#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৮
মেহেরাব জিরিশার কথায় হাসে।তার ভেতরেই মাহাজ এসে হাজির।মেহেরাবকে দেখে হেসে বলে,
“আরে মেহেরাব ভাইয়া যে কেমন আছেন”
মেহেরাব হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো”
মাহাজও হেসে বলে,,,”আলহামদুলিল্লাহ”
মেহেরাব মাথা চুলকে হেসে বলে,
“আমি কি ফাহাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে পারি”
মাহাজ হেসে বলে,,
“হ্যা হ্যা যেতে পারেন ভাইয়া সমস্যা নেই”
মেহেরাব আর ফাহা চলে যেতেই মাহাজ জিরিশাকে বলে,,
“চলো বউজান ঘুরে আসি কোথাও”
জিরিশা আলতো হেসে সম্মতি দেয়।মাহাজ জিরিশাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে।অনেক সময় ড্রাইভ করে মাহাজ জিরিশা একটা খোলামেলা জায়গায় নিয়ে আসে।আকাশে মেঘ করেছে।বাতাস হচ্ছে।বৃষ্টি আসার আগ মুহুর্তটা ভীষণ ভালো লাগে জিরিশার।ওরা নদীর পারে বসে।জিরিশা মাহাজের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।
মাহাজ আর জিরিশা উপভোগ করছে পরিবেশটা।হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।আজকে মাহাজ যাচ্ছে না কোথাও।ওরা দু’জন বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।বৃষ্টিতে ভেজার ফলে জিরিশার ঠোঁট কাঁপছে।মাহাজ জিরিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।জিরিশাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাহাজকে।
মাহাজ জিরিশাকে অসহায় কন্ঠে বলে,
“আমায় প্লিজ কখনো ছেড়ে যেওনা মরে যাবো আমি”
জিরিশা মাহাজের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ওর মুখে হাত দিয়ে বলে,
“কি বলছেন কি আপনি।মরার কথা মুখে আনবেন না আর কখনো।আপনাকে ছাড়ার কখনো প্রশ্নই আসে না।জিরিশা শুধু মাত্র এই মাহাজের আর কারো নয়।মাহাজ ছাড়া জিরিশাকে কেউ ছুঁতে পারবে না”
মাহাজ জিরিশা কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“তুমি আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গিয়েছো জিরিশা পাখি।তোমায় ছাড়তে পারবো না কখনো আমি”
মাহাজের গরম নিশ্বাস জিরিশার মুখে আছড়ে পরছে।জিরিশা বসা থেকে উঠে দাড়ায়।মাহাজ জিরিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,
“চলো অনেক সময় হলো বৃষ্টিতে ভিজছো এখন বাড়ি যেতে হবে নাহলে ঠান্ডা লাগবে তোমার”
মাহাজ জিরিশাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়।জিরিশা ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে কালকে রাতের কথা ভাবছে।জিরিশা নিজেকে আয়নায় একবার পরক্ষ করে নেয়।আগের থেকে একটু আলাদা লাগছে তাকে।আলতো হাসে মাহাজের কথা মনে করে।কালকে থেকে আজকে পর্যন্ত জিরিশার কাছে সব সপ্ন লাগছে।মাহাজ তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে।সে কখনো ভাবেইনি এমন হবে।
২২.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কিছু মাস।সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না সে তার মতোই বহমান।জিরিশা মাহাজের বিয়ে হয়েছে একমাস পূর্ণ হলো।মাহাজের পাগলামি বেড়েছে।মাহাজ এখন সত্যিই এক মুহূর্ত ও জিরিশাকে ছাড়া থাকতে পারে না।জিরিশা ছাড়া সম্পূর্ণ অচল মাহাজ নামক ব্যাক্তিটি।মাহাজ কলেজে গিয়েছে।জিরিশা ভাবছে,মাহাজ তাকে কেনো এখনো সত্যি বলেনি।জিরিশা এখন পড়াশোনায় পাশাপাশি সংসার সামলাচ্ছে।
জিরিশা ভাবতে ভাবতে আলমারি খোলে জামাকাপড় গোছাতে।জিরিশা মাহাজের সব জিনিস বেডের উপর রাখে।আর এক এক করে ভাজ করে রাখতে থাকে।জিরিশার চোখ যায় আলমারির এক কোনায়।যেখানে মাহাজের ডাইরি আছে।জিরিশা ড্রেস সব কোনোমতে গুছিয়ে রেখে।ডাইরিটা নিয়ে বসে।
প্রথম পৃষ্ঠা খুলে অবাক হয়।যেখানে লেখা M+J।দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক আগের লেখা।জিরিশা ভাবে মাহাজের কোনো গার্লফ্রেন্ডের নাম মনে হয় J দিয়ে ছিলো।জিরিশা অতো না ভেবে পেজ উল্টায়।পেজ উল্টে চমকে যায়।কারণ সেখানে তার ১০ম শ্রেনির একটা ছবি লাগানো।জিরিশার সেদিনের কথা খুব ভালোভাবে মনে আছে।জিরিশা ফাহা আর আরেকটা ফ্রেন্ড মিলে ফাহাদের বাসায় শাড়ি পরেছিলো।জিরিশা পরেছিলো হলুদ কালো মিশ্রনের শাড়ি।
ছবিটার নিচে ছোট্ট করে লেখা,,”মায়াপরি”
জিরিশা পরের পৃষ্ঠা উল্টায় সেখানে লেখা,
জানি না জিরিশা নামক বাচ্চা মেয়েটার ভেতরে কি আছে।কিন্তু ওকে দেখলেই মনে হয় জড়িয়ে ধরে বসে থাকি।আগে ওকে আমি কেনো জানি পছন্দ করতাম না কিন্তু এখন কি যেনো হয়ে গেলো। তার,পর এই প্রথম কোনো মেয়ের প্রতি আমার এতো টান অনুভব হলো।
জিরিশা পরের পেজ উল্টায় কিন্তু কিছু লেখা পায় না।কিছু পৃষ্ঠা পাল্টে দেখে সেখানে লেখা আই হেট ইউ হৃদি।জিরিশা থমকে যায়।এই হৃদিটা আবার কে!।সে আবারও আলমারিতে কিছু খুজতে থাকে পেয়েও যায়।হ্যা সে হৃদির ছবি খুঁজছিলো।তার মনে হয়েছিল হৃদির ছবি এখনো হয়তো মাহাজ রেখে দিয়েছে।সে ছবিটার দিকে তাকাতেই কয়েক ফোটা পানি গরিয়ে পরে।
হৃদি মেয়েটা দেখতে ভীষণ সুন্দর।যেমন ফর্সা তেমন লম্বা তেমন চুল সব মিলিয়ে পার্ফেক্ট।যেখানে জিরিশা বেশি লম্বা না।হৃদি ছবিটায় অন্যদিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে।জিরিশা আবারও আলমারির কাছে যায়।সে আরেকটা ছবি পায়।যা দেখে জিরিশার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।মাথা ঘুরতে থাকে।জিরিশা কোনোমতে বেডের উপর বসে।ছবিটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে জিরিশা।মাহাজ তখনই রুমে ঢোকে।
মাহাজ জিরিশা স্থির হয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।এই একমাস মাহাজ রুমে ঢুকতেই জিরিশা তাকে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরেছে।আজকে এমন হওয়ায় অবাক হয়।মাহাজ জিরিশার কাছে এসে ওর পাশে বসে বলে,
“কি হয়েছে বউজান তুমি এমন থম মেরে বসে আছো কেনো?”
জিরিশা উত্তর দেয় না।জিরিশার মুখ উপরে তুলতেই চমকে যায় মাহাজ।জিরিশার চোখ দিয়ে পানি পরছে।মাহাজ অস্থির হয়ে বলে,
“কি হয়েছে বউ তুমি কাঁদছো কেনো?”
মাহাজের জিরিশার হাতে থাকা ছবির দিকে চোখ যায়।মাহাজ ভড়কে যায়।সে বুঝে যায় জিরিশার কান্নার কারণ।জিরিশাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
“বউ শুনো আমি সব খুলে বলছি কাঁদে না আর”
মাহাজ জিরিশার চোখ মুছে দিয়ে বলে,
“ওর নাম হৃদি আমার প্রথম ভালোবাসা।ওকে আমি ভালোবাসতাম কিন্তু ও আমায় ধোকা দেয়।তারপরে আমি একটা মায়াপরিকে দেখি যাকে দেখার পর আর কেনো মেয়ের দিকে তাকাতে ইচ্ছা হয়নি।”
জিরিশা ফুপিয়ে উঠে বল,
“এই মায়াপরিটা আবার কে”
মাহাজ জিরিশার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“মায়াপরিটা একটা বোকা।সে আমার ডাইরি পরেও এখনো বোঝেনি মায়াপরিটা কে”
জিরিশা মাহাজকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,”আমি মায়াপরি”
মাহাজ মাথা নাড়ায়।জিরিশা মাহাজকে ঝাপটে ধরে কান্না করে বলে,
“যখন ওই ছবিটায় আপনার সাথে ওই মেয়েটাকে দেখলাম তখন ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল আমার”
মাহাজ হেসে বলে,
“এই মাহাজ এখন এক নারীতে আসক্ত।তার অন্যকোনো মেয়ের দিকে তাকানোর ইচ্ছা নেই।আর আমি তাকাবোই বা কেনো আমার এতো সুন্দর বউ থাকতে বাইরের মানুষের দিকে”
জিরিশা মাহাজের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলে,
“তাহলে আপনি কি শুধু হৃদির সাথেই রিলেশন করতেন।তাহলে ওই সূর্যমূখীতে যার সাথে দেখা হয়েছিলো ও কে?”
“নাহ।হৃদি আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর আমি অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করেছি তার ভেতর ওই মেয়েটা একটা”
জিরিশা ছোট করে উত্তর দেয় ওহ।মাহাজ জিরিশার কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।জিরিশাও রাতের খাবার রেডি করতে যায়।ফাহাও তাকে হেল্প করে।দুজন মিলে রান্না শেষে ফ্রেশ হতে যায়।জিরিশা ফাহার রুমে ফ্রেশ হয়।তার মোটেও মাহাজের সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না।রাতে খাবার টেবিলে জিরিশা সবাইকে খেতে দিয়ে নিজেও বসে পরে।খেয়ে সবাই চলে যায়।জিরিশা সব গোছাতে থাকে।ফাহা হেল্প করতে চাইলে জিরিশা ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।
কয়েকদিন পর বিয়ে ফাহার।তাই জিরিশা তাকে চিল করতে বলছে।জিরিশা সব কাজ শেষে রুমে যায়।মাহাজ এখনো ল্যাপটপে কাজ করছে।জিরিশা বেলকনিতে যায়।মাহাজ কিছুক্ষণ পর বেলকনিতে এসে জিরিশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।জিরিশা চমকে উঠে।মাহাজ জিরিশাকে বলে,
“রাগ করেছো বউ বিশ্বাস করো ছবিগুলো রাখতে চাইনি আমি পুরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু বিয়ের ব্যস্ততার পরে আবার কলেজের অনেক কাজ জমে থাকায় মনে ছিলো না।”
জিরিশা বলে,
“আপনি এখনি ওগুলো পোড়াবেন আমার সামনে”
মাহাজ জিরিশাকে ছেড়ে রুমে চলে যায়।কিছুক্ষণ বাদে দুটো ছবি এনে জিরিশার সামনে পুরিয়ে ফেলে।জিরিশা তা দেখে হাসে।তারপর মাহাজকে জড়িয়ে ধরে।মাহাজ জিরিশা কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরো”
চলবে~