প্রেমরোগ-৮

0
815

#প্রেমরোগ-৮
#তাসনিম_তামান্না

আহমেদ ভিলায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেলো বেশি দূরত্ব নয় তবুও সব গুছিয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেলো। এবাড়ি এসে কুয়াশা আর মেঘাকে একরুমে থাকতে দেওয়া হলো মেঘা আগে ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো কুয়াশা সেটা দেখেও কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
” মেঘা উঠ খাবি চল ”
মেঘা ভা’ঙা গলায় বলল
” ক্ষুদা নেই খাবো না ”
” এভাবে চললে কিভাবে হবে মেঘা? তুই তাকে ভালোবাসিস সে তো তোকে ভালোবাসে না। তাহলে কেনো তার জন্য শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস?চল
ওঠ খাবি দুপুরেও ঠিক মতো খাস নি। আন্টি তখন ডেকে গেছিলো ”
” তুই আমার মনের অবস্থা বুঝতেছিস না? আমার কিছু ভালো লাগতেছে না ”
” তুই এভাবে কেনো থাকবি? মুভ ওন কর। রিদ ভাইয়া তো ভালো আছে। তাহলে তুই কেনো খারাপ থাকবি? ”
মেঘা কিছু বলল না চুপচাপ শুয়ে রইলো। তখন আবারও দরজায় কড়াঘাত পড়লো। কুয়াশা দরজা খুলে দিয়ে দেখলো তুষারের মা তিশা বলল
” কি রে চল খাবি তো রাত হয়েছে অনেক ”
” মামনি শুনো না আসলে না আজ রাতে খেতে ইচ্ছে করছে না দুপুরে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে এখন খেলে বমি হয়ে যাবে ”
” সে কি রে শরীর বেশি খারাপ লাগছে না-কি? ডক্টর ডাকবো? ”
” ওহ মামনি এতোটাও কিছু হয় নি তুমি বরং লেবু পানি দাও ”
” ওটার কি হইছে ঘুমিয়ে গেলো নাকি? ”
” হ্যাঁ ওর ও আমার মতো হচ্ছে তুমি লেবু পানি দাও দুই গ্লাস খেলে সকালে উঠে ফিট হয়ে যাবো ”
” আচ্ছা আমি এখনি পাঠিয়ে দিচ্ছে আর বেশি খারাপ লাগলে জানাস ”
” আচ্ছা ”
তিশা চলে গেলো কুয়াশা আর দরজা লাগালো না ভেজিয়ে দিয়ে বেডে এসে বসে মেসেঞ্জারে ফ্রেন্ড গ্রুপে এসএমএস দিলো লিখলো ” তোরা ঠিক মতো খেয়েছিস তো আজ আমি বা মেঘা কেউ ই খেয়াল রাখতে পারি নি ”
অনু সাথে সাথে সিন করে লিখলো ” হ্যাঁ সে সব ঠিক আছে। কিন্তু মেঘা কে আজ আমার ঠিক লাগে নি চোখ মুখ শুকনা লাগছে কি হয়েছে রে ওর? ”
কুয়াশা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে লিখলো ” ওর আবার কি হবে? কাল এতোক্ষণ পানিতে থাকায় একটু ঠান্ডা লাগছে তাই ওমন হয়েছে ”
লিখে সেন্ড করে অনলাইন থেকে বেরিয়ে আসলো। নাহলে ওরা একটার পর একটা প্রশ্ন করে মাথা খারাপ করে ফেলতো পরে বাদ্ধ্য হয়ে সবটা বলতে হতো। এই হলো এক সমস্যা একবাড়িতে সমবয়সী কাজিন থাকলে একজন বকা খেলে ওপর জন ও খাবে। একজনের ভালো রেজাল্ট হলে অপর জনের জনের খারাপ হলে আরেক সমস্যা। আবার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একসাথে থাকলে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
শরবত নিয়ে দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো বাড়ির মেড কুলসুম হাসি হাসি মুখে বলল
” নতুন বউ কেমন আছো? আমারে তো ভুইলায়ই গেছো ”
‘ নতুন বউ’ ডাক শুনলেই কুয়াশার কেমন জানি লাগে। এটা খারাপ ও না ভালো ও না কেমন মিশ্র অনুভূতি। কুয়াশা হেসে বলল
” তোমারে কি ভুলা যায় কুলসুম আপা ”
” তুমি আবার আমারে নকল করতাছো? ”
” তোমারে কবে নকল করলাম? হুম? হুম? ”
” সে যাগে তা কেমন আছো কইলা না তো? ”
” মেলা ভালা আছি গো তুমি কেমন আছো? ”
” আমি ও তোমাগো দেইখা মেলা ভালো হইয়া গেছি। তুমি কবে আসবে গো এ বাড়িতে? ”
কুয়াশা চুপ হয়ে গেলো। এ প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই। এ প্রশ্নের উত্তর তার বাবা জানে। কুয়াশা হেসে বলল ” এই যে আসলাম ”
” আমি এই আসোনের কথা কইতাছি না পারমালেন্টলি করবে আসবে ”
কুলসুমের মুখে উল্টো পাল্টা ইংরেজি শুনে কুয়াশা হেসে বলল ” আসবো কোনো একদিন ”
” আইচ্ছা তোমাগো লগে পরে গল্প করুম এখন যায় মেলা কাম পইড়া রইছে ”
কুলসুম বিয়ে সকল অনুষ্ঠানে থাকলেও তেমন কথা হয় নি কুয়াশার সাথে। কুয়াশা লেবুর পানি খেয়ে মেঘাকে ডেকে জোর করে তুলে বলল
” নে লেবু পানি খা আর কিছু না খাস ”
মেঘার অনিচ্ছায় শর্তেও খেতে হলো। রাতে ক্লান্ত থাকায় মেঘা আর আজ রাত জেগে কান্নাকাটি করতে পারলো না ঘুমিয়ে গেলো সাথে কুয়াশাও।

কুয়াশা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো মেঘা এখনো ঘুমাচ্ছে। মেঘাকে ডাকলো না। ঘুমাক মেয়েটা ঘুম থেকে উঠলেই রিদের ভুত মাথায় চাপপে। কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিবে সব। কুয়াশা ফ্রেশ হয়ে রুমে বাইরে আসলো এখন সকাল ৮ বাজে তিশা নিজের মনে কাজ করে যাচ্ছে। কুয়াশা গিয়ে বলল
” কি করছো মামনি? ”
তিশা রুটি বেলতে বেলতে বলল
” কাজ করছি রে। ঘুম ভাঙ্গলো তোদের? চা দিবো খাবি ”
” ইচ্ছে করছে না একে বারে নাস্তা করবো ”
” সেই জন্য তোর আর মেঘার গায়ে কিছু লাগে না শুধু হাড় ছাড়া ”
” এভাবে বলো না কষ্ট লাগে তো ”
” তো কিভাবে বলবো? যা বলছি সত্যি ই তো বলছি। তোদের পি’টি’য়ে খাওয়ানো উচিত। না খেয়ে এক এক জনের কি অবস্থা ”
” আচ্ছা হইছে ওসব বাদ দাও। বলো কি করে দিবো ”
তিশা অবাক হয়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল
” তুই আবার কি করে দিবি? বাসায় একটা কাজ ও করিস আবার আমাকে হেল্প করতে আসছিস ”
” তাতে কি? ”
” তাতে কি মানে? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক না হলে রুমে গিয়ে শুয়ে রেস্ট নে। নিজে কিছু পারে না আবার আমাকে হেল্প করতে আসছে ”
কুলসুম তরকারি কাটতে কাটতে বলল
” আম্মা। নতুন বউ রে কবে আনবেন ”
কুয়াশা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। তিশা কুয়াশার দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিয়ে বলল
” সময় হলেই আনবো ”
” আপনাগো সময়ডা হবে কবে কন তো আমারে একটু ”
” সময় হলে দেখতে পাবি এখন চুপচাপ কাজ কর ”
কুলসুম মন খারাপ করে কাজ করতে লাগলো। কুয়াশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তিশা কুয়াশার হাতে আচমকা কফির মগ দিয়ে বলল
” তুষার কে দিয়ে আয় ”
কুয়াশা চমকে বলল ” আমি কেনো? ”
” তুই না কেনো? আমাদের হাত বন্ধ কাজ করছি দেখছিস না? এতক্ষণ তো কাজ করবি বলছিলি এই কাজটা করে দে ”
কুয়াশা অসহায় চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকলেও তিশা সেটাতে পাত্তা না দিয়ে কুয়াশাকে ওপরে পাঠিয়ে দিলো। কুলসুম মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।
কুয়াশা তুষারের রুমের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে সাহস জুগিয়ে দরজায় ঠকঠক করে নক করলো ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে দেখলো রুমে নেয়। ওয়াসরুম থেকে পানির আওয়াজ ভেসে আসছে। মনে মনে ভেবে নিলো মগটা রেখেই দৌড় দিবে। টি-টেবিলের ওপর মগটা রেখে পিছনে ফিরতেই দেখলো তুষার দরজা লাগিয়ে দিলো। কুয়াশা আতংকিত চোখে তাকিয়ে রইলো বলল
” দরজা লাগাছেন কেনো? আমি যাবো তো ”
” তোমার সাথে বোঝা পড়া আছে ”
কুয়াশা ভয়ার্ত চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তুষার কি করতে চাইছে কিছু বুঝতে পারছে না। তুষারের পা চোখের সামনে এসে দাঁড়ালো কুয়াশা মাথা উঁচু করে দেখলো তুষার কাছে চলে এসেছে কুয়াশা পিছনে যেতে নিলে তুষার কুয়াশার বাহু চেপে ধরলো বলল
” সাহস বেড়ে গেছে দেখছি ”
কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে বলল ” মানে? ”
” তোমার আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি লাম না ছেলেদের থেকে ডিসটেন্স রেখে চলবা ”
” ঈশান আমার ফেন্ড এর থেকে বেশি কিছু নয় ”
” তার ফেন্ডের সাথে রাতের বেলা কি এতো কথা? ”
” আজব বিহেভ করছেন কেনো? হাত ছাড়ুন লাগছে ”
” লাগুক ”
কুয়াশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো তুষার কুয়াার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কুয়াশার হাত ছেড়ে দিলো কুয়াশা একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে এলো। খাবার টেবিলে সকলে বসে টুকটাক কথা বলছে। কুয়াশা তুষার মুখোমুখি বসেছে। কুয়াশা খেতে খেতে পায়ে কারোর পায়ের স্পর্শ পেলো। কুয়াশা প্রথমে ভাবলো হয়ত ভুল করে হয়েছে হতেই পারে কিন্তু স্পর্শটা তীব্র হতে থাকলে সকলের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো তুষারের বাঁকা হাসি দেখে বুঝলো এটা তুষারের কাজ কুয়াশার মাথায় চট করে রাগ উঠে গেলো। পায়ের নক তুষারের পায়ে বসিয়ে দিলো। তুষার থমকে কুয়াশার দিকে তাকালো কুয়াশা যে এমন কিছু করবে ভাবতে পারে নি। কুয়াশা মেকি হাসি দিয়ে পা সরিয়ে নিলো। তুষার তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলল না।
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here