প্রেমাঙ্গনা পর্ব ৮

0
468

#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৮।

“ফরহাদ খান”, লোকটাকে দেখলেই পৃথার রাগ হয়। কারণ লোকটার ব্যবহার তার একটুও পছন্দ না। ছেলে মানুষ এত গায়ে পড়া হয় কী করে। ছেলেটা বুঝতে পারে পৃথা তার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না তাও সে জোর করে পৃথার সঙ্গে কথা বলতে চায়। এই নিয়ে বাবাকে কিছু বললেও বাবা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। কারণ, বাবার চোখে ছেলে লাখে এক, এর মতো নাকি ছেলেই হয় না।

আজকেও ফরহাদ এসে পৃথার সাথে খুব কথা বলছিল। পৃথা শেষে রেগে গিয়ে বলে,

‘আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। দয়া করে আপনি আমার রুম থেকে বের হলে আমি একটু রেস্ট নিব।’

ভেবেছিল কথাটা শুনে ছেলেটার হয়তো একটু গায়ে লাগবে। অথচ হয়েছে উল্টোটা। ছেলেটা আরো আধ ঘন্টা তার প্রতি আহ্লাদ দেখাল। তাকে নানা ভাবে প্রশ্ন করে বিরক্ত করে তারপর সে রুম থেকে বের হলো। পৃথার মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেটাকে গলা টিপে ধরতে, একটা মানুষ এত বিরক্ত কী করে করতে পারে?

‘আপনার মেয়েকে আমি এখনও কনভিন্স করতে পারছি না, আংকেল।’

‘চেষ্টা করো, অল্পতেই হার মানলে চলবে?’

‘আর কত চেষ্টা করব? সেই তিন বছর আগ থেকে ওর পেছনে পড়ে আছি। মাঝখানে এত কাহিনী করল, তাও তো ওর পিছ ছাড়েনি। এখনও ওর সাথে লেগেই আছি, তাও আপনার মেয়ে আমাকে বুঝছে না। আর আমি কী করব বলুন? এবার আপনাকেই এর পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।’

পৃথার বাবা চিন্তিত স্বরে বললেন,

‘কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছো?’

‘ও ভালো ভাবে রাজি না হলে, জোর করে বিয়ে দিবেন। আর আপনি জোর করলে ও রাজি না হয়ে পারবে না।’

‘এর আগের বার দেখনি কী করেছে? জোর করাতে বাড়ি ছেড়েই পালিয়ে গিয়েছিল। এবারও যদি এমন কিছু করে?’

‘এর আগের বার তো পালানোর সঙ্গী ছিল, এবার তো আর কোনো সঙ্গী নেই। তাই পালানোর রিস্কও নেই। আপনি ট্রাই করে দেখুন, আমার পক্ষে আর সম্ভব না।’

পৃথার বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মনে মনে ভাবলেন, এবার তাকেই কিছু একটা করতে হবে। এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না, যদি হুট করেই পৃথার আগের স্মৃতি সব ফিরে আসে, তাহলে আবার ঝামেলা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা দিতে পারলেই তিনি বাঁচেন।

,

‘আমার পক্ষে আর সম্ভব না, রুহা।’

‘এমন করবেন না, ভাইয়া। আর কিছুদিন ধৈর্য ধরুন।’

‘আর কত? দু’মাস তো হয়ে গেল। এখনো ওর মাঝে কোনো উন্নতি তুমি দেখেছ? কোনো উন্নতি নেই। ওর মস্তিষ্ক থেকে ঐ ছয়মাসের স্মৃতি পুরোপুরি বিলিন হয়ে গিয়েছে। আর তার সাথে বিলিন হয়ে গেছি আমিও। কিন্তু ও তো রয়ে গেছে। আমার মন, আমার মস্তিষ্ক, আমার পুরো শরীর জুড়ে ওর বিচরণ। আমি কী করে ওর থেকে দূরে থাকব বলো? ভেবেছিলাম, সাজেক গিয়ে আবার না হয় নতুন করে সবকিছু শুরু করব। ও হয়তো আমাকে আগের মতোই প্রথম দেখে প্রেমে পড়বে, কিন্তু তেমন কিছুই তো হলো না। ও তো ওর মতোই রয়ে গেল। কীভাবে আগাবো আমি? কীভাবে ওকে বোঝাব? যদি আবার এর মাঝে ওর বাবা ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঐ ফরহাদের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়, তখন? তখন কী হবে, রুহা? কী করব আমি তখন?’

অর্ণবের এত হাহাকার দেখে রুহারও যে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেও যে কিছু করতে পারছে না। সে নিজেও অসহায়। তার বান্ধবীর জন্য তো তারও কষ্ট হয়। ভাগ্যের পরিহাসে মেয়েটা যে তার নির্মল প্রেমকে ভুলতে বসেছে। কীভাবে সবকিছু আবার আগের মতো হবে? কীভাবে অর্ণব পৃথার মিল হবে? কীভাবে?

‘ভাইয়া, আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে?’

অর্ণব নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘কী?’

‘আপনি পৃথাকে প্রপোজ করুন।’

‘আমি ওকে প্রপোজ করলেই কি ও রাজি হয়ে যাবে? ও তো এখন আমাকে পছন্দই করে না।’

‘রাজি না হলে, একেবারে প্রেমে অন্ধ রোমিওদের মতো ওর পেছনেই পড়ে থাকবেন। ও যেমনটা আপনার বেলায় করেছিল, এখন আপনি সেটা করবেন।’

‘আমার দ্বারা কি এসব সম্ভব হবে?’

‘কেন হবে না? প্রেমের জন্য মানুষ সব করতে পারে, আর আপনি একটু পাগলামী করতে পারবেন না?’

অর্ণব ভেবে বলল,

‘যদি ও রেগে গিয়ে আমার থেকে আরো দূরে সরে যায়?’

‘এমনটা হবে না, ভাইয়া। বি পজেটিভ। ও তো আপনার প্রেমিকা না, আপনার বউ। সবকিছু ভুলে গেলেও ওর মনে নিশ্চয়ই কোথাও একটা সেই অনুভূতিটা রয়েই গিয়েছে। হয়তো সেটা এখন প্রকাশ পাচ্ছে না। কিন্তু, আমি সিউর ভাইয়া, আপনি ওকে আবার আপনার প্রেমে ফেলতে পারবেন। আপনি শুধু একবার চেষ্টা করে দেখুন।’

অর্ণব সিদ্ধান্ত নিল। সে তার সবটুকু দিয়ে তার প্রেমাঙ্গনা কে তার করে নিবে। আর কাউকে সে কোনো সুযোগ দিবে না তাদের মাঝে আসার। পুরোনো প্রেমকে আবার নতুন করে আবির্ভূত করবে সে।

,

সন্ধ্যায় বসে বসে আচার খাচ্ছে পৃথা। রুহা যে তাকে আচার কিনে দিয়েছিল সেগুলোর কথা সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। এখন ব্যাগ ঘাটতেই সেগুলো পেয়ে যেন আত্মা ফিরে পেয়েছে সে।

ফোনে স্ক্রল করতে করতেই হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। পৃথা সেটা কেটে দেয়। কিন্তু, পরক্ষণেই আবারও কল আসে। পৃথা এবার কাটেনা, রিসিভ করে। তবে কথা বলে না, কানে নিয়ে বসে থাকে কেবল। ওপারের ব্যক্তি বলে উঠে,

‘হ্যালো, পৃথা বলছেন?’

পৃথা জবাবে বলে,

‘না, আমি পৃথার বোন। পৃথা এখন বাসায় নেই, পরে কল করবেন।’

ব্যক্তিটি বলল,

‘কল কাটবেন না, ম্যাডাম। পৃথার কোনো বোন নেই সেটা আমি জানি। অযথা মিথ্যে বলে লাভ নেই, আমি আপনার মিথ্যে ধরে ফেলেছি।’

‘আপনি কে বলছেন বলুন তো?’

‘অর্ণব বলছি। চিনতে পেরেছেন?’

‘আচ্ছা, তাই তো বলি, কার এমন কর্কশ গলা। গলা শুনেই বোঝা যায় এটা আপনি ছাড়া আর কেউ না। তা, আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?’

‘পেয়েছি কোথাও একটা। সেসব পরে জানা যাবে। আগে বলুন, আপনার শরীর এখন কেমন আছে? আগের থেকে ভালো?’

‘জি, ভালো। তবে আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন সেটা না জানা পর্যন্ত আমি আপনার সাথে কথা কন্টিনিউ করব না।’

অর্ণব বলল,

‘আমার বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছি।’

পৃথা চেঁচিয়ে উঠে বলে,

‘কী, আমার বন্ধুরা আপনাকে আমার নাম্বার দিয়েছে, তাও আবার আমাকে না জানিয়ে? এত বড়ো হারামী ওরা? একবার খালি পাই ওদের, তারপর ওদের খবর করে ছাড়ব।’

‘আচ্ছা, তা না হয় করলেন। এখন আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন তো, আপনি কি আজ লাল রঙের জামা পরেছেন?’

পৃথা নিজের জামার দিকে চেয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে জানলেন?’

‘ম্যাজিক করে।’

পৃথা রেগে যায়। বলে,

‘মজা করছেন আমার সাথে? বলুন, আপনি কী করে জানলেন?’

অর্ণব হেসে বলল,

‘এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু হয়নি। আমি জাস্ট আন্দাজে গেইস করেছি আর সেটা মিলে গিয়েছে, এইটুকুই।’

পৃথার তাও কেন যেন বিশ্বাস হলো না। তাই সে তার বারান্দার বাইরে তাকিয়ে বাসার আশ পাশটা ভালো ভাবে দেখে নিল। অর্ণব জিজ্ঞেস করল,

‘কী, আমায় পেলেন না তো?’

পৃথা আবারও চমকাল। বলল,

‘আপনি কি এখানে আছেন?’

‘আপনি তো খুঁজলেন, থাকলে তো দেখতেনই।’

‘আপনি যদি এখানে নাই থেকে থাকেন, তাহলে আমি যে আপনাকে খুঁজছিলাম, সেটা আপনি কী করে জানলেন?’

অর্ণব আবারও হেসে বলল,

‘ঐ যে বললাম, আমি ম্যাজিক জানি।’

পৃথা এবার খুব রেগে যায়। তীব্র স্বরে বলে,

‘ফোন রাখুন তো। তখন থেকে একটা মজা শুরু করেছেন। আপনার সাথে কথা বলতে আমার ইচ্ছে করছে না।’

অর্ণব ম্লান হেসে বলল,

‘আচ্ছা, যখন কথা বলতে ইচ্ছে করবে, তখন কল দিবেন। রাখছি এখন।’

অর্ণব কল কেটে দেয়। পৃথা এখনও ভালো ভাবে দেখে যাচ্ছে, অর্ণব আসলেই তার বাড়ির আশে পাশে আছে কিনা। কিন্তু সে কাউকেই দেখতে পেল না। অবাক হলো। ছেলেটা হঠাৎ তাকে কল দিল কেন? সে কি কিছু বলতে চায়? পৃথার মনটা খুঁতখুঁত করে। আরেকবার সে কল দিবে? না থাক, ছেলেটা আবার কী না কী ভাববে। এমনিতেই উনার যা ইগো, ভাববে সে বুঝি তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। না না, ছেলেদের কাছে এত সহজে নরম হতে হয় না। একটু নরম হলেই ওরা আবার মাথার উপর একেবারে ঝেঁকে বসবে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here