প্রেমানন্দোল–১৪

0
611

#প্রেমানন্দোল-১৪
#তাসনিম_তামান্না

স্বচ্ছ দৌড়ে মৃধার পাশে গিয়ে মৃধার মাথা কোলে নিয়ে মুখে হালকা করে থাপ্পড় দিয়ে ডাকতে লাগলো
” মৃধা। মৃধা। শুনছেন? ”
মৃধা উঠলো না। স্বচ্ছ রেগে উঠে গিয়ে জিতুকে ঘু-ষি মা’রলো।
” এই তুই কাকে তুলে এনেছিস তুই জানিস? ”
জিতু ভয় পেয়ে তুতলিয়ে বলল
” সরি বস আপনি ৫০ টা মেয়ে আনতে বলেছেস আমি এনেছে কিন্তু আমি কি ভাবে জানবো এই মেয়ে কে? ”
” এই মেয়ে কাকে বলছিস তুই? ম্যাডাম বল ”
স্বচ্ছ রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লো। কি বলছে কি করছে কিছু খেয়াল নেই। জিতুও চমকে গেলো। স্বচ্ছ জিতুর কলোয়ার ছেড়ে দিলো। জিতু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো
” ম্যাডাম কে বস? ”
স্বচ্ছ কিছু না ভেবেই বলে দিলো
” আমার বউ ”
কথাটা বলে স্বচ্ছ নিজেই চমকে গেলো। নিজের খেয়াল হলো কি বলল এটা। স্বচ্ছ গম্ভীর মুখে মৃধাকে কোলে করে গাড়িতে তার নিজস্ব বাসায় আনলো যেখানে স্বচ্ছ ছাড়া কেউ থাকে না। মৃধাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মৃধার ক্লান্ত মুখের দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন অতঃপর উঠে গিয়ে মৃধার হাতে পায়ে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। তারপর নিজে ফ্রেশ হয়ে। মৃধার জন্য নিজের হাতে সুপ বানালো। মৃধার মুখে পানি ছিটালো। মৃধা পিটপিট করে চোখ খুলে স্বচ্ছকে দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো। চারিদিকে দেখলো অন্য অচেনা জায়গায় সে। মৃধা স্বচ্ছকে দেখে বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল
” একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না ”
স্বচ্ছ শান্ত কন্ঠে বলল
” রিলাক্স। ভালো করে দেখ আমি স্বচ্ছ ”
” আপনিও ওদের মতো খারাপ লোক তাই না? ”
” আমি ওদের মতো হলে তোমাকে আমি ওখানে ফেলে আসতাম এখানে আনতাম না ”
মৃধা কিছুটা শান্ত হয়ে বলল
” ঔ মেয়েগুলো কোথায়? ওরা ওদের বাসায় গিয়েছে ”
” হ্যাঁ তুমি টেনশন করো না খেয়ে নাও ”
” আমি বাসায় যাবো ”
” হ্যাঁ যেও খেয়ে সুস্থ হয়ে নাও তারপর যেনো আর এখন এমনিতেও অনেক রাত ”
মৃধা চমকে উঠলো চমকানো গলায় বলল
” এখন মানে? আম্মু, ভাইয়া, আপু নিশ্চয়ই অনেক টেনশন করছে। আপনার ফোনটা দিন আমি ভাইয়া ফোন দিয়ে বলছি আমাকে নিয়ে যেতে ”
স্বচ্ছ বিনাবাক্য নিজের ফোনটা মৃধার কাছে দিয়ে দিলো। মৃধা ফোন লাগালো বাসায় লাগালো। জাহিদ ফোন ধরতেই মৃধা হরবর করে বলতে লাগলো।
” ভাইয়া তুমি আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ আমার খুব ভয় করছে ”
” তুই চিন্তা করিস না বোন আমি এখনি আসছি ”
কথা শেষ করে মৃধা স্বচ্ছের কাছে ফোনটা দিয়ে বলল
” আপনি ছাড়া কেউ বাসায় নাই? ”
” নাহ! ”
মৃধার ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। চুপচাপ বেডের এক কোণে ওড়ার কোনা শক্ত করে চেপে বসে রইলো। মনের মধ্যে উলটা পালটা চিন্তারা এসে হানা দিচ্ছে। স্বচ্ছ গম্ভীর কন্ঠে বলল
” ভয় পাচ্ছো কেনো? ”
মৃধা উত্তর দিলো না। কোণা চোখে স্বচ্ছকে দেখলো। স্বচ্ছ আবারও বলল
” এটা খেয়ে না-ও। অনেকক্ষন না খেয়ে আছো ”
” না ঠিক আছি ”
” খেয়ে নাও তারপর তোমার ভাইয়া আসলে যেও ”
” আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না ”
স্বচ্ছ আর কিছু বলল না। মৃধার মাথায় প্রশ্ন পাখিরা উড়োউড়ি করছে। অনেকক্ষণ উশখুশ করার পর নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে মৃধা বলল
” একটা প্রশ্ন করতে পারি ”
স্বচ্ছ ফোনে কিছু একটা করছিল। ছোট করে উত্তর দিলো
” হুম ”
” আপনি কি পুলিশ বা সিআইডি টাইপ কিছু ”
স্বচ্ছ এবার চোখ ছোট ছোট করে বলল
” হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ? ”
” না মানে তাহলে ওখানে কিভাবে পৌঁছালেন? ”
স্বচ্ছ ঘাবড়ে গেলো এবার কি উত্তর দিবে? কিছু বলার আগে স্বচ্ছের ফোন বেজে উঠলো। স্বচ্ছ বলল
” তোমার ভাইয়া ফোন দিয়েছে ”
মৃধা ফোন কানে নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল
” দাঁড়াও ভাইয়া আমি এখনি আসছি ”
ফোন কেটে মৃধা স্বচ্ছকে বলল
” আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনি না থাকলে হয়ত আমার মরা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না ”
স্বচ্ছ মৃধার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল
” হিশশ একদম মরার কথা বলবে না। তোমার সবসময় রক্ষা করার দায়িত্ব আমি নিলাম ”
মৃধা চমকালো। স্বচ্ছও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। মৃধা বলল
” মানে? ”
” কিছু না। তোমার ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে ”
” হ্যাঁ যাচ্ছি আপনাকে আর কষ্ট করে আশা লাগবে না আমি যেতে পারবো ”
স্বচ্ছ কিছু বলল না। মৃধার সাথে গেলো। মৃধার নিষেধাজ্ঞা শুনলো না। নিচে এসে জাহিদ কে দেখে স্বচ্ছ অবাক হয়। মৃধা গিয়ে জাহিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। জাহিদ ও স্বচ্ছকে দেখে অবাক হয়। জাহিদ মৃধার কান্না থামিয়ে বলল
” এই ছেলে তোর কোনো ক্ষতি করেছে বোন শুধু বল আমাকে ”
” না না ভাইয়া কি বলছ ওনি তো আমাকে আর-ও বাঁচিয়েছে না হলে আমি যে এখন কোথায় থাকতাম ”
জাহিদের ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল ” তুই সত্যি বলছিস তো?”
” হ্যাঁ ভাইয়া ”
জাহিদ স্বচ্ছর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল
” থ্যাংকিউ মিস্টার স্বচ্ছ ”
মৃধা অবাক হয়ে বলল
” ভাইয়া তুমি ওনাকে চেনো? ”
” হুম। গাড়িতে উঠে বস ”
মৃধা কোনো কথা না বলে মাথা হেলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। জাহিদ স্বচ্ছের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল
” জানি না আপনি কেনো আমার বোন কে বাঁচালেম। যদি আপনার কোনো অসত উদ্দেশ্য থেকে থাকে তাহলে নেক্সট বার আপনাকে আমি ছাড়বো না ”
স্বচ্ছ চমৎকার করে হাসলো। গাড়িতে বসা মৃধার দিকে তাকালো মৃধারও তাকিয়ে ছিলো। স্বচ্ছ তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো। মৃধা গাড়িতে বসে সে হাসি দেখলো।

গাড়িতে যেতে যেতে জাহিদ বলল
” শোন যাকে তাকে বিশ্বাস করবি না আর ঔ স্বচ্ছকে তো মোটে নয় ”
” কেনো ভাইয়া ওনি তো ভালো ”
” মানুষ যেটা দেখায় সেটা সে নয়। আড়ালে ভয়ংকর ছদ্দ বেশ থাকে ”
” ওনি কি করে ভাইয়া ”
” ওসব যেনে তোর কাজ নাই তোকে যেটা বলা হয়েছে সেটা করবি ”
মৃধা বাসায় এসে বাচ্চাদের মতো মায়ের কোলে গুটিশুটি মেরে আছে। যতই ও সাহস দেখাক না কেনো মনে মনে যে দূর্বল খুব দূর্বল এই দূর্বলতা কাউকে দেখাতে চাই না। মৃধার মা আহাজারি করতে লাগলো
” মেয়েটার ওপর একটার পর একটা দূঘটনা লেগেই আছে। সেদিন এক্সিডেন্ট করে বাসায় আসলো আবার আজ দেখ কি হয়ে গেলো। কার কু দৃষ্টি পড়লো আমাদের ওপর ”
” আহ মা কিসব আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছো। যেটা ভাগ্যে লেখা আছে সেটাই হবে ”
” তুই যা-ই বলিস জাহিদ আমি মৃধাকে নিয়ে হুজুরের কাছে যাবো ”
জাহিদ বিরক্ত হয়ে বলল
” যা মন চাই করো। আমাকে এর মধ্যে টানবে না ”
মৃধার মন কান কোনোটায় এদিকে নেই। মৃধা তার ভাইয়ের কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করছে। স্বচ্ছ মানবটাকে মৃধার সন্দেহ জনক লাগে। দ্বিধার বিয়ের রিসিভশনের দিন থেকেই।
চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। এই তিন দিন গল্প না দেওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। জ্বরে লিখতে পারি নাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here