প্রেমানন্দোল-৭

0
681

#প্রেমানন্দোল-৭
#তাসনিম_তামান্না

স্বচ্ছ বারান্দায় বসে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়ছে আর সুরেলা কন্ঠের মালিকের কথা ভাবছে। কিছু তেই মাথা থেকে সরাতে পারছে না মস্তিষ্কে একেবারে গেঁথে গেছে। সেই চোখ রাঙানো, ঝাঁজ মেশানো কথা, গোলাপি রাঙা পাপড়ির মতো ঠোঁট।
ভাবতে ভাবতেই স্বচ্ছের হাতে থাকা সি-গা-রে-টা পুড়ে গেলো হাতে আগুনের ছ্যাকা খেলো। স্বচ্ছ সি-গা-রে-ট ফেলে দিলো।
” কি হচ্ছে এগুলো আমার? ঔ মেয়েটা আমার মাথা থেকে সরছে না কেনো? ঔ অচেনা মেয়েকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারতেছি না কেনো হোয়াই? ”
স্বচ্ছ বিয়ারের ক্যানে থেকে ঢোক ঢোক করে বিয়ার খেলো। নেশা হলো না। স্বচ্ছ উঠে গিয়ে কয়েকটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে বিছানায় উবুড় হয়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করলেও চোখের সামনে ভেসে উঠলো মেয়েটার প্রতিছবি। বিরবির করে কি জানি বলতে বলতে স্বচ্ছ আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লো।

__________________________

সকালের ঝকঝকে তকতকে কমলা সোনালী রোদে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। সবুজ গাছে রোদ পড়ায় পাতাগুলোয় ও হলুদ রঙের মনে হচ্ছে। দ্বিধা চোখ খুলে নিজেকে স্বাধীনের বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করলো। চমকালো! থমকালো! জমে গেলো। নড়তে চড়তে ভুলে গেলো। বুকে ৃাথা ঠেকিয়ে হৃৎস্পন্দন শুনতে লাগলো। ধুকপুক…ধুকপুক…
কতক্ষণ এমন ভাবে থাকলো দ্বিধার খেয়াল নেই। স্বাধীন নড়াচড়া করতেই দ্বিধা দ্রুত চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। এই বুঝি স্বাধীনের কাছে ধড়া পড়ে গেলো। কিন্তু স্বাধীন উঠলো না নড়েচড়ে দ্বিধাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো। পাড়লে যেনো বুকের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলতো। দ্বিধা সাবধানে স্বাধীনের বুকে গুটিসুটি মেরে রইলো। যেনো স্বাধীন ঘুম থেকে জেগে না যায়। দ্বিধা এভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে স্বাধীনের মুখের দিকে তাকালো শ্যামবর্ণের মানবটিকে ঘুমত অবস্থায় বড্ড আদুরে লাগছে। স্লংকি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে আচরে পড়ে আছে।
দ্বিধার তাকিয়ে থাকা অবস্থায় স্বাধীন আস্তে করে চোখ খুললো। দ্বিধার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। স্বাধীন ঘুম থেকে জেগে উঠা মুখে হেসে বলল
” আমাকে কি সুন্দর লাগছে? পছন্দ হয়েছে? ”
দ্বিধা অসস্তিতে পড়ে যায়। চটপট উঠে বসতে নিলেই স্বাধীনের টি-শার্টের বোতামে টান খেলো। ব্যথাতুর শব্দ তুললো
” আহ ”
” ইশ রিলাক্স এতো তাড়াহুড়োর কি আছে? ”
দ্বিধা কিছু বলল না অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। স্বাধীন আলতো হাতে বোতাম থেকে চুল ছাড়িয়ে দিলো। দ্বিধা আর একমুহূর্ত নষ্ট না করে উঠে বসে একপ্রকার দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। স্বাধীন শব্দ করে হাসলো। দ্বিধা কানে স্বাধীনের হাসির শব্দ আসলো দ্বিধা লজ্জা লাল হয়ে গেলো।
.
.
সকালে খাবার টেবিলে খাচ্ছে সবাই শাহাদাত হোসেন সকাল সকাল না খেয়ে বেড়িয়ে গেছে বাইরে কাজ আছে বলে। স্বাধীন রেডি হয়ে খেতে বসেছে। আজ কাজ আছে স্বাধীনেরও। স্বাধীন খেতে খেতে সাদিয়া বেগমকে বলল
” আম্মু যার যার দাওয়াত দেওয়া আছে দিয়ে দাও এই শুক্রবারে রিসিভশন হবে। ”
স্বপ্না খাবার ছেড়ে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
” সত্যি? আজ সোমবার তাইলে আর তিনদিন বাকি এ্যাঁ এর মধ্যে কেমন কি সবটা পসিবল হবে? ”
” হইলে এর মধ্যে করতে হবে নাহলে… ”
স্বাধীনের পুরো কথা শেষ করতে দিলো না স্বপ্না তার আগে তাড়াহুড়ো করে বলল
” এই না না সব এর মধ্যে-ই হবে। কে বলেছে হবে না অবশ্যই হবে। তুই তোর ফেন্ডদের যারা যারা বাকি ইনভাইট দিস আমরা এদিকটা সামলে নিবো। কি বলো ভাবি তাই না ”
দ্বিধা রুটি চিবাতে চিবাতে ওদের কথা শুনছিল। হঠাৎ স্বপ্না দ্বিধাকে টেনে কথা বলায় দ্বিধা স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে অনুভূতিহীন নির্জীব হয়ে উত্তর দিলো ” হ্যাঁ ”
দ্বিধার উত্তর দেওয়া স্বাধীনের পছন্দ না হওয়ায় ভ্রু কুঁচকে গেলো। স্বপ্না হুট করে ডিরেক্ট প্রশ্ন করলো
” ভাবি তুমি খুশি না-ও ”
দ্বিধা কৃত্রিম হাসি মুখে টেনে বলল
” কি বলো খুশি হবো না কেনো অবশ্যই খুশি ”
স্বপ্নাও আর কিছু বলল না খাতা কলম নিয়ে বসে গেলো। স্বাধীন কিছুক্ষণ দ্বিধার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো নিজের কাজে। সাদিয়া বেগম ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে ফোন দেওয়া শুরু করলো। দ্বিধা বসে রইলো।
স্বচ্ছ তখন নিচে নামলো। স্বপ্না স্বচ্ছকে ডেকে উঠলো বলল
” স্বচ্ছ ভাইয়া ”
স্বচ্ছ দাড়িয়ে গেলো বুকে অদ্ভুত অনুভূতিরা দলা পাকিয়ে গেলো। স্বচ্ছের সাথে স্বপ্নার তেমন ভালো সম্পর্ক না হলেও টুকটাক কথা বলে স্বপ্না যখন ভাইয়া বলে ডাকে স্বচ্ছের কোথাও একটা শান্তি পাই। অনুভূতিরা দলা পাকিয়ে যায়। দ্বিধা সহ সাদিয়া বেগম চমকালেন। স্বপ্না উঠে দাড়িয়ে এগিয়ে গিয়ে স্বচ্ছের সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বলল
” ভাইয়া তোমার কি আজ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কোনো কাজ আছে? ”
স্বপ্নার প্রশ্নে স্বচ্ছের ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” কেনো কোনো দরকার? ”
” আরে বলোই না আগে ”
” তেমন কাজ নাই ”
” যাক তাহলে তো ভালোই হলো ”
” কেনো? ”
” হ্যাঁ স্বাধীন ভাইয়ার রিসিভশন কত কাজ বলো তো তুমি বসে থাকলে চলবে? তোমারও বাড়ির হিসেবে তো একটা দায়িত্ব আছে না-কি? বসে থাকলে চলবে? ”
স্বচ্ছ একবার দ্বিধার দিকে তাকালো। অতঃপর স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে বলল
” কি কাজ? ”
” সে তোমাকে আমি পরে জানিয়ে দিবো। এখন খেয়ে না-ও। আর শুনো তুমি কাকে কাকে ইনভাইট করবে করে দিও ”
স্বচ্ছ উত্তর দিলো না। টেবিলের ওপর থেকে পানি খেলো শুধু তারপর চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম। জানি এই পার্টটা ছোট হয়ে গেছে। কারেন্ট ওফ হয়ে যাচ্ছে লিখতে লিখতে ফোনের চার্জ ও নাই। কাল থেকে রেগুলার বড় পার্ট দিবো ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here