আমি পিংকির কাছে যাব আপু। আমাকে পিংকির শ্বশুর বাড়ি দিয়ে আসো। ‘
দুর্বল কণ্ঠস্বর শুনে ঊষা থমকালো। অন্যের কষ্ট বুঝতে মোটেও সমস্যা হয় না তার। এগিয়ে এসে বলল,
‘ যাবে তো সন্ধ্যায়। ভাইয়া সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে যাবে। দিন টা থাকো। ‘
অভ্যন্তরীণ হাস ফাঁস দেখানোর উপায় নেই নিশাতের। জেদ ধরল,
‘ আমি এখনই চলে যাব। ‘
‘ কেউ কিছু বলেছে?’
‘ না আপু। বাবা জেনে গেলে সমস্যা, চলে যাওয়া ভালো।
‘ পিংকির হাসবেন্ড সামলাচ্ছে পিংকিকে। ও তোমার খোঁজ করে নি। কথা হয়েছে প্রত্যয় ভাইয়ার তার সাথে। তাছাড়া প্রহর ভাই থাকতে কীসের টেনশন? ‘
‘ ইনিই সবথেকে বড় টেনশন। ‘– নিশাত গোপনে, মনে মনেই বাক্যটা আওড়ালো। হালকা গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় নড়ল ক্ষীণ,
‘ আমাকে প্লিজ দিয়ে আসো আপু। ‘
ঊষা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। মেয়েটা কেঁদে দিবে এমন মুখোভঙ্গি। কোমল হৃদয়ের প্রাণ। সকালে প্রহরের কথাগুলো শুনেছে ও। কিন্তু তার জানামতে নিশাতের মনে প্রহরের জন্য কোনো ফিলিং নেই। এতদিন ভেবেছিল প্রহর ভাইয়ের দুর্বলতা আছে নিশাতের প্রতি কিন্তু ভাবনার ফলাফল শূণ্য, ভুল। যদি থাকত তবে কি এক বাক্যে বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হত! রাজনীতিবিদের তকমা গায়ে মেখে অত্যন্ত কঠোর হয়ে গিয়েছে মানুষটা। কণ্ঠে আহ্লাদ ঢেলে বলল,
‘ নিয়ে যাব তোমাকে পিংকির কাছে। যাও তৈরি হয়ে নাও। ‘
ঊষা নিশাতকে নামিয়ে দিয়ে গেল। পিংকির বাড়ির লোকেশন ও জানত না। প্রত্যয়কে ফোন দিয়ে জেনে নেয়। প্রত্যয় অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও সে বলে নি কেন এড্রেস প্রয়োজন। শুধু বলেছে লাগবে মানে লাগবেই। মৃন্ময়ীর জন্য অপেক্ষায় ছিল বলে আর এত ঘাটতে যায় নি সে ব্যাপারটা৷ ফেরার পথে ঊষার নজরে পড়ে বিলবোর্ডে টানানো সমীরণের গম্ভীরভাব মিশ্রিত মুখশ্রী খানা। কালো পাঞ্জাবি পরিধান করে এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে চেয়ে আছে নিষ্পলক হাসোজ্জল এক রমণীর পানে। সেই রমণীও নামকরা মডেল দিবা৷ সমীরণ নামের গম্ভীরমুখো লোকটার দু’টো রূপ আছে। ভদ্র সমাজের সামনে এক,মেয়ে মানুষের সমুখে অন্যরূপ। শ্বেত পাথরের ব্রেসলেট পড়া হাতের দিকে তাকাল ঊষা। হাসি পেল ঘটনাটা মনে আসতেই। এই হাত দিয়েই সমীরণের গালে সপাটে এক চ*ড় বসিয়েছিল সে মাস তিনেক পূর্বে। মুখোশধারী এই পুরুষ রাজনীতিতে আবার প্রহর, প্রত্যয়ের বিরাট বড়ো শ ত্রু। একে অপরকে খু**ন করতেও হাত-পা কিছু কাঁপবে না।
———————————
নিশাতের ভেতরকার উচাটন কমার বদলে বেড়ে গেল। এখানে এসে হাল হলো নাজেহাল। অবস্থা পুরোই বেগতিক। বার কতক চিন্তায় লিপ্ত হয়েছে প্রহর ভাই কি গিয়েছে দেখা করতে? এত এত চিন্তার কারণ নেই ওর নিকট। অথচ প্রহরের সান্নিধ্যে অন্য নারী ভাবলেই সমস্ত দেহ কাঁপুনি দিয়ে উঠছে। আসার পর গিয়েছিল পিংকির সাথে দেখা করতে। দেখেই পিংকি লোক দেখাতে ঝাপটে ধরল। অতঃপর কানের কাছে মুখ নিয়ে তির্যক বাক্য ছুঁড়ে দেয়,
‘ তুই আমার শ্বশুর বাড়ি এসেই ঘুমানো শুরু করলি? তুই নাকি আসার পরই এখন পর্যন্ত নাক টেনে ঘুমিয়েছিস, কারিম বলল। ‘
নিশাত মুহূর্তেই হতবিহ্বল হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ কারিম কে?’
‘ আর কে? তোর দুলাভাই, আমার জামাই। আর ঘুমাইস না বইন। মান সম্মান থাকবে না। ‘
নিশাতও ফিসফিস করে বলে,
‘ তোর মান সম্মানের পরোয়া করে কে? আমি মান সম্মানের ফালুদা,বিরিয়ানি বানাইতে আসছি জানোস না? নইলে তোর জন্য কি মহাব্বত লইয়া ঘুরে বেড়াই যে টানে টানে তোর লগে আসমু? আর একটা কথা বললে এক টুকরাও সম্মান অবশিষ্ট থাকবে না। ‘
পিংকি ভয়ে চুপসে গেল। এমন হাবভাব যেন পৃথিবীতে ওর চেয়ে লাজুক বধূ হতে পারবে না কেউ। দুই অধর আর আলগা হলো না। পিংকির ভয়া-র্ত চেহারা দেখে ক্ষণিকের প্রশান্তি পায় নিশাত। তবে কেবলই অল্পসময়ের জন্য। এ বাড়িতে পিংকির দাদী,নানী,চাচী শ্বাশুড়ি সব আছেন৷ কাল বৌভাতের অনুষ্ঠান বলে বাহিরে প্যান্ডেলের কাজ চলছে। আসার পর একবারও মাহিশার দেখা মিলে নি। অপরিচিতদের মাঝে পরিচিত একটা মুখ দেখলেও স্বস্তি পাওয়া যায়।
.
.
অন্তরিক্ষে ঈষৎ র-ক্ত বর্ণের ছোঁয়া। লজ্জায় গুমোট ভাব ধরেছে গোধূলি প্রহর। রক্তাভ আকাশের বুক চিরে উড়তে লাগল সবুজ বর্ণ ধারণকারী কিছু পাখি। হতে পারে কয়েকটা টিয়া ফিরছে নীড়ে। নিশাত অভিভূত, বিস্মিত। শহুরে পরিবেশে টিয়া! ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে আরেকটু ভালো করে চাইতেই একটা আশ্চর্যতম কান্ড দেখে। টিয়াগুলো নিচ থেকে উড়ে আসছে। নিচে তাকাল ও তড়িঘড়ি করে। একটা ছেলে খাঁচা থেকে একে একে টিয়াপাখি ছাড়ছে। ব্যাপার টা ওকে ভাবালো। মানুষ পাখি ধরে খাঁচায় ঢোকায় আর ছেলেটা ছেড়ে দিচ্ছে! এখানে এসে পিংকির ঘরে এবার দেখেছিল ছেলেটাকে। সম্পর্কে পিংকির মামাতো দেবর হয়ত। দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসল ঘটনাটা কাছ থেকে দেখার জন্য। বাচ্চাকাচ্চার দল একত্রে বেশ উৎসুক হয়ে যোগ দিয়েছে এ ঘটনায়৷ ওকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিংকির বোন ইলমি এসে বলল,
‘ আপা,এতক্ষণ কই ছিলি? দেখ,কী সুন্দর পাখিগুলো ছাইড়া দিতাছে। ‘
নিশাত নিচু গলায় প্রশ্ন করল ছেলেটাকে ইশারায় দেখিয়ে,
‘ উনি কে?’
‘ কারিম ভাইয়ের মামাতো ভাই। এনার নামটা অনেক কঠিন আপা। আমি বলতে পারি না। ‘
‘ কী এমন কঠিন নাম যে তুই উচ্চারণ করতে পারিস না?’
‘ তুই গিয়ে ওনার কাছ থেকে জেনে নে। ‘
‘ না,আমি যাব না। ‘
‘ কিন্তু উনি আমারে কইলেন তোরে ডেকে নিয়ে যাইতে।’
হকচকালো নিশাত। কণ্ঠে অবিশ্বাস, বিস্ময়ের সমাহার,
‘ আমাকে?’
‘ হ,আপা। ‘
‘ কেন?’
‘ আমি জানিনা। ‘
ওদের কথার মাঝে ছেলেটা নিজ থেকেই এগিয়ে আসল। পাখির খাঁচায় এখনও এক জোড়া পাখি আছে। বিহ্বল দৃষ্টিতে পাখি দু’টোর দিকে এক পলক চাইল নিশাত৷ প্রশ্ন জাগে,” এ দু’টো কেন ছাড়ে নি?” জবাবটা বাস্তবেই পেল। ছেলেটা ওর দিকে পাখি দু’টো বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ তোমার জন্য এই এক জোড়া থেকে গেল।’
সরাসরি ” তুমি” সম্বোধনে নিশাত ভড়কে গেল। স্মিত লজ্জাও হলো বটে। অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে ইতস্তত অনুভব করে ও। উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলে ছেলেটার রাশভারী গলায় থমকে যায় পা দুটো।
‘ তুমি বলে ডেকেছি কারণ আমার অনেক ছোট তুমি নিশাত। আমি অচেনা হোক বা চেনা ছোটদেরও আপনি করে বলব এত ফর্মালিটি পালন করতে পারি না। একদিন যেহেতু তুমি তে যেতেই হবে আপনি বলে শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করার মানে হয়? আমি আরাধ্য। পেশায় ডাক্তার আর ছোটোখাটো একটা পাখি হাউজের মালিক। তোমার শুধু নামটা জানি। পিংকি ভাবীর কাজিন সেটা জানি। আর কিছুই জানিনা। পরিচিত হতে চাই। ‘
‘ দু’টো পা,দু’টো হাত,একটা মাথা,আটাশ টা দাঁত আর একটা জলজ্যান্ত নিশাত। আর কি পরিচয় লাগবে পাখিওয়ালা ভাই?’
নিশাতের বুকে দ্রিমদ্রিম শব্দের শুরু মুহূর্তেই। আরাধ্য ভুরু কুঁচকে পশ্চাতে ঘাড় বাঁকিয়ে প্রহরকে দেখে ঢিমেতালে বলে উঠল,
‘ ভাই!’
‘ পাখি নিয়ে সাইডে দাঁড়া। তোর সাথে পরে কথা হবে। নিশু আয়। ‘
স্নিগ্ধ পরিবেশ। তবুও ঘামে ভিজে উঠেছে প্রহরের সফেদ পাঞ্জাবি। মুখাবয়বে ক্লান্তির মেলা।
নিশাত নিশ্চুপ। অন্তস্থলে ভ-য় হানা দিয়েছে। প্রহরের এমন পরিবেশে এত শান্ত ব্যবহার সুবিধার ঠেকছে না। হবু বউয়ের সাথে দেখা করে এসেছে কি! কোথায় যেতে বলছে? নড়চড় না দেখে চোখ রাঙাল প্রহর। ভয়ে দ্রুত পায়ে পেছন পেছন আসল। গাড়ির সামনে দাঁড়ানো একটা ছেলে গাড়ির দরজা মেলে দেয়। প্রহর গাড়িতে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ গাড়িতে উঠে বস। ‘
নিশাত মাথা নত করে ফেলল। যাবে না সে। এই গাড়ির ভেতর যাওয়া মানে ঘূর্ণিঝড়। প্রহর ভাই ছাড়বে না ওকে। না বলে,হবু বউ না দেখে জেদ করে এসেছে বলে নিশ্চয়ই মা*রার জন্য নিয়ে যাচ্ছে । ভীত সন্ত্রস্ত স্বর তার,
‘ আমি যাব না। ‘
‘ তুই যাবি, তোর ঘাড় যাবে। আমার হবু বউ দুই ঘন্টা ধরে রেস্টুরেন্টে ওয়েট করছে। তুই চলে এলি এখানে পাখির মালিকের সাথে ভাব জমাতে? একটু ছাড় দিলেই তুই পাখি হয়ে যাস নিশু। বেশি উড়লে আমি কিন্তু স্পেশাল খাঁচা বানিয়ে বন্দিনী বানিয়ে রাখব তোকে। ‘
ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল নিশাত। যাবে না ও। এখান থেকে একবার গ্রামে যেতে পারলে আর জীবনেও প্রহর ভাইয়ের মুখোমুখি হবে না। ভূ-মন্ডলের সবাই ওর কাছে বিশ্বাসের যোগ্য, স্রেফ প্রহর নামক ব্যক্তি ছাড়া। এক দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে যাবে তাহলেই রক্ষা তার হাত থেকে। যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে প্রায়, কোমরে শক্ত দুটো পেশিবহুল হাতের চাপ অনুভব করল। পেটেও চাপ পড়ল। ব্যথায় মুখ রক্তশূণ্য,ফ্যাকাসে হলো নিমেষে।
প্রহর কোমর ধরে শূণ্যে তুলে গাড়িতে এনে ঝাপটে ধরে রাখল। নিশাতের দম বন্ধ হয়ে আসছে। হৃদয়স্থে সেতার বাজছে। এলোমেলো লাগছে খুব। ঘর্মাক্ত,শক্ত বুকে বাঁধা সে কঠিনভাবে। কান্নামিশ্রিত গলায় বলে ওঠে,
‘ আপনি এমন করছেন কেন প্রহর ভাই? ‘
প্রহর আরো শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরল। রুষ্ট চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ তোর জন্য।’
‘ আমি কি করেছি? ‘
‘ দো*ষ করেছিস?’
‘ কি দো-ষ?’
‘ বড় হচ্ছিস না। ‘
নিশাতের কণ্ঠ হতে বেরিয়ে আসল অবাকতা মেশানো প্রশ্ন,
‘ আর কত বড় হতে হবে?’
প্রহরের নির্লিপ্ত জবাব,
‘ যতটা বড় হলে তুই অনুভূতি বুঝতে পারবি, আর তোকে অত্যা–চারের পরিমাণ বাড়ানো যাবে ততটা। ‘
‘ আমার কোমর ব্যথা করছে।
‘ আমি ছুঁলেই তোর কোমর,পেট ব্যথা শুরু হয়ে যায়? কথা বললে একটু পর গলা, ঠোঁট ব্যথা শুরু হবে সুইটহার্ট। ‘
দৃঢ়,কাঠ কাঠ কণ্ঠ। ” সুইটহার্ট! ” নিদারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতির সম্মুখীন হলো নিশাত নিমিষেই। তর সইল না আর ছাড়া পাবার। স্বরনালীতে শক্তির বড্ড অভাব। মিহি কণ্ঠে বলতে চাইল,
‘ প্রহর ভাই, আমি পালানোর চেষ্টা করব না। ছেড়ে দিন প্লিজ। ‘
প্রহরের একই গলা শোনা গেল ফের,
‘ তোকে ছাড়ার হলে কবেই রেহাই পেয়ে যেতি সুইটহার্ট। ‘
#চলবে,,!