প্রেমাঙ্গনা পর্ব ২৯

0
557

#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২ঌ।

পৃথা ভেতরে এসে বলল,

‘হ্যাঁ খালা, আমি এসেছি। কেমন আছেন আপনি?’

‘আমি ভালো আছি। আপনে ভালো আছেন, খালা?’

‘আমিও বেশ ভালো আছি।’

পৃথা তারপর জিজ্ঞেস করল,

‘বাবা কি ঘুমাচ্ছেন, খালা?’

খালা জবাবে বলল,

‘জি, সাহেব ঘুমায়। তারপর তিনি মুখ কালো করে বললেন,

‘আসলে সাহেবের শরীরটা কিছুদিন যাবত খুব খারাপ যাইতেছে।’

পৃথা এই কথাটা শুনে যেন খুব বিচলিত হয়ে পড়ে, জিজ্ঞেস করে,

‘কেন, কী হয়েছে বাবার?’

‘ডাক্তার দেইখা কইছে, প্রেসার নাকি হাই হয়ে আছে। ওষুধ দিছে আর কইছে খুব বেশি টেনশন না করতে।’

পৃথা বলল,

‘আমাকে একবার ফোন দিয়ে বলেননি কেন? তাহলে তো আমি আরো আগেই চলে আসতাম।’

‘কেমনে কমু, খালা? সাহেব তো বারণ করছে আপনারা জানাইতে, আপনি দুশ্চিন্তা করবেন তাই।’

পৃথাকে অস্থির হতে দেখে অর্ণব তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘শান্ত হও, পৃথা। অস্থির হয়ো না, আমরা বাবার সাথে কথা বলব।’

খালা তখন বললেন,

‘আমি কি সাহেবরে গিয়া ডাকমু?’

পৃথা বলল,

‘না, থাক। বাবা এখন ঘুমাক। আমরা না হয় সকাল হলেই কথা বলব।’

তারপর সে অর্ণবের দিকে চেয়ে বলল,

‘এখন আমার রুমেই চলুন।’

কিছুক্ষণের জন্য চোখ লাগলেও বেশিক্ষণ পৃথা ঘুমাতে পারে না। ছয়টার দিকে তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে বাইরে তাকিয়ে দেখে, চারদিকে তখন ফকফকা ফরসা। পাখির অনেক কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। পৃথা উঠে বসে। অর্ণবের দিকে চেয়ে দেখে, সে ঘুমাচ্ছে। পৃথা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর এসে নামাজ পড়ে।
নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসেই সে তার রুমের আশেপাশে চোখ বুলায়। কতদিন পর সে আবার তার পরিচিত জায়গায় এসেছে। তার নিজের বাড়ি, নিজের রুমে এসেছে। এইতো সেদিনের কথা, তার বাবা যেদিন এই বিল্ডিংটাতে তাকে প্রথম নিয়ে আসেন, সেদিন সে এই রুমটা দেখে কী খুশিটাই না হয়েছিল! তার রুমের সাথে এত বড়ো বারান্দা দেখে আনন্দ যেন কমছিলই না তার। নিজের হাতে পুরো রুম সাজিয়ে ছিল সে। খুব নিখুঁত ভাবে, যত্ন করে। আজও তার গুছিয়ে রাখা জিনিসগুলো আগের মতোই আছে, কোনো জিনিস নড়চড় হয়নি। সে যেভাবে রেখেছিল এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে। আর এই পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়তেই চোখের কোণে জল জমে তার।
সে জায়নামাজ ভাজ করে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বারান্দায় যায়। নতুন সকালের প্রথম সূর্যের কিরণ তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। সে চোখ বুজে বেশ উপভোগ করছে সেটা। কিছুক্ষণ পরই পেছনে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। অর্ণব ততক্ষণে পৃথাকে পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। পৃথা তখন বলল,

‘উঠে পড়লেন কেন? কালকে রাতে তো ঠিক মতো ঘুমাতেও পারেননি।’

‘তুমি পাশে না থাকলে কি আর ঘুম আসে?’

‘আচ্ছা, তাই? এখন কি আপনাকে বাচ্চাদের মতো পাশে শুয়ে গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে হবে?’

‘হু, তবে গান না গাইতে চাইলে সমস্যা নেই। একটু আদর দিলেই আমি ঘুমিয়ে পড়ব।’

এই বলে সে পৃথার ঘাড়ে আলতো করে চুমু খায়। পৃথা চকিত হয়ে বলে,

‘ইশ, অর্ণব। দিন দিন আপনি আরো বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।’

‘তোমাকে এত সভ্য হতে কে বলেছে? তুমিও আমার মতো অসভ্য হয়ে যাও। তাহলেই তো হয়।’

পৃথা অর্ণবের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,

‘না, একদমই না। আমি এখন যেমন সভ্য আছি, ভবিষ্যতেও এমন সভ্যই থাকব, বুঝেছেন?’

অর্ণব পৃথার মুখের কাছে মুখ এনে বলে,

‘হ্যাঁ, বুঝেছি।’

তারপর সে আরেকটু পৃথার দিকে এগুতেই পৃথা পিছিয়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘কী সমস্যা?’

অর্ণব মুচকি হেসে বলে,

‘না মানে, ঐ তোমার ঠোঁটটা একটু শুকনো শুকনো লাগছে।’

পৃথা তার ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,

‘লাগুক। যত খুশি শুকনো লাগুক। আপনি ভুলেও আমার ঠোঁটের দিকে নজর দিবেন না।’

অর্ণব সরু চোখে চেয়ে বলে,

‘আমি নজর না দিলে কে নজর দিবে শুনি?’

‘কেউ না। আমার ঠোঁট দেখার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আপনি গিয়ে এখন শুয়ে পড়ুন।’

অর্ণব এসে তখন হুট করে পৃথাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

‘বললাম না, তোমাকে ছাড়া ঘুম আসবে না। চলো।’

________

দশটার দিকে পৃথার ঘুম ভাঙে। সে উঠে দেখে, অর্ণব তার পাশে নেই। সে ওয়াশরুম আর বারান্দায় দেখে। কিন্তু, অর্ণব কোথাও নেই। পৃথা তখন ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। ড্রয়িং রুমের কাছে গিয়ে দেখল, অর্ণব আর তার বাবা বসে গল্প করছেন আর চা খাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে পৃথা বেশ অবাক হয়। সে ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে। তার বাবা তাকে দেখেই তৃপ্ত মুখে হাসসেল। বললেন,

‘কেমন আছো, মা?’

পৃথা নরম গলায় বলল,

‘ভালো আছি, বাবা। তুমি কেমন আছো?’

‘আমিও ভালো আছি, মা।’

‘মিথ্যে কেন বলছো, বাবা? তুমি ভালো নেই। খালা আমাকে বলেছেন। তোমার নাকি প্রেশার হাই? তুমি কি কিছু নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছো, বাবা?’

পৃথার বাবা চায়ের কাপটা রেখে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘আমার সব চিন্তা তো কেবল তোমাকে নিয়েই, মা। তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো, তোমার এই অভিমান ভাঙাতে না পারলে তো আমার মরেও শান্তি হবে না।’

‘বাবা, এভাবে বলো না প্লিজ। তোমার ভালোবাসার কাছে আমার অভিমান কিছুই না। প্লিজ, এসব কথা আর কখনোই বলবে না। তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।’

পৃথার বাবা খুশি হলেন। বললেন,

‘তাহলে আর আমার উপর রাগ করে থাকবে না তো?’

‘না বাবা, আর রাগ করে থাকব না।’

পৃথার বাবার এবার অর্ণবের দিকে চাইলেন। বললেন,

‘তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে, বাবা?’

অর্ণব মৃদু হেসে বলল,

‘আপনি ক্ষমা না চাইলেও আমি আপনাকে আরো আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনি আর এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার মেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই নিজের খেয়াল রাখবেন, বাবা।’

________

পৃথার বাবা উনার মেয়ের জামাইকে খাওয়ানোর জন্য অনেক বাজার করিয়ে এনেছেন। দুপুরে আজ জম্পেশ রান্না হবে। এত এত বাজার দেখে অর্ণব পৃথাকে বলে,

‘বাবা কী শুরু করেছেন, পৃথা? উনাকে বলো, এতকিছু করার দরকার নেই। এত রান্না বান্না করতে হবে না, এত খাবার কে খাবে, বলো?’

পৃথা হেসে বলে,

‘কেন, আপনি খাবেন? আপনার বাড়িতে যাওয়ার পর যখন আমার জন্যও এত এত রান্না করা হয়েছিল তখন কি আপনি মা’কে বারণ করেছিলেন? করেননি। তাহলে এখন আমি কেন বাবাকে বারণ করব? আজকে একগাদা রান্না হবে, আর সেই একগাদা রান্নাই আপনাকে খেতে হবে।’

অর্ণব অসহায় চোখে চেয়ে থেকে বলে,

‘এভাবেও কেউ শোধ নেয়?’

‘হ্যাঁ, নেয়। অর্ণব খানের বউ পৃথা খান নেয়, বুঝেছেন?’

অর্ণব হেসে বলে,

‘জি, বুঝেছি।’

চলবে….

(আগামীকাল গল্পের অন্তিম পর্ব আসবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here