#প্রেমময়নেশা(The story of a psycho lover)
#পর্ব- ৫৪( অতীতের রহস্য-সমাধান)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অতীত,,,
সুপ্তি কিছু বলবে তার আগেই মল্লিকা তার মুখে চেপে ধরে। তারপর
আর কিছু মনে নেই তার।
যখন সুপ্তির জ্ঞান ফিরে তখন সে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।
সুপ্তিঃ আমি এখানে কীভাবে??
মল্লিকাঃ আমি এনেছি তোকে।
সুপ্তিঃ এইসব এর মানে কি মল্লিকা?
মল্লিকাঃ এখন থেকে তোকে এই হসপিটালেই পচেঁ মরতে হবে আর খান বাড়িতে নিদ্রকে বিয়ে করে আমি রাজ্যত্ব করবো।
সবাই জানবে তুই
তোর কোনো প্রেমিক এর সাথে পালিয়ে মারা গিয়েছিস।
নিদ্র একেবারে ভেজ্ঞে পড়বে। সেই সুযোগ ই আমি নিবো
নিদ্র আর তোর ছোট ছোট বাচ্ছাদের
সামলানোর জন্য আমি অই বাড়িতে বউ হয়ে ঢুকবো।
সুপ্তিঃ ছিহ মল্লিকা তোকে আমি বন্ধু মনে করেছিলাম আর তুই?
আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকা করলি?
মল্লিকা ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো–
তাইনা?? এই বিশ্বাসঘাতকতা আমি তোর বড় বোনের থেকেই শিখেছি।
আমার জীবনটা পুরো শেষ করে দিলো।
খুব ভালোবাসে না তোকে? তোর বড় বোন।
তোর এমন অবস্হা করবো নাহ সারাজীবন মনে রাখবি।
এইখানে অসুস্হ হয়ে পড়ে থাক।
(মল্লিকা যখন খান বাড়িএ বউ হলো তখন মিসেস কলি নিদ্র এর সাথে সমস্ত সম্পর্ক নস্ট করে দেয়।
কারন মিসেস কলির মনে হচ্ছিলো এর পিছনে নিশ্চই মল্লিকার কোনো চক্রান্ত আছে)
।
বর্তমান,,
।সুপ্তি আবারও বলে উঠলো–
মল্লিকার প্লান অনুযায়ী সে এই খান বাড়ির বউ হলো।
আর আমার ছেলেদের ক্ষতি করতে থাকলো।
সবার কাছে সে ঠিকই ভালো সেঁজে থাকতো কিন্তু তার সে শুধু ক্ষতি করতেই এসেছিলো।
এমনকি আমার বড় ছেলেকেও মেরে ফেললো।
এই বলে ঢুকরে কেঁদে উঠলো
সুপ্তি।
আমান বলে উঠে–
এমনি এমনি মিসেস মল্লিকা
আয়ুশ কে মারেনি।
তার পিছনেও একটা কারন আছে।
অয়ন বলে উঠে–
আয়ুশ কোনোভাবে যেনে গিয়েছিলো
তার মা মিসেস মল্লিকার কাছে আছে।
এবং ইশানকেও সায়েরী ফাঁসিয়েছে।
মিসেস মল্লিকা ই এইসব এর পিছনে আছে।
কিন্তু আয়ুশের কাছে তেমন প্রমান ছিলো নাহ।
অতীত এর কিছু একটা কানেকশন তো আছেই। তাই আয়ুশ বাংলাদেশে আমার মায়ের কাছে(মিসেস কলির) যায়।
সেইটা মিসেস মল্লিকা জেনে যায়। আর আয়ুশকে
নিজের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
আমানঃ অনেক সুন্দর প্লেন করেছিলেন উনি।
আমি আর রিমিপাখি যতবার অই হসপিটালে প্রমান কালেক্ট করতে গিয়েছি।
ততবার উনি সেই প্রমান নস্ট করে দিয়েছেন যাতে আমরা প্রমান কালেক্ট করতে না পারি।
নিদ্র সোফায় বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে উঠে।
সুপ্তিও কেঁদে যাচ্ছে। আয়ুশ তাদের প্রথম সন্তান ছিল।
সন্তানের হারানোর কস্ট টা যে কি তা হয়তো বলে বুঝানো যাবে।
ইশান সুপ্তিকে জড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
নিদ্র এইবার উঠে দাঁড়িয়ে
মল্লিকার গলা চেপে ধরে–
নিদ্রঃ খুন ই করে ফেলবো তোকে
তোর জন্য আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।
আমাদের সুখের সংসার এমনকি আমাদের
ছেলেকেও মেরে ফেললি।
আমান কোনোরকম নিদ্র এর থেকে মল্লিকাকে ছাড়িয়ে নেয়।
মল্লিকা গলা ধরে কেঁশেই যাচ্ছে।
আমানঃ শান্ত হোন নিদ্র আংকেল
নিদ্র বলে উঠে–
আমি যে পারছি না বাবা।
এই মহিলার জন্য আমাদের সুখের পরিবার ধংশ হয়ে গেলো।
আমি বলে উঠলাম–
ইশা আপুর থেকেও তার ভালোবাসা কে কেড়ে নিয়েছে।
এই মহিলা এতোটাই জঘন্য আমাদের বিয়ের দিনে উনাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিলো।
সেই দিন আমি বউ সেজে ছিলাম।
কেন আপনি আমাদের থেকে আপনি সেই দিন টা কেড়ে নিয়েছিলেন বলতে পারেন??
বলতে বলতে আমার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ে।
উনি এসে আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
আমি উনার বুকে মুখ গুজে কেঁদে দেই।
আমান এর চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ে
ইশা বলে উঠে–
আমি আয়ুশ কে কোনোদিন ভালোবাসি নি
তাইতো আমার আয়ুশকে আমি চিনতে পারিনি।
নাহলে বলো আমার ই প্রথমে আয়ুশকে চিনার কথা তাইনা?
রিমি তো অয়নকে ভালোবাসে তাই প্রথমেই চিনে ফেলেছিলো।
(কাঁদতে কাঁদতে)
আমি বলে উঠলাম–
নাহ ইশা আপু!! আসলে পরুস্হিতি টাই এমন হয়ে গিয়েছিলো যে সবকিছু উলোটপালোট হয়ে গিয়েছিলো আমাদের জীবন ই এমন হয়ে গিয়েছিলো।
ইশাঃ আমার আয়ুশের কিচ্ছু হয়নি।
তাইনা বলো??
এই বলে ইশা আপু আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
আমি আসলে এইসময় আপুকে ঠিক কি বলে শান্তনা দিবো বুঝতে পারছিনা।
আমিও ঠিক এইরকম পরিস্হিতে পড়েছিলাম।
কিন্তু আমি তো উনাকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।
এমা ইশা আপুতো অজ্ঞান হয়ে গেছে।—রিমি
আমি বলে উঠলাম।
আমান ঃ শকড টা সহ্য করতে পারিনি।
আমান এর ইশারায় কিছু নার্স ইশা আপুকে
ভিতরের রুমে নিয়ে যায়।
অয়নঃ স্যালাইন চললে জ্ঞান ফিরে আসবে।
অয়নঃ এই মহিলার কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি পাপ্য।
(মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে)
মল্লিকা এইবার খানিক্টা জোড়েই হেঁসে দেয়।
আমানঃ উনি কি এইবার পাগল হয়ে গেছে।
মল্লিকাঃ আমার শাস্তি প্রাপ্য তাইনা??
অয়ন।
তোমার মা যা করেছিলো তা কী??
অয়নঃ মানে??
মল্লিকাঃ আমার শাস্তি প্রাপ্য ঠিক আছে আমি মেনে নিবো কিন্তু কলিকেও তার যোগ্য শাস্তি পেতে হবে।
আমানঃ এইসব কি বলছেন?
মল্লিকাঃ বুঝতে পারছো নাহ তো??
আমি কথা দিচ্ছি আমি নিজেকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
কিন্তু কলিকেও তার শাস্তি পেতে হবে।
অয়নঃ আপনি আবার কোনো ছলনা করছেন তাইনা???
আমার মা কোনো দোষ করতে পারে না
(চিৎকার করে)
মল্লিকাঃ ঠিক আছে শুনো তাহলে সেই অতীত।।
(কলি ও মল্লিকা একি ভার্সিটিতে পড়তো।
মল্লিকারা ৩ ভাই বোন ছিলো।
মল্লিকার ছোট একটি বোন আছে নুসরাত।
ভাই বিদেশে স্টাডি করছে।
একদিন নুসরাত এর বিয়ে ঠিক হলো রাফসান এর সাথে।৷ নুসরাত রাফসান কে প্রচন্ড পরিমানে ভালোবাসতো।
রাফসান ছিলো নুসরাত এর বাবার ছেলের বন্ধু।
কিন্তু রাফসান নুসরাত কে ভালোবাসতো নাহ।
রাফসান কলিকে ভালোবাসতো। কলিও রাফসান কে ভালোবাসতো। তাই তারা বিয়ের দিন পালিয়ে যায়। বিয়ের সাঁজে নুসরাত রাফসান এর জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু যখন সে শুনে রাফসান তাকে ধোকা দিয়ে নুসরাত এর সাথে পালিয়ে গেছে
সবাই সেদিন ধিক্কার জানাচ্ছিলো। এমনকি কলির বাবা ছলনা করে মল্লিকার বাবার থেকে সম্পত্তি নিয়েছিলো।
মল্লিকার বাবার মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিলো
তখন সেই দিন ই নুসরাত সুইসাইড করে।
নিজের ছোট মেয়ের মৃত্যু সহ্য করতে পারিনি মল্লিকার বাবা
তিনিও হার্টঅ্যাটাক করে। তার ৭ দিনের মাথায় মল্লিকার মা মারা যায়। তিনি একেবারে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন
সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের পরিবার এর মৃত্য মেনে নিতে পারেনি কলিও রুশান। তারা ঠিক করেছিলো
প্রতিশোধ নিবে কলির বাবা, রাফসান ও কলির থেকে। ততদিনে কলির বাবা মারাগিয়েছিলো। তাই কলির বাবার বদলে সুপ্তিকে টার্গেট করেছিলো।)
বর্তমান,,
মল্লিকাঃ আমি নিজের প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।
আমার কোনো অনুতাপ নেই।
(জোড়ে হাঁসতে হাঁসতে)
আমানঃ আপনার সাথে যেইটা হয়েছে সত্যি সেইটা হয়তো ঠিক নাহ কিন্তু আপনি যেইটা করেছেন
সেইটা ভুল কিন্তু আপনি যা করেছেন তা ক্ষমার যোগ্য নাহ একজন কে মেরেই ফেললেন।
অয়নঃ হয়তো নানা একটা ভুল কাজ করেছিলো কিন্তু নানার থেকে প্রতিশোধ নিতে এতো গুলো জীবন আপনি নস্ট করে দিলেন।
মল্লিকাঃ তোমার বাবা-মাও এইসব এর জন্য দায়ী।
কলি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো।
(চিৎকার করে)
আমি আর কি করতাম? আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলো অই রাফসান আর কলি।
কলির খুব আদরের দুই বোন। মিঃ ইসান(কলির বাবা) এর দুই আদরের মেয়ে
রুশনি ও সুপ্তি। তাই আমি আর রুশান এই দুইজন এর জীবনেই প্রবেশ করি।
শুধুমাত্র কলির জীবনকে নরকে পরিনত করে দেওয়ার জন্য।
আমার বন্ধু হয়েই আমার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা তাইনা??
এমনকি কলির বাবা ছলনা করে আমাদের সসম্পত্তিও নিজের নামে করে নিয়েছিলো।
আমি বলে উঠলাম–
কিন্তু রাফসান আংকেল আর কলি আন্টি একে অপরকে ভালোবাসতো। কাউকে ভালোবাসা তো আর অপরাধ নয়।
??????
পুলিশরা রুশানের কাছে গিয়ে বলে উঠলো-
ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিঃ রুশান। রুশান কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো-
আমাকে কেউ মেরে ফেলো। আমার মতো বাবার
বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এই বলে রুশান
পাগলের মতো চিৎকার করে যাচ্ছে।
রুশানঃ আমাকে কেউ মেরো ফেলো নাহ। আমি তো সহ্য করতে পারছিনা। আমার চোখের সামনে আমার মেয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে।
আমি এই হাত দিয়ে আমার মেয়েকে (রুশান নিজের হাত উচিয়ে) মেরেছি খুন করেছি আমি তাইনা?
এই বলে রুশান নিজের হাত দিয়ে পাশের দেয়ালে
জোড়ে জোড়ে আঘাত করে নিজের হাতে রক্তাক্ত করেই যাচ্ছে।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ফারহান চিৎকার করে বলে উঠে–
এই জঘন্য লোকটাকে এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান অফিসার।
নাহলে আমি নিজেই এই খুনি লোকটাকে মেরে ফেলবো।
মিসেস কলি অনেক কস্টে নিজেকে মুক্ত করে
এসেছে।
কিন্তু সানাকে এইভাবে রক্তাক্ত অবস্হায় দেখবে ভাবেনি।
মিসেস কলি ঃ সানা মা( কান্না করে)
ফারহান এখনো সানার বুকে চুপ্টি করে আছে।
কখনো কথা বলবে নাহ সে।
বরং শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে আর জেগে উঠবেনা
সুমু এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।
রুশান কিছু একটা ভেবে পুলিশদের থেকে নিজেদের ছুটিয়ে পালিয়ে যায়।
ফারহানঃ ধরুন উনাকে।
।।।।।।।।।
????
আমানঃ আপনাকে এর শাস্তি এখন পুলিশ দিবে।
তখুনি কিছু পুলিশ ঢুকে।
আমান কিছু বলবে তার আগেই একটা কল আসে।
আমান কলটা পেয়ে একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়।
অয়ন ঃ কি হয়েছে আমান??
আমানঃ রুশান আংকেল সুমুকে গুলি করতে গিয়ে
সানা কে করেছে ফেলেছে
সানা এখন আর নেই
কথাটি শুনেই আমরা থমকে যাই।
অয়ন ঃ আমার বনুর কিচ্ছু হয়নি(কাঁদতে কাঁদতে)
অয়ন আমানের শার্টের কলার চেপে বলে উঠে—
তুই মিথ্যে বলছিস তাইনা???
আমার বনুর কিচ্ছু হয়নি আমি জানি
আমান আবারও বলে উঠে–
নাহ রে আমি সত্যি বলছি।
রুশান আংকেল এই কাজে এতোটাই অনুতপ্ত ছিলেন
পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে সে নিজেই নিজেকে গুলি করে।
রুশান আংকেলও সুইসাইড করেছে।
মল্লিকাঃ নায়াহহহহহহহহহহহহহ
(চিৎকার করে)
মল্লিকার আপন বলতে তার এই ছোট ভাই ছিলো সেও তাকে ছেড়ে চলে গেছে নাহ মানতে পারছেনা সে।
বড্ড আদরের ভাই ছিলো।
নাহ মল্লিকা মানতে পারছেনা। এইটা কি হলো??
।
(সত্যি এই প্রতিশোধ খেলায় কারো না কারো আপনজন ঠিকই হারিয়ে গেছে।
সবাইকেই কাঁদতে হয়েছে। প্রতিশোধের নির্মম খেলায় আমাদের জীবন থেকে অনেকেই হারিয়ে গেছে। পাপ কখনো পাপ কে ছাড়েনা। এমন অনেকেই এই গল্পে রয়েছে যারা অকালেই তাদের প্রান হারিয়েছে।
।
।
।
।
।।#দ্বিতীয়_অধ্যায়
চলবে কি??
(রহস্য সমাধান পার্ট গুলো লিখতে গিয়ে আমার মাথা শেষ বাবা গো)
(বড় পার্ট দিয়েছি কিন্তু)
(আজকের পর্বে সব রহস্য ক্লিয়ার করে দিয়েছি।
এখন হয়তো আর কোনো রহস্য নেই)